ইস্ক_সুফিয়ানা #পর্ব – ০৭,০৮

0
1635

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ০৭,০৮
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa
পর্ব – ০৭

আরমান স্যার মিউজিক ভিডিওর শুটের জন্যে গেছেন শহরের বাইরে, আমাকে ৭ দিনের ছুটি দিয়ে গেছেন, অবশ্য উনি আমাকে সাথে যেতে বলেছিলেন আমিই রাজি হইনি আর উনিও জোর করেননি! আহ! কি শান্তি! সাতদিন উনি আমাকে বিরক্ত করবেন না, কাজ করাবেন না, আমি যা ইচ্ছে করতে পারবো ভেবে খুব আনন্দিত ছিলাম আমি..প্রথম দুদিন তো ভালোই গেলো কিন্তু সমস্যা শুরু হলো তৃতীয় দিন থেকে, কিছু ভালোই লাগছে না..সব আছে তারপরও কিছু একটা নেই নেই লাগছে, কোনো কাজে মন বসাতে পারছি না, কিছুই যেনো ভালো লাগে না কিন্তু কেনো লাগছে সে কারণ আমার অজানা..চাচীও গেছে তার বাপের বাড়ি, আমার তো আরো শান্তিতে থাকার কথা তবুও এক অজানা অশান্তিতে আছি! মনটা খুব খারাপ করছে..দুপুরে শুয়ে ছিলাম তখন নয়না এসে শোয় আমার পাশে

“কি হয়েছে তোমার আপু? এই অবেলায় শুয়ে আছো যে?”

“কিছু না রে, এমনি মাথা ব্যথা করছে একটু”

“আমি মাথা টিপে দেই তাহলে?”

“না না, লাগবে না..তুই শুয়ে থাক”

“তোমার কি মন খারাপ? তাহলে কোথাও থেকে ঘুরে আসি চলো, ভালো লাগবে”

“না রে! এখন কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না”

মাথার ওপর বন্ধ ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি আমার কি হয়েছে..কেনো এমন হচ্ছে? কার জন্যে মন খারাপ করছে? চোখ বন্ধ করে নিলাম এবার..তেমন বিশেষ কেউ তো নেই আপনার জীবনে, নাকি আছে? হুট করেই তখন আরমান স্যারের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো আর আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে উঠে বসলাম! দ্রুত নিঃশ্বাস পড়তে লাগলো আমার, নয়না আমার অবস্থা দেখে উঠে বসে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো

“আপু, কী হলো তোমার? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? বাবাকে ডাকবো?”

“না, আমি ঠিক আছি”

“আচ্ছা, এই পানি খাও, নাও”

পানিটুকু খেয়ে নিলাম আমি, নিজের ভাবনায় নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি! শেষে কিনা আরমানের স্যারের কথা ভাবছি আমি? আচ্ছা আমার এই অসস্তি, মন খারাপের কারণ কি তাহলে ঐ মানুষটা? মাত্র দুদিন হলো ওনার সাথে দেখা হয়নি, কথা হয়নি তাতে আমার এই অবস্থা কেনো? কিসের ইঙ্গিত এগুলো? নাহ,আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি!!

বিছানার ওপর বসে আছি আমি আর আমার বোন নয়না আমার কপালে ড্রেসিং করে দিচ্ছে..বিকেলে অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম, পথে পাড়ার ছোটো বাচ্চাগুলোর একজনের বল পায়ের নিচে এসে পড়েছিলো, আমি না দেখেই তার ওপর পা রেখে দিয়েছিলাম..তারপর আর কি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছিলাম, হাঁটুতে, গালের এক পাশে, হাতের তালুতে আর কপালে কিছুটা ছড়ে গেছে..নয়না তুলোয় স্যাভলন নিয়ে আমার গালে লাগাতেই কুকড়ে উঠলাম আমি

“উফফ! আস্তে আস্তে দে..জ্বলছে!”

“আপু, স্যাভলন দিলে একটু জ্বলবেই! তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো..আর রাস্তায় একটু দেখে হাঁটতে পারো না? যদি আরো বেশি লাগতো?”

“আর বলিস না, ইদানিং আরমান স্যার এমন করছে না..আমার মাথার মধ্যে সারাক্ষণ শুধু এইসবই ঘুরতে শুরু করেছে

“কেনো? তার আবার কি হলো?”

“কিজানি! আচ্ছা নয়না আমার মধ্যে কি তুই কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখতে পাচ্ছিস? মানে এমনকিছু যেটা তুই আগে দেখিসনি?”

আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে ফেললো নয়না, হয়তো আমার এমন প্রশ্ন ওর কাম্য ছিলো না

“হ্যা, তুমি আগের তুলনায় অমনোযোগী হয়ে গেছো, নাহলে এই চোট পেতে না..লাস্ট কবে চোট লেগেছে তোমার মনে করে দেখো তো”

এভাবে আরো বকাবকি করতে করতে বোন আমার চোট লাগা জায়গা গুলোতে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে আর আমি মনে মনে ভাবছি ও তো ভুল কিছু বলেনি

“ঠিক তো, আমি এমন কখনো ছিলাম না, এখন এমন এমন ব্যাপার ঘটছে আমার সাথে যেটা আগে কখনো হয়নি..আসলে আরমান স্যারের জন্যে এসব হচ্ছে! উনি আমার মস্তিষ্কে এমনভাবে চেপে বসেছেন যে তাকে বের করতে পারছি না”

মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠলো আমার, হাতে নিতেই দেখলাম আরমান স্যারের ভিডিও কল, বুকটা খানিক কেপে উঠলো আমার..দুদিন পর ফোন করছেন উনি আমাকে তাও আবার ভিডিও কল? ধরবো কি ধরবো না বুঝতে পারছি না..কিন্তু খুব মন চাইছে কল রিসিভ করতে, ওনার সাথে কথা বলতে..প্রথমবার বাজতে বাজতে কেটে গেলো, দ্বিতীয়বার আবার উনি কল করলেন..নয়না ততক্ষণে আমার কপালে ওয়ান টাইম ইউজড ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে

“তোমার মনে হয় কোনো দরকারি ফোন আসছে, তুমি কথা বলে নাও আমি এগুলো রেখে আসি”

“হুমম! আর শোন না আমার জন্যে একটু চা করে আনতে পারবি? মাথাটা একটু ধরেছে”

“আচ্ছা আনছি!”

