#Mr_Husband,পর্ব_৩৬,৩৭
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৩৬
~6 years later~
‘In England’
—“রাত কি করছো? রাত, প্লিজ ছাড়ো। কি করছো তুমি।”
মুন একনাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু রাত সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কাপড় দিয়ে মুনের চোখ বেধেঁ দিলো। তারপর রাত আচমকাই মুনকে কোলে তোলে নিলো। মুন রাতের এমন কান্ডে ভয় পেয়ে রাতের গলা জড়িয়ে ধরেলো। রাত মুনকে কোলে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। মুন চেচিয়ে বলে উঠলো,
—“কি করছো রাত? কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমাকে? তাড়াতাড়ি নামাও বলছি। কেউ দেখে ফেলবে।”
রাত ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“তো?”
মুন চেচিয়ে বলল,
—“তো মানে, লোকে কি ভাববে? এক্ষুণি নামাও বলছি আমাকে।”
রাত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
—“আমার বউ, আমি কোলে নিয়েছি তাতে কার কি? আর ম্যাম এটা আপনার বাংলাদেশ না যে মানুষ দেখলে জেরা শুরু করবে, খারাপ ভাববে, সমালোচনা করবে। এটা ইংল্যাণ্ড। আর এখানে এসব কমন ব্যাপার। তাই নো টেনশন।”
মুন তাও সমানে হাত-পা ছুড়তে লাগলো। লাফালাফি করে কোল থেকে নামার চেষ্টা করলো কিন্তু রাতের সাথে পেরে উঠলো না। রাত হাটতে হাটতে বলল,
—“সুইটহার্ট! তুমি কি চাও তোমাকে ফেলে দিয়ে আমি তোমার কোমরের হাড্ডিসগুলো ভেঙে ফেলি।”
মুন ভয় পেয়ে যায়। আর রাতের শার্ট খামচে ধরে। রাত বাঁকা হেসে মুনকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। সাথে সাথে কিছু লোকের শব্দ পাওয়া গেল। ওদের দুজনকে এভাবে দেখে সবাই ‘উউউ’ শব্দ করতে লাগলো। রাত মুনকে ট্যারেসে নামিয়ে দিলো।
—“এখন তো বলবে, কোথায় নিয়ে এসেছো আমাকে?
—“এক্ষুণি দেখতে পাবে।”
বলেই রাত মুনের হাত ধরে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে থেমে গেল। প্রথমে মুনের মুখ খুলে দিলো। মুন যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। মুখ খুলতেই মুন প্রশ্ন করতে শুরু করলো,
—“রাত কোথায় নিয়ে এসেছো আমাকে? আর চোখ কেনো বেধেঁ রেখেছো?”
বলতে বলতেই রাত মুনের চোখ থেকে কাপড়টা খুলে ফেলল। সাথে সাথেই রাত আর ওখানে উপস্থিত সবাই এক সাথে বলে উঠলো,
—“হ্যাপি বার্থ ডে মুন”
মুন অবাক চোখে রাতের দিকে তাকিয়ে সবার দিকে তাকাচ্ছে। মোটামুটি মানুষ ভালোই আছে এখানে। মুনের সামনে একটা মাঝারি সাইজের টেবিল টেবিলের উপর একটা ভ্যানিলা ফ্লেভারের বড় একটা তিন তালা কেক। মুন রাতের দিকে রেগে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে তখনই মুনের কানে একটা ডাক ভেসে এলো।
—“মাম্মাম”
মুন ঘার ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো। পাঁচ বছরের একটা পিচ্চি মেয়ে দৌড়ে তার দিকে আসছে। মুন সব ভুলে হাটু গেড়ে নিচে বসে দু হাত মেলে দিলো। মেয়েটি এসেই মুনের গলা জড়িয়ে ধরলো। রাত মুনের পাশে বসে আস্তে করে বলল,
—“আমি জানি তুমি নিজের বার্থ ডে সেলিব্রেট করা, কেক কাটা এগুলো পছন্দ করো না। কিন্তু মুন, মিষ্টি অনেক এক্সাইটেড হয়ে তোমাকে খুশি করার জন্য এগুলো করেছে। এখন তুমি যদি কেক না কাটো তাহলে কিন্তু মিষ্টি কষ্ট পাবে। প্লিজ ওর খুশি নষ্ট করো না।”
মিষ্টি ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলল,
—“মাম্মাম, মি এ্যান্ড পাপা প্লান’ড দিস সারপ্রাইজ ফর ইউ। ডু ইউ লাইক ইট?”
