তোমার_খোঁজে_এই_শহরে পর্বঃ১৮: #আরো_কাছাকাছি,১৯

0
1170

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৮: #আরো_কাছাকাছি,১৯
লেখিকা:#নবনী_নীলা
পর্বঃ১৮

“বলেছিলাম না এরপর থেকে আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবো। So come here” দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল ইয়াদ। টয়া শাড়ি হাতে মূর্তির মতন দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজা উচিৎ হয় নি এ আবার কোন বিপদে পড়লো সে। ড্রাইভার এক বুড়িকে পেয়েছে সে তার ঘরে আশ্রয় দিতে রাজী হওয়ায় ওরা আজ রাতের জন্য এখানে চলে এলো। জামা কাপড় ভিজে যাওয়ায় টয়াকে বুড়ি একটা সিল্কের শাড়ি পরতে দিয়েছেন। শাড়ি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে ইয়াদকে বের হয়ে যেতে বলবে। টয়া পরেছে আরেক বিপদে। হাতে শাড়ি দেখেই ইয়াদ দুষ্ট ভাবে বললো সে শাড়ি পরিয়ে দিবে। শুনেই যেনো টয়ার পিলে চমকে উঠে।

ইয়াদ পকেটে হাত ভরে টয়ার দিকে এগিয়ে আসছে টয়া পিছিয়ে যেতে চাইলো ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে আসলো টয়া ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে। শরীর যেনো বরফ হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার গালের পাশের চুল গুলো সরিয়ে বললো,” অনেক জ্বালিয়েছো আমায় এবার তো তোমায় ভুগতে হবে। ইয়াদ আরফিন এতো সহজে তোমায় ছাড়বে না।”
ইয়াদের কথায় টয়ার গলা শুকিয়ে এলো। সত্যিই কি এমন কিছু করবে ইয়াদ ভাবতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার।
টয়া কাপা কাপা গলায় বলল,” আমি জামা চেঞ্জ করবো না। দরকার নেই আমার শাড়ির। এভাবেই থাকবো”
ইয়াদ টয়ার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো,” তোমার দরকার নেই কিন্তু আমার তো আছে।”
টয়া চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে বললো,” বললাম তো দরকার নেই।” ইয়াদ তর্জনী টয়ার মুখের সামনে ধরে বললো,” আস্তে!”
টয়ার কাছে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,” পাঁচ মিনিট দিলাম
শাড়িটা পরে ফেলো। ঠিক পাঁচ মিনিট পর আমি এই রূমে আসবো ততক্ষনে পড়তে না পারলে, আমি তো আছি।”
বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। টয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। যেভাবে এগিয়ে এসেছিলো টয়ার তো মনে হয়েছিলো সত্যি সত্যি বুঝি এমন কিছু করবে সে। টয়া হাপাতে লাগলো। অসহ্য লাগছে এই ঘরে আবার ছিটকিনিটা এতো উপরে যে টয়ার নাগালের বাইরে। টয়া দরজার সামনে আপাদত একটা চেয়ার রেখে বন্ধ করে রাখলো। জলদি এই শাড়ি পড়ে বের হতে হবে কখন আবার হুট করে চলে আসবে কে জানে? লজ্জা নেই ছেলেটার।

