ভালোবাসি_প্রিয় Part: 27+28

0
3734

#ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 27+28
Writer: Nur Nafisa
.
.
মেহেদীর ঘুমন্ত মুখটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে নাফিসা। অসম্ভব ভালো লাগছে! কি ভুলটাই না করতে যাচ্ছিলো সে! বাচ্চার কথা জেনে এতোটা খুশি হবে ভাবতেও পারেনি নাফিসা! এতো ভালো লাগে কেন তাকে! কখনো তো এই লোকটাকে ভালোবাসবে সেটা ভাবেওনি! শত্রু থেকে আজ সে তার জীবন হয়ে গেছে! মেহেদীর জীবন সাজাতে এসে সে নিজেই একটা নতুন পৃথিবী পেয়ে গেছে! আর তদের গড়া পৃথিবীতে আসতে চলেছে নতুন অতিথি! মেহেদীকে দেখতে এখন সম্পূর্ণ আগের মতো লাগছে। সবসময় কি এমন থাকবে!
মেহেদীর ফোন কাছেই ছিলো। সূর্য উঠার সময় হয়ে যাচ্ছে। মেহেদীর মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলো,
– এই উঠো। নামাজ পড়বে না?
মেহেদী ঘুমের মধ্যে থেকেই জবাব দিলো,
– হুম..
নাফিসা মুচকি হেসে তার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
– এই বাবুর আব্বু, নামাজ পড়বে না? সূর্য উঠে যাচ্ছে তো! উঠো…
মেহেদী একটা হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে বললো,
– বাবুর ঘুম ভেঙেছে?
– হুম।
মেহেদী চোখ খুলে নাফিসার কপালে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে উঠে পড়লো। ওযু করে মেহেদী বেরিয়ে গেলো আর নাফিসা মেঝেতে ওড়না বিছিয়ে নামাজ আদায় করে রান্না বসালো।
খাওয়ার সময় নাফিসাকে সাথে বসালো মেহেদী। ইচ্ছেমতো লেবু দিয়ে খাবার টক করে তারপর নাফিসাকে খায়িয়েছে। খাওয়া শেষ করে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে আর নাফিসা খাটে বসে আছে। মেহেদী বললো,
– NN গ্রুপের CEO তোমার আপন মামা?
– হুম।
– অফিস তোমার নামে দিলো কেন? মামাতো ভাইবোন নেই?
– ওটা আমার বাবার অফিস। বাবার অবর্তমানে মামা দেখাশোনা করে।
– তোমার বাবা কোথায়?
– আল্লাহর কাছে।
– মানে?
– আমার বাবা মা কেউই নেই। জন্মের পরপরই মা মারা যায়, আমার দায়িত্ব বাবা একাই নেয়। ছয় বছর বয়সে বাবাও এক্সিডেন্টে মারা যায়। বর্তমানে আমি অনাথ।
মেহেদী পেছনে ফিরে নাফিসার দিকে কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো! নাফিসা জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেদী আবার বললো,
– এরপর থেকে কার কাছে আছো?
– মা থাকাকালেই মামামামী আমাদের বাসায় থাকতো। কোনো এক দুর্ঘটনায় মামার সব সম্পত্তি হারিয়ে মামা নিস্ব! এরপর বাবা আমাদের বাসায়ই থাকতে বলেছে। বাবার অফিসে ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত ছিলো মামা। মামার কোনো সন্তান না থাকায় আমাকে নিজের সন্তানের মতো দেখতেন। মা বাবার মৃত্যুর পর মামামামীর কাছেই থাকি আর মামা কোম্পানির সকল দায়িত্ব নেন। প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করে অবশিষ্ট সব আমার একাউন্টে জমা করে দেন।
– আবিদের বিয়ের সময় তোমার সাথে একটা মেয়ে ছিলো। সে কে?
– মামামামী এতিমখানা থেকে নিয়ে আসে চার বছরের অহনাকে। এখন নিজেদের পরিচয়ে মানুষ করছে। আমি আর অহনাই তাদের সন্তান।
বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে নাফিসা জোরপূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে মেহেদীর দিকে তাকিয়ে বললো,
– বিয়ে করেছো প্রায় দুমাস অথচ শশুর বাড়ি সম্পর্কে কিছুই জানো না। এখন তুমি যে অফিস যাচ্ছো সেটা তোমার শশুরের। আর অফিস যাওয়ার পথে রিধি ফ্যাশন হাউজের পাশে যে চারতলা বাড়িটা আছে সেটাও তোমার শশুরের।
– এতো ধন সম্পদ রেখে আমার কোঠাবাড়িতে পড়ে আছো কেন?
