Mr_Husband,পর্ব_৪৫ (বোনাস পার্ট)

0
3068

#Mr_Husband,পর্ব_৪৫ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন

—“মি. হাসবেন্ড।”

আঁধার মুনের মুখে এতো বছর পর আবার সেই ডাক শুনে বাকা হাসলো। রসিকতার স্বরে বলল,

—“কেমন আছো সুইটহার্ট? তুমি তো একদম ভুলেই গেছ আমায়। জানো আমি কত বেশি মিস করেছি তোমায়?”

আঁধারের কথা গুলো মুনের কান পর্যন্ত পৌছালেও কোনো রকম রিয়েক্ট করতে পারছে না ও। এখনো শকের মধ্যে আছে। আঁধার ঠোঁটে হাসি বজায় রেখেই বলল,

—“দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে। অনেক হিসেবও বাকি আছে।”

মুন একপা একপা করে পেছাতে লাগলো ছুটে পালাবে এমন সময় আঁধারের সতর্ক বাণী শুনে ওখানেই দাঁড়িয়ে পরলো।

—“ডোন্ট ট্রাই। কোনো লাভ হবে না। বাইরে থেকে লক করা।”

মুন অবাক হয়ে আঁধারের দিকে তাকায়। তারপর ছুটে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করে কিন্তু খুলে না। মুন দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিৎকার করে হেল্প চায়। কিন্তু কেউ শুনেও না আর দরজাও খুলে না। আঁধার আবারো বলল,

—“অযথা চিৎকার চেচামেচি করে লাভ কিছুই হবে না। আরো তোমার এ্যানার্জি নষ্ট হবে। তার থেকে ভালো এখানে এসে বসো ঠান্ডা মাথায় কথা বলি।”

মুন চেচিয়ে বলল,

—“আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাইনা।”

আঁধারের মুখের রঙ হঠাৎ করেই পরিবর্তন হয়ে গেলো চোয়াল শক্ত করে বলল,

—“তোমার চাওয়াতেই সব কিছু হবে না। চুপচাপ বসো এখানে। অনেক বোঝাপড়া আছে তোমার সাথে। বসো সুইট হার্ট।”

মুন আঁধারের সামনে দিয়ে বসলো। আঁধারের চোখে চোখ রেখে শক্ত গলায় বলল,

—“ওকে। আজই সব বোঝাপড়া শেষ করবো আপনার সাথে। এভাবে ভয় পেয়ে পালিয়ে পালিয়ে আমি আর বাচতে পারছি না।”

আঁধার সন্দিহান চোখে চেয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

—“আমি কোনো মূল্যবান জিনিস চুরি করো নি তো যে ধরা পরার ভয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছ?”

মুন একথায় যেন থতমত খেয়ে গেলো। মুন রাগ দেখিয়ে বলল,

—“ফালতু কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসুন।”

—“কত বছর পর দেখছি বল তো? আগে একটু ভালো করে দেখতে দেও। অনেক বড় হয়ে গেছ। আর আগের থেকে অনেক বেশি হট ও।”

কথাটা বলে চোখ মারলো আঁধার। কথাটা শুনে রাগে মুনের শরীর রি রি করছে। মুন উঠে দাঁড়িয়ে আঁধারকে শাসিয়ে বলল,

—“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ মি. আঁধার রেজওয়ান। মেয়েদের সাথে কি করে কথা বলতে তা কি জানেন না? নাকি ভুলে গেছেন?”

—“জানবো না কেনো? অবশ্যই জানি। আর আমি কি বাইরের কোনো মেয়েকে বলছি নাকি? আমি তো আমার বিয়ে করা বউকে বলছি।”

মুন কটমট করে বলল,

—“আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে ভুলে গেছেন?”

আঁধার না জানার ভান করে বলল,

—“ডিভোর্স? কবে? কখন? আমার তো ঠিক মনে পরছে না।”

—“আপানার স্মৃতিশক্তি দিনদিন লোপ পাচ্ছে মি. আঁধার। আপনার বেশি বেশি বাদাম খাওয়া উচিত। কারণ আমার জানা মতে আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে আমার সাইন করা ডিভোর্স পেপার্স আপনাকে পাঠিয়ে ছিলাম। আপনি কি সেটা পান নি?”

আঁধার আলসেমি ঝেড়ে বলল,

—“তুমি যখন পাঠিয়েছো আমি অবশ্যই পেয়েছি।”

মুন কপাল কুঁচকে বলল,

—“তাহলে আবার বলছেন কেন যে ডিভোর্স হয়নি?”

আঁধার উঠে দাঁড়িয়ে পকেটে দু হাত গুজে ভনিতা ছাড়াই বলল,

—“কারণ আমি সাইনি করিনি তোমার দেওয়া ডিভোর্স পেপারে। আর তোমার একার সাইনে ডিভোর্স হয়ে যায় না। তাই আমরা এখনো স্বামী স্ত্রী। তুমি আমার লিগ্যাল ওয়াইফ।”

মুন বিষ্ময় ভরা চাউনিতে আঁধারের দিকে তাকায়। মুন ভেবে ছিলো আঁধারও হয় তো সাইন করে দিয়েছে। আর ওদের ডিভোর্স ও হয়ে গেছে। এখন কি করবে মুন? ওর ঠিক কি করা উচিত? মুন যথা সম্ভব নিজেকে শক্ত রেখে কাঠ কাঠ গলায় বলল,

—“তাহলে দয়া করে এখন দিয়ে সাইন করে দিবেন। কারণ আর যা’ই হোক আমি আপনার কাছে কখনোই ফিরবো না। আমার জীবন আর আগের মতো নেই। আমার ছোট একটা মেয়ে আছে।”

আঁধার যেন এত বড় কথাটা শুনে একটুও চমকালো না। আরো স্বাভাবিক ভাবে মুনের দিকে শিতল চাউনি দিয়ে শরীর হিম করা ঠান্ডা স্বরে বলল,

—“বাচ্চাটা কার মুন?”

কথাটা শুনে কেপে উঠলো মুন। প্রচণ্ড শীতে মানুষ যে ভাবে কেপে উঠে ঠিক সে ভাবে। মুন বার কয়েক ঢোক গিলে নিজেকে সংযত করল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

—“আমার মেয়ে।”

—“ওর বাবা কে?”

মুন এবার সত্যিটাকে লুকানোর জন্য মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলল,

—“যে’ই হোক না কে কিন্তু আপনি না মি. রেজওয়ান।”

মুন আঙ্গুল উঠিয়ে কথাটা বলতেই আঁধার মুনের ডান হাত চেপে ধরে পিঠের পেছনে নিয়ে মুচড়ে ধরে। এতোক্ষনের চাপা দেওয়া সব রাগ এক সাথে বেরিয়ে আসতে চাইছে। মথার রগ গুলো ফুলে উঠেছে। আগুন জ্বলে যাচ্ছে মাথায়। আঁধার শক্ত করে মুনের হাত মুচড়ে দিতেই মুন আর্তনাদ করে উঠে। আঁধার গর্জন করে বলে,

—“আমার সারনেম যখন জানোই তাহলে আমার আমার বাচ্চার নামের পাশে অন্য কারো সারনেম কেনো? আমার মেয়ে অন্য কাউকে বাবা ডাকে কেনো?”

মুন ব্যথায় কুকড়ে উঠে বলল,

—“আহ্! আঁধার ছাড়ুন লাগছে আমার।”

মুনের কথায় আঁধার আরো জোরে মুচড়ে দেয় অসহ্য ব্যথায় মুনের চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। আঁধার তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বলে,

—“এই সামান্য ব্যথায় তোমার এতো কষ্ট হচ্ছে তাহলে আমার সন্তান যখন অন্য কাউকে বাবা দাকে তখন আমার কত কষ্ট হয়।”

মুন হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে তেজী গলায় বলল,

—“মিষ্টি আপনার সন্তান না। বুঝতে পেরেছেন আপনি?”

আঁধার মুনকে মৃদু ধাক্কা মেরে ছেড়ে দেয়। মুনের ব্যথায় জান বেরিয়ে যাচ্ছে। হাত লাড়াতেই পারছে না। ব্যথায় নে হচ্ছে অবস হয়ে গেছে। আঁধার কয়েকটা কাগজ বের করে মুনের মুখের উপর ছুড়ে মারে। মুন অবুঝ নয়নে তাকাতেই আঁধার বলল,

—“মিষ্টির বার্থ সার্টিফিকেট যেখানে বাবার নামের জায়গায় লেখা ‘ড. আঁধার রেজওয়ান। আর যে হসপিটালে তোমার ডেলিভারি হয়েছিলো সেখানেও স্পস্ট ড. আঁধার রেজওয়ানই লেখা। আর ডিএনএ রিপোর্টও ঠিক একই কথা বলছে। তাহলে তুমি মিথ্যে বলছো কেনো?”

মুন এবার একদম ভেঙ্গে পরে। ধপ করে নিচে বসে পরে। চোখ থেকে টপটপ করে জলের ফোটা পরে ফ্লোর ফাসায়। আঁধার মুনের সামনে হাটু গেড়ে বসে মুনের চোখের জল মুছিয়ে দেয়। মুনের মুখ নিজের হাত মাঝে আবদ্ধ করে নরম স্বরে বলল,

—“তুমি চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি ভুলে যাবো সব। আমরা আবার এক সাথে থাকবো। আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হবে। যেখানে থাকবো আমি তুমি মিষ্টি। আর রাগ করে থেকো না। প্লিজ লক্ষিটি ফিরে এসো।”

মুন নিজের মুখ থেকে আঁধারের হাত সরিয়ে আঁধারকে স্বজোরে ধাক্কা দিলো। আঁধার পেছনের দিকে ঝুকে গেলেও পরলো না। হাতে ভরদিয়ে সামলে নিলো। মুন গর্জে উঠে বলল,

—“কখনো না। আপনার স্বপ্ন স্বপ্নই থাকবে। আমি আমার মেয়ের ধারে কাছেও আপনাকে ঘেসতে দিবো না। আপনি একটা অভিশাপ। যার জীবন আপনার সাথে জুড়ে যায় তার জীবনই ছাড়খাড় হয়ে যায়। আপনি একটা খুনি। আপনার ছায়াও আমি আমার মেয়ের উপর পরতে দিবো না।”

আঁধার ফ্লোরে ঘুষি মেরে উঠে গেলো। আর মুনকেও টেনে উঠালো তারপর ওর গাল চেপে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দাতে দাত চেপে বলল,

—“ওকে দেন রেডি ফর দি রিভেঞ্জ। মনে রেখো আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি তার থেকে হাজার গুন বেশি কষ্ট আমি তোমাকে দিবো। আমি যেমন আমার মেয়ের মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতে পাইনি তেমনি তুমিও আর মা ডাক শুনতে পারবে না। আই প্রমিজ মুন, তোমাকে আমি এক মিনিটও শান্তিতে শ্বাস নিতে দিবো না। তোমার জীবন যদি আমি জাহান্নাম না বানিয়েছি না তাহলে আমারও AR না। এতোদিন তুমি আঁধারের ভালোবাসা দেখেছো এবার থেকে তুমি AR এর ঘৃণা দেখবে।”

বলেই আঁধার কেবিন থেকে বেরিঋএ গেলো। মুন ওখানেই বসে পরলো। আজও কাদবে অনেক অনেক কাদবে। কাদতে কাদতে সব কষ্ট ভাসিয়ে দিবে।

#চলবে,

[Happy Reading]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here