Mr_Husband,পর্ব_১৭,১৮

0
3477

#Mr_Husband,পর্ব_১৭,১৮
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১৭

সময়টা সন্ধ্যার। আকাশে ইতি মধ্যে তাঁরারা উঁকি দিচ্ছে। থালার মতো গোল চাঁদ টা নিজের আলোয় শত অন্ধকারকে হার মানাচ্ছে। কিছু অবাধ্য মেঘ বারবার চাঁদ টিকে নিজের আলো ছড়াতে বাঁধা দিচ্ছে। জোনাকি পোকারা ও নিজেদের সবুজ আলোয় মুখরিত করছে চারপাশ। জ্বল জ্বল করে জ্বলছে আগুনের শিখা। আর ওই আগুনের শিখা কে কেন্দ্র করে বসে আছে আঁধার,আরুশ,আসিক, অয়ন,আপন,ইসী আর রুশা। সবাই গোল হয়ে গল্পের ঝুঁড়ি নিয়ে বসেছে। আসিক একটা বোতল নিয়ে বলল,

—“সবাই মিলে একটা গেইম খেলা যাক।”

ইসী কৌতুহলী ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,

—“কি গেইম?”

আসিক বোতল টা নিচে ঘুরিয়ে বলল,

—“আমি এই বোতল টা ঘুরাবো। এই বোতল যাদের দিকে গিয়ে থামবে তারা একে অপরকে নিজের ইচ্ছে মতো প্রশ্ন করবে। এবং ওই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে সবাইকে। আর যদি উওর দিতে না পারে তাহলে তাকে পানিসমেন্ট হিসেবে একটা টাস্ক দেওয়া হবে যেটা তাকে করতে হবে।”

সবাই আসিকের বলা গেইম খেলতে রাজি হলো। আসিক সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলল,

—“তো সবাই রেডি?”

সবাই হুল্লোড় করে বলল,

—“ইয়েস”

আসিক বোতল ঘুরানো শুরু করলো। বোতল টা কিছুক্ষণ ঘুরে গিয়ে ওর আর আরুশ দিকে থামলো। আরুশ সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আসিক কে প্রশ্ন করলো,

—“তোর আর সুপ্রিয়া’র মধ্যে কি চলছে?”

আসিক আরুশের কথা শুনে ভড়কে গেল। অন্যরাই ফাটা চোখে তাকিয়ে আছে আরুশের দিকে। আসিক জোড় পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল,

—“কি চলবে কিছু না। ও তোর মামাতো বোন মানে আমারো বোন। ও ভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে? আমি সত্যি বলছি।”

আরুশ এখনো আসিকের দিকে ওভাবেই তাকিয়ে আছে। ইসী তাড়া দিয়ে বলল,

—“আরে ভাই জলদি করে না। এই আসিকের বাচ্চা তুই তাড়াতাড়ি প্রশ্ন কর তারপর আবার বোতল ঘোরা।”

আসিক আরুশের দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করলো,

—“তুই সেদিন আমার কাজিন রিয়ার সাথে কি করছিলি?”

ইসী কড়া দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকায়। আরুশ রুক্ষ গলায় বলল,

—“তোর ওই গায়ে পরা কাজিন কে রাস্তায় পরে পাই। রিকশা পাচ্ছিল না তাই জোর করে আমার ঘাড়ে চেপে বসে। আমি ও কোনো উপায় না পেয়ে লিফট দেই। এন্ড ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার এইসব মেয়ের প্রতি কোনো ইন্ট্রেস নেই।”

আরুশের জবাবে আসিকের মুখটা চুপসে গেল। ইসী যেন এটাই শুনতে চাইছিল আরুশের মুখে। আসিক মুখটা ছোট করে বোতল ঘুরাতে শুরু করলো। এবার বোতল গিয়ে ইসী আর রুশার দিকে থামলো। ইসী ফটাফট জিজ্ঞেস করলো,

—“এই পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছো? মানে কটা ছেলেকে ঘুরিয়েছো?”

ইসী”র কথায় রুশা থতমত খেয়ে গেল। আঁধার ধমক দিয়ে বলল,

—“এগুলো কোন ধরনের প্রশ্ন?”

