যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে #পর্ব_১৯,২০

0
827

#যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে
#পর্ব_১৯,২০
Afsana Asha
পর্ব_১৯

অনি?’
‘হুম।’
‘তোর বয়স কত?’
‘একুশ।’
‘মাত্র জীবন শুরু, বল?’
‘কেন?’
‘ধর একটা দশতলা বাড়ি। ছাদে উঠবি তুই। অথবা সাততলায় কিংবা আটতলায়। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে, নইলে লিফট খুঁজতে হবে অথবা কারও ঘাড়ে চড়তে হবে। তাই না?’
‘হ্যাঁ।’
‘লিফটটা হয়তো কয়েকজন প্রভাবশালীর জন্য সংরক্ষিত। তুই সেসব কেউ না, তো লিফট তোর জন্য নয়। তাই এই অপশনটা বাদ। পরের অপশন অন্য কাউকে ব্যবহার করা, কারো ঘাড়ে চড়া। কারো ঘাড়ে চড়লে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ঠিক না?’
‘এসব বলছিস কেন?’
‘তাহলে সিঁড়ি ধরে ওঠাটা সবচেয়ে নিরাপদ, তাই না?’
‘এসব কথার মানে কী?’
‘অনি, সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে সময় লাগে, পা টনটন করে। কিন্তু যদি হোঁচট খাস, পড়ে গেলেও হালকাই লাগে ব্যথাটা, সামলে নেওয়া যায়। মুম্বাই যাবি?’

পরশের কথায় চমকে ওঠে অনি ‘মুম্বাই কেন?’
‘মুম্বাইতে অনেকগুলো এক্টিং স্কুল আছে। বালাজি, অনুপম খের, ব্যারি জনের এক্টিং স্কুল, ড্রামা স্কুল। কোথাও থেকে একটা কোর্স করে আয়। নিজের স্কিল ডেভেলপ হবে, ভুলগুলো জানতে পারবি।’
‘মানে তো সেই পড়াশোনা!’ হতাশ হয় অনি।
‘পড়াশোনা না করলে কোনো কাজই সুন্দর হয় না অনি। যে ভালো রাঁধুনি সেও কিন্তু একদিনে রান্না শেখেনি। তাকেও পড়াশোনা করতে হয়েছে। মায়ের রান্নাঘরে সে মায়ের চামচ নাড়ানো খেয়াল করে দেখেছে, কোনো রান্না ভালো লাগলে তার রেসিপি লক্ষ্য করেছে, নিজের রান্নায় মশলার পরিমাণ কমবেশি করে সবচেয়ে সেরাটা নিয়েছে। তারপর ধর যারা সিনেমা করে, সিনেমা বানায়, তারা আগে বানানো সিনেমা দেখে দেখে শিখে নেয়। এই সিনেমা দেখাটাই তখন তার পড়াশোনার বিষয়।’
‘বাংলাদেশে তো কেউ করে এভাবে করে না!’
‘তুই যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিসই যে, শোবিজে থাকবিই, তখন চেষ্টা করা উচিত। অনেকভাবেই তো চেষ্টা করলি, হলো না তো। তো নিয়ম মেনেই চেষ্টা কর। যদিও আমাদের দেশে এটাই অপ্রচলিত। এখানে একটিং স্কিল কেউ শিখে আসে না, এই সাবজেক্টে কেউ পড়াশোনা করে না।’
‘তুমি এতকিছু কীভাবে জানো?’
‘খোঁজ নিয়েছি। তুই তো আমাদেরকে অসহায় করে রেখে দিয়েছিস। বাধ্য হয়েছি খুঁজতে।’
‘সরি ভাইয়া।’
‘সরি বলে কী লাভ, অনি? তোর জীবন, তুইই বুঝবি। সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা তোর। তবে তোর সিদ্ধান্ত সবসময় সঠিক হবে এটা ভাবা বোকামি। তাছাড়া তোর বয়সটাও নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো একা একাই নেওয়ার মতো যথেষ্ট নয়। তাই অভিভাবক দরকার হয়, অভিভাবকদের পরামর্শ প্রয়োজন হয়। কিন্তু তুই তো কাউকে প্রয়োজনই মনে করিস না।’
‘সরি ভাইয়া’ অনি পরশকে জড়িয়ে ধরে। ‘কিন্তু আমি সবসময় তোমার কথা শুনে চলি। তোমাকে যা যা কথা দিয়েছিলাম, কিছু ভুলিনি।’

‘তবে আবরারের কথা যেসব শোনা যায়? সব রিউমার?’