টয়া ঘরের এক চিপায় গিয়ে জামা বদলে শাড়িটা কোনোভাবে পেঁচিয়ে পড়ে নিলো। সিল্কের শাড়ি পড়া আরেক জ্বালা খালি মনে হয় খুলে যাবে। বুড়িটা নিজের ব্লাউজও দিয়েছে সেটা একটু ঢিলা আর ব্লাউজের গলা তো মাশাল্লাহ এতো বড় আর পিঠের দিকটা অনেকখানি খোলা তারউপর পিঠের উপরে একটা ফিতে। সব ঠিক হয়ে করে নিয়েছে মোটামুটি, এই ফিতা কীভাবে লাগাবে সে। ফিতা না লাগলে কখন আবার কাধ থেকে পরে যায়। অসহ্য সব অসহ্য। কোন দুঃখে যে বৃষ্টিতে ভিজতে গেছিলাম কে জানে। শয়তানে কামড়ে ছিলো আমাকে।
টয়া ফিতাটা লাগানোর চেষ্টা করছে এমন সময় ইয়াদ দরজা খুলতেই ধপাস করে চেয়ার পরে যাওয়ার আওয়াজে ভয়ে টয়া লাফিয়ে উঠলো। ইয়াদ ভ্রু কুচকে চেয়ারের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” তোমার কি উল্টা পাল্টা কাজ না করলে ভাল্লাগে না?”
ইয়াদকে দেখে টয়া শাড়ির আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। ইয়াদকে দেখেই ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,” বলেছিলাম আমি পরিয়ে দেই শুনলে না তো। এইটা কীভাবে শাড়ি পড়েছ হাটতে গেলেই উষ্ঠা খেয়ে পরে হাত পা ভাঙবে।” বলে কাছে আসতেই টয়া শাসিয়ে বললো,” থামুন, একদম এদিকে আসবেন না। আমি কিন্তু চিল্লাবো।”
” চেঁচামেচি করা তো তোমার একটা প্রতিভা। সে আমি কাছে আসলেও চেঁচামেচি করবে না আসলেও করবে।”, বলতে বলতে এগিয়ে এলো।

টয়া পিছাতে লাগলো পিছাতে পিছাতে একসময়ে আয়নার সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লো। টয়ার পিছে টিনের সাথে ঝোলানো একটা মাঝারি সাইজের আয়না। আয়নার সাথে ধাক্কা লাগতেই ইয়াদ টয়ার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো এমন সময় টয়ার পিঠের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরে যায়। টয়া সেটা বুঝতে পেরে ইয়াদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পিছনে আটিসাটি মেরে দাড়িয়ে রইলো। ইয়াদের চোখ পিছনের আয়নার দিকে যেতেই ইয়াদ ঘটনাটা বুঝতে পারলো। টয়া ভয়ার্ত গলায় বললো,” আপনি এই রুম থেকে যান। প্লীজ”
ইয়াদ টয়ার কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে আয়নার কাছ থেকে সরিয়ে আনতেই টয়া হকচকিয়ে গেল তারপর নিচু স্বরে বললো,” আপনি প্লিজ যান এখন।”
ইয়াদ টয়ার পিঠের দিকে হাত বাড়াতেই টয়া ইয়াদের হাত ধরে মাথা নিচু করে রাখে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে। টয়া কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে বললো,” চোখ বন্ধ করে রাখলাম এবার হেল্প করি?”

টয়া ঠোঁট কামড়ে ইয়াদের দিকে তাকালো সত্যি সত্যি সে চোখ বন্ধ করে আছে। টয়া কি করবে বুঝতে পারছে না। ফিতা না লাগাতে পারলে অসস্তিতে থাকতে হবে। উপায় না পেয়ে টয়া ইয়াদকে বিশ্বাস করলো। ইয়াদ বন্ধ রেখে বলল,” কি হলো হেল্প লাগবে না?”
” দেখুন আপনি একদম চোখ খুলবেন না।”, শাসিয়ে বললো টয়া।
” তোমার হেল্প লাগবে কি লাগবে না সেটা বলো?”, ইয়াদ তাড়া দিয়ে বললো।”আচ্ছা দাড়ান”,বলে টয়া ইয়াদের হাতে ফিতা দুটো দিলো।
ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফিতা বাধার সময় টয়ার পিঠে একটু হাতের ছোঁয়া লাগতেই টয়া কেপে উঠলো। সেটা বুঝতে পেরে ইয়াদের ঠোঁটের কোণে হাসি নিলো বললো,” কী হলো কাপাকাপি করছো কেনো?”
টয়ার ইয়াদের হাসি দেখে মনে মনে বললো আবার হাসছে। ইচ্ছে করে এসব করছে আমি বুঝিনা ভেবেছে। ইয়াদ ফিতা বেধে দিতেই টয়া ইয়াদ থেকে দশ হাত দূরে সরে গেল। ইয়াদ কিছু বলার আগেই টয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিবে বুড়ি মহিলাটা ঘরে ঢুকে পড়লো। টয়া আর রুম থেকে বেরিয়ে আসতে পারলো না। মহিলাটা টয়াকে দেখে বললো,” আইহায় কইচ্ছে কি মাইয়াডায় আরে মাইয়্যা শাড়ি কি এমনে ফিন্দ্দে?” ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” বাবাজি তুমি আখণ রুম থেইকা যাও তোমার বউরে শাড়িখান ফিন্দাই দি।”ইয়াদ হা সূচক মাথা নেড়ে চলে গেলো।

