#Mr_Husband,পর্ব_৩১,৩২
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৩১
রোদের নরম কোমল স্পর্শ মুনের মুখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেল মুনের। আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসতে গিয়ে মনে হলো কেউ ওকে লতার মতো পেচিয়ে ধরে আছে। মুন চোখ পিটপিট করে তাকিতেই চোখের সামনে আচমকাই আঁধারের মুখটা ভেসে উঠতেই চোখ বড় বড় করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো। হঠাৎ এরকম চিৎকার শুনে ধরফরিয়ে উঠলো আঁধার। মুন চেচিয়ে বলল,
—“আপনি?”
আঁধার ভ্রু বাকিয়ে বলল,
—“কেনো অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলে?”
—“হ্যাঁ অন্য কাউকেই আশা করে ছিলাম। কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?”
আঁধার গা ছাড়া ভাব করে বলল,
—“দেখতে পাওনি? ঘুমাচ্ছিলাম।”
মুন রেগে বলল,
—“আপনি এখানে কেনো এসেছেন? কিসের জন্য এসেছেন?”
—“আমি আমার একমাত্র হিটলার শশুরের বাড়িতে এসেছি। আর আমার একমাত্র বউকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।”
মুন ঠোঁট বাকিয়ে বলল,
—“কার বউ? কিসের বউ?”
—“আমার বউ। বিয়ে করা বউ।”
—“দেখুন, আপনি ফালতু কথা না বলে প্লিজ এখান থেকে যান তো। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।মুক্তি দিয়ে দিয়েছি আপনাকে।”
বলেই মুন মুখ ফিরিয়ে নিলো। আঁধার মুনের বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,
—“এতো সহজে সম্পর্ক শেষ বললেই শেষ হয়ে যায়? চার কালেমা পরে, তিন কবুল বলে, রেজিস্ট্রি পেপারে সই করে ইসলামি শরিয়াতের মতাবেক বিয়ে করেছি এতো সহজেই সব শেষ হয়ে যাবে নাকি? মানছি আমি ভুল করেছি আর এর জন্য আমি ক্ষমাও চাইছি। আই এম স্যরি। প্লিজ ক্ষমা করে দেও। তুমি যা বলবে আমি সব করতে রাজি আছি। তবুও প্লিজ এরকম করে মুখ ফিরিয়ে নিও না।”
মুন এবার চিৎকার করে বলল,
—“আপনার স্যরি আপনার কাছেই রাখুন। আমার কোনো প্রয়োজন নেই আপনার এই সো কল্ড স্যরির। আপনি আমাকে মাফ করুন আর দয়া করে যান এখান থেকে।”
আঁধার কিছু বলতে যাবে তার আগে শব্দ করে ‘তার’ ফোন বেজে উঠে। আঁধার আড় চোখে ফোনের দিকে তাকায়। মুন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
—“নিন দেখুন আপনার এক্স ফয়ন করেছে হয়তো। তাড়াতাড়ি ধরুন মিস হয়ে যাবে তো নাহলে। ওহ ব্যক্তিগত হবে হয়তো। আচ্ছা আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি আপনি নিশ্চিন্তে কথা বলুন।”
মুন উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। আঁধার চোখ দুটো বুজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোনটা হাতে নেয়। হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে। আঁধার কল রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায়।
.
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে দেখে আঁধার রুমে নেই। মন মনে করছে আঁধার চলে গেছে। আঁধারকে রুমে না দেখে মনের মধ্যে একরাশ অভিমান জন্ম নেয় মুনের। মন খারাপ করে তোয়ালে নিয়ে বারান্দায় যেতেই দেখে আঁধার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। আঁধার অন্যদিকে ঘুরে থাকায় মুন এসেছে সেটা খেয়াল করেনি। মুন সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবে এতোক্ষন ধরে কার সাথে এতো কথা বলছে? মুন পা টিপে টিপে আঁধারের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর একটু টানা মেরে কান পেতে শোনার চেষ্টা করে আঁধার কার সাথে কথা বলছে। কিন্তু ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটির কথা মুনের কানে এসে পৌছাচ্ছে না। আঁধার ফোন রেখে পিছনে ফিরতেই মুন ভড়কে যায় আর অসাবধানত পরে যেতে নেয়। কিন্তু মুন পরে যাওয়ার আগেই আঁধার মুনের কোমর পিচিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। মুন চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে। আঁধার মুনের কান্ড দেখে বাকা হেসে বলল,
—“বাহ্ মিসেস ওয়াইফি! তুমি জাসুসি ও করতে পারো?”
