তোমার_খোঁজে_এই_শহরে পর্বঃ২০ :#প্রশ্ন_পর্ব,২১

0
1110

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ২০ :#প্রশ্ন_পর্ব,২১
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ২০

” কি করছিলেন আপনি ঐ মেয়ের সাথে?”, গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো টয়া।
” আচ্ছা তারমানে তুমি এটা জানতে এখানে এসেছো?”, এক হাত পকেটে রেখে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
টয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না এটা জানতেই তো সে এসেছিলো কিন্তু এটা বললে গন্ডগোল হয়ে যাবে। টয়া ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইল ইয়াদ ভ্রু তুলে বললো ” কি?”
” কি এমন করেছেন যে বলতে পারছেন না?”, আবার প্রশ্ন করে বসলো টয়া। ইয়াদের কেনো জানি মনে হচ্ছে টয়া jelouse।

ইয়াদ স্বাভাবিক ভাবে বললো,” আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”

টয়া না সূচক মাথা নেড়ে বললো,”প্রশ্নটা আগে আমি করেছিলাম তাই উত্তর আপনি আগে দিবেন।”
ইয়াদ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে টয়া jelouse সুতরাং একটু রাগিয়ে দিলে মন্দ হয় না।

” তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে কি আমি বাধ্য?”, ইয়াদের এমন কথা শুনে টয়ার রাগ বেড়ে গেলো। বাধ্য না মানে? এইগুলো কি কথা। ইয়াদ এতটুকু বলে নিজের রুমের দিকে গেল সে ভালো করেই জানে টয়া নাছরবান্দা। কি হয়েছে সেটা না জানতে পারলে তার রাতের ঘুম হবে না তাই টয়া যে তার পিছু পিছু তার রূমে আসবে সেটা সে নিশ্চিৎ।

টয়া ইয়াদের পিছু পিছু তার রূমে আসে বললো,” বাধ্য না মানে অবশ্যই আপনি বাধ্য।”
ইয়াদ শার্টের বোতাম খুলতে যাবে এ কথা শুনে সে টয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললো,” তাই বুঝি? তা তুমি আমায় হাজব্যান্ড বলে মানো বুঝি যদি মানো তাহলে নিশ্চয়ই আমি বাধ্য। তুমি কি মানো?”
টয়া কটাক্ষ করে বললো,” অবশ্যই না।”

” তাহলে তোমায় বলতেও বাধ্য নই।”, হাসি মুখে কথাটা বললো ইয়াদ। টয়ার আসল কথা জানতেই হবে কে মেয়ে? কি এমন করেছে যে পেট থেকে কথাই বের হচ্ছে না। টয়া আমতা আমতা করে বলল,” আমি কি সেই দিক দিয়ে বলেছি? আমি না মানলে কি হবে আইনত তো আমরা …… হাজব্যান্ড…. ওয়াইফ।”
বলতে বলতে থেমে গেলো।
“আচ্ছা মানছো তাহলে, তা মেয়েটা কে সেটা তুমি জেনে কি করবে?”, ইয়াদ আবার প্রশ্ন করলো।

টয়া এবার ভীষণ রেগে গিয়ে বলল,” আপনাকে কি আমি কোনো বাংলা সালের তারিখ বলতে বলেছি এতো ঘোরাচ্ছেন কেনো? আমি সহজ একটা প্রশ্ন করেছি সহজ ভাবে সেটার উত্তর দিতে পারছেন না। তখন থেকে জিলাপির মতন পেচিয়ে যাচ্ছেন। কি এমন কাজ করেছে তার জন্যে এতো কিছু শুনতে হচ্ছে।”,
ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো এতো কথা কি করে বলে সে প্রশ্নের উত্তর না জানতে পারলে মনে হয় ইয়াদের মাথা খেয়ে ফেলবে। ইয়াদ টয়াকে থামিয়ে বললো,” হয়েছে থামো। কি জানতে চাও মেয়েটা কেনো এসেছে? মেয়েটা আমার একজন সিনিয়র ডক্টর এর মেয়ে, তার বাবা একটু অসুস্থ সে বিষয়ে কোথা বলতে এসেছিলো।
টয়া সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,”তাই? শেষে যে বললো বাড়ির সবাইকে গিয়ে বুঝাতে।”
ইয়াদ বির বির করে বললো,” কি কান রে বাবা!”
” কি বির বির করেছেন? যা বলার জোড়ে বলুন।”, চেঁচিয়ে বললো টয়া।
” আস্তে!”, বলে ইয়াদ দুই আঙ্গুল দিয়ে ভ্রুয়ের উপরের অংশ ঘষে বলল,” এমন করছো কেনো? বলছিতো। আমি ওনাকে স্যার বলি তো তিনি বিদেশে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে চাইছেন না কিন্তু এই মুহুর্তে ওনার জন্যে ওটাই বেটার। বাড়ির কারো কথায় তিনি রাজি হচ্ছেন না তাই বলেছে আমি যদি পুরো ব্যাপারটা ওনাকে বুঝিয়ে বলি।”কথাগুলো বলে ইয়াদ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