নয়না বেরিয়ে যেতেই লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে কল রিসিভ করেই হাসিমুখে সালাম দিলাম

“আসসালামু আলাইকুম”

উনি সালামের জবাব দিলেন, তারপর ভ্রু কুচকে আমার দিকে কিছুক্ষন দেখেই চিন্তিত কণ্ঠে বললেন

“তোমার গালে কি হয়েছে রুহি? কপালেও ব্যান্ডেজ..আর ইউ ওকে?”

আমি কোনো উত্তর দিচ্ছিনা, ওনার প্রতিক্রিয়া দেখছি শুধু..এটুকুতেই এতোটা চিন্তিত উনি? আমাকে চুপ দেখে উনি ধমক দিলেন

“তোমাকে তাকিয়ে থাকতে বলিনি রুহি, এই চোটগুলো কিভাবে পেলে উত্তর দাও, সাতদিনের ছুটিতে এই অবস্থা কেনো তোমার?”

“আরে! আপনি তো এমন করছেন যেনো আমার কোনো বড় অ্যাকসিডেন্ট হয়ে গেছে? একদম ঠিক আছি আমি!”

“তাহলে কি হয়েছে? এই চোটগুলো তো আর নিজে নিজেই হয়নি তাইনা?”

“এগুলো তেমন গুরুতর কিছু না, আসলে আমি রাস্তায় পড়ে গেছিলাম তাই একটু লেগেছে, দু – তিনদিন বাদে একাই এগুলো চলে যাবে”

“একটু লেগেছে? রুহি দেখো কেমন দাগ হয়ে গেছে এখানে.. হাউ ক্যান ইউ বি সো কেয়ারলেস? আর রাস্তায় কিভাবে পড়লে তুমি? কোনদিকে তাকিয়ে হাঁটছিলে তুমি?”

আমি বিড়বিড় করে বললাম

“আপনার জন্যেই তো হলো, না আমি আপনার কথা ভাবতাম আর না আমার এরকম হতো”

“কি বলছো?”

“কিছুনা তো, আচ্ছা আমার কথা বাদ দিন, আপনার কাজ কেমন চলছে সেটা বলুন”

“একদম কথা ঘোরাবে না তুমি, সত্যি করে বলো রাস্তায় কি নিজেই পড়ে গেছিলে নাকি কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে তোমাকে?”

“কেউ ফেলতে যাবে কেনো আমাকে? বললাম তো এমনিই পড়ে গেছিলাম, ইটস ওকে!”

“ইটস নট ওকে”

উনি রাগী চোখে দেখছেন আমাকে, আমি মুখ গোমড়া করে আছি.. কি জ্বালায় পড়লাম রে বাবা, আগে যদি জানতাম উনি এমন করবেন তাহলে ফোনটাই ধরতাম না

“আপনি এমন কেনো করছেন? এরকম ছোটখাটো ব্যাপার তো হতেই থাকে..আপনিও তো নিশ্চয়ই চোট পেয়েছেন কোনো না কোনো সময় তাইনা? স্বাভাবিক ব্যাপার!”

আমার কথায় উনি এবার স্বাভাবিকভাবে তাকালেন, মনে হয় রাগ কিছুটা কমেছে

“ব্যথা আছে নাকি? ওষুধ খেয়েছো?”

“সেরকম কিছু হয়নি, ওষুধ লাগিয়ে নিয়েছি তো সেরে যাবে, আপনার কাজ কতদূর হলো বললেন না?”

“বাকি আছে এখনও অনেকটা..আরো ৩-৪ দিন লাগবে মনে হয় শেষ হতে..তোমার বাড়িতে আর কোনো প্রবলেম হয়নি তো?”

“নাহ! এখানে সব একদম ঠিক আছে”

“গুড! আসলে বোর হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোমাকে কল করি”

“আপনার বন্ধু তো সাথেই গেছে তাইনা? তাহলে তো বোর ফিল করার কথা না”

উনি বাকা হাসলেন

“কেনো? বিরক্ত হচ্ছো নাকি আমি কল করেছি বলে? তাহলে কেটে দাও”

“না না..বিরক্ত হইনি! আপনি বলুন না কি বলবেন”

“আসলে পুরো দুদিন ধরে কোনো যোগাযোগ নেই আমাদের, আমিও বিজি ছিলাম..তুমি তো নিশ্চয়ই খুব আনন্দে আছো এখন, আমার কথা তো মে বি একেবারে ভুলেই গেছো তাইনা?”

“সে আর কোথায় আছি? আমিও আপনার কথাই ভাবছিলাম”

হুট করেই কথাটা কখন যে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো, কি বলে ফেললাম সেটা উপলব্ধি করতেই ওপরের ঠোঁট দিয়ে নিজের ঠোট চেপে ধরলাম.. ঈশ! আমি পাগল হয়ে গেলাম নাকি? ওনার সামনে এসব কি বলছি? লক্ষ্য করলাম উনিও অবাক হয়ে তাকিয়েছেন আমার দিকে

“তুমিও আমার কথা ভাবছিলে?”