বুড়িকে দেখে টয়ার এবার মনে হচ্ছে ফিতা চাইলে এনার কাছে গিয়ে বেধে নেওয়া যেতো কি যে বোকামি করে বসলো সে মাঝখান দিয়ে লোকটার সুবিধা হয়ে গেছে।
বুড়ি টয়ার হাত ধরে ঘরের মাঝে এনে দার করিয়ে টয়ার শাড়ির কুচি করতে করতে বললেন,” এইডা তোমার দাদার আমারে দেওইন্না প্রথম শাড়ি, শাড়িখানা আইন্না আমারে নিজের হাতে ফিন্দ্দাইয়া দিসিলো। বড়ো রসিক আসিল সে।”
বুড়ির কথা শুনে টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। বুড়ি কুচি শেষে সেগুলো টয়ার হাতে ধরে রাখতে দিয়ে আঁচলের মাপ নিয়ে বললো,” এমনে শাড়ি ফিন্দবা কোমড়ের দিক খোলা রাইখ্যা। দেখবা জামাই কেম্বে ঘুরবো।”, বুড়ির কথা কানে যাওয়ার সাথে সাথে টয়ার গলা শুকিয়ে গেলো। এই রকম ভয়ানক কথা তাকে এ জীবনে শুনতে হবে সে কল্পনাও করে নি। বুড়ি যেতে যেতে বলল,” কিছু লাগলে আমারে কইবা কেমন ?” টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল।

