#যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে
#পর্ব_১১,১২
Afsana Asha
পর্ব_১১
অনি কী করবে বুঝতে পারছে না। ইমরানের যা যা করেছে ওর সাথে, তাতে ও বিব্রত হয়েছে, দেরিতে হলেও অপমানিত বোধ করছে এখন।
আর ইমরানও ভয়ে ভয়ে আছে, কোনোভাবে ওর সংকল্প না টলে যায়। ও ভেবে দেখেছে, ইমা যা বলেছে তাই সঠিক।
আসলেই অনির কাছে মন আটকে গেছে ওর। গতদুইদিন সারারাত জেগে ও অনির নিঃশ্বাস গুণেছে।
মাঝে মাঝেই খেয়াল জেগেছে, সব বাদ দিয়ে অনির হৃদয়ের স্পন্দন গুণতে, মিনিটে কতগুলো বিট পড়ে নিজের হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে।
প্রাণপণে নিজেকে আটকেছে সেইসব ভয়ংকর ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার থেকে।
সাইদা চলে যাওয়ার পরে ইমরান তাই তাকালো না অনির চোখে আর অনিও এড়িয়ে গেল ওকে।
আর তো কয়েকটা ঘন্টা মাত্র। দুজনের মনের ভেতরেই কয়েকটা ঘন্টার অপেক্ষা এখন। ইমরান অপেক্ষা করছে, কখন এই টেনে নেওয়া চোরাবালি থেকে দূরে সরবে ও আর অনি অপেক্ষা করে আছে নিজের মুক্ত হওয়ার গল্পটা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য।
*****
শেষ কয়েকটা দিন ছেলের কাছাকাছি থাকার ইচ্ছে থাকলেও নিজের অদম্য স্নেহকে দমিয়ে রেখেছিলেন সাইদা, ইমরান আর অনিকে একান্ত সান্নিধ্যে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিতে। তা যে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে সেই সংবাদ ভদ্রমহিলা না পেলেও শেষ কয়েকটা ঘন্টা পুত্রের কাছ থেকে নড়লেন না।
অজস্র চুমু দিয়ে ইমরানকে বিব্রত করলেন, এয়ারপোর্টে গিয়েও কেঁদেকেঁদে কয়েকবার মুর্ছা গেলেন। বারবার কথা আদায় করে নিলেন, খুব তাড়াতাড়ি যেন ফিরে আসে।
সুমনাও ইমরানকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু সুযোগ পেলেন না। পরশ এগিয়ে গিয়ে আলিঙ্গন করল ইমরানের সাথে। কাছাকাছি বয়স দুজনের। প্রথমদিন হাল্কা কথাবার্তা হলেও সংকোচে দুজন দুজনের সাথে আর মেলামেশা হয়নি।
ইমরানকে তো একেবারেই বোবাদের দলেই ফেলে দেওয়া যায়। আর ইমরানের চোখে বিয়েবিতৃষ্ণাটা যেন পরিস্কার দেখতে পেত পরশ।
আবার আত্মিয়বাড়ি, এখানে ভগ্নীজামাতা নিজে এগিয়ে না এলে তার সাথে যেচে কথা বলাটা যথেষ্ট সংকোচের।
সেই দিক থেকে ইকরামের সাথে একটা দারুণ সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেছে পরশের। বেয়াই-বেয়াই ঠাট্টা-তামাশা থেকে হৃদ্যতায় গড়িয়েছে। আব্দুল মজিদ সাহেবও খুব সুহৃদ আর আন্তরিক। আর ইমা, দুদিনেই ওর পছন্দের মানুষের তালিকায় ঢুকে গেছে। মেহমানদারিতে এতটা আন্তরিক, পরশ যে অনির ভাই, সেটা যেন বোঝায় যায় না ইমার আচরণে। ইমরান বা ইকরামের মতো পরশও যেন এই ঘরেরই ছেলে, ইমার আরেকটা ভাই।
এই পরিবারটাকেও দারুণ লাগলেও সাইদা আর ইমরানকেই কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না পরশ। সাইদাকে ওর ভীষণ স্বার্থপর আর দাম্ভিক মনে হয় আর ইমরানকে দেখলেই অস্বস্তি হয়।
আজকে ঠিক যাওয়ার আগমূহুর্তে ও সব সংকোচ দূরে রেখে এগিয়ে গেল।
বোনের ভাই হওয়াটা সবচেয়ে কষ্টের, অপছন্দের মানুষটাকেও ভালোবাসতে হয়, নিদেনপক্ষে ভালোবাসার অভিনয় করতে হয়। আলিঙ্গনে বেঁধে পরশ ইমরানকে বলল ‘ভাই, অনি কোনো ভুলভ্রান্তি করলে মাফ করে দিয়েন, মনে কষ্ট রাখবেন না।’
ইমরান শুধু আস্তে করে বলল ‘না, না, না। অনি কোনো দোষ করেনি তো! মাফ করার প্রসঙ্গ কেন আসছে?’
‘ছোটোমানুষ তো? সবকিছু বুঝতে পারে না। আস্তে আস্তে বুদ্ধিসুদ্ধি হয়ে যাবে।’
‘ছোটোমানুষ জানেন যখন বিয়ে দিলেন কেন?’
বোনের জন্য স্নেহ আছে সীমানা ছাড়িয়ে কিন্তু অভিভাবকসুলভ অভিজ্ঞতাতে একেবারেই আনাড়ি পরশ। হঠাৎ করে বুঝতে পারল না, ইমরান অভিযোগ করল নাকি শ্লেষ!
প্রসঙ্গ পালটে তাড়াতাড়ি বলল ‘সাবধানে যাবেন ভাই। আল্লাহ ভরসা।’
‘আচ্ছা, দোয়া করবেন আমার জন্য।’ ইমরানও এড়িয়ে গেল পরশকে।
সাইদা আবার চোখ মুছতে মুছতে ইমরানকে জড়িয়ে ধরলেন। ‘আব্বা, আল্লাহ হাজির নাজির। আল্লাহর নামে সঁপে দিলাম। আব্বা, প্রতিদিন একবার ফোন কোরো কিন্তু।’
‘প্রতিদিন কি ফোন দেওয়া যায়?’
‘খাবার নিয়ে বসবা যখন, তখন ভিডিও কল দিও৷ কথা বলতে হবে না, শুধু দেখব তোমাকে।’
‘আচ্ছা আম্মু।’
‘আব্বা, বছর শেষেই একবার আসবা কিন্তু। কথা দিয়েছ তুমি আমাকে।’
ইমরান স্মিত হাসল। ও জানে পড়াশোনার চাপে ঘাড় ঘোরানোর সময় পাবে না।
ইকরাম আর ইমাও কেঁদে ফেলে বড়ভাইকে জড়িয়ে ধরল। নিষ্ঠুর, নিরাসক্ত, আবেগহীন ইমরানের চোখের কোণেও যেন জলবিন্দু চিকচিক করে উঠল!
ইমিগ্রেশনে ঢুকে যেতে যেতে যতক্ষণ ওকে দেখা গেল সাইদা চোখ পেতে থাকলেন, আর ইমরান অদৃশ্য হতেই আবার সেন্সলেস হয়ে দড়াম দিয়ে পড়ে গেলেন এয়ারপোর্টের শক্ত ফ্লোরে!
*****
বাসায় ফিরেই বোমটা ফাটালো অনি।
সাইদার শরীর আর মন দুটোই ক্লান্ত খুব। অন্যরা যখন বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে তখন তিনি রেগে ক্ষেপে উঠলেন একেবারে। তীব্র কন্ঠে অনির কাছে জানতে চাইলেন, ‘কী? ইমরান কী করেছে? আবার বলো?’
‘তালাক দিয়া গেছে আমারে।’
‘চোপ অশিক্ষিত, মূর্খ মেয়ে একটা।’ সাইদার রোখ চেপে গেছে। আব্দুল মজিদ সাহেব তাড়াতাড়ি এসে স্ত্রীকে ধরলেন ‘আহা কী করছ কী? শুনতে দাও সবটা।’
‘কী শুনব সব? কী শুনব? ফাজিল মেয়ে! কী না জানি করেছে আমার ছেলেটার সাথে, ছেলেটা রেগে মুখে মুখে তালাক বলেছে। এখন এই মেয়ে বড়গলা করে বলে বেড়াচ্ছে আবার! ঘেন্নাও নেই? দুটো দিন মোটে – ছেলেটাকে খুশী রাখতে পারলি না!’
‘আহ! ইমরানের মা। মেহমানরা বাসায়। মেয়েটা কী বলছে, শুনতে দাও সব।’
অনি কেঁদে ফেলেছে। পরশ স্তব্ধ। অনির বড়চাচি এসে ওর হাত ধরল ‘কী হইছে অনি? কী করছ মা? ঠিক কইরা কও তো?’