—“প্রশ্ন তো প্রশ্ন’ই তার আবার ধরন আছে নাকি? আর গেইমে এধরণের কোনো রুলস দেওয়া ছিল না। বলা হয়েছে নিজেদের ইচ্ছে মতো প্রশ্ন করতে পারব। আমি তাই করেছি। রুশা অ্যান্সার দেও।”

রুশা হাসার চেষ্টা করে বলল,

—“আমি এখনো পর্যন্ত রিলেশনে যাই নি।”

ইসী’র বিশ্বাস হলো না। কিন্তু ও আর কথা বাড়ালো না। রুশা প্রশ্ন করলো,

—“তোমরা সবাই এক সাথে আছো কত বছর ধরে?”

—“দশ বছর।”

রুশা শুনে অনেক অবাক হলো। দশ বছর ধরে এরা সবাই এক সাথে আছে ওর যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। আসিক আবার বোতল ঘুরানো শুরু করলো একে একে সবার দিকে বোতল যাচ্ছে সবাই সবাইকে প্রশ্ন করছে। এবার বোতল গিয়ে থামলো রুশা আর আঁধারের দিকে রুশা প্রশ্ন করলো,

—“আপনি সব সময় এতো চুপচাপ বসে থাকেন কেন?”

আঁধার কাঁটা ভ্রুটা কিছুটা উঁচু করে তাকালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শান্ত স্বরে জবাব দিলো,

—“ভালোবাসি তাই”

রুশা আর কিছু বলল না। আরুশ আঁধার কে ধাক্কা মেরে বলল,

—“এবার তোর পালা প্রশ্ন কর?”

আঁধার ঘাড় কাত করে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলো,

—“এতো গুলো ছেলের সাথে একা আসতে ভয় করে নি?”

আঁধারের এমন ভয়ঙ্কর কথায় রুশা কেঁপে উঠলো। কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে হেসে বলল,

—“মোটেও না। ভয় কিসের? আর আমি তো একা নই ইসী ও তো আছে। ওর যখন ভয় করছে না। তখন আমার কেন ভয় করবে।”

আঁধার বাঁকা হাসি দিলো। আসিক আবারো বোতল ঘুরানো শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর বোতল টা ইসী আর আরুশের দিকে মুখ করে থামলো। ইসী কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলো,

—“কাউকে ভালোবাসিস? মানে তোর কোনো গালফ্রেন্ড আছে?”

—“এখনো পর্যন্ত তো না সামনে দেখা যাক কি হয়।”

ইসী সবার আড়ালে বিজয়ীর হাসি দিলো। খেলা শেষে আরুশ আর আঁধারের গানে মেতে উঠলো সবাই। কিন্তু হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি শুরু হলো। সবাই ছোটা ছুটি করে বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে শুধু দুটি মানুষ ছাড়া। আঁধার খোলা আকাশের নিচে এক’ই জায়গা চোখ বন্ধ করে বসে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা গুলো কে অনুভব করছে। বৃষ্টিরা এসে আঁধার কে ভিজিয়ে দিচ্ছে। সুঠাম দেহে সাদা শার্ট টা লেপটে গেছে। কপালের উপর পরে থাকা হালকা বাদামী চুলগুলো বেয়ে পানি পরছে। শুকনো লাল মেয়েলী ঠোঁট জোড়ায় বৃষ্টির ফোঁটা পরে সতেজ হয়ে উঠেছে। আঁধার চোখ মেলে তাকাতেই ওর চোখ আটকে যায় সদ্য ফোঁটা হলুদ ফুলের মতো রুশাতে। আঁধার তার বৃষ্টি’র পানিতে ভেজা স্বচ্ছ নীল মনি বিশিষ্ট চোখ দিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে রুশা কে দেখছে। আঁধার কে যদি এখন জিজ্ঞেস করা হয় ওর দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে কে তাহলে আঁধারের উওর হবে রুশা। আঁধারের বৃষ্টি বরাবর’ই খুব পছন্দ। এই বৃষ্টি যেন ওর ভিতরের এক আলাদা সত্তাকে জাগিয়ে তুলে। অনুভুতি গুলো ডানা মেলে। রুশা কে দেখে আঁধারের মনে এক অজানা অনুভুতি দাগা দেয়।

.

রুশা বাড়ি ফিরে শাওয়ার নিয়ে সবে মাত্র চুল পেচাতে পেচাতে বের হলো।

—“কি রে তোর চ্যালেঞ্জের কি হলো? পাটাতে পারলি?”

রুশা ভ্রু কুচকে ওর ফ্রেন্ড রিমার দিকে তাকালো। তারপর ভ্রু কুচকানো অবস্থাতেই বলল,

—“মানে?”