অবাক হওোআর অভিনয় করে বলল আঁধার। মুন আমতা আমতা করে বলল,
—“কো-কোথায়? আমি তো তোয়ালে মেলতে এসে হাওয়া খাচ্ছিলাম।”
আঁধার ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর বলল,
—“শুধু শুধুই কি তোমাকে স্টুপিড বলি? মিথ্যেটাও ঠিক করে গুছিয়ে বলতে পারো না। আমি আমার বউকে সবার থেকে আলাদা ভেবে ছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখছি সব বউ’রাই এক। সন্দেহবাদী।”
মুন ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ দৃষ্টিতে আঁধারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
—“আপনি কি করে জানলেন? কয়টা বউ আপনার?”
আঁধার ভাবার ভঙ্গি ধরে বলল,
—“উমম, ওনলি ওয়ান পিস। এর সেটা হলে তুমি।”
বলেই হেসে দিলো। মুন এক ধ্যানে আঁধারের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। এই বদমেজাজি, গোমড়া মুখো, রাক্ষসরাজ লোকটা হাসছে! পাতলা লাল মেয়েলি ঠোঁট জোড়া প্রসালিত করে হাসছে। যার কারণে ঠোঁটের কোণের তিলটা দুলছে। নীলাভ চোখ দুটিও চকচক করছে। যেন চোখ মধ্যে সমুদ্র বইছে। সত্যি হাসছে লোকটা? নাকি মুন কল্পনা করছে শুধু? কেন হাসছে এতো? কি হয়েছে লোকটার আজ হঠাৎ এতো সুন্দর করে হাসছে কেনো? আগে তো কখনো এমন করে হাসেনি। হাসলেও মুন তো কখনো দেখেনি। হাসলে আঁধারকে মেয়েদের থেকেও অধিক সুন্দর মনে হয়। আঁধারের চেহারায় বিদেশি বিদেশি একটা ভাব আছে। যেটা মুন আরিফা রেজওয়ানের চেহারায়ও খেয়াল করেছে। চুটকির আওয়াজে ভাবনায় ছেদ পরে। আঁধার মজা করে বলল,
—“এভাবে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থেকো না নজর লেগে যাবে।”
মুন থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর নিজকে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সন্দিহান চোখে চেয়ে বলল,
—“আচ্ছা আপনি ড.আঁধার রেজওয়ান তো?”
আঁধার ভ্রু বাকিয়ে বলল,
—“কেন সন্দেহ আছে?”
—“হ্যাঁ! আপনি আর যে-ই হন আঁধধার রেজওয়ান হতেই পারেন। এখন সত্যি সত্যি বলুন আপনি কে? আর কি মতলবে এখানে এসেছেন?”
—“হোয়াট? কি বলছো এসব? মাথা ঠিক আছে?”
—“দেখুন, ভালোয় ভালোয় বলছি আপনার উদ্দেশ্য কি বলে ফেলুন। নাহলে কিন্তু মেরে হাড্ডি গুড়ো করে ফেলব।”
শাসিয়ে বলল মুন। আঁধারের কিছু বলার আগে দরজায় করাঘাত পরলো।
—“মুন দরজাটা খোল। মুন।”
মুন বিষ্মিত হয়ে উচ্চারণ করলো,
—“তাহেরা আপু”
মুন ছুটে গিয়ে দরজা খুলে তাহেরাকে জড়িয়ে ধরলো বলল,
—“কেমন আছো? ছোট বোনকে তো একেবারে ভুলেই গেছ। একবার ফোন করেও খবর নেও না।”
আসতেই ছোট বোনের অভিমানী কন্ঠে এতো এতো অভিযোগ শুনে হেসে দিলো তাহেরা। মুনের গাল টিপে বলল,
—“ওলে আমার কিউট বনুটারে! খুব রাগ করেছে আমার উপর?”
