Mr_Husband,পর্ব_২৭,২৮

0
3614

#Mr_Husband,পর্ব_২৭,২৮
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_২৭

—“তোমাকে স্টোর রুমে কে লক করে ছিলো?”

আঁধারের কথায় মুনের কালকের কথা মনে পরে যায়। মুন বর্তমানকে ভুলে যায়। ওর মনে হতে লাগলো ও এখনো সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার স্টোর রুয়েই বন্দী। মুন হঠাৎ করে জোরে জোরে হা করে শ্বাস নিতে লাগলো। ওর শ্বাসকষ্ট হতে লাগলো। ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখে অন্ধকার নেমে আসছে। সব কিছু ঝাপসা দেখছে। শরীরের ভার ছেড়ে দিতে চাচ্ছে্। হাত পা অবস হয়ে যাচ্ছে। মুন অনেক কষ্টে অস্পস্ট স্বরে উচ্চারণ করলো,

—“মি…মি… মিস্টার.হাসবেন্ড”

আঁধার মুনের বাক শুনতৈ পেয়ে মাথা তুলে তাকাতেই দেখে মুন কেমন যেন করছে। আঁধার সব ফেলে দৌড়ে গিয়ে মুনকে ধরে। আঁধার এক হাতে শক্ত করে মুনের মাথা বুকের সাথে চেপে ধরে আরেক হাতে পিঠ বুলাতে বুলাতে নরম গলায় বলল,

—“যাস্ট কাম ডাউন! কিচ্ছু হয়নি। তুমি ভয় পেয়ো না। এই দেখো আমি তোমার কাছেই আছি। আর আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দিবো না। মনপাখি।”

আঁধার মুনকে ছেড়ে টি টেবিলের উপর রাখা ওয়াটার বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে মুনকে খাইয়ে দিয়ে বলল,

—“শান্ত হও আর সব খুলে বলো আমাকে কি করে স্টোর রুমে লক হয়ে গেছিলে তুমি।”

মুন নিশ্চুপ। আঁধার মুনের গালে হাত রেখে মুনের মাথা তুলে আবারো বলল,

—“যদি এটা কেউ ইচ্ছে করে করে থাকে তাহলে তাকে শাস্তি ও তো পেতে হবে।”

মুন অবুঝ দৃষ্টিতে আঁধারের দিকে তাকালো। ওকে কেউ কেনো ইচ্ছে করে স্টোর রুমে লক করতে যাবে সেটাই ও বুঝতে পারছে না।

—“জানো মুন তোমাকে আমি ‘তোতাপাখি’ বলে কেনো ডাকি? কারণ তুমি ওই তোতাপাখি গুলোর মতোই ছটফটে। সারাদিন ছুটাছুটি করে বাড়ি মাথায় তুলে নেও‌। তোমাকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা সম্ভব না। তোমার রিনিঝিনি কন্ঠের চেঁচামেচিতে পুরো বাড়ি উৎসবে মেতে উঠে। তুমি হাসলে মনে হয় যেন বৃষ্টি ঝরে। কাঁদলে মনে হয় মুক্তো পরে। রাগলে নাগীনের মতো ফেনা তুলে ঝগড়া করা। অভিমান করলে টমেটোর মতো গাল ফুলিয়ে বসে থাকা। তোমার সব কিছুই আমার খুব প্রিয়। কিন্তু তোমার এই চুপ থাকাটা আমার সব থেকে অপ্রিয়। এটা তোমাকে মানায় না। প্লিজ বলো কি হয়ে ছিলো কাল? তুমি কি করে স্টোর রুমে লক হলে?একবার শুধু বলো? এটা যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে করে থাকে তাহলে আই প্রমিজ আমি তাকে ছাড়বো না। সে যে’ই হোক না কেন।”

মুন চাপা গলায় বলল,

—“দুপুরের খাওয়ার পর আমি নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলাম। তখনই হঠাৎ কথা থেকে যেনো কিছু পরার একটা বিকট শব্দ হলো। শব্দটা কোথা থেকে এসেছে সেটা দেখার জন্য আমি আবার পিছনে ঘুরে হাঁটতে লাগলাম। যেতে যেতে টোল রুমের কাছে গিয়ে থামলাম। আমি দেখি স্টোর রুম খোলা। কিন্তু আমার জানা মতে স্টোর রুম সব সময়ই লক করা থাকে। আমি তড়িঘড়ি করে স্টোর রুমের ভেতর যেতে নিলে কিছুতে বেঁধে পরে যাই। অনেক কষ্টে উঠে আবার ভেতরে যাই। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে সেই শ বো শব্দের উৎস খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ শব্দ করে দরজা লাগানোর আওয়াজে আমি পিছনে ফিরে দেখি আমাকে ভেতরে রেখেই কেউ একজন দরজা লক করে দিয়েছে। খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। অনেক ডেকেছি কেউ খোলেনি দরজা। বারবার আপনার মুখটাই চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো। মনে মনে শুধু এক আল্লাহ কে আর আপনাকে ডাকছিলাম। আমি ভেবে ছিলাম এটাই হয়তো আমার এই পৃথিবীতে শেষ দিন।”