‘আমি কিছছু করিনাই চাচি। আমার কোনো দোষ নেই।’ কান্নার দমকে অনির গলা দিয়ে আর কথা বেরোয় না।
‘অনি কান্না থামা। ঠিক কইরা ক, কী হইছে।’ সুমনা অস্থির হতে হতে বলে ওঠেন।
‘আমার কোনো দোষ নাই মা। আমারে নিয়া গেল না সেইদিন? নিয়া গেছে বিয়া পড়ানির অফিসে। সেইখানে নিয়া গিয়া কয়, তোরে আমি তালাক দিলাম। তারপর কাগজ দিলো। আমারে বলল সই দিতে।’ ফোঁপাতে ফোপাঁতে অনি যা বলল তাতে সবাই এতটুকুই বুঝল।
সাইদা হতভম্ব। বললেন ‘আর তুমি সই করে দিলে?’
অনি ভয় পেয়ে যাচ্ছে সবার চোখমুখ দেখে। আবার আরো খানিকক্ষণ কাঁদল। কেঁদেকেঁদেই বলল, ‘সবাই যে বলে দেলো, স্বামীর কথা সব মান্য করতে হয়।’
‘এসব তুমি আগে কেন বলোনি?’
‘সে তো বলেই দেছিলো, সে গেলে তারপর যেন কই?’
ইমা এসে অনির হাত ধরে টেনে নিয়ে আড়ালে গিয়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল ‘ইমরানের তোমার সাথে থাকেনাই একসাথে?’
অনি ঠিকঠাক বুঝল না প্রশ্নটা। ভুল উত্তর দিলো। ‘একখাটেই তো ঘুমাইছি।’
‘ইমরান আদর করেছে?’ মরিয়া হলো ইমা।
উত্তরে ডানেবামে জোরে জোরে মাথা নাড়ল অনি।
সাইদার সপ্রশ্ন দৃষ্টির সামনে ইমা ইশারায় মাথা নাড়ল। সবার আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। ইমরান ধোঁকা দিয়েছে। মায়ের পাতা ফাঁদে পা দেয়নি!
সুমনা মুখে কাপড়চাপা দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। পরশ যেন এইমাত্রই বুঝল সবটা। ক্রুদ্ধ হলো মায়ের উপর ‘বুঝছ মা, লোভ। লোভ সব শেষ করে দেয়। বড়লোক জামাই, বিদ্বান জামাই, বিদেশি জামাই – লোভটা ছাড়তেই পারলে না। আমার বোনটার জীবন শেষ করে দিলে?’
‘আমার ভাগ্যই হলো আমার মেয়েটার। সাইদা আপা, আমার কপালপোড়া আপনি জানেন। অনির বাবা বিদেশ গিয়েই আমার কপাল পুড়ল। আমি কত অসহায় আপনি জানেন। আমি বললাম, আপা, বিদেশ যাবে ছেলে, শুনলে আমার ভয় করে। আপনি বললেন, ভয় নাই। ছেলে আপনার খুব ভালো। আপা, এই আপনার ভালো ছেলে? আপনার ভালো ছেলে দিয়ে আপনি আমার এমন সর্বনাশটা করালেন আমার?’
তলে তলে যে এতটা ভেবে রেখেছে ইমরান, ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি সাইদা। তার ছেলে, তার পেটের ছেলে, মা বাবার উপর এমন প্রতিশোধ নিলো? সাইদা আর ভাবতে পারছেন না। কাকে কী বলবেন? অনির উপর রাগ হলো।
অনিকে রাক্ষসী, সর্বখাকী বলে মনে মনেই গাল দিলেন কিছুক্ষণ।
এত ছোটো মেয়ে বউ করে আনা উচিত হয়নি একেবারেই। আরেকটু বয়স্কা মেয়ে হলে, নিজেরটা ঠিকই আদায় করে নিতে পারত। অনির জন্যই তার এমন সর্বনাশটা হলো!
অনির কতটা ক্ষতি হলো সেটা মাপতে গেলে তিনি ঠাঁই পেতেন না, তাই নিজের কতটা ক্ষতি হলো তাই মাপতে বসলেন।
সব অপরাধের দায় অনির ছোট্ট মাথায় উঠিয়ে দিয়ে নিজেকে শান্ত করলেন আর সিদ্ধান্ত নিলেন, ইমরানকে এসব কিছুই জানাবেন না। কোনো প্রশ্নও করবেন না। একদম স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনবছর পরে হলেও ছেলে ফিরবে, কিন্তু এসব নিয়ে অভিযোগ করলে, জবাবদিহি চাইলে, আর ফিরবেই না কোনোদিন, হয়তো আর ফোনও করবে না।
ছেলে হারিয়ে ফেলার দুঃখে শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন একেবারে।
অনির চাচারা আর পরশ বেশ হম্বিতম্বি করল কিছুক্ষণ, তারপরে বুঝে গেল কিছুই আসলে করার নেই।
ইমরান দুটো পরিবারকেই ঠকিয়ে গেছে। ইমরানকে পেলেই কিছু করা যেত, তাছাড়া আর কিছুই করার নেই। বোকা অনির উপরেও রেগে গেল পরশ ‘আমাকে অন্তত বলতি।’
‘তুমি এমন করেই চিল্লাতে থাকতা ভাইয়া। আর সেও আমাকে মানা করে দেছিলো।’
‘ওই সে লোকটার কথা আর কখনো মনেও আনবি না তুই।’
বেলায়েত শিকদার বললেন ‘ঠান্ডা মাথায় বস পরশ। কী করব সেটা ভাব। এইভাবে তো গ্রামেও যাওয়া যাবে না এখন। মেয়ের বিয়ে দিতে এসে তালাক নিয়ে যাচ্ছি। মুখ দেখাতে পারব? সীমা, রিমা আর অলিরে ভালোমতো বুঝা, পলাশডাঙা গিয়ে কাউরে যেন কিছু না কয়। আমরা বলব, জামাই বিদেশ গেছে, আমরা মেয়ে নিয়ে আসছি। জামাই ফিরলে ধুমধামে অনুষ্ঠান করে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাব। ঠিক আছে?’
