তোমার_খোঁজে_এই_শহরে পর্বঃ৮ : #শেষ_থেকে_শুরু,০৯

0
1350

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ৮ : #শেষ_থেকে_শুরু,০৯
লেখিকা:#নবনী_নীলা
পর্বঃ৮

“ডক্টর আরফিন আপনি একটা গান শুনান না।”, সিনিয়র একজনের কথা ইয়াদ ফেলতে পারলো না। ছোট বড় সবাই একসাথে মোমবাতি আর চাঁদের আলোয় বসে আড্ডা দিচ্ছে।
টয়াও বসে আছে সে মনোযোগ দিয়ে একটা জোনাকি পোকা দেখছে। হ্যা টয়া যাকে সবাই অর্নীহা বলে ডাকে। সার্টিফিকেট থেকে টয়া নামটা বাদ পড়ে যাওয়ায় টয়া নামে শুধূ কাছের মানুষরাই তাকে চেনে। ইয়াদকে টয়ার চেনার কথা না কারণ সাত বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। টয়া নিজেও বদলেছে।
ইয়াদ গান ধরলো গানের নাম ” তুমি চাইলে ”
গানটার লাইন গুলো এমন,

তুমি চাইলে আমি তোমার
না চাইলেও তুমি আমার।
তুমি বসে থাকলেই আমি
আমি আবেগে উড়ে যায়।
তুমি চলে গেলেই যেনো
আমি আর আমি নেই।

সব গান রেখে এই গান গাওয়ার পিছনে ইয়াদের একটা কারন ছিলো। টয়ার অনেক প্রিয় একটা গান ছিলো এইটা প্রায় কাগজে গানের কিছু লাইন লিখে ইয়াদের বারান্দায় ছুঁড়ে মারতো। অনেকবার টয়াকে গুন গুন করে গাইতেও শুনেছে। ইয়াদের দৃষ্টি ছিল অর্নিহা নামের সেই মেয়ের দিকে সে যদি টয়া হয় তাহলে এই গানে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন আচরণ করবে।
সেটাই হলো টয়া একটু অবাক হয়ে তাকালো এই লোকটাকে দেখে তার মোটেও তার রোমান্টিক মনে হয় নি যে এমন একটা গান গাইবে।
দেখে তো গম্ভীর মেজাজের মানুষ মনে হয়।
টয়া আজ আবার পুরোনো কথাগুলো মনে পড়লো, এই গানটা সে গুনগুন করে একজনের জন্য গাইত।

গান শেষে সবাই ইয়াদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এর মাঝে ইয়াদ খেয়াল করলো অর্নীহা মানে টয়া উঠে এক কোণে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ইয়াদের অনুমান অনেকটা সঠিক বলে মনে হচ্ছে তার।কিন্তু এত পরিবর্তন টয়ার মাঝে যে মেয়ে নিজের চুল বাঁধতে পারে না সে চুল লম্বা করেছে আবার চোখে চশমা।
টয়ার চেহারার মায়াবতী ভাবটা চলে গেছে রূপবতী একটা ভাব এসেছে। ইয়াদ যেনো আবার এই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছে।

টয়া রাতে মোমবাতি নিয়ে নিজের রুমের দিকেই যাচ্ছিলো। এতো বড়ো জমিদার হয়ে লাভ হয়েছে কি যদি ঘরে বিদ্যুতের ব্যাবস্থা না থাকে। টয়া বির বির করতে করতে হাটছে। শুধু নামের জমিদার হয়েছে কাজের কাজ কিছুই করে নি। টয়ার ঘর দোতলার গলির শেষের মাথায়, রুম গুলো সারি আকারে একের পর এক।গলি দিয়ে মোমবাতি নিয়ে হেঁটে যেতেই মনে হচ্ছে কোনো ভুতের মুভির সিন করছে। মোমবাতি হাতে এবার তার রাক্ষসদের সাথে লড়াই করতে হবে।
বাতাসে মোমবাতির আলোর নিভো নীভো অবস্থা হাত দিয়ে সামলানো যাচ্ছে না। হুট করে আসা বাতাসে মোমবাতি নিভে গেলো নিজের রুমে ফোন নিতে যাচ্ছিলো টয়া মোমবাতি নিভে যাওয়ায় সে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।

নিজেকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেও উপায় হলো না চাঁদের আলোর কারণে আরো ভয় লাগছে। পুরনো জায়গায় কোথায় কি বাসা বেধে আছে কে জানে। যেদিকে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে এক্ষুণি কেও এসে তাকে গিলে খাবে। নিজের জায়গা থেকে এক পাও বাড়াতে পারছে না টয়া, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। এমন সময় কারোর হাঁটার শব্দে বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো আত্মাটা মনে হচ্ছে এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে।