আঁধার মুনকে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো। মুনকে হারানোর কথাও আঁধার ভাবতে পারছে না। আর যদি সত্যিই হারিয়ে যায়! তাহলে, তাহলে ও কি করে বাঁচবে? কি নিয়ে বাঁচবে? ‘ও’ ও তো বাঁচবে না আর‌।

.
—“মিষ্টা কে তোমাকে লক করে ছিলো তার নামটা শুধু একবার বলো? সাহস কি করে হয় আমার মিষ্টি কে কষ্ট দেওয়ার। আই সয়ার তাকে আমি কুমীর ভর্তি নদীর মাঝে ছেড়ে দিয়ে আসবো। আর এটাই তার উচিত শাস্তি হবে। আর মম, ড্যাড, চুমকি তোমরা কোথায় ছিলে? কি করছিলে? টত বড় একটা বিপদ গেছে মিষ্টির উপর দিয়ে। যদি কিছু হয়ে যেতো?”

মুনের সাথে হওয়া কাহিনীর কথা শোনার পর ভোরেই আলিয়া রাজশাহী থেকে ঢাকা রওনা করে। আর এসেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। মুন আস্তে করে বলল,

—“আলিয়া কিছু হয়নি তো আমার। দেখো আমি একদম ঠিক আছি। তুমি শুধু শুধু হাইপার হচ্ছো। আর কেউ হয় তো ভুল করে লক করে দিয়ে ছিলো।”

আলিয়া দ্বিগুণ রাগে বলল,

—“ভুল করে মানে কি? এই একটা ভুলের জন্য কি হতে পারতো ধারণা আছে কোনো?”

আরিফা রেজওয়ান বললেন,

—“আলিয়া এখন একটু থামো। অনেক চেঁচামেচি করেছো। মুনের শরীর ভালো না আর তুমি ওর কানের কাছে এসে এরকম চেঁচামেচি করলে ও রেস্ট নিবে কি করে? তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হলে ওর
ভালো করে রেস্ট করা দরকার।”

আলিয়া চুপ হয়ে যায় আর মুনের পাশে গিয়ে বসে পরে। আরিফা রেজওয়ান আর আরমান রেজওয়ান রাতে পার্টি থেকে ফিরে এসব জানতে পেরে ঘাবড়ে গেছিলেন। পরে মুনকে সহি সালামত দেখে শান্ত হন। আঁধার রুমে এসে দেখে মুন আর আলিয়া ফোনে গেম খেলছে, তাও আবার পবজি। আঁধার সোজা গিয়ে ছো মেরে ওদের হাত থেকে ফোন নিয়ে বই ধরিয়ে দিলো। মুনের হাতে একাউন্টিং এর বই আর আলিয়ার হাতে পদার্থ বিজ্ঞানের। দু’জনেই বেকুবের মতো আঁধারের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো। আঁধার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেলো। রুশা সকাল সকালই কোথাও বেরিয়ে যায়। বাড়িতে এসে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগাবে এমন সময় আঁধার এসে বাঁধা দেয়। রুশা অবাক হয়ে বলল,

—“আঁধার তুমি এখানে? কিছু বলবে? এ্যাকচুয়ালি আমি অনেক টায়ার্ড।”

ক্লান্ত স্বরে বলল। আঁধার রুশার কথায় পাত্তা না দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

—“মুনকে তুমি স্টোর রুমে লক করেছিলে তাই না?”