‘না বড়চাচা। আমি ভাবছি, আমরা ঢাকাতেই থেকে যাব।’
‘ঢাকা? কেন?’
‘অনিরে আমি যোগ্য বানায়ে ছাড়ব। যে ওরে এত অপমান করল সে একদিন পস্তাবে, সে কী হারাইলো জানবে যেদিন!’
‘এইগুলা ছেলেমানুষী কথা বাবা। এইগুলো সিনেমাতে হয়। বাস্তব কত কঠিন দেখতেছ? তোমার আব্বা হঠাৎ চলে গেলে তোমাদের নিয়ে এমনই অকূল পাথারে পড়েছিলাম। কাটাই উঠছি না? ইনশাআল্লাহ এইটাও কাটায় উঠব, বাবা আমার। মাথা ঠান্ডা করো। তুমি বড় না?’
শেষ পর্যন্ত পরশের জেদের কাছে ওর চাচারা পরাজিত হলেন। ঢাকাতে নিজেদের ঠিকানা বানিয়ে নিলো পরশ আর বোনেদের জীবনটা নতুন করে গড়ে দেওয়ার শপথ নিলো।
সামনে অনির একটা নতুন জীবন…
আর অন্যদিকে জাপানের আকাশে উড়ে যাওয়া প্লেনে বসে অনির কথা মনে আসতেই আতঙ্কিত হলো ইমরান! সত্যিই কি ও অনির খেয়ালে থাকবে সারাক্ষণ? দিনরাত ওকেই ভাববে? ওকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে? তাহলে নিজের আজীবন লালন করা স্বপ্নটার কী হবে? আজ থেকেই অনি চ্যাপ্টার পুরোপুরি ক্লোজড। মুখে তো আনবেই না অনির নাম, মনে না আনারও প্রাণপণ চেষ্টা করে যাবে। সামনে শুধুই ইমরানের স্বপ্নপূরণ…
চলবে
Afsana Asha
#যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে
#পর্ব_১২
পরশকে দুই বছরের রেখে ওর বাবা এনায়েত শিকদার মিশর গিয়েছিলেন জীবিকার সন্ধানে। ফিরে এসেছিলেন পরশের আট বছর বয়সে। শৈশবে বাবাকে কাছে না পেয়ে, পরে বাবার সাথে বন্ধনটা দৃঢ় হয়নি কখনোই। তারপর অনির জন্ম হলে, ও একটা জ্যান্ত পুতুল পেয়ে গেল খেলার জন্য। খেলতে খেলতেই অনি আর অলি হয়ে উঠল সবচেয়ে প্রিয়।
তারপর হুট করে যেদিন এনায়েত শিকদার চলে গেলেন, সেদিন থেকে দুইবোনের সব দায়িত্ব নিজে থেকেই পরশ নিয়ে নিলো।
এতদিন সেই দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়নি, বয়স কম বলে পরশের মতামতের গুরুত্বও দেওয়া হয়নি, এমনকি অনির বিয়েতে একেবারেই রাজি ছিলো না পরশ, তবুও বিয়েটা হলো আর অনিকে এক লাঞ্চনার জীবন পেতে হলো।
পরশ এবার মুঠো শক্ত করেছে, প্রতিজ্ঞাও কঠিন। মার্কেট আর খামার থেকে আসা টাকা বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও যে খালি হবে সেটাও পরশ সহজেই বুঝে নিয়েছে। পড়াশোনা বন্ধ ছিলো এইচএসসির পরেই, মার্কেট দেখাশোনার কাজে লেগে গিয়েছিল। ওই পড়াশুনা দিয়ে চাকরি জুটবে না জেনে, স্টেশনারি আইটেমের দোকান দিয়েছে। পাইকারি মার্কেট থেকে মাল কিনে এনে খুচরা বিক্রি করে। আজ শুক্রবার, মার্কেটে মিলাদ ছিলো। তেহেরির প্যাকেট দিয়ে গেছে তবারক হিসেবে। দেখেই মনে হলো, অনেকদিন বাসায় বিরিয়ানি খাওয়া হয় না। ঢাকার রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানি ওদের মা খুব পছন্দ করে। অনি, অলিরও প্রিয়। দোকানের কর্মচারিকে তেহেরি খেতে দিয়ে, ও হোটেল থেকে চার প্যাকেট কাচ্চি বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, জালি কাবাব আর বোরহানি নিয়ে বাসায় এসেছে, সবাই একসাথে খাবে বলে। বাসায় এসে অনিকে দেখতে পেল না। মাকে ডেকে জানতে চাইল ‘অনি কই গেছে?’
