তোমার_খোঁজে_এই_শহরে পর্বঃ১২:#অভিমান,১৩

0
1332

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১২:#অভিমান,১৩
লেখিকা:#নবনী_নীলা
পর্বঃ১২

ওই ঘরিওয়ালির জন্যে না হলে এই মেয়েকেই আমি বউ করে আনতাম।”ইয়াদ মায়ের কথায় হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না। মিলি আক্তার অবাক হয়ে বললো,” কিরে এভাবে হাসছিস যে?”ইয়াদ হাসি থামিয়ে বললো,” যদি বলি তাকে পেয়ে গেছি?”
মিলি আক্তার হা করে ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” পেয়ে গেছিস মানে? ” ইয়াদ হা সূচক মাথা নাড়ল।
ইয়াদ লক্ষ করলো তার মায়ের চেহারাটা কেমন হয়ে গেলো। ইয়াদ কোমরে হাত দিয়ে বললো,” কিন্তু কোনো লাভ হয়নি মা। মেয়েটা আমার উপর রেগে আছে নাকি বিরক্ত হয়ে আছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
মিলি আক্তার একটু চিন্তিত হয়ে বললেন,” কিছু করেছিস তুই? রাগ করে থাকবে কেনো?”
ইয়াদ নিচু স্বরে বললো,” তুমি তো জানো রাগ হলে আমি কি করি আমার ঠিক নেই, হয়তো তাই।”
” আচ্ছা ঠিক আছে বলতে ভালো লাগলে বলিস না। কিন্তু তুই কি মেয়েটাকে sorry বলেছিস?” বলে ছেলের কাধে হাত রাখলেন।
ইয়াদ মনে মনে বললো,” sorry বলার সুযোগ দিয়েছে নাকি? দেখলেই পালাই পালাই করে।”

ইয়াদ না সূচক মাথা নাড়ালো। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,” মনে হয় মেয়েটা অভিমান করেছে। রাগ জিনিসটা অনেকদিন পুষে রাখা যায় না। অভিমান আর ঘৃনা জমে থাকে। তোকে ঘৃনা করলে তোকে কখনো সহ্য করতে পারতো না, রাগ দেখাতো না। মেয়েটা অভিমান করেছে বুঝলি। বাপ আর ছেলে হয়েছে এক রকম কিচ্ছু বুঝে না।”
ইয়াদ নিজের মায়ের কথা ফেলতে পারছে না। হয়তো সত্যিই অভিমান করে বসে আছে টয়া। ইয়াদ প্রসঙ্গ ঘুড়িয়ে বললো,” তোমার কি বাবার কথা খুব মনে পড়ছে ? কিছুক্ষণ পর পর বাবার কথা বলছো যে?”
” তোর বাবা! ওই লোক কি জানে কিভাবে বউয়ের খেয়াল রাখতে হয়। সে দিনে যতবার খাবার খায় নিয়ম করে ততবার ফোন করে। সকালে একবার, দুপুরে একবার, রাতে একবার। এর বাহিরে একবার ও ফোন করে খোঁজ নেয় নি।”বলতে বলতে মিলি আক্তার কিচেনে গেলেন।
ইয়াদ পিছু পিছু গিয়ে বললো,” তুমি তো বলো আমি বাবার মতো তাহলে আমারও নিশ্চই বিয়ের পর বউয়ের মুখে এসব শুনতে হবে। থাক বাবা বিয়ে নামক ভেজালে আমি পড়ছি না।”বলে ইয়াদ নিজের রুমে চলে যায়। মিলি আক্তার আর কিছু বললেন না চাইলে বলতে পারতেন।