রুনা আমতা আমতা করে বলল,

—“নো আঁধার। কি বলছো তুমি এসব। আ-আমি কেনো ওকে স্টোর রুমে লক করতে যাবো? আর কালতো আমি নিজেই অসুস্থ ছিলাম। সারাদিন রুম থেকে বের’ই হইনি। তুমি চাইলে চুমকি কে জিজ্ঞেস করতে পারো।”

—“না থাক। আই ট্রাস্ট ইউ। এন্ড সরি।”

—“এতে তোমার কোনো দোষ নেই। এমনিতেও কিছু হলে সব সময় বাইরের মানুষদের উপর’ই আগে সন্দেহ হয়।”

কান্নার ভান করে বলল। আঁধার রুশার কাঁধে হাত রেখে বলল,

—“রুশা সরি বাট আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।”

—“তুমি এখন যাও আঁধার আমি একটু একা থাকতে চাই।”

বলেই রুনা আঁধার করে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো।

#চলবে,

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_২৮

—“সাসুমা, শশুরবাবা চলো না দূরে কোথাও ঘুরতে যাই। আমাদের এক্সাম ও শেষ। এখানে আসার পর থেকে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। প্লিজ, প্লিজ চলো না।”

আরমান রেজওয়ান আর আরিফা রেজওয়ানের কাছে বায়না ধরে বলল মুন। ড্রইং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো সবার কথার ফাঁকে মুন ওর কথা বলে উঠলো। আলিয়া মুনের কথায় সায় দিয়ে বলল,

—“হ্যাঁ ড্যাড চলো না। অনেক দিন হয়েছে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না।”

আরিফা রেজওয়ান ভ্রু বাঁকিয়ে আলিয়ার কথার পৃষ্ঠে বললেন,

—“কিন্তু তুমি তো কিছুদিন আগেও রাজশাহী থেকে ঘুরে এলে।”

—“উফ্ মম! তখন তো আমি একা গিয়েছিলাম। আমি বলতে চাইছি একসাথে সবাইকে মিলে কোথাও পিকনিকে যাওয়ার কথা।”

মুন আরমান রেজওয়ানের কাছে গিয়ে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে ইনোসেন্ট হয়ে বলল,

—“বাবা প্লিজ চলো না আমরা সবাই মিলে পিকনিকে যাই। আমরা সবাই মিলে অনেক অনেক মজা করবো। তুমি আমার কথা রাখবে না বাবা?”

মুন এমন ভাবে বলল যে আরমান রেজওয়ানের মুখ থেকে একটা শব্দ ও বের হলো না। মুনকে না বলার সাধ্য তার নেই। আর সে না বলে মুনের ছোট্ট মনরে আঘাত দিতেও চায় না। তাই সে হাসি মুখে বলল,

—“ঠিক আছে মামনি। আমরা সবাই যাবো। কিন্তু……..”

মুন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,

—“আবার কিসের কিন্তু?”

—“তোমার রাক্ষসকে কে রাজি করাবে?”

মুন ভাব নিয়ে বলল,

—“ওনাকে রাজি করানো তো আমার বা হাতের খেল। আমি তা বলব উনি তাই শুনবেন।”

হেসে বলল মুন। আরমান রেজওয়ান শব্দ করে হেসে দিলেন। আলিয়া সুর টেনে বলল,

—“ওওওওওওওও আচ্ছা! তাই বুঝি ভাবি-জি?”

—“জ্বী নানাদ-জি।”

আরমান রেজওয়া বললেন,

—“তাড়লে তো হয়েই গেলো। এখন বলো কোথায় যেতে চাও?”

আলিয়া বলল,

—“সাজেক?”

আরমান রেজওয়ান ভেবে বললেন,

—“সিলেট? চা প্রেমিকদের দেশে!”

আরিফা রেজওয়ান চায়ের ট্রেটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললেন,

—“পাহাড়ে”

মুন গাল ফুলিয়ে বলল,

—“না। আমরা কক্সবাজার যাবো। সমুদ্রের দেশে। সন্ধ্যা বেলায় সূর্য অস্ত দেখবো। সূর্য যখন ধীরে ধীরে সমুদ্রের বুকে বিলিন হয়ে যাবে। চারদিকে লাল,কমলা রং ছড়িয়ে পরবে সব কিছু অন্য রকম লাগবে সেই সময় টা আমি মন ভরে উপভোগ করতে চাই।”

মুন মুগ্ধতায় ভরা কন্ঠে বলল কথা গুলো। আলিয়ার ও এখন কক্সবাজার যেতে ইচ্ছে করছে। ও অবশ্য অনেক বার গিয়েছে কিন্তু সূর্য অস্ত দেখতে পারেনি। সবার প্রথম মুন ঘুরতে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছে আর আবদার করেছে। এমনিতেও কক্সবাজার যেতে কারোরই আপত্তি নেই তাই সবাই ঠিক করে কক্সবাজার’ই যাবে। এর মধ্যে রুনা এসে ওদের ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে বলল,

—“আমি ও কি যেতে পারি তোমাদের সাথে?”