‘একেবারেই সবটুকু গুজব না। কিছুটা সত্যি আছে। তবে আমার পা পিছলে যায়নি ভাইয়া। অন্যায় কিছু করলে আমি আরও অনেক আগেই সাকসেস পেয়ে যেতাম।’

‘কতটুকু সত্যি?’

‘অল্প একটুকু। এইটুকু’ আঙুলের মাথায় চিমটি দেখায় অনি।

‘মানে? তোদেরকে যে একসাথে দেখা যায় অনেক জায়গায়?’

‘যায়। তবে সেসব জায়গায় যেখানে যেখানে আমাকে দেখা গেলে রাজন স্যারের কানে সংবাদ পৌঁছে যাবে।’

‘কেন? রাজন মানিক কেন?’

‘ভাইয়া?’ লজ্জায় মুখ লাল হয় অনির। ‘আমি ওনাকে খুব পছন্দ করি।’

‘সে তো পুরোনো কথা। তাকে পছন্দ করিস বলেই ফ্যামিলি ছেড়ে তার আশ্রয় নিতে পেরেছিলি।’

‘সেটা আলাদা ব্যাপার ভাইয়া। সেদিন ঢাকাশহরে যাওয়ার মতো চেনা লোক আমার আর কেউ ছিলো না। তাই আমি রাজন স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। সেটা না ভাইয়া, তুমি বুঝতে পারছ না, আমি রাজন মানিককে ভালোবাসি। আই লাভ হিম।’

‘মানে?’ এই ছোটোবোনটা কতরকমভাবে চমকে দেবে ওকে পরশ ভেবেই পায় না। ‘অনি? মানে তুই ওকে পার্টনার হিসেবে পছন্দ করিস? বিয়ে করতে চাইছিস?অনি? ওই লোকটার বয়স তোর ডাবল!’

‘তাতে কী?’

‘তোকে ওই লোকটা ম্যানিপুলেট করছে। তোর বোকামির সুযোগ নিচ্ছে! তুই এত বোকা?’ নিজের মাথার চুলগুলোকে মুঠো করে ধরে চিৎকার করে পরশ। রাগে কাঁপছে ও।

‘ভাইয়া, এমন কিছু না। তুমি ওনাকে ভুল ভাবছ। বিশ্বাস করো, কখনো আমার বিন্দুপরিমাণ খারাপ করেননি উনি।’ অনি কেঁদে ফেলে।

‘কী মানে এর? মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছেন, অবুঝ হওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রলোভিত করছেন, এরপরেও আমি বলব, উনি তোর ক্ষতি করছেন না? অনি প্লিজ বুঝতে চেষ্টা কর। এটা হয় না। পরে বুঝতে পারবি কতটা ছেলেমানুষী চিন্তা এগুলো। কতটা বিপৎজনক।’

‘রাজন স্যারও ঠিক এই কথাটাই বলেন, জানো ভাইয়া?’

‘উনিও বলেন? রাজন মানিক?’

‘হ্যাঁ। কিছুতেই আমার ভালোবাসা স্বীকার করেন না। শুধু আমিই চাই তাকে।’ অনি কাঁদতেই থাকে।

‘রাজন সাহেব তোকে ভালোবাসেন না?’

‘না।’

‘তবে তুই কেন পাগলামি করছিস? ওনাকে তোর সাথে মানায় না অনি। এতটা ব্যবধান!’

‘আমাকে এর সাথে মানায় না, ওকে আমার সাথে মানায় না, মানে কী ভাইয়া? এগুলো বোগাস কথা।’

‘কবে থেকে শুরু এসবের? ওনার বাসায় থাকতে শুরু করার পর থেকেই নাকি তারও আগে অনি?’

‘একটু একটু করে ভাইয়া।’

‘কিন্তু উনি তো তোকে কোনো সুবিধা করে দেন নি। ওই সুবিধা নেওয়ার জন্যই কি তুই ওকে বিয়ে করতে চাইছিস?’

