ইস্ক_সুফিয়ানা #পর্ব – ০৯

0
1360

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ০৯
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

পুরো রাস্তা আমি সিফাতের সাথে একটা কথা বলিনি,ওনার সাথে সাথে আরমান স্যারের ওপরও মারাত্মক রাগ করেছি..প্রায় এক ঘন্টা সময় পর সিফাত গাড়ি থামালেন, জায়গাটা দেখে আমার চিনতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি কারণ এটা তো সেই শুভ্র কাশ ফুলের বন, শরতে তো এখানে এসে লোকের ফটো তোলাটা একটা ট্রেন্ড হয়ে যায়!

“এখানে আনলেন কেনো?”

“আরমান আনতে বলেছে, এবার তোমাকে একাই যেতে হবে কারণ আমার আর যাওয়ার পারমিশন নেই”

“কিন্তু একা একা কোথায় যাবো আমি? আর আপনার বন্ধুই বা কোথায় আছে?”

“এখানেই আছে ও, আর নাহলে চলে আসবে একটু অপেক্ষা করো, নিজেই একটু হাটাহাটি করে টাইমপাস করতে পারো”

“কিন্তু আপনি এমন কেনো বললেন আর আসার পারমিশন নেই?”

“সরি বাট, এখন তোমার এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না রুহানি, আমার আরমানের পাঞ্চ খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই, ও অনেক জোরে জোরে পাঞ্চ দেয়!”

কথাটা বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন সিফাত, আমি আহাম্মকের মতো চেয়ে আছি ওনার দিকে, কেনো যে হাসছেন উনি, কি বলছেন উনিই জানেন..আমি নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে, তখনই উনি সা সা করে গাড়ি ছুটিয়ে চলে গেলেন..আমি এবার হাঁটতে হাঁটতে আরমান স্যারকে ফোন করলাম কিন্তু ওনার ফোন বন্ধ আসছে

“অদ্ভুত তো, আমাকে আসতে বলে নিজেই ফোন ধরছে না? আরমান স্যার আবার আমার সাথে মজা করছে না তো? নাহ, মজা কেনো করতে যাবেন? আমি বরং একটু অপেক্ষা করি”

বিকেল হয়ে গেছে বিধায় কিছুটা ঠান্ডা লাগছে তো আমি গায়ে শাল টা জড়িয়ে নিলাম, ভাগ্যিস সাথে করে শাল নিয়ে এসেছিলাম..তারপর নিজেরই কিছু ছবি তুলে নিলাম, সাথে জায়গাটার ও কিছু ছবি নিলাম..আশেপাশে দেখলাম বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরা জোট বেঁধে এসেছে, বুঝতে অসুবিধা হলো না যে তারা কাপল! কি সুন্দর সময় কাটাচ্ছে, এসব দেখে আমারও ইচ্ছে হচ্ছিল ঈশ আজ যদি আমিও মিঙ্গেল থাকতাম তাহলে এভাবে সময় কাটাতে পারতাম..কয়েকবার আরমান স্যারের কথা মাথায় এসেছিলো, ইদানিং শুধু এইসব ভাবনাই যে কেনো আসে আমার মাথায়! তবে হ্যা ভালো লাগে ওনাকে নিয়ে ভাবতে, হয়তো নিজের অজান্তেই পছন্দ করতে শুরু করেছি আমি..নিজের অনুভূতি বোঝার মতো ক্ষমতা তো আমার হয়েছে! ওনার ভাবনায় মগ্ন ছিলাম তখনই দেখলাম সামনে এক কাপলের মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগেছে..আমি এগিয়ে গেলাম ওদের কাছে, জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে তো মেয়েটা বললো

“আপু, দেখো ও আমাকে শুরুতে অনেক ভালোবাসতো, সারাদিন আমাকে সময় দিতো আর এখন আমার জন্যে সময়ই নেই ওর কাছে..ভালোবাসে না আর আমাকে আগের মতো ও”

তখন ছেলেটা বলে উঠলো,

“লাইফে তো ভালোবাসা ছাড়াও আরো অনেক দায়িত্ব আছে, কাজ আছে..সেগুলো ছেড়ে কি সারাদিন তোমার কাছে বসে থাকবো আমি?”