আলিয়া না বলতেই যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই মুন বলে উঠলো,

—“হ্যাঁ অবশ্যই! কেনো নয়? তুমি ও আমাদের সাথে যাবে।”

—“থ্যাঙ্ক ইউ মুন।”

—“থ্যাঙ্ক ইউ বলার কিছু নেই আপু।”

তারপর সবাই আবার আড্ডায় মেতে উঠলো।

.
দুপুরে আঁধার বাড়িতে আসতেই মুন আঁধারের পিছনে ঘুর ঘুর করতে লাগলো। আঁধার প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে মুনকে এক জায়গা সোজা করে দাঁড় করিয়ে মুনকে পা থেকে মাথা অবদি স্ক্যান করলো। তারপর ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

—“কি হয়েছে? আসার পর থেকে এভাবে আমার পিছে ঘুর ঘুর করছো কেনো? কি চলছে তোমার মাথায়?”

মুন হাত কচলাচ্ছে, পা দিয়ে টাইলসের উপর খুড়ছে। আঁধার মুনকে এমন করেতে দেখে বলল,

—“কিছু কি বলবে? এমন করছো কেনো? তা বলার সরাসরি বলো।”

মুন সুন্দর করে নরম কন্ঠে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,

—“রাক্ষস……..”

আঁধার ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মুন তাড়াহুড়ো করে বলল,

—“না মানে মি.হাসবেন্ড আমরা না ঠিক করেছি……”

আঁধার ভ্রু উঁচু করে বলল,

—“কি ঠিক করেছো তোমরা?”

—“আমরা ঠিক করেছি, আমরা সবাই মিলে না কক্সবাজার ঘুরতে যাবো।”

আঁধার কিছুক্ষণ মুনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

—“ক্যান্সেল”

মুন জোরে বলে উঠলো,

—“কিহ?

আঁধার আবারো একই রিপিট করে বলল,

—“আমি বলছি ঘুরতে যাওয়া ক্যান্সেল।”

—“কেনোওওওও? এটা কিন্তু ঠিক না মি.হাসবেন্ড। এটা অন্যায়।”

—“এটাই ফাইনাল।”

—“কিন্তু আমরা ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে ফেলেছি। সাসুমা, শশুরবাবা দুজনেই পারমিশন দিয়ে দিয়েছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? আপনার ইচ্ছে হলে আমাদের সাথে যাবেন না হলে নেই। কিন্তু আমি যাবো, যাবো, যাবো।”

আঁধার শন্ত গলায় বলল

—“তুমি যাবে না।”

মুন ভেঙ্গচি কেটে বলল,

—“আপনার কথায় হবে নাকি? সাসুমা, সাসুমা।”

বলেই আরিফা রেজওয়ানকে থাকতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আরিফা রেজওয়ান এসব বলল,

—“কি হয়েছে মামনি?”

মুন আরিফা রেজওয়ানের কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

—“দেখুনা আপনার এই রাক্ষস ছেলে কি বলছে।”

আরিফা রেজওয়ান আঁধারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—“কি বলেছে?”

—“বলছে আমাকে নাকি ঘুরতে যেতে দিবে না। তুমি একটু কিছু বলো না উনাকে। আমার এক্সাম ও তো শেষ তাহলে এখন একটু ঘুরতে গেলে সমস্যা কোথায়?”

আরিফা রেজওয়ান আঁধারকে বলল,

—“ঠিক’ই তো বাবান সমস্যা কোথায়? ওদের এক্সাম শেষ এখন ওদের একটু ঘুরতে যেতে মন চাইছে সেখানে বাঁধা দেওয়ার কোনো কারণ তো আমি দেখতে পারছি না। আর আমাদের ও একটু আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রয়োজন।”

আঁধার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

—“ঠিক আছে মম।”

মুন খুশি হয়ে আরিফা রেজওয়ানকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে বলল,

—“ইয়ে তারমানে আমরা কালকের পরের দিন কক্সবাজার ঘুরতে যাচ্ছি।”

—“কক্সবাজার কে যাচ্ছে? আমরা বান্দরবন যাচ্ছি।”

মুন আরিফা রেজওয়ানকে ছেড়ে চিৎকার করে বলল?”

—“হোয়াট? নো ওয়ে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি এটাই ঠিক করা হয়েছে।”

—“গেলে বান্দরবন যাওয়া হবে আর যদি বান্দরবন না যেতে চাও তাহলে চুপচাপ ঘরে বসে থাকো।”

মুন আরিফা রেজওয়ানকে বলল,

—“সাসুমা এটা কিন্তু ঠিক না। তুমি কিছু বলছো না কেনো? আমার পাহাড় একদমি পছন্দ না। আমি বান্দরবন যাবো না আমি কক্সবাজার যাবো।”

আরিফা রেজওয়ান কিছু বলবে তার আগেই আঁধার বলল,

—“মম প্লিজ তুমি কিছু বলবে না এ বিষয়ে। মুন এখন তুমি ঠিক করো যাবে কিনা?”

—“যাবো না আমি।”

বলে রাগ করে চলে গেলো মুন। চোখে জল টলমল করছিলো। আরিফা রেজওয়ান বলল,

—“শুধু শুধু মেয়েটাকে কাঁদালে।”

আঁধার কিছু বলল না শুধু হাসলো। মুন আলিয়ার রুমে এসে সব রাগ ঝাড়ছে। আলিয়া মুনকে শান্ত করতে চাইছে কিন্তু পারছে না। আলিয়া মুনকে বুঝিয়ে বলল,

—“মিষ্টি তুমি বুঝতে পারছো না ভাই তোমাকে বোকা বানাচ্ছে। ভাই ইচ্ছে করে অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা বলছে যাতে তুমি রেগে যাও আর আমাদের যাওয়া কেন্সেল হয়ে যায়।”

মুন ভেবে দেখে হ্যাঁ সত্যিই তো। মুন ঠিক করে ওরা বান্দরবঞেই যাবে।

.
মুন আর চুমকি স্টোর রুমের চারপাশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ মুনকে কে স্টোর রুমে লক করে ছিলো সেটা ও জানতে চায়। মুন টর্চ অন করে স্টোর রুমের ভিতরে প্রবেশ করে সব জায়গা ভালো করে দেখে যদি কোনো ক্লু পায়।

—“আপামনি”

মুন এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে বলল,

—“হুম! বল?”

—“আমি না একটা ব্যাসলাট পাইছি। দেখেন তো এইডা আপনের নাকি?”

মুন চুমকির হাত থেকে ব্রেসলেটটা নিয়ে ভালো করে দেখলো। লেডিস ব্রেসলেট। না এটা তো ওর না তাহলে কার? আর এখানে আসলো কি করে? ব্রেসলেটটা ব্লাক ডায়মন্ডের। খুব দামি এক্সপেন্সিভ ব্রেসলেট এটা। আর মুন যখন স্টোর রুমে লক হয়ে ছিলো তখন না আলিয়া বাড়িতে ছিলো আর না আরিফা রেজওয়ান। তাড়লে এটা কার হতে পারে? মুন চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো এই ব্রেসলেটটা কার হাতে দেখেছিলো। মুনের রুশার কথা মনে পরে। এই ব্রেসলেটটা মুন সেদিন ব্রেকফাস্ট করার সময় রুশা পানি খাচ্ছিল তখন ওর হাতে দেখেছিল। মুন এটা ভেবেই অবাক হচ্ছে যে রুশা কেনো ওকে শুধু শুধু স্টোর রুমে লক করলো। যাই হোক এ ব্যাপারে ওর আধারের সাথে কথা বলতে হবে।
রাতে আঁধার বাড়িতে আসার পর মুন আঁধারকে রুলার ব্রেসলেটটা দেখিয়ে বলে,

—“নিন এটার মালিক’ই আমাকে স্টোর রুমে লক করে ছিলো। যাকে আপনি খুঁজছিলেন।”

আঁধার জিজ্ঞেস করলো,

—“কার এটা?”

মুন স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

—“আপনার এক্স গার্লফ্রেন্ড রুলার।”

আঁধার চেঁচিয়ে বলল,

—“হোয়াট? রুশা কেনো তোমাকে স্টোর রুমে বন্ধ করতে যাবে?”

—“সেটা তো উনিই ভালো করে জানে। সেদিন বাড়িতে আমি, চুমকি আর রুশার ছাড়া কেউ ছিলো না।”

—“সার্ভেন্টরাও তো ছিলো। তাদের মধ্যে কেউ করেছে হয়তো।”

—“সাসুমা আর শশুরবাবা যাওয়ার পর আমি সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম। আচ্ছা সেসব কথা বাদ কিন্তু ওনার ব্রেসলেট স্টোর রুমে কি করে গেলো?”

