ইস্ক_সুফিয়ানা #পর্ব – ০৪

0
1878

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ০৪
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

আরমানের কথামতো সিফাত রুহির চাচাকে বাড়ির পেছনের দিকের এক জায়গায় নিয়ে এসে কারণ আজকে বাড়িতে অনেক মানুষ আছে..একটু বাদেই আরমান আসে, মাস্কটা এখনও পড়েই আছে আর ওর হাতে বাড়ির দলিলটা, রুহির চাচা ওকে চিনলো না

“কে তুমি বাবা? ছেলে পক্ষের কেউ নাকি? নাহলে আমাকে আলাদা এখানে আসতে বললে যে”

আরমান রুহির চাচার হাতে দলিলটা তুলে দেয়

“ধরে নিন আমি আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী”

রুহির চাচা কিছু বুঝতে পারছেন না, পরে হাতের কাগজটার দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠেন উনি, হাস্যোজ্বল মুখে আরমানের দিকে তাকান উনি

“এ..এটা তো আমার বাড়ির দলিল, এটা ওই রাকিবের বাবার কাছে বন্ধক দিয়েই তো নয়নার মা অতগুলো টাকা এনেছিলো”

“জ্বি, এটাই সেটা, এর জন্যেই আজ এই বাড়িতে সেটা হচ্ছে যেটা হবার কথা নয়..সেসব ঠেকানোর জন্যেই এটা আপনার হাতে তুলে দিলাম, এবার আপনাদের না তো কোনো টাকা ফেরত দিতে হবে আর না তো এই বাড়ি ছাড়তে হবে..রুহির বিয়েটাও আর ওই ছেলেটার সাথে দিতে হবে না”

“আমারও ইচ্ছে ছিলো মেয়েটাকে এইভাবে বিয়ে দেবার, নিরুপায় ছিলাম তাইতো নয়নার মার কথায় সায় দেওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না”

রুহির চাচার চোখেমুখে তৃপ্তি দেখে খুশি হয় আরমান, অবশ্য ওর সবথেকে বড় খুশির কারণ রুহির বিয়েটা আটকে যাওয়া

“চিন্তা করবেন না আঙ্কেল, রুহির বিয়ে এবার দিতে হবে না”

“কিন্তু বাবা, তুমি কে বলোতো আর এসব কিভাবে করলে? এই কাগজ তুমি পেলে কোথায়? ওই লোকটা তো বলেছিল বিয়ের পর এই কাগজ ফেরত দেবে”

“সে অনেক ঘটনা আঙ্কেল, অনেক কষ্টে এটা কালেক্ট করেছি, সেসব নিয়ে আর আপনাকে ভাবতে হবে না, যেটা আসল সেটা তো পেয়ে গেলেন”

“কিন্তু অনেকগুলো টাকার ব্যাপার ছিলো, যদি কোনো ঝামেলা হয় পরে?”

“কিছুই হবেনা, আমি সব খোঁজ নিয়েই আপনার হাতে তুলে দিয়েছি, আপনারা আবার আগের মতো থাকবেন”

রুহির চাচার মুখে এখনও কিছুটা চিন্তার ছাপ বিদ্যমান, আরমান তখন ওনাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন

“ভরসা করতে পারেন আমাকে আঙ্কেল, আপনাদের প্রবলেম সলভ করতে এসেছি, বাড়াতে নয়..হতে পারে আপনার কাছে আমি অচেনা তবে রুহি আমাকে ভালোভাবেই চেনে, আপনার কাছে না হয় নিজের পরিচয় আর নাই প্রকাশ করলাম”

আরমানের কথায় রুহির চাচা কি উত্তর দেবেন বুঝতে পারছিলেন না, এভাবে যে একটা অচেনা ছেলে এসে এতো সহজে বাড়ির কাগজ ফিরিয়ে দেবেন ভাবতেই পারেননি উনি, আরমান যেহেতু বলেছে রুহি চেনে তাই উনি ধরেই নিলেন ও রুহির কাছের কোনো বন্ধু হবে

“একটা কথা বলার ছিলো আঙ্কেল, যদি কিছু মনে না করেন”