ছেলেটার কথা শুনে মেয়েটা কান্না করে দিলো

“তুমি তো নিজের কথাতেই প্রমাণ করে দিলে আমার থেকে তোমার কাছে তোমার কাজের মূল্য বেশি”

আমি দু পক্ষের আরো কিছু কথা শুনলাম, যা বুঝলাম ছেলেটা সদ্য একটা চাকরিতে ঢুকেছে আর ও বাড়ির বড় ছেলে..অনেক দায়িত্ব আছে ওর কিন্তু মেয়েটার বয়স কম, স্বভাবতই আবেগের বশে এরকম করছে..এক পর্যায়ে রেগে ছেলেটা চলে যায় ওখান থেকে এদিকে মেয়েটা কান্না করেই যাচ্ছে

“দেখেছো! চলে গেলো আমাকে রেখে! আমাকে আর ভালোবাসে না ও”

“বিষয়টা এমন না, ও কি বলছে সেটা তোমাকে বুঝতে হবে.. তোমার জন্য ওর ভালোবাসা তো কম হয়নি..তুমি নিজেই বিবেচনা করে দেখো কতো দায়িত্ব এখন ওর কাঁধে, সেগুলো তো পালন করতে হবে..তাছাড়া হতে পারে তোমার ওকে বুঝছো, তোমার কি নিজের ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস নেই? হতে পারে তুমিও সেই শুরুর মতো এখন আর নিজের ভালোবাসায় বিশ্বাস রাখতে পারছো না”

“আমি ওকে বিশ্বাস করি! কিন্তু ইদানিং ও যেমন করছে আগে এরকম কখনো করেনি”

“হয়তো ও কোনো চিন্তায় আছে, কিছু নিয়ে টেনশন করছে তার ওপর তুমি এমন করছো তাই এরকম হচ্ছে..তুমি এক কাজ করো, ঠান্ডা মাথায় কথা বলে দেখো! বোঝার চেষ্টা করো ও কি বলতে চাইছে..হতে পারে তোমার সাহায্যর দরকার আছে ওর তাইনা?”

আমার কথাগুলো শুনে মেয়েটা একটু শান্ত হলো..নাক টেনে টেনে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো

“হুমম! তুমি তো ঠিকই বলেছ! এভাবে তো ভেবে দেখিনি আগে”

আমি মুচকি হেসে মেয়েটার গাল টেনে বললাম

“এখন তো বুঝেছ! তাহলে চট করে গিয়ে সরি বলে দাও ওকে, আর দেখো তুমি বয়সে এখন ছোটো তবুও ভালো যখন বেসেছো তখন সম্পর্কের ব্যাপারে একটু তো বড় হতে হবে..বুঝেছ?

” হুমম! আমি ওর সাথে কথা বলবো! আচ্ছা তুমিও বুঝি এই টেকনিক ইউজ করে তোমার বয়ফ্রেন্ড এর পাশে থাকো?”

হেসে দিলাম আমি..মেয়েটা তো ধরেই নিয়েছে দেখছি যে আমি আমার টেকনিক ওকে বললাম

“সরি আপু! আমার বয়ফ্রেন্ড নেই”

“তাহলে এগুলো বললে কিভাবে?”

“কাওকে ভালোবাসার থেকে ভালোবাসার সম্পর্কের মানেটা বোঝা বেশি জরুরি, কিভাবে এডজাস্ট করতে হবে সেগুলো জানা দরকার..বলতে পারো এইসব বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেছি..সেখান থেকেই তোমাকে টিপস দিলাম!”

