Mr_Husband,পর্ব_৪

0
4384

#Mr_Husband,পর্ব_৪
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন

হাতে গান নিয়ে আয়েশিভঙ্গিতে টেবিলের উপর পা তুলে বসে আছে একটা লোক। তার মুখে মাস্ক আর চোখে সানগ্লাস থাকায় চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে লোকটা কে। চারদিকে হালকা নিভু নিভু আলো জ্বলছে। লোকটার ঠিক সামনেই অচেতন অবস্থায় চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা আরেকটা লোক বসে আছে। আর তার পিছনে আরো চারজন মুখুশধারী লোক হাতে রিভলবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বসে থাকা লোকটির ভাব ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে লোকটা এদের সবার লিডার। লোকটা কিছু একটা ইশারা করতেই একটা লোক রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি ভর্তি একটা কালো বালতি হাতে আবার ফিরে এলো। তারপর ওই এক বালতি পানি অচেতন লোকটার গায়ে ঢেলে দিল। সাথে সাথেই অচেতন লোকটা ধরফরিয়ে উঠল। লোকটা বোঝার চেষ্টা করছে যে সে এখন কোথায় আছে। লোকটা চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

—“কে তোমরা? আমাকে এখানে কেন ধরে নিয়ে এসেছো? দেখ ভালোয় ভালোয় বলছি আমাকে যেতে দেও না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

টেবিলের উপর পা তুলে বসা মাস্ক আর সানগ্লাস পরা লোকটা হাতে থাকা গান টা দিয়ে ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে বলল,

—“আমার থেকে খারাপ আর কি হবে?”

লোকটা বিষ্ময়ে হয়ে বলল,

—“AR?”

—“এখন বল মেয়ে গুলো কোথায়?”

AR এর কথা শুনে লোকটা ক্ষিপ্ত হলো। গলা উঁচু করে বলল,

—“দেখ AR আমাদের কাজে নাক গলাস না এর ফলে কিন্তু ভালো হবে না।”

AR হাওয়ার গতিতে বসা থেকে উঠে গিয়ে লোকটার কন্ঠনালী চেপে ধরে কিড়মিড় করে বলল,

—“শশশশ। আওয়াজ নিচে। আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না।”

কন্ঠনালী চেপে ধরায় লোকটা দম নিচে পারছে না। চোখ দুটো বড় হয়ে গেছে। আরে কিছুক্ষণ পর মনে হয় চোখ দুটো বেরিয়েই আসবে। AR লোকটাকে ছেড়ে দিল। তারপর গিয়ে আবার গিয়ে আগের ভঙ্গিতে বসে পরলো। তারপর লোকটার দিকে গান তাকে করে বলল,

—“তুই নিজেই ঠিক কর সব সত্যি কথা বলবি নাকি মরবি?”

লোকটা নাকচ করে হেসে বলল,

—“মেরে ফেল। তবুও আমার মুখ থেকে একটা শব্দ ও বেরবে না।”

লোকটার হাসিই যথেষ্ট ছিল AR কে হিংস্র বানিয়ে তুলতে। AR উঠে কিছু না বলেই লোকটার দুপায়ে দুটো গুলি চালালো। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি আত্মনাত করে উঠলো। AR চেঁচিয়ে বলল,

—“মেয়েগুলো কোথায়?”

কিন্তু কোনো মতেই লোকটা বলতে নারাজ সে জবাব দিলো,

—“এখনো বলছি ছেড়ে দে আমায়। খুব বড় ভুল………….”

AR ছুড়ি দিয়ে এক কোপে মেরে লোকটার কনিষ্ঠা আঙ্গুল টা হাত থেকে আলাদা করে ফেললো। লোকটা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো। লোকটার আত্মনাতে কেঁপে উঠলো পুরো রুম। তবুও কেউ টু শব্দটিও করলো না। রিভলবার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে দেখছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা এসবে অভ্যস্ত। লোকটা চিৎকার করছে আত্মনাত করছে কিন্তু সত্যি কথা বলছে না। AR একে একে লোকটার হাতে পায়ের সব গুলো আঙ্গুল কেটে ফেললো। তারপর লবণ আর মরিচের গুঁড়া কাটা জায়গা গুলোতে ছিটিয়ে দিতে লাগলো। তাও লোকটা AR‌ ‌কে কিছু বলল না। লোকটা ব্যথায় চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারালো। AR চেঁচিয়ে বলল উঠলো,

—“এক বালতি ফুটন্ত গরম পানি এনে এর মুখে ঢাল।”

