#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,পর্ব-০৮,০৯
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-০৮:
||
সকালে-
সিগারেটে কয়েকটা টান মেরে হেলেদুলে রাস্তায় হাঁটছিলো স্পর্শ। হঠাৎ দেখলো পিয়াসা ব্যাগ নিয়ে কোথাও যাচ্ছে। গাড়ির জন্য এদিক সেদিক তাