#ইস্ক_সুফিয়ানা
#বোনাস_পর্ব
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa
গত রাতের আরমান স্যার ওই কথাগুলো বলে যাওয়ার পর এক মুহূর্তের জন্যেও শান্তিতে বসতে পারিনি আমি, ভীষন চিন্তা হচ্ছে, উনি কি এমন করবেন যাতে বিয়েটা হবেনা আর কেনোই বা উনি আমার ব্যাপারে এতো ইন্টারফেয়ার করছেন? নাহ! ভাবতে পারছি না আর..দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে, এখনও অব্দি সব ঠিকঠাক আছে তবুও শান্ত হয়ে বসতে পারছি না আমি, জানিনা কি করতে চলেছেন উনি..ভাবলাম একটা ফোন করি ওনাকে, ফোনটা হাতে তুলেছি তখনই আমার বান্ধবী তুলি এলো
“রুহি চল! তোকে সাজাতে পার্লার থেকে মেয়েরা চলে এসেছে, তৈরি হয়ে নিতে হবে এবার”
“হ্যা তুই যা আমার একটা ফোন করার আছে, করেই আসছি”
তুলি আমার থেকে ফোন নিয়ে বিছানার ওপর রেখে আমার হাতটা ধরলো
“ফোনে যা কাজ করার আছে সব বিয়ের পর করবি, এখন চল তো নাহলে দেরি হয়ে যাবে..চাচী তাড়া দিচ্ছে”
“তুলি, দুমিনিট সময় দে এই ফোনটা করা অনেক জরুরী”
“তোর বিয়ের থেকে তো আর জরুরি নয় তাইনা? তাছাড়া তুই তো চাকরি ও ছেড়ে দিয়েছিস বিশেষ আর কোনো দরকার তো নেই ফোন করার তাইনা? চল চল”
আমার কথা তোয়াক্কা না করে তুলি টেনে নিয়ে গেলো, আমার আর আরমান স্যারের সাথে কথা বলা হলো না.. ওদিকে আরমানের বাবা সবে অফিস থেকে ফিরলো, মিসেস শাহ্ পানি এনে দেন ওনাকে, মিনাল ও মায়ের সাথেই দাড়িয়ে আছে
“কলেজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো তোর? পড়াশুনা ঠিকঠাক চলছে তো?”
“ইয়েস বাবা এভরিথিং ইজ পারফেক্ট”
“গুড, মন দিয়ে পড়বি যাতে ভালো রেজাল্ট করতে পারিস..ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করলে তোর থাইল্যান্ড ট্যুরের ইচ্ছা পূরণ করবো, মনে আছে তো?”
“অবশ্যই মনে আছে, এন্ড আই প্রমিজ রেজাল্ট খুব ভালো হবে আমার”
মিস্টার শাহ্ সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, তারপর মিসেস শাহ্ কে উদ্দেশ্য করে বললেন
“আচ্ছা শোনো আজকে একটা বিজনেস পার্টি আছে, ভাবছি আরমানকে নিয়ে যাবো, সন্ধ্যায় তৈরি থাকতে বলো ওকে”
“কিন্তু ও তো সকালেই বেরিয়ে গেছে তারপর আর বাড়ি আসেনি, কখন ফিরবে বলেও যায়নি”
“সেদিন তোমার ছেলে কতো বড় বড় কথা বললো, যখন আমার ওকে দরকার পড়বে তখনই নাকি ওকে পাবো.. কই? আজকে ওকে দরকার আর ও তো নেই”
“আরমানও তো ব্যস্ত থাকে, হয়তো কোনো কাজে বাইরে গেছে..এমনিতে তো আমাকে বলে যায় আজকে বলেনি কিছু”
“জানিনা আমার এই বিজনেস ছেলেটার আদৌ সামলানোর ইচ্ছা আছে কি না, যাই হোক আমি ওকে ফোন করে বলে দেবো”
মিসেস শাহ্ আর কিছু বললেন না,কথা শেষে মিস্টার শাহ্ ওপরে চলে যান..সন্ধ্যায় পার্টিতে যাবে বলে অফিস থেকে বিকেলেই ফিরে এসেছেন, উনি যাওয়ার পরপরই মিনাল ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে
“আমার কেমন ডাউট হচ্ছে, ভাইয়া আবার রুহি আপুর বিয়েতে যায়নি তো? আজকেই তো বিয়ে ছিলো তাইনা মা?”