‘নিজের মানুষই ভুল বোঝে আগে। তুমিও এভাবে ভাবছ ভাইয়া? না, ওনার কাছ থেকে আমি কোনো সুবিধা চাই না। উনি দেবেনও না, আমি জানি। আমি শুধু ওনাকেই চাই।’

‘কীভাবে বিশ্বাস করব তোকে? তুইতো আবরারকেও ব্যবহার করছিস সিঁড়ি হিসেবে।’

‘না ভাইয়া। বিশ্বাস কর। হ্যাঁ, আবরার ভাইয়ের সাথে মিশছি, কিন্তু উদ্দেশ্য অন্যকিছু।’

‘কী উদ্দেশ্য? বল। শুনে কানদুটোকে ধন্য করাই। এমনিই যা শুনিয়েছিস তা আমার ঘুম উড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।’

আবরার ভাইকে, রাজন স্যার পছন্দ করেন না। কেননা, আবরার ভাইয়ের অনেক গার্লফ্রেন্ড আছে। তাই, আমি ওনার সাথে মিশলে রাজন স্যার ক্ষিপ্ত হন। আমার প্রতি অধিকারবোধ আছে ওনার। এটা যে ভালোবাসা, সেটা উনি মানতে চান না। আমি চাই উনি বুঝুক, আমার মতো করে উনিও আমাকে ভালোবাসেন, সেটা উনি জানুক। ছেলেমানুষী হলেও আমার আবেগটা, ওনার প্রতি আমার অনুভূতি এটা তো মিথ্যা না।’

‘অনি একটু আগেই বললি, তোর বয়স মাত্র একুশ। সামনে পুরো জীবনটাই পড়ে আছে।’

‘কে বলেছে ভাইয়া? এমনও তো হতে পারে কাল সকালের সূর্যটাই দেখলাম না। আজরাইল হয়তো ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে।’

‘এভাবে কেউ ভাবে না, অনি।’

‘না ভাবলেও জীবন অনিশ্চিত, অনিশ্চিতই থাকে।’

‘আশ্চর্য, বিয়ে এখন করতে হবে কেন? একুশ বছর এমন কোনো বয়স না। বরং বলা যায়, এখনো তোর বিয়ের বয়স হয়ইনি। এসব বাদ দে, অনি। ক্যারিয়ার বানা আগে।’

‘তোমাকে কে বলল আমি এখন বিয়ে করতে চাইছি।’

‘কে বলল মানে? তুইই তো এইমাত্র বললি। ডাবল বয়সের ওই লোকটাকে তুই পছন্দ করিস, বিয়ে করতে চাস।’

‘পছন্দ করি বলেছি, ভাইয়া। বিয়ের কথা তুমি বলেছ।’

‘একই ব্যাপার দুটোই।’

‘না। একই না। তুমি রেগে যাচ্ছ ভাইয়া।’

‘তুই কি রাগ করার মতো কথা বলছিস না? আমার তো মনে হচ্ছে তুই ড্রিংক করা শুরু করেছিস। ড্রাগফ্রাগও নিচ্ছিস!’

‘এত রেগে গেলে আমার মনের কথা আমি কাকে বলব, বলো? তোমাকেই তো বলি সব। তোমার সব কথা আমি মেনে চলি। অবাধ্য তো হই না।’

‘অবাধ্য হোস না, মানে কী? বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিস, এত অনুরোধেও ফিরছিস না আবার অবাধ্য হোস না মানেটা কী?’

‘সেদিনের ব্যাপার আলাদা ছিলো, ভাইয়া। মাথা এলোমেলো ছিলো। পাগলামি করেছিলাম।’

‘পরে তো মাথা ঠান্ডা হয়েছে?’

‘হ্যাঁ। কিন্তু ভেবে দেখো, ওরকম রোজরোজই হতো বা হবে। মা কখনোই আমাকে মিডিয়ায় থাকতে দেবে না। আবার ধরেবেঁধে, ইমোশন গুলিয়ে খাইয়ে বিয়ে দেবার চেষ্টা করবে। রোজকার সেই খিটিমিটি থেকে তো ভালো আছি। নিজেকে আগে একটা জায়গায় আনি, বলো? ফিরব না তো কী, ভাইয়া। তোমরা ছাড়া আমার কে আছে আর?’

‘ঠিক বলেছিস অনি। আমরা ছাড়া আমাদের কেউ নেই। তাহলে চল দুইভাইবোন মিলে মুম্বাই যাই। এসব রাজন টাজন মাথা থেকে ফেলে দে।’

অনি কিছু বলল না। চুপ করে তাকিয়ে থাকল। পরশ, রাজন মানিক ওর জন্য ঠিক মানুষ না বোঝাতে চেষ্টা করল আবার।

‘দেখ, বয়সের কত পার্থক্য। এডজাস্টমেন্টই তো সম্ভব না। সেও সেটা বোঝে বলেই তোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না। আমার তো লোকটাকে শ্রদ্ধা হচ্ছে রীতিমতো।’

অনির মুখ উজ্জ্বল হতে দেখে পরশ বুঝল ওর কথা ভুলদিকে যাচ্ছে। রাজন মানিকের প্রশংসা করার সময় এটা নয়। তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘আর দেখ লোকটা কিন্তু তোর কেয়ার করে না। তুই কত স্ট্রাগল করছিস সেই সবচেয়ে ভালো জানে, ইচ্ছে করলেই তোকে তুলে দিতে পারে কিন্তু দিচ্ছে না!’