বুড়ি চলে যাবার কিছুক্ষন পরই ঘরে ইয়াদ ঢুকলো। ইয়াদকে দেখে টয়া অবাক হয়ে বললো “আপনি আবার এ ঘরে এসেছেন কেন?” টয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে যাবে এমন সময় ইয়াদের চোখ টয়ার দিকে পড়লো। ইয়াদ টয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। টয়া একটু ঘাবড়ে গিয়ে নিজের কোমরের কাপড়টা ঠিক আছে কিনা দেখে নিলো। না ঠিক আছে বুড়ি চলে যাবার সাথে সাথে ঠিক করে ফেলেছিলো সে। টয়া চেঁচিয়ে বলল,” কি বললাম শুনতে পান নি? এ ঘরে এসেছে কেনো আমি এখন ঘুমাবো।”
খাওয়া দাওয়া আগেই সেরে নিয়েছিলো তারা বৃষ্টির টিপ টিপ ফোঁটা টিনের চাল বেয়ে পড়ছে সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ। টয়ার ঘুমে চোখ জরিয়ে এসেছে।
এখন আবার ইয়াদ কেনো তাকে জ্বালাতে চলে এলো।
ইয়াদ খাটে বসে বললো,” ঘুম তো আমারও পেয়েছে।”
” তো গিয়ে ঘুমান এখানে এসেছেন কেনো?”, রাগে কটমট করে বললো টয়া।
” তোমার মনে হচ্ছে না যে তুমি কিছু একটা কথা ভুলে যাচ্ছ। আমি তোমার হাজব্যান্ড তাই আমি এখানেই ঘুমাবো।” বলে বিছানার মাঝে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল।
” এখানে ঘুমাবেন মানে!!!!! উঠুন এক্ষুনি, অসম্ভব আমি আপনার সাথে এক ঘরে থাকবো না।” বলে ইয়াদের পাশে এসে হাত ধরে টেনে উঠানোর চেষ্টা করছে।
” আমি বিয়ের আগে শর্ত দিয়েছিলাম যে আমি আপনার সাথে থাকবো না আর এক ঘরে থাকা অসম্ভব ব্যাপার।”, ইয়াদ টয়ার কোনো কথায় কান না দিয়ে শুয়ে আছে। টয়া তাকে টেনেও তুলতে পারছেনা টয়া হাল ছেড়ে দিয়ে বললো,” ঠিক আছে আপনি উঠবেন না তাই তো। তাহলে ঘুমান এ রুমে আমি গিয়ে দাদীর কাছে ঘুমাচ্ছি।”
টয়া চলে যেতে পা বাড়াবে এমন সময়ে ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে ওকে বিছানায় নিজের পাশে শুইয়ে দিবে টয়া ব্যালেন্স হারিয়ে ইয়াদের উপর পরে যায়।
টয়া রাগে ফেটে যাচ্ছে। সে রেগে বলল,” আপনার সমস্যা কি? আমি আপনার সাথে থাকবো না বলেছি না।”
ইয়াদ টয়ার হাত বিছানার সাথে শক্ত করে ধরে বললো,” তুমি থাকবেনা তোমার ঘাড় ও থাকবে। অনেক জ্বালিয়েছি আজ আমায়। এতো সহজে তোমায় ছেড়ে দিবো ভেবেছো? চুপ চাপ আমার পাশে শুয়ে থাকো নইলে ।” ইয়াদ কথা শেষ করবে তার আগেই টয়া চেঁচিয়ে বলল,” নইলে কি করবেন? আপনি….. আপনি আমাকে মারবেন? আপনি এটা করতে পারবেন? এই ছিলো আপনার মনে।”