‘কইলো তো, কোন বান্ধবীর জন্মদিন।’
‘কোন বান্ধবী? তুমি যেতে দিলা কেন?’
‘জানি না আমি এইসব। আমার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার অপেক্ষায় থাকে নাকি কেউ? এইরকম তো প্রায়ই যায়।’
‘প্রায়ই যায়! আমি তো জানি না! আমাকে তো বলো না কিছুই!’
‘সারাদিন শেষে বাসায় তো আসিস মাঝরাতে। তখন কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। আমি তো চলি মহারাণীর মর্জিমাফিক। শুধু সেজেগুজে গেল দেখলাম, যাওয়ার সময় বলে গেল যাচ্ছি।’
‘তুমি আমারে ফোন দিতা! আশ্চর্য!’
‘কী দামি স্কুলে দিছো, হাজার হাজার টাকা খরচ করো। ওসব স্কুলে নাকি সব দামি মানুষ। ওদের কীসব পার্টি হয়, ওখানে নাকি যেতেই হয়!’
পরশ চিৎকার করে অলিকে ডাকল এবার। ‘অলি? অনি কই গেছে?’
‘ওর ক্লাসের একটা মেয়ের জন্মদিন ভাইয়া।’ অলি হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলল।
‘বলে যাবে না?’
‘ও জানি কেমন হয়ে গেছে। কেমন কেমন সব কথা বলে।’
‘কেমন কথা?’
‘বলে, সবসময় তো সবার কথা শুনে চলছি, যে যা বলছে তাই করছি। লাভ কী হইছে? ভালো মেয়েদের কোনো লাভ থাকে না। খারাপ মেয়ে হইতে হয়। ও নাকি এখন খারাপ মেয়ে হবে।’
পরশ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। অনির ভবিষ্যৎ গড়ার প্রচেষ্টায় জেদ চেপে আছে পরশের মনে। অনির মনে কী চলছে, ও কীভাবে ঘটনাটা নিচ্ছে, ইমরান যা করেছে ওর সাথে ওর মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে ভেবে দেখেনি কিছুই।
‘এইরকম তো প্রায়ই যায় ও। এফডিসিতে যায় নাকি। নায়িকা হবে।’
পরশ আর কথা বলে না, ভাবতেও পারে না আর। ঠিক কতটুকু বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অনি, সেটাই আগে বুঝতে হবে। রাতারাতি জীবন পালটে ফেলার জুয়াখেলায় নামেনি তো?
*****
কলিংবেল টিপে দাঁড়িয়ে আছে অনি। দরজা খোলে পরশ।
‘অনি? আয়।’
‘ভাইয়া? এত তাড়াতাড়ি বাসায় তুমি?’
অনির মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে, ও পরশকে আশা করেনি দরজায়। পরশ হেসে ফেলে। অনির কঠিন, ভয়ার্ত মুখ সহজ হয়।
‘কই গেছিলি?’
‘ভাইয়া?’
‘হুম।’
‘বলবো তোকে। রাতে। ফ্রেশ হয়ে আসি।’
বেশ সুন্দর একটা গাউন পরা অনি। সাইডপার্শিয়াল সিঁথিতে চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। নিচের দিকে হালকা ঢেউ খেলানো। এমন কি আগে ছিলো? নাকি নতুন করে চুল কোঁকড়া করিয়েছে মনে করতে পারে না পরশ। গলার মালাটাকে কী বলে? একেবারে গলা এঁটে আছে। মুরগির ডিমের সাইজের বড় একটা আর্টিফিশিয়াল পাথর ঝুলছে সেখানে।
অনির চলা, কথা বলা সবকিছু পালটে গেছে। আগের অনি আর এই অনি যেন দুটো মানুষ। কিন্তু ভারী সুন্দর দেখায়। একটা সুন্দর প্রজাপতি, যার উড়ান শুরু হওয়ার আগেই ডানাদুটো কেটে পড়ে গেছে!