‘না, ভাইয়া পারেন না। শুধু শোবিজ না, কোথাও কেউ কাউকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে না। রাস্তাটা দেখিয়ে দেওয়া যায়, কেউ হয়তো দুইকদম সাথে চলে , কিন্তু সাকসেস স্টোরি নিজে নিজেই তৈরি করতে হয়। আর লোকটা অনেক সৎ। জানো? এখনো ওয়াইফকে ভালোবাসে।’

‘উনি বিবাহিত? বলছিস কি, অনি? তাও তুই ওই লোকটাকে পছন্দ করিস, বলছিস?’

‘ভাইয়া নিঃশ্বাস নাও, প্লিজ। এমন কোরো না। আমি বলছি, আমার বলার ভুল হয়েছে, এক্স ওয়াইফ। বিয়ের ষোলোদিনের মাথায় ওনার ডিভোর্স হয়ে গেছে।’

‘কেন?’

‘রাজন স্যারের পিঠের দিকটা একেবারে ঝলসানো। আগুনে পুড়ে বিভৎস দেখায়।’

‘তবুও তুই এই লোকটাকে পছন্দ করিস? তুই কি পাগল?’

‘ভাইয়া প্লিজ। আমার সবচেয়ে শ্রদ্ধার জায়গা তুমি। সেটা ম্লান করে দিও না। এতটা ন্যারোমাইন্ডেড তুমি, এটা ভাবতে আমার ভালো লাগছে না। বয়স, সৌন্দর্য, সাকসেস এসব দেখে কি কেউ ভালোবাসে?’

‘লোকটা পুরো ব্রেইনওয়াশ করে দিয়েছে তোর।’

‘এভাবে বোলো না ভাইয়া। এভাবে নিজেকে ছোটো কোরো না।’

‘মানে, তোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। তুই আর কারো কোনো কথাই শুনবি না। ওই বুড়োটাকেই বিয়ে করবি?’

‘আমার সিদ্ধান্তে কিছু যায় আসে না ভাইয়া। আমি আমার উপলব্ধিটুকু তোমায় জানালাম। রাজন স্যার আমাকে নিয়ে একেবারেই ভাবেন না। এটা একদম একতরফা। শুধু আমিই ভালোবাসি। উনি এখনো ওনার এক্সকে আঁকড়ে আছেন।’

‘তবে তুইও ভুলে যা, সোনাবোন আমার।’

‘যদি ইচ্ছে করে কোনোদিন, ঠিক ভুলে যাবো। কথা দিলাম তোমাকে। এখন ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। এখন আমাকে জোর কোরো না।’

‘তুই কোনোদিনই কোনো কথা শুনিসনি অনি। বেয়াড়া সবসময়ই।’

‘দোয়া কোরো ভাইয়া। আগামীপরশুদিন একটা বড় কাজের কন্ট্রাক্ট সাইন করতে যাচ্ছি। মাকেও বোলো দোয়া করে যেন, পারলে।’

‘কোথায়?’

‘একটা ফেয়ারনেস ক্রিমের কমার্শিয়াল । ফেমাস ক্রিম। বেশ বড় প্রজেক্ট। আটজন মডেল নিচ্ছে। আটটা সলো হবে। একটা গ্রুপ। প্রডাক্ট এম্বাসেডর করে নেবে আটজনকেই। এজেন্সি সিলেক্ট করেছে আমাকে। ভালো কাজ হবে ভাইয়া।’

‘আচ্ছা। কার রেফারেন্স এটা?’

‘উহ! স্ক্রিনটেস্ট দিয়ে পাশ করেছি, রীতিমতো!’

‘যাহ, দোয়া করে দিলাম। হিট বিজ্ঞাপন হবে তোরটা।’

অনির বাসাটা থেকে বেরিয়ে এসেও আবার ফিরে এসে দরজায় দাঁড়ায় পরশ। অনি জানতে চায় ‘কিছু বলবা ভাইয়া?’

পরশ অনির হাতটা মুঠোয় নেয় ‘আমি জানি না, তোকে বলা উচিত হবে কীনা। বলার ইচ্ছে ছিলো না, তবে এখন মনে হচ্ছে বলেই ফেলি।’

‘এত আমতা আমতা করছ কেন? বলো?’