– উত্তর কি তোমার অজানা! কোঠাবাড়িই এখন আমার আসল ঠিকানা।
মেহেদী ফোন ওয়ালেট পকেটে নিয়ে নাফিসার কাছে এসে বসলো। নাফিসার মুখটা দু’হাতে ধরে বললো,
– বাবুটা আমি সত্যিই চাই। কোন ক্ষতি করো না দয়া করে। যেভাবে চাও সেভাবেই চলবো। বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করো না, এবোরশন করো না প্লিজ। একটা বাবু এনে দাও আমার কোলে। কথা দিচ্ছি, সব যত্ন নিবো তোমার। খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।
নাফিসার কপালে চুমু দিয়ে ওয়ারড্রবের উপর থেকে তালা নিয়ে বেরিয়ে গেলো। বারান্দার দরজা তালা লাগিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো মেহেদী। নাফিসা স্তব্ধ হয়ে বসে চোখের পানি ফেলছে! মেহেদী তাকে একটুও ভালোবাসে না! একটুও বিশ্বাস করে না! শুধু বাচ্চার জন্য তার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছে! এতো খেয়াল রাখছে তার! একটুও ভরসা নেই তার উপর! মানুষটা কি কখনোই বুঝবে না তাকে!
এসব ভেবে ভেবে এক পর্যায়ে হুহু করে কেদে উঠলো নাফিসা!
অফিস থেকে ফিরে নাফিসাকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখলো মেহেদী। চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে তার চোখে। মেহেদী চেঞ্জ না করেই নাফিসার কাছে এসে বসে বললো,
– কি হয়েছে তোমার? এভাবে বসে আছো কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
মেহেদী কপালে মুখে হাত দিয়ে দেখতে লাগলো জ্বর এসেছে কিনা! নাফিসা তার হাত সরিয়ে দিলো। বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো,
– এক্সট্রা কেয়ার দেখাতে হবে না। নিশ্চিন্তে থাকো। বাচ্চার কোনো ক্ষতি করবো না। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সুস্থ সুন্দর ভাবে বাচ্চা তোমার কোলে দিয়ে যাবার।
– কি বলছো এসব!
– যা শুনছো তাই বলছি।
মেহেদী নাফিসার হাত ধরে তার কাছে এনে দাড় করিয়ে বললো,
– কি হয়েছে? স্পষ্ট বলো।
– কেন তুমি কি এতোটাই অবুঝ নাকি আমাকে বোকা ভাবো? ভালোবাসো আমাকে? শুধুমাত্র বাচ্চার জন্য আমার প্রতি এক্সট্রা কেয়ার দেখাচ্ছো তুমি। আমি কি এসব কিছুই বুঝি না!
মেহেদী নাফিসার মুখখানা দু’হাতে ধরে বললো,
– শান্ত হও। উল্টাপাল্টা ভেবে মন খারাপ করবে আর বাবুর ক্ষতি হবে।
– না, কোনো ক্ষতি হতে দেবোনা। তুমি নিশ্চিত থাকো। আর আমার প্রতি কেয়ার করা বন্ধ করো। ভালো লাগে না আমার এসব নাটক!
– এমন কেনো করছো আমার সাথে! কিসের অভাব তোমার?
– বিশ্বাসের অভাব! এক ফোটাও বিশ্বাস করো না আমাকে। বিশ্বাস করলে সকালে আমাকে এসব জ্ঞান দিয়ে যেতে না! একটু বিশ্বাস করলে ঘরে তালা লাগিয়ে যেতে না। কি ভেবেছো, চলে যাবো আমি? আরে চলে গেলে তো সেই কবেই যেতে পারতাম। শুধু শুধু এখানে পড়ে থেকে তোমার হাতে দিনের পর দিন নির্যাতিত হতাম না! জানো, একটা সংসারের মূল ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস। সেটাই যদি মজবুত না থাকে তাহলে কিসে সংসার গড়বো!
মেহেদী চেচিয়ে বললো,
– কি করে করবো তোকে বিশ্বাস? যে আমার বাচ্চার কথা আমাকে না জানিয়ে এবোরশন করতে যায় কি করে তাকে বিশ্বাস করি!