কৌতুহলী স্বরে প্রশ্ন করে বসলেন উনি, এদিকে আমি কি বলবো সেই ভাবনায় অস্থির হয়ে আছি, নিজের কথার দরুন নিজেই লজ্জায় পড়ে গেছি

“ন..না মানে”

“মিস করছো আমাকে?

আকস্মিক এক প্রশ্ন ছুড়লেন উনি আমার দিকে, আমি এবার বেজায় মুশকিলে পড়লাম..নিজেকে নিজে প্রথমে প্রশ্ন করলাম, সত্যি কি আমি মিস করছি ওনাকে? হ্যা আমি তো করছি, কিন্তু সেসব প্রকাশ করতে চাইনা

“মিস করার কি আছে? আর আপনাকে মিস করতেই বা কেনো যাবো? আপনি তো শুধু খাটান আমাকে, এখন দিব্যি শান্তিতে আছি..আপনি এক কাজ করুন ওখানেই থেকে যান তাহলে আর আমাকে আপনার বাড়ি ছুটতে হবে না”

কথাগুলো একদমে বলে থামলাম, ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুচকি হাসছেন..হাসির মতো কি বললাম আমি?

“তুমি মিথ্যেটা ও ঠিকমতো বলতে পারো না রুহি”

উনি ধরেই ফেললেন যে আমি মিথ্যে বলছি, কখনো কখনো উনি আমার না বলা কথাগুলো ও বুঝে যান, আমি কিছু লুকালে ও বুঝতে পারেন সেসব দেখে ভালোই লাগে আমার, একটু চুপ থেকে আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম

“আপনি আর রেগে নেই তো আমার ওপর? সেদিন তো খুব মেজাজ চড়ে ছিলো আপনার আমার ওপর”

“রাগ কমেছে একটুখানি তবে পুরোটা না”

আমি ঠোঁট উল্টে ফেললাম, উনি এখনো রেগে আছেন? নাহ! এটা মানতে পারলাম না

“এখনও পুরোটা যায়নি কেনো? আমি তো সরি ও বলেছিলাম”

“সরি বললেই তো কাজ হবেনা..এত্তো সহজ নাকি সব?”

“সরিতে হবেনা?”

“উহু!! রুহি তোমার মনে আছে তো তুমি আমার রুমে দাড়িয়ে কি বলছিলে? আমি যা বলবো তাই করবে, তার বদলে কোনো প্রশ্ন করবে না?”

“হুমম মনে আছে..কিন্তু কেনো?”

“সে অনুযায়ী আমি তোমাকে কিছু করতে বলবো, তুমি যখন আমার বলা কাজটা করবে তখন আমার রাগ পুরোপুরি চলে যাবে”

রাজি তো আগে থেকেই হয়ে আছি আমি আর উনি তো বলেই দিয়েছেন প্রশ্ন করা বারন..তো আমি আর কিছু বললাম না..একটু বাদে কথা শেষ করে উনিই ফোন কেটে দিলেন, হঠাৎ করে একঝাঁক খুশি এসে যেনো ঘিরে ধরলো আমাকে, এটা কি আরমান স্যারের সাথে দুদিন বাদে কথা বলতে পারলাম বলে? বিছানার ওপর চিত হয়ে শুয়ে পড়লাম আমি, নিজেই নিজের সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম

“এটা কি হলো? এতোক্ষণ তো মন খারাপ ছিলো আর এখন তো একদম উল্টো ফিলিং হচ্ছে..এটা তো সত্যি মিস করছিলাম ওনাকে, কিন্তু কথা বললেই যে এত ভালো লাগবে জানলে আমি নিজেই ফোন করে নিতাম”

খুব খুশি লাগছে আমার এখন! তবে এর কারণ কিছুটা হলেও এখন যেনো বুঝতে শুরু করেছি আমি..ওনার বলা “মিস করছিলে আমাকে?” কথাটা এখনও কানে বাজছে আমার

“উফফ! আমি তো বোধহয় লাগল হয়ে গেছি! একমিনিট! আমি আবার কোথাও ওনাকে পছন্দ করতে শুরু করলাম না তো?”

মুচকি হাসলাম আমি, ওদিকে আরমানের রুমে সিফাত এসেছে একটু আগেই!আরমান সেটা লক্ষ্য করেনি অবশ্য, সে নিজেই নিজের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলো তখন

“উফফ! কি যে করে মেয়েটা, মাত্র দুটো দিন হয়েছে আর তাতেই কি অবস্থা করেছে নিজের..একটু খেয়াল রাখে না নিজের..যদি বড় কোনো ক্ষতি হতো?”

সিফাত আরমানের সামনে বসে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে ওকে, একসময় আরমানের চোখ পড়ে ওর দিকে

“হোয়াট? তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো আমার দিকে?”

“দেখছি”

“কি দেখছিস?”

“এত্তো চিন্তা রুহির জন্যে? ব্যাপারটা কিন্তু সুবিধার ঠেকছে না ব্রো! তোর মনের মধ্যে কি চলছে বলতো?”

“আচ্ছা? তোর কি মনে হচ্ছে?”

“তুই যেভাবে রুহির কেয়ার করিস, ওর কথা এতো ভাবিস তাতে তো ছেলে হিসেবে আমার একটাই কথা মনে হচ্ছে..বস! তোমার মনটা রুহি দখল করে নিয়েছে”

হেসেই কথাটা বলল সিফাত, আরমান ও ওর কথা শুনে হেসে দেয়..বন্ধু ওর মনের খবর বুঝে ফেলেছে

” ইউ নো হোয়াট সিফাত! রুহিও আমাকে মিস করছিলো.. ইট ওয়াজ আনেক্সপেক্টেড!!”