‘অনি?’ বুকভরে জোরে শ্বাস নেয় পরশ। তারপর দুম করে বলে ফেলে ‘ইমরান দেশে এসেছে গতকাল।’

অনির মুখচোখের পরিবর্তন হয় না। সহজ করে বলে ‘ইমরান কে?’

চলবে
Afsana Asha

#যখন_এসেছিলে_অন্ধকারে
#পর্ব_২০

ইমরান বাংলাদেশে ফিরেছে। একেবারে ফেরেনি। একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং এনালিস্টের পোস্টে এক বছরের কন্ট্রাক্ট সাইন করে এসেছে। এই এক বছরে দেশের সমস্ত পাট চুকিয়ে অনিকে সাথে করে, ইউরোপের কোথাও পাড়ি জমাবে, যেখানে কাজের স্বাধীনতা আছে, এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ আছে, কোনো পরীক্ষামূলক স্ট্রাটেজি ফেইল হলেও নতুন উদ্ভাবনের কদর হবে।

অনিকে নিয়েই ফিরবে ও। পাঁচ বছরে অনিকে ভুলে থাকার কষ্টসাধ্য কাজটা সফলভাবে করে ফেলেছে। নিজের স্বপ্নপূরণের মাঝে বাধ সাধতে দেয়নি ওকে। মার্কেটিংএ পোস্টগ্রাড শেষ করার পর, ম্যানেজমেন্ট স্কিলের উপরেও আরেকটা পোস্টগ্রাড করে ফেলেছে।

দেশ ছাড়ার পরে প্রথম প্রথম ইমরান খুব ভয়ে ভয়ে ছিলো, কখন সাইদা জবাবদিহি চাইবেন। আতঙ্কে ফোন করাও বন্ধ রেখেছিল কিছুদিন। জাপান পৌঁছে আটদিনের মাথায় ফোন করেছিল, কিন্তু সাইদা খুব স্বাভাবিক ছিলেন। এতদিন পরে কেন ফোন করল ইমরান সেই কৈফিয়ত নিয়েছিলেন শুধু। ইমরান নিশ্চিন্ত হয়েছিল, অনি কাউকে কিছু বলেনি। আরও কয়েকবার ফোন করেও ইমরান সাইদার কাছে কিছুই শোনেনি। খুব আগ্রহ হতো অনির কোনো সংবাদ পেতে। নিজেই তাই উপযাচক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘পলাশডাঙার সবাই কেমন আছে, মা।’
‘আছে। ভালোই আছে সবাই।’
‘অনি?’
‘সেও ভালো আছে। ওকে নিয়ে ভাবার দরকার নেই তো। সে আমি ব্যবস্থা করেছি। নিজের পড়াশোনা মন দিয়ে করো। যেন একবারে পাশ করতে পারো। ফেল করে একক্লাসে দুইবার থেকে দেশে আসতে যেন দেরি না হয়। দেশে ফিরলে তারপর যা করার দরকার, করা যাবে।’

ইমরান আশ্বস্ত হয়েছিল। নিজের কাজেই মনঃসংযোগ করেছিল। অনির চিন্তা, ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য মন চঞ্চল হলে মনকে কঠিন করে আটকাতো আর দিন গুণত, এই তো আর কয়েকটা দিন। বাড়িতে ফোন করাও মাসে, তিনমাসে এসে ঠেকেছিল, অনির খেয়ালে যেন বিপর্যস্ত না হতে হয়, সেই কারণে।

এই পাঁচবছর অনিকে ভুলে থাকলেও দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই গেঁয়ো অনিকে মাথা থেকে নামাতে পারছে না একটা মূহুর্তের জন্যও। পাঁচ বছরে অনেক বড় হওয়ার কথা ওর, হয়তো সাইদা নিজের মতো করে অনেককিছু শিখিয়েও নিয়েছেন। তবে অনি যদি কিছু না শেখে, আগের মতোই থাকে, ঠিক যেভাবে রেখে গিয়েছিল ও সেইরকমই বেশি ভালো লাগবে ইমরানের। সেই অনিই তো ওর কল্পনা জুড়ে রাজত্ব করে।

অতিআগ্রহে নির্ধারিত সময়ের পনেরোদিন আগেই বাংলাদেশে নেমেছে ইমরান। ভেবেছিল অনিকে বাড়িতেই পাবে। খুব উত্তেজনা কাজ করছিল মনে মনে। আশাভঙ্গ হয়েছে। অনি নেই। তবে বাড়িতে বেশ সাজসাজ রব। সবার কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে মনও বেশ চনমনে। শুধু অনির অভাব ছিলো। মুখ ফুটে বলতে পারছিল না। নিজের বাড়িতেই কেমন একটা নতুন জামাই, নতুন জামাই মনে হচ্ছিল নিজেকে। আড়ষ্টতা কাজ করছিল।