রেগে ঘড়ি, ফোন, ওয়ালেট ঢিল মেরে খাটে ফেলে দিলো। টিশার্ট পড়ে বাথরুমে এসে হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। অসহ্য লাগে সবকিছু! ছোটখাটো একটা পার্কের দিকে একা একা হাটছে মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য। সরু রাস্তার দুপাশে গাছপালায় আচ্ছন্ন, বাতাস বইছে। ঠান্ডা পরিবেশে কিছুক্ষণ একা সময় কাটিয়ে আবার বাসায় ফিরলো। নাফিসা ফ্লোরে বসে ওয়ারড্রবে হেলান জানালার দিকে তাকিয়ে নিরবে কাদছে। সকাল থেকে তো মন খারাপই করে ছিলো তাহলে এখনো তো খায়নি! মেহেদী দরজা লাগিয়ে আস্তে আস্তে হেটে নাফিসার পাশে এসে বসলো। চোখের পানি মুছে দিতে গেলে নাফিসা হাত সরিয়ে উঠে যেতে নিলো। মেহেদী তাকে উঠতে দিলো না। জোর করেই চোখের পানি মুছে দিয়ে মাথাটা দু’হাতে ধরে বললো,
– আর তালা লাগিয়ে যাবো না ঘরে।
– কেন যাবে না? শুধু তালা কেন, আমাকে শিকল দিয়ে বেধে রাখো। কিছু বলবো না আমি।
– রাগ করছো কেন! স্বাভাবিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করছিতো আমি। শুধু বাচ্চার জন্য না, তোমার খেয়ালও রাখার চেষ্টা করছি। তুমি হেল্প না করলে কিভাবে সম্ভব, বলো? বাবু আসবে, আমরা খুব সুখের সংসার গড়বো, ছোট একটা পরিবার হবে আমাদের। হুম?
নাফিসা এবার রাগ ভেঙে মেহেদীকে ঝাপটে ধরে কান্না করতে লাগলো। মেহেদী তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– এতো কাদলে বাবুও শুধু কাদতেই শিখবে। দেখো! তখন তুমিই বিরক্ত হয়ে যাবে শান্ত করতে করতে।
নাফিসা কান্নার মাঝেই হেসে উঠলো। কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,
– তখন তোমার কাছে ধরিয়ে দিবো। তুমিই তো শুধু কাদাও আমাকে।
– আচ্ছা, এবার উঠো। দুপুরে খেয়েছো কিছু?
– উহুম।
– তোমাকে কাদাবো না তো কি! এখন আবার মাইর ও দিতে হবে। তিনবেলা ছয়বার খাওয়ার জায়গায় তুমি একবার খেয়েছো। এটাই যত্ন নিচ্ছো তুমি!
– ভালো লাগছে না, তাই খাইনি। কিন্তু ছয়বার কেন?
– বাবু তিনবার।
নাফিসা মেহেদীর বুকে মুখ লুকিয়েই মুচকি হেসে বললো,
– একটা জিনিস চাইলে দিবে?
– কি?
– বলো দিবে কিনা?
– সাধ্যে না থাকলে কিভাবে সম্ভব। আগে তো বলো, তারপর ভাবি!
ভয়ে ভয়ে বললো,
– মায়ের রুম থেকে জায়নামাজ আর কুরআন শরীফ এনে দিবা? আমি ওড়নায় নামাজ পড়তে পারি না।
সে কি রাগ করেছে নাকি, নাফিসা বুঝতেও পারছে না! মেহেদী কিছু বলছে না তাই নাফিসা আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো,
– রাগ করো না প্লিজ। তোমার ইচ্ছে হলেই এনে দিবে।
– হাতমুখ ধুয়ে এসো, আমি খায়িয়ে দেই।
নাফিসা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো। বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখলো ওয়ারড্রবের উপর জায়নামাজ আর কুরআন শরীফ রাখা আছে। চোখে পড়তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। মুখ মুছে খাটে বসলো, মেহেদী প্লেটে ভাত নিয়ে এসে নাফিসাকে খায়িয়ে দিলো।
শুক্রবার সকালে মেহেদী পুরো সপ্তাহের বাজার করে এনেছে। দুইটা মুরগিও এনেছে। নাফিসা এতো বাজার দেখে বললো,
– এতোকিছু একসাথে এনেছো কেন? শুধু শুধু টাকা নষ্ট! তাছাড়া এসব থেকে থেকে নষ্ট হবে, ফ্রিজে রেখে কি খেতে ভালো লাগে। টাটকাটাই তো খেতে ভালো।
– প্রতিদিন কি আর বাজার করার সময় পাই! তাই একসাথেই নিয়ে এলাম। মুরগি রান্না করতে পারবে? জুমার পর আবিদকে নিয়ে আসবো।
– পারবো না কেন? সেদিন খেয়েছো ভালো লাগেনি?
মেহেদী কিচেন থেকে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
– সেজন্যই তো জিজ্ঞেস করলাম আবার রান্না করতে পারবে কিনা!
– হুম, পারবো।
– আবার যেন লবণের জোয়ার ভাটা না পড়ে!