মিষ্টি হাসলে ওর ঠোঁটের কোণে থাকা তিলটাও হাসে। সাথে গালে গভীর গর্ত হয় যাকে বাংলায় মানুষ টোল বলে থাকে। মুনের চোখ দুটো চিকচিক করতে লাগলো। ইতি মধ্যে জলে ভরে উঠেছে চোখের কোটর। মুন ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে মিষ্টির কপালে চুমু খেয়ে বলল,
—“ইয়াহ! আই ডু!”
রাত মিষ্টির দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বলল,
“মাই লিটল প্রিন্সেস, কাম হেয়ার।”
মিষ্টি রাতের কাছে গেলো রাত মিষ্টিকে কোলে নিয়ে অনেক গুলো কিসি দিলো। ঊর্মি এসে বলল,
—“কিরে তোদের হয়েছে? কেক কাঁটবি নাকি? আর কতোক্ষণ ওয়েট করবে সবাই?”
রাত বলল,
—“এই তো এখনি কাটবো। চল।”
মুন, রাত আর মিষ্টি মিলে কেক কাটলো। মুন ককে কেটে সবার প্রথমে মিষ্টিকে খাওয়ালো। মিষ্টি মুনকে কেক খাওয়ালো সাথে গালেও মাখিয়ে দিলো। মুন চোখ পাকিয়ে মিষ্টির দিকে তাকাতেই দুষ্টু মিষ্টি খিল খিল করে হেসে দিলো। এই সুযোগে রাতও একটু কেক নিয়ে মুনের নাকের ডগায় লাগিয়ে দৌড় দিলো। মুন এবার প্রচন্ড পরিমানে ক্ষেপে গেল আর কেক নিয়ে রাতের পেছনে দৌড়াতে লাগলো। সবাই ওদের কান্ড দেখে হাসছে। মিষ্টি একটু কেক নিয়ে ঊর্মির গালে লাগিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,
—“ঊল্মি আন্ট মিষ্টিকে ধরো।”
—“তবে রে দুষ্টু মেয়ে।”
বলেই ঊর্মিও মিষ্টির পেছনে দৌড়াতে লাগলো। সবাই একে অপরকে কেক মাখাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
.
‘In BD’
প্রাইভেট হসপিটালের সামনে একটা বড় Merseyside car এসে থামলো। সাথে সাথে একটা দারোয়ান দৌড়ে এসে গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিলো। স্টাইলের সাথে গাড়ি থেকে নেমে এলো এই হসপিটালের হেড ওফ ডক্টর, আঁধার রেজওয়ান। কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট আর কালো কোর্ট পরনে। শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খোলা। হাতে দামি কালো ঘড়ি। নীলাভ মনি বিশিষ্ট চোখে চশমা। আঁধার কয়েক বছর ধরে চশমা পরা শুরু করেছে। গালে খোচা খোচা চাপ দাড়ি ও আছে। আগের থেকে অনেক বেশি সুদর্শন হয়ে উঠেছে। মুন চলে যাওয়ার পর আরো রাগী, বদমেজাজী আর গম্ভীর হয়ে গেছে। সারাক্ষণ মুখে রাগী আর গম্ভীর ভাবটা বজায় থাকবেই। আঁধার হসপিটালে ঢুকা থেকে নিজের কেবিনে যাওয়ার পথে যত মানুষ পরেছে সবাই আঁধারকে গুড মর্নিং জানায়। কিন্তু আঁধার কোনো উওর না দিয়ে সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়। হসপিটালের বেশিরভাগ মানুষ’ই আঁধারের রাগের কারণে ওকে খুব ভয় পায় সাথে সম্মান ও করে। এই ছয় বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। আঁধার বদলে গেছে, ওর চালচলন-কথাবার্তা বদলে গেছে, কাজের পজিশন বদলে গেছে। সব কিছুই বদলে গেছে। যেটা বদলায় নি সেটা হলো মুনের প্রতি আঁধারের ভালোবাসা। সেটা আরো গভীর হয়েছে। আঁধার মুনকে চায়, পাগলের মতো চায়। এই ছয় বছরে এমন একটা সময় যায়নি যে সময় আঁধার মুনের কথা মনে করেনি। এমন একটা রাত কাটেনি যে রাতে ঘুমিয়েছে। এমন একটা দিন যায় নি যেদিন মুনকে খুজেনি। আঁধারের প্রতিদিনের রুটিন একটাই। সকালে উঠে মুখ না ধুয়েই খান বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আর কবির খান বের হলেই ওকটা প্রশ্ন করা “মুন কোথায় শশুরমশাই?” আর প্রতিবারের মতো কবির খানের থেকে একটাই উওর পায় আঁধার “জানি না”। কবির খানের উওর শুনে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া। এই ছয় এই রুটিনের ব্রেতিক্রম যায়নি। আঁধার চেয়ারে বসে ফাইল চেক করছে এমন সময় কেউ দরজায় টোকা দেয়। আঁধার না তাকিয়েই বলল,
—“কাম ইন।”
লোকটি ভিতরে এসে দাঁড়িয়েই আছে। আঁধার কাজ রেখেছেন ভ্রু কুঁচকে একবার চোখ তুলে তাকিতে আবার কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল,
—“দাড়িয়ে আছিস কেনো? বস।”
লোকটি আঁধারের সামনের চেয়ারের ধুপ করে বসে পরলো। আঁধার কাজ করতে করতে বলল,
—“হঠান এখান আসার কারণ?”
