#Mr_Husband,পর্ব_৫০,৫১
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৫০
—“উহু! এক পাও এগোবে না। আর আমাদের হুকুমকে ছেড়ে দেও। নাহলে একটানে এর মাথা ধর থেকে আলাদা করে ফেলবো।”
মিষ্টি এবার কেদে দেয় মুনকে দেখে। কেদে কেদে ঠোঁট উচিয়ে ডাকে,
— “মাম্মাম! মাম্মাম!”
মুন কেদে দেয় মেয়ের কান্না দেখে। মিষ্টিকে আসস্ত করে,
—“সোনা, কাদে না। কিছু হবে না। মাম্মাম তোমার কিছু হতে দিবে না।”
মুন কাদতে কাদতে ওই পাকিস্তানি লোকটির সামমে হাত জোরে অনুরোধ করে ভাঙা গলায় বলল,
—“আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন প্লিজ। ও খুব ভয় পাচ্ছে। ছুড়িটা ওর গলা থেকে নামান। ওকে কিছু করবেন না। আপনার সামনে আমি হাত জোর করে অনুরোধ করছি।”
বলতে বলতে মুন নিচে বসে পরে। ইসী, অয়ন, আপন এদের সবার মুখ হা হয়ে গেছে মুনের কথা শুনে। শুধু আশিক অবাক হয়নি। কারণ ও তো আগে থেকেই জানতো। তিশান মিষ্টির জন্য কাদতে কাদতে লোকটাকে বলল,
—“আঙ্কেল প্লিজ আঁধরিকাকে ছেড়ে দিন। প্লিজ আঙ্কেল।”
আঁধার হুংকার দিয়ে বলল,
—“ব্লাডি বিচ! ছেড়ে দে বলছি আমার মেয়েকে। আই সোয়ের! আমার মেয়ের শরীর থেকে এক বিন্দু রক্তও ঝরে তাহলে তোর শরীরে এক বিন্দু রক্তও অবশিষ্ট থাকবে না। রক্ত শূন্য বনিয়ে তোকে মারবো। আমাকে তুই চিনিস না। আমার পাওয়ার সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়া নেই।”
লোকটা ব্যাঙ্গ করে হাসে। তারপর বলে,
—“এখন আপাদত্ত পাওয়ার আমার হাতে। দেখতে পাচ্ছিস এই ছুরিটা?”
লোকটা মিষ্টির গলা থেকে ছুড়িটা সরিয়ে দেখালো। মুন যেখানে বসে পরে ছিল সেখানেই একটা গান পরেছিল। মুন কিছু না ভেবেই গানটা উঠিয়ে কোনো দিকা না তাকিয়ে লোকটা যে হাতে ছুড়িটা ধরে রেখে ছিলো সে হাতে চোখ বন্ধ করে সুট করে দেয়। সাথে সাথে লোকটার হাত থেকে ছুড়িটা পরে যায়। লোকটা আত্মনাদ করে উঠে মিষ্টিকে ছেড়ে অন্য হাত দিয়ে হাত চেপে ধরে। সাথে সাথে চারদিকে আবারো হৈচৈ লেগে যায়। আঁধার গর্বের করে বলল,
—“সাব্বাস আমার বোকাপাখি! এই না হলো আমার বউ!”
এরপর শুরু হয় আসল খেলা। লোকটাকে আঁধার এমন ধোলাই দেয় যে লোকটা তার নিজের নামও ভুলে যায়। মুন মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে সেই কখন থেকে কাদছে। মুন মিষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে ওই লোকটাকে নিজেও আচ্ছা মতো কয়েকটা দেয়। এই সুযোগে ওদের লিডার নিজের পায়ের কাছে লোকানো গানটা বের করে আর মিষ্টিকে সুট করে। মুন যখন দেখে লোকটা মিষ্টিকে সুট করেছে তখন মুন দৌড়ে গিয়ে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে ওকে আড়াল করে চোখ খিচে দাঁড়ায়। আঁধার চিৎকার করে উঠে,
—“মুন”
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেও কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়না কিন্তু কারো ব্যথায় কুকড়ে উঠার শব্দ কানে আসে। মুন চোখ খুলে দেখে রাত ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর রাতের হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। মুন আতকে উঠে। মিষ্টি ‘পাপা’ বলে চিৎকার করে উঠে। সবাই এদিকে তাকায়। অয়ন দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে লোকটার পিঠে একটা লাথি মারে। সাথে সাথে মুখ থুবড়ে পরে লোকটা। মিষ্টি রাতে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে ডাকে,
—“পাপা, পাপা কি হয়েছে তোমার। বলো না পাপা।”
হাটু গেড়ে নিচে বসে পরে রাত। মুচকি হেসে মিষ্টির গালে হাত রেখে ধীর গলায় বলে,
—“প্রিন্সেস ডোন্ট ক্রাই। কিছু হয়নি। পাপা ঠিক আছি তো।”
মিষ্টি রাতে গলা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাদতে থাকে। রাত তৃপ্তির হাসি দেয়। তারপর ঘার ঘুরিয়ে পেছনে মুনের দিকে তাকায়। মুন দু হাতে মুখ ঢেকে কাদছে। রাত মজার সুরে বলল,
—“এ্যাংরি বার্ড কি এই অধমের জন্য নিজের মহা মূল্যবান চোখের জল ফেলছে।”
মুন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ছুটে আসে রাতের কাছে। নিজের গলা থেকে স্কার্ফটা খুলে হাতে বেধে দেয়। কারণ এমনিতেই অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে। আরো বের হলে পরে ক্ষতি হতে পারে। তিশান কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,
—“আঙ্কেল তুমি ঠিক আছো?”
—“হ্যাঁ বেটা আমি ঠিক আছি!”
রাত মুনকে কাদতে দেখে, অন্য হাত দিয়ে মুনের চোখের জল মুছিয়ে দেয়। মিষ্টি মাথা উঠিয়ে বলল,
—“পাপা!”
—“বলো প্রিন্সেস?”
মিষ্টি ঠোঁট গোল করে বলল,
—“মিষ্টি লাভ’স ইউ”
রাত হেসে ফেল। মিষ্টির কপালে চুমু একে বলল,
—“পাপা অলসো লাভ ইউ টু প্রিন্সেস!”
টিচার্স আর বাচ্চাদের অনেক আগেই হল থেকে বের করেছে অয়ন। আর ওই ট্যারিরিস্ট গুলোকেও গ্রেফতার করেছে। হলরুমটা এখন সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। ইসী, আপন, অয়ন, আশিক কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই একবার আঁধারের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার মুন, রাত ও মিষ্টির দিকে। আঁধার হিংস্র সিংহের মতো মুনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। একজন বাবার সামনে তারই সন্তান যদি অন্য আরেকজনকে বাবা ডাকে তাহলে তার ভেতরে কেমন অনুভুতি হয়? আঁধার বলে বুঝাতে পারছেনা তার কষ্টটা। কলিজা ছিড়ে নিলে যেমন কষ্ট হয় ঠিক তেমই কষ্ট হচ্ছে ওর। ওর নিজের মেয়েই ওকে চেনে না। সে এখন অন্য কাউকে বাবা ডাকে। এর থেকে কষ্টের আর কিছু হতে পারে? মুন ভয়ে ভয়ে একবার আঁধারের দিকে তাকালো। আঁধের ক্রুদ্ধ চোখ দুটি নিজের দিকে নিক্ষেপ করা দেখে মুনের শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। চোখ দুটি ভয়ংকর লাল হয়ে আছে। আঁধারের চোখের ভাষা মুন বুঝে যায়। আঁধারের যে ওকে এখন গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে তা ও ভালোই বুঝতে পারছে। আঁধার এক মুহূর্তও আর দাঁড়িয়ে না হনহন করে বেরিয়ে যায়। আঁধারকে বেরিয়ে যেতে দেখে ইসী, আপন, অয়ন, আশিকও ওর পেছনে ছুটে। কি হচ্ছে তা ওদের মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। মুন আঁধারের যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর রাতকে বলল,
—“রাত চলো তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। আর দেড়ি করা ঠিক হবে না। খুব দ্রুত গুলিটা তোমার হাত থেকে বের করতে হবে।”
মুন রাতকে নিয়ে বের হবে এমন সময় তাহেরা আর রাফিকে দৌড়ে আসতে দেখে। ওরা অনেক প্রশ্ন করে মুন ওদেকে বলে সব পরে খুলে বলবে। আর মিষ্টিকে ওদের সাথে পাঠিয়ে মুন রাতকে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়।
.
আঁধার রেগে ফুল স্প্রিডে ড্রাইভ করে একটা দোতালা বাংলো বাড়ির সামনে এসে জোরে ব্রেক কষে। তারপর গাড়ি থেকে নেমে হনহনিয়ে বাংলোর ভেতরে ঢুকে সোজা উপরে চলে যায়। একদম শেষ প্রান্তের রুমটির লক খুলে ভেতরে ঢুকে সোজা গিয়ে রুমে থাকা মানুষ্টির গলা চেপে ধরে কবুতরের বাচ্চার মতো। মানুষটা ছটফট করতে থাকে। আঁধার আরো শক্ত করে চেপে ধরে। যখন দম বেথিঋএ যাবে যাবে অবস্থা তখন তার গলা ছেড়ে দেয়। আর চুলের মুঠি শক্ত করে টেএনে ধরে। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
—“তোর কারণে, শুধুমাত্র তোর কারণে আমার এখন অন্য কাউকে বাবা হিসেবে চেনে। তাকে পাপা বলে ডাকে। আর আমি! আমাকে তো চেনেই না সে। তোরই কারণে আমার স্ত্রী এখন অন্য কারো বউ হিসেবে পরিচিত। একটা বাইরের পরুষ তার চোখের জল মুছিয়ে দেয় তাও আমার সামনে। ইচ্ছে তো করছে তোকে এখানেই পুতে ফেলি। কিন্তু না। আমি তোকে এতো সহজে মারবো না। তোকে আমি তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারবো। যেমন কষ্ট আমি পাচ্ছি তার থেকেও বেশি তোকে আমি দেব।”
আঁধার ব্যক্তিটিকে চেয়ারে বসিয়ে হাত-পা দড়ি দিয়ে বেধে মুখে টেপ লাগিতে দেয়। তারপর তার কানে হেডফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে মিউজিক ছেড়ে দেয়। ওটাকে বলে সাউন্ড টর্চার। ব্যক্তিটি ছটফট করতে থাকে ওখানে বসে আর আঁধার ওই বাংলো থেকে বেরিয়ে যায়।
#চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৫১
রাত ৮:৩০ ছুইছুই। বাড়ি ফিরতেই আরিফা রেজওয়ানের মুখোমুখি হয় আঁধার। আরিফা রেজওয়ানের চোখে-মুখ কাঠিন্যতার ছাপ। আঁধার ক্লান্তিতে চোখ বুঝে বলল,
—“কি হয়েছে মম?”
কঠিন গলায় আরিফা রেজওয়ান প্রশ্ন করলেন,
—“তোমাকে যে মেয়েগুলোর ফটো দিয়ে ছিলাম তাদের মধ্যে কাউকে তোমার পছন্দ হয়েছে? না হলে সমস্যা নেই। আমার একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছে। তাকে দেখতে যাবো কাল সকালে।”
—“মম, মুন…”
আঁধার নিজের কথা শেষ করা আগেই আরিফা রেজওয়ান কঠিন স্বরে চাপা গর্জন করে বললেন,
—“মরে গেছে মুন। শুনেছিস? ওর কথা ভাবতে বারণ করে ছিলামনা না? তোকে ছাড়া ভালো আছে ও। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে আছে। তোকে ভুলে ও নতুন করে সংসার পেতেছে। পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা মেয়েও আছে। আর কিছু শুনতে চাস?”
—“মম!”
আঁধার করুণ স্বরে ডাকলো। আরিফা রেজওয়ান ফিরলেন না। আঁধার কাম্পিত গলায় বলল,
—“ওই বাচ্চা মেয়েটা আমার মম। মিষ্টি আমার মেয়ে।”
চকিতে তাকায় আরিফা রেজওয়ান। বিষ্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে তার। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আঁধার কি বলছে বুঝতে না পরলেও আঁধারের কথায় অবাক হয়ে গেছেন তিনি। আরিফা রেজওয়ান থতমত খেয়ে বললেন,
—“কি বলছো এসব? মাথা ঠিক আছে? আর মিষ্টি কে?”
আঁধার শীতল দৃষ্টি মায়ের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
—“মুন নতুন করে কোনো সংসার পাতেনি মম। মুনের বিয়েও হয়নি। যে মেয়েটার বাবার পরিচয় মুন অন্য একজনকে দিচ্ছে সে মেয়েটার বাবা এই আঁধার রেজওয়ান। মিষ্টি আমার আর মুনের সন্তান। মুন আমাকে ছেড়ে একা যায়নি ও নিজের সাথে করে আমার অংশকেও নিয়ে গেছিলো।”
আরিফা রেজওয়ান শকের উপর শক খাচ্ছেন। তিনি অবাক হয়ে বললেন,
—“এতো সব নাটক কিসের জন্য?”