—“বোঝোনা কিছু? এখন না বোঝার ভান ধরছো?”

রুশা রিমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বেডের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে সোফায় বসে পরলো। রিমা গিয়ে রুশার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,

—“বল না এমন করছিস কেন?”

রুশা বিরক্ত হোএ রেগে বলল,

—“কি বলব তোকে হ্যাঁ ? কি বলব? ওই সালা কে পোটানোর এতো চেষ্টা করছি কিন্তু ওই সালা আমাকে পাত্তা ও দিচ্ছে না! পুরো এক দিন এক রাত ওর পেছনে হুদাই নষ্ট করেছি।”

—“তার মানে তুই লিজার কাছে হেরে গেলি?”

রুশা সয়তানি হাসি দিয়ে বলল,

—“নো ওয়ে। আমি একবার যা বলি তা’ই করি। ওই আঁধার রেজওয়ান কে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে না পারলে আমার নাম রুশা চৌধুরী না।”

.

আরুশ ফোনে কথা বলছে আর মেইন রোড দিয়ে হাটছে।পেছনে বাকিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে আর হাটছে। আঁধার আরুশ কে বারবার ফোন রেখে দেখে শুনে হাটতে বলছে। কারণ ওরা মেইন রোড আছে। ফুল স্প্রিডে সব গাড়ি চলছে। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। কিন্তু আরুশ শুনছে না। দু’মিনিট দু’মিনিট করে কথা বলেই যাচ্ছে। আঁধারের নজর আরুশের উপরই। আরুশ বেখেয়ালি ভাবে রোড পাড় হচ্ছে। আঁধার খেয়াল করলো সামনে থেকে একটা গাড়ি ঝড়ের গতিতে আরুশের দিকে ছুটে আসছে। আরুশ রোডের একদম মাঝে আর আঁধার এবং বাকিরা রোডের এপাশে। আঁধার ছুটে যায় আরুশ কে বাচাতে কিন্তু আঁধারের যাওয়ার আগেই গাড়ি টা আরুশ কে সজোড়ে ধাক্কা মেরে চলে যায়। আঁধারের পা ওখানেই থেমে যায়। আরুশ গাড়ির ধাক্কা খেয়ে দূরে গিয়ে মুখ থুবড়ে পরে। ইসী দেখে চিৎকার করে রাস্তার মাঝে বসে পরে। আরুশের মাথা থেকে ফিকনি দিয়ে রক্ত পরে ওর সারা শরীর ভিজিয়ে দেয়। আঁধার ওভাবেই দাড়িয়ে আছে এই ধাক্কা টা ওর মস্তিষ্ক নিতে পারছে না। আঁধারের যখন হুশ আসে ও দৌড়ে আরুশের কাছে ছুটে যায়। আপন ইসী কে ধরে রেখেছে আর অয়ন,আসিক ও আরুশের কাছে ছুটে যায়। আঁধার আরুশের মাথাটা কোলের মধ্যে নেয় আর কম্পিত গলায় ডাকে,

—“আরুশ? আরুশ? এই আরুশ?”

আসিক আঁধারের কাধে হাত রেখে বলল,

—“আঁধার ওকে ইমিডিয়েটলি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। আর টাইম ওয়েস্ট করা ঠিক হবে না।”

অয়ন ও সহমত হয়ে বলল,

—“আঁধার ও একদম ঠিক বলছে। আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরুশ কে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”

আঁধারের চোখ ইতিমধ্যে লাল হয়ে উঠেছে। আঁধার ভারী গলায় বলল,

—“এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে আয়।”

আসিক একটা চলন্ত গাড়ি মাঝ পথে দাড় করায়। আঁধার আর অয়ন মিলে আরুশ কে গাড়িতে তুলে হসপিটালে নিয়ে যায়। আপন ইসী কে নিয়ে অন্য গাড়ি করে হসপিটালে যায়। আরুশ কে অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবাই অপারেশন থিয়েটরের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর একটা নার্স থিয়েটর থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“আপনারা পেশেন্টের কি হন?”

অয়ন সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

—“আমরা সবাই ওর বন্ধু।”

আপন নার্স কে পশ্ন করলো,

—“কি হয়েছে সিস্টার? ও ঠিক আছে তো?”