একটু মন খারাপ করে পরশের।
অনেকদিন পরে আজ সন্ধ্যাটা বাসায় ও। সুমনা ফুলকপির চপ ভেজেছেন। পরশ আর অনি দুজনেরই খুব পছন্দের। অলি খায় না। অলির জন্য আলাদা করে বেগুন কেটে বেগুনি করেছেন।
ফ্রেশ হয়ে অনি এসে যোগ দেয় ওদের সাথে। একটু কাঁচুমাচু ভাব অনির, চোরা চাহনি। বোলভরা চপের ভেতর থেকে নিজের জন্য চারপিস সরিয়ে নিয়ে একটু বেশিভাজাগুলো পরশকে এগিয়ে দিলো ‘এই নে ভাইয়া, এইগুলো বেশি মুচমুচে।’ ভাজাপোড়াতে মুচমুচে, কুড়মুড়েগুলো বেশি পছন্দ পরশের। অনি যে সেসব খেয়াল করে ভেবে ভালো লাগল ওর।
‘সস নাই রে অনি? সেইদিন যে আনলাম।’
‘আছে তো। অলি? আছে নাকি খালি খালি চেটেই শেষ করে দিয়েছিস?’
অলি দৌঁড় দিয়ে সসের বোতল নিয়ে আসে। ‘খালি খালি খাবো ক্যান? তোরা তো কেউ থাকিস না বাসায়। আম্মু বিকালে কোনো নাস্তা বানায় না। আমি দুইটা ডালপুরি কিনে সস দিয়ে খাই!’
‘তুই তো বিস্কিটও সস দিয়ে খাস। হিহিহি।’ অলির দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে নকল হাসি দিয়ে প্রসঙ্গ পালটালো অনি। সন্ধ্যায় ওর না থাকাটা পরশের সামনে ফ্ল্যাশ করে দিয়েছে অলি।
এমনিতেই আজ ও ফেরার আগেই পরশ ফিরেছে, এখনো কোনো প্রশ্ন করেনি। উপরন্তু প্রায়ই সন্ধ্যের আগে বাড়ি না ফেরাটা আরও অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন করে দেবে ওকে।
যদিও ও কাউকে কেয়ার করে না আর। ওর এইটুকু জীবনে যতটুকু বিড়ম্বনা জুটেছে তাতে পুরোটা দায় ও অভিভাবকদের মাথায় চাপিয়ে দিয়ে রেখেছে। একবারও ভেবে দেখে না, এরা কেউই ওর খারাপ চায়নি। অনিকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত, খারাপ ছিলো নিঃসন্দেহে, কিন্তু কারোরই নিয়্যত খারাপ ছিলো না।
একেবারেই বোঝে না অনি, তা নয়। কিন্তু ওদের জন্যই যে অনিকে ভুগতে হচ্ছে এটাও তো মিথ্যা নয়!
এখন যদি আরও ভোগান্তি থাকে জীবনে তো নিজের দোষেই ভুগবে ও। নিজে অন্যায় করবে, ভুল করবে তারপর ও একাই পস্তাবে, শাস্তি নেবে।
‘অনি, চা করবি? একটু লং আর আদা দিয়ে?’ বলেই পরশ মত পাল্টালো। ‘বাদ দে। আমি চা করি আজকে।’
অলি চিৎকার করে উঠল ‘রং চা খাব না, ভাইয়া!’
‘আরে খেয়ে দেখ! আমাদের মার্কেটের পাশে এক দোকানে খুব সুন্দর করে চা করে। গরম পানি দিয়ে চামচ, কাপ ধুয়ে নেয়, তাতে চা গরম থাকে অনেকক্ষণ। তারপর কাপের ভেতর কুঁচোনো আদা আর মাল্টার টুকরো দেয়। তারপর গরম চা ঢেলে দেয়। টেস্টফেস্ট বাদ দে, যে একটা ঘ্রাণ আসে, মাল্টা-আদা মিলেমিশে, বুঝছিস, একেবারে এনার্জি ঠেসে দিয়ে দেয়।’
‘আমিও রঙ চা খাব না, ভাইয়া!’ অনি বলতেই পরশ ভেঙালো ‘রং চা খাব না, ভাইয়া। ভালো জিনিস খাইছিস কোনোদিন?
শিখছিস? যা পড়তে বস দুইটাই। আমি চা নিয়ে আসতেছি!’