“ওখানে কেনো যেতে হবে? দেখলি না গতকাল রুহির বিয়ের কথা তুলতেই কেমন রেগে গেলো? অন্যকোথাও গেছে হয়তো ওর কাজে”
দুষ্টু হাসি দিয়ে দু হাতে মায়ের গাল আলতো করে টেনে দেয় মিনাল
“উফ! আমার ইনোসেন্ট মা, তুমি শুধু তোমার ছেলের বাহ্যিক রাগটাই দেখলে? তার পেছনে লুকিয়ে থাকা গভীর রহস্য তোমার নজরে পড়লো না?”
“এখানে আবার রহস্যের কি আছে?”
“আছে আছে, আমি যেটা বুঝতে পারছি সেটা তুমি পারছো না, অনেক বড় ঘাপলা আছে এখানে”
মেয়ের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না মিসেস শাহ্ তবে মিনাল আরমানের যেকোনো ব্যাপার খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করে, আর এই রুহির ব্যাপারটাও ওর নজর এড়াতে পারেনি
লাল বেনারসিতে বধূবেশে তৈরি হয়েছি আমি, খবর পেলাম আমার বরের বাড়ির মানুষ নাকি এক – দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে আসবেন..এদিকে আমি এখনও চিন্তামুক্ত হতে পারিনি, আরমান স্যারকে ফোন করেছিলাম কিন্তু উনি ধরলেন না..গতকাল দুদিন আমার ফোন বন্ধ ছিলো কিনা, হয়তো আজ তার শোধ তুলছেন..ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললাম আমি ওদিকে আরমান আর সিফাত হাজির হয়ে গেছে বিয়ে বাড়িতে, সিফাত নরমালি এসেছে, ওকে দেখলে সেভাবে সমস্যা হবেনা কিন্তু আরমান এখুনি কারো সম্মুখে আসতে চায় না, কারণ ও জানে মিডিয়ার লোকেরা কেমন, রুহির বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার সময় ও এখানে উপস্থিত আছে জানলে সবাই ওর সাথে রুহির নাম জড়িয়ে ভুলভাল নিউজ করবে আর সেটা আরমান একেবারেই চায় না, তাই ন্যাভি ব্লু হুডি পড়ে একেবারে মাথা ঢেকে এসেছে, মুখেও কালো মাস্ক, এভাবে দেখলে কেউ হুট করেই চিনবে না যে ও আরমান শাহ্ বা রুহির বস্!
“ব্রো, আরেকবার ভেবে দেখ! বাড়ির পেপারস না হয় তুই ওই বাড়ির কাজের লোককে টাকা খাইয়ে চুরি করিয়ে আনিয়েছিস..এরপর যদি কোনো ঝামেলা হয়?”
“ঝামেলা হওয়ার হলে না এই পেপার আমাদের হাতেই আসতো না, ওই লোকটা নিজের বাড়ির মধ্যে পেপারস রেখে দিয়েছিলো বলে পেয়েছি নাহলে পেতাম? চুপ থাক এখন”
ওরা ভেতরে ঢোকে, বাড়িতে মোটামুটি ভালোই আত্মীয় স্বজন এসেছে, তাদের মাঝেই আরমান আর সিফাত মিশে যায়..একসময় সিফাত দেখলো আরমান অন্যদিকে যাচ্ছে
“ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?”