“হ্যা বলো”

“দেখুন আপনার ওয়াইফ কেনো এসব করেছে সেটা তো আমার জানা নেই তবে উনি এইসবের জন্যে রুহির সাথে যে অন্যায় করছিলেন সেটা কিন্তু ক্ষমা করার মতো না, ওই ছেলেটা রুহির উপযুক্ত না”

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রুহির চাচা

“জানি আমি সব কিন্তু মানুষ যখন অসহায় হয়ে পড়ে, কোনো রাস্তা খুঁজে পায়না তখন যা হচ্ছে তাই মেনে নিতে হয় বাবা”

“বাট নাও ইউ আর নট হেল্পলেস..আপনার স্ত্রী রুহিকে লাইক করেনা তাই আপনাকে ওর পাশে দাঁড়াতে হবে, সাপোর্ট করতে হবে নাহলে ও তো একদম একা পড়ে যাবে তাইনা? আর হ্যা হতে পারে প্রথমে আপনার ওয়াইফ একটা ব্লান্ডার করে ফেলেছিলেন আপনি কিন্তু জানতে পারেননি কিন্তু এখন জানার সুযোগ আছে আপনার, নিজের স্ত্রীর থেকে সবটা জানুন, প্রশ্ন করুন যে কেনো এসব করছিলেন উনি”

আরমানের কথায় রুহির চাচা অনেকটা সাহস পান, আসলে এতদিন এই বাড়ির পেপারের জন্যে সব একটু বেশিই সহ্য করেছেন তবে আজ উনি ঠিক করেছেন নিজের স্ত্রীর থেকে সবটা জানবেন, উনি আরমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, আরমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন

“তুমি কে সেটা তো বললে না বাবা কিন্তু আজ যা করলে সেটা হয়তো রক্তের কেউ হলেও করতো না.. যতোই ধন্যবাদ জানাবো সব কম পড়ে যাবে, দোয়া করি তোমার সব আশা যেনো আল্লাহ পূরণ করেন”

“আমার নিজের জন্যে কিছু চাইনা আঙ্কেল, তবে হ্যা রুহির জন্যে চাই..ওর একটু টেক কেয়ার করবেন, নিজের আগে ও সবসময় আপনাদের কথা ভাবে, এত্তো করে আপনাদের জন্যে, আপনাদের ও উচিত ওর কথাটা এবার ভাবা”

“নিজের মেয়ের থেকে বেশি রুহিকে ভালোবেসেছি আমি, তবে আজকের পর আরো খেয়াল রাখবো..কোনো অযত্ন আমি হতে দেবো না, নিশ্চিন্ত থাকতে পারো তুমি”

বাড়ি ফিরেছে আরমান, ওর বাবার কথামতো আজকে যাবে বিজনেস পার্টিতে তার জন্যেই রেডি হচ্ছিলো নিজের রুমে, আর ওর বোন বরাবরের মতো জ্বালাচ্ছে ওকে, অবশ্য মিনালের এখানে আসার উদ্দেশ্য হলো আরমান কোথায় গেছিলো সেটা জানা

“উফফ! কি লাগছে তোকে, সব মেয়েরা একদম কুপোকাত হয়ে যাবে আজকে পার্টিতে”

“এত্তো মাস্কা মারতে হবেনা, যাবি নাকি পার্টিতে এটা বল তাহলে নিয়ে যাবো”

“না না, তুইই যা..আমি বাবা ওসব পার্টিতে কুলাতে পারিনা..কিন্তু তুই সেই সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলি, কোন রাজকার্যে গেছিলি শুনি?”

“ছোটো মানুষ ছোটো মানুষের মতো থাক, বুড়িদের মতো জেরা করিস না তো”

“তোর যা হাবভাব দেখছি তাতে জেরা তো করতেই হবে, নাহলে পরে হুট করে যখন জানবো তুই তলে তলে এতদিন ট্যাম্পু চালিয়েছিস আর আমি কিছু জানিনা..দুঃখ হবেনা তখন?”