সঙ্গে সঙ্গে একটা লোক‌ গিয়ে এক বালতি জল ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে এসে ওই লোকটার মাথায় ঢাললো সাথে সাথে লোকটা চিৎকার করে উঠলো। AR শীতল কন্ঠে ভয়ংকর ভাবে বলল,

—“এখনো সময় আছে সব বলে দে। নাহলে তার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ আমি এই ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করব। তুই ভালো করেই জানিস আমি কি কি করতে পারি।”

—“তুই মেরে ফেল আমাকে আমি তাও তোকে কিছু বলব না। তুই কখনো ওই মেয়েগুলোর কাছে পৌঁছাতে পারবি না। আজ রাতেই ওদের বিদেশে পাচার করা হবে।”

AR এর মুখে রাগে লাল হয়ে গেছে। কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে। মুখুস থাকা স্বত্বেও তাকে খুব ভয়ংকর লাগছে। AR গর্জন করে বলে উঠলো,

—“ওকে শক ট্রিটমেন্ট দিবি। আর যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে পানিতে কারেন্ট দিয়ে তার মধ্যে ফেলে দিবি।”

বলেই AR ওখান থেকে চলে গেল।
_______________

আরিফা রেজওয়ান আলিয়ার রুমে এসে দেখে মুন আর আলিয়া গল্পের আসর জমিয়েছে। আরিফা রেজওয়ান এগিয়ে এসে বললেন,

—“মুন মামনী আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজছি আর তুমি এখানে বসে আছো।”

—“কেন আন্টি? কি হয়েছে?”

—“আজ তো তোমার আর আঁধারের তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা। এটা একটা নিয়ম। আচ্ছা আঁধার কোথায় ও কে তো দেখছি না।”

—“উনি তো অনেক আগেই বেরিয়ে গেছেন।”

—“ওওও। হসপিটালে গেছে হয়তো। তুমি আঁধার কে ফোন করে বলো তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে। বিকেলেই তোমরা বেরিয়ে পরবে।”

—“ঠিক আছে আন্টি।”

আরিফা রেজওয়ান মুনের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,

—“আমি না তোমার আরেক মা? তাহলে মা বলে ডাক।”

আলিয়া হেসে বলল,

—“মিষ্টি তুমি মা কে আন্টি কেন বলছো? উনি তো তোমার শাশুড়ি হয়।”

সবার’ই প্রথম প্রথম নতুন জায়গায় নতুন মানুষদের সাথে মিশতে কিছুটা সময় লাগে। মুনের ও লাগছে। মুন নিজের চঞ্চলতা এখানে প্রকাশ করতে পারছে না। কারণ মুন এখনো এদের সবাই কে আপন করে নিতে পারেনি। মন খুলে কথা ও বলতে পারছে না। মুন চেষ্টা করছে সবাইকে আপন করে নেওয়ার। মুন বলল,

—“উনি আমার শাশুড়ি হন আবার আরেক মা ও তাহলে উনাকে কি ডাকা যায়?”

মুন একটু ভেবে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,

—“হ্যাঁ পেয়েছি। শাশুমা, আমি তোমাকে শাশুমা বলে ডাকবো।”

শেষের কথাটা বলেই মুন আরিফা রেজওয়ান কে জড়িয়ে ধরলো। আরিফা রেজওয়ান মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।

.

মুন নিজের রুমে বসে ভাবছে। আঁধার কে ফোন করবে কি করবে না। অনেক ভেবে মুন ঠিক করলো ফোন করবে। মুনের ওর আব্বু আম্মু’র কথা খুব মনে পরছে। আর যেহেতু নিয়ম মেনে আজ ওদের ওই বাড়িতে যেতে হবে। সেহেতু আঁধার কে ফোন করে বলতে হবে। মুন ফোন করলো। রিং হওয়ার সাথে সাথে আবার কেটে দিল। মুনের খুব ভয় করছে যদি আঁধার ওকে আবার ফোনের মধ্যেই বকা দিতে শুরু করে। ভাবনার মাঝেই আঁধার কল ব্যাক করল। মুন ফোন রিসিভ করে কানে নেয়। ওপাশ থেকে আঁধার ব্যস্ত গলায় বলল,

—“হ্যালো কে বলছেন?”

মুনের মাথায় আবার সয়তানি বুদ্ধিরা কিলিবিলি করতে শুরু করে। মুন ভাবে আঁধারের সাথে একটু মজা করা যাক। মুন গলা চেন্জ করে নরম গলায় মিষ্টি করে বলল,

—“আপনার খুব কাছের একজন।”

—“হোয়াট? কে আপনি?”