টয়া সব কথা শুনে ও আচ্ছা বলে মাথা নাড়ল। ইয়াদ নিজের গায়ের শার্টটা শার্টটা রাখতে যাবে টয়া বলে উঠে,” আপনি সবসময় এমন শার্ট খুলে ফেলেন কেনো? আজব!” ইয়াদ শার্টটা একপাশে রেখে টয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ পকেটে থেকে ফোন, ওয়ালেট সব বের করে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,” তো আমি বাহির থেকে এসে ফ্রেশ হবো না। তোমার যদি এতো সমস্যা হয় তাহলে উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকো।”

আজব সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে সেটা মাথায় নেই। এই ছেলের আবার বলছে আমাকে উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ভুল হয়েছে এখানে আসাটা। টয়া রেগে বললো,” উল্টো দিকে তাকিয়ে থাকার কি আছে আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু একটা প্রশ্ন।”
ইয়াদ দুই হাত বুকের কাছে গুঁজে বললো,” আবার প্রশ্ন! হুম বলো মনের সব প্রশ্ন বলো। আজকে সারারাত তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাই আমি।”
টয়া বুঝতে পারছে সে বেশি কথা বলছে কিন্তু কিছু করার নেই এই প্রশ্ন তাকে করতেই হবে। টয়া একটু কেশে গলা ঠিক করে নিয়ে বললো,” আচ্ছা মেয়েটা কি বিবাহিত না অবিবাহিত?”
এ প্রশ্ন শুনে ইয়াদ নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। টয়া পিছাতে পিছাতে একদম দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়ল। ইয়াদ একদম কাছে চলে আসায় বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। এ বাসার তো কেউ নেই ইয়াদ যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলে।
ইয়াদ দেওয়ালের এক পাশে হাত রেখে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,” কি জানি জানতে চাচ্ছো? মেয়েটা বিবাহিত না অবিবাহিত? কেনো তুমি কি মহিলা ঘটক হওয়ার উদ্বেগ নিয়েছো? তুমি জেনে করবেটা কি? মাথা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে তোমার? তখন থেকে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করে মাথা খেয়ে ফেলছো।”
ইয়াদ একদম কাছে চলে আসায় টয়া অপ্রস্তুত হয়ে চলে যেতে নিলো ইয়াদ আরেক পাশে হাত দিয়ে টয়াকে আটকে দিলো। টয়া কোনরকম টিপ টিপ চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” রাগ করেছেন কেনো? আমি তো এমনেই…. বলে শেষে করবার আগেই ইয়াদ টয়ার দিকে ঝুঁকে গিয়ে বললো,” এসব প্রশ্ন করতে এখানে এসেছো?”
টয়া না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” কই নাতো আমি তো এসেছে ছিলাম ………… ঐযে আণ্টি বলেছিলো আমাকে আপনার খেয়াল রাখতে তাই এমনেই এসেছিলাম।”,বলে একটা ঢোক গিললো।
ইয়াদ টয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া ইয়াদকে আশ্বস্থ করে বললো,” সত্যি বলছি। এবার আমি যাই।” বলে ইয়াদের হাতের নিচে দিয়ে বলে বের হবে ইয়াদ টয়ার হাত ধরে বলে,” এখানে এসেছো কার ইচ্ছায়? নিজের ইচ্ছায় তাই না কিন্তু যাবে আমার ইচ্ছেয়। খেয়াল রাখতে এসেছিলে না আমার।” বলে টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে আসতেই ইয়াদের ছোঁয়ায় টয়া শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” আমার খিদে লেগেছে যাও গিয়ে আমার জন্যে রান্না করো।”
এ কথা শুনে টয়া চোখ বড় বড় করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” রান্না করবো মানে? আপনারা খেয়ে আসেন নি?”
ইয়াদ ভ্রু কুচকে বললো,” আপনারা ! মানে ?”
” মানে ঐযে প্রভা আপনারা ডিনার করে আসেন নি?”, টয়ার প্রশ্ন শুনে শুনে ইয়াদের মাথা ধরে গেলো ইয়াদ আচমকা টয়াকে ছেড়ে দিয়ে বললো,” যেটা করতে বলেছি সেটা করো ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি। আর তোমার এই useless question এর answer আমি দিচ্ছি না।”বলে ইয়াদ ওয়াশরুম এ ঢুকলো।
টয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো,” ইস কতো শখ আমাকে দিয়ে রান্না করাবে? আমি এখানে থাকলেই না এক্ষুনি বেরিয়ে যাবো।”