“যত্ত ফালতু কথা, সর তো আমাকে রেডি হতে দে”

“ভাইয়া বল না কোথায় গেছিলি, আমি কাওকে বলবো না প্রমিজ করছি”

“সময় এলেই সব জানবি”

বেচারি মিনাল চেষ্টা করেই যাচ্ছে আরমানের মাথায় কি চলছে কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারছে না কারণ বারবার আরমান ওকে একটা না একটা কথা বলে চুপ করিয়ে দিচ্ছে.. পরে আর কি, মিস্টার শাহ্ এর সাথে চলে যায় ও বিজনেস পার্টিতে এদিকে আমার বিয়ে তো পন্ড হয়ে গেছে, চাচা নিজে ছেলের বাবাকে ফোন করে বলেছেন আমাকে ওনাদের ছেলের কাছে দেবেন না, এই বিয়ে ক্যান্সেল..এই খবর জানার পর ছেলের বাবা আমার চাচার বাড়ির” দলিল” নামক ট্রাম্পকার্ড ইউজ করতে গিয়ে দেখেন বাড়ি থেকে ওটা উধাও হয়ে গেছে, বাড়ির কাজের লোকটাও গায়েব..সবমিলিয়ে ও বাড়িতেও একটা হুলুস্থুল কান্ড..সবকিছু এতো দ্রুত হয়ে গেলো যে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি, তবে আমি নিশ্চিত এসবের পেছনে আরমান স্যারের হাত আছে, কিভাবে কি করেছেন উনি আমি জানিনা তবে ওনার প্রতি ভরসাটা যেনো একটু বেশিই বেড়ে গেলো কারণ নিজের কথা রেখেছেন উনি..চাচা আমাকে বলেছেন বিয়ের সাজ সজ্জা খুলে ফেলতে, আমিও তাই করছি কারণ এসবের তো এখন কোনো দরকার নেই..একটু বাদে আমার বান্ধবী তুলি দিগবিদিক শূন্য একটা ভাব নিয়ে এসে আমার বিছানায় বসে পড়লো, আমি তখন গয়না খুলতে ব্যস্ত

“এসব কি থেকে কি হয়ে গেলো বলতো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না”

“যা হবার ভালোই হয়েছে, এমনিতেও এই বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না আমার, নেহাৎ বাধ্য ছিলাম তাই রাজি হয়েছিলাম”

“তোর চাচা তোর চাচীর সাথে খুব রাগারাগি করছে দেখলাম, বাড়ির দলিল নাকি এখন ওনার হাতে কিন্তু এটা উনি পেলেন কোথা থেকে বলতো?”

“চাচার সাথে এখনও কথা হয়নি আমার, কথা হলে তো জানবো, তারপর না হয় তোকেও বলবো”

তুলি আর বললো না কিছু, আমিও চুপ করে নিজের কাজ করতে লাগলাম, আরমান স্যারের কথা বলতে চাইনা তুলির সামনে কারণ এসবের কিছুই ও বুঝবে না..বাড়িতে যেসব আত্মীয় স্বজন এসেছিলেন তারা সবাই আমাকে কথা শুনিয়েছেন, আমার চাচা আজকে সবার কথার প্রতিবাদ করেছেন..অনেকটা অবাক হয়েছিলাম আমি, এতো শান্ত মানুষটা আজকে আমার জন্যে সবার মুখ বন্ধ করিয়ে দিচ্ছেন..রাতে চাচা আমার রুমে এলেন, আমিও আর দেরি না করে জানতে চাইলাম সব

“কি হয়েছে চাচা? খুলে বলোতো আমাকে সব, এতকিছু..চাচী কি কিছু বলেছেন? কেনো করেছিলেন উনি এসব?”

“তোর চাচীর মানসিকতা এতো নিচু জানা ছিলো না রে আমার, কোথায় নাকি কোন ব্যাংক অফার করেছিলো যে ওখানে যতো টাকা রাখবে তার দ্বিগুণ পাবে, সেই লোভে তোর চাচী বাড়ির কাগজ বন্ধক রেখে টাকা এনে ব্যাংকে দিয়েছিল, কিন্তু ওই ব্যাংক নাকি বন্ধ হয়ে গেছে, সবার টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে”

চাচার কথায় সব পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার কাছে, অবশ্য আমি জানি চাচী আমার কতোটা লোভী তাই বলে যে নিজের আশ্রয়টুকু বন্ধক করে দিতে পারেন সেটা ভাবিনি..ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললাম আমি

“ওহ! তাই চাচী টাকার বদলে আমাকে ওই বাড়িতে পাঠাতে চেয়েছিলেন তাইতো?”

“হুমম, তবে এখন আর চিন্তা নেই, বাড়িয়ে দলিলটা আমি নিজের কাছেই রাখবো, কালকেই গিয়ে ব্যাংকের লকারে রেখে আসবো যাতে তোর চাচী আর অতে হাত দেবার ভুল না করতে পারে..আবার সব ঠিক হয়ে যাবে..তুই যেভাবে আগে ছিলি সেভাবেই থাকবি তোর চাচী তোকে আর কিছু বলবে না..আর যদি বলে তাহলে আমি আছি তো, নিজেকে আর একা ভাবিস না তুই”

চাচা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আশ্বাস দিলেন, কিন্তু আমার কেনো জেনো এখন আরমান স্যারের কথা মনে পড়ছে..এই মনে পড়াটা কি নিতান্তই কোনো কারণ ছাড়া নাকি উনি আমার জন্যে এতকিছু করলেন তাই? বুঝতে পারছি না আমি..জানা সত্ত্বেও কৌতুহল বশত জিজ্ঞাসা করলাম

“আচ্ছা চাচা, এইটা কে দিয়ে গেলো বললে না তো?”

চাচা হালকা হাসলেন

“একটা ছেলে এসছিলো সন্ধ্যা সময়, ওই দিলো, আমি জিজ্ঞাসা করার বললো পরিচয় প্রকাশ করতে চায় না তবে তুই নাকি ওকে ভালোভাবেই চিনিস, তোর বিশেষ কোনো বন্ধু হবে হয়তো..ভাগ্য করে বন্ধু পেয়েছিস বটে”

চুপ করে আছি আমি, নিজে নিজেই বোঝার চেষ্টা করছি একটা মানুষ আরেকজনের জন্যে এতোটা কখন করে, কেনো করে? সেখানে আরমান স্যার আমার জন্যে এসব করলো বিশ্বাসই হচ্ছে না..এখন ওনাকে সামনে পেলে মনের মধ্যে জমে থাকা আস্ত প্রশ্নের পাহাড়টা তুলে ধরতাম ওনার সামনে, জানতে চাইতাম কেনো করলেন আমার জন্যে এসব? বিড়বিড় করে বলে ফেললাম

“উনি এগুলো করে কি বোঝাতে চাইছেন?”

“কিরে রুহি, কিছু বলছিস?”

সঙ্গে সঙ্গে না সূচক মাথা নাড়লাম আমি

“তবে যাই বল ছেলেটা আজকে যে উপকার করলো আমাদের কোনোদিন ওর ঋণ শোধ করতে পারবো না..কোনোদিন যদি টাকা ছাড়া আর কোনো সাহায্যের দরকার পরে তাহলে করবো..অনেক উপকার করলো আজকে”

রাতে আর এই ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা তুলিনি.. পরদিন আমি আরমান স্যারের বাড়ি আসার জন্যে রওনা দিয়েছি, যদিও আজকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু উনি সকালেই মেসেজ দিয়ে ওয়ার্ন করে রেখেছিলেন যে আসতেই হবে তাই বাধ্য হয়ে যাচ্ছি..পথিমধ্যে ওনার আরেকটা মেসেজ এলো, ওনার বাড়ির সামনের মোড়ে দাড়াতে বলেছেন আমাকে! যথা আজ্ঞা তথা কাজ করলাম, মোড়েই দাড়িয়ে আছি আমি..একটু বাদেই ওনার গাড়ি এসে থামলো আমার সামনে..প্রথমবার ওনার মুখোমুখি হতে গিয়ে অপ্রস্তুত অনুভব করছি..উনি ডোর গ্লাস নামিয়ে তাকালেন, আমি শুকনো ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম, এই মুহূর্তে ওনার দিকে তাকাতে ইতস্তত বোধ করছি..আমার কান্ড দেখে উনি কিছুটা রেগে গেলেন, আসলে উনি সামনে থাকলে কেউ ইগনোর করলে সেটা মানতে পারে না লোকটা

“ও হ্যালো, আমি এখানে আছি, তুমি কোনদিকে তাকিয়ে আছো?”