টয়া আর কিছু না বলে একটা চিৎকার দিয়ে পিছনের দিকে দৌড় দিতেই ইয়াদের বুকে এসে ধাক্কা খেল। ধাক্কা খেয়ে আরো জোরে চিৎকার করতেই ইয়াদ হাতের ফোনের টর্চটা অন করলো। ইয়াদ বুঝতে পারছে না টয়ার চিৎকারের কারন কি? ইয়াদ কে ভুত ভেবে থাকলে ভূতকে জড়িয়ে কেনো চিৎকার করছে। টর্চের আলোয় টয়া ইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে সরে আসলো তবে ইয়াদের শার্টের হাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। টয়া ভয়ে এমন দৌড় দিয়েছে চশমাটা হারিয়ে ফেলেছে। ইয়াদের বুঝতে বাকি নেই এই মেয়েই টয়া কারণ চশমা পরে থাকায় টয়ার চোঁখ স্পষ্ট দেখা যায়নি, মেয়েটার চোখ আর ভ্রুয়ের কাছে দুইটা ছোটো তিল বলে দিচ্ছে এই মেয়ে টয়া।

ইয়াদ আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভয়ার্ত টয়াকে প্রশ্ন করলো,” তোমার পুরো নাম কি?” এমনিতে ভয়ে টয়ার হাত পা কাপছে তার মাঝে কি হয়ছে? ভয় পেয়েছো কেনো? না জিজ্ঞেস করে এই লোক পুরো নাম জানতে চাইছে। এর কোনো বিবেক বোধ নেই?
কাপা কাপা গলায় অর্নীহা তাবাসসুম বললো এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে টয়া। নাম শুনে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। টয়া খালি এদিকে ওদিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ একটু বুদ্ধি খাটিয়ে প্রশ্ন করলো,” এতো বড়ো নামে ডাকা যায় নাকি? ডাকনাম বলো।”

টয়া এই লোকটার হাব ভাব বুঝতে পারছে না। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও টয়া বললো সে।
ইয়াদের চোখে মুখে যেনো অন্য রকম খুশি। ইয়াদ একটু হেসে বলল,” চিৎকার করছিলে কেনো?”টয়া যেনো এই প্রশ্নেরই অপেক্ষায় ছিল সে গর গর করে বলতে লাগলো। ইয়াদ মুগ্ধ হয়ে টয়ার কথা শুনছে সব পাল্টালেও টয়ার কথা বলার ভঙ্গি এক রকম আছে।ইয়াদ টয়াকে আসস্ত করে বললো সে যেটা শুনেছে সেটা ইয়াদের পায়ের আওয়াজ ছিলো নীচে অনেক গন্ডগোল তাই সে উপরে নিজের রুমে যাচ্ছিলো।
নিচে গন্ডগোল তাই টয়ার চিৎকারের শব্দ কারো কানে পৌঁছায় নি।

ইয়াদ আবার প্রশ্ন করলো,” তুমি যাচ্ছিলে কোথায়?” প্রশ্নে টয়া ফোন আনতে যাওয়ার কথা বললো। ইয়াদ টর্চের আলো বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” যাও তাহলে এবার তো জানতে পেরেছো যে ওটা আমি ছিলাম।” টয়া কাদো কাদো চেহারা করে বললো,” আপনি একটু আমার রুম পর্যন্ত যাবেন? একা একা যেতে ভয় লাগছে।”

টয়ার বাচ্চাদের মতন আবদার শুনে ইয়াদ একটু হেসে বলল,” আচ্ছা চলো।”
ইয়াদ টয়াকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিলো টয়া এমন ভাবে হাঁটছে যেনো পিছন থেকে এক্ষুণি ভুত এসে তাকে ধরে নিয়ে যাবে। রুমে পৌছে টয়া বললো,” আপনি একটু লাইটা ধরে দাড়াবেন? আমি ফোনটা নিয়েই বেরিয়ে আসবো।”
ইয়াদ হা সূচক মাথা নাড়ল। টয়া ট্রেনের বেগে গিয়ে ফোনটা নিয়ে এলো। তারপর ইয়াদকে প্রশ্ন করলো,” আপনি এখন কি নিচে যাবেন?” ইয়াদ এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,” ঠিক বুঝতে পারছি না।”