টয়ার বক বক শুনে ইয়াদের মেজাজ বিগড়ে গেলো ইয়াদ টয়ার ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে দিলো তারপর বললো,” আমার মনে কি আছে দেখতে চাও?” ইয়াদের স্পর্শে টয়ার শরীরে শীতল শিহরন বয়ে গেল। টয়া হা করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। আত্মাটা মনে হচ্ছে বেরিয়ে আসবে তার। টয়া চোখ মুখ বন্ধ করে আছে অনেক্ষন হলো কিন্তু কিছু হলো না। টয়া আস্তে করে চোখ খুলে দেখলো ইয়াদ ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া পিট পিট করে কয়েকবার তাকালো। ইয়াদ মুখের হাসি বজায় রেখে বলল,” কিছু হয়নি? তাই না। এইটা তো শুধূ ট্রেইলার দেখালাম যদি পুরো মুভিটা দেখতে না চাও চুপচাপ আমার পাশে শুয়ে থাকো।”
ইয়াদের কাজে টয়া প্রচুর ঘাবড়ে গেছে। বুকের ভিতরটা কেমন যে করছে বলে বোঝানো যাবে না। ইয়াদ টয়ার উপর থেকে সরে মাথার নীচে হাত রেখে টয়ার কাছাকাছি শুয়ে রইলো। টয়া কয়েকবার ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলো। ইয়াদ কাত হয়ে শুয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
[ পর্বঃ১৯ ]
লেখিকা :#নবনী_নীলা
” আপনি শার্ট খুলছেন কেনো?”, হটাৎ টয়ার কথা কানে আসতেই ইয়াদ বিছানার দিকে তাকালো। টয়ার চোখ মুখের অবস্থা ভয়াবহ। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,” তুমি ঘুমাও নি।”
” ভাগ্যিস ঘুমাই নি! আপনি কি করতে চাইছেন? শার্ট খুলছেন কেনো? ছি!আপনি এতটা..।”, বলতে নিবে ইয়াদ ধমক দিয়ে বলল,” shut up. একদম আজেবাজে কথা বলবে না। সবসময় মাথায় উল্টা পাল্টা চিন্তা।”
টয়া ইয়াদের ধমকে চুপ করে মাথা নিচু করে বির বির করতে লাগলো। আমাকে বলছে যে আমি উল্টা পাল্টা চিন্তা করি নিজে যে উল্টা পাল্টা কাজ করে বেড়ায় তার বেলায়। এখন তো নিজে সাধু।
ইয়াদ শার্ট গায়ে দিয়ে ঘুমাতে পারে না অসস্তি লাগে তাও টয়া পাশে আছে বলে সে শার্ট গায়ে রেখেই ঘুমানোর চেষ্টা করলো তাতে লাভ হলো না শরীর লাল হয়ে গেছে। টয়া ঘুমিয়ে গেছে ভেবেই শার্টটা খুলতে গিয়েছিলো জেগে থাকলে তো উল্টা পাল্টা ভেবে বসবে, কিন্ত লাভ হলো কি? টয়া যে ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিলো কে জানত।
ইয়াদ বুঝতে পারল এভাবে বলা ঠিক হয়নি তাই আবার বললো,” শার্ট গায়ে ঘুমাতে পারি না তাই খুলছিলাম।”বলে শার্টের বাকি বোতাম গুলো খুলতে শুরু করলো। টয়া নিজে নিজে বির বির করে বললো,” হুঃ সব নাটক বুঝি না ভেবেছে।”
ইয়াদ শার্ট খোলার পর ইয়াদের পিঠের দিকে তাকিয়ে টয়ার ধরনা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় সে অনুতপ্ত। ইয়াদের সাদা পিঠের অনেকটাই লালচে হয়ে গেছে। আর সে কিসব উল্টা পাল্টা ভেবেছিলো। দিন দিন নিজের আধোপতন হচ্ছে। ইয়াদের এমন অবস্থা দেখে টয়ার একটু খারাপ লাগছে। ইয়াদ শার্টটা টেবিলের ওপর রেখে ঘরের টর্চ লাইট দুটো বন্ধ করে দিলো। ইয়াদ বিছনায় এসে শুয়ে পড়লো। টয়ার কেমন জানি লাগছে ইয়াদের গায়ে এখন শার্ট নেই তারউপর আবার নাকি তার পাশে গিয়ে শুতে হবে। হাত পা সব ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে।
ইয়াদ টয়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বললো,” পেত্নী ধরেছে নাকি? এভাবে বসে আছো কেনো।”

ভুত পেত্নীর নাম শুনলেই টয়া ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে। টয়া লাফ দিয়ে ইয়াদের কাছে ঘেঁষে বসে বললো,” আপনি এসবের নাম নিচ্ছেন কেনো?” ইয়াদ উঠে টয়ার কাছ ঘেঁষে বসে বললো,” আমি আছি তো নাকি? রিলাক্স।”
” আপনি আছেন মানে আপনি কি ওঝা নাকি?”, টয়ার কথায় ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” ইডিয়টের মতোন কথা বলো না। চুপ চাপ শুয়ে পড়ো।”
টয়া ইয়াদ থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আটিসাটি হয়ে শুয়ে পড়লো সাথে সাথেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায় টয়া।