“রুহির ঘরে যাচ্ছি, তুই গিয়ে ওর আঙ্কেলকে খোঁজ, এই বাড়ির পেপারস আমি সরাসরি ওনার হাতেই দিতে চাই”
“ওকে বাট তুই কিভাবে জানলি ওদিকে রুহির ঘর? তুই তো আগে আসিসনি এখানে”
“কে বললো আসিনি? আমি আগেও ঢু মেরেছি এখানে, অবশ্য মিস রুহি আমাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো.. এনিওয়ে যা নিজের কাজ কর”
সিফাত অবাক হয়ে যায় আরমানের কথা শুনে, এখানে আগেও এসেছিল আর ওকে বলেনি? মনে মনে কিছুক্ষণ দুঃখ করলো ছেলেটা তারপর গেলো রুহির চাচা কে খুঁজতে ওদিকে আরমান যখন রুহির ঘরের দিকে যাচ্ছিল তখনই ওর চাচীর মুখোমুখি হয়, অচেনা ছেলে দেখে ওর চাচী আটকে দেয়
“এক মিনিট, এই ছেলে তুমি কে? তোমাকে তো আগে দেখিনি”
আরমান দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়ে দেয় কারণ আগে থেকেই ও আর সিফাত ঠিক করে রেখেছিলো কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে কি উত্তর দেবে
“জ্বি আমি..আমি ছেলে আই মিন রাকিবের বাড়ি থেকে এসছি, ভাবির জন্যে ও কিছু গিফট দিয়েছে, তাই আমাকে আগে পাঠিয়ে দিয়েছে ওনাকে দেওয়ার জন্যে”
উপহারের কথা শুনেই রুহির চাচীর চোখমুখ চকচক করে উঠলো, অতি লোভী মানুষের লক্ষণ আর কি, উনি বিশাল একটা হাসি দিয়ে পথ ছেড়ে আরমানের পথ ছেড়ে দাড়ান
“ওহ আচ্ছা উপহার দিয়েছে, বেশ তো! ঐযে শেষের ঘরটা রুহির, যাও ওখানেই আছে”
উপহারের কথা শুনেই রুহির চাচীর চোখমুখ চকচক করে উঠলো, অতি লোভী মানুষের লক্ষণ আর কি, উনি বিশাল একটা হাসি দিয়ে পথ ছেড়ে আরমানের পথ ছেড়ে দাড়ান
“ওহ আচ্ছা উপহার দিয়েছে, বেশ তো! ঐযে শেষের ঘরটা রুহির, যাও ওখানেই আছে”
“আপনি কি একটু খুলে দেখতে চান অ্যান্টি?”
“না না, এখন আর দেখে কি করবো? পরে তো এগুলো আমিই ..”
“জ্বি? কি বললেন?”
“ন..না না কিছুনা বাবা! তুমি যাও! দিয়ে এসো রুহিকে..যাওয়ার সময় না হয় দেখা করে যেও আমার সাথে”
আরমান বেশ বুঝেছে এই মহিলা বেশ লোভী, রুহির বিয়ের গিফট ও নিজে হাতানোর প্ল্যান করছে..এই মহিলাকে তো ও পরে দেখে নেবে..কিন্তু এখন আর সময় নষ্ট না করে ও চলে গেলো রুহির রুমে, ওর সাথে তখন এক বান্ধবী আর চাচাতো বোন ছিলো..রুমে ঢুকতেই আরমানের চোখ আটকে যায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে থাকা রুহির দিকে, আয়নার সামনে বসে নিচু হয়ে কিছু একটা ভাবছে মেয়েটা, আর আরমান আয়নায় দেখছে ওকে..কি অপরূপ সুন্দরী লাগছে ওকে!! তুলি এগিয়ে এসে আরমানকে জিজ্ঞাসা করে
“কাকে চাই আপনার?”
ধ্যান ভেঙে যায় আরমানের, হাল্কা কাশি দিয়ে বলে
“আমি ছেলের বাড়ি থেকে এসেছি, একটা ছোট্ট গিফট দেবার ছিলো সেটাই কণেকে দেবার ছিলো”
ওনার কথায় মাথা তুলে তাকালাম, আয়নার দিকে চেয়ে দেখলাম দরজার সামনে একজন লোক দাড়িয়ে আছে..আমি উঠলাম টুল থেকে, তুলি দুষ্টুমি করে বললো
“আচ্ছা? শুধু রুহির জন্যেই পাঠিয়েছে? আমাদের শালীদের জন্যে বুঝি কিছু পাঠায়নি? আমরাও কিন্তু অর্ধেক জিনিসের ভাগীদার”
আরমান ও ওদের তালে তাল মিলিয়ে বলে
“অবশ্যই পাবে, কিন্তু এখন না পরে..তোমরা যদি এখন এখান থেকে যাও তাহলে আমি তোমাদের দুলাভাইকে বলবো তোমাদের জন্যে গিফট পাঠাতে”
“কেনো? আমরা থাকলে কি সমস্যা?”