টয়া ইয়াদের দরজার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। দরজায় password lock দেওয়া। টয়া হাবি জাবি কত কিছু বলে দরজা খুলার চেষ্টা করছে কিছুতেই খুলছে না। যে যেমন হয় তার আশেপাশের সব কিছু তার মতোন হয়। হিটলারটার দরজাও হিটলারের মতোন। ইচ্ছে করে এসব করছে অসহ্য। যখন ঐ মেয়ের সাথে আসলো ওই মেয়েকেই বলে দিতো রান্না করে খাওয়াতো আমাকে বলতে এসেছে কেনো। এনার জন্য রান্না না করলে হয়তো আজ রাতে এইখানেই থাকতে হবে অসম্ভব। টয়া কিচেনে গেলো কিচেনের উপরের ড্রয়ার খুলতেই একগাদা নুডুলস এর প্যাকেট তার মাথায় টপ টপ করে পরতে লাগলো। টয়া এতো নুডুলস দেখে থ মেরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো পুরো নুডুলসের ফ্যাক্টরি খুলে রেখেছে। তখনি ইয়াদের মায়ের একটা কথা মনে পড়লো তিনি বলেছিলেন ইয়াদ অফিস থেকে ফিরে tired হয়ে যায় তাই নাকি সে নুডুলস খেয়ে থাকে। আরে আজব সব সময় এইগুলো খেলে ক্ষতি হবে জনাব ডক্টর কি সেটা জানে না? ধুরো এই নুডুলস আমি রান্না করবো না। টয়া আরো কিছুক্ষন খুঁজতে লাগলো কিছু পাস্তা আর সুপের প্যাকেট পাওয়া গেছে আপাদত এইগুলোই ঠিক আছে।

টয়া নিজের মতো সবটা করছিলো। ইয়াদ শাওয়ার শেষে মাথা মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে টয়াকে কিচেনে দেখে এমনিতেই মুখে একটা হাসি চলে এলো। ইয়াদ সোফায় এসে রিলাক্স হয়ে বসে টিভি অন করলো।
টয়া চুলগুলোর জন্যে একটু বিপাকে পড়েছে কিছুক্ষণ পর পর মুখের সামনে চলে আসছে সাথে রাবারব্যান্ড নেই যে বেধে রাখবে খোঁপা করলেও খুলে যাচ্ছে। ইয়াদ টিভি অন করে রাখলেও তাকিয়ে আছে টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে গিয়ে একটা ছোট্ট ঘটনা মনে পড়লো। অনেক আগে টয়া একবার তাকে তার চুল বেঁধে দিতে বলেছিলো। ঘটনাটা মনে পড়ায় ইয়াদ উঠে নিজের রূমে গিয়ে কিছু একটা নিয়ে বেরিয়ে এলো তারপর কিচেনে টয়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। টয়ার চুলে হাত দিতেই টয়া লাফিয়ে ওঠে চামচ হাতে পিছে ফিরলো। হটাৎ এভাবে পিছনে এসে দাঁড়ানোয় টয়া ভয় পেয়ে যায়।
” তোমাকে দেখছি ছোঁয়াও যায় না কাপাকাপি, লাফালাফি শুরু করে দাও।”, বিরক্তি নিয়ে বললো ইয়াদ।
” আপনি ভুতের মতো পিছে এসে দাঁড়িয়ে থাকলে আমি বুঝবো কিভাবে আমার কি মাথার পিছে চোখ আছে?”, হাতে থাকা চামচ নাড়িয়ে বললো টয়া।
চামচ যেনো ইয়াদের গায়ে না লাগে তাই সে সরে এসে বললো,” হয়েছে বুঝেছি, এবার সামনে ঘুরো।”
” কেনো?”, প্রশ্ন করলো টয়া।
” এতো কথা বলো কেনো?”ইয়াদ টয়াকে ঘুড়িয়ে দাড় করিয়ে দিয়ে চুল গুলো বেধে দিতে লাগলো। মোটামুটি একটা ঝুটি করে দিলো ইয়াদ। যখনই কেউ টয়ার চুল বেধে দেয় তার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু ইয়াদ বেধে দেওয়ায় যে ভালো লাগা কাজ করছে সেটা অনেক আলাদা।
তবে টয়ার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো ইয়াদ রাবার ব্যান্ড কথায় পেলো সে নিশ্চয় ঘরে রাবার ব্যান্ড রাখবে না। তাহলে কি অন্য কোনো মেয়ের? মনে প্রশ্ন জাগতেই টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে সামনে তাকালো। হটাৎ একটা অন্যরকম আওয়াজে টয়া আর ইয়াদ দুজনের দৃষ্টি টিভির দিকে তাকালো।

তাকিয়ে টয়ার চোখ কপালে উঠে গেলো একটা মুভির কিসিং সীন দেখাচ্ছে। একটু আগের আওয়াজটা কি তাহলে…. এটা দেখে টয়া মূর্তির মতন দাড়িয়ে রইলো। ইয়াদ স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে গিয়ে চ্যানেল বদলে দিলো তবে টয়া আর ইয়াদের চোখে চোখ পড়তেই দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।


টয়া খাবার গুলো টেবিলে ইয়াদের সামনে রাখলো। তারপর ঝাঁঝালো গলায় বললো,” এবার passward টা বলুন।”
ইয়াদ প্লেট নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো,” বসো বলছি।”
” আবার বসা লাগবে কেনো? আপনি বলুন তারাতারি।”, টয়া অস্থির হয়ে বললো। ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে বসিয়ে বললো,” তুমি এখানে বসবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার খাওয়া শেষ হচ্ছে। খাবার সময় কেউ পাশে বসে থাকলে আমার ভালো লাগে।
” মানে!”, তেজী গলায় বললো টয়া।
” মানে? এসেছো নিজের ইচ্ছায় যাবে কি যাবে না কখন যাবে সেটা আমি ডিসাইড করবো।”ইয়াদের কথা শুনে টয়া অগ্নি মূর্তি হয়ে গেলো।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
[পর্বঃ২১ :#স্টিকি_নোট
লেখিকা :#নবনী_নীলা
“এসেছো নিজের ইচ্ছায় যাবে কি যাবে না কখন যাবে সেটা আমি ডিসাইড করবো।”ইয়াদের কথা শুনে টয়া অগ্নি মূর্তি হয়ে গেলো।
” আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন? দেখুন ভাল্লাগছে এসব। আমি বাসায় যাবো।”, অস্থির হয়ে বললো টয়া।
ইয়াদ খেতে নিবে এমন সময় জিজ্ঞেস করলো,” তুমি ডিনার করেছো?”
টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ মলিন ভাবে তাকিয়ে থেকে বললো,” এভাবে তাকিয়ে থেকো না চোখ বের হয়ে আসবে। যেটা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দাও।” টয়া মুখ কালো করে বসে আছে। টয়া না খেয়ে থাকলে ইয়াদ কি করে খাবে? এই মেয়ে যা জেদি মুখেও বলবে না। ইয়াদ চেয়ারটা টয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে আসতেই টয়া রাগী চোখে তাকালো, ইয়াদ সেটা গ্রাহ্য করলো না। ইয়াদ চামচে করে পাস্তা টয়ার মুখের সামনে ধরে বললো,” নাও এটা শেষ করো।”

” এতো care দেখাতে হবে না আমি খেয়েছি। এবার আপনি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।”, রাগী চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।
ইয়াদ না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” care কে দেখছে? তুমি যে খাবারে উল্টা পাল্টা কিছু মিশাও নি তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই তুমি খেলে আমি নিশ্চিত হয়ে বাকিটা খেতে পারবো।” ইয়াদের কথায় টয়ার পুরো মেজাজ নষ্ট হয়ে গেলো।
” আমি উল্টা পাল্টা কিছু মিশিয়েছি। এইজন্য বলে মানুষের উপকার করতে নেই। আপনি সবাইকে নিজের মতো মনে করেন”, বাকিটা বলে শেষ করার আগেই ইয়াদ টয়ার মূখে খাবারটা ভরে দিয়ে বললো,” এতো যে কথা বলো tired লাগে না?”
টয়া এমন ভাবে চাবাচ্ছে যেনো পারে না এক্ষুনি ইয়াদকে কামড়ে দেয়। ইয়াদ চাইছে না টয়া চলে যায় তাই যতক্ষণ পারা যায় আটকে রাখে।

ইয়াদ খাবার শেষে নিজেই টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছে। টয়া রেগে আটম বম হয়ে আছে। একেই বলে অতি চালকের গলায় দড়ি আমারই বা দরকার কি ছিল এখানে আসার জন্মের মত ফেসে গেছি। ইচ্ছে করছে হাতুড়ি দিয়ে দরজাটা ভেঙে ফেলে। ইয়াদ প্রথমে ভেবেছিলো টয়াকে যেতে দিবে কিন্তু এখন মত পাল্টেছে। এর মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল টয়া দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো। এবার কি করবে দরজা তো খুলতেই হবে এই ফাঁকে টয়া কেটে পড়বে। ইয়াদ টয়ার হাব ভাব দেখে বুঝতে পারছে পালানোর জন্য টয়া প্রস্তুত কিন্তু এতো সহজে ইয়াদ তো ছাড়ছে না। ইয়াদ দরজার ফাঁকে দেখলো বাহিরে রিতু দাড়িয়ে এবার দরজা খোলার প্রশ্নই উঠে না ওই মেয়ে সারারাত দাড়িয়ে থাকুক। ইয়াদ দরজার সামনে থেকে চলে যেতেই টয়া চেঁচিয়ে বললো,” কি হলো দরজা না খুলে কোথায় যাচ্ছেন? আপনি দেখছি আসলেই একটা হিটলার। দরজা খুলে দিন আমি বাসায় যাবো। শুনতে পেয়েছেন? আমার ঘুম পেয়েছে আমি বাসায় যাবো।”

ইয়াদ টয়ার দিকে ঘুরে বললো,” ঘুম পেলে আমার রূমে গিয়ে শুয়ে পরো।” টয়ার চেঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই সেটা ইয়াদের কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তার চোখে মুখে বিরক্তির কোনো ছাপ নেই সে যেনো মজা পাচ্ছে।
” আমি আপনার রূমে কেনো ঘুমাবো ? আর আমি বলেছি না যে আমি আপনার সাথে থাকবো না। তাহলে জোর করেছেন কেনো? “, টয়ার কথায় ইয়াদ এগিয়ে আসতে আসতে বললো,”তোমার কথা কি আমাকে শুনতে হবে? শুনবো না আমি। কি করবে। এখানে থাকবে তুমি বুঝেছ?”
টয়া খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে আজ তাকে এখানেই থাকতে হবে কিন্তু টয়া সেটা কক্ষনো হতে দিবে না।
” বলেছি তো থাকবো না “, বলে টয়া পিছিয়ে যেতে লাগলো ইয়াদ অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে।
টয়া দেওয়ালের সাথে লেগে দাড়িয়ে পড়তেই ইয়াদ দুপাশে হাত রেখে টয়ার দিকে ঝুঁকে আসতেই টয়ার হার্টবিট বেড়ে গেছে। টয়া তাও রাগ দেখিয়ে বলতে গেলো ইয়াদ আদুরে গলায় বলল,” আমার সাথে থাকলে আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলবো?”
টয়া একটা ঢোক গিলে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি জানি না।”
ইয়াদ নিশব্দে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর টয়া নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে আছে। ইয়াদ যেনো হারিয়ে যায় এই স্নিগ্ধতায়। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে টয়ার হাত ধরে বললো,” ঘুমাবে এসো।”
টয়া চিৎকার শুরু করে বলে না না আমি যাবো না। ইয়াদ উপায় না পেয়ে টয়াকে কোলে তুলে নিলো। ইয়াদের হটাৎ এমন কাণ্ডে টয়া চোখ বন্ধ করে ইয়াদের জামার কলার খামচে ধরলো। ইয়াদ টয়াকে কোলে তুলে টয়ার দিকে ঝুকে বললো,” আর একটা চিৎকার দিবে তুমি, তোমাকে আমি একদম ছুড়ে ফেলে দিবো।”
টয়া দাতে দাঁত চিপে বললো,” আর আপনাকে বুঝি আমি ছেড়ে দিবো?”
ইয়াদ একটু হেসে বললো,” তুমি আমাকে ভয় পাও না, তাই না।”
” আপনাকে ভয় পাওয়ার কি আছে? “, ইয়াদের কানের কাছে চেঁচিয়ে বললো টয়া।
” ভয় পাওয়ার কি আছে একটু পরই বুঝতে পারবে।”,বলে আড় চোঁখে তাকিয়ে হাসতেই টয়া একটা ঢোক গিলে বললো,” আমাকে নামান। আমি যাবো না।”
ইয়াদ টয়াকে নিজের রূমে নিয়ে এসে খাটের উপর বসিয়ে দিলো। তারপর দরজা আটকে দিতেই টয়া খাট থেকে নেমে দাড়িয়ে পড়লো। বুকের ভিতরটা যেনো কেমন করে উঠলো। দরজা আটকে দিয়েছে কেনো টয়ার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ চলে এসেছে। টয়া চেঁচিয়ে বললো,” একি আপনি দরজা বন্ধ করেছেন কেনো। দরজা খুলুন।”
ইয়াদ শার্টের বোতাম খুলে এগিয়ে আসতেই টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। টয়া ভয়ে পুরো শেষ হয়ে গেলো বুকের ভিতরটা কেমন জানি করছে।
ইয়াদ এগিয়ে আসতে আসতে পুরো শার্টটা খুলে ফেললো। টয়া একদম দেওয়ালে সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। এবার বাঁচবে কিভাবে? টয়ার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ঘনো ঘনো নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে। টয়া কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।
ইয়াদ কাছে এসে দাড়াতেই টয়া চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে ঝুঁকে রইলো। কিছু বোঝার আগেই ইয়াদ টয়াকে কোলে তুলে নিলো। টয়া চোঁখ মুখ খিচে ফেললো তার শরীরে এক শিতল শিহরন বয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” ভয় পাচ্ছো বুঝি?”
টয়ার হাত ইয়াদের কাধে ছিলো এই কথা শুনে টয়া রাগ সামলাতে না পেরে ইয়াদের পিঠে এক খামচি বসিয়ে দিলো। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেললো খামচি দেওয়ার সাথে সাথে।
” এর শোধ আমি নিচ্ছি আমি দাড়াও।”, বলে টয়াকে বিছনায় শুইয়ে দিলো। টয়া চোখ খুলছেনা কারণ ইয়াদ তার একদম সামনে আছে। টয়া ভয়ে বিছানার চাদর শক্ত করে ধরলো। ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর সরে গিয়ে বললো,” ভীতুর ডিম একটা।”বলেই ইয়াদ হেসে ফেললো। ইয়াদ মোটেও চায় না তার ভালোবাসা টয়ার ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়াক। So let it be।
টয়া বোকা হয়ে গেলো। টয়ার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ইয়াদের ঘাড় মটকে দেয়। অসভ্য, বেয়াদব একটা ছেলে। টয়া চোখ খুলে হাতের মুঠি শক্ত করে রাগ সামলাচ্ছে। রাগ সামলাতে না পেরে টয়া বলে বসলো,” এসবের মানে কি?”
ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার দিকে ঘাড় ফিরলো ইয়াদের বুঝতে বাকি রইলো না যে এ মেয়েকে চুপ করানো বেশ কষ্টের কাজ। ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” কিছু না।”
টয়া বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে ইয়াদ তাকে ভয় দেখানোর জন্য এসব করেছে ভেবেই গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। ইয়াদ কিছু করবেনা সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়েছে তাই কথার পিঠে কথা বলে বসলো,” আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?” বলে টয়া উঠে বসতেই ইয়াদ হাত ধরে টয়াকে বিছানার সাথে আটকে রেখে টয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো টয়া কিছু বলতে গেলো ইয়াদের চোখে চোখ পড়ায় চুপ করে গেলো। ইয়াদ হটাৎ যেনোএক ঘোরের মাঝে চলে গেলো। ইয়াদের নিশ্বাস টয়ার মুখে পড়তেই শরীরে শীতল শিহরন বয়ে গেল। এইবার ও ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিবে ভেবে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে টয়া। কিন্তু হটাৎ ইয়াদের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে টয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তারপর নিমিষেই চোখ বন্ধ করে ফেললো।
কিছুক্ষণ পর ইয়াদ সরে আসতেই টয়া মুখ ঘুরিয়ে হাপাতে লাগলো। উচিৎ শিক্ষা হয়েছে তার কেনো যে বেশি কথা বলতে যায়। ইয়াদ নিশব্দে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই নিরবতায় টয়ার অসস্তি লাগছে। আবার কি করে বসবে কে জানে।
ইয়াদ নিরবতা ভেঙে বললো,” শেষ পর্যন্ত বাধ্য করলে আমায়। চুপ চাপ থাকলে কি সমস্যা হতো তোমার। এর পর আর একটা কথা বলেছো আমি সেন্টেন্সের ওয়ার্ড গুনে গুনে ঠিক ততটা কিস করবো।”
ইয়াদের কথা শুনে টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। টয়া ইয়াদের দিকে ফিরতেই, ইয়াদ টয়াকে আশ্বস্থ করে বললো,” I mean it।”বলে ইয়াদ টয়ার উপর থেকে সরে গেল। টয়া চাপতে চাপতে বিছানার একদম কোনায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করতেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন একটা করে উঠলো।