“কি বলিস? ও নিজে বলেছে তোকে?”

“হুমম! ধরে নে তাই”

“বাহ! তাহলে তো ভালোই..এর মানে ওর মনেও তোর জন্যে ফিলিং আছে..তাহলে আর দেরি করে লাভ কি?”

আরমান প্রতি উত্তরে মুচকি হাসলো..বন্ধু তো জেনেই গেছে এবার তাহলে যে সেই মনচোর কে মনের খবর জানানোর ব্যাপারে বিলম্ব করা ঠিক হবে না..ওদিকে আরমানের বাবা আর মা নিজেদের মধ্য টুকটাক কথা বলছিলেন..এরই মাঝে উনি রুহির প্রসঙ্গ টানেন

“আরমানের ম্যানেজার, মানে ওই রুহি..কাজ ছাড়াও দেখছি এই বাড়িতে ওর যাতায়াত বেড়েছে..কারণটা কি?”

“কাজের বাইরে মানে? তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না”

“মানে আমি ইদানিং লক্ষ্য করছি আরমান ওই মেয়েটাকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে..আমার মনে হয় রুহি আরমানকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে”

“এগুলো কি বলছো তুমি? তোমার রুহিকে বুঝতে ভুল হচ্ছে, ঐরকম মেয়ে না ও..এতদিন ধরে আরমানের জন্যে কাজ করছে কখনো তো এমনকিছু নজরে পড়েনি”

“হতে কতক্ষন? ছেলেকে বোঝাও তুমি..আর ওই মেয়েটা যেনো কাজ ছাড়া অহেতুক এই বাড়িতে যাতায়াত না করে..যতো মেয়েটার থেকে দূরে থাকবে সেটা আরমানের জন্যে ভালো”

মিস্টার শাহর রুহিকে অপছন্দ করার বিশেষ কোনো কারণ তো মিসেস শাহ্ এর জানা নেই তবে উনি তর্কে জড়ালেন না কারণ মিস্টার শাহ যেটা ঠিক মনে করেন সেটার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে সেটা মেনে নেন না..!! পরেরদিন চাচা আমাকে আর নয়না কে নিয়ে একটা বিয়ে বাড়ীতে এলেন দাওয়াত খেতে! আরমান স্যার তখন ফোন করেছিলো আমায়, তো আমি এক সাইডে এসে কথা বলছিলাম, তখনই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো

“নিজের বিয়ে ভেঙে এখানে অন্যের বিয়ে খেতে আসবে ভাবিনি!”

পেছনে ফিরে তাকালাম আমি, ছেলেটাকে দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য চমকে গেলাম..ফোনটা কেটে দিলাম আমি

“আপনি..? আপনি এখানে কি করছেন?”

ফোনটা হুট করে কেটে দেওয়ায় আরমান কিছুটা অবাক হয়

“এটা কি হলো? কথাই তো বললাম না, তার আগেই কেটে দিলো? মেবি বিজি হয়ে গেছে কোনো কাজে”

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]
#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ০৮
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

যে ছেলেটার আগে কিছুদিন আগে আমার বিয়ে ভাঙলো সেই রাকিব আমার সামনে দাড়িয়ে আছে..এভাবে দেখা হবে ওনার সাথে ভাবিনি, ওনাকে সামনে থেকে না দেখলেও ছবি দেখেছিলাম একবার তাতেই চিনে গেছি

“আপনি এখানে কি করছেন?”

“আমি এখানে এসেছি গেস্ট হিসেবে যেমন তুমি এসেছো, কিন্তু তোমাকে দেখবো ভাবিনি”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না, আসলে ওনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে ছিলো না, আমি চলতে আসতে যাচ্ছিলাম তখন উনি আটকালেন আমাকে! জানি উনি কোন বিষয়ে কথা বলবেন

“তুমি জানো এই বিয়েটা ভাঙায় কতোটা অপমানিত হতে হয়েছে আমার ফ্যামিলিকে? এরকম করা দরকার ছিলো?”

“এরকম হতো না যদি আপনি একবার আমার সাথে কথা বলতেন.. আমি তো বাধ্য ছিলাম কিন্তু আপনি তো ছিলেন না, আপনার উচিত ছিলো না আমার সাথে একবার কথা বলা? সবই তো জানতেন আপনি কেনো বিয়ে হচ্ছে আমাদের! তারপরও আপনি আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেননি..তারপর যা হলো সেসব তো..তবে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে, যা হয়েছে তাতে আমাদের দুজনেরই ভালো হবে”

“তোমার মধ্যে তো দেখছি বিন্দুমাত্র চিন্তার রেশ নেই..শুনেছি মেয়েদের বিয়ে ভাঙলে নাকি তারা ডিপ্রেশনে চলে যায় কিন্তু তুমি তো দেখছি এখানে স্বাভাবিক আছো”

মুচকি হাসলাম আমি

“বিয়েটা যদি আমার মতে হতো তাহলে এই নিয়ে দুঃখ করতাম, কিন্তু এখানে তো ব্যাপার সম্পূর্ন উল্টো তাই দুঃখ নেই কোনো”

” বিয়েটা এভাবে ভাঙার পেছনে তোমার প্ল্যানিং ছিলো সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত! আমাদের বাড়ি থেকে হুট করে তোমার বাড়ির পেপার গায়েব হয়ে যাওয়াটা হুট করে হয়নি”

“ধরে নিন আমার অজান্তেই আমাকে কেউ একজন বাঁচিয়েছে! বলতে পারেন বিশেষ কেউ”

“তারমানে তোমার জীবনে কেউ আছে? এটাই কারণ যার জন্যে তোমার চাচা বিয়ে ভেঙে দিয়েছে?”

