#রৌদ্র_কুয়াশা, পর্ব ২৯,৩০
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ২৯
মাহির ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইলার দিকে।ইলা টিভি দেখাতে ব্যস্ত।মনে হচ্ছে ইলা এখানে না টিভির ভেতরেই ঢুকে আছে।মাহির পা টিপে টিপে ইলার পেছনের দিকে যাচ্ছে আক্রমণ করার জন্য।
ইলা হঠাৎ খেয়াল করল ওর পেছনে কারোর ছায়া।সাদা টাইলসের ফ্লোরে স্পষ্ট কারোর ছায়া দেখা যাচ্ছে।ছায়াটা একটু বেকে আছে।ছায়াটার হাতের দিকে আরো লক্ষ্য করলো ইলা।হাতে কিছু একটা আছে।দু হাতে ছায়টা সেটা উচু করেছে যেন কাউকে ফ্লোরে ফেলে পিটিয়ে মারবে এমন।ঝাড়ুর শলার ছায়া দেখেও চমকে গেল ইলা।ইলা নিজের হাতের সসের বোতল টা শক্ত করে ধরলো।তবে কি কেউ তাকে মারতে এসেছে?নাহ।সে ও কম যায় কিসে?সে ও সসের বোতল দিয়ে আক্রমণকারী কে পরাস্ত করবে।
-আআআআআআ।
ইলা চিৎকার দিয়ে উঠে দাড়িয়ে পেছনে ঘুরলো।সসের বোতল টা সামনে ধরে চোখ বুজে চিৎকার করে ডাকতে লাগল মাহির কে।
-আআ।মাহির মাহির।বাচান আমাকে। আআআ।
ইলার চিৎকার শুনে মাহির নিজেই ভয় পেয়ে গেল।মাহিরের হাত থেকে ঝাড়ুটা পড়ে গেল।মাহির ও চেচানো শুরু করলো।
-আআআআ।
কিছুক্ষণ পর।
মাহির চুপ হয়ে গেছে।সামনে ইলা কোমড়ে একটা হাত রেখে আরেকঁটা হাতে সসের বোতল নিয়ে মাহিরের দিকে তাক করে অগ্নীরূপ ধারণ করে আছে।
মাহির ঢোক গিলে বললো,
-কি?
-কি?
-কি?
-ফাজলামি করছেন আমার সাথে!
ইলা দাঁত কিড়মিড় করে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।মাহিরের মাথায় অন্য চিন্তা।
মাহির মনে মনে বলছে,
-আমি বুঝতে পেরেছি ইলা এটা তুমি নও।ঐ জিন তোমাকে দিয়ে এরকম কাজ করাচ্ছে।আহারে আমার বউটা।চিন্তা করোনা আজকে ঝাড়ু মেরে ওটাকে বিদায় করব আমি।
মাহিরের ভাবনার রেশ কাটলো ইলার তুড়ি বাজানোতে।মাহির একটু চমকে উঠে ইলার দিকে তাকালো।
-ঐ হ্যালো।কোথায় হারিয়েছেন?
-আমি সব বুঝতে পারছি ইলা।
-আমিও সব বুঝতে পারছি।
-তুমি কি বুঝেছো?
-বউ পেটাতে এসেছেন।নারী নির্যাতন করতে এসেছেন।আপনাকে তো আমি জেলের গুড় রুটি খাইয়ে ছারপোকার কামড় খাইয়ে ছাড়ব বলে দিলাম।
-তুমি কিভাবে জানলে জেলে গুড় রুটি দেয়?তুমি জেল খেটেছো নাকি?
-কি বললেন আপনি?
মাহির ইলার কথার উওর না দিয়ে মেঝে থেকে ঝাড়ুটা তুলে আবার হাতে নিলে।মাহিরের এমন কান্ডে ইলা দু কদম পিছিয়ে গেল।
-ককিই করছেন আপনি?
মাহির ঝাড়ু নিয়ে ইলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।ইলা বেচারী পিছোতে পিছোতে গোল টি টেবিলের চারপাশে ঘুরছে।
-আরে এমন করছেন কেন আপনি?ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
-ইলা আমি জানি তুমি রাগ করছো।কিন্তু আমি নিরুপায়।দেখো তোমার ঘাড়ে জিন ভর করেছে ।যার জন্য তুমি সকাল থেকে এমন আচরণ করছো।তুমি চিন্তা করোনা।তোমার মাহির থাকতে এই জিন ঝাড়ু পেটা খেয়ে বিদায় হবেই।
-কিহ!
মাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উওর দিল ইলাকে।ইলা সসের বোতল টা নিয়ে মাহিরের দিকে এগিয়ে গেল।
-ঝাড়ু ফেলুন।নইলে আপনার মাথা আমি এই বোতল দিয়ে ফাটাব বলে দিলাম।কাঁচের বোতল বুঝতে পারছেন তো?
-না।
-ফেলবেন।নাকি এক্ষুণি,,,,।
-ফেলছি।
ইলার অগ্নীরূপ দেখে নিমিষেই মাহির যেন বাঘ থেকে ভেজা বিড়াল হয়ে গেল।হাত থেকে ঝাড়ু টা ফেলে দিল।ইলা সঙ্গে সঙ্গে ঝাড়ু টা তুলে নিজের হাতে নিল।সসের বোতল টা টেবিলের ওপর রাখলো।
-আজ দেখাচ্ছি মজা আপনাকে।জিন ভর করেছে না কালুয়া ভর করেছে আজ দেখাব আপনাকে।
ইলা মাহির কে ঝাড়ু নিয়ে তাড়া করছে।মাহির উল্টা দৌড় দিচ্ছে।
-পানিজল ছেড়ে দেও।
-না।আজ তো ঝাড়ুর বাড়ি মেরেই ছাড়ব।জিন যে আমার না আপনার মাথায় ভর করেছে বেশ বুঝতে পেরেছি আমি।
দুজনেই ছোটাছুটি করতে করতে বেডরুমে চলে এলো।ইলা হাঁপিয়ে গেছে।ঝাড়ু ফেলে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো।মাহির ও ইলার পাশে।
ইলা হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে,
-আপনার মতো বদ লোক জীবনে দেখিনি আমি।
-ইলা সত্যি বলছি।আমি ইউটিউবে দেখেছি সব।ঝাড়ু মারলে জিন পালায়।
-আর একটা কথা বললেনা আপনাকে ঝাড়ু এবার সত্যি সত্যি মারব।বালের ইউটিউব।আরে ওখানে তো পানি গরম করার রেসিপিও পাওয়া যায়।কদিন পর দেখবেন টয়লেট কিভাবে করতে হয় সেই পদ্ধতিও দেখাবে।আজাইরা।কি আছে ওতে?দু একটা ভালো কিছু ছাড়া আর সব পাগলের কারখানা।
-তোমার ঘাড়ে সত্যি,,, ,।
ইলা এবার পাশ ফিরে উঠে মাহির ওপর উঠে গেল।মাহির নিচে শোয়া তার ওপর ইলা।মাহিরের পানজাবির গলা ধরলো ইলা।
-কি বললেন আপনি?
-দেখো তুমি অকারণে বসে বসে কাদছিলে নিচে।আবার হাসছিলে এজন্য আমি ভাবলাম,,,।
-জিন ধরেছে তাই তো।
-হুম।
-আরে পাগল আমি একটা মুভি দেখছিলাম।ওটা দেখেই হাসছিলাম।কান্নার সিন দেখে কাদছিলাম।আর মন তো খারাপ ছিল এজন্য সকাল থেকে মুড ভালো নেই।
-কি হয়েছে?
-কাল আলিশা র জন্ম দিন।এই প্রথম ওর জন্ম দিনে আমি ওর সাথে থাকব না।
-ওহ।
-হুম।
ইলার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল নিমিষেই।মাহির খেয়াল করছে এতক্ষণে যে ইলা তার ওপর নিজের ভার ছেড়ে রেখেছে।ইলার নিজের ও সেদিকে হুশ নেই।
-পানিজল।
-হুম।
-তুমি তো সব সস একাই খাবে ভেবেছিলাম।এখন তো দেখছি আমার জন্য ও একটু রেখেছো।যাক এতোটা ও নিষ্ঠুর তুমি নও।
-মানে?
ইলার ঠোঁটের পাশ দিয়ে সস লেখে আছে।মাহির চোখের ইশারায় ইলাকে সেটা বোঝালো।ইলা বুঝতে পেরেই মাহিরের ওপর থেকে উঠতে যাবে তার আগেই মাহির তাকে নিজের বাহুবন্দী করে ফেললো।
-কি করছেন মাহির?আমি উঠবো।
-তুমি নিজের ইচ্ছেই এখানে এসেছো।কিন্ত উঠবে আমার ইচ্ছে তে।
-মানে?
-আমিও তো একটু সস খেতে চাই।পুরো বোতল লাগবে না।এটুকুই যথেষ্ট।পুরো বোতলের চেয়ে এটুকু র ঝাঝ আরো বেশি জানো পানিজল?
মাহিরের কথা শুনে ইলা রীতিমতো কাঁপতে শুরু করলো।ওঠার চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু মাহিরের সাথে পেরে উঠলো না।
-মাহির আআআপনি,,,।
ইলার কথা শেষ হওয়ার আগেই মাহির এক অভিনব পদ্ধতিতে নিজের সস খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে লেগে পড়লো।পদ্ধতি টা হয়তো বেশি গভীর থেকে গভীরতর।
৮৪
খাবার টেবিলে বসে আছে নিবিড়।পাশে দাড়িয়ে আছেন ইসমাত বেগম।নিবিড়ের সব পছন্দের খাবার আজ তিনি রান্না করেছেন।রুটি,হালুয়া, চুচড়ো মাছের ঝোল,পোড়া বেগুন ভর্তা,হাসের মাংস আর পুডিং।
হালুয়া রুটি মুখে দিতেই আবার চোখ মুখ খিচে উচ্ছিষ্ট ফেলানোর পাত্রে সব ফেলে দিল।
-ইয়াক।
ইসমাত বেগম দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিবিড়ের কান্ড দেখছেন।মাছের তরকারি, ভর্তা, মাংস একে একে সব মুখে দিয়ে এই একি কাজ করছে নিবিড়।
-আবার কি হলো নিবিড়?
-আম্মাজান এটা কি রেধেছেন।ইশ।ডাল তো সিদ্ধ হয়নি।
-সিদ্ধ করে বেটে নিয়েছি নিবিড়।
-সিদ্ধ সিদ্ধ গন্ধ আসছে তো।
-এমন গন্ধ কি আদৌ হয় নিবিড়?
-দেখি পুডিং দেখি।
নিবিড় একটু পুডিং মুখে দিয়ে সাথে সাথে সেটাও ফেলে দিল।পানি মুখে দিয়ে কুলকুচি করতে লাগলো।
-ইয়াক।আম্মাজান আপনি আপনার রান্না ভুলে গেছেন।
-আমি তো সবই খেলাম নিবিড়।পাশের দু বাড়ি ও দিয়েছি।ওরাও প্রশংসা করলো।
-আম্মাজান ওদের মুখের স্বাদ নেই।এই শক্ত রুটি কেউ চিবুতে পারে?না না।
-তাহলে?না খেয়ে থাকবে?
-আম্মাজান অনুকে বলুন না আমাকে অমলেট করে দিতে।আমার তাতেই হয়ে যাবে।
-নিবিড়!
-থাক।ওর কষ্ট হবে।ওকে বলুন ডিম সিদ্ধ করে দিতে।না না।ওটাতে ও কষ্ট।ওকে বলুন একটু গুড় মুড়ি এনে ঘরে যেতে।আমি খেয়ে নেব।
-নিবিড় চুপ করো তুমি।কেন বার বার এক কথা বলো?অনু চলে গেছে নিবিড়।বোঝার চেষ্টা করো।
ইসমাত বেগমের কথা শুনে এবার নিজের চুল নিজেই ছিড়তে লাগলো ।চিৎকার করে কাদতে লাগলো নিবিড়।
-আমার অনু চাই আম্মাজান।আমার বউ পুতুল চাই।আমার অনু চাই।
নিবিড় চিৎকার করতে করতে হঠাৎকরেই অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেল।
-নিবিড়।
ইসমাত বেগম দৌড়ে গিয়ে ফ্লোরে বসে নিবিড়ের মাথাটা কোলের ওপর রাখলেন।
-নিবিড় কে আবার ডাক্তার দেখাতে হবে।না।নিবিড়কে ছাড়া আমি কি নিয়ে থাকব।
৮৫
কলিংবেলের আওয়াজ এলো।তুলি একটু নড়েচড়ে বসলো।অনু ঘড়ির দিকে তাকালো।আজ অনেক রাত হয়েছে।আরিয়ান এখনো বাড়ি আসেনি।দুপুরে ঐ যে অনুকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেল আর খোঁজ নেই তার।
-অনু।
-হুম।
– ভাইয়া এসেছে বোধ হয়।
-হয়তো।আমি দেখছি।
অনু ভালো করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে দরজা র দিকে গেল।দরজা খুলেই অবাক অনু।দরজার ওপাশের মুখটা তার অচেনা।হুট করেই তার পেছনে চেনা মুখ দাড়িয়ে।সেটা আর কেউ না আরিয়ান।অনু দরজা খোলা রেখেই ভেতরে চলে গেল।
-কি রে নীল দাড়িয়ে আছিস কেন?ভেতরে চল।
-হ্যা,,,,যাচ্ছি।
আরিয়ান নীলের পাশ কেটে ভেতরে ঢুকলো।নীল এখনো হা হয়ে দাড়িয়ে আছে।
“এক অজানা অপ্সরী,
যাকে প্রতিনিয়ত দেখে এসেছি,
খুঁজে এসেছি
গোলাপ বাগানে।”
চলবে———–
#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩০
বিদ্র:পাঠকদের উদ্দেশ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলতে চাই।আপনারা প্লিজ এটা পড়বেন।
আমার নামে অনেক ফেক আইডি খোলা হচ্ছে, ক্লোন করা হচ্ছে।সম্পূর্ণ আমার আইডির ডিটেলস পেজের ছবি সবকিছু কপি করে।আপনারা দয়া করে আমার নামে কোনো আইডি থেকে রিকোয়েস্ট গেলে একসেপট করবেন না।এবং সার্চ দিয়ে কোনো আইডি পেলে সেখানেও রিকোয়েস্ট পাঠাবেন না।
আমার এখন বর্তমানে কোন আইডি ই নেই।আইডি খুললে আমি গল্পের ই পর্বে সেটা জানাব।আপনারা দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না।এরকম ক্লোন আইডি একসেপট করলে আপনাদের ও সমস্যা হতে পারে।
ধন্যবাদ।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
-আরে নীল শোন,,,,,এমা।এ কোথায় গেল?
আরিয়ান কথা বলতে বলতে পেছনে ঘুরে দেখে নীল নেই।আরিয়ান দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
-ও চলে যায়নি তো?কিন্তু আমাকে তো বলে যাবে।
আরিয়ান কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে দেখে নিল এখনো দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে।চোখ দুটো স্থির।যেন কোনো স্ট্যাচু দাড়িয়ে আছে।
আরিয়ান নীলের হাত ধরে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,
-আরে এই নীল।কি রে?তুই বাইরে দাড়িয়ে আছিস কেন?
আরিয়ানের ঝাকুনিতে নীল নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো।
-ও স্যার কিছু না।
-কিছু না বললেই হলো?তুই হা হয়ে তাকিয়েছিলি।কি হয়েছে বলতো?
-না স্যার সত্যি কিছু না।হঠাৎ করে ঐ একটা কাজ মনে পড়ে গেল।
-কি কাজ হুম?নিশ্চয়ই গার্লেফ্রন্ড কে সারাদিন কল করিস নি আজ?
আরিয়ানের কথা শুনে নীল নিজের জিভ কামড়ে বললো,
-আসতাগফিরুল্লাহ।স্যার গার্লেফ্রন্ড আর আমি!স্যার এতো বড় একটা অপবাদ দিতে পারলেন।
-শোন।তোকে আমার একটু ও বিশ্বাস হয়না। এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এতো ভালো জব করিস আবার বলিস গার্লেফ্রন্ড নেই!সত্যি করে বললে কি আমি তোর গার্লেফ্রন্ড কে পটিয়ে নিজের করে নেব নাকি?
-স্যার সত্যি নেই।যা একটু রাখার ইচ্ছে ছিল আপনার আর মাহির স্যারের পাল্লায় পড়ে সব শেষ।
-আমরা আবার কি করলাম?
-ঐ যে।মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন ভালোবাসতে হলে বিয়ে করো।বউকে ভালোবাসো।আমার মাথায় ও না সেটা পেরেকের মতো গেঁথে গেছে।কি করব বলুন?সঙ্গ দোষে নাকি লোহা ভাসে।আর আমাকে দেখুন।আমার ক্ষেত্রে আপনাদের সঙ্গে আমি সিঙ্গেল হয়ে নদীর মাঝে নাকানি চুবানি খাচ্ছি।আহা কি কষ্ট!
-তা এতো কষ্ট করার কি দরকার?বাপ মায়ের তো একমাত্র ছেলে তুই।বিয়েটা করেই ফেল।
-ঐ যে।সেই আবার আপনাদের সঙ্গে আসতে হবে।
-এখানে আবার আমরা কি করলাম?
-মনের মানুষ না পেলে বিয়ে করবেন না আপনি।তেমন আমি।
নীল অসহায় চেহারা নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকালো।নীলের চাহনি দেখে আরিয়ান আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।ফিক করে হেসে দিল।
-স্যার আপনি হাসছেন?
-তোর কথা শুনে যে কেউ হাসবে।নে ভেতরে আয়।
-স্যার শুনুন।
-হুম বল।
-স্যার যিনি দরজা খুললেন উনি কে?
-ওহ।ও ই সেই অনু।
-ওহ!বড্ড বাচ্চা মেয়ে।চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বয়স কত কম তার।
-হুম।মেয়ে টার ভাগ্যটাই খারাপ।এই বয়সে এতো বড় ঝড় সামলাতে হচ্ছে।
-উনি কি ওনার স্বামীর কাছে ফিরবেন না?
-তোকে তো সব বলেছি।আর মেয়েটা কে অনেক শক্ত দেখলাম।ভাঙবে তবু মচকাবে না।স্বামীর কাছে ফেরার কোনো ইচ্ছে ই দেখিনা।অবশ্য ঐ জানোয়ারের কাছে ফেরার থেকে মরে যাওয়া ও ভালো।আরে সব কথা কি বাইরে দাঁড়িয়েই বলবি?ভেতরে আয় তো।সারাদিন আমাকে কিপ্টা বলিস।আজ আর তোকে মামা ওয়েফার না ভালো কিছু ই খাওয়াব।
-হ্যা স্যার চলুন।
আরিয়ান নীলকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজাটা লক করে দিল।
৮৬
ওয়াশরুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে ইলা।বিপরীত পাশে আয়নাতে নিজের মুখ দেখতে পাচ্ছে সে।এখনো যেন গাল দুটো লাল হয়ে আছে।লজ্জা র ভার এতোটাই বেশি হয়ে গিয়েছিল তার।বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে।বুকের ভেতর যেন এখনো ধরফর করছে।যেন কেউ খুব জোরে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে।শরীরের কম্পন এখনো কমেনি তার।এটা কি ছিল?কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা মনে পড়তেই যেন ইলার গাল দুটো আরো গোলাপী রসগোল্লা হয়ে যাচ্ছে।না এই স্পর্শ টা প্রথম বার নয়।মাহির এর আগেও এভাবেই তাকে স্পর্শ করেছিল।কোনো এক রাতে।সেদিন তার চোখে ছিল এক আগ্নেয়গিরির উত্তাপ।এতোটাই রেগে ছিল সে।সেদিনের ঘটনা টা ইলার কাছে অনুভূতি না ঘৃনার জন্ম দিয়েছিল।কিন্তু আজ!এক বিবাহিত নারী।তার স্বামীর থেকে পাওয়া বিশেষ কিছু হয় তো খুব বেশি নয়।তবুও অনুভূতি টা যে কেমন সেটা ইলা নিজেই জানে।আরো আছে মাহিরের নেশাক্ত দৃষ্টি।যেন এক সাগর আলকোহলে ডুবে ছিল তার চোখের মনি দুটো।বার বার ইলার চোখের দিকে তাকাচ্ছিল।মনি দুটো বার বার লাফালাফি করছি ল এদিক ওদিক।ইলা যেন ঐ সাগরেই ডুবে ছিল।তবুও কপাল।লজ্জার ভার বেশি হওয়ায় ইলা আর সইতে পারেনি।ধাক্কা দিয়ে ছুটে আসে ওয়াশরুমে র ভেতর।না হলে আজ হয়তো আরো বেশি কিছু ই ঘটে যেত।চোখ বুজে সেটা কল্পনা করতেই ইলা আরেক দফা কম্পিত হতে লাগলো।
ইলা আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো,
-আমার এমন কেন হয়?একটা পুরানো অনুভূতি পাই আপনি আশেপাশে থাকলে।এই অনুভূতি টা ঝড়ো হাওয়ার জন্য ও হতো।মাহিরের প্রতি টানটা বেড়েই চলেছে।তবে কি আমি মাহিরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি?
ইলার কপালে চিন্তার ভাঁজ।আবার নিমিষেই মিলিয়ে গেল সব।ইলার মুখে একটা অজানা হাসি ফুটে উঠলো।
-দুর্বল হতে সমস্যা কি?উনি তো আমার ই।আমার সম্পত্তি।দুর্বলতা না তার থেকে বেশি কিছুই ওনার প্রাপ্য।আমার সর্বস্ব।
বারান্দায় দাড়িয়ে মাহির পায়চারি করছে।ইলার কথা মনে করতেই নিজে নিজেই পাগলের মতো হেসে উঠছে।
-আমার বউটা বড্ড বেশি লাজুক।কিন্তু এর লজ্জার জন্য যত সমস্যা আমার।কি এমন হতো যদি সময় টা আরো দীর্ঘ হতো।অনেক দীর্ঘ।ধরা যাক পুরো রাতটা।উহুম।তাতেও নয়।এই রাত কেটে যদি আর ভোর না হতো।
“কন্যে,
তোমারেই পাইবার জন্য আমি দূরে দূরে যাই,
বেশিক্ষণ না কেন যে কিছুক্ষণ হয়ে যায়,
আমি বার বার হই তৃষ্ণার্ত, না পারি হতে সংযত,
তোমারই মোহে মরিবার চাই”।
চোখ বুজে মাহির বিড়বিড় করছে।অনুভব করছে প্রতিটা মুহূর্ত।তার সেই শুরু থেকে।শুরুর ইলা কে আজ অব্দি অনুভব করতে গেলে যে পুরো রাতটা কেটে যাবে তবুও শেষ হবে না।মাহির ই জানে ইলা নামের গভীরতা তার জীবনে ঠিক কতটুকু।পানিজলের ঢেউ এর ধাক্কা ঠিক কতটুকু।
মাহির চোখ খুলে ফেললো।এবার ঘরে যাওয়া প্রয়োজন মনে করলো সে।ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
ঘরে ঢুকেই বিছানার দিকে তাকিয়ে আরো বেশি হাসি পেল মাহিরের।ইলা বিছানার মাঝখানে বসে আছে।শাড়ির ওপর বড় ওড়না জড়িয়ে মুখে নিকাব বেধে ফোন টিপছে।মাহির কে দেখেও না দেখার ভান করে চোখ ঘুরিয়ে নিল ইলা।ইলার চোখ দুটোই শুধু দেখা যাচ্ছে।মাহির ধীর পায়ে ইলার এগিয়ে গিয়ে ইলার পাশে বসলো।ইলা মাহিরের দিকে এক নজর তাকিয়ে একটু পিছিয়ে বসলো।
-পানিজল।
-কি?
-তুমি এই রাতে এগারোটার সময় মুখে নিকাব বেধে বসে আছো কেন?
-এগারোটা বেজে গেছে বুঝি?
-হুম।
-ও।আসলে আমি পর্দা করছি।
-কিহ!
-হ্যা।এ তো অবাক হওয়ার কি আছে?আপনিই তো বলেছেন এখন থেকে এভাবে চলতে হবে আমাকে।এজন্য ট্রায়াল দিচ্ছি।
-ওহ।সিরিয়াসলি তুমি পর্দা করছো!
মাহির ভ্রু কুচকে ইলার দিকে তাকালো।ইলা মাথা ঝাকিয়ে উওর দিল,
-হুম।দেখতে পারছেন না।নাকি চোখের ডাক্তার দেখাব আপনাকে?
-আমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে না।যে কাজের জন্য এই রাতের বেলা মুখ বেঁধে রেখেছো সেটাই তো হলো না।
-মানে?
-জরজেটের ওড়নার ভেতর দিয়ে ঠিক ই তোমার গাল দুটো দেখা যাচ্ছে।আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলছো লজ্জা তে লাল হচ্ছো কি ভেবেছো বুঝিনা?
মাহির অট্টো হাসিতে ফেটে পড়লো।ইলা বেচারী আরো লজ্জায় পড়ে গেল।এসেছিল বাঘিনী রূপ নিতে হয়ে গেল বিলাই।কত কষ্টে মাহির কে নিজের সামনে বসিয়ে রেখেছিল সে।ইলা নিজের নিকাব খুলে ফেললো।রাগে কষ্টে কান্না আসছে তার।মাহির আবার তাকে লজ্জায় ফেলে দিল।
-আপনি এটাও দেখে ফেলেছেন?
-হুম।
-থাকব না আমি এখানে।
ইলা উঠতে গেলে মাহির ইলার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়।
-বাদরামি না করে এখন ঘুমা ও।কাল সকালে অনেক রান্না করতে হবে।সকাল সকাল বাজার আসবে।
-কেন?
-তোমার আলু পাখির জন্মদিন।আর তুমি তাকে তার পছন্দ মতো খাওয়াবে না?
-আপনি আলিশার কাছে নিয়ে যাবেন আমাকে?
-হুম।
খুশিতে ইলার চোখ পানিতে ভরে উঠলো।
(সবাই উপরের কথা গুলো অবশ্য ই পড়বেন)
৮৭
নিল বিছানা তে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।ঘুম আসছে না তার।এই প্রথম কাউকে এতোটাই মনে ধরেছে তার।
নীল ফোন টা নিয়ে আরিয়ানের নাম্বারে ডায়েল করলো।একটু পরই রিসিভ করলো আরিয়ান।
-হ্যা নীল বল।
-স্যার আপনি ঘুমাননি?
-না রে।আমি তো অনেক রাত জাগি।তুই ঘুমাস নি কেন?
-ঘুম আসছে না।
-এত রাতে ফোন করলি যে?
-স্যার আমার মনে হয় সেইদিন এসে গেছে।
-কি?
-আমি আপনার থেকে কিছু চাইব।কিন্ত আপনি না করতে পারবেন না।
-কি চাস বল?
-আজ না।যদি কখনো সম্ভব হয় তো।না হলে এটা সম্ভব নাও হতে পারে।
-কি জিনিস সেটা তো বল?
-আজ না।সুযোগ হলে বলব।
-আচ্ছা।
-গুড নাইট স্যার।
-গুড নাইট।
চলবে———-