মুন তাহেরাকে ছেড়ে দিয়ে সরে এসে গাল ফুলিয়ে বলল,
—“অনেক”
তাহেরা মুনের গাল ফুলানো দেখে হেসে দিয়ে বলল,
—“থাক আর রাগ করতে হবে না। তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
আচমকা সারপ্রআইজের নাম শুনে মুনের চোখ দুটো জ্বলে উঠে। লাফিয়ে বলে,
—“কি সারপ্রাইজ?”
তাহেরা মুনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
—“তুই খালামনি হবি।”
প্রথমে মুন কথাটা বুঝতে পারেনা। মাথা চুলকে মুখ বাকিয়ে বলে,
—“এ্যাঁ!”
—“হ্যাঁ”
মুন বুঝতে পেরেই জোড়ে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে। আঁধার ওয়াসরুমে ছিলো মুনের চিৎকার শুনে ধরফরিয়ে বেরিয়ে আসে। আঁধার গোল গোল চোখ করে মুনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুন বুঝতে পারে ও এক্সাইটমেন্টে একটু বেশিই করে ফেলছে। মুন একবার তাহেরার দিকে তাকায় আবার আঁধারের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলল,
—“কিছু হয়নি তাই না। হ্যাঁ কিছুই হয়নি।”
আঁধার মুনের দিকে কেমন করে যেন তাকাতে তাকাতে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। তাহেরা মুনের মাথায় চাটি মেরে বলে,
—“পাগলী একটা।”
মুন খিলখিল করে হেসে দেয়। তারপর বলে,
—“জিজু কোথায়? আসেনি?”
—“ড্রয়িংরুমে আছে বাবার সাথে বসে কথা বলছে।”
মুন দৌড়ে গিয়ে রাফির পাশে বসে কাধ দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
—“আমার ট্রিট কোথায় জিজু?”
রাফি অবাক হয়ে বলল,
—“ট্রিট?”
—“হ্যাঁ ট্রিট। বাবা হচ্ছো আর ট্রিট দিবে না?”
রাফি এবার হেসে বলল,
—“তাহলে ট্রিট তো তোমারও দেওয়ার কথা।”
মুন কপালে ভাজ ফেলে বলল,
—“কেন আমি দিবো কেনো?”
রাফি মুনের গাল টেনে বলল,
—“কারণ তাহলে তুমিও তো খালামনি হচ্ছো।”
মুন আবারো গাল ফুলিয়ে বলল,
—“ড্যাটস্ নট ফ্যার জিজু। আপু কিছু বল জিজুকে।”
তাহেরা বোনের পাশে বসে বলল,
—“রাফি ওকে রাগিও না তাহলে কিন্তু এ বাড়িতে বম ব্লাস্ট হবে।”
—“ওকে, ওকে রাগ করো না আমার কিউট শালিকা। যাও আজকে আমার তরফ থেকে সন্ধ্যায় আইসক্রিমের ট্রিট রইলো। এবার খুশি?”
মুন খুশি হয়ে বলল,
—“ইয়েএএএ”
#চলবে
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৩২
ড্রয়িং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর তাহমিনা খান কিচেনে ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। তাহমিনা খান এসেই মুনের কান টেনে ধরে বললেন,
—“ফাজিল মেয়ে কিচেনে এসে আমাকে একটু হেল্পও তো করতে পারিস। তা না করে এখানে বসে দাঁত কেলানো হচ্ছে? আমি বুঝি না ও বাড়ির লোকেরা কি তোকে কিছু বলে না নাকি!”
মুন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
—“উফ্! আম্মু লাগছে তো।”
তাহেরা ও বলল,
—“মা ছেড়ে দেও না ওর লাগছে তো।”
—“ওর লাগাই ভালো। সারাদিন শুধু হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা, টিভি দেখা, মোবাইল টিপা এগুলো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তোর তাই না? আমি বুঝি না ও বাড়ির কেউই কি তোকে কিছু বলে না নাকি!”