আঁধার গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
—“যাতে আমি কখনো জানতে না পারি যে মিষ্টি আমার মেয়ে।”
আরিফা রেজওয়ান ক্ষভ নিয়ে বললেন,
—“কেন করছে ও এসব? কিসের এতো শত্রুতা তোমার সাথে ওর?”
আঁধার চুপ থাকলো। আরিফা রেজওয়ান বুঝলেন আঁধার এখন কিচ্ছু বলবে না তাকে। তাই জোরও করলেন না। শুধু গম্ভীর কন্ঠে এতো টুকু বললেন,
—“আমি আমার নাতনীকে আমার বাড়িতে দেখতে চাই। তার আসতে ইচ্ছে করলে আসবে না ইচ্ছে করলে না। আমার নাতনীকে দিয়ে সে যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারে। কোনো মানা নেই। কিন্তু আমি আমার নাতনীকে ফিরে চাই। আমার কথার যেন নড়চড় না হয়।”
বলেই আরিফা রেজওয়ান ওখান থেকে চেলে যান। আঁধারের মাথা ব্যথা করছে খুব। আর কিছু ভাবতে পারছে না। ক্লান্ত হয়ে পরে সে। কালই মুনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। আর এর একটা বিহিত করতে হবে। আঁধার মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, নিজের জীবনের অতীতের দুটো কালো অধ্যায় মুনকে কাল সে বলবে। তারপর মুন ডিসাইড করবে থাকবে নাকি যাবে!
.
—“এখানে আর এক মুহুর্তও না। আমরা কাল সকালেই ইংল্যাণ্ড ব্যাক করছি। আমার দরকার নেই কোনো অপর্চুনিউটির। আমার মেয়ের থেকে ক্যারিয়ার বড় না। এই দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই একটার পর একটা বিপদ আমার মেয়ের উপর এসে পরছে। প্রথমে এ্যাক্সিডেন্ট, তারপর এই ট্যারিরিস্ট এ্যাটাক। এরপর আবার কোন বিপদ আসে জানা নেই। আমি আর কোনো প্রকার রিক্স নিতে চাই না রাত। তোমার যেতে হলে যাবে না হলে আমি একাই আমার মেয়ে নিয়ে চলে যাবো।”
খুবই কঠোর স্বরে নিজের সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দিলো মুন। তাহমিনা খান কিছু বলতে চাইলেন কিন্তু কবির খান তাকে থামিয়ে দিলেন। মেয়ের ভেতরের ভয়টা সে খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারছে। কবির খান মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বললেন,
—“তুমি যা বলবে তাই হবে আম্মু। কেউ তোমার সিদ্ধান্তের উপরে কোনো কথা বলবে না। কিন্তু আম্মু রাতের কথাটাও একবার ভাবো! হাতে গলি লেগের কারণে অনেক ব্লাড লস হয়েছে। শরীর প্রচুর দুর্বল। ওর এখন পুরোপুরি বেড রেস্টের দরকার।”
তাহেরা মুনের পাশে বসে ওর কাধে হাত রেখে বলল,
—“বাবা ঠিক কথা বলছে মুন। উনার অবস্থায় জার্নি করা ঠিক হবে না। উনি পুরোপুরি সুস্থ হোক তারপর চলে যাস। তখন তোকে আর কেউ আটকাবে না।”
তাহমিনা খান অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন,
—“সব সময় নিজের জেদটাই বজায় রাখতে হবে? চিন্তা-ভাবনা না করে তাড়াহুড়ো করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে একবার নিজের জীবনটাই বরবাদ করেছ আজ পর্যন্ত। অন্যের কথাটাও একবার ভেবে দেখা উচিত।”
মুন রাতের দিকে একবার তাকায় মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চুলগুলোও উস্কখুস্ক। চোখ দুটিতে রাজ্যের ক্লান্তি। মুন ভেবে দেখলো সবাই ঠিক কথাই বলছে। মুন ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
—“ঠিক আছে।”
সবাই সস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।
.