লোকটা আমতা আমতা করে বলল,
—“তুই’ই তো আসতে বলেছিলি। কেনো ভুলে গেছিস আজ মুনের বার্থ ডে?”
সাথে সাথে আঁধারের সব কাজ বন্ধ হয়ে গেলো। আঁধার চাপা শ্বাস ত্যাগ করে বলল,
—“না। মনে আছে। তোরা গিয়ে সব ব্যবস্থা কর আমি মিটিং শেষ করে আসছি।”
—“ঠিক আছে।”
বলে উঠে চলে যেতে নিলেই আঁধার আবার ডাক দিলো,
—“ইসী!”
ইসী ঘুরে জিজ্ঞেসুর দৃষ্টিতে তাকালো। আঁধার বলল,
—“কোনো খবর পেলি?”
ইসী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
—“নাহ!”
তারপর চলে গেল। আঁধার ইসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দিলো। আঁধার বুঝে না, মুনের কথা উঠলেই ও এতো ভেঙ্গে পরে কেনো?
#চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৩৭
মুন কিচেনে এক হাতে সবার জন্য রান্না করছে। ঊর্মি অবশ্য ওকে সাহায্য করছে। মিষ্টি চিকেন বিরিয়ানী খুব পছন্দ করে। তাই মুন চিকেন বিরিয়ানীই রান্না করছে সবার জন্যব মুন রান্না করতে করতে ভাবতে লাগলো, আরো একজনেরও তো এই চিকেন বিরিয়ানী খুব পছন্দ ছিলো। তার জন্যই তো শিখে ছিলো রান্না। আর রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে বসেছিল, কি বকাটাই না খেয়ে ছিল সে বার। ভাবতেই আনমনে হেসে দিলো। কিন্তু যখনই আঁধারের সেই রুপের কথা মনে পরলো, হাসি গায়েব হয়ে গেলো। মুন আঁধারকে ভুলতে চায়। ওর সব স্মৃতি গুলো মুছে ফেলতে চায় নিজের জীবন থেকে। আঁধারের সাথে যুক্ত সব জিনিস ফেলে এসেছে। কিন্তু আঁধারের সাথে যুক্ত এক জ্বলজ্যান্ত জিনিস নিজের সাথে নিয়ে এসেছে। যেটা সারাক্ষণ মুনকে আঁধারের কথা মনে করিয়ে দেয়। মুন বুকে পাথর চেপে প্রতিবার চিকেন বিরিয়ানী রান্না করে। কারণ শুধু মিষ্টির পছন্দ তাই। মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে মুন সব কষ্ট সহ্য করতে পারবে। ঊর্মি মুনকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
—“তাড়াতাড়ি কর সবার খুব খিদে পেয়েছে। আর মনে হচ্ছে মিষ্টি তো না খেয়েই ঘুমিয়ে পরবে। মুন হাত চালাতে চালাতে বলল,
—“এই তো হয়ে গেছে। তুই গিয়ে সবাইকে বসতে বল আমি বিরিয়ানী নিয়ে আসছি।”
—“হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি কর।”
বলে ঊর্মি চলে গেল। মুন খাবার বারছে আর ঊর্মি সবাইকে দিচ্ছে। সবাইকে দেওয়া হলে ঊর্মি ও খেতে বসলো। মুন এক প্লেট বিরিয়ানী নিয়ে মিষ্টিকে খুজতে লাগলো। খুজতে খুজতে দেখতে পেলো রাত মিষ্টিকে ধরার জন্য ওর পেছনে ছুটছে আর মিষ্টি দৌড়াচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে। রাত দৌড়াতে দৌড়াতে মিষ্টিকে ধরে ফেলল। রাত মিষ্টিকে কাতুকুতু দিচ্ছে আর মিষ্টি জোরে জোরে হাসছে। মিষ্টির সাদে রাত ও হাসছে। মুন এগিয়ে এসে বলল,
—“অনেক খেলা হয়েছে। এখন মিষ্টি খাবে।”
মিষ্টি নাক, মুখ কুঁচকে বলল,
—“নো। মিষ্টি খাবে না মিষ্টি এখন আরো খেলবে।”
রাত বলল,
—“ঠিক আছে, মিষ্টি খেলতে খেলতে খাবে।”