নাফিসা মুচকি হেসে মুরগির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে আবার নিচে রেখে রুমের দরজার পাশে এসে বললো,
– আবিদ ভাইয়াকে একটু বলবা, দিনাকে সাথে আনার জন্য?
মেহেদী ওয়ারড্রবে কিছু করছিলো। পেছনে ফিরে একবার নাফিসার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মনযোগ দিলো।
উত্তর না পেয়ে নাফিসা মুখ মলিন করে কিচেনে এসে পড়লো। আগে সকালের জন্য ভাত আর পুইশাক, ডিম ভাজি করলো। চুলার পাশে দাড়িয়েই ফোন নিয়ে ইউটিউবে মুরগি কাটা দেখে নিলো। দুজন একসাথে নাস্তা করেছে। সবকিছু গুছিয়ে নাফিসা শাড়ির আঁচল নাকে বেধে তারপর মুরগি কাটতে বসলো। মেহেদী নাফিসার অবস্থা দেখে বললো,
– মুরগি তো কেটে নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিলো!
– পারিনা বলে এভাবে লজ্জা দিবা! হুহ্! আস্তে আস্তে সব শিখে নিবো দেখো।
– কথা সবসময় উল্টো দিকে ঘুরাও কেন! তুমি তো খাবারের গন্ধই সহ্য করতে পারো না, তাই বলেছি। শেখার হলে এক বছর পরে শিখো।
মুরগি কাটার শেষ মুহুর্তে আবিদ আর দিনা এসে হাজির! দিনা ঘরে এসেই নাফিসাকে ডাকলো! নাফিসা তো অবাক! মেহেদী বলেছে তাহলে! কিন্তু ও তো বললো, জুমার পর আসবে আবিদ ভাইয়া! তাহলে এতো তারাতাড়ি! দিনা কিচেনের দিকে না তাকিয়েই রুমে চলে গেলো। মেহেদী বললো,
– নাফিসা কিচেনে।
দিনা আবার দ্রুত এখানে চলে এলো নাফিসা মাত্র বসা থেকে উঠে দাড়িয়েছে দিনা উৎফুল্ল হয়ে দ্রুত আসছে তাকে জড়িয়ে ধরতে। নাফিসা হাত বাড়িয়ে তাকে নিষেধ করলো কাছে আসতে,
– এই দাড়া দাড়া, আমার হাতে ময়লা!
– ওফ্ফ! তুই হাত মেলে রাখ।
নাফিসার অপেক্ষা না করে কথা বলতে বলতে সে নিজেই নাফিসার হাত মেলে নাফিসাকে জড়িয়ে ধরলো। নাফিসার চোখে পানি এসে পড়েছে। কতদিন পর দেখা হলো দিনার সাথে! মেহেদী কিচেনের দরজার সামনে দাড়িয়ে নাফিসার দিকেই তাকিয়ে আছে। নাফিসা তার দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো, চোখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। মেহেদী হয়তো বুঝে গেছে তার চোখের ভাষা। দিনাকে পেয়ে নাফিসার আনন্দ দেখে তারও খুব ভালো লাগছে। মুচকি হেসে আবিদের সাথে কথা বলতে বলতে রুমে গেলো।
এদিকে দিনা নাফিসার কানে কানে বললো,
– কংগ্রেচ্যুলেশন, বাবুর আম্মু। কেমন মানুষ তুই? একেবারে ভুলেই গেছোস আমাকে! আবিদ না বললে তো জানতেই পারতাম না!
– হ্যাঁ, তুমি খুব মনে রেখেছো তো! জেনেও একটা বার কল পর্যন্ত করেনি!
– আমি মনে রেখেছি ঠিকই! সুযোগ পাইনি কল করার, যাইহোক, এখন কেমন আছিস?
– আলহামদুলিল্লাহ। তুই?
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ।
দুজনের মুখে হাসি আর চোখে পানি। দিনা নাফিসাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
– এই তুই কাদছিস কেন?
– তুই কাদছিস কেন?
দুজনেই হেসে উঠলো। নাফিসার চোখ মুছে দিয়ে দিনা বললো,
– আচ্ছা, কেউই আর কাদবো না। মেহেদী ভাইয়া কল করার পর আবিদ যখন বললো, নাফিসা তোমাকে যেতে বলেছে, আমি তখনই এখানে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
– মেহেদীতো বলেছিলো আবিদ ভাইয়া বিকেলে আসবে। আমিতো এখনো কিছুই করতে পারিনি!