—“পেশেন্টের অবস্থা খব’ই ক্রিটিক্যাল ইমিডিয়েটলি রক্ত দিতে হবে। আপনাদের মধ্যে যার ব্লাড গ্রুপ AB- সে আমার সাথে আসুন।”

আঁধার শান্ত গলায় বলল,

—“সিস্টার আমার ব্লাড গ্রুপ AB-”

অপারেশন শেষে আরুশ কে কেবিনে সিফ্ট করা হয়। দু ঘন্টা পর আরুশের জ্ঞান ফিরে। আরুশ চোখ মেলে সবাইকে দেখতে পায় শুধু আঁধার বাদে। আঁধার ওই দু ঘন্টা আরুশের পাশেই ছিল। এক সেকেন্ডের জন্যও ও ওখান থেকে নড়েনি। কিন্তু যখন দেখে আরুশে’র জ্ঞান ফিরছে তখন ও অভিমান করে ওখান থেকে চলে যায়। ইসী সেই কখন থেকে মরা কান্না করেই যাচ্ছে। ইসী’র এহেম কান্ডে আরুশ তো মহা অবাক। আরুশ অবাক ভঙ্গিতে’ই বলল,

—“এই পেত্নি তুই কাদছিস কেনো? মরে যাই নি এখনো বেঁচে আছি।”

আরুশে’র এই কথা যেন ইসী’র কান্না কে আরো তিন বারিয়ে দিলো। ইসী আরো জোরে জোরে কান্না করছে। আরুশ দুহাত দিয়ে নিজের দু’কান চেপে ধরে অয়ন কে বলল,

—“ওই সালা এই ছাগলটা কে থামা। না থাক থামাতে হবে না। একে এখান থেকে নিয়ে যা। আর আঁধার কে পাঠিয়ে দে।”

অয়ন মাথা চুলকে বলল,

—“এই ছাগল কে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আঁধার? ওকে কি করে পাঠাবো? এমনিতেই যা রেগে আছে তোর উপর!”

আরুশ হেসে বলল,

—“রাগ না অভিমান। অভিমান করে আছে।”

—“সে যা’ই হোক আমি পারবো না।”

আরুশ এবার রেগে বলল,

—“সালা এক লাথি মেরে বাংলাদেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবো। যা গিয়ে ওকে বল আমি ডাকছি।”

অয়ন ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

—“এহ দাড়াতে পারে নাকি সন্দেহ সে আবার আসছে ভাঙা পা দিয়ে আমাকে লাথি মারতে।”

আরুশ ঝারি মেরে বলল,

—“তুই গেলি?”

অয়ন যেতে যেতে বলল,

—“যাচ্ছি তো।”

আরুশ বাকিদের উদ্দেশ্য করে বলল,

—“তোরা ও যা।”

আরুশের এক কথায় সবাই বেরিয়ে গেল। আঁধার ওয়েটিং সিটে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে চোখ দুটো এখনো হালকা লাল। বাবা-মায়ের পর আঁধার সবচেয়ে বেশি আরুশকেই ভালোবাসে। কিন্তু আঁধারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা অন্যের সামনে নিজের ফিলিংস গুলো প্রকাশ না করতে পারা। আঁধার সবার মতো বারবার বলতে পারে না ভালোবাসি। দেখাতেও পারে না। কিন্তু ওকে যারা সত্যিই ভালোবাসে তারা ওর দুর্বলতা সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে। অয়ন কাচুমাচু করতে করতে আঁধারের সামনে এসে দাঁড়। আঁধার মাথা তুলে তাকিয়ে বলল,

—“কি হয়েছে?”

অয়ন ঢোক গিলে বলল,

—“আরুশ তোকে ডাকছে।”

আঁধার কিছুক্ষণ চুপ থেকে উঠে কেবিনের ভিতরে চলে গেল। আরুশ কাছে ডেকে বলল,

—“এখানে এসে বস।”

আঁধার একটা টুল টেনে বসল। আরুশ ওর হাত ধরে বলল,

—“রেগে আছিস না অভিমান করে আছিস? রেগে থাকলে মারতে পারিস আর অভিমান করে থাকলে বকতে পারিস। তোর মার ও আমি সহ্য করতে পারবো আর তোর বাকা ও। কিন্তু তোর এই দূরে দূরে থাকা সহ্য করতে পারবো না।”

আঁধার কিছু না বলেই আরুশ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরুশ হেসে দিলো। ও জানতো এটাই হবে।

#চলবে,

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_18

রুশা এখন আঁধারদের সাথেই বেশি সময় থাকে। এর’ই মধ্যে রুশা বুঝতে পারে আঁধার আরুশ কে কত টা ভালোবাসে। তাই রুশা বুদ্ধি খাটিয়ে আরুশ কে ব্যবহার করার কথা ভাবলো। কারণ আরুশ যদি আঁধার কে বোঝায় তাহলে আঁধার ঠিকই বুঝবে। একদিন রুশা আরুশের কাছে গিয়ে বলল,

—“আরুশ আপনার কাছে না আমার একটা সাহায্য চাই!”