মিষ্টি মুখ কুঁচকে রেখেই বলল,
—“নো।”
মুন রাগ দেখিয়ে বলল,
—“মিষ্টি, মাম্মাম কিন্তু এখন রেখে যাবে।”
মিষ্টি রাতের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—“তাহলে পাপা মাম্মাম’কে বোকে দিবে।তাই না পাপা?”
মুন কড়া চোখে রাতের দিকে তাকালো। রাত এক ঢোক গিলে মিষ্টির কানে ফিসফিস করে বলল,
—“প্রিন্সেস, এ্যাংরি বার্ড রেগে যাচ্ছে। তুমি এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও না হলে আমাদের দুজের উপরই বোম ব্লাস্ট হবে।”
মিষ্টি গালে আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে আড়চোখে মুনের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“ওকে! বাট তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।”
মুন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রাত হেসে মিষ্টির গালে চুমু দিয়ে বলল,
—“যথা আগ্গা আমার রাজকুমারী। মুন খাবারটা এদিকে দেও।”
মুন কিছু না বলে প্লেটটা রাতের হাতে দিলো। রাত গল্প বলে আর দুষ্টুমি করতে করতে মিষ্টিকে খাওয়াতে শুরু করলো। মিষ্টি খাচ্ছে আর মুনকে ভেঙ্গাচ্ছে। মুন গরম চোখে তাকালেও কাজ হচ্ছে না। রাত আর মিষ্টি কানাঘুসো করছে আর হাসছে। মিষ্টি চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই দুজনেই মুখ চেপে হেসেই যাচ্ছে। রাত মিষ্টিকে খাইয়ে দিয়ে বলল,
—“প্রিন্সেস মাম্মামের সাথে গিয়ে ঘুমিয়ে পরো। পাপা আসছি।”
মিষ্টি নাকচ করে বলল,
—“নো পাপা। আজ তুমি আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে।”
মুন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
—“রাত তুমি মিষ্টিকে ঘুম পাড়িয়ে দেও। আমি ততক্ষণে সব গুছিয়ে আসছি।”
মিষ্টি কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
—“না। মাম্মাম তুমিও আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে।”
মুন ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“তুমি না বললে পাপা ঘুম পাড়িয়ে দিবে?”
মিষ্টি কপালে হাত দিয়ে বলল,
—“উফ ফো! আজ তোমরা দুজনেই আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে।”
রাত মিষ্টিকে সামলাতে বলল,
—“প্রিন্সেস মাম্মামের অনেক কাজ আছে। চলো আমি তোমাকে আজ গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই।”
মিষ্টি রেগে উল্টো দিকে ঘুরে বলল,
—“নো। মাম্মাম পাপা দুজনেই আজ মিষ্টিকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে।”
“মিষ্টি…”
মুন রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাত মুনকে সাইডে নিয়ে বলল,
—“মুন কাম ডাউন! তুমি রেগে যাচ্ছ কেনো? ও বাচ্চা, বায়না তো একটু করবেই। যাস্ট মিষ্টি ঘুমিয়ে পরা পর্যন্তই তো। এমনিতেও অনেক রাত হয়ে গেছে মিষ্টি শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরবে। মুন কিছু না বলে চলে গেলো ডাইনিং এর দিকে। মুন রেগে বলল,
—“মাম্মাম চলে গেলো?”