সকালে টয়ার ঘুম ভাঙ্গলো দেরিতে উঠে সে ইয়াদকে পাশে না দেখে একটু স্বস্তি পেল। সকাল সকাল ওনার চেহারা না দেখাই ভালো। টয়া উঠে শাড়ি বদলে জামা পরে নিয়ে শাড়িটা ভাজ করছে এমন সময় ইয়াদ ঘরে ঢুকে বিরক্তি নিয়ে বললো,” বাহ্ ভালোই, আমার ঘুম নষ্ট করে নিজে ভালোই ঘুমিয়ে নিয়েছো।”
মুডটা কি ভালো ছিলো সকাল সকাল আজেবাজে কথা বলে মুড নষ্ট না করলে এনার পেটের ভাত হজম হচ্ছে না। টয়া আড় চোখে তাকিয়ে বলল,” আমি আপনার ঘুম নষ্ট করেছি? তা কীভাবে শুনি?”
ইয়াদ হাতে থাকা নাস্তার প্লেট দুটো টেবিলে রেখে বলল,” ঘুমের মাঝে হাত পা ছোড়া ছুরি করো, কীভাবে পারো এগুলো করতে? শেষমেশ তোমায় বাধ্য হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তারপর শান্ত হলে।”
ইয়াদের কথায় টয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো টয়ার রেগে বলল,” আপনি জরিয়ে ধরেছিলেন! এইজন্য বলেছিলাম আপনার সাথে থাকবো না। ঘুমের মধ্যে আপনাকে ঠেলে বিছানা থেকে ফেলে দেওয়া উচিৎ ছিলো তাহলে আপনি বুঝতেন।”

” সেটা করতে হলে যে আমার সাথে থাকতে হবে। তুমি কি থাকতে ইচ্ছুক?”, ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো ইয়াদ।

টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,” কক্ষনো না।” তারপর শাড়ি হাতে বড় বড় পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।


ইয়াদ টয়াকে ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিয়ে ক্লিনিকে গেলো। টয়া সাড়া রাস্তা মুখ ফুলিয়ে এসেছিলো। বাসায় এসে রিতুকে দেখে টয়ার মেজাজ বিগড়ে গেলো। টয়া দম দম করে হেঁটে সোফায় বসে পড়লো। রিতু টয়াকে দেখে পালাই পালাই করছে।
” তোর পেটে কথা থাকে না? শেষমেশ বলেই দিলি। তোর জন্যে আমাকে কি কি ফেস করতে হয়েছে তুই জানিস। ইচ্ছে করছে তোর গলা টিপে ধরি।”, রেগে গজ গজ করে বললো টয়া।

রিতু কটাক্ষ করে বললো,” হ তোমার লাইগ্গা আমি মইরা যাই। বাপরে বাপ কি সাংঘাতিক পোলা। আমার আছিলো প্রেজেন্টেশন ওইদিন ভালা ভালা বাহির হইসিলাম ওমা বাইর হইয়া দেখি আমার সামনে দারাইয়া রইসে। তারপর চইল্যা জামু ভাবসি কিছু কইয়া ধড়াম কইরা ফোনটা লইয়া গেছে আমার হাত থেইক্কা……..।”
” হইসে বুঝছি। তারপর তোরে ভয় দেখাইসে তুই ভয় পাইয়া সব গর গর কইরা কইয়া ফেলসস।”, মলিন চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
” হ ! যে ভয় পাইসিলাম।”, বলে রিতু পানি খেলো।

টয়া সোফায় গা হেলিয়ে দিলো। এমন সময়ে টয়ার ফোন বেজে উঠলো ফোনটা গাড়ীতে চার্জ দিয়েছিলো। মা কল করেছে, এখন এবার বকা খেতে হবে। টয়া নিরাশ মুখে কল রিসিভ করল একগাদা বকাও খেলো। তবে শেষের কথা শুনে টয়া খুশিতে আত্মহারা। দাদাভাই আর ভাইয়া এ সাপ্তাহে দেশে ফিরছে। যাক দিন শেষে একটা ভালো খবর তো শুনা গেলো।
টয়া খুব খুশি হয়ে গেলো। তারপর নাচতে নাচতে কিচেনে এলো। টয়াকে এতো খুশি দেখে রিতু একটা ভ্রু তুলে বললো,” কাহিনী কি? একটু আগে মুখ কালা কইরা ছিলি এখন এতো খুশি?”
টয়া কিচেন এপ্ররণ পরে বললো,” দাদাভাইরা আসবে এ সপ্তাহে ইয়েয়। চল আজকে ফাটিয়ে কিছু রান্না করি।”
” কি করবি? চল বিরিয়ানি করি।”, বলতেই যেনো রিতুর মুখে জল চলে এলো।
” আচ্ছা।”, বলে দুজনেই নাচতে লাগলো।
রিতু পিয়াজ কুচি কুচি করে কাটতে কাটতে টয়াকে জিজ্ঞেস করলো,” জিজু তোকে অনেক ভালোবাসে তাই না? কীভাবে ছুটে গেলো তোর জন্যে।”