—“তোমাকে যখন খুঁজছিলাম তখন ও আমাদের সাথেই ছিলো। তুমি স্টোর রুমে অজ্ঞান অবস্থায় পরে ছিলে।”

—“কিন্তু আমি তো শুনেছি উনি স্টোর রুমের ভিতরে সে সময় পা’ই রাখেন নি। আপনি কেনো তার দোষ ঢাকতে চাইছেন? বাইরের একটা মেয়ে এখন আপনার বিবাহিতা স্ত্রীর থেকে বড় হয়ে গেলো মি.হাসবেন্ড?”

আঁধার রেগে চিৎকার বলল,

—“মুন”

মুন ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

—“আপনি বলেন আমি বোকা, অবুঝ। কিন্তু আমি ওতো টাও বোকা নই মি.হাসবেন্ড। ভালো-মন্দ, ভুল-সঠিক বোঝার ক্ষমতা হয়েছে আমার। আপনি আপনার এক্স কে বাড়িতে এনে রেখেছেন কিন্তু আমি কখনো এই বিষয়ে কিচ্ছু বলিনি। নিজের স্বামীর এক্সের সাথে এক’ই ছাদের নিচে থাকছি। তাকে সর্বক্ষণ চোখের সামনে দেখছি এটা কতটা কষ্টে সেটা আপনি জানেন? অনুভব করতে পারবেন? না পারবেন না। আপনি কখনো আমাকে, আমার কষ্টগুলো মূল্যায়ন করেন নি।”

—“মুন এখন কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে! ধৈর্যের সীমা পার করো না।”

মুন দ্বিগুণ ক্রোধে ফেটে পরে। চিৎকার করে বলে,

—“বাহ্! খুব লাগছে দেখি! কিন্তু সত্যি এটাই যে সেই রাতের পর থেকে আপনি আমার সাথে বাজে ব্যবহার করা শুরু করেন। কথায় কথায় রাগ দেখান। সবসময় ইগনোর করার চেষ্টা করেন। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না। আমাকে যেখানে দেখেন সেখানে ভুলেও পা রাখেন না। সবসময় দূরে দূরে থাকেন। এতোটাই অনিহা আপনার আমার উপর? এক রাতেই মন ভরে গেছে?”

কথাটা বলতে দেড়ি হলেও মুনের গালে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ পরতে দেড়ি হলো না। মুন গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে কিন্তু ঠোঁটে হাসি রয়েছে। এটা তাচ্ছিল্যের হাসি। মুন হাসি মুখে বলল,

—“কথা গুলো গাঁয়ে কাঁটার মতো বিঁধছে তাই না?”

আঁধার আর এক মুহূর্তও ওখানে দাঁড়ালো না হনহনিয়ে চলে গেলো। মুন কিছুক্ষণ আঁধারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ল। আজ কেনো জানি কান্না পাচ্ছে না ওর। কিন্তু মাথাটা ভাড় লাগছে। বুকে চিনচিন ব্যথা করে। চোখটাও জ্বলছে হয়তো ঘুমে। মুন চোখ বন্ধ করলো সাথে সাথে এক ফোঁটা অশ্রু কনা গড়িয়ে বালিশে পরলো।
আঁধার ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। ওর কোনো দিকে কোনো খেয়াল নেই। রাগে কপালের সব গুলো রগ ফুলে উঠেছে। রক্ত গরম হয়ে গেছে। মুন কিভাবে বলতে পারলো যে ওর এক রাতেই ‘ওর’ উপর থেকে মন ভরে গেছে? একটা সমান্য বিষয় নিয়ে এতো বড় কথা কি করে বলতে পারলো মুন? কি করে?‌ মুন কিভাবে নিজেকে নিচা করতে পারলো? হ্যাঁ মানছে আঁধার রুশাকে বাড়িতে রাখায় মুনের কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তার পেছনেও তো একটা কারণ আছে। কেন বুঝতে চাইছে না মুন? আঁধার অন্যমনস্ক হয়ে ফুল স্পিডে গাড়ি চালানোর কারণে সামনে থেকে গাড়ি আস্তে দেখে তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘুড়াতে গিয়ে গাড়ি গিয়ে গাছের সাথে বারি খায়। আর ঝাঁকি খেয়ে আঁধারের মাথা গাড়ির স্টেরিং এ বারি লাগে। সাথে সাথে মাথা ফেটে ফিকনি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগে। ধীরে ধীরে আঁধার জ্ঞান হারায়।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here