—“মনের চোখ দিয়ে দেখুন ঠিক চিনতে পারবেন।”

—“হোয়াইট ননসেন্স? এসব ফালতু কথা বলে আমার টাইম ওয়েস্ট করার জন্য ফোন করেছেন? আবার যদি ফোন করে বিরক্ত করেন তাহলে একবারে শুট করে দিবো। ইডিয়েট।”

বলেই আঁধার ফোন কেটে দিল‌। মুন হা করে বসে আছে। ও কত সুন্দর করে কথা বলল আর আঁধার ওকে ইডিয়েট বলে ফোটো কেটে দিল! মুন ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,

—“ইডিয়েট। রসকষহীন একটা মানুষ। ইশশশ এসের জন্য তো ভুলেই গিয়েছিলাম ওনাকে বাড়িতে আসতে বলতে হবে। আবার ফোন করতে হবে।”

মুন আবার ফোন করলো কিন্তু আঁধার ধরলো না। মুন কয়েকবার ট্রাই করলো ফোন বেজে কেটে যাচ্ছে কিন্তু আঁধার ধরছে না। মুন এবার মেসেজ পাঠালো। ফোনে মেসেজ টুন বাঝতেই আঁধার ফোন চেক করলো। মেসেজ টা আগের নম্বর থেকেই এসেছে। মেসেজে লেখা ‘আমি মুন। আপনার বউ। ফোন ধরুন।’ কিছুক্ষণ পর মুন আবার ফোন করল। আঁধার ফোন কেটে। নিজে কল ব্যাক করল। মুন বলল,

—“হ্যালো আঁধার আপনি কোথায়?”

আঁধার ধমক দিয়ে বলল,

—“তুমি আমার নাম ধরে ডাকো কোন সাহসে? তোমার বয়স কত হবে পনেরো কি ষোল? আর আমার কত জানো? পঁচিশ। আমি তোমার থেকে দশ বছরের বড়। আর তুমি আমার নাম ধরে ডাকছো?”

—“অ্যা আপনার মতো বুরো বেটা আমার জামাই? হায় আল্লাহ আমার জীবনটা বরবাদ হয়ে গেল। এই বুড়ো বেটা কে বিয়ে করার থেকে মরে যাওয়া ও ভালো ছিল। এই জন্য’ই তো বলি এই বেটা এতো রসকষহীন কেন?”

আঁধার এতক্ষণ বিষ্ময়ে হয়ে বসে ছিল। এবার ধমক দিয়ে বলল,

—” আমাকে দেখে তোমার বুড়ো মনে হয়? আর রসকষহীন মানে কি হ্যাঁ?”

—“মানে হলো আপনি একটা রসকষহীন।”

আঁধার রেগে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

—“ফাজলামো করার জন্য ফোন দিয়েছো”

—“না। আমাদের বাড়িতে যেতে হবে নিয়ম আছে। তাই শাশুমা বলেছে আপনাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আসতে বলতে।”

—“আমি যেতে পারবো না তুমি একাই চলে যাও।”

—“আমি একা গেলে হবে না দুজনের’ই যেতে হবে।”

—“বললাম তো কাজ আছে। যেতে পারবো না।”

—“দেখুন আঁধার আপ……”

আঁধার ধমক দিয়ে বলল,

—“আবার নাম ধরে ডাকছো?”

—“সরি। আঁধার ভাইয়া শাশু……”

আঁধার এবার রাম ধমক দিয়ে বলল,

—“এই বেয়াদব মেয়ে আমি তোমার ভাইয়া?”

—“এবার ও সরি। তাহলে আঙ্কেল ডাকি। শুনুন আঙ্কেল আমা…………”

আঁধার রেগে বলল,

—“আমাকে দেখে তোমার আঙ্কেল বলে মনে হয়?”

মুন ও এবার রেগে গেল তেজী গলায় বলল,

—“নাম ধরে ডাকলে দোষ, ভাইয়া বললে ও দোষ, আঙ্কেল বললেও দোষ। তাহলে বলব তো বলব কি? বাবা বলব এখন?”

আঁধার অবাক হয়ে গেছে মুনের কথা শুনে এই মেয়ের বুদ্ধি জ্ঞান বলতে কিছুই নেই। আঁধার ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

—“বেয়াদব মেয়ে ফোন রাখ।”

বলেই আঁধার নিজেই ফোন কেটে দিল। এই মেয়ের সাথে কথা বরানোই ভুল হয়েছে তার। দু মিনিটে পুরো মাথা ধরিয়ে দিয়েছে তার। এদিকে আঁধার ফোন রেখে দিতেই মুন আরো রেগে গেল। রেগে ফোনকে আঁধার মনে করে কিছুক্ষণ ঝারলো। তারপর শান্ত হয়ে বসে ভাবতে লাগলো আঁধার আসবে কি না। মুন আশা নিয়ে বসে থাকে আঁধার আসবে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here