আরুশ হেসে বলল,

—“বলো আমি কি সাহায্য করতে পারি তোমার?”

রুশা ইতস্তত করে বলল,

—” আসলে আমি না একজন কে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।”

আরুশ সারপ্র্রাইজ্ড হয়ে বলল,

—“কিহ! কাকে?”

রুশা জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,

—“আপনার বন্ধুকে।”

আরুশ কনফিউস্ড হয়ে বলল,

—“আমার বন্ধু তো চারজন, তার মধ্যে কোন জন?”

“আধার রেজওয়ান।”

“ও আচ্ছা”

আরুশ রুশার কথায় খেয়াল না করে বলল। কিন্তু যখন বুঝতে পারলো তখন এক প্রকার চিৎকার করে বলল,

“কিহ!”

রুশা ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,

“হুম, প্লিজ হেল্প করুন না।”

আরুশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

“ওকে! দেখছি কি করা যায়।”

রুশা খুশি হয়ে বলল,

“থ্যাঙ্ক ইউ”

আরুশ আঁধার কে এসে রুশার কথা বলল। ও আঁধারকে মানানোর অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু আঁধার মানতে নারাজ। আরুশ শেষে ইমোশনাল ব্লাকমেইল ও করলো। কিন্তু আঁধার কিছুতেই রাজি হলো না। পরের দিন রুশা পুরো কলেজের সামনে আঁধারকে প্রোপজ করে। সবাই উৎসুক হয়ে ওদের দেখছে। ইসী তো আগে থেকেই নিষেধ করছে। কারণ ওর শুরু থেকেই রুশাকে একদম পছন্দ না। আঁধার একবার রুশার দিকে আরেকবার আরুশের দিকে তাকাচ্ছে। আরুশ ইশারায় বলছে এ্যাকসেপ্ট করতে। আঁধার আরুশকে নিরাশ করতে চায় না। তাই শুধু আরুশের জন্যই ও রুশাকে এ্যাকসেপ্ট করে। রুশা তো ওর চ্যালেন্জ জিতে যাওয়ায় হেব্বি খুশি। দিন যেতে থাকে রুশার সাথে থাকতে থাকতে আঁধারও রুশাকে ভালোবেসে ফেলে। ওদের সম্পর্কটা খুব ভালোই চলছিল। এভাবে চলতে চলতে ওদের রিলেশনের সাতমাস কেটে যায়। একদিন হঠাৎ করে রুশা আঁধারকে কল করে। আঁধার রুশার নাম স্ক্রিনে দেখে হাসি মুখে কল রিসিভ করে বলল,

“হ্যালো!”

ওপাল থেকে রুশার কন্ঠস্বর শোনা গেল,

“হ্যালো আঁধার! তুমি আমার সাথে এক্ষুণি দেখা করো প্লিজ।”

আঁধার চিন্তিত হয়ে বলল,

“কি হয়েছে বলো আমাকে?”

“ফোনে বলতে পারব না। প্লিজ দেখা করো। আমি এ্যাড্রেস ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।”

“ওকে! আমি আসছি।”

“হুম! তোমার হাতে মাত্র দেড় ঘন্টা আছে। যদি সময় মতো না আসো তাহলে আমাকে আর কখনো দেখতে পাবে না।”

বলেই রুশা ফোন কেটে দিলো। আঁধারকে কিছু বলার সুযোগ ও দিলো না। আঁধার চিন্তায় পরে যায়। ওর পরে কালো রঙের ট্রাউজার আর ছাই রঙের পোলো টিশার্ট ছিল। সেই অবস্থাতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।

.