মুন বেবী ফেস করে বলল,
—“নাহ। ও বাড়ির সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। শুধু ও বাড়ির কেন দুনিয়ার সবাই আমাকে ভালোবাসে শুধু তুমি ছাড়া।”
—“হ্যাঁ,আমি তোর সৎমা তো তাই তোকে ভালোবাসি না। এবার কিচেনে চল সবাইকে নাস্তা দিতে হবে।”
কবির খান বিরক্ত হয়ে বললেন,
—“আহ্! আবার কি শুরু করলে তুমি।”
তাহমিনা কিছুটা রেগে বললেন,
—“তুমি তো কোনো কথাই বলবে না। আদরে আদরে মেয়েকে একটা অকর্মার ঢেকি বানিয়েছো। ওকে কি কখনো এগুলো করতে হবে না নাকি? আর তুই এখনো বসে আছিস কেন তাড়াতাড়ি চল আমার সাথে।”
মুন ঠোঁট উল্টে বলল,
—“যাচ্ছি তো।”
.
ব্রেকফাস্ট শেষে যে যার ঘরে চলে গেল। আঁধারের হসপিটালে যেতে হবে তাই মুন রুমে আসার পরে ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—“আমি এখন হসপিটালে যাচ্ছি। খুব শিগ্রই চলে আসবো।”
বলেই আচমকা মুনের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেল। মুন সক খেয়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আবর আঁধারের পিছু ছুটে গিয়ে চেচিয়ে বলে,
—“আপনি না আসলেও চলবে।”
কিন্তু আঁধার মুনের কথা না শুনেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়। মুন ঠোঁট উল্টে ভেতরে চলে যায়। নিজের রুমে গিয়ে আলিয়াকে ফোন করে। আলিয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। আরিফা রেজওয়ানের সাথেও টুকটাক কিছু কথা বলে ফোন রেখে দেয়। কিন্তু এখন কি করবে একা একা ভালো লাগছে না মুনের। তাই মুন উঠে তাহেরার কাছে গেল। তাহেরা উপন্যাসের বই পড়ছিল মুন নক করতেই সেদিকে তাকিয়ে বলল,
—“এসে পর নক করার কি আছে?”
মুন গলা ঝেড়ে বলল,
—“মনে করে ছিলাম জিজু হয়তো রুমেই আছে। তাই ভাবলাম নক করেই ঢুকি। কারণ ধরো বাই এনি চান্স তোমরা দুজন রোমান্স করছিলে আর আমি সে সময় রুমে ঢুকে তোমাদের সে অবস্থায় দেখে ফেলি তাহলে ভাবো কি হবে?”
তাহেরা অবাক হয়ে বলল,
—“কি বিচ্ছু হয়েছিস তুই বড় বোনকে এসব বলতো লজ্জা করে না তোর? খুব বেশি পেকে গেছো তাই না?”
মুন মজা করে বলল,
—“যদি ঠিক সময় বাসর হতো, তাহলে তোমার বাবুর মতো আমারও একটা বাবু আসতো।”
তাহেরা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মুনের কথা শুনে ওর মাথা ঘুরছে। তাহেরা বলল,
—“তোর বাবুর খুব শখ তাই না? দাঁড়া আসতে দে আঁধার ভাইয়াকে তারপর বলছি তোর এই শখের কথা।”
মুন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাহেরা বই দিয়ে মুনের পিঠে মারছে তারপরও মুনের হাসি থামছে না।
.