মেয়েটা আমার কথা বুঝেছে কিনা জানিনা তবে কান্না থামিয়ে একটা হাসি দিয়েছে এতেই বুঝলাম মোটামুটি বোঝাতে পেরেছি তাকে! মেয়েটা ওর বয়ফ্রেন্ড এর নাম্বারে কল করে দৌড়ে চলে গেলো..আমিও আবার অপেক্ষা করতে শুরু করলাম, ফোনটা অন করে দেখলাম বিকেল ৫.১০ বাজে! এখনও আরমান স্যার আসেননি..এভাবেই দেখতে দেখতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো কিন্তু আরমান স্যারের কোনো খবর নেই! এবার রাগ হচ্ছে আমার, একে তো ঠান্ডা তার ওপর এখানে একা দাড়িয়ে আছি আমি! কোনো মানে হয়? আবার ফোন করলাম ওনাকে কিন্তু সেই ফোন বন্ধ!

“উফফ! এই হলো ওনার এক সমস্যা! সরকারের সময় ঘাটারা ফোন বন্ধ করে রেখে দেয়, এখানে একটা মেয়ে অপেক্ষা করছে ওনার জন্যে তার কোনো খেয়াল আছে নাকি লোকটার?”

আমি কাশবন থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছি কিছুক্ষণ আগেই, এদিকে আযান পড়ে গেছে! সন্ধ্যা হয়ে গেছে, এখনও ওনার ফোন বন্ধ..এবার যেনো আমার রাগটা অভিমানে পরিণত হয়ে গেলো! আজ বড্ড অভিমান হচ্ছে ওনার জন্যে! আমি তো অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম তাহলে কেনো এলেন না উনি? আবার ফোন করেও যখন ফোন বন্ধ পেলাম, রেগে তখন নিজের ফোনটাই বন্ধ করে দিলাম..কষ্ট হচ্ছে এখন আমার!

“উনি নির্ঘাত আমার সাথে মজা করতে চাইছেন! তাইতো ফোনটা ও বন্ধ করে রেখেছেন! ধুর! আমিও কি বোকা! আগেই বোঝা উচিত ছিলো আমার

কি আর করবো নিজেই নিজেকে বুঝ দিচ্ছি আমি,ওনার প্রতি অভিমানের পরিমাণ বুঝি এবার একটু বেশিই বেড়ে গেলো, চোখের কোন দিয়ে হঠাৎ করেই দেখলাম পানি এসে গেছে আমার! নিজেই অবাক হয়ে গেলাম, এত্তো অভিমান কেনো করছি ওনার ওপর আমি? চোখের কোন থেকে পানি মুছে মনে মনে বললাম

“উনি আসেননি তাতে আমার চোখে পানি কেনো আসছে? উনি তো একটা খারাপ লোক! কথা দিয়েও এলেন না, আমি জানি তো আমাকে এখানে একা রেখে মজা লুটছে! ওনার বন্ধুও এসবে জড়িত আছে! দুজনের ওপর প্রচুর রাগ হচ্ছে কিন্তু রাগ হলেই বা কি করতে পারবো আমি? ওদিকে আরমানের বাবা বাড়ি ফেরার পর থেকেই লক্ষ্য করছে মিনালকে একটু খুশি খুশি দেখাচ্ছে..তো উনি কৌতূহল বশত প্রশ্ন করে বসেন

“কি ব্যাপার মিনাল! আজকে তোকে এতো আনন্দিত দেখাচ্ছে কেনো? কিছু হয়েছে নাকি?”

“অনেক বড় খুশির ব্যাপার আছে বাবা, আজকে না তোমার ছেলে..”

এক্সাইটমেনট এ মিনাল বলেই দিতে যাচ্ছিলো সব কিন্তু ওর মায়ের দিকে তাকিয়েই চুপ হয়ে যায় ও, ওর মা ইশারায় ওর বাবাকে কিছু বলতে না করে..

“আরমান? কি করেছে ও?”

“ন..না আসলে ভাইয়া..”