“হয়তো আছে, সে আমাকে প্রোটেক্ট করছে সবসময়.. তবে আপনি এসব বুঝবেন না.. যাই হোক ভালো থাকবেন”

কথাটা বলেই আর দাড়ালাম না, কথায় কথা বাড়ে আর পুরনো কথা নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে নেই আমার, যা হবার হয়েছে সে নিয়ে ভেবে আর কি লাভ? বিয়েটা খেয়ে চলে এলাম বাড়িতে! আজ ঠান্ডার মাত্রা কিছুটা কম বিধায় জানালা খুলে দিলাম নিজের ঘরের, শিরশিরে হাওয়া শরীর হিম করে দিচ্ছে, হঠাৎ মনে পড়লো সেদিন রাতের কথা.. এখান দিয়েই তো আরমান স্যার এসেছিলেন আমার রুমে! মুচকি হাসলাম! মানুষটাকে নিয়ে আজকাল ভাবতে ভালো লাগে, ওনাকে মিস ও করছি হয়তো, একটু একটু চিন্তাও হয় ওনার জন্যে..জানিনা আমার কি হচ্ছে তবে মনে হয় যা হচ্ছে চলতে থাকুক! ভালো লাগছে সবকিছু..ঘুমানোর সময় হয়ে আসছে তো আমি চলে এলাম বিছানায়, শুয়ে পড়লাম..চোখটা বন্ধ করবো তখনই ওনার ফোন এলো! অনেক খুশি হলাম আমি, ধপ করে উঠে বসে এক সেকেন্ড ও নেইনি ফোন ধরতে!

“হ্যালো”

“ঘুমাওনি এখনও?”

এবার আমি একটু চুপ হয়ে গেলাম, বুঝতে দিতে চাইনা যে ওনার ফোন দেখে কতটা খুশি হয়েছি আমি তাই ইচ্ছে করে কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে

“ঘুমিয়েছিলাম তো, আপনিই তো ফোন করে ভাঙিয়ে দিলেন!

“ওহ! সরি

উনি সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিলেন, ব্যাপারটা বুঝলাম না আমি..রাগ করলেন নাকি এইটুকু তেই? করতেও পারেন..তবে আমার কিছুটা খারাপ লাগলো এভাবে ফোন কেটে দেওয়ায়, কল ব্যাক করতে চেয়েও করলাম না ভাবলাম কাল না হয় কথা বলা যাবে..এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো পাঁচদিন! গতকাল আরমান স্যার বাড়ি ফিরেছেন তো আজকে যেতে হবে আমাকে, আমিও চলে গেছি ও বাড়িতে নিজের দায়িত্ব পালনের জন্যে..ইতস্তত বোধ করছিলাম ভীষণ, সেদিন ফোনে কথা বলার পর থেকেই তো কেমন এক অনুভূতি হচ্ছে আমার তার ওপর আজ আরমান স্যারের সামনে আসতে হবে! আমি ড্রয়িং রুমে ছিলাম, ওনার একটা ফটোশুট আছে সেটার বিষয়ে ফোনে কথা বলছিলাম, তখনই উনি এলেন ওপর থেকে..আমি কথা শেষে উঠে দাঁড়াতেই উনি বলে উঠলেন

“কে ফোন করেছে?”

“আপনার জন্যেই দরকারি ফোন”

“কি বললো?”

“আপনার জন্যে একটা অফার এসেছে ফটোশুটের! আমি তার ডিটেইল আপনাকে সেন্ড করে দিয়েছি দেখে নেবেন! যদি পছন্দ হয় আমাকে বলবেন..তাদের সাথে কথা বলে নেবো”

“এখনি? সবে তো এলাম একটা কাজ ফিনিশ করে! একটু রেস্ট নিতে চাই! না করে দাও”

“আরে আপনাকে তো আর আজকেই যেতে বলছে না, আপনি যখন সময় দেবেন তখনই হবে..না করে দেবার প্রশ্নই আসেনা”

উনি আমার সামনে এসে দাড়ালেন, আমি চোখ নিচু করে তাকিয়ে আছি, ওনার দিকে তাকাচ্ছি না

“তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেনো?”

সঙ্গে সঙ্গে চোখ তুললাম আমি, ওনার চোখে চোখ রেখে হকচকিয়ে বলে উঠলাম

“ক..কই নাতো! আমি তো আপনার দিকেই দেখছি”

“এতোক্ষণ তো দেখছিলে না..আমার ম্যানেজার হয়ে তুমি চোখ নিচু করে কথা বলবে সেটা কিন্তু আমি মেনে নেবো না! সবসময় সবার সাথে চোখে চোখ রেখে কনফিডেন্টলি কথা বলবে, গট ইট?”

উনি সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে! আমি ছোট্ট একটা ঢোক গিলে বলে উঠলাম

“জ্বি বুঝেছি! এখন তো দেখছি! ঠিক আছে তো?”

“হুম! এখন ঠিক আছে, এনিওয়ে একটা কথা জানার ছিলো”

“কি কথা?”

উনি সোফায় বসলেন, আমি এখনও দাড়িয়ে, তো উনি ইশারায় আমাকে বসতে বললেন..আমিও বসে পড়লাম.. হুট করেই উনি প্রশ্ন করে বসলেন

“তুমি শাড়ি পড়তে পারো?”

কিছুটা অবাক হলাম ওনার প্রশ্ন উনি, এমন প্রশ্নের মানে কি?

“হ্যা পারি, কিন্তু কেনো বলুনতো?”