মায়েরা নাকি সন্তানের বুকের ভেতরটা পড়ে ফেলতে পারেন। বইপত্রে ব্যাপারটা জানলেও আজকে ইমরানের বিশ্বাস হলো কথাটা। সাইদা বাইরে যাওয়ার কাপড় পরে তৈরি হয়ে এসে বললেন ‘আমরা পলাশডাঙা যাচ্ছি, ইমরান। বেয়াই সাহেব একেবারে ছাড়ছেন না।’

অনির বড়চাচা বেলায়েত শিকদারকে সাইদা বেয়াই বলেন জানা আছে ইমরানের।

ইমরান লাজুকমুখে বলল ‘আমার যাওয়ার দরকার আছে?’
‘না। তুই গিয়ে কী করবি? তুই যাবি এটা তো তারা জানে না। কী করতে কী করবে আবার৷ আমরাও আজ যেতাম না। কিন্তু বেয়াইসাহেব অনেক আগে থেকে কথা নিয়ে রেখেছেন। দিনে দিনেই চলে আসব। দুপুরে খেয়েই বউকে নিয়ে চলে আসব।’
‘আচ্ছা, তবে এই ব্যাপার। মা অনিকে আনতে যাচ্ছে!’ মনে মনে তখনই গোটাকতক লাড্ডু খেয়ে ফেলল ইমরান।

*****

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অফিসটাতে বসে আছে অনি। আরও অনেকেই আছে। ব্র‍্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির সাথে খসড়াচুক্তি সম্পাদন করতে এসেছে। চুক্তিপত্র পড়ে, সব টার্মস এন্ড কন্ডিশন, ক্লজগুলো ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারবে কীনা তাই সবাইই কাউকে না কাউকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। অনির সাথে সবসময়ের জন্যই পরশ আছে ছায়ার মতো। বারবার স্ন্যাকস, কফি সার্ভ করা হলেও সবাই ছটফট করছে, মূলকাজ হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। এখানে যারা আছে সবার জন্যই এটা জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ। বড় সুযোগ। শেষমূহুর্ত পর্যন্ত সবাই টেনশনে।

অনি হাতের আঙুল মটকাচ্ছে বারবার। অস্থির হচ্ছে। বারবার উঠছে বসছে। পরশ কয়েকবার চুপ করে বসতে বলল ওকে, কিন্তু ওর অস্থিরতা কমছে না। এতদিন পরে স্বপ্নটা দরজার ওপাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাকে ছুঁয়ে না দেখার আগে আকুলতা কমছে না। কিছুক্ষণের ভেতর সবার সাথে পরিচয় করে নিলো অনি। ইন্ডাস্ট্রিতে টুকটাক কাজ করার সুবাদে সবার মুখচেনা ছিলো, আলাপ ছিলো না। এর আগে স্ক্রিনিটেস্টে আসা হয়েছিল, একটা ফটোশুট হয়েছে, পোর্টফলিও জমা দিতে হয়েছে। এর আগের সব কাজের রেকর্ড দিতে হয়েছে। সবাইকে আলাদা করে ডাকা হতো তখন। এবারই সবাই একসাথে এসেছে। ওদেরকে বেয়ার ফেসে আসার জন্য ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়েছিল আগেই। একেবারে অল্প সাজে এসেছে সবাই। কিন্তু স্মার্ট আর গ্লামারাস লুক আনার চেষ্টায় কমতি নেই কারোরই। অনি পরেছে একটা সুতি তাঁতের শাড়ি, ফুলস্লিভ ব্লাউজের পিঠ অনেকটাই খোলা। শাড়ির আঁচলটা একটা মোটা দড়ির মতো পাঁকিয়ে কাঁধের উপর ফেলে রেখেছে যে কেউ দেখে বলবে, আঁচলটা না থাকলেও উনিশ-বিশ কিছু হতো না। তবে এখানে মডেল যারা এসেছে সবার ড্রেস আপ একইরকম কাছাকাছি বলে আলাদা করে কাউকেই চোখে পড়ছে না। মেকআপহীনতাকে পোশাকে এডজাস্ট করে নেওয়ার চেষ্টা সবার মাঝেই। তবে একেবারে প্রসাধনবিহীন ও কেউ নয়। হালকা ঠোঁটরঞ্জক, কাজল, কপালের মাঝখানটায় একটা টিপ – অনি এভাবেই নিজেকে সাজিয়ে ফেলেছে।