টয়া হাসো হাসো করে বললো,” তাহলে চলুন নিচে যাই। আমিও নিচে যাবো, পরে আপনি আবার একা একা কিভাবে নিচে যাবেন?” বলেই একটা ঢোক গিললো টয়া। ইয়াদ একটা ভ্রু তুলে টয়ার দিকে তাকালো নিজের ভয়টা ইয়াদের ঘাড়ে দিয়ে দিচ্ছে টয়া।
নিজের যে একা একা নিচে যেতে ভয় লাগছে এইটা বলতে পারছে না। ইয়াদ বেঙ্গ করে বললো,” আসলেই একা একা যেতে গেলে যদি কারোর পায়ের আওয়াজ পাই তখন ভয় লাগবে, চলো একসাথেই যাই।”

টয়া আর কিছু বললো না। টয়া পা বাড়াতেই চশমার উপরে পা দিয়ে চশমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। চশমাটা হাতে নিয়ে মুখ কালো করে হাঁটতে লাগলো।
ইয়াদ টয়ার কাণ্ডে বেশ মজাই পাচ্ছে।
নিচে চারিদিকে মোম আর হারিকেন জ্বালানো টয়ার মনে হচ্ছে সে আফগানিস্তানের কেনো জঙ্গলে আছে। রাতের বেলা জমিদার বাড়ির বাহিরে চোখ গেলেই শুধু চাঁদের আলো তবে আশে পাশে মানুষ কম।
ভয় পেয়ে তিনটা মোমবাতি আর দুইটা হারিকেন সাথে নিয়ে বসে আছে। টয়ার ফ্রেন্ডরা বিষয়টা নিয়ে হাসাহাসি করছে তবে এতে টয়ার মাথা ব্যাথা নেই, হাসুক ওরা। যত হাসি ততো কান্না।
ইয়াদ টয়ার থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছে না।আচ্ছা টয়ার কি ইয়াদকে মনে আছে ?

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ৯ : #সবটা_আগের_মত
লেখিকা :#নবনী_নীলা
“আমি কি এই সিটে বসতে পারি।”ইয়াদের কথায় টয়া হা করে তাকিয়ে থেকে কান থেকে হেডফোন খুলে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি নিয়ে আবার তাকিয়ে আছে। ইয়াদ বুঝতে পারলো ওকে আবার জিজ্ঞেস করতে হবে। সে আবার প্রশ্ন করলো, প্রশ্নে টয়া ইতস্তত বোধ করে হা সূচক মাথা নাড়ল। গ্রামে ফ্রী ট্রিটমেন্ট দেওয়ার কাজ বিকেল পর্যন্ত গড়িয়েছে। খেয়ে দেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় বাসে উঠলো সবাই। ইয়াদের গাড়ি করে যাবার কথা ছিলো সে ড্রাইভারকে ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়ে সেখানে চলে যেতে বললো। ইয়াদ বাসে উঠেই টয়ার পাশের সিট খালি দেখে অন্য কোথাও বসার চিন্তা করলো না।

টয়া জানালার পাশে বসে গান শুনছে, ইয়াদকে না করেনি কারন কাল রাতে লোকটা তাকে হেল্প করেছে। এভাবে একজন ছেলের সাথে পাশাপাশি বসে যেতে তার কেমন যানি লাগছে।
ইয়াদ পকেট থেকে ফোনটা বের করতে গেলে তার আইডি কার্ডটা পরে যায়। ইয়াদ তুলতে যাওয়ার আগেই টয়া সেটা হাতের কাছে পেয়ে তুলে দিতে গেলেই নামটা তার চোখে পড়ে
” ইয়াদ আরফিন ” নামটা তার চেনা। টয়ার মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। ইয়াদ আইডি কার্ডটা হাতে নিয়ে thank you বললো। টয়া শুধু মাথা নাড়ল কিছু বললো না।

টয়া কিছুক্ষণ পর পর ইয়াদের দিকে তাকাচ্ছে। ভালোভাবে তাকানোর পর এবার তার চেহারাটা চেনা চেনা লাগছে। এটা কি করে সম্ভব? এতো বছর পর হটাৎ আজ..? ইয়াদ কি জানে সে যে টয়া। হয়তো ভুলে গেছে, ভুলে গেলেই ভালো।
কিন্তু আসলে কি ভুলে গেছে? কাল রাতের সেই গানটা সেটা কেনো গেয়েছে সে? আর তার পুরো নামটা জিজ্ঞেসই বা করেছিলো কেনো? তাহলে কি ইয়াদ জানে এই মেয়েটাই সেই টয়া।
এইগুলো ভেবেই টয়ার অস্থির লাগছে, ইয়াদ আবার বসে আছে তার পাশে। অনেক কষ্টে যেই দিনগুলো সে ভুলে থেকেছে এতো বছর
আজ হটাৎ এক মুহুর্তে সবটা মনে পড়ল তার।