মিনাল আমতা আমতা করছিলো, তখন মিসেস শাহ এগিয়ে এসে বলেন

“ও কিছুনা আসলে আরমানের মিউজিক ভিডিওর কিছু একটা আগেই মিনাল কে দিয়েছে তাই এত খুশি”

আরমানের বাবার কথাটা ঠিক বিশ্বাস হলো না, উনি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকান মিসেস শাহর দিকে

“এইটুকুতেই এতো আনন্দিত হবার কি আছে?”

মিনাল আর ওর মা একে অপরের দিকে তাকায়, মিস্টার শাহর মনে হচ্ছে দুজনেই কিছু একটা লুকাচ্ছে! ওনার মানুষকে পর্যবেক্ষণ করার দৃষ্টি বেশ প্রখর! ব্যবসার জন্যে তো এটা জরুরি তাই উনি বেশ দক্ষ এই ব্যাপারে

“সত্যি বলছো তো তোমরা নাকি অন্য কোনো ব্যাপার আছে?”

“নাহ! আর কোনো ব্যাপার নেই!”

তখনকার মতো আরমানের মা কথাটা কাটিয়ে দিলেও আরমানের বাবাকে যে এই কথায় ভোলাতে পারেননি সেটা উনি বুঝে গেছেন! তবুও ছেলের খুশির জন্যে এইটুকু মিথ্যে বলতে দ্বিধা নেই ওনার! এদিকে আমি এতোক্ষণ একটা দোকানে বসে ছিলাম, খিদে পাচ্ছে! কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না..তাই একটু চা খেলাম, ভালো লাগছে না কিছু! আমার তো উচিত চলে যাওয়া তাও যেতে পারছি না, বারবার মনে হচ্ছে উনি আসবেন, আমাকে একা এখানে আসতে বলে উনি আসবেন না এটা অসম্ভব! যেনো হুট করেই তীব্র একটা বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে আজ আমার ওনার প্রতি! এরপর আরো ৫-১০ মিনিট ওই দোকানে বসে থেকে ভাবলাম আর অপেক্ষা করার মানেই হয় না, তার ওপর জায়গাটা আমার অচেনা, কিছুটা ভয় ও করছে! উঠলাম আমি, ভালোভাবে গায়ে শাল জড়িয়ে হাটতে শুরু করলাম, সামনে বাস স্ট্যান্ড, ওখান থেকে বাড়ি ফেরার জন্যে বাস ধরতে হবে আমাকে! একটু সামনে হাঁটতেই একটা গাড়ি দেখতে পেলাম, দাড়িয়ে গেলাম আমি! গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন একজন, মুখের সামনে একটা সাদা গোলাপ ফুলের বুকে ধরে আছেন! যতোই মুখ লুকাক কিন্তু লোকটাকে দেখে চিনতে একটুও অসুবিধা হয়নি আমার, সে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি রাগ দেখিয়ে চলে যেতে যাচ্ছি পাশ কাটিয়ে, উনি আমার হাতটা ধরলেন! আমি রেগে হাত ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে বললাম

“একটা কথা বলবেন না আমার সাথে আপনি! আপনি ভীষন খারাপ একটা লোক, আমি কতক্ষন এখানে একা একা ছিলাম ধারণা আছে আপনার! আমাকে আসতে বলেছেন কখন? আর এখন এসেছেন? জানেন আমি এই জায়গায় একা কতটা ভয় পাচ্ছিলাম?”

উনি আবার আমার হাত ধরলেন, উনি এখনো মুখের সামনে বুকে ধরে মুখ লুকিয়ে রেখেছেন! কিন্তু তাতে কি? আমি আজ বড্ড অভিমানী হয়ে গেছি যে, এতো আবেগী কখনো ছিলাম না, আজ কেনো যেনো অদ্ভুত আচরণ করছি! অনেক রাগ দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে ওনার ওপর!

“ছাড়ুন এবার, যেতে হবে আমাকে”

আমাকে অবাক করে দিয়ে বাম হাতে ধরে উনি আমাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলেন, চমকে উঠলাম! এর জন্যে তো মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি! উনি আলতো করে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন

“সরি আসতে দেরি হয়ে গেলো, বেশি ভয় পেয়েছো?”

চুপ রইলাম আমি, উনি কি বলেছেন সেটা আমার কানেই যায়নি! আমি তো এখনও এক ঘোরের মাঝে আছি! উনি আমাকে নিজেই এতোটা কাছে টেনে আনলেন আজ? ওনার বুকের ঢিপঢিপ শব্দটা যখন আমার কানে বারি খাচ্ছে, আমার হার্ট বিট টাও যেনো বেড়ে যাচ্ছে! আমি সঙ্গে সঙ্গে মাথা তুলে ফেললাম ওনার বুক থেকে, কিছুটা সরে এসে ছোটো একটা ঢোক গিলে বললাম

“এ..এটা কি করছেন আপনি! একে তো দেরি করেছেন আর এখন এ..এগুলো করার মানে কি!”

উনি কোনো উত্তর দিলেন না,এখনও ওইভাবেই দাড়িয়ে আছে মুখটা লুকিয়ে..আমি এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম

“মুখের সামনে এইটা ধরে রেখে কি নাটক করছেন, চিনে গেছি তো আপনাকে, সরান এটা!

বুকেট টা সরিয়ে ওনার মুখটা দেখেই বুক ধক করে উঠলো আমার, সাদা ব্যান্ডেজ ওনার মাথায়! আঘাত পেয়েছেন উনি

“একি! এটা কি হয়েছে আপনার কপালে?”

আমি চিন্তিত হয়ে ওনার কপালটা ছুঁয়ে দেখতে শুরু করলাম, আঙ্গুল দিয়ে বামদিকের জায়গায় প্রেস করতেই উনি ব্যাথা পেলেন, বুঝলাম ওখানেই আসলে চোট পেয়েছেন!

“এতটা লাগলো কিভাবে আপনার! মনে হচ্ছে যেনো কারো সাথে মারামারি করে এসেছেন!”

উনি সঙ্গে সঙ্গে ওনার কপাল থেকে আমার হাতটা সরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন

“এটা কি বললে রুহি! আমাকে রাস্তায় মারপিট করার ছেলে বলে মনে হয়? এই চিনলে এতদিনে আমাকে?

” তাহলে লাগলো কিভাবে?”

“একচুয়ালী আমি যখনই বেশি এক্সাইটটেড থাকি তখনই কিছু না কিছু হয়..এবারও তাই হয়েছে”

আমি বুঝলাম না ওনার কথার মানে, উনিও জানেন আমি বুঝিনি, তাইতো বাঁকা হাসলেন! ওনার এই অবস্থা তার ওপর মুখের হাসিটা দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে, এই লোকের সবকিছুতেই হাসতে হয় নাকি? উনি আমার দিকে ঝুঁকে বলে উঠলেন

“তোমার আমার জন্যে মনে হচ্ছে খুব চিন্তা হচ্ছে? মুখটা এতটুকু হয়ে গেলো যে আর এতটা কেয়ার! কষ্ট হচ্ছে আমার জন্যে?”

আমি আমতা আমতা করে বললাম

“কষ্ট হবার কি আছে! আ..আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও এইভাবেই জিজ্ঞাসা করতাম!

উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলে উঠলেন

“ওহ, তারমানে আমি তোমার কাছে সবার মতোই? নরমাল একটা ছেলে? আর কিছুই না?

“উফফ! আপনিও না! হেয়ালি না করে এটা বলুন এরকম হলো কিভাবে আপনার?সেদিন তো আমাকে খুব লেকচার দিচ্ছিলেন তাহলে আজ আপনার কি হলো? লাগলো কিভাবে!”