রাত মিষ্টির কাছে গিয়ে বলল,
—“তুমি রুমে চলো মাম্মাম এক্ষুনি এসে পরবে। আর তোমাকে ঘুম পাড়িয়েও দিবে।”
রাত মিষ্টিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রুমে নিয়ে গেল।
মুন ঊর্মিকে বলল,
—“তুই সবাইকে বিদায় দিয়ে গিয়ে ঘুমিয়ে পর।”
ঊর্মি ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“রাত কোথায়? তোরা খাবি না?”
—“রাত মিষ্টির সাথে আছে। মিষ্টিকে ঘুম পাড়িয়ে আমি আর রাত এক সাথে খাবো।”
—“ওকে”
মুন চলে গেল রুমে। গিয়ে দেখে মিষ্টি বেডের উপর গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আর রাত ওর পাশে অসহায় মুখ করে বসে আছে। মেয়েটা দিন দিন অনেক জেদী হয়ে যাচ্ছে। মানে মুখ দিয়ে একবার যা বলবে তাই’ই। মুন শব্দ করে হেটে এসে বেডে বসলো। রাত তাকালো সেদিকে। মিষ্টি তো মুনকে দেখে সেই খুশি। মুনের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলল,
—“মাম্মাম তুমি এসেছো? আমি জানতাম তুমি আসবে!”
মুন স্বাভাবিক গলায় বলল,
—“এখন চুপচাপ ঘুমাবে কোনো কথা না।”
মুনের কথা শুনে মিষ্টি শুয়ে পরলো। মুন ও শুনে মিষ্টির মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো। যেমন আগে আঁধার দিতো। রাত একটা স্টোরি বুক হাতে নিয়ে পাশে বসে পড়ে শুনাতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিষ্টি ঘুমিয়ে পরলো। মুন উঠে বলল,
—“মিষ্টি ঘুমিয়ে পরেছে।”
রাত মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল,
—“হ্যাঁ, অনেক রাত হয়েছে। চলো গিয়ে আমরা খেয়ে নেই। কাল আবার আমার একটা কন্সাট আছে।”
—“হুম।”
মুন আর রাত গিয়ে খেয়ে নিলো। তারপর মুন সব ধুতে নিয়ে গেল। অনেক গুলো প্লেট তাই রাত ও মুনকে সাহায্য করতে লাগলো। মুন নিষেধ করলেও শুনলো না। ধোয়া পাল্লা শেষ করে রাত মুনকে গুড নাইট বলে নিজের রুমে চলে গেল। মুন সব গুছিয়ে রেখে নিজের রুমে গেলো। মিষ্টি ঘুমিয়ে আছে। একদম পরির মতো লাগছে। মুন আস্তে করে কাবার্ড খুলে একটা সো-পিসটা বের করলো। তারপর ব্যালকনিতে চলে গেল। এই সো-পিসটা একদিন আঁধার ওকে দিয়ে ছিলো। খান বাড়ি থেকে ও বাড়িতে নেওয়া হয়নি। অসার সময় চোখে পরে তাই শেষ স্মৃতি হিসেবে নিয়ে এসেছিল। আজ আঁধার কথা খুব মনে পরছে। মুন এক দৃষ্টিতে সো-পিস টির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ঘারে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো মুন। ঘার ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলো ঊর্মি। মুন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—“তুই এখানে? এখনো ঘুমাস নি?”
—“না, দেখতেই তো পাচ্ছিস। কিন্তু তুই এখনো জেগে আছিস কেনো?”
মুন আমতা আমতা করে বলল,
—“এমনিই। ঘুম আসছিলো না তাই।”
—“আমার থেকেও লুকাচ্ছিস? এতোই যখন ভালোবাসিস তাহলে ফিরে যাচ্ছিস না কেনো তার কাছে? কেনো তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছিস? শুধু শুধ নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস আর তাকেও দিচ্ছিস।”
—“উনি একজন অপরাধী। খুনি উনি। মাফিয়ার সাথে যুক্ত। নিজের চোখে দেখেছি সব। কি কারণে ফিরে যাবো তুই’ই বল? কি কারণে? শুধু একটা কারণ বল আমায়?”
—“মিষ্টি”
মুন সচকিত চোখে তাকালো। ঊর্মি বলল,
—“উনি যত’ই খারাপ হোক কিন্তু ভুলে যাস না উনিই মিষ্টির বাবা। মিষ্টির উপর উনার পুরো অধিকার আছে।”
—“ঊর্মি”
—“হ্যাঁ এটাই সত্যি। তুই যত’ই দুনিয়ার সামনে দেখাস যে তুই আর রাত স্বামী স্ত্রী আর মিষ্টি তোদের সন্তান। কিন্তু সত্যি তো এটাই যে মিষ্টি আঁধার আর তোর মেয়ে।”
মুন কঠিন গলায় বলল,
—“হ্যাঁ, তো?”