“হুম বলুন আমি শুনছি, এখানে কেনো দাড়াতে বললেন আমাকে?”

” তুমি একদিনেই আমাকে ইগনোর করা শিখে গেছো.. আ’ম নট লাইকিং দিস ওকে?”

আমি এবার আস্তে আস্তে তাকালাম, ওনার চোখেমুখে বিরক্তির ভাব! আমার আচরণ পছন্দ হয়নি ওনার

“বসো”

“আমি কেনো বসবো?”

“কারণ তুমি এখন আমার সাথে যাবে”

“কিন্তু যাবো কোথায়?”

হুট করে চেহারার বিরক্তি ভাব কেটে গিয়ে ওনার বাকা হাসির আবির্ভাব ঘটলো

“আমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবে”

ভ্রু কুচকে ফেললাম আমি, এ কেমন উদ্ভট কথা বলছেন উনি? আমি কড়া গলায় বললাম

“আপনি বললেই তো আর যাওয়া যায় না, আমি ম্যানেজার আপনার, টাকার হিসেব রাখা, কোথায় কবে আপনার শুট আছে, প্রোগ্রাম আছে সেসবের খবর রাখা আমার দায়িত্ব, আপনার সাথে কোথাও যাওয়া না”

“ওহ! ওকে দ্যান আজ থেকে আমার ম্যানেজারের সাথে সাথে পি.এর জবটা তোমাকে দিলাম, আমি যেখানেই যাবো তুমিও সাথে যাবে”

“আপনি এতটাও ব্যস্ত মানুষ নন যে পার্সোনাল অ্যাসিট্যান্ট দরকার পড়বে, তাছাড়া আপনার বন্ধু সিফাত সাহেব তো আছেই, সে না হয়”

আমার কথা পুরো শেষ হবার আগেই উনি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন, দেখে মনে হচ্ছে এখুনি ঝাড়ি দেবেন আমাকে, তাই ওনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই গিয়ে বসে পড়লাম..উনি ড্রাইভ করছেন, আমাদের দুজনের মধ্যে পিনপতন নিরবতা বিদ্যমান! খানিক বাদে নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম

“থ্যাংক ইউ”

“কেনো?”

“গতকাল আপনি অনেক সাহায্য করেছেন, যদিও ধন্যবাদ খুবই ছোটো শব্দ তবে আপনার এটা প্রাপ্য”

” হেল্প? আমি কখন করলাম? ঠিক কিসের কথা বলছো বলোতো? আমি তো তোমাকে কোনো হেল্প করিনি”

এমন একটা ভাব করছেন উনি যেনো সত্যিই কিছু জানেন না, আমিও জোর গলায় বললাম

“ওইটা আপনিই ছিলেন আমি জানি তাই এখন আর অস্বীকার করতে হবে না, আপনি ছাড়া এই কাজ কেউ করতেই পারতো না”

আমার কথায় যেনো একটু বেশিই খুশি হলেন উনি

“এত্তো ট্রাস্ট ছিলো আমার ওপর? এন্ড মোমেন্টে যদি না যেতে পারতাম তাহলে কি হতো?”

“কি আবার হতো? আমার চাচী যেভাবে সব চালাতে চাইছিল সেভাবেই চলতো.. যেটা হবার সেটা তো আর কেউ ঠেকাতে পারতো না”

“আমার জন্যে তোমার বিয়ে ভেঙে গেলো, খুব রেগে আছো নিশ্চয়ই আমার ওপর তাইনা?”

“যদি বিয়েটা আমার মর্জিতে হতো তাহলে আফসোস করতাম, হয়তো রাগ ও করতাম আপনার ওপর কিন্তু আজ আমি আপনার সাথে আপনারই পাশাপাশি বসে আছি, আপনিই বিচার করে বলুন রেগে আছি কি নেই”

আমার কথায় উনি কি মজা পেলেন বুঝলাম না, হো হো করে হেসে উঠলেন

“কেউ একজন ঠিকই বলেছিলো যে মেয়েদের সাথে কথা বলে ছেলেরা কখনো জিততে পারেনা..এখন তোমার সামনেই এই হাল হলে ওখানে গিয়ে কি করবো আল্লাহ জানে”

“মানে? ঠিক বুঝলাম না..কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“একটা মেয়েকে খুব মনে ধরেছে, তাকে নিয়েই তো পালিয়ে যাচ্ছি এই শহর থেকে বহুদূরে”

“কিহহ! কাকে নিয়ে পালাচ্ছেন?”

“কাকে আবার! আমার পাশে বসা সুন্দরী মেয়েটা কে নিয়ে”

ওনার কথায় গা জ্বলে যাচ্ছে আমার, আর আমার মুখের বিরক্তি যেনো ওনাকে আরো মজা দিচ্ছে! মাঝে মাঝে উনি এমনসব কথা বলেন যে আমার মনে হয় কোনো গুরুতর মাথার ব্যমো সমস্যা আছে..মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম আমি!

“রেগে গেলে নাকি? সরি! মজা করছিলাম তো”

“আপনার ওপর রাগ করতে যাবো কোন দুঃখে? আমি পাগলের প্রলাপে পাত্তা দেইনা”

“হুমম! পাগলই বলতে পারো নাহলে গত ২ দিন যাবত যা যা করলাম, স্বাভাবিক অবস্থায় কেউ করতে পারতো নাকি?”

“আপনি কেনো করছেন আমার জন্যে এসব?”

আমার কথা শেষ হতে দেরি তার আগেই ব্রেক কষলেন উনি, হয়তো আমার কথা ওনার কান অব্দি পৌঁছায়নি

“এসে গেছি! নামো”

গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামিয়েছেন উনি গাড়িটা, বুঝলাম না এখানে কি কাজ আমাদের

“এখানে কেনো আনলেন আমাকে? আপনার কি কারো সাথে দেখা করার আছে?”

“এত্তো অধৈর্য কেনো তুমি বলোতো? এনিওয়ে একটু দেখে বলোতো কেমন লাগছে আমাকে, অ্যাম আই লুকিং কুল?”

এতক্ষণে ভালোভাবে তাকালাম ওনার দিকে.. ব্ল্যাক জিন্স আর ইঙ্ক করা ছাড়া সাদা শার্ট, উনি এমনিতে লম্বা আর বেশ শক্ত সামর্থ্য.. মাশাআল্লাহ দারুন লাগছে দেখতে

“সুন্দর লাগছে কিন্তু হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো? আগে তো এভাবে জিজ্ঞাসা করেননি”

“কারণ এই প্রশ্নটা আগে কোনোদিন করা হয়নি তোমাকে”

“সেটা তো আমিও বলছি, তাহলে আজকে হুট করে আস্ক করলেন যে?”

উনি আমার কথায় উত্তর না দিয়ে দেখলাম হাসি দিয়ে উচু করে হাত নাড়াচ্ছেন সামনে কারো দিকে, আমি ওই বরাবর সামনে তাকিয়ে দেখলাম রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে একবারে গ্লাসের সাথের চেয়ারে বসা একটা মেয়ে হাত নাড়ছে, চমকে গেলাম আমি..তারমানে কি উনি এই মেয়েটার সাথে নিজে দেখা করতে এসেছেন নাকি আমাকে এই মেয়েটাকে দেখাতে এনেছেন বুঝলাম না তবে আমাদের এখানে আসার কারণ এই মেয়েটা সেটা আপাতত পরিষ্কার আমার কাছে..হুট করেই মন খারাপ হয়ে গেলো, মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগে উঠলো কে এই মেয়েটা? উনি কেনো এর সাথে দেখা করতে এসেছেন তাও আবার আমাকে সাথে নিয়ে? একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে তাকালাম ওনার দিকে

চলবে….

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here