– ওই, তোর কি মনে হয়, আমি নাস্তা না করেই চলে এসেছি! বল কি করতে হবে, আমি হেল্প করি। তোর তো মিষ্টি পছন্দ না তাই মিষ্টির সাথে টকদই এনেছি।
– শুধু শুধু এসবের কোন প্রয়োজন ছিলো না। খাওয়ার মানুষ নেই।
দিনা বোরকা খুলতে খুলতে বললো,
– আচ্ছা আমিই খেয়ে শেষ করে যাবো। হিহিহি… শাড়িতে তোকে খুব সুন্দর লাগছে। সবসময় শাড়ি পড়ছ?
– হুম।
– ভালোই তো, আমি শাড়ি পড়ে থাকতে পারিনা বেশিক্ষণ। তাই কোন প্রোগ্রাম ছাড়া তেমন পড়া হয় না।
– বোরকা রেখে আয় ঘরে।
দিনা রুমে চলে গেলো আর নাফিসা বাথরুমে এসে মুরগির মাংস ধুয়ে নিলো। দুই বান্ধবী গল্প করতে করতে রান্নার আয়োজন করছে। মেহেদী কিচেনের দরজার সামনে এসে নাফিসাকে ডাকলো। নাফিসা কাছে এসে বললো,
– কি?
মেহেদী আস্তে আস্তে বললো,
– মামামামীকে বললে আসবে আজ?
নাফিসা তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! মেহেদী হঠাৎ মামামামীর কথা বলছে কেন! আবিদ ভাইয়া হয়তো কিছু বলেছে। এদিকে দিনা বললো,
– ভাইয়া আরেকটু আস্তে বলেন। আমি শুনে ফেলছি তো!
– তুমি কানে তুলা দিয়ে রাখো।
– হিহিহি
জবাব না পেয়ে মেহেদী বললো,
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কিছু তো বলো?
– মেয়ের জামাই দাওয়াত করলে তো আসতেই পারে।
মেহেদী পকেট থেকে ফোন বের করে নাফিসার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
– নাও, কল করে বলো।
– আমি বলবো কেন! তোমার বাড়িতে দাওয়াত করবে তুমি না বললে কিভাবে আসবে!
মেহেদী নাফিসার হাত ধরে বাইরে নিয়ে এসে মামার নম্বরে ডায়াল করে নাফিসাকে বললো,
– শুরুটা তো অন্তত করো।
নাফিসা ফোন নিয়ে মামার সাথে কথা বললো। কেমন আছে তা জিজ্ঞেস করে বললো মেহেদী কথা বলবে। তারপর মেহেদীর কাছে ফোন দিলে সে কথা বলতে লাগলো কিন্তু পুরোটা সময় নাফিসার হাত ধরে রেখেছে সে। নাফিসার ইচ্ছে করছিলো মন খুলে হাসতে। এমনিতেই লজ্জা পাচ্ছে তাই হেসে আর লজ্জা দিলো না তাকে। মামা বলেছে আসবে। কথা বলা শেষ হতেই নাফিসা বললো,
– দাড়াও এখানে, আমি আসছি।
নাফিসা ঘরে এসে আবার বাইরে এলো। মেহেদীর হাতে একহাজার টাকার নোট দিয়ে বললো,
– বাজারে যাও একটু। গরুর মাংস আর পোলাওয়ের চাল নিয়ে আসো। অহনার গরুর মাংস খুব পছন্দ।
– টাকা রাখো। আমার কাছে আছে।
নাফিসা নিজেই মেহেদীর ওয়ালেট বের করে টাকা রাখতে রাখতে বললো,
– বেতন পেয়ে সাথে সাথে শেষ করে ফেললে বাকি দিন চলবে কিভাবে! এটা নিয়েই যাও তুমি। কথা বলে সময় নষ্ট করো না আর। আমার কাজ আছে। যাও তুমি।
নাফিসা আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে এলো। মেহেদী আবিদকে সাথে নিয়ে বাজারে গেলো।

#ভালোবাসি_প্রিয়
Part: 28
Writer: Nur Nafisa
.
.
সবমিলিয়ে দিনটা ভালোই কেটেছে। কতোদিন পর মামামামীর সাথে দেখা, দিনা অহনার সাথে দুষ্টুমি, গল্প। একপ্রকার হৈহুল্লোড়ে কেটেছে দিন। নাফিসা মামিকেও বলেছে বাচ্চার কথা। নাফিসাকে নিয়ে যেতে চেয়েছে তারা নাফিসারও ইচ্ছে করছিলো তাদের সাথে যেতে। কিন্তু মেহেদীর মুখের ভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরেছে মেহেদী চায় না সে যাক। তাই সে নিজেই বলেছে আজ যাবে না, কিছুদিন পর যাবে।
সন্ধ্যার দিকে তারা চলে গেছে সবাই।
ইশার নামাজ পড়তে মেহেদী মসজিদে গেছে। নাফিসা ফ্রিজ থেকে আচারের বক্স নিয়ে খেতে বসলো।
– আহ! কি মজা! শাশুড়ী মা মনে হয় আমার জন্যই বানিয়ে রেখে গেছে। উনার ছেলে তো আর খায় না, তাহলে আর কার জন্য বানাবে!