” জিজু? কে তোর জিজু? এই নামে যদি ডেকেছিস এরেকবার খুন কইরা ফেলব তোকে।”, টয়া শাসিয়ে বললো।

” আরে আমাকে বলেছে জিজু বলতে আমি কি করবো?”, হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রিতু।

” তুই ডাকবি না শেষ কথা। আসছে জিজু বলতে ঢং।”, মুখ বাকিয়ে বললো টয়া।

” তোদের মধ্যের কাহিনীটাকি কিছুই বুঝি না। আমাকে একটু বলবি?”, মুখ কালো করে বললো রিতু।

” আমি নিজেও জানি না। আচ্ছা তুই আমাকে বল সাত বছর আগে যে আমাকে বলেছিলো ছেলে ফাঁসানোই আমার কাজ আজ এতো বছর পর হটাৎ তার আমার প্রতি এতো ভালোলাগা কীভাবে সম্ভব?”, আনমনে প্রশ্ন করে বসলো টয়া।

” মানে?”, অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রিতু।

” না কিছু না।”, একটা ঢোক গিলে বললো টয়া।
” না তুই আমাকে বল।”, রিতু ভীষণভাবে জোর করতে লাগলো টয়াকে। টয়া উপায় না পেয়ে সবটা বললো।
সবটা শুনে রিতু বললো,”আচ্ছা তুই তাকে জিজ্ঞেস করলেই পারিস হটাৎ তোর প্রতি তার এমন আচরনের কারণ। আর সেদিনের ভিত্তিহিন কথা গুলোর পর আজ এতো ভালবাসার কি কোনো মানে হয়?”
টয়া একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে বললো,” আমি জানি না। সে বলেছে তার বাবা মার কথা রাখতে আমাকে বিয়ে করেছে।”

” এই ছেলের মনে কি চলছে? আচ্ছা তুই কি ইয়াদকে এখনও?”, রিতু শেষ না করতেই টয়া বলে উঠলো ” জানি না। আমি এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। অনেক কষ্টে সবটা ভুলতে পেরেছি আবার আমার পক্ষে সম্ভব না”
টয়া উঠে গিয়ে বাকি কাজগুলো করতে বেস্ত হয়ে গেল। টয়ার কষ্ট দেখে রিতুর ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ইয়াদকে গিয়ে প্রশ্ন করে।