আঁধার হসপিটালে এসে প্রথমেই নিজের জামা,প্যান্ট চেন্জ করে নেয়। কারণ কাল থেকে সেই একই কাপড় পড়ে আছে সে। আঁধার সব সময় হসপিটালে নিজের কিছু কাপড় রেখে দেয়। কারণ যে কোনো সময় প্রয়োজন পরতে পারে। যেহেতু আঁধারের কালো রঙটা অনেক বেশি পছন্দ আর সেহেতু তার বেশির ভাগ কাপড়ের রঙ’ই কালো। তাই আজও কালোর ব্যতিক্রম যায় নি। কালো প্যান্ট, কালো শার্ট আর তার উপরে সাদা এপ্রোন। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। গলায় স্যাটোস্কোপ ঝুলছে। হালকা বাদামী রঙের চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা। কিন্তু তারপরও কিছু অবাধ্য চুল কপালের এসে পরছে। আঁধার কাল যে পেসেন্টের সার্জারি করেছিল তাকে দেখতে যায়। একটা নতুন মেয়ে ইন্ট্রান আঁধারকে দেখে ইচ্ছে করে ওর সামনে পরে যেতে নেয়, এই আশায় রে আঁধার তাকে ধরবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। আঁধার সে দিকে পাত্তা না দিয়েই চলে যায়। আর মেয়েটা হাই হিল পরে থাকায়, পরে গিয়ে পা মচকে যায়। মেয়েটা রাগে,দুঃখে, ব্যথায় ওখানে বসেই কেদে দেয়। আরেকটা মেয়ে এসে ওই মেয়েটার পাশে হাটু ভেঙ্গে বসে বলল,
—“গাধী উনি বিবাহিত। তুই শুধু শুধু নিজের পা’টা ভাঙলি আর লাভ ও হলো না।”
মেয়েটা কাদোঁ কাদোঁ হয়ে বলল,
—“তাই বলে এমন করবে? একটু ধরলে কি এমন হতো? মানবতা বলতেও তো কিছু আছে।”
—“ছাড় তো, তুই মন খারাপ করিস না। উনি এমনই, অ্যারোগেন্ট টাইপের।”
মেয়েটা কেদেঁ কেদেঁ বলে উঠলো,
—“আহ্! আমার পা!”
.
সন্ধ্যায় হসপিটাল থেকে বেরিয়ৃ মুনের জন্য লাল টকটকে একটা তাজা গোলাপ, একটা কার্ড আর অনেক গুলো চকলেট নিয়ে মুনদের বাড়িতে যায়। কারণ মুন তার উপর রাগ করে আছে। যার জন্য ঠিক করে কথাও বলছে না। আজ সারাদিন মুন তাহেরার সাথে গল্প করে আর মাঝে মধ্যে তাহমিনা খানকে কাজে সাহায্য করে কাটিয়েছে। মুন নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক স্কান করছিলো এমন সময় আঁধার রুমে প্রবেশ করে। মুন দেখেও না দেখার ভান করে নিজের মতো শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাটছে। আঁধার ছোট সপিং ব্যাগটা মুনের পাশে রেখে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। মুন আড় চোখে ব্যাগটার দিকে তাকায়। আঁধার ওয়াশরুমে ঢুকতেই মুন তাড়াতাড়ি ব্যাগটা নিয়ে দেখে ভেতরে কি আছে। মুন দেখতে পায় ব্যাগের ভেতরে একটা গোলাপ, একটা কার্ড আর অনেক গুলো চকলেট রয়েছে। মুন কার্ডটা বের করে দেখতে লাগলো। স্যরি কার্ড এটা। মুন কার্ডটা খুলে দেখে ভিতরে কি লেখা আছে।
~”আমার ছোট্ট বউপাখি,
সর্ব প্রথমই নিজের করা ভুল গুলোর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। জানি এতো সহজে কিছুতেই তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না। তবুও আমার তরফ থেকে ছোট্ট প্রচেষ্টা তোমাকে মানানোর। তুমি কি জানো? তোমার ওই কাজল কালো হরিণী চোখ দুটোয় আমি নিজের সর্বনাশ দেখেছি? তোমার ওই ঘন কালো চুলের মাদকতায় আমি শতবার কলংকিত হয়েছি। তোমার ওই ভরাট গোলাপী ঠোঁট জোরা বারবার আমাকে চুম্বকের মতো