মেহেদী বাসায় ফিরে দেখলো নাফিসা আচার খাচ্ছে। নাফিসা বললো,
– খাবে?
– না। তুমিই খাও।
– তুমি তো খাও না, তাহলে মা আমার জন্যই বানিয়ে রেখেছে তাই না?
মেহেদী কোন জবাব দিলো না। টুপি রেখে কিচেনে এসে প্লেটে করে খাবার নিয়ে রুমে এলো। নাফিসার হাত থেকে আচারের বক্স নিয়ে ফ্রিজের দিকে যেতে যেতে বললো,
– হইছে, অনেক খাইছো। এবার ভাত খাও।
– আমি মাত্র নিলামই! আমি ভাত খাবো না। তুমি খাও, আচার দাও।
– আর খেতে হবে না, একদিনে সব খেয়ে ফেললে কিভাবে!
– একটুখানি খেয়েছি!
– বাকিগুলো কি আমি শেষ করছি? নাও হা করো।
– খাবো না আমি। দুপুরে অনেক খেয়েছি ,আমার পেট ভরা।
– হ্যাঁ, যেই খেয়েছো! দেখেছিই তো। হা করো।
জোর করেই খায়িয়ে দিলো মেহেদী। নাফিসা আগেই শুয়ে পড়েছে। মেহেদী খাটে এসে শুতে যাবার সময় নাফিসার পেটের দিকে চোখ পড়লো। আস্তে আস্তে শাড়ি সরিয়ে আলতো করে পেট স্পর্শ করলো। ভেতরটা কাপছে তার! ঘা শুকালেও অসংখ্য ছাপ পেটে। সিগারেটের পোড়া দাগ, বেল্টের আঘাতের ছাপ, নখের আঘাতসহ আরও কতো আঘাতই না করেছে সে! অথচ আজ তারই সন্তানের বসবাস এই পেটে! উপুড় হয়ে পেটে ঠোঁটের ছোয়া দিলো মেহেদী। নাফিসা চোখ খুলে তাকিয়ে বললো,
– বাবুকে আদর করলেই হবে, ঘুমাবে না? আবার কাল অফিস যেতে পারবে না।
মেহেদী মুচকি হেসে পাশে শুয়ে বললো,
– উহুম, শুধু বাবুকে আদর করলেই হবে না, বাবুর আম্মুকেও করতে হবে।
সকালে অফিস যাওয়ার আগে মামা ফোন করে বললো নাফিসাকেও আজ অফিস যেতে। মাঝে মাঝে ঘুরে এলে তারও ভালো লাগবে। আগে তো প্রতি সপ্তাহেই একবার যেতো এখন আর যাওয়াই হয় না। মেহেদী বললো,
– যেতে পারবে? আবার শরীর খারাপ হবে না তো?
– পারবো যেতে।
– ওকে চলো।
মেহেদীর সাথেই গিয়েছে অফিস। আজও এক কোম্পানির সাথে মিটিং ছিলো। মামার কথায় তাকে প্রেজেন্টেশন করতে হলো। প্রথমে মেহেদীর জন্য ইতস্তত বোধ করছিলো ,মেহেদীর ইতিবাচক মনোভাব দেখে সে প্রেজেন্টেশন করেছে। মেহেদী তার প্রতিভা দেখে অবাক! এতো সুন্দর প্রেজেন্টেশন করে কিভাবে! তার বয়সও তো তেমন না! বয়সের তুলনায় সে অনেক দক্ষ! পুরো কোম্পানি চালাতে সক্ষম এই মেয়েটা! মেহেদীর নিজেকেই ছোট মনে হচ্ছে এখন!
সম্পূর্ণ অফিস টাইম নাফিসা এখানে ছিলো। মামার সাথে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছে কিছুক্ষণ। সে কর্মীদের মাঝে এটাও ঘোষণা করে দিয়েছে এখন থেকে মেহেদীও কোম্পানির CEO. মেহেদীর মোটেও ভালো লাগেনি তার এনাউন্সমেন্ট! এটা সে প্রত্যাশিত ছিলো না। কিন্তু নাফিসা কোম্পানির মালিক হওয়ায় এখানে তারউপর কিছু বলতে পারলো না। অফিস টাইম শেষে একসাথে বাসায় ফিরেছে কিন্তু মেহেদী খুব চুপচাপ, তার মুখটা মলিন। নাফিসা লক্ষ্য করেছে ঠিকই। বাসায় এসে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে তোমার? এমন চুপচাপ কেন?
