Destiny_of_Love
PART_04
#Nishat_Tasnim_Nishi
__________________________________
কন্ঠস্বর শুনতেই আমি চমকে গেলাম, ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম। আপনাআপনি মুখ
দিয়ে বের হয়ে গেলো,–‘বা্ বাবা!!’
বাবা প্রায় দৌড়ে এসে আমাকে ঝাপটে ধরে বললেন,–‘তুই ঠিক আছিস?’
আমি গাবড়ে গেলাম,তবুও নিজেকে শক্ত করে বসে রইলাম। আমি নরম গলায় বললাম,–‘আমি ঠিক আছি বাবা।কিন্তু তুমি এখানে কীভাবে?’
৮.
আমার প্রশ্নের জবাবে বাবা বললেন,,–‘কাল থেকেই তোমাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে নাকি তোমার ফোন বন্ধ ছিলো।তোমার মা তো তোমার চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন,সেজন্যই আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন তোমাকে দেখার জন্য।’
বাবার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম।কৌতুহল জেগে উঠলো যে বাবা কীভাবে জানলো আমি এখানে?হাউ?
–‘আমি যে এখানে তুমি কীভাবে জানলে,বাবা?’
–‘তোর মা ফোন দিয়ে বলেছে তুই নাকি এখানে ঘুরতে এসেছিস।সেজন্যই তো গাড়ি ঘুরিয়ে এখানে এসেছি।’
আমি ছোট্ট করে বললাম,–‘ওহ!’
বাবার চোখ হঠাৎ আবরারের দিকে যায়,উনিও দুসেকেন্ড ভ্রু কুচকে আবরারকে স্ক্রিন করলো।আবরার তখন আম্মু আম্মু বলে গোঙ্গড়াচ্ছিলো।কপালে ভাজ ফেলে আমাকে বললো,–‘ছেলেটা কে?’
আমার শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে গেলো,কি বলবো বাবাকে? বাবা নিজ থেকেই বললেন,,–‘ছেলেটা কি অসুস্থ নাকি?দেখি দেখি।’
বলেই বাবা নিজেই আবরারের কপালে হাত দেন, নিজেই চমকে বললেন,–‘ও মাই গড,ও মাই গড!ওর তো প্রচুর জ্বর,তুই ঠান্ডায় ওকে নিয়ে এখানে বসে আছিস?’
৯.
বলেই বাবা ধমক দিয়ে উঠলেন,আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম। বাবা মেঝো চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বললো,–‘মিলন ওকে ধর তো,ছেলেটা নাহয় আরো অসুস্থ হয়ে যাবে।’
মেঝো চাচ্চু একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আবরারের দিকে তাকাচ্ছে।দ্বিধা নিয়ে ছেলেটার কাঁধে হাত রাখে চাচ্চু,ওর মুখের দিকে কেমন করে যেনো তাকায় চাচ্চু। এরপর গম্ভীর কন্ঠে আমাকে বললো,–‘ও কে রে শ্রুতি?’
কথাটা শুনে আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম,কী বলবো কী বলবো? বানিয়ে বলে দিলাম যে আবরারকে আমি চিনি না,একটু আগে কয়েকটা ছেলে আমার সাথে বাজে বিহেভ করতেছিলো, তখন আবরার আমাকে বাঁচিয়েছে।
মেঝো চাচ্চু ভ্রু কুচকে বললেন,–‘ওর ততো জ্বর তাহলে ও তোকে বাঁচিয়েছে কীভাবে?’
আমতা আমতা করে বললাম–‘একটু আগেই জ্বর এসেছে,সেজন্যই তো আমি এমন করতেছি। জানো উনি খুব ভালো,ছেলেগুলো তো আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো পরে উনিই আমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে।এখন উনার বিপদে কীভাবে উনাকে রেখে আমি চলে যাই?’
১০.