আকর্ষক করে। তোমার ওই ঠোঁট জোরায় ধীরে ধীরে নিজের ভালোবাসার পরশ এঁকে দিতে চাই সারাজীবন। কলংকিত হতে চাই তোমার ওই চুলের মাদকতায়। তোমার ওই কাজল কালো চোখে চোখ রেখে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনতে চাই। সারাজীবন তোমার ওই তোমাতে ডুবে থাকতে চাই। দিবে কি আমাকে আরেকটি সুযোগ? আমার সব ভুল ক্ষমা করে নিবে তো আপন করে? সত্যি বলছি এবার আর অভিযোগ করার কোনো সুযোগ দেব না। ভালোবাস ভরিয়ে দিবো তামার ছোট্ট মনটাকে। শক্ত করে আমার এই বুক পাজরে তোমাকে জড়িয়ে রাখবো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। যা আগে কখনো বলি নি তা আজ বলতে চাই ‘আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ এ লট। আই ওয়ান্ট টু লিভ উইথ ইউ ইন মাই হোল লাইফ”~
দরজা খোলার শব্দে তাড়াতাড়ি সব ব্যাগের মধ্যে ভরে ব্যাগটা যেখানে ছিলো সেখানের রেখে চোরের মতো করতে লাগলো মুন। আঁধার টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে। আঁধার খেয়াল করে মুন চোরের মতো কাচুমাচু করছে। আঁধার জানে মুন ব্যাগটা খুলে দেখেছে যে ওটার মধ্যে কি আছে আর কার্ডটাও পরেছে। আঁধার মুনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আঁধারের পরনে শুধু একটা টাওয়াল তা ছাড়া আর কিছু নেই। আঁধারের লোমবিহীন ফর্সা বুকে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। কপালে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো থেকে ও টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে। শাওয়ার নেওোআর কারণে নীলাভ চোখ দুটো আরো সচ্ছ লাগছে। মুন আঁধারকে এ অবস্থায় দেখে চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে উঠে একটা পিলো দিয়ে নিজের চোখ ঢেকে বলল,
—“আপ-আপনি এভাবে কাপড় ছাড়া কেন এসেছেন আমার সামনে। লজ্জা করে না আপনার?”
আঁধার ভ্রু কুঁচকে নিজের দিকে তাকায়। না চাইতেও মুনের চোখ বারবার আঁধারের বুকে গিয়েই আটকাচ্ছে। মুন পিলো দিয়ে চেপে নিজের মুখ ঢেকে রেখেছে। আবার কিছুক্ষণ পর পর পিলো ফাক দিয়ে দেখছে আঁধার কি করছে। আঁধার কে নিজের দিকে এগোতে দেখে মুন পিছিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে বলে ওঠে,
—“আপনি এগোচ্ছেন কেন?”
আঁধার ভ্রু চুলকে বলল,
—“তুমি পেচ্ছো তাই।”
মুন জোরে চিৎকার করে বলে,
—“আআআআআ! একদম কাছে আসবেন না নাহলে কিন্তু আমি চেচাবো।”
আঁধার আচমকাই গিয়ে মুনের মুখ চেপে ধরে। ও যেভাবে চেচাচ্ছে দেখা যাবে কিছুক্ষণ পর ওর চিৎকার শুনে সবাই এসে পরবে। মুখ চেপে ধরায় মুন মুখ দিয়ে ‘উম,উম’ শব্দ করছে। আঁধার পাশ থেকে একটা সপিং ব্যাগ নিয়ে মুনকে দেখি বলল,
—“স্টুপিড কোথাকার, চেচাচ্ছো কেন? এটা নিতে এসেছিলাম। এখানে আমার কোনো কাপড় নেই তাই হসপিটাল থেকে এই ব্যাগে করে কিছু কাপড় নিয়ে এসেছি। আর তুমি যা ভাবছিলে তা এখন নয় পরে, আগে বড় হয়ে নেও।”
শেষের কথাটা বলেই চোখ টিপ মেরে বাকা হেসে ব্যাগ নিয়ে সরে যায়। মুন এখনো বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে আঁধারের কথা শুনে। ওর চোখের পলক পরছে না।
#চলবে,