“ইট ওয়াজ জাস্ট এ লিটল অ্যাকসিডেন্ট! একটা বাচ্চা দৌড়ে রোড ক্রস করছিলো, জোরে ব্রেক দিতে গিয়ে গাড়ির স্টেয়ারিং এ মাথাটা একটু লেগে গেছে..তবে বাচ্চাটা ঠিক আছে”

“হায় আল্লাহ, আজকাল এই বাচ্চাদের মায়েরা এতো উদাসীন কেনো কে জানে! বাচ্চাকে এমনি ছেড়ে দেয়”

আমার কনসার্ন দেখে খুশিতে যেনো গদগদ হয়ে উঠলেন উনি, কিন্তু আমি ওনাকে দেখে ভালোভাবেই বুঝতে পারছি উনি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন

“আরমান স্যার! আপনাকে দেখে অনেক দুর্বল মনে হচ্ছে, বাড়ি যাওয়া উচিত ছিলো আপনার..এখানে কেনো এলেন? রেস্ট নেওয়া উচিত ছিলো আপনার”

“তুমিও তো এখানে আছো এখনও, তুমি এখানে আমার অপেক্ষায় আছো জানার পরও আমি বাড়ি গিয়ে রেস্ট করবো কিভাবে?”

“পরে আমাকে একটা ফোন করে দিলেই হয়ে যেতো, আমিও তো বাড়িতেই যাচ্ছিলাম, আপনার কষ্ট করে এখানে আসার দরকার ছিলো না”

“এসেই তো গেছি এখন আর এই নিয়ে কথা বলে লাভ নেই, আর হ্যা আমি একদম ঠিক আছি, ডোন্ট ওয়ারি”

আমি মুখ ভার করে ওনাকে দেখছি, বারবার নজর যাচ্ছে ওনার কপালে লাগানো ব্যান্ডেজের দিকে, যতবারই ওটা দেখছি কষ্ট হচ্ছে আমার..কেনো ব্যথা পেলেন উনি, কেনো ব্যান্ডেজ পড়বে ওনার কপালে? মনে মনে নিজেই নিজের সাথে বাচ্চাদের মতো এসব ভেবে যাচ্ছিলাম

“তোমার আবার কি হলো?”

“কিছুনা, আপনি ঠিক আছেন তো? খারাপ লাগছে না তো আপনার?”

“নাহ! ঠিক আছি”

” আচ্ছা! চলুন এখন যাওয়া যাক! রাত হয়ে গেছে, যা বলার না হয় কাল বলবেন”

“নাহ! আজকে যখন বলবো বলে ঠিক করেছি আজই বলবো..আমি কোনো কাজ পরের জন্যে ফেলে রাখা পছন্দ করি না”

আমি আবার কিছুটা কৌতূহলী হয়ে উঠলাম, উনি আমার দিকে হোয়াইট রোজের বুকেট দিয়ে বললেন

“দিজ ইজ ফর ইউ”

“ওয়াও! আমার জন্যে এগুলো?”

আমি খুশি হয়ে বুকেট হাতে নিলাম, নাকের কাছে এনে ফুলের গন্ধ শুঁকলাম! সাদা গোলাপ আমার সবথেকে পছন্দের ফুল, এক গোছা সাদা গলা মন খারাপের সময় আমার মন ভালো হবার টনিক হিসেবে কাজ করে..উনি আমাকে বললেন

“চলো একটু হাটি? তারপর বাড়ি যাওয়া যাবে”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম, মন ভালো হয়ে গেছে আমার, ওনার ওপর জমে থাকা রাগটা ও প্রায় উবে গেছে, হাটতে থাকলাম দুজনে, গোলাপগুলো তে হাত বুলাতে বুলাতে হেসে তাকালাম ওনার দিকে

“জানেন এটা আমার ফেভারিট ফুল!”

“আই নো”

“কিভাবে জানলেন?”

“স্পেশাল মানুষের সকল পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে জানা একটা ইম্পর্ট্যান্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তো আমিও সেটাই করেছি! নিজের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আমি মোটেই উদাসীন নই!”

চলবে….

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here