ঊর্মি ফোন করেছে কিছুক্ষণ আগে। মুন ঊর্মিকে সব খুলে বলে। কথা গুলো শুনে যেন ঊর্মির জান হাতে এসে পরেছে। ঊর্মি আজই জেনেছে যে আঁধারের সাথে মুনের দেখা হয়েছে। ঊর্মি ইতস্তত বলল,
—“মুন একটা কথা বলব রাগ করবি নাতো?”
মুন ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল,
—“বল”
ঊর্মি ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
—“আমরা বিডিতে আসার কিছুদিন পর উনি এসে ছিল আমার বাড়িতে তোর ব্যপারে জিজ্ঞেস করতে।”
মুন ভ্রু যুগল কুঁচকে বলল,
—“উনিটা কে?”
ঊর্মি ভয়ে ভয়ে বলল,
—“তোর মাফিয়া হাসবেন্ড।”
মুন একপ্রকার জোরে চেচিয়ে বলল,
—“হোয়াট? তার মানে তুই উনাকে সব বলেছিস? বিশ্বাস ঘাতক।”
ঊর্মি তাড়াতাড়ি বলে উঠলে,
—“কি করবো বল? তোর ওই রাক্ষসটার কথায় একটা খবিশ আমার মাথায় গান ধরেছিল। তাই উপায় না পেয়ে বলে দিয়েছি।”
মুন রেগে কিড়মিড় করে বলল,
—“তোকে একবার খালি আমি সামনে পাই। ধার করে রিভলবার এনে তোর মাথায় আমি একেএকে ছয়টা বুলেট ঢুকাবো। গদ্ধব একটা! উনি মাথায় গান ধরলো আর তুই গড়গড় করে সব বমি করে দিলি ইডিয়েট।”
ঊর্মি ভাব নিয়ে বলল,
—“আমার জীবন আমার কাছে অনেক প্রিয় বইন। তোর মতো ওতো সাহস আমার নাই। আর আমি শুধু সত্যি কথা বলছি কোনো পাপ করি নাই। আর তোর জামাইটা কি জোস মাইরি। তোর জায়গায় আমি হইলে এক মিনিট রাইখা ওয়াশরুমেও যাইতাম না। সেইখানে তুই এমন পুলা রাইখা ছয় বছর ধইরা পালাইয়া বেরাস।”
মুন ঝারি মেরে বলল,
—“ফোন রাখ হারামি।”
.
আলিয়া অয়নকে কল করতেই প্রথম বারেই রিসিভ করে অয়ন। আলিয়া বিচলিত কন্ঠে বলল,
—“আপনি ঠিক আছেন তো? এখন কোথায় আছেন? কি করছেন? কিছু খেয়েছেন?”
অয়ন আলিয়ার এতো গুলো প্রশ্ন এক সাথে শুনে বিষম খেল। আলিয়া আরো উতলা হয়ে বলল,
—“কি হলো কথা বলছেন না কেন? আপনার কিছু হয় নি তো?”
অয়ন নিজেকে সামলে কোমল কন্ঠে বলল,
—“লিয়া এতো বিচলিত হয়ো না। আমি ঠিক আছি। একদম ফিট এন্ড ফাইন। এবার বলো তুমি কেমন আছো?”
আলিয়া সস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,
—“ভালো আছেন তার মানে আমিও ভালো আছি। খেয়েছেন আপনি?”
আলিয়ার এ কথা শুনে নিশব্দে হাসে অয়ন। মেয়েটা এতো কেনো ভালোবাসে ওকে? ওর সামান্য কষ্টে কেদে দেয়। ওর সামান্য খুশিতেই হেসে দেয়। আবার ওর সামান্য ভুলেই রেগে যায়। এতো টুকু মেয়ে দূর থেকে সারাক্ষণ ওর খেয়াল রাখে। এই চারটা বছরে বদ অভ্যাসে রূপ নিয়েছে মেয়েটা। মেয়েটার এতো কেয়ার এতো ভালোবাসা দেখে নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ বলে দাবি করতে ইচ্ছে করে। আলিয়ার সাথে কথা বলতে বলতেই ফোন কানে রেখেই অয়ন ঘুমিয়ে যায় একসময়। আলিয়া যখন বুঝতে পারে অয়ন ঘুমিয়ে পরেছে তখন ছোট্ট করে শ্বাস ত্যাগ করে আস্তে করে ‘গুড নাইট’ বলে ফোনে চুমু দিয়ে কল কেটে দেয়।
#চলবে,