রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৩৯,৪০

0
1701

#রৌদ্র_কুয়াশা,পর্ব ৩৯,৪০
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩৯

-নিবিড়।নিবিড়?কোথায় তুমি?

ইসমাত বেগম নিবিড়ের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ঘরে চলে এলেন।ইসমাত বেগমের কন্ঠ শুনে হাত থেকে শার্ট টা ফেলে দিল নিবিড়।বাকি যেই শার্ট গুলো সে বের করেছিল সবগুলো ফ্লোর থেকে তুলে দ্রুত খাটের নিচে লুকিয়ে ফেললো।

-আসছি আম্মাজান।

বিছানার চাদর ঠিকঠাক করে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো নিবিড়।বাইরে ইসমাত বেগম দাঁড়ানো।

-আসুন আম্মাজান।
-কি হয়েছে তোমার?শরীর খারাপ নাকি?এসে থেকে একবার ও দেখা করোনি আমার সাথে।
-না আম্মাজান কিছু না।আপনি নামাজ পড়ছিলেন দেখে আমি আর ডাকিনি।
-পরে তো যেতে পারতে?সেই কোন বেলায় ভাত খেয়েছো। এখনো পেটে কিছু পড়েনি।তোমার যে পেটের সমস্যা হয় এতক্ষণ না খেয়ে থাকলে। ভুলে যাও সেটা?
-আপনি আছেন তো।
-চলো।নিচে চলো।খাবার দিচ্ছি।
-এই তো যাচ্ছি।একটু অফিসের ফাইলগুলো ঠিকঠাক করে আসি।
-আচ্ছা।
-হুম।

নিবিড়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ইসমাত বেগম নিচে যাওয়ার জন্য এগুতে গিয়েও থেমে গেলেন।

-নিবিড় শোনো।
-হ্যা আম্মাজান।
-কোমড়ের ব্যথাটা খুব বেড়েছে।এই সপ্তাহে তোমার ছুটি হবে?
-শুক্রবার তো হবেই।ঐ দিন তাহলে আপনাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব।
-আচ্ছা।
-আম্মাজান আপনার ক্যালসিয়াম ওষুধ টা কি শেষ হয়ে গেছে?
-না।আরো তিনদিন যাবে।
-আচ্ছা কাল এনে রাখব ।
-তাড়াতাড়ি কাজ সেরে খেতে এসো।

ইসমাত বেগম চলে গেলেন। নিবিড় আবার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।খাটের নিচে থেকে সব কাপড় বের করে আলমারিতে রাখতে গেল।

-অনু প্রিয়া।কাল তোমার অপেক্ষায় থাকব।কি ভেবেছো তোমাকে চিনবোনা?তোমার দুটো চোখ কি ভোলা এতই সহজ?যতোই নিকাবের আড়াল হও তোমাকে ঠিক চিনব আমি।স্বামী হই তোমার।কেন যে এটা ভুলে যাও?আফসোস!

১০৮

শীতের সকালে গরম চায়ের আমেজটাই অন্য রকম।কম্বলের নিচে বসে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে থেমে থেমে কাপে ঠোট ছোয়ানো।রঙিন পানীয়ের উষ্ণতা দিয়ে শরীরকে উষ্ণ করার বৃথা চেষ্টা। কম্বলের ভেতর দুই পা ডুবিয়ে মাহির চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে ।মাঝে মাঝে একটু হালকা কাশি দিচ্ছে।উদ্দেশ্য ইলাকে জ্বালানো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে ইলা তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছছে।মাহির ইলার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে ইলা তার বদলে অগ্নিদৃষ্টি ফেরত দিচ্ছে মাহির কে।

-পানিজল।কি গো?সকাল সকাল মুখটা পেচার মতো করে রেখেছো কেন?
-কি বললেন আপনি?

ইলা ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে তেড়ে আসলো মাহিরের দিকে।

– আমি পেচা!
-হুম।
-তাইলে আপনিও পেচার বর।
-হুম।
-কি হুম হুম করছেন হ্যাঁ?আজ আপনাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি।
-কিসের?
-আজ থেকে শুরু করে ঐ মার্চ মাস অবধি আপনি আমার ধারে কাছেও ঘেষবেন না।
-আজব!কেন?এটা কেমন কথা?
-হ্যাঁ এটাই কথা।ফাজিল লোক একটা।এই আপনার জন্য এই শীতের সকালে আমাকে পানি নামক বিপদের কাছে ধরা দিতে হচ্ছে।আপনি জানেন শীতকালে আমি আমার জীবনে সপ্তাহে দুদিনের বেশি গোসল করেছি কিনা সন্দেহ।আর আপনার জন্য,,,,,একদম আমার কাছে ঘেষবেন না।আজ থেকে আপনি আর আমি দুজনে আলাদা। ওকে?

ইলা চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে কোমড়ে দু হাত রেখে ঘাড় কাত করে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।মাহির কিছুক্ষণ ইলার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত থেকে কাপটা রেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।মাহিরের হাসি দেখে ইলার আরো মেজাজ খারাপ হচ্ছে।

-ঐ মিয়া।সমস্যা কি আপনার?এভাবে হাসছেন কেন?
-ছি ইলা ছি।তোমাকে পানিজল ডাকতাম ভেবেই মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব জলাশয়ের কাছে গিয়ে আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত।তাদের এত বড় অসম্মান করলাম আমি।
-মানে?
-তুমি শীতকালে দুদিন গোসল করো সেটা আবার মুখে বলছো!আচ্ছা ইলা সত্যি করে বলো তো এই যে তুমি যে এই কাজ করতে ক্লাসে তোমার কোনো বন্ধু বান্ধব তোমার পাশে বসতো?মানে বোঝাতে চাইছি তোমার গা দিয়ে গন্ধ বের হতো না?
-মাহির!

ইলা তেড়ে গিয়ে মাহিরের পায়ের ওপর থেকে একটানে কম্বল সরিয়ে নিল।

-আরে আরে কি করছো?শীত লাগে তো।
-লাগুক। নিজে বাবু সেজে কম্বলের নিচে বসে থাকবেন আর আমাকে খারাপ কথা বলছেন?যান অফিসে যান বলছি।আজ বাড়ি আসুন আপনার কপালে দুঃখ আছে।
-কেন?
-আমার পেছনে লাগা আজ আপনার খবর আছে।অফিসের সময় হয়ে গেছে বলে ছেড়ে দিলাম।হুহ।
-যাচ্ছি তো।চলো এগিয়ে দেবে।
-পারব না।
-ঠিকাছে যাব না।
-আরে।মহা মুশকিল।যান।নাহলে আমার আদর্শ মহামান্য শ্বশুর মশাই আপনাকে অফিস থেকে বের করে দেবে।তার পর আর কি নেই কাজ তো খই ভাজ।
-তুমি এগিয়ে না দিলে আমি গেছি কখনো?

মাহিরের কথাতে ইলা কোনো উওর দিল না।নিজের অজান্তেই তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।ইলা মাহিরের কাছে গিয়ে মাহিরের হাত ধরে খাট নামালো।

-চলুন।
-সোনা বউ।
-পচা বর।
-হা হা।আমিতো সব সময় ই পচা।

মাহির কে সদর দরজা অবধি এগিয়ে দিল ইলা।

-শোনো আর যেন হুটহাট করে কাউকে দরজা খুলে দিও না।
-আচ্ছা।
-নিজের খেয়াল রেখো।ফোনটা কাছে রেখো।ফোন দিলে তো জীবনে তোমার খোঁজ পাইনা আমি।আর পড়তে বসবে।একদম ফাঁকিবাজি করবে না।
-আচ্ছা।

ইলাকে কাছে টেনে ইলার কপালে নিজের ঠোট ছোয়ালো মাহির।আঁকড়ে ধরলো নিজের সাথে।

-ভালোবাসি।
-আমিও খুব।
-আজ না যেতে ইচ্ছে করছে না।
-সেটা তো কখনোই করেনা।
-সকাল থেকে মনটা কেমন করছে।তুমি আমার থেকে দূরে চলে যাবেনা তো ইলা?
-কেন এসব বলছেন আবার?
-তুমি দু কদম দূরে গেলে আমি তোমার থেকে এত কদম দূরে যাব তুমি তার পরিমাপ ও করতে পারবে না বলে দিলাম।
-মাহির!আবার শুরু করেছেন ?
-সরি।আল্লাহ হাফেজ ।
-আল্লাহ হাফেজ।

মাহির এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো।গাড়ি গেট থেকে বেরোনোর সময় আরেকবার জানালা দিয়ে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো মাহির।ইলা মুচকি হেসে নিজেও হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

১০৯

দুপুর বেলা রোদের প্রখরতা অনেক বেশি।রাস্তায় দাড়িয়ে অনু পুরো ঘেমে গেছে।আজ কলেজে একটা পরীক্ষা ছিল তার।সেটাই দিতে এসেছিল সে।প্রতিদিন আরিয়ানের ভাড়া করা রিক্সা তাকে নিয়ে যায়।আজ এখনো রিক্সার কোনো খোঁজ নেই।দুপুর বেলা তেমন কোনো গাড়িও রাস্তায় নেই।রিক্সা যা যাচ্ছে অনু একটাও ঠিক করতে পারলো না।কেউ বা ঠিকানায় যেতে চায়না।কেউবা দ্বিগুণ ভাড়া চায়।আবার আজ ফোনটাও সে রেখে এসেছে।উপায় না পেয়ে রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলো অনু।

কিছু পথ যাওয়ার পর অনুর বার বার মনে হচ্ছে কেউ তাকে অনুসরণ করছে।অনু নিজের ছায়ার পাশে আরেকটা ছায়া দেখতে পাচ্ছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো পুরুষের।কিন্তু কে তার পিছু নেবে?অনু ভাবতেই শিউরে উঠলো।দিনকাল যা পড়েছে কিসের দিন কিসের রাত মেয়েদের তো চলাফেরা করাটাই হয়েছে বিপজ্জনক।আর কলেজেও বখাটে ছেলেদের অভাব নেই।দুপুরের সময় টা চারপাশটাও কেমন শুনশান।অনুর ভয়টা আরো জেকে বসলো।অনু আরো দ্রুত পা চালাতে লাগলো।নিজের ছায়ার পাশে সেই ছায়াটাকেও দ্রুত এগিয়ে আসতে দেখছে সে।অনু আরো দ্রুত যেতে লাগলো। ছায়াটাও যেন অনুর সাথেই তাল মিলিয়ে আসছে।

দ্রুত চলতে গিয়ে নিজের পায়ের দিকে তাকাতেই ভুলেই গিয়েছিল সে।বোরখা তে জড়িয়ে রাস্তার ওপর মুখ থুবড়ে পড়লো অনু।কিন্ত মাটিতে পড়তে পাড়লো না।তার আগেই সেই ছায়াটাই তার হাত ধরে বসেছে তাকে পড়তে দেয়নি।পেছনের মানুষ টি অনুকে টেনে দাঁড় করালো। পেছনে ফিরে তাকাতে ই অনুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

-আর কতো পালাবে?পারবে আমার সাথে?বেশ চালাক হয়ে গেছো তুমি।আমার সাথে লুকোচরি খেলছো?চলো তোমার সাথে সব খেলা খেলব আজ।

অনুর মুখ ফুসকে বেড়িয়ে গেল তার জীবনের বিপদ সমতুল্য ব্যক্তির নাম,

-নিবিড়!

১১০

এই নিয়ে দুবার কলিংবেলের আওয়াজ।মাহিরের কথা মতো আগে সিসি টিভি ফুটেজ চেক করতে ঘরে আসলো ইলা।মনটিরে ভেসে আসা মেয়েটিকে দেখে ইলা একটু অবাক হলো।

-আরে। এটা সেই মেয়েটা না?মাহির বলেছিল।কি যেন নাম?মাইশা মনে হয়।উনি এখানে কেন?মাহিরের সাথে দরকারে এসেছে নাকি?

ইলার ভাবনার মাঝেই স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে মাইশা আরেকবার কলিংবেল বাজালো।

-এতোবার বেল বাজাচ্ছে।নিশ্চয়ই দরকারেই এসেছেন।যাই দেখি।

চলবে————-

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৪০

-জি বলুন?

দরজা খুলে মাইশাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো ইলা।ইলার কন্ঠ পেয়ে মাইশা কিছুক্ষণ ইলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।ইলাকে পা থেকে মাথা অবধি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে নিল।কি এমন আছে এই মেয়ের মধ্যে?আলফাজ সাহেবের ভাষ্য মতে ইলা আরো একজন বার ড্যান্সার ছিল।মাহির কেন এই রকম একটা মেয়েকে বিয়ে করলো?প্রশ্নের উওর খুঁজে পায়না মাইশা।

-আপনি মাহিরের স্ত্রী?
-জি।
-আসলে আমি একটু দরকারে এসেছিলাম।
-মাহির তো বাড়িতে নেই।
-অফিসে গেছে তাই তো?
-জি।
-দরকার টা আপনার সাথে।
-আমার সাথে!
-জি।আপনি যদি কিছুক্ষণ সময় দেন আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।বেশিক্ষণ না।অল্প কিছুক্ষণ। তার পর চলে যাব আমি।

মাইশার কথা শুনে ইলা বেশ দ্বিধায় পড়ে গেল।সে কি মাইশাকে ঢুকতে দেবে?এমনিতেও মাইশার সাথে আগে কখনো পরিচয় হয়নি তার।হুট করে অচেনা কাউকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না ইলা।

-এনি প্রবলেম?

মাইশার প্রশ্ন শুনে ইলা মাথা থেকে ওসব চিন্তা দূরে ফেলে দিল।মেয়েই তো।সে তার কী ক্ষতি করবে।

ইলা মুখে হাসি রেখে উওর দিল,

-আসুন।

মাইশা ভেতরে ঢুকতেই ইলা দরজা লাগিয়ে দিল।মাইশা ভেতরে ঢুকে চারদিক টা ঘুরে ঘুরে দেখছে।মনে মনে মাহিরকে বাহবা দিচ্ছে সে।বেশ ভালোই সে সাজিয়েছে সব।

-দাড়িয়ে আছেন কেন?বসুন।

ইলার কথা শুনে মাইশা পেছনে ঘুরে তাকালো।মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

-হুম।আপনিও বসুন।
-চা কফি কি খাবেন?
-আমি কিছুই খাব না।কিছু কথা বলেই চলে যাব।
-কিন্তু?
-প্লিজ।

মাইশার সাথে সাথে ইলা ও সোফায় বসলো।হুট করেই মাইশার চেহারায় একটা গম্ভীরতা ফুটে উঠলো।ইলার কপালে ভাজ পড়েছে।সে উৎসুক হয়ে বসে আছে।কি এমন কথা বলতে এসেছে মাইশা?

-বলুন।
-তুমি ইলা তাই তো?
-জি।
-তুমি করেই বললাম।তুমি আমার বয়সে অনেক ছোট হবে।
-সমস্যা নেই।
-ইলা মাহিরের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে কতদিন?
-সাড়ে সাত মাসের মতো।কেন?
-মাহিরের সম্পর্কে আই মিন তার অতীত সম্পর্কে কিছু কি জানো?
-কিসের অতীত?ওনার মা থেকেও নেই সেটা জানি।তারপর বাবা,,,।
-উহুম।সেটা না।
-তাহলে?
-মাহিরের আগে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে কি না এসব?

মাইশার কথা শুনে ইলার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।মাইশার প্রশ্ন গুলো তাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে।

-দেখুন মাহির আমার স্বামি।উনি আমাকে এটাই বলেছেন আমার আগে ওনার জীবনে কেউ আসেনি।
-মিথ্যা বলেছে।চরম মিথ্যা। ও একটা বিশ্বাসঘাতক। ঠকবাজ।
-চুপ করুন।কি বলছেন কি আপনি?মাহির কখনো এমন হতে পারেনা।

মাইশা কান্নায় ফেটে পড়লো ইলার সামনে। ইলা আরো অবাক হয়ে যাচ্ছে।তার বুকের ভেতর টা ও যেন চুরমার হয়ে যাচ্ছে।মাহিরের নামে এরকম কথা কেউ কেন বলবে?

-এটাই হয়েছে।তুমি ওর সম্পর্কে কিছুই জানোনা।
-আমি কিছু জানতেও চাইনা।আপনি যান এখান থেকে।বুঝেছি আমার শ্বশুর মশাই আপনাকে পাঠিয়েছে না?উনি তো আমাকে পছন্দ করেন না।এটাই তো আসল কারণ।আর কে আপনি যে আপনার কথা আমি শুনব?
-আমি মাহিরের স্ত্রী।অবশ্য স্ত্রী বললে ভুল হবে।এখন তো ওর দুটো বউ।আমি ওর প্রথম স্ত্রী।আর তুমি দ্বিতীয়।

দ্বিতীয় কথাটা যেন ইলা ঠিক সইতে পারলো না।ইলার চোখ থেকে পানি পড়ছে অনবরত।তার কাছে পৃথিবীটাকে বড় বেশি স্বার্থপর মনে হচ্ছে আজ।

-আমি আপনার কথা বিশ্বাস করিনা।
-আমি জানি বর্তমান যুগে এসব কেউ বিশ্বাস করেনা।আমি সব প্রমাণ নিয়ে এসেছি।

মাইশা নিজের ব্যাগ থেকে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার বের করে ইলার হাতে দিল।ফোন থেকে সব ছবি দেখালো ।তার আর মাহিরের বিয়ের ছবি থেকে শুরু করে হানিমুন অন্যান্য সময় এর ছবি।

-এবার এটা বলোনা এসব বানোয়াট।

ইলার হাত পা কাঁপছে।কাবিননামার তারিখ ও অনেক আগের।সেখানে ও সবকিছু ঠিকঠাক আছে।কাগজটা মিথ্যা না সেটা বোঝাই যাচ্ছে।

-তুমি একবার ও ভাবো নি কেন তোমার মতো একটা বার ড্যান্সার কে মাহির বিয়ে করবে?কেন তার নিজের বাড়িতে না রেখে এখানে তোমাকে রেখেছে?সেটা তো ভাববে না।তোমাদের মতো মেয়েরা শুধু অন্যের সংসার নষ্ট করতে জানে।আমি প্রথমেই বুঝেছিলাম আমার মাহির আর আগের মতো নেই।সব সময় আমাকে এড়িয়ে চলে।রাতে ও বাড়িতে ফিরেনা। জিজ্ঞেস করলে বলে ওমুক কাজ আছে তমুক কাজ আছে।দিনের বেলা যা একটু ওকে কাছে পাই।আমিতো কখনো কল্পনাও করতে পারিনি ও আমাকে এভাবে ঠকাবে।তোমাকে আর মাহিরকে সেদিন শপিংমলে দেখে আমার সন্দেহ হয়।পরে খোঁজ নিয়ে জানি ও আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করেছে।ওহ।তোমাকে আরেকটা জিনিস দেখানোর আছে।

মাইশা নিজের ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে ইলার হাতে দিল।

-দেখ।

ইলার হাত পা কাঁপছে।আরো কি বড় ধরনের চমক তার জন্য অপেক্ষা করছে সেটা ভাবতেই আরো শিউরে উঠছে সে।ইলা কাপা কাপা হাতে খামের ভেতর থেকে একটা কাগজ বের করলো।কাগজ টা দেখা মাত্রই ইলার হাত থেকে কাগজটা পড়ে গেল।

-প্রেগন্যানসি রিপোর্ট!
-হ্যাঁ।আমি মা হতে চলেছি।আর মাহির বাবা।এবার বলো কি ক্ষতি টা আমার হয়েছে।আমার সংসার টা ভেঙেছো তুমি।এখন আমার বাচ্চাকেও তার বাবার থেকে বঞ্চিত করছো।তোমার ভালো হবে?কখনো না।কখনো না।আমার সংসার ভেঙে তুমি জীবনে সুখি হবেনা।আরে টাকার এতো দরকার হলে আমার কাছে আসতে।ভিক্ষুক দের ও দিনে পাচশো টাকা দেই আমি।তোমাকে না হয় কয়েক লাখ দিয়ে দিতাম।আমার সংসার টা কেন ভাঙলো?

ইলা পুরো পাথর হয়ে গেছে সব শুনে।সামনে থাকা কোনো কিছুই মিথ্যা বলা যায়না।চরম সত্য আজ এটাই যে মাহির তাকে ঠকিয়েছে।

-আপু আমি কারোর সংসার ভাঙিনি। আমি এসব কিছুই জানিনা।সত্যি বলছি।জানলে মরে যেতাম রাস্তায় ভিক্ষা করতাম তবুও কখনো নিজে মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙার কথা কল্পনাও করতাম না।
-এখন নাটক বন্ধ করো।একজন তোমাকে বিয়ে করতে বললো আর তুমি তার আগা গোড়া না শুনেই বিয়ে করে নিলে?এতোই লোভ ছিল তোমার।অবশ্য কি বলব।তোমাদের মতো মেয়েদের তো এটাই পেশা।কান খুলে শুনে রাখো।জীবনে সুখী হবে না তুমি।আর মাহিরের ব্যবস্থা তো আমি করবোই।তোমার পরিবার কেও দেখে নেব আমি।

মাইশা সব কাগজপত্র তুলে ফোন নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো।

-কান খুলে শুনে রাখো।আমার সংসার ভেঙেছো তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে তুমি কল্পনা ও করতে পারবেনা ।

মাইশা সদর দরজা কাছে চলে গেল।দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।ইলা এখনো সোফায় বসে আছে।আজ এতো বড় ঝড় ইলার ওপর দিয়ে যাবে ইলা কল্পনা ও করতে পারেনি।কষ্টের পরিমাণ যখন অধিক,চোখের পানি তখন বেমানান।ইলা যেন পাথর হয়ে গেছে।

-মাহির আমি প্রথম ও শেষ হতে চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে উচ্ছিষ্ট বানিয়ে দিলেন।এভাবে ঠকালেন আমাকে।আজ কিছু না করেও আরেকবার সেই এক কথা শুনতে হলো।আমি ঘর ভেঙেছি।

১১১

নিবিড়কে দেখে অনুর দম বন্ধ হয়ে আসছে।নিবিড়ের মুখে এক অদ্ভুত রকমের বিশ্রী হাসি লেগে আছে।অনু কে দাঁড় করিয়ে অনুর হাতটা ধরে ঘুরিয়ে পেছনে নিয়ে নিবিড় অনুকে কাছে টেনে নিল। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো অনু।

-আআহ।
-কষ্ট হচ্ছে অনু প্রিয়া?আমিও না খুব কষ্ট পেয়েছি।চলো আজ থেকে দুজনে সমানে সমানে কষ্ট ভাগ করে নেব।অনু সোনা তুমি তো দেখছি আগের থেকে খুব বেশি সুন্দর হয়ে গেছো।স্বামী স্পর্শ ছাড়াই?চলো আজ থেকে আরো সুন্দর বানানোর প্রস্তুতি নেব তোমার জন্য।
-ছেড়ে দিন আমাকে।বাঁচাও। কেউ বাঁচাও।
-এসব কি অনু প্রিয়া?নিজের স্বামী থেকে পালাতে চাইছো ?ইটস ভেরি ব্যাড ডিয়ার।

ফাঁকা রাস্তায় দুটো ছায়ার মাঝেই আরেকটা ছায়ার আবির্ভাব হলো।ছায়াটি এসেই নিবিড়কে পেছন থেকে আঘাত করলো।

-আহ।

পিঠে হাত দিয়ে কয়েক কদম দূরে সরে গেল নিবিড়।

-অসভ্য লোক একটা।লজ্জা নেই।রাত বিরেতে নিজের বউকে পিটিয়ে বাড়ি ছাড়া হতে বাধ্য করিস।এখন আবার রাস্তা ঘাটে এসেছিস নষ্টামি করতে।

অনুর সামনের লোকটিকে দেখে চিনতে অসুবিধা হলোনা।বেশ কয়েকবার ই সে দেখেছে তাকে।

-নীল সাহেব আপনি!
-আপনি ঠিকাছেন?
-জি।

অনু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।নিবিড় নীলের দিকে তেড়ে আসতে গেলে নীল নিবিড়ের পা বরাবর লাথি মারে।নিবিড় সাথে সাথে মুখ থুবড়ে পড়ে রাস্তার ওপর।

-আরেক পা এগুলে না তোকে পুলিশে ধরিয়ে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব।

নিবিড় পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উঠে দাড়ালো।অন্য পথে হাঁটা ধরলো।

-এই লোকটাই তাহলে আপনার সেই স্বামী?ছিহ।কোন ধরনের শয়তান লোক।এর কথা শুনেই বুঝেছি ।
-আপনি এখানে?
-আমাদের আরেকটা ফ্যাক্টরির জমি ঐ সামনেই কেনা হয়েছে।সেখানে কিছু কাজ ছিল।আপনাদের দেখে এগিয়ে আসি।ঐ লোকটার কন্ঠ আর আপনার কন্ঠ শুনে বুঝেছি কাহিনী কি।কিন্তু এ এখানে কি করছে?
-আমি জানিনা উনি কি ভাবে এখানে এলো।

একটু পর একটা রিক্সা এসে অনুর সামনে থামলো।রিক্সা ওয়ালা এসেই অনুর সামনে হাতজোড় করে দাড়ালো।

-মা আমার স্ত্রী অসুস্থ।আমার দেরী হয়ে গেছে।কলেজের সামনে দেখি তুমি নেই।এতদূর এসে তোমাকে পেলাম।আমাকে ক্ষমা করো।
-চাচা ক্ষমা চাইছেন কেন?চলুন এখন না হয় বাড়ি অবধি এগিয়ে দেবেন।
-তুমি উঠে পড়ো।

অনু নীলের দিকে তাকালো,

-ধন্যবাদ নীল সাহেব।
-ধন্যবাদ দেবেন না।যাক আপনার রিক্সা এসে গেছে।আমার আর এগিয়ে দিতে হলোনা।আরিয়ান স্যারকে সব জানাবেন।উনি ব্যবস্থা নেবেন।
-জি আচ্ছা।

অনু রিক্সা তে উঠতেই রিক্সা নিজ গন্তব্যে যেতে শুরু করলো। নীল মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে অনুর যাওয়ার দিকে।

১১২

-ডক্টর কি দেখলেন?

ডা,সাফোয়ান মিশরা আরিয়ানের কথা শুনে প্রেসক্রিপশন এর ওপর থেকে কলম সরিয়ে তার দিকে তাকালেন।

-মি,আরিয়ান আরো কিছু টেস্ট করতে হবে।
– আমার হঠাৎ এমন কেন হলো?
-রিপোর্ট না আসলে কিছু বলতে পারছিনা।আপনি নিয়মিত ওষুধ গুলো খাবেন। আর নিজের যত্ন নিন।আপনার প্রেসার এতো লো কেন?ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেননা?
-করি।কাজে ব্যস্ত থাকি বেশি।
-নিজের খেয়াল রাখবেন তো আগে।
-জি ডক্টর।
-টেস্ট গুলো করিয়ে নিবেন।
-আচ্ছা।

ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো আরিয়ান।কপালে চিন্তার ভাজ।চিন্তাটা আপাতত অনুকে নিয়ে।ডক্টরের কেবিনে যাওয়ার আগে নীল তাকে ফোন করে সব জানিয়েছে।

-এই নিবিড় লোকটার ব্যবস্থা করতেই হবে।আর অনুকে ও খুব শীঘ্রই আমার করার প্রক্রিয়া ও শুরু করতে হবে।

১১৩

-আপনি আমার সাথে এটা কিভাবে করতে পারলেন মাহির?কি হলো বলুন?

চলবে———

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here