_______________________

টয়া বের হয়েছিলো ছাদে হাঁটতে যাবে বলে এমন সময় ইয়াদ ও বের হয়। ইয়াদকে দেখে টয়া রুমের ভিতরে চলে যাবে এমন সময় ইয়াদ হাত ধরে ফেলে। টয়া বিস্ময় নিয়ে ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর,” আপনি আমার হাত ধরেছেন কেনো? ছাড়ুন । কেউ দেখলে কি ভাববে ছাড়ুন।” বলে হাত ছড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। ইয়াদ হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,” ছাদে যাবো চলো।”
টয়া আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” ছাদে যাবো চলো মানে? আমি কেনো আপনার সাথে ছাদে যাবো? আপনার যেতে ইচ্ছে হলে আপনি যান।”
” ছাদে যেতে বলেছি, ছাদ থেকে লাফ দিতে বলিনি। ” বলেই একটা ভ্রু তুলে তাকালো ইয়াদ।
টয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে ছাদের দিকে হাঁটতে লাগলো, তার এমনিতেই খুব আকাশ দেখতে ইচ্ছে করছে। ইয়াদের জন্যে ইচ্ছে নষ্ট করার কোনো কারণ নেই।
ইয়াদ ভেবেই পায় না, এই মেয়েটার মাথায় যে কি চলে? একটু আগে কি বলল আর এখন কি করছে?

টয়া ছাদের এ মাথা থেকে সে মাথা আপন মনে হেটে চলে চলেছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ বসে থেকে টয়ার হাটাহাটি দেখলো। এই মেয়ে দেখি থামার নাম নিচ্ছে না। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে টয়ার হাত ধরে ওকে দাড় করালো। টয়া সেই আবার শুরু করেছে আপনি আমার হাত ধরলেন কেনো???……. ইয়াদ রেগে বলল,” চুপ, আমি হাত ধরলে কি তোমার হাত খসে পড়বে?”
টয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,” সে তো পড়বেই, শুনুন আমার হাত ধরার অধিকার আপনার নেই বুঝলেন?”

ইয়াদ রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো। টয়া সেটা তোয়াক্কা না করে বললো,” রাগ দেখাচ্ছেন আমাকে? শুনুন আপনার রাগকে না আমি ভয় পাই না। রাগ দেখাচ্ছে আমাকে।”
ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া সন্দেহের চোখে বললো,” আপনি এগিয়ে আসছেন কেনো? ” কথায় কোনো কাজ হলো না। ইয়াদ এগিয়ে আসছে দেখে টয়া পিছাতে লাগলো। বেশি কথা বলা ঠিক হয় নি এবার রাগের মাথায় কিছু করে বসলে। পিছাতে পিছাতে টয়া ছাদের রেলিং আর সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ এগিয়ে এসে টয়ার দুপাশের রেলিং এ দুই হাত রাখলো।
টয়া এক ঢোক গিলে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। ইয়াদের স্থির দৃষ্টি যে টয়ার দিকে, টয়া সেটা বুঝতে পারছে। টয়া ঘামতে লাগলো, এর মাঝে ইয়াদ বলে উঠলো ” ঘামছো কেনো? ” টয়া একবার ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,” আপনি সরুন।”
ইয়াদ একটু কাছে এসে বললো,” আচ্ছা আমি কাছে আছি বলে নার্ভাস লাগছে তাই কি ঘামছো। এতো সুন্দর আবহাওয়া বাতাস বইছে তাও এমন হওয়ার কথা না।”
ইয়াদের এই কথাগুলো শুনে টয়ার হার্টবিট বেড়ে গেছে।
টয়া কিছু বলতেও পারছে না। ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” একটা কথা বলার ছিলো শুনবে?”
টয়া ইয়াদের চোখের দিকে তাকালো তাকানোর সাথে সাথে আবার চোখ নামিয়ে ফেললো। ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। ইয়াদের নিরবতায় টয়ার ভয় লাগছে। কি বলবে এবার সে? ভয় গলা শুকিয়ে এসেছে টয়ার।
টয়া যেনো ইয়াদের নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে।

ইয়াদ নিরবতা ভেঙ্গে বললো,” সেদিনের জন্য কি আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?” কথাটা শুনার সাথে সাথে বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। কোনদিনের কথা বলছে ইয়াদ? টয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,” কোন দিনের কথা বলছেন আপনি?” নিজের বলা কথায় ইয়াদ নিজেও লজ্জিত।
ইয়াদ একটু চুপ থেকে বললো,” আমি তোমাকে যেই কথাগুলো বলেছিলাম…. আসলে আমি নিজেও বুঝিনি কথাগুলো কতটা ভুল। সেদিনের ভুলের জন্য….” ইয়াদ বলে শেষ করার আগেই

টয়া চোখ ছল ছল করে এলো টয়া নিজেকে সামলে বললো,” থাক, আমি সেসব কথা শুনতে চাই না। আর ক্ষমা চাওয়ার কি আছে আপনার যা মনে হয়েছে, আপনি যা বিশ্বাস করেছেন সেটাই বলেছেন। আর আপনি ঠিকই বলেছিলেন…. কারণ আপনি না বললে আমি বুঝতেই পারতাম না আমি যে খারাপ।”
ইয়াদ কিছু বলতে নিলো টয়া থামিয়ে বললো,” দেখুন যা হবার সেটা হয়েগেছে। আমি ভুলে গেছি আপনিও ভুলে যান।”
টয়ার কথাগুলো যেনো ইয়াদের বুকে গিয়ে লাগলো তারপরও সে বললো,” তুমি রাগ করে বলছো?”
টয়া একটু হেসে বললো,”রাগ কেনো করবো বলুনতো? রাগ করিনি। বললাম তো আপনিও ভুলে যান। যদি কখনো মনে পড়ে ভাববেন সেটা একটা দুঃস্বপ্ন।”
ইয়াদ আর কথা বলার ভাষা খুঁজে পেলো না , ইয়াদ রেলিং থেকে হাত সরিয়ে নিলো। টয়ার গাল বেয়ে পানি পড়তেই টয়া সেটা মুছে নিয়ে ছাদ থেকে বেড়িয়ে যাবে এমন সময়ে টয়া থমকে গেলো। টয়ার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে। সামনে ইয়াদের মা দাড়িয়ে, তাহলে তিনি কি এতক্ষন সবটা দেখেছেন?

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৩ : #সেই_মেয়ে
লেখিকা :#নবনী_নীলা
“তোমরা এতো রাতে কি করছো ছাদে?” ইয়াদের মায়ের প্রশ্নে টয়া ঘাবড়ে গেলো, ইস আণ্টি নিশ্চই উল্টা পাল্টা কিছু ভেবে বসে আছে।টয়া আমতা আমতা করে বলল,” আসলে আণ্টি, আমি একটু বাতাসে দাড়ানোর জন্যে এসেছিলাম।” ইয়াদ নিজের মাকে দেখে কোনো মাথা ব্যাথা নেই, সে চুপ করে আছে। মিলি আক্তার হাই তুলতে তুলতে বললো,” আচ্ছা, আমার ছেলেটাও কি হাওয়া খেতে এসেছে?” বলে ইয়াদের দিকে তাকাতেই ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে ঈশারায় চুপ থাকতে বললো। এটা দেখে মিলি আক্তার বললো,” ও আচ্ছা তোর রুমের এসি নষ্ট!” ইয়াদ মলিন চোখে মায়ের কান্ড দেখছে। টয়া অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” আণ্টি আমি তাহলে যাই।”
মিলি আক্তার টয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” আচ্ছা যাও, Good night.” টয়া ছাদ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসলো এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে সেটা সে কল্পনাও করেনি।
ইয়াদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই তার মা তাকে একটা মেয়ের সাথে তাকে এতো রাতে ছাদে দেখেছে এটা তার কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। সেটা তো হবেই যেখানে মিলি আক্তার নিজেই তুচ্ছ করেই ধরেছেন। তিনি বললেন,” কিরে তোর ঘরিওয়ালি থেকে better না?” ইয়াদ ছাদে রেলিং এ হেলান দিয়ে ঠোঁট উল্টে না সূচক মাথা নাড়ল।
মিলি আক্তার আড় চোখে তাকিয়ে রইলেন। ইয়াদ হেসে উঠে বললো,” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? তোমার টিয়া পাখি better কিন্তু আমার ঘরিওয়ালী best।”
” হায়রে রোমিও ! কি ভালোবাসা! হাওয়া খাওয়া শেষ হলে চলেন রোমিও স্যার ঘুমাতে যাই।”, ইয়াদ পৃথিবীতে দুজন নারীকে দেখে আজ পর্যন্ত বিস্ময় নিয়ে ভেবেছে কারণ এরা এতো আলাদা, একজন তার মা আরেকজন টয়া। ইয়াদের ইচ্ছে করে এদের আসে পাশে থাকতে, এই ভালোলাগা এই বিস্ময় সে আর কোথাও খুঁজে পায় নি।