টয়া রাতের দিকে বারান্দায় বসে ছিল। এখানে বসে থাকতে তার ভালো লাগছে। হটাৎ টয়ার নজর নিচের দিকে গেলো, ইয়াদের গাড়ির মতো লাগছে এতো উপর থেকে তেমন বোঝাও যাচ্ছে না। টয়া চেয়ারের পাশে থাকা চশমাটা পরে ভালো করে দেখার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে ইয়াদের সাথে একটা মেয়ে গেট দিয়ে ঢুকলো।
এতো রাতে কে আসবে? তাও একটা মেয়ে। এই মেয়ে আবার ইয়াদের সেই পছন্দের মেয়েটা নাতো? মেয়েটাকে দেখতে হচ্ছে তো। টয়া তাড়াতাড়ি করে দরজার ফাঁক দিয়ে উকি মেরে দাড়িয়ে আছে তাকে দেখতে হবে মেয়েটা ইয়াদের ফ্লাটে যায় কিনা। অনেকক্ষন দাড়িয়ে আছে কই কেউ আসছে না জে। নাকি লিফটে একবার উপরে একবার নিচে করছে। একবার হাতেনাতে ধরি তারপর বুঝাবো টয়া কি জিনিস। শাড়ি পরা একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। ঐতো হিটলারটাকেও দেখা যাচ্ছে। কথা বলছে দুজনে এতো রাতে একটা মেয়ের সাথে ফ্ল্যাটে ঢুকছে। টয়ার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি দরজা খুলে গিয়ে হাতে নাতে ধরে ফেলে। রিতুর টয়াকে দেখে বিস্ময়ের শেষ রইলো না। মেয়েটার কি হইসে তখন থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে।
রিতু হাত দিয়ে টয়াকে ডেকে বললো,” কি করছিস তুই?”
টয়া বিরক্তি চোখে তাকিয়ে বলল,”আস্তে কথা বল। আমাকে দেখতে দে।”
রিতু নিজেও উকি ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো কিন্ত সে কিছুই বুঝলো না।
টয়া রিতুকে বললো,”আজ হাতে নাতে ধরবো বুঝেছিস।”
“কি”, রিতু প্রশ্ন করে বসলো।
“মেয়েটা ওনার রূমে ঢুকেছে।”, রাগে গজগজ করে বললো টয়া।
টয়া অনেক্ষন বাহিরে অপেক্ষা করলো কিন্তু মেয়েটাকে বের হতে দেখলো না। টয়া গিয়ে নক করে দেখবে তারা কি করছে? টয়া কিছুই বুঝতে পারছেন না। টয়া চিন্তিত গলায় রিতুকে বললো,” যাবো?”
রিতু সাহস জোগিয়ে বললো,” অবশ্যই যাবি তোর জামাই এতো অন্য মেয়ের সাথে আছে। কাহিনী কি দেখতে হইবো না। ”
টয়া মাথা নেড়ে বললো,” ঠিক বলেছিস। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।”
টয়া কোনো রকম সাহস যোগিয়ে কলিং বেল বাজলো রিতু একটু ফাঁক দিয়ে উকি দিচ্ছে। টয়া আবার দ্বিতীয় বার কলিং বেল চাপতেই ইয়াদ দরজা খুললো। ইয়াদ দরজা খুলে টয়াকে দেখে অবাক টয়া তো কখনো তার ফ্ল্যাটে আসে না।
ইয়াদ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,” তুমি?”
” হ্যা কেনো আমি আসতে পারি না?”, টয়া ঝাজালো গলায় বলল। তারপর ইয়াদকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। ভিতরে ঢুকতেই সেই মেয়েটাকে দেখলো সোফায় বসে আছে টয়ার ইচ্ছে করছে ঘাড় ধরে মেয়েটাকে বের করে দেয়। রাগটা সামলে নিয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ এমন ভাব করছে যেনো সে কোনো দোষ করেনি। মেয়েটা সোফা থেকে উঠে হাসি মুখে টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,” হেলো! আমি প্রভা”
টয়া অনিচ্ছাকৃত হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললো,” টয়া।”

ইয়াদ বুকের কাছে হাত গুজে ভাবছে হটাৎ টয়া কি জন্য এখানে আসতে পারে। মেয়েটাকে ইয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে,” ইয়াদ তাহলে আমি যাই। আমি যা বলেছি তুমি তো বুঝতেই পারছো। প্লীজ একটু সময় করে বাসায় এসে সবার সাথে কথা বলো।”

ইয়াদ মাথা নেড়ে বললো,” হুম, আমি চেষ্টা করব। তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবো?” টয়া মনে মনে বেঙ্গ করে বললো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবো। ঢং!
প্রভা না সূচক মাথা নেড়ে বললো প্রয়োজন নেই নিচে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। মেয়েটা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই টয়া দেওয়ালের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে। ইয়াদ দরজা বন্ধ করে টয়ার সামনে দাঁড়িয়ে একটা ভ্রু তুলে বললো,” তুমি হটাৎ আমার ফ্ল্যাটে?”
” কি করছিলেন আপনি ঐ মেয়ের সাথে?”, গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো টয়া।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here