দুইবোন তাড়াতাড়ি পড়ার টেবিলে চলে গেল।
অনি নামেমাত্র বই খুলে রেখেছে চোখের সামনে। পড়ায় মনোযোগ নেই কোনো। শুধুমাত্র দেখানোর জন্যই পড়ার টেবিলে।
পরশ চায়ের কাপটা অনির টেবিলে রাখল। নিজে আরেক কাপ নিয়ে বিছানার উপর বসল। ঘরে মাল্টাকমলা নেই। পরশ আদা আর লেবু দিয়ে চা করেছে। চায়ের উপর লেবুর টুকরো ভাসছে। টাটকা লেবুর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে গেছে।
অলিও অংকখাতা নিয়ে বসেছে টেবিলে। দুইবোনের একটাই পড়ার টেবিল। পরশ অলিকে ইশারায় মায়ের কাছে পাঠালো ‘দেখতো অলি, আম্মু আজকে রাতে কী রান্না করছে? দেখে আয়?’
অলিকে বলতে দেরি হলো, ও ছুটতে দেরি করল না। এখন এখানে সিরিয়াস ধরনের কথা হবে ও বুঝে গেছে। আর সব সিরিয়াস কথাবার্তা শেষ হওয়ার পরে অনির জন্য বরাদ্দ বকাগুলোর ছিঁটেফোঁটা ওর গায়ে এসেও লাগে। তাই ও নিরাপদে সরে যাওয়ার পায়তারা করল।
‘অনি?’
‘হু?’
‘পড়ছিস?’
‘হু।’
‘কী পড়িস?’
‘বাংলা।’
‘ওইটা সাধারণ বিজ্ঞান বই, অনি।’
অনি বইটা বন্ধ করে না। বইয়ের দিক থেকে চোখও ওঠায় না।
‘অনি?’
এবারে ও সাড়াও দেয় না। পরশ একটু চুপ থাকে। তারপর চোখ বন্ধ করে বলে ‘অনি। আমরা চাই আমাদের জীবন সুন্দর হোক, মসৃণ হোক, সরলপথে চলুক। আমরা সবাই চাই। কিন্তু সোজাসরল জীবন কি পাই? পাই না। কেউ পায় না। হঠাৎ করে জীবনের রাস্তাটা থেমে যায়, থমকে যায়। সেই থেমে যাওয়া জায়গা থেকে অদ্ভুত বাঁক নেয়, আঁকাবাঁকা চলে। আমরা টেনেটুনে সেটাকে আবার সোজাপথে আনতে চাই। শুনছিস?’
জেদি মেয়ের মতো জোরে জোরে মাথাটা উপরনিচ করে অনি।
পরশ আবার শুরু করে ‘আমাদের আম্মুর জীবনটা দেখ। নানাবাড়িতে একবেলা খেয়ে, দুবেলা উপোস করে বড় হলো। বাবার সাথে বিয়ে হয়ে সেই জীবন একেবারে সহজ হয়ে গেল। তেমনই তো থাকতে পারত, তাই না? কিন্তু কী হলো, হুট করে বাবা চলে গেল। মায়ের জীবনে একেবারে এবড়োখেবড়ো হয়ে গেল। তোর জীবনের পথটাও বেঁকে গেছে। জোর, কসরৎ করে তো তাকে সোজা করা যাবে না। বল, যাবে?’
অনি কোনো উত্তর না করলে পরশ নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিলো ‘না, যাবে না। এর জন্য সময় চাই, পরিশ্রম চাই, আগ্রহ চাই। রাতারাতি তো হবে না। হঠাৎ করে খুব বড় কিছু হওয়া যায় না, অনি। খুব বড় কিছু করে ফেলাও যায় না। জেদ থাকা ভালো, ভালো কিছুর জন্য জেদি হওয়াই যায়, কিন্তু নিজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যোগ্যতা, ক্ষমতা ভুললে তো চলবে না।’
‘আমি কী করেছি ভাইয়া, যে তুই এত কথা বলছিস?’ খুব মলিন শোনায় অনির গলা। পরশের আবেগে খুব নাড়া লাগে।
‘তুই কিছু করিসনি। তোর জীবনে বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই ঢেউয়ে তুই ভেসে না যাস, এই ভয় করে আমার।’
‘আমি তো ভেসেই গেছি ভাইয়া!’ মনে মনে বলে অনি।
উত্তর না পেয়ে পরশ উঠে এসে বোনের মাথায় হাত রাখে ‘আমরা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে এখানে কেন পড়ে আছি, অনি? আমি নিজের পরিচয় বানাব, তোর নামে মানুষ প্রশংসা করবে, অলিকে মানুষ একডাকে চিনবে। তুই পড়াশোনা কেন করিস না?’