মেঝো চাচ্চু আরো কিছু বলতে নিচ্ছিলেন,তার আগেই বাবা থামিয়ে দিলেন।বললেন,–‘পরে এসব নিয়ে আলোচনা করবেন।’ দুজনেই আবরারকে ধরে গাড়ীতে বসালেন। রিটার্ন গাড়ী নিয়ে এসেছেন বাবা, কথা ছিলো যে আমাকে নিয়ে বাড়ীতে যাবেন। কিন্তুু এখন আবরারের অসুস্থতা দেখে ওকে সহ রওনা দিলেন বাবা।বাবার কথা হলো,যে ছেলেটা তার মেয়েকে বাঁচিয়েছে তাকে কীভাবে একা ফেলে রেখে যায়?যাওয়ার সময় হসপিটাল থেকে আবরারের চেক আপ করিয়ে নিয়েছেন। ডাক্তার অনেকগুলাে ঔষধ আরোও কি কি বলেছেন চাচ্চুকে। পুরো রাস্তা চাচ্চু আবরারের মুখের দিকে তাকিয়েছিলেন,বাবা অবশ্য একদুবার আড়চোখে ওর দিকে তাকিয়েছে। আসার পথে উনাদের জবাব দিতে দিতে আমি হাপিয়ে গিয়েছিলাম। এই প্রশ্ন সেই প্রশ্ন,মনে হচ্ছিলো আমি আদালতের কাঠগড়ায় আসামি হয়ে দাড়িয়ে আছি আর উনারা জজ হয়ে আমাকে প্রশ্ন করছে।
তীক্ষ্ণ মেজাজ নিয়ে গাড়ী থেকে নামলাম আমি।আবরার জ্বরে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। চাচ্চু তখনও আবরারকে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত,বাবা নেমে গিয়েছেন মিনিটখানেক আগে।
–‘চাচ্চু কি দেখছো?নামবে না?’
কথা শুনে চাচ্চুর টনক নড়লো। আমার মুখের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,–‘ছেলেটার মা কে রে?’
চাচ্চুর কথায় আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো,ঢোক গিলে বা হাত দিয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে বললাম,–‘আ্ আমি কীভাবে জানবো?’
চাচ্চু গাড় হেলিয়ে বললেন,–‘সেটাও ঠিক।’
চাচ্চু আবরারের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে বললো,,
–‘ এত বড় ছেলে অথচ দ্যাখ মা মা বলে কাঁদছে।’
১১.
পরিস্থিতি সামলাতে আমিও হে হে করে মেকি হাসলাম। এর মধ্যেই হুড়ুমুড় করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন আম্মু। বিলাপ করতে করতে বলতে লাগলেন,–‘তুই ঠিক আছিস?আমি কত ভয় পেয়েছিলাম জানিস?’
এরপর শুরু হয়ে গেলো বাংলা সিনেমার মতো মায়ের বিহেভিয়ার। একসাথে শত শত প্রশ্ন ছুড়ে দিলে আমার দিকে।মাকে শান্তনা দিয়ে বললাম যে,-‘ মা,আমি ঠিক আছি!’
মা হাত ধরে আমাকে টেনে ঘরে নিয়ে গেলেন, আমি শুধু পিছনে তাকিয়ে আবরারের মুখের দিকে তাকালাম। মুখ টা কেমন হয়ে গিয়েছে।
বাসায় ডুকতেই দেখলাম আমার পুরো পল্টন ড্রয়িংরুমে বসে আছে,সবার মুখে গভীর চিন্তার চাপ।কেউ সোফায় আসে আছে,কেউ ফ্লোরে , কেউ চেয়ারে, ছোট চাচীর বাবু ফিহার কোলে কাঁদছে। আমার উপর নজর পড়তেই সব বাচ্চারা দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরলো।সবাই দিদি,আপুই বলে চিৎকার করতে লাগলো।চাচীরাও এগিয়ে আসলো কুশল বিনিময় করতে। বিশ মিনিটের মতো চললো ফ্যামিলি ড্রামা। দাদী আমার দিকে একপলক তাকিয়ে রুমের দিকে হেটে চলে গেলেন, রুমকি শুধু বললো,–‘রুমকি, তোর আপাকে বলিস ঘুমানোর সময় আমার ঘর হয়ে যেনো যায়।’
রুমকি হলো আমাদের বাসার কাজের মেয়ে, সবসময় দাদীর আশেপাশেই থাকে। দাদীর হাতের লাঠি বললেই চলে। কে কি করলো,কোন বাসায় কী হলো,কার সাথে কার মারামারি হয়েছে,এ সব ও দাদীর কাছে রিপোর্টারের মতো বলতে থাকে। দাদীর গাম্ভীর্য ভাব দেখে আমার ভেতর অজানা ভয় হানা দিয়েছে। বংশের প্রথম মেয়ে হলাম আমি,আমার বড় হলো, রাদিফ ভাইয়া আর শিহাব ভাইয়া। বংশের প্রথম মেয়ে হওয়ার সুবাদে দাদীর সবচেয়ে প্রিয় হলাম আমি। আমাকে দাদী ফুলবানু ডাকেন। উনার জান টা হলাম আমি, ঢাকায় পড়াশোনার জন্য যাওয়ার সময় কী খাটুনি টাই না আমাকে করতে হয়েছে।দাদী তো গো ধরে বসেছিলেন,যে আমাকে যেতে দিবেন ই না। শেষমেশ আমার কান্না দেখে দাদী যেতে দিয়েছেন,তবুও আমার সাথে মনমালিন্য ছিলো। সরাসরি কোনো কথা ই বলেন না আমার সাথে। এই যে মাত্রও কথা বলেন নি। এসব ভেবে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি।
ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে আছি আমি,ঠিক তখনই আমার আবরারের কথা মনে পড়লো! ইশশ,এত এত মানুষের মধ্যে আবরারের কথা তো ভুলেই গিয়েছি,ও জানি এখন কেমন আছে?ওর তো প্রচুর জ্বর হয়েছে,কী অবস্থা জানি এখন?