মেহেদী কোন জবাব দিলো না। চুপচাপ চেঞ্জ করে নিলো। তাকে এড়িয়ে যেতে দেখে নাফিসা হাত ধরে বললো,
– কি হয়েছে বলো?
– কিছু হয়নি। কাল থেকে আমি আর অফিস যাবো না। অন্য চাকরি খুজবো না হলে না খেয়েই বাকি জীবন কাটাবো।
– কিসব বলছো তুমি! হঠাৎ কি হয়ে গেছে!
– কি হয়েছে বুঝতে পারছো না! কি ভাবো আমাকে? ভালোভাবেই তো নিজেকে কাজে মনযোগী করে গড়ে তুলছিলাম! বলেছিলাম আমি CEO হবো? তোমার বাবার ধনসম্পদ আমি নিতে যাবো কেন! আমার যেটুকু আছে সেটুকু নিয়েই আমি সন্তুষ্ট! কারো দয়া লাগবে না। শরীরে যথেষ্ট শক্তি আছে উপার্জন করে খাওয়ার। লাগবে না তোমার এই চাকরি।
– আশ্চর্য! এমন করছো কেন! কোনো ভাইবোন না থাকায় এই সম্পদের মালিক তো আমিই। আর আমার যা আছে সবটাই তুমি পাবে। আমি তো অন্যেরটা তোমাকে দিচ্ছিনা!
– দিচ্ছো কেন? আমি বলেছি দিতে? বলেছি এতো দরদ দেখাতে? রানী হয়ে থাকার এতো শখ তাহলে সব জেনেশুনে আমার কাছে এসেছো কেন! পারবো না কারো ধনসম্পদ নিতে, পারবো না কাউকে রানী করে রাখতে। আমার ইচ্ছেমতো থাকতে পারলে থাকো আর না হয় চলে যাও, তোমার ধনসম্পদ নিয়ে বাচো।
মেহেদী ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নাফিসা খুব কষ্ট পেয়েছে তার আচরণে! এখন নিজেই নিজের উপর রাগ হচ্ছে! কেন মেহেদীকে না জিজ্ঞেস করে এনাউন্সমেন্ট করতে গেলো! সে তো আর যাবে না অফিস! ওফ্ফ!
মন খারাপ করে বসে রইলো কিছুক্ষণ! অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাতের খাবার রান্না করতে লাগলো। রান্না করে একা একা বসে আছে। ইশার নামাজও পড়েছে। মেহেদী সেই বিকেলে বেরিয়েছে এখন ইশার নামাজ পড়ে তারপর বাড়ি ফিরেছে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় নাফিসার নাম ধরে ডাকলো। নাফিসা দরজা খুলে রুমে চলে এলো। দুজনেই চুপচাপ। কারো মুখে শব্দ, হাসি নেই! মেহেদী তার মুখের দিকে তাকিয়েছে কয়েকবার। কিন্তু নাফিসা একবারও তাকায়নি। ফোন চার্জে দেওয়ায় সময় নাফিসাই বললো,
– মামাকে বলে দিয়েছি তোমাকে CEO হিসেবে পরিচয় না দিতে। ম্যানেজার হিসেবেই নিযুক্ত থাকবে।
মেহেদী কিছু বললো না। রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে এসে খাবার নিয়ে এলো। নাফিসার কাছে বসতেই নাফিসা তার দিকে তাকিয়ে বললো,
– এখন অফিস যাবে না? কথা বলছো না কেন?
– খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই। চুপচাপ খাও।
খাওয়া শেষ করে ঘুমানোর সময়ও জিজ্ঞেস করলো নাফিসা। কিন্তু মেহেদী জবাব না দিয়ে বললো চুপচাপ ঘুমাতে।
সকালে যখন অফিস গেলো তখন নাফিসা দুশ্চিন্তামুক্ত হলো।
এখন সব ঠিকঠাকই চলছে। মেহেদী ঠিকমতো অফিস যাচ্ছে। মেহেদী নাফিসার খেয়াল রাখছে৷ লাঞ্চ টাইমে প্রতিদিন বাসায় চলে আসে।একসাথে লাঞ্চ করে নাফিসাকে দেখে আবার অফিস যায়। নাফিসাও আরও দুদিন অফিস গিয়েছিলো। মেহেদী ফোনে কথা বলে, আর নাফিসার বোরিং অনুভূতি দূর করে। মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় চেকাপের জন্য।
সাড়ে পাচ মাস চলে বেবির। অতিবাহিত এই দিনগুলোতে মেহেদী কোনো অবহেলা করেনি নাফিসাকে! কাজের ফাকে ফাকে প্রতিটা মুহূর্ত নাফিসাকে সময় দিয়েছে। সবদিক থেকে যত্ন নিচ্ছে।

আযানের সময় উঠে নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পড়েছে। জানালা খোলা। ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। জানালা দিয়ে আলো প্রবেশ করে পুরো রুম আলোকিত হয়ে উঠেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে নাফিসা মেহেদীর দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেদী চোখ খুলে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
– এভাবে তাকিয়ে কি দেখো?