‘করি তো!’
‘ঠিক তো? এবারে আর ফেল করবি না তো?’ প্রশ্রয়ের হাসিতে মুখ উজ্জ্বল হয় পরশের।
‘আমার পড়তে ভালো লাগে না, ভাইয়া। পড়াশোনা ভালো লাগে না। আমার মাথায় ঢোকে না। আমার পড়াশোনা হবে না।’
এবারে পরশ রেগে যায়। ‘তা কী হবে, কী করবি? ইমরানের মতো কারো সাথে আবার বিয়ে দিয়ে দেবো তোকে?’
অনির চোখদুটো ভরে আসে। ওর মাও ইমরানের নাম নিয়ে খোঁটা দেয়। অলক্ষি বলে৷ আজ পরশও দিলো।
পরশ তাড়াতাড়ি ভুল শুধরে নিতে চায় ‘অনি, আমরা আর কোনো ইমরান চাই না। অনি নিজের যোগ্যতায় ওরকম কত ইমরানকে চাকর রাখবে!’
‘আমি একটা বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি ভাইয়া।’
‘কী? কীসে কাজ করেছিস?’ চমকে ওঠে পরশ।
‘বিজ্ঞাপনের মডেল। ছোটো একটা প্রডাকশন। তেমন ভালো না। ন্যাশনাল টিভিতে আসবে না। লোকাল ক্যাবল চ্যানেলগুলোতে দেখাবে।’
‘কীসের বিজ্ঞাপন?’ পরশকে হতভম্ব দেখায়। কতকিছু হয়ে চলেছে অনির জীবনে, ওদের জীবনে, ও কিছু জানে না। সন্ধ্যায় অনির বাড়ি না ফেরা নিয়ে ওকে বুঝাতে এসেছিল, পেছন দিয়ে হাতি চলে গেছে!
‘এন্টিওয়েভ কিট। মোবাইলের রেডিয়েশেন থেকে প্রটেকশন দেয়।’
‘সেখানে তুই কী করেছিস?’ পরশের বিস্ময়বোধ কমছেই না।
‘আমি মডেল ভাইয়া। বিজ্ঞাপন দেখিস না টিভিতে? প্রডাক্ট প্রমোশন করে। ওইরকম।’
‘তোকে কেন নিলো? কীভাবে চিনলি তুই ওদের?’
‘স্কুল প্রোগ্রাম করতে একটা চ্যানেল এসেছিল। ওদের ডিরেক্টর আমার হাইট দেখে খুব পছন্দ করে কার্ড দিয়েছিল। আমি পরে ফোন করেছিলাম।’
‘আমাদেরকে বললি না একবার?’
‘বললে কী হতো? করতে দিতি?’
পরশের মাথায় কিছু ঢোকে না। ‘করেছিস ভালো। আর না। এসব মডেলিং খুব খারাপ জায়গা। বুঝেছিস? একবার করেছিস। শখ মিটেছে। আর যাবি না। বাদ! ঠিক আছে?’
অনি মাথা উপরনিচ করে।
অনির সাথে পরে আরও ভালোভাবে কথা বলতে হবে। আগে নিজে বুঝতে হবে ব্যাপারটা। পরশ কিছুই বোঝেনি অনির কথার। আপাতত সন্তুষ্ট হয়ে ও ঘর থেকে বেরোতেই অনি ডাকল।
‘ভাইয়া, আমার কিছু টাকা লাগবে?’
‘কত?’
‘ত্রিশ হাজার।’
‘ত্রিশ হাজার?’ আবারও বিস্মিত পরশ। ‘কী করবি এত টাকা দিয়ে?’
‘পোর্টফোলিও ফটোগ্রাফি করাবো।’
‘কী?’
‘ফ্যাশন ফটোগ্রাফি।’
‘কী হবে তাতে?’
‘মডেলিং, একটিং এর জন্য সিভি তৈরি হবে। কাস্টিং ডিরেক্টর, প্রডিউসার, ডিরেক্টরদের কাছে পাঠাব।’
‘মানে? তুই এসব চালিয়ে যাবিই?’
‘আমার পড়াশোনা হবে না ভাইয়া।’ মরিয়া হয় অনি। ‘আমার হাইট মডেলিং এর জন্য পারফেক্ট, আমার ফিটনেস আছে।’
পরশ বুঝতে পারে না ওর কী বলা উচিত, কী করা উচিত? জীবনের শুরুতেই যে হোঁচট খেয়েছে অনি, মনটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আছে। ঠকে যাওয়া জীবনটার কোনো দাম কি আছে ওর কাছে?
চলবে