ইয়াদ কি কাজে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো টয়া উঠে দাঁড়ালো। ইয়াদ একটু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো, হটাৎ আবার কি হলো? টয়া অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি বের হবো।” ইয়াদ কিছু চিন্তা না করেই টয়াকে বের হবার জায়গা দিতেই টয়া বের হয়ে পিছনে দুই সিট পরে তানিমার পাশে গিয়ে বসলো।
ইয়াদ প্রথমে বুঝলোই না কি হলো? হটাৎ এভাবে উঠে চলে গেলো কেনো? তখন আইডি কার্ডের কথাটা মনে পড়লো, তার মানে টয়া নামটা পড়ে বুঝতে পেরেছে সে যে ইয়াদ। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে সীটে মাথা রাখলো। এভাবে উঠে যাওয়ার মানে কি টয়া সেদিনের কথা গুলোর জন্য রাগ।
না হলে এভাবে উঠে যাবে কেনো?
টয়া তানিমার পাশে বসতেই তানিমা বলে উঠলো,” কিরে হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে রেখে আমার পাশে আসলি যে? কিছু কি করেছে?”
টয়া শুধু বললো,” ঘুম পাচ্ছে। একটু আমাদের লাইটা অফ করে দিতে বলবি?”
ইয়াদ সবটাই খেয়াল করলো এভাবে উঠে চলে যাওয়ায় ইয়াদের রাগ হচ্ছে। সে রাগটা সামলে নিয়ে সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

রাত সাড়ে দশটার দিকে বিকট এক শব্দে
টয়া ভয়ে দাড়িয়ে পরে।সবাই চিন্তিত হয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে। এর থেকেও বিরক্তিকর কথা হচ্ছে তাদের কাছে এক্সট্রা কোনো টায়ার নেই, টায়ার আনতে নাকি এক ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। কথা শুনে সিনিয়র কিছু মানুষ চেঁচামেচি করতে লাগলো।
পরে কোনো মতে পরিবেশ ঠাণ্ডা হলো সবাই সিদ্ধান্ত নিলো তারা বাসের বাহিরে গিয়ে দাঁড়াবে এই কিছুক্ষণ। ইয়াদ নিজের সিটে বসে আছে, টয়ার অপেক্ষায় সে কখন নামবে।
টয়া উদাস হয়ে বাস থেকে বের হতেই পিছু
পিছু ইয়াদও বাস থেকে নেমে আসে।

টয়া অপন মনে ঘুরছে চারিপাশ। আশেপাশে জঙ্গলের মতন জায়গা আছে। বাসের বাকিরা উল্লাস করে রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে চা খাচ্ছে। এদিকে টয়ার পিছু পিছু ইয়াদও হাঁটছে। ইয়াদের মনে হচ্ছে সাত বছর আগের সাথে আজকের অনেক মিল পার্থক্য শুধু আগে টয়া পিছু পিছু আসতো, এখন ইয়াদ পিছু পিছু যাচ্ছে। টয়া নিজের মতো হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ তার কানে এলো,” ওদিকে জঙ্গল , ওদিকে যাওয়াটা safe না।”

হটাৎ আওয়াজেই টয়া লাফিয়ে ওঠে পিছনে তাকালো। পিছনে ইয়াদ দাড়িয়ে, এবার সে চারপাশে তাকালো ভয়ে নাজেহাল অবস্থা টয়ার। যেদিকে তাকাচ্ছে চারিদিকে শুধু গাছপালা। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে সে নিজেও জানে না। আর টয়ার পিছু পিছু ইয়াদ এসেছে কেনো সেটাও সে বুঝতে পারছেনা।

ইয়াদ এগিয়ে গিয়ে বললো,” টয়া চলো এখান থেকে, জায়গাটা ভালো মনে হচ্ছে না।” টয়ার হাত পা যেনো শীতল হয়ে গেছে কেনো এমন হচ্ছে? সাত বছরেও কি টয়ার অনুভুতি পাল্টায় নি? সব কেনো আগের মত লাগছে। টয়া সেই দিনগুলোতে আর ফিরে যেতে চায় না অনেক কাদিয়েছে সেই দিনগুলো তাকে। ইয়াদ টয়াকে আবার বললো,” চলো।”
টয়া ভারী গলায় বললো,” আমি যাবো না আপনার সাথে। যেতে হলে একাই যেতে পারবো।”