_________

টয়ার আজ ঘুম ভেঙেছে দেরী করে। আজ তার এক ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিল। সে হুড়োহুড়ি করে রেডি হয়ে দরজা খুলে বের হতেই দেখতে পেলো ইয়াদও বের হচ্ছে। এই ছেলেটা আর সময় পেলো না এবার যদি একসাথে লিফটে উঠে তাহলে উপর নীচে উপর নীচে না এই ঝামেলায় টয়া আর পড়তে চায় না। ইয়াদ টয়াকে দেখার আগেই টয়া দৌড় দিয়ে লিফটে পৌঁছে যায়। কারোর দৌড়ানোর শব্দে ইয়াদ তাকিয়ে দেখলো টয়া লিফটের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। ইয়াদ কিছুই বুঝতে পারছেনা মেয়েটা কেনো যে তাকে দেখলেই পালাই পালাই করে আগেই ভালো ছিলো খোঁজার আগেই হাজির হয়ে যেতো।
ইয়াদ কিছুক্ষণ লিফটের জন্যে দাড়িয়ে অপেক্ষা করলো। কিন্তু অনেক্ষন হয়েগেছে লিফট উপরে আসছে না। বাটন টাও ঠিক মতন কাজ করছে না। ইয়াদ পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করলো আজ বোধয় তার এই সিড়ি বেয়েই নিচে যেতে হবে। লিফটা কি নষ্ট হয়ে গেলো? এগারো তলা থেকে হেটে নিচে নামবে? কি অসহ্য ব্যাপার! ইয়াদ অবশেষে নীচে নেমে পৌঁছালো ইয়াদের মাথা ভীষণ গরম হয়ে গেলো। লিফটে প্রবলেম থাকলে আগে থেকে ঠিক করে রাখা উচিৎ ছিলো। ইয়াদ রেগে গার্ডকে বলতে গেলো,” আপনাদের লিফট কেনো কাজ করছেনা? নামার সময় একটু ইজি হলেও যারা একটু মধ্যবয়সী তাদের জন্য তো বিশাল সমস্যা। এতটা irresponsible কি করে হতে পারেন?”

“স্যার লিফটের দায়িত্বে তো আমি নেই। দাড়ান আমি এক্ষুনি পাশের রূমে জিজ্ঞেস করছি। তাই তো বলি কিছুক্ষণ আগে মনে হলো কেউ লিফটে নীচে নামছে কিন্তু এখনো আসেনি। দাড়ান আমি এক্ষুনি দেখছি।” লোকটার কথা শুনে ইয়াদের কেনো জানি খারাপ কিছু মনে হলো। টয়া ঠিক আছে তো? ঠিক মতো নীচে পৌঁছাতে পেরেছে? লোকটা পাশের রুমে যেতেই ইয়াদ লোকটাকে থামিয়ে প্রশ্ন করলো,” আচ্ছা, টয়াকে দেখেছেন যেতে, একটু আগে কাউকে দেখেছেন? একটা মেয়ে সাদা ড্রেস গলায় নেভিব্লু স্কার্ফ ?”

গার্ড কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলো তারপর বললো,” ও আচ্ছা বুঝেছি, ভার্সিটিতে যায় তো উনি প্রতিদিন। কিন্তু কই আজ তো দেখলাম না।”
গার্ডের কথায় ইয়াদের চোখ মুখ অস্থিরতায় ভরে গেলো। টয়া লিফটে আটকা পড়েনি তো? দশ মিনিটের মতো তো হয়েছে টয়া বেরিয়েছে। ইয়াদ গার্ডের সাথে পাশের লিফট কন্ট্রোল রূমে গেলো। সেখানে যে দায়িত্বে আছে সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে দেখেই ইয়াদের মাথায় রক্ত ওঠে গেলো। গার্ড তাড়াহুড়ো করে সেই ছেলেকে ডেকে তুললো। ছেলেটা উঠার সাথে সাথে ইয়াদ কড়া গলায় বললো,” লিফটে কি সমস্যা? তোমাকে দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে আর তুমি পরে পরে ঘুমাচ্ছো।” ইয়াদের কথায় ছেলেটা ভয় পেয়ে উঠে দেখে বললো,” একটু সমস্যা হয়েছে কিছুক্ষনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
ইয়াদের ভিতরটা চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। ইয়াদ রেগে গিয়ে বললো,”কিছুক্ষণ মানে? এক্ষুণি আমাকে লিফটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাও। What the hell! তোমার কম্পিউটার বন্ধ কেনো?” বলে ইয়াদ জোরে টাবিলে একটা বাড়ি দিলো। ছেলেটা ভ়ঙ্করভাবে ভয় পেয়ে জলদি সিসিটিভি ফুটেজ অন করলো। ইয়াদ সিসিটিভি ফুটেজে স্পট টয়াকে দেখতে পাচ্ছে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
ইয়াদের মেজাজ হারিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরে বলে,” you bustard, তোমাকে এখানে রাখা হয়েছে পরে পরে ঘুমানোর জন্য? দুই মিনিটের মধ্যে লিফট খোলার ব্যবস্থা করো টয়ার যদি কিছু হয় না I swear আমি তোমাকে দেখে নিবো। তোমার চাকরি তো এমনেতেই শেষ।”