15 মিনিট ধরে ট্রাফিক জ্যামে আটকে বসে আছে আঁধার। আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। ওর এখন খুব রাগ লাগছে। আঁধার কিছু না ভেবেই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে লাগলো। ওর হাতে আর মাত্র ত্রিশ মিনিট সময় আছে। আঁধার এতোটাই বেখেয়ালি ভাবে দৌড়াচ্ছিল যে ওর সাথে কেউ ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায়। আঁধার দেখে একটা পিচ্চি মেয়ে। ক্লাস সিক্সে পড়ে হয় তো। মেয়েটির পরনে স্কুল ইউনিফর্ম। চুল দু বেনী করা তার দুপাশে ডল ক্লিপ দেওয়া। কাধে স্কুল ব্যাগ ঝুলছে। গায়ের রঙ হলুদ ফর্সা হবে হয় তো। হরিণী গহীন চুখ দুটোয় জল টলমল করছে। রোদের আলোয় তা মুক্তো মনে হচ্ছে। মেয়েটি হয় তো খুব বেশিই ব্যথা পেয়েছে। আঁধার মেয়েটিকে ধরে তুলে। হঠাৎ মেয়েটি সর্বশক্তি দিয়ে আঁধার কে ধাক্কা মারে। আঁধার অপ্রস্তুত থাকায় কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। আঁধার অবাক চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির কান্না ভেজা মুখটা মুহূর্তেই রঙ পালটে রাগে অগ্নি মূর্তি ধারণ করে। মেয়েটি চিকন বাচ্চা বাচ্চা গলায় এক প্রকার চেচিয়ে ঝাঝালো স্বরে বলতে শুরু করে,

“দেখে চলতে পারেন না? চোখ কি পকেটে নিয়ে হাটেন। ওহ সরি আপনি তো দৌড়াচ্ছিলেন। হাতির মতো শরীর নিয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছেন ভালো কথা। তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমার মতো মশার গায়ের উপর দিয়ে গেলে আমি কি আর আস্তো থাকি? স্টুপিড লোক একটা।”

আঁধার অবাক হয়ে পিচ্চি মেয়েটাকে দেখছে। এইটুকু একটা মেয়ে ওকে ঝাড়ছে ভাবা যায়! আঁধার এখন মেয়েটির সাথে তর্ক করতে চায় না। কারণ ওর হাতে সময় খুব কম। তাই গলার স্বর নরম করে বলল,

“আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে। আমার হাতে সময় খুব কম তাই বেখেয়ালি ভাবে ধাক্কা লেগে গেছে। আমি ইচ্ছে করে ধাক্কা দেই নি।”

বলে আঁধার যেতে নেয় কিন্তু মেয়েটি আঁধারের হাত পেচিয়ে ধরে বলল,

“পাচ্ছেন কোথায়? আমার হাত থেকে পালানো এতো সহজ নয়। ইচ্ছে করে দেন আর ভুল করে দেন ধাক্কা তো দিয়েছেন। তাই শাস্তি তো পেতেই হবে। এবার সরি বলুন আর 50 বার কান ধরে উঠবস করুন। তারপর ছাড়া পাবেন।”

আঁধার রেগে বলল,

“হোয়াট? ফাজলামো হচ্ছে?”

মেয়েটি মেকি হেসে বলল,

“নো, পানিশমেন্ট হচ্ছে।”

আঁধার ধমক দিয়ে বলল,

“হাত ছাড়ো।”

মেয়েটি ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

“এ্যাহ! আপনার এই ধমকে আমি ভয় পাই না।”

মেয়েটি চুপিসারে একটা চিকন দড়ি দিয়ে আঁধার হাত বেধে দিলো। তারপর দড়ির আরেক মাথা হাতে পেচিয়ে বলল,

“যদি ছাড়া পেতে চান তো ফটাফট সরি বলে কান ধরুন।”

আঁধারের রাগে মাথার রগ ফুলে উঠেছে। এখন রাস্তার মাঝে এই মেয়েটির জন্য ওকে কান ধরতে হবে আবার সরি ও বলতে হবে? আঁধার দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“আই এম সরি!”