“ওকে! তাহলে এখন তুমি বাড়ি যাও.. বিকেলে শাড়ি পড়ে তৈরি থাকবে, সিফাত তোমাকে আনতে যাবে..ওর সাথে চলে এসো”

“এক মিনিট, শাড়ি পড়তে যাবো কেনো হঠাৎ সেটা তো বলবেন আর আপনার বন্ধু আমাকে নিয়ে কোথায় যাবে?”

উনি মুচকি হাসলেন, ওনার এই হাসি দেখলেই বুকের ভেতর যেনো কেমন করে ওঠে আমার..কেনো যে এমন হয় আর উনিই বা আমার সামনে এতো হাসেন কেনো কে জানে!

“তোমাকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার দুঃসাহস নেই ওর, আমি জাস্ট তোমাকে পিক করার জন্যে পাঠাচ্ছি”

“কিন্তু আপনি বলুনতো আগে কোথায় আসবো আর শাড়ি পড়েই কেনো? এমনি আসা যায় না?”

“নাহ! শাড়ি পড়েই আসতে হবে এন্ড ইটস ইউর পানিশমেন্ট, অন্য ড্রেসে এলে খবর আছে তোমার আগে ওয়ার্ন করে দিলাম”

মনে পড়লো ওনাকে বলা কথা, যা বলবেন তাই মানবো..এখন তো সেটা করতেই হবে! কথা বাড়ালাম না আর

“আচ্ছা, আপনি যা বলছেন সেটাই হবে কিন্তু শুধু শুধু আপনার বন্ধুকে কষ্ট করাতে হবে না..আপনি বলুন কোথায় আসতে হবে আমি নিজেই চলে আসবো”

“দরকার নেই একা আসার! ও তোমাকে নিয়ে আসবে তুমি শুধু রেডি থেকো!

“কিন্তু স্যার, আমি বুঝতে পারছি না হঠাৎ শাড়ি কেনো? আর কিছু বলার থাকলে এখনি তো বলতে পারেন..আমি এখানেই আছি, আবার বাড়ি গিয়ে রেডি”

“প্রত্যেকটা জিনিসের জন্যে একটা প্রিপারেশন লাগে এন্ড ইউ আর নট প্রিপিয়ার্ড নাও, বাড়ি গিয়ে আগে প্রস্তুতি নাও তারপর”

“কিন্তু আপনার বন্ধু কখন না কখন যাবে সেটা আমি কিভাবে বুঝবো? আমি দরজা খুলে দাড়িয়ে থাকবো নাকি?”

উনি হাসলেন আমার কথায়, অবশ্য আজকাল যা দেখলাম আমার সব কথাতেই হাসি পায় ওনার, মুখ গোমড়া করে রইলাম আমি

“তোমাকে যদি দরজা খুলে দাড়িয়েই থাকতে হয় তাহলে ফোন আছে কিসের জন্যে? ও তোমাকে কল করে নেবে নাহলে আমি কল করবো”

“আপনি যে কি করতে চান বুঝিনা কিছু!”

“সময় আসেনি এখনও তাই বুঝতে পারছো না, সময় এলেই সব বুঝে যাবে”

আমি কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে, মাথায় আবার কোন নতুন ভুত ঢুকেছে ওনার যার জন্যে আমাকে এতো সাজসজ্জা করতে বলছে? তখনই ওনার ফোন বেজে উঠলো, উনি সোফা থেকে উঠে ওপরে যাওয়ার পথ ধরেন

“স্যার! আমি কি তাহলে এখনই যাবো?”

“হুমম, গো..!”

আমিও সব গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছিলাম, তখন মিনাল কলেজ থেকে ফিরলো, আমাকে এই সময় যেতে দেখে প্রশ্ন করলো

“আরে আপু, এখনি চলে যাচ্ছো যে?”

“কি করবো বলো? আরমান স্যার যেতে বললেন”

“হ্যা? ভাইয়া যেতে বলেছে? কেনো?”

“সেটা তো আমাকে বলেননি, তুমি নিজেই জিজ্ঞাসা করে দেখো কিছু বলে কিনা..আমি বরং যাই, এখনও এখানে দেখলে রাগ করবেন”

মিনাল আর আমাকে আটকালো না, আমিও চলে এলাম..বাড়ি ফেরার পথে অনেক ভাবার চেষ্টা করেছি কেনো উনি আমাকে তৈরি হয়ে যেতে বললেন? কি এমন বলবেন? ওদিকে মিসেস শাহ্ ছেলের মতিগতি দেখে ঢের বুঝতে পারছেন ওনার ছেলে রুহিকে পছন্দ করে কিন্তু মিস্টার শাহর রুহিকে নিয়ে কি মনোভাব সেটাও উনি জানেন..তাই উনি ভাবলেন সবার আগে আরমানের সাথে কথা বলা যাক! উনি আরমানের ঘরে যান, ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল ও

“ব্যস্ত আছিস?”

মাকে দেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাড়ায় আরমান

“না না, এসো..কিছু বলবে?”

“হ্যা, তোকে একটা দরকারি কথা জিজ্ঞাসা করার ছিলো”

“হ্যা বলো”

“আরমান, আমি কিছুদিন যাবত লক্ষ্য করছি তুই রুহির ব্যাপারে একটু বেশি ঝুঁকে পড়েছিস, অবশ্য আমি বিষয়টা আগেও লক্ষ্য করেছি কিন্তু এখন তার মাত্রা কিছুটা বেড়ে গেছে..বিশেষ করে রুহির বিয়েটা ভাঙার পর”

আরমান চুপ করে আছে, এখনি ও চায়নি রুহির ব্যাপারে ওর মনে কি আছে সেসম্পর্কে কিছু বাড়িতে জানাতে কিন্তু এখন যে ওর মা টের পেয়ে গেছে সেটা বুঝে গেছে আরমান

“সত্যি করে একটা কথা বলতো বাবা, তুই কি রুহিকে পছন্দ করিস? দেখ আমি তোর মা, যদি তোর মনে কিছু থেকে থাকে আমার থেকে লুকাস না”

“তোমার ওকে পছন্দ না মা?”