ইয়াদের ধমকে গার্ড আর ছেলেটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব লিফট খোলার ব্যবস্থা করে। টয়াকে কোলে করে ইয়াদ নিজের বাসায় নিয়ে আসে।

টয়ার জ্ঞান ফিরলেও বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার কারণে ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। টয়ার এমন অবস্থায় মিলি আক্তার চিন্তায় পড়ে যায়। এদিকে ইয়াদ নিজের পরিচিত একজন ডক্টরকে বাসায় আনে। তিনি বলেছেন মেয়েটা প্রচন্ড ভয় পেয়েছে । মণে হয় ছোট বেলার কোনো ভয় ভিতরে ঢুকে গেছে দেখে রাখতে হবে আর কাছাকাছি একজনকে সবসময় থাকতে বলেছেন। ইয়াদ নিজেও এটাই ধারণা করে ছোটো বেলার কি এমন ভয় থাকতে পারে টয়ার ?

অনেক্ষন পর টয়ার ঘুম ভাঙ্গলো ছোটবেলার সেই দুঃস্বপ্নে সে ঘুমের মাঝে ছোটফটিয়ে হালকা চোখ খুললো। সাড়া শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে, চোখ খুলেই সামনে কাউকে না দেখে ভয়ে একাকার হয়েগেছে টয়া। এ জায়গায় সে আগে কখনো আসেনি। এটা কোথায়? টয়া উঠে বসতে বসতে মা মা করে চিৎকার করতে লাগলো। ছোটোবেলায় ফুফুর বিয়েতে লুকোচুরি খেলতে গিয়ে অন্ধকার স্টোর রুমে লুকিয়েছিলো টয়া। তাকে কেউ যাতে খুজে না পায়। কে জানি সেদিন দরজাটা বাহির দিয়ে আটকে দিয়েছিলো।
ভয় আর আতঙ্কের সে চিৎকার আর কান্না কেউ শুনেনি সেদিন। যখন খুজতে খুজতে স্টোর রুমে আসে তখন নিস্তেজ হয়ে এসেছিলো সেই ছোট্ট শিশুটির দেহ। আজ সেই জায়গায় আবার ফিরে গিয়েছিল টয়া। আজও তার কান্না কেউ শুনেনি। টয়া কাদতেঁ লাগলো, টয়ার ডাকে মিলি আক্তার রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন। ইয়াদ পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