ইয়াদ কিছুটা চমকালো কিন্তু বুঝতে পারলো যে রাগের জন্যই বলছে এসব। ইয়াদ এক হাত পকেটে ভরে বললো,” কেনো আমার সাথে গেলে কি আমি তোমাকে গিলে ফেলবো? এমনিতে আমার সাথে না যেতে চাইলে থাকো, একটু পর সিঙ্গেল ভূতেরা পেত্নী খুঁজতে বের হলে তাদের সুবিধাই হবে, হাতের কাছে একটা পেত্নী পেয়ে যাবে।”

ভুত পেত্নীর কথা টয়া সহ্য করতে পারে না। টয়া একটা চিৎকার দিয়ে ইয়াদের আশেপাশে এসে দাড়ালো তারপর মেজাজ দেখিয়ে বললো
,” আপনি আমাকে পেত্নী বললেন কেনো?”
ইয়াদ দুই হাত পকেটে ভরে হাঁটতে হাঁটতে বললো,”এতো কথার উত্তর আমি দিতে পারবো না, ইচ্ছে হলে আমার সাথে এসো না হলে ভূতেদের জন্য অপেক্ষা করো।”

টয়া ইয়াদের পিছু পিছু হাটছে তার কাছে আর কোনো উপায়ও নেই। কি ধরনের কথা বলছে, সিঙ্গেল ভুত আবার কি? ভূতেরা কি আবার প্রেম করে নাকি? আজই শেষ দেখা এরপর টয়া আর কোনোদিন ইয়াদের মুখোমুখি হতে চায় না।
ইয়াদের পিছু পিছু টয়া রাস্তার পাশের খালি জায়গা যেখানে সবাই আছে সেখানে এলো।

কিছুক্ষণ পর টায়ার নিয়ে লোকটা এসে যায়। টায়ার বদলাতে লোকটার আরো কিছুক্ষণ সময় লাগে এর মাঝে টয়া এক কাপ চা খেয়ে নেয়। টায়ার বদলানো শেষে ড্রাইভার সবাইকে তাড়া দেয় টয়া চায়ের টাকা দিয়ে বাসে উঠবে এমন সময় ইয়াদ টয়ার সামনে এসে বলে,” এখন গিয়ে চুপচাপ আমার পাশের সিটে বসবে।”

টয়ার যেনো মাথার উপরে ভারী কিছু দিয়ে কেও বাড়ি দিচ্ছে এমন মনে হলো ইয়াদের কথা শুনে। টয়া কেনো তার পাশে বসতে যাবে, আর এমন হুমকি বা দিচ্ছে কেনো? টয়া আরো রেগে বললো,” মুড়ির মোয়া পেয়েছেন ? ইচ্ছে মতন! আমি কেনো আপনার সাথে বসতে যাবো? জীবনেও বসবো না।”

এমন সময়ে গাড়ির কন্ডাক্টার এসে বললো,” গাড়িতে উইঠ্যা কথা বইলেন। অহন চলেন, উডেন।”
ইয়াদ মুখ শক্ত করে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, টয়া সেটা গ্রাহ্য না করে বাসে উঠে পড়ল। বাসে উঠে টয়া থ। যে যার সিটে না বসে সবাই ইচ্ছে মতন উল্টা পাল্টা করে বসেছে নিজের মতন। টয়া দেখলো শেষের দুইটা সিট বাদে সবগুলো ভরাট। টয়া ফ্রেন্ডদের উঠে পিছে যেতে বললে তারা বলেছে,” তুই দেরী করে উঠেছিস কেনো? যা এবার, পিছে বসে বাকি রাস্তা যাবি।”

টয়া ভালোই বুঝতে পড়ছে এই বেয়াদবগুলো ওকে বসতে দিবে না।
এর মাঝে ইয়াদ শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে পিছের সিটে এসে বসে পড়লো। টয়া বাধ্য হয়ে ইয়াদের পাশের সীটে গাল ফুলিয়ে বসলো। ইয়াদ বাকা হাসি দিয়ে বললো,” যা হওয়ার সেটা তো হবেই, তুমি চাইলেও আটকাতে পারবে না।”
ইয়াদের কথায় টয়া রাগ আরো বেড়ে গেছে তার ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে নেমে যায় কিন্তু সেটা সম্ভব না, বাধ্য হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে তাকে।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here