– তোমাকে দেখছি।
– হঠাৎ এতো ধ্যান মগ্ন হয়ে দেখার কারণ কি?
– বাবুটা যেন তার বাবার মতো হয়!
– আমার তো ইচ্ছে বাবুটা তার মায়ের মতো হোক।
– উহুম তোমার মতো হবে।
নাফিসার নাক টেনে বললো,
– আচ্ছা দেখা যাবে।
– আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করবে?
– কি?
নাফিসা চোখ বন্ধ করে বললো,
– প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে আমরা আবার বিয়ে করবো। লাল বেনারসিতে আমি বধু সাজবো, শেরওয়ানী পড়ে তুমি বর সাজবে। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার তখন আমাদের বাবুটাও আমাদের সাথে থাকবে। পূরণ করবে?
মেহেদী নাফিসার কপালে আলতো স্পর্শ দিলো। নাফিসা চোখ খুলে মেহেদীকে মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে মেহেদীর মাঝে লুকালো।
অফিস থেকে বাসায় ফিরে বারান্দায় ফ্লোরে রক্ত দেখে মেহেদী ভয় পেয়ে গেছে! দৌড়ে সে রুমে এলো। নাফিসা জানালার পাশে চেয়ারে বসে আছে। মেহেদীকে এভাবে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে বললো
– কি হয়েছে?
মেহেদী কোনো জবাব না দিয়ে নাফিসার হাত চেক করলো, হাটু ভেঙে বসে পা চেক করলো। কিন্তু কিছুই পেলো না।
– আরে কি করছো! হঠাৎ কি হয়েছে তোমার?
মেহেদী উঠে দাড়িয়ে বললো,
– বারান্দায় রক্ত কিসের?
– রক্ত! রক্ত আসবে কোথা থেকে!
– আমিও তো সেটাই জানতে চাচ্ছি। কোথায় কেটেছে বলো। তুমি ছাড়া তো কেউ নেই এখানে। তারাতাড়ি বলো কি হয়েছে?
– আরে কি পাগলের মতো বলছো তুমি! আমার কি হবে!
– তুমি বলতে চাচ্ছো না কোথায় কেটেছে! বলো আমাকে, আমি কিছু বলবো না।
– আশ্চর্য! বিশ্বাস করছো না কেন! এখন কি আমার সম্পূর্ণ শরীর দেখাতে হবে তোমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য!
মেহেদীর মন মানছে না। সে নাফিসার সম্পূর্ণ শরীরই চেক করলো কিন্তু কোন ক্ষত পেল না। নাফিসাকে টেনে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে বললো,
– তাহলে এসব কি?
নাফিসা ফ্লোরে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠে বললো,
– এইটা দেখে এমন শুরু করেছো! এটা আলতা! আমার লাগেজে ছিলো। অনেক দিনের পুরোনো, নষ্ট হয়ে গেছে তাই ঘরের পেছনে ময়লার স্তুপে ফেলে দিয়ে এলাম। যাওয়ার সময়ই পড়ে গেছে হয়তো। খেয়াল করিনি।
মেহেদী দু’হাতে নাফিসার মুখ ধরে বললো,
– সত্যি বলছো তো?
নাফিসা তার চোখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলো। মেহেদীর চোখে ভয় দেখতে পাচ্ছে সে! মেহেদী কতোটা ভয় পেলে এমন কান্ড ঘটাতে পারে! নাফিসা জবাব দিলো,
– একটুও বিশ্বাস করো না আমাকে! চলো ফেলেছি যে আলতা দেখিয়ে নিয়ে আসি। চলো।
মেহেদী দু’হাতে মুখ ধরেই নাকে নাক লাগিয়ে বললো,
– লাগবে না। তোমার কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে যেভাবে পারো আমাকে জানাবে। ওকে? তুমি সর্বদা সুস্থ থাকো এটাই আমি চাই।
– আমার চিন্তা করতে করতে তো নিজের ক্ষতি করে ফেলছো। আগে নিজের খেয়াল রাখো পরে আমাকে নিয়ে ভাববে। হাতমুখ ধুয়ে এসো। যাও।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here