সকালে টয়া ইয়াদের আগে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়। টয়ার চুল এলোমেলো হয়ে আছে চুল থেকে রাবারব্যান্ড খুলে সে আবার বোকা হয়ে গেলো। সে কোথায় ভেবেছিলো কোনো মেয়ের রাবারব্যান্ড আসলে টাকা বাধার রাবারব্যান্ড দিয়ে ইয়াদ তার চুল বেধে দিয়েছে।ভাগ্যিস সে ইয়াদের আগে ঘুম থেকে উঠেছে। ইয়াদের সামনা সামনি কি করে হবে টয়া বুঝতেই পারছিলো না কাল রাতের পর থেকে। টয়া তাড়াতাড়ি সকালের নাস্তা বানিয়ে ফেললো পরে দরজা খুলে দিতে গেলে হয়তো বলবে আমার নাস্তাও তুমি বানিয়ে দেও তখন? আগে ভাগে ঝামেলা শেষ করে রাখলেই ভালো।
টয়া নাস্তা গুলো টেবিলের উপর ঢেকে রেখে দিল। এবার শুধু হিটলারের ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষার পালা। টয়ার চোখ হটাৎ দরজায় লাগানো একটা পিংক স্টিকি নোট দেখতে পেলো টয়া এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে নিলো। সেখানে লেখা:

Password hint : Arniha tabassum toya

ইয়াদ রাতে উঠেই hint লিখে রেখেছিল কারন সকালে সে চায় না টয়া ভার্সিটির জন্যে লেট হয়ে যাক। ইয়াদ অনেক রাতে ঘুমালে তার সকালে উঠতে দেরি হয়। নিজের নামের hint তো টয়া বুঝবেই চাইলে password লিখে দিতে পারতো তবে টয়াকে বিরক্ত করার সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। এদিকে টয়া পিংক স্টিকি নোট হাতে দাড়িয়ে আছে তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এইখানে লেখা hint অর্নীহা তাবাসসুম টয়া কিন্তু password এ তো সব নাম্বার কোনো অ্যালফাবেট তো লিখার অপশন নেই। তার পুরা নামে কয়টা অ্যালফাবেট আছে অর্নিহাতে আছে পাঁচটা তারপর তাবাসসুমে
আছে আটটা তারপর টয়াতে আছে চারটা তাহলে পাসওয়ার্ড হবে 684। টয়া এটা বের করতেই কয়েকমিনিট ব্যায় করে দিলো। অবশেষে 684 দিয়ে দরজা খুলে খাচা ছেড়ে যেনো বেড়িয়ে এলো টয়া। কি যে শান্তি লাগছে সেটা শুধূ সে নিজেই জানে। তবে পাসওয়ার্টার কাহিনি অদ্ভুত লাগল তার কাছে ইয়াদ এই কাজ কেনো করবে।

ইয়াদ ঘুম থেকে উঠে প্রথমে টয়াকে খুজলো কোথাও নেই মানে সে চলে গেছে টেবিলে খাবার দেখে ইয়াদ একটু অবাক হলো কিন্তু অজান্তেই মূখে হাসি চলে এলো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here