‘অনি, চুপচাপ এসে বস একজায়গায়। তুই এত ছটফট করছিস কেন?’
‘দাঁড়াও ভাইয়া। এখনো ডাকছে না কেন, বলো তো?
‘কাউকেই তো ডাকেনি। সময়মতো ঠিকই ডাকবে।
‘এটা তো একটা বড় প্রতিষ্ঠান। এদের কাজ তো সময়মতো হওয়ার কথা। তাই না? বিকেল চারটায় আসতে বলে সন্ধ্যে সাতটা বাজিয়ে ফেলা, কেমন না? কাউকে দেখছিও না, জিজ্ঞেস করব!’
‘অনি তুই বস এখানে।
‘একটু ভেতরে গিয়ে দেখি?
‘কোন ভেতরে?
‘আরেহ, এইপাশ থেকে তো আসলাম আমরা। ওইপাশে দেখো আরেকটা গেইট। ওইপাশে কেউ আছে অবশ্যই।
‘এটা রাজন মানিকের স্টুডিও না, অনি। এটা একটা কর্পোরেট অফিস। মন চাইলেই যেকোনো জায়গায় যে কেউ ঢুকে যেতে পারে না।
‘আরে আমি তো ঢুকব না। কাউকে দেখলেই শুধু জানতে চাইব, আমাদের কখন ডাকবে।
‘অনি, অন্য কেউ তো তোর মতো করছে না। চুপ করে বস…’

পরশের কথা মুখেই থাকল, অনি চঞ্চল পায়ে উঠে চলে গেল!

*****

বিশাল লবিতে এসে পড়ল অনি। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ডানদিকে গিয়ে লম্বা একটা করিডোর, আর বাঁদিকে আড়াআড়ি আরেকটা লম্বা প্যাসেজ চলে গেছে। সামনে কাচের পুশডোর।

ও পুশডোরে ঠেলতেই খুলে গেল। একটা ছোটো রিসিপশন ডেস্ক। চারটে চেয়ার পাতা। কিন্তু কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। অনি অবাক হলো, এ কেমন অফিস?

জোরে জোরে ডাকল ‘কেউ আছেন?’ দুবার ডাকলে একজন বেরিয়ে এলো
‘কার কাছে এসেছেন। অফিস আওয়ার তো শেষ। আজ আর কারো সাথে দেখা হবে না।’
রিসিপশন ডেস্কে বসতে বসতে লোকটা জানতে চাইল।

‘আমরা অনেকক্ষণ বসে আছি। কাউকেই তো দেখছ না আমাদের এটেন্ড করতে।
‘ওহ। নতুন মডেল আপনি?’ অনিকে আপাদমস্তক দেখে নিলো লোকটা
‘জি।
‘স্যাররা তো সবাই মিটিংএ আছেন। আপনাদের রিফ্রেশমেন্ট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে তো।
‘হ্যাঁ। সেটা করা হয়েছে। কিন্তু কী হবে না হবে। কী করতে হবে, কেউ তো কিছু জানাচ্ছেন না।
‘আর একটু অপেক্ষা করুন, কিছুক্ষণের ভেতর মিটিং শেষ হবে। তখন আপনাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে সবকিছু।’ বলতে বলতে লোকটা নিজের মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

অনি আর কিছু বলার না পেয়ে জানতে চাইল ‘আমাকে একটু ফ্রেশ হতে হবে। ওয়াশরুমটা কোনদিকে জানাবেন?
লোকটা একটু বিরক্ত হলো। চোখ কুঁচকে জোরে হাঁক দিলো ‘সামাদ?’

পিয়নের মতো ড্রেসআপে একটা লোক এলো। ‘এই ম্যাডামকে একটু ওয়াশরুম দেখিয়ে দাও। আবার সাথে করে এখানে নিয়ে এসো।’ রিসিপশনের লোকটা বুঝিয়ে দিলো পিয়ন সামাদকে।

রিসিপশন পার হয়ে আরেকটা বড় দরজা। এটা টেম্পারড গ্লাসের ট্রান্সপারেন্ট ডোর। ওপাশটা দেখা যাচ্ছে। সারি সারি টিপটপ আর স্মার্ট ওয়ার্কস্টেশন সাজানো। এখানেও কেউ নেই। অফিস ছুটি হয়ে গেছে। যারা আছে তারা সম্ভবত মিটিংএ আছে।