একটু আওয়াজ করে রুমকি ডাক দিলাম,রুমকি রুমে ডুকতেই চোখমুখ বড় করে বলতে লাগলো,–‘আপা,গাড়ীতে রাজপুত্তুরের লাগান এক পোলা আছিল,হে কেডা? আপা গো আপা কী সুন্দর হে দেখতে। কী টানা টানা চোখ,খাড়া খাড়া নাক,কবুতরের ঠোঁটের মতো লাল টুকটুকে ছোট্ট ঠোঁট। নাকের ডগায় আবার ছোট্ট তিল ও আছে।হেই পোলা না আপা ছোট ছোট করে কথা বলো। সব না আপনাগো মতো শুদ্ধ! ‘
রুমকির কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।দেখছো?বলে কি,আবরারের নাকের তিল টাও ওর চোখে পড়েছে? তার মানে ও কত খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছে। হঠাৎ ই আমার রাগ লাগলো,ভীষণ রাগ লাগলো। আমি ধমকে ওকে রুম থেকে বের করে দিলাম,আবরারের কথা আর জিজ্ঞাস করা হয় নি। আমার রাগ টা সম্পূর্ণ আবরারের উপর চলে গেলো।
এরপর ফিহাকে ডেকে জেনে নিলাম আবরারের খবর। ও বললো,আবরারের নাকি জ্বর বেড়ে গিয়েছে, গেস্ট রুমে ওর ব্যবস্থা করে দিয়েছে থাকার জন্য। রাতে প্রায় সব পর্ব শেষ হওয়ার পর আমি রুম থেকে বের হলাম দিদুনের রুমে যাবো বলে। তবে এর আগে একবার আবরারের কাছে যেয়ে দেখি ওর কী অবস্থা, এতক্ষণ বারবার চেষ্টা করেও যেতে পারি নি সবাই বাহিরে ছিলো। আমার মনের অবস্থা টা কেমন ছিলো সেটা বুঝাতে পারবো না,অস্থিরতা টা যেনো বুকে চেপে বসেছিলো।
গেস্ট রুম টা দিদুনের রুমে যাওয়ার আগেই পড়ে। পা টিপে টিপে দরজা টা ফাক করতেই আমার চোখ আটকে যায়। এ কী দেখছি আমি?স্বপ্ন নয় তো? মেঝো চাচ্চু আবরারকে জলপট্টি দিচ্ছে।কীভাবে সম্ভব? কত আদর করেই না দিচ্ছে,কিন্তুু যখন জানবে যে এই ছেলেই ওর একমাত্র বোনের মেয়ে তখন রিয়েকশন কেমন হবে? তখনও কি এই টান থাকবে? না কি বদলে যাবে?
আমার ভাবনা চিন্তার মাঝেই কেউ পিছন থেকে আমার ঘাড়ে হাত রাখলো।সাথে সাথে আমি চমকে গেলাম, বার কয়েক বার ঢোক গিলতে লাগলাম।মনে মনে জপতে লাগলাম যে আর যে কেউই হোক না কেনো দাদী যেনো না হয়। আমি বিরবির করে আল্লাহ আল্লাহ বলে পিছনে ঘুরলাম,,,,,
.
.
.
.
.
চলবে?
(গল্পটা কী ভালো লাগছে আপনাদের?ম্যাথা ব্যাথা নিয়ে আজকের পর্ব লিখলাম,জানি ভালো হয় নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)
পর্ব–(১-৩)