“ইটস্ ওকে! এবার কানে ধরুন আর উঠবস করুন।”

আঁধার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। আজ ওর হাতে বেশি সময় নেই নাহলে যে এই মেয়েকে যে ও কি করত তা ও নিজেও জানে না। আঁধার ধীরে ধীরে হাতটা কানের কাছে নেয়। মেয়েটি ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

“বসুন”

আঁধার ইতস্তত করে বসল। মেয়েটি আবারো বলল,

“এবার উঠুন”

রাস্তায় চলাচল করা সবাই আঁধারকে দেখে হাসছে। মেয়েটি নিজেও হাসছে। আঁধারের ইচ্ছে করছে চড় ভেরে মেয়েটির সব দাঁত ফেলে দিতে। আঁধার 40 বার উঠবস করার পর মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল,

“এবার থামুন। অনেক হয়েছে আর দরকার নেই। যান মাফ করলাম। আমি আবার দয়ালু মানুষ।”

“দ্বিতীয় বার ভুলেও আমার সামনে পরবে না। কারণ তুমি আমাকে ছেড়ে দিলেও আমি তোমাকে কখোনা ছাড়বো না।”

বলেই আঁধার দৌড়ে চলে গেল। আঁধারের রুশার দেওয়া ঠিকানায় পৌছাতে ১ ঘন্টা ৪৭ মিনিট লেগে যায়। আঁধার সেখানে গিয়ে রুশা দেখতে পায় না। আঁধার পুরো জায়গাটা হন্ন হয়ে খোজে কিন্তু রুশা সেখানে নেই। আঁধার পাগলের মতো রুশার ফ্লাটে যায়। সেখানেও লরুশা নেই। আঁধার রুশার ফ্রেন্ডদের ও জিজ্ঞেস করে কিন্তু কেউই জানে না রুশা কোথায়। আঁধার সব জায়গা রুশাকে খুজে কিন্তু কোথাও ওকে পায় না। সেদিনের পর থেকে রুশাকে একে আরে গায়েব হয়ে যায়। আর আঁধার একা হয়ে যায়। কিন্তু ওর বন্ধুরা ওকে ছাড়ে না। ওর সবসম যে কোনো সিচুয়েশনে আঁধারের পাশে থাকে।

.

আঁধার কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে বসে আছে। মুন মুখটা ছোট করে খুব করুন স্বরে বলল,

“এখন তো উনি আবার আপনার লাইফে ফির এসেছেন। তাহলে এখন কি আপনি আমাকে ছেড়ে দিবেন?”

কথা গুলো বলার সময় মুনের গলা কাপছিল। আবারো মেঘেরা এসে মুনের চোখ ভরিয়ে দেয়। যেন এক্ষুনি বৃষ্টি শুরু হবে। আঁধার রাগি স্বরে বলল,

“এক ফোঁটা জল ও যেন গড়িয়ে নিচে না পরে। আমার জিনিসের অপচয় আমি মোটেও পছন্দ করি না।”

আঁধার মুনের দুগালে হাত রেখে নরম গলায় আবারো বলল,

“আগেই বলে ছিলাম দ্বিতীয় বার দেখলে আর কখনো ছাড়বোনা।”

মুন আঁধারের কথার মানে কিছুই বুঝে না। তাই জিজ্ঞেস করে,

“মানে?”

“কিছু না।”

কিছুক্ষণ ওদের মাঝে নিরবতা বিরাজ করে। হঠাৎ মুন আঁধার কে প্রশ্ন করে,

“আচ্ছা আপনি কি জানেন রিত্তিক রওশানের প্রথম মুভি কোনটা?”

হঠাৎ মুনের এই ধরনের প্রশ্নে আঁধার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আর বলে,

-“কেন?”

“উফ! প্রশ্নের উপর আবার প্রশ্ন! এতো প্রশ্ন করেন কেন আপনি? চুপচাপ যা জিজ্ঞেস করেছি তার উওর দেন?”

আঁধার কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

“কাহোনা পেয়ার হ্যা”

মুন লাজুক হেসে বলল,

“হা আপসে পেয়ার হ্যা”

বলেই টুপ করে আঁধারের গালে একটা চুমু দিয়ে ভো দৌড়। মুন কে আর পায় কে। আঁধার কয়েক সেকেন্ড শক্ট খেয়ে বেসে ছিল। ওর মস্তিষ্ক এখনো বুঝঝে উঠতে পারেনি একটু আগে কি হলো। আঁধার যখন বুঝতে পারে তখন গালে হাত দিয়ে হেসে দেয়। এদিকে মুন দরজা লক করে বেডের উপর শুয়ে পিলোতে মুখ গুজে আছে। একটু আগে কি করেছে ভাবতেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে ও। কি থেকে কি করে বসেছে নিজেও জানে না। মুন এখন কি করে আঁধারের সামনে যাবে? ইসসস! কি লজ্জা! কি লজ্জা!

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here