দরজা দিয়ে ঢুকে ডানদিকের ছয়টা ওয়ার্কস্টেশন পার হয়ে একটা ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো সামাদ। অনি ওয়াশরুমে ঢুকে নিজের চুলগুলো একটু সেট করল। লিপিস্টিকেও একটা রিটাচ দিলো। শাড়িটা পিনআপ করা যদিও তাও একটু ভাঁজগুলো টেনে ঠিক করল।

বেরিয়ে এসে আর সামাদকে পেলো না। এদিক ওদিক তাকালো। ‘ভাই, আছেন?’ ডাকল দুবার
সামাদকে না পেলে এই শুনশান নীরব অফিস থেকে বেরোবে কী করে? একে ফিঙারপ্রিন্ট একসেস ছাড়া দরজা খুলবে না, আর এতগুলো ওয়ার্কস্টেশন একটা গোলোকধাঁধাঁ হয়ে রয়েছে, এর ভেতর দরজাটা কোনদিকে তাও তো খুঁজে পাচ্ছে না।

অনি প্রায় কেঁদে ফেলবে, তখন ওই ওয়ার্কস্টেশনগুলোর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো সামাদ ‘হইছে ম্যাডাম? চলেন?’
‘আপনি কোথায় ছিলেন?’
‘দেরি হইছে বুঝি? স্যার ডাকছিলেন। এসি বন্ধ করবেন, রিমোট পাইতেছিলেন না।’
‘কোন স্যার? স্যাররা সবাই না মিটিংয়ে?’
‘হ্যা। কিন্তু ইনি নতুন আসছেন। আজই জয়েন করেছেন। প্রথমদিন কাজ কম থাকে। তাড়াতাড়ি বাড়ি যায় সবাই।’
‘কোথায় উনি? একটু কথা বলা যাবে? আমাদের কাজ কখন শুরু হবে একটু জেনে নিতাম।’

সামাদ নাটক সিনেমার পোকা। সেই সূত্রে অনিকেও দেখেছে পর্দায় কয়েকবার। আজকে সামনাসামনি নায়িকা দেখে ওর অন্যরকম লাগছে। আনন্দ হচ্ছে। বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে কতরকম করে বলবে, এসব ভেবে রাজি হয়ে গেল। ওয়ার্কস্টেশনগুলোর উল্টোদিকে আলাদা আলাদা কেবিন। এরই একটা দেখিয়ে দিলো অনিকে।

অনি আঙুলে দুটো টোকা দিতেই ভেতর থেকে আওয়াজ এলো ‘কাম ইন।’

দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই অনি চমকে উঠল।

ইমরান!

পরশ ইমরানের কথা বললে প্রথমে নামটা চিনতে পারেনি ও। মাঝখানে অনেকগুলো দিন কেটে যাওয়ায় সত্যি সত্যিই ও ভুলে গিয়েছিল ইমরান নামটাকে। কিন্তু জীবনের সবচাইতে বড় সত্যিটা তো না চেনার অভিনয় করা যায় না। অন্তত নিজের কাছে তো একেবারেই না। সেদিন একের পর এক সব পুরোনো স্মৃতিগুলো ফিরে এসে ওকে আঘাতে আঘাতে বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল। সব ঝেড়েপুছে আজ ও এখানে এসেছে। ইমরানকে চিনতে ওর একটুও দেরি হলো না।

কিন্তু এখানে এতবড় চমকের জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল!

ইমরানের অবস্থাও তথৈবচ। প্রথমদিনের কাজ বুঝে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। আজ ওর এমনিতেও তাড়া আছে। বাড়ি গিয়ে অনিকে পাবে বলে। ওর মা অনিকে আনতেই পলাশডাঙা দিয়েছে। সেই দেখা কেমন হবে, কীভাবে কথা বলবে, অনি কী বলবে, ও অনিকে কী বলবে, পাঁচ বছরে অনির অভিমান কতখানি জমেছে, সেই মান কীভাবে ভাঙাবে ভেবে রোমাঞ্চিত হয়েছে বারবার।

এইভাবে এখানে অনিকে দেখে বিশ্বাস করতে পারল না। এতদিনের অপেক্ষায় সবকিছু ওর কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এই অনি নিশ্চয় মানবী নয়, কল্পনা মনে হচ্ছে ওর।

ও চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো। এতদিনের সংযম ভেস্তে গেল। অনির মুখটা হাতের তালুতে আটকে নিজের ঠোঁটটা ডুবিয়ে দিলো অনির দুঠোঁটের মাঝখানে…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here