মিলি আক্তার টয়াকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেস্টা করলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। টয়া থর থর করে কাঁপতে লাগলো। কিছুক্ষন পর টয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলো। তবে তার ভয় কমে নি। ইয়াদ শান্ত ভঙ্গিতে একপাশে দাড়িয়ে ছিলো। মিলি আক্তার ছেলেকে বললো,” একটু মেয়েটার পাশে এসে বস। আমি ওর জন্য সুপটা গরম করে আনি।” ইয়াদ টয়ার পাশে এসে বসলো কিন্তু টয়া মিলি আক্তারের কাপড়ের এক অংশ ছোটো বাচ্চাদের মতো হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে আছে। মিলি আক্তার বুঝিয়ে সুজিয়ে টয়াকে ইয়াদের কাছে রেখে গেলো। টয়ার ইচ্ছে করছে কিছু একটা শক্ত করে ধরে রাখতে। ইয়াদ শান্ত চোখে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া হাতের কাছে কিছু না পেয়ে বিছানার চাদর ধরে আছে কিছুক্ষণ পর পর টয়ার সেই অন্ধকার ঘরের কথা মনে পড়তেই কেপে উঠে। ইয়াদ টয়কে কীভাবে সামলাবে বুঝতে পারছেনা। ইয়াদ টয়ার হাত ধরতে নিয়েছিলো টয়া হাত সরিয়ে নিয়েছে। ইয়াদ টয়াকে এই মূহুর্তে জোর করতে চাচ্ছে না। মেয়েটা বড্ডো জেদি সেটা ধীরে ধীরে ইয়াদ টের পাচ্ছে।
ইয়াদ নিজের শার্টের হাত ভাঁজ থেকে নামিয়ে সেই হাতটা টয়ার সামনে বাড়ালো। টয়া ক্লান্ত চোঁখে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ চোখে হাতের দিকে ইশারা করলো। টয়া কিছুক্ষণ ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে ইয়াদের শার্টের হাতার কিছু অংশ মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। ইয়াদ টয়ার কান্ড দেখে হাসলো, ভয়ে আছে তাও নিজের জেদ বজায় রাখবে। হাতটা ধরলে কি অসুবিধা হতো তার।
কিছুক্ষন পরেই ইয়াদের মা গরম সুপ এনে টয়াকে খাইয়ে দিলেন। ইয়াদ পাশেই বসে ছিলো। টয়া এখন অনেকটাই স্বাভাবিক তবে সে যে ইয়াদের বসায় ইয়াদের রূমে বসে আছে ব্যাপারটা টয়া এই মাত্র খেয়াল করলো। রুমটা অচেনা লাগছিলো তবে এটা যে ইয়াদের ফ্ল্যাট এটা এবার স্পষ্ট। টয়া টিপ টিপ করে একবার ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। এবার টয়ার নজর গেলো নিজের হাতের দিকে এতক্ষন ধরে ইয়াদের শার্টের হাতা ধরে বসে ছিল কেনো? এখন ইয়াদের মা সামনে আছে। উনি দেখেছেন নাকি? কালকে রাতে একবার…. কি শুরু হয়েছে এগুলো তার সাথে? ভেবেই সঙ্গে সঙ্গে ইয়াদের শার্টের হাতা ছেরে দিয়ে হাতটা নিজের কম্বলের ভিতরে নিয়ে গেলো।
টয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ইয়াদ টয়াকে আরেকটা ওষুধ খাইয়ে দিলো এরপর অনেকটাই ভালো হয়ে উঠবে টয়া। টয়ার শরীর ক্লান্ত হওয়ায় সে শুয়ে পড়তেই চোখ দুটো ঘুমে ঘিরে ধরে।
ইয়াদ একটা চেয়ার এনে টয়ার খাটের পাশে বসে টয়ার ব্যাগের বাহিরে থাকা কিছু ডিজাইন দেখছিলো। এমন সময়ে মিলি আক্তার এসে টয়ার মাথার কাছে বসলো। তিনি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে প্রশ্ন করলো,” আচ্ছা আরফিন ?” মায়ের ডাকে ইয়াদ মায়ের দিকে ফিরলো। ” এই টয়া কি সে মেয়ে যার ঘড়িটা আমার ছেলে এতো বছর আগলে রেখেছে?”
মায়ের কথায় ইয়াদ হেসে বলল,” হটাৎ তোমার এমন মনে হলো কেনো, মা?”
” আমিতো মা, আমি বুঝি। তোর চেহারায় এতো টেনশন কেনো বলতো? আমাকে বল কি হয়েছে?” মায়ের প্রশ্নে ইয়াদ শব্দ করে একটা নিশ্বাস ফেলে টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,” একটা ভুল করেছিলাম।”
” অনেক শুনেছি তোর এসব কথা। এই টয়া কি সেই মেয়ে? আমাকে শুধু এই প্রশ্নের উত্তর দে।”, ইয়াদ নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে,” হুম ” বললো।

” আচ্ছা ঠিক আছে, বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”, মায়ের এমন কথা শুনে ইয়াদ অবাক হয়ে বললো,” দেখে নিচ্ছ মানে? ”

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here