—“তুই এতোটা কঠোর কি করে হতে পারিস? তোর কি একবারো মনে হয় নি যে, তোর উনারর কাছে ফিরে যাওয়া উচিত?”
—“হয়ে তো ছিলো। ফিরেও যেতাম কিন্তু…?”
ঊর্মি ভ্রু কুচকে বললে,
—“কিন্তু কি?”
—“এখানে আসার পর, যখন জানতে পারি যে আমার পেটে একটা ছোট্ট বেবী আছে। আর এই বেবী টা আমার আর আঁধারের তখন আমি খুশিতে ভেবে ছিলাম উনার কাছে ফিরে যাবো। কিন্তু পরক্ষণেই একজন মা হয়ে ভাবলাম যে উনার ওই কাজের খারাপ ছায়া আমার মেয়ের উপর পরতে পারে। যেটা মা হয়ে আমি কখনোই হতে দিতে পারিনা। তাই তখনই প্রতিগ্গা করলাম যা হয়ে যাক আমি উনার কাছে কখনো ফিরে যাবো না।”
—“তুই চাইলেই উনাকে সঠিক পথে আনতে পারতি।”
মুন ঊর্মির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
—“আচ্ছা! এতো সোজা? উনি কোনো সামান্য গুন্ডা, মাস্তান না যে শেষ বললেই সব শেষ। উনি একজন মাফিয়া। এ পথে একবার হাটা শুরু করলে না রাস্তা বদলে অন্য পথে হাটা যায় আর না ফিরে যাওয়া যায়। উনি সব ছেড়ে ছুড়ে চলে আসলেও উনার কাজ উনাকে ছাড়তো না। আর না উনার শত্রুরা উনাকে ছাড়তো। মেরে ফেলতো ওরা উনাকে। যা আমি কখনোই সহ্য করতে পারবো না। আর না একটা অপরাধীর সাথে সারা জীবন থাকতে পারবো। পাওয়ার আছে তাই উনাকে এখন কেউ কিছু করতে পারবে না। সব কিছুর পেছনেই একটা করে কারণ থাকে। দূর থেকে দেখে সব কিছু যতটা সহজ মনে হয় কাছ থেকে ততটাই জটিল। সবাই হয়তো আমাকে এর জন্য জাজ করবে। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু তারা নিজেকে একবার আমার জায়গায় বসিয়ে দেখুক। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করুক, সত্যি কি সব কিছু মেনে নেওয়া ওতোটা সহজ যতটা তারা ভাবছে?”
ঊর্মি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
—“খুব কষ্ট হয় তাই না? কান্না পয় খুব?”
মুন হালকা হেসে বলল,
—“কষ্ট পাওয়াটা যার অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়, সে একসময় কাঁদতেও ভুলে যায়!!”
ঊর্মির আর কিছু বলার নেই। কি বা বলবে? সব কষ্ট বুকের মাঝে চেপে, ঠোঁটে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে শুধু মেয়ের খুশির জন্য দুনিয়ার সামনে একটা পরপুরুষকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দেওয়াটা কতটা কঠিন, কতটা যন্ত্রণা দায়ক তা হয় তো কেউ বুঝবে না। হোক সে বন্ধ কিন্তু পরপুরুষ তো! ঊর্মি কিছু না বলেই মুনকে জড়িয়ে ধরলো। খুব কষ্ট হয় মুনের জন্য। এটুকু বয়সে কি কি সহ্য করেছে মেয়েটা। মুন আনমনেই বলে উঠলো,
—“সব চেয়ে বড় নাটক! এক আকাশ কষ্ট বুকের মাঝে চেপে রেখেও হাসি মুখে থাকা। ভালো না থেকেও সবার সামনে ভালো থাকা।”
.
মুনের বড় একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আঁধার বলতে লাগলো,
—“কাউকে ভালোবাসাটাই যদি পাপ হয়ে থাকে, তাহলে আমিই বড় পাপি!! আমাকে কষ্ট দিয়ে যদি তুমি সুখি হও, তাহলে আমিই সব চেয়ে বড় সুখি!!”
#চলবে,