“আমার পছন্দ করাটা বড় না, তুই ওকে পছন্দ করিস কিনা সেটা জানাটা দরকার”

আরমান আর কিছু হাইড করতে চাইলো না, যদিও ও চেয়েছিলো আগে রুহিকে জানিয়ে তারপর ওর মাকে বলবে কিন্তু এখন তো সেটা করতে পারবে না.. কনফিডেন্টলি ও মাকে নিজের মনের কথা জানিয়ে দিলো

“হ্যা মা, এটা সত্যি আমি ওকে পছন্দ করি..ইন ফ্যাক্ট অনেক আগে থেকেই লাইক করি আর আমার মনে হয় না আমি ভুল কাওকে নিজের জন্যে চুজ করেছি”

ছেলের কথা শুনে এবার কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান মিসেস শাহ, ছেলে যে মেয়েকে পছন্দ করে বাবা সেই মেয়েকেই অপছন্দ করে..দু পক্ষের রায় জানার পরও কি করা উচিৎ উনি বুঝতে পারছেন না..ওনার চিন্তা হচ্ছে রুহির জন্যে বাবা ছেলের মধ্যে ঝামেলা না হয়ে যায়

“আরমানের বাবা যদি এটা জানে তাহলে তো একট ঝামেলা করবে, আবার আরমানকে এখন যদি বলি ওর বাবা রুহির ব্যাপারে কি বলেছে তাহলেও তো ঝামেলা..কিন্তু আমিও এসব জানিয়ে ছেলের খুশির পথে বাধা হতে চাইনা আমি আল্লাহ! তুমি শুধু দেখো বাবা ছেলের মধ্য যেনো ঝামেলা না হয় কোনো”

মনে মনে কথাগুলো ভাবলেন মিসেস শাহ! চিন্তা হচ্ছে ওনার অনেক, মাকে চুপ থাকতে দেখে আরমান প্রশ্ন করে বসে

“কোনো সমস্যা আছে মা? তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো”

“রুহি জানে এসব?”

না সূচক মাথা নাড়ে আরমান

“নট ইয়েট, তবে আজ জানবে.. আই ডোন্ট নো ওর রিপ্লাই কি আসবে বাট হোপিং ফর ইয়েস! কিন্তু মা তুমি এভাবে কেনো বলছো? তুমি চাও না আমি ওকে বলি যে আমি কি ফিল করি?”

কয়েক মুহূর্তের জন্য চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল আরমান, ওর মা আমার কি না কি বলে বসে কিন্তু ওর মা হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওর সকল চিন্তা দুর করে দেয়

“অবশ্যই বলবি! এমনিতেও আমার রুহিকে অনেক পছন্দ, আর তোর সাথেও ওকে খুব মানাবে! তোর সিদ্ধান্তে আমার কোনো আপত্তি নেই”

“রিয়েলী মা? তাহলে তোমার আপত্তি নেই?”

“একদম না! তুই খুশি তাহলেও আমিও খুশি”

মায়ের সাপোর্ট পেয়ে আরমান আরো কনফিডেন্ট হয়ে যায়, শুধু এবার ওর একটাই চিন্তা..যদি রুহি না করে দেয়? তাহলে কি হবে? আপাতত নেগেটিভ চিন্তা দূরে রেখে সবকিছু পজিটিভলি ভাবতে চায় আরমান,ছেলের খুশি দেখে আরমানের মা ভীষণ খুশি..উনি ঠিক করেছেন আগে রুহি আরমানকে কি উত্তর দেয় সেটা জানুক তারপর যা হবার হবে!এদিকে মেরুন, আকাশী, সাদা আর মিষ্টি কালারের ৪ টা শাড়ি বের করেছি আমি কিন্তু কোনটা পড়বো ঠিক করতেই পারছি না, কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি একদম! চারটা শাড়ী গায়ে ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম আমি, কোনটায় ভালো লাগবে আমাকে?

“কোনটা পড়বো এর মধ্যে থেকে? উফফ! আজ বোধহয় প্রথমবার আমি শাড়ি পড়তে গিয়ে এত কনফিউজড হচ্ছি! অবশ্য আগে তো আর কোনো ছেলের জন্যে আলাদা করে শাড়ি পড়ে যাইনি, এরকম তো হবেই”

নিজে নিজেই এভাবে কিছুক্ষন বকবক করলাম, শেষে মিষ্টি কালারের শাড়ীটাই পড়বো বলে ঠিক করলাম..বিকেল হয়ে আসছে, জলদি জলদি তৈরি হলাম..কখন যেনো সিফাত এসে আবার ফোন করে বসবে, বরাবরের মতো এবারও নয়না আমার সাথে! আমাকে সাহায্য করছে! ওকে বলিনি কেনো শাড়ি পড়েছি তাহলে ও টিজ করতে শুরু করবে”

“কিরে তুই আপু! একটু সাজবি না? এভাবেই যাবি নাকি? বস, আমি সাজিয়ে দিচ্ছি তোকে”

“এই না না, এত সাজগোজ ভালো লাগেনা..সিম্পলি ঠিক আছি আমি”

“না ঠিক নেই! তুই জানিস সাজলে কতো সুন্দর লাগবে তোকে? বস চুপ করে আমি হাল্কা সাজিয়ে দিচ্ছি..এতেই তোকে দেখতে ঝাক্কাস লাগবে”

“হয়েছে! এবার জলদি করতো! দেরি হচ্ছে”

আমাকে চুপ করে বসিয়ে সাজাতে শুরু করলো নয়না, বোন আমার সাজগোজের ব্যাপারে খুব পটু তাই আমাকেও সাজাতে ওর সমস্যা হলো না..মনের ভেতর কেমন যেনো ধুকধুক করছে আমার, আচ্ছা উনি কি বলতে পারেন আমাকে আজ? সাদা টি শার্টের ওপর কালো রং এর কোটটা গায়ে জড়িয়েছে আরমান, হাত দিয়ে সিল্কি চুলগুলো সেট করে নিয়েছে! আজকে ওর মায়ের পছন্দ করে দেওয়া ড্রেস পড়েছে ও! মিনাল ও সাহায্য করছে! বডিস্প্রে দিয়ে একবারে চুপচুপে করে দিয়েছে একদম আরমানকে

“এই, এত্তো দিচ্ছিস কেনো? আমার জিনিস হাতে গেলেই শুধু ওয়েস্ট করতে মন চায় নাকি তোর?”

“উফফ ভাইয়া আজকের দিনে আর এসবের চিন্তা করিস না তো তুই, সাজ আজকে বেশি করে যাতে রুহি আপু তোকে দেখেই হ্যা বলে দেয়”

” আমার ছেলেটাকে রুহি না করতেই পারবে না, আরমান তুই আবার ওর সামনে কিছু উল্টোপাল্টা বলে ফেলিস না যেনো”

“না মা, তুমি তো জানো তোমার ছেলে সোজা কথা বলতে পছন্দ করে, আর আজ কোনো ভুল তো করাই যাবে না”

“তোর পেটে পেটে যে এত জানা ছিলো না আমার, রুহি আপুকে পছন্দ করিস আর আমি, তোর বোন হয়ে কিছু জানতেই পারলাম না?”

“বাচ্চা মানুষ বাচ্চার মতো থাক! এতো পাকামি করতে কে বলে তোকে?”

“আমি এখন বড় হয়ে গেছি ভাইয়া তো আমাকে একদম বাচ্চা বলবি না, আর হ্যা খালি হাতে যাবি নাকি? দিবি না রুহি আপুকে কিছু?”

“হ্যা আরমান! মিনাল কিন্তু ঠিক বলেছে..খালি হাতে ব্যাপারটা কেমন যেনো দেখাবে! তুই একটা ফুল রাখিস হাতে অন্তত”

“সেসব ঠিক করে নিয়েছি আমি মা! কোনো চিন্তা করতে হবে না!”

মা বোন দুজনের সাপোর্ট পেয়ে আরমান খুব খুশি কিন্তু ও তো জানেনা ওর বাবা আগে থেকেই এক প্যাচ লাগিয়ে রেখেছে! এদিকে আমার সাজসজ্জা শেষ! সিফাতের ফোন ও এসে গেছে তো আমিও বেরোনোর জন্য তৈরি! মিনাল ও আমার সাথে সাথে আসছে তখন চাচী আমাকে দেখে বলে ওঠে

“বাব্বাহ! আজ হঠাৎ শাড়ি পড়ে কোথায় চললি তুই? তোকে তো এমনি শাড়ি পড়তে দেখি না”

“আসলে চাচী, বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তো তাই ভাবলাম আজকে একটু পড়ি”

“ওহ! তো নয়না তোর সাথে সাথে যাচ্ছে কোথায়?”

চাচীর কথা শুনে নয়না আমার দিকে তাকায়!

“আমি আপুকে ছাড়তে যাচ্ছি দরজা অব্দি”

“নয়না তোকে যেতে হবে না! তুই থাক! আমি যাচ্ছি”

নয়নাকে আমি আনলাম না নিজের সাথে, সিফাতের সাথে তো যেতে হবে আমাকে সেটা দেখলে আবার নয়না কি না কি ভেবে বসবে! হেঁটে কিছুটা এগোতেই দেখলাম সিফাতের গাড়ি, উনি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছেন! আমি এগিয়ে গেলাম..উনি গাড়ি দরজা খুলে দিলো আমার জন্যে

“বসো!”

“একটা প্রশ্ন করবো?”

“কি?”

“আপনার বন্ধু আপনাকে আমায় নিয়ে যেতে বলেছে তারমানে আপনি জানেন কেনো যেতে বলেছে তাইনা? আপনি সব জানেন! বলুন না তাহলে আমাকে”

উনিও আমার কথা শুনে হাসলেন, আমার ভীষণ রাগ হলো এবার! কি এমন হাসির প্রশ্ন করেছি আমি?

“অদ্ভুত তো! আপনার বন্ধুকে প্রশ্ন করলে উনি হাসেন আবার আপনিও হাসছেন! আমাকে কি জোকার মনে হয় আপনাদের?”

উনি হাসতে হাসতে বললেন

“সরি সরি! আসলে ব্যাপারটাই এমন! আমি জানি ও কি বলবে তোমাকে কিন্তু বলতে পারবো না..নাহলে আমাকে ধরে অনেক মারবে..সরি রুহানি! বলা বারণ আছে”

আমি হতাশ চোখে কিছুক্ষন ওনার দিকে দেখে গাড়িতে বসে পড়লাম! এখন আর কাওকে কিছু জিজ্ঞাসা করার মানেই হয় না, যা শোনার একেবারে না হয় ওনার মুখ থেকেই শুনবো!

চলবে….

[একটু ব্যস্ত আছি বিধায় খুব দ্রুত লিখেছি! রিচেক করতে পারিনি, ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here