“আসলে কিছু কথা আছে তোমাদের বোনের সাথে, তাছাড়া গিফট টাও স্পেশাল, কারো সামনে দেওয়া বারণ আছে”
“ওহ আচ্ছা আচ্ছা, রুহি..তোরা তাহলে কথা বল, দেখ দুলাভাই কি গিফট্ পাঠিয়েছে, আমরা বাইরে আছি”
তুলি নয়না কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো, আমি বাম হাতে ওড়না ধরে এগিয়ে এলাম ওনার সামনে
“জ্বি বলুন”
“ইউ আর লুকিং ডেডলি বিউটিফুল”
কেমন এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে, প্রথমে ওনাকে ছেলে পক্ষের বন্ধু তালিকার কোনো ছ্যাচড়া ছেলে ভেবে চোখ সরিয়ে নিলাম দিক থেকে, বিরক্তি নিয়ে বললাম
“কি বলবেন জলদি বলুন”
“বলতে বসলে তো রাত ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু আমার বলা যে শেষ হবে না”
ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি, কি বলে চলেছেন উনি এসব? ছেলেদের এ ধরনের কথাবার্তা শুনলেই গা জ্বলে যায় আমার.. নেহাৎ উনি ছেলে পক্ষ থেকে এসেছেন নাহলে আচ্ছা করে ক্লাস নিতাম!
“শুনুন, হেয়ালি মার্কা কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার, যা বলার পরিষ্কার ভাবে বলুন নাহলে দরজা খোলা আছে, যেতে পারেন”
” আহা, এতো ক্রোধিত কেনো হচ্ছো! সবসময় তো অতি সাধারণ রূপে তোমাকে দেখেই মুগ্ধ হয়েছি, কিন্তু আজ এই প্রথম অন্য রুপে দেখছি..কনের সাজে যে তোমাকে এতোটা সুন্দর লাগবে ভাবিনি, একটু প্রশংসা তো করতে দাও..”
স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি, কথাগুলো শুনে নয় বরং ওনার গলার আওয়াজ শুনে.. নাহ! ভুল করিনি আমি, স্বয়ং আমার বস আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন, নিমিষেই ভয়ের কালোমেঘে ছেয়ে গেলো আমার মুখ, উনি মাস্ক খুলে তাকালেন, ঠোঁটের কোণে চিরচেনা সেই বাকা হাসি..দেখেই বোঝা যাচ্ছে পুরো আটঘাট বেঁধেই এসেছেন আজকে
“আ..আপনি, আপনি সত্যিই চলে এলেন?”
“এতো অবাক হবার কি আছে? কাল রাতেই তো বলে গেলাম যে বিয়েটা হবেনা, আমি না এলে সেটা কিভাবে হবে? আমাকে তো আসতেই হতো”
“স্যার, আমি জানিনা আপনি কি করতে চাইছেন, আমি অনুরোধ করছি দয়া করে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি করবেন না”
“আরে বাবা এত ভয় কেনো পাচ্ছো? আমি কিছুই করবো না, যা করবে সব তোমার চাচাই করবে..আমি শুধু ওনার আঁকাবাঁকা রাস্তাটা ঠিকঠাক করে দেবো আর কি”
ঠোঁট আকড়ে দাড়িয়ে আছি আমি, ওনার মুখে কেমন এক খুশির চমক দেখা যাচ্ছে, বিয়েটা যে আজ ভাঙিয়ে ছাড়বে ভালোই বোঝা যাচ্ছে, আমার হুস উড়ে যাওয়া মুখটা দেখে হাসির মাত্রাটা আরেকটু বাড়ালেন উনি, আমার দিকে ঝুঁকে এলেন, আমি পেছনে সরে যাচ্ছিলাম উনি আমাকে দু হাতে ধরে যে জায়গায় ছিলাম ওখানেই দাড় করিয়ে দিলেন, আজ কেনো যেনো ওনাকে একটু ভয় লাগছে আমার..উনি ঝুঁকে আমার কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিসিয়ে বললেন
“তুমি তো অনেক জেদী মেয়ে, কালকে এতবার বলে গেলাম তারপরো বিয়ের সাজে তৈরি হয়ে বসে আছো? বিয়ের জন্যে এতো তাড়া তোমার?”
নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে আমার, উনি কি করতে চাইছেন কি বোঝাতে চাইছেন সব আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, উনি ওইভাবেই আবার বলে উঠলেন
“এতো সহজেই হার মানবে না তুমি বুঝেছো? আর ওই ছেলেকে তো একদমই বিয়ে করবে না, শুধু ওই ছেলে কেনো কাউকেই বিয়ে করবে না..যদি করো এভাবেই একটা না একটা ওয়ে বের করে ভেঙে দেবো বিয়ে”
ওনার বলা প্রত্যেকটা কথা আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় সম্পূর্ন আলাদা লাগছে, কেমন যেনো অন্যরকম! আচ্ছা লোকটার মধ্যে আবার দ্বৈত সত্তার আবির্ভাব ঘটলো নাকি? দুইদিন আগে একরকম ছিলেন আজকে আবার সম্পূর্ন অন্যরকম, কি হলো ওনার কে জানে..এতোক্ষণ এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম তারমধ্যে উনি আরেক ঝটকা দিলেন..আলতো করে নিজের গালটা আমার গালে ছুইয়ে দিলেন, শাড়ি মুঠোয় চেপে ধরে কেপে উঠলাম আমি, দু কদম পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে রেগে বলে উঠলাম
“কি করছেন আপনি এসব! দূরত্ব বজায় রাখুন.. পরিচিত বলেই আপনি একটা মেয়ের কাছে তার বিনা অনুমতিতে এভাবে আসতে পারেন না”
“কিন্তু আমি যখন তোমার কাছে এলাম, তুমি তো না করলে না আমাকে, এখন রাগ দেখিয়ে লাভ কি”
ওনার কথায় বোকা বনে গেলাম আমি, সত্যিই তো আমি ওনাকে বাধা দিলাম না..আমার উচিত ছিলো ওনাকে একটা শিক্ষা দেওয়া কিন্তু সেটা করতে পারলাম না..কেনো?
“দেখুন আপনাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি! দয়া করে এমন কাজ করবেন না যাতে সেটা শেষ হয়ে যায়”
“আমি এমন কিছুই করবো না যাতে তুমি আমাকে হেইট করো, এই বিষয়ে টেনশন ফ্রি থাকতে পারো”
আমি ওনার কথার প্রতিউত্তরে বলতে যাচ্ছিলাম কিছু তখনই উনি পকেট থেকে একটা খাম বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন.. খামটা চিনতে আমার খুব একটা সমস্যা হয়নি
“এটা তো আমার রেজিগ্নেশন লেটার, ফেরত কেনো দিচ্ছেন?”
“জব কন্টিনিউ করা অবস্থায় এটা দেওয়ার কোনো মানেই হয় না”
“কিন্তু আমি তো..
“আগামীকাল থেকে ঠিক সময়মতো নিজের ওয়ার্ক প্লেসে পৌঁছে যাবে, ২ দিনের কাজ পেন্ডিং আছে..সব করাবো তোমাকে দিয়ে, মাইন্ড ইট”
উনি চলে যাচ্ছেন, আমি ফ্যালফ্যাল করে একবার ওনার দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার রিজাইন লেটারের দিকে..ভেবে কোনো উত্তরই পাচ্ছিনা লোকটা কি করতে চাইছে? কেনো করছে এসব? আমার ভাবনার মাঝেই উনি ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে একটু এগিয়ে এসে বললেন
“আরেকটা কথা, রুহি তুমি এই বাড়ির কথা, বাড়ির মানুষের কথা না ভেবে নিজের কথা ভাবো.. তুমি নিজেই শুধু নিজের আপন, বাকিদের জন্যে যতোই করো দিনশেষে তারাই তোমাকে ধোঁকা দেবে কিন্তু তুমি নিজে নিজেকে কখনো ধোঁকা দিতে পারবে না, মনে রেখো কথাটা”
কথাটা বলে আর এক মুহুর্ত দাড়াননি উনি, চলে গেলেন..আমিও আর জিজ্ঞাসা করে উঠতে পারলাম না যে ওনার মাথায় এই বিয়ে ভাঙার ব্যাপারে কি চলছে? তবে সত্যি বলতে ভালো লাগলো কথাগুলো শুনে, সবাই তো শেখায় পরিবারের জন্যে বাঁচার জন্যে, তাদের নিয়ে ভাবার জন্যে কিন্তু কজনই বা নিজেকে নিয়ে ভাবার আর বাঁচার ইন্সপিরিশন দেয়? আজ প্রথমবার যেনো মনে হলো আমার জন্যেও হয়তো কেউ আছে যে একটু হলেও ভাবে আমাকে নিয়ে আর আজকের পর সেই একজন নিঃসন্দেহে আরমান স্যার!
চলবে….
[আরমানের বোনের “মিনাল” নামটা ছেলেদের বলে মন্তব্য করা হয়েছিলো, তবে আমি এটা ক্লিয়ার করে দেই যে মিনাল নামটা ছেলে মেয়ে উভয়েই আছে ইভেন উর্দুতেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্ষেত্রেই এই নাম বেশি ইউজ করা হয় তো,আশা করি এবার নামটা নিয়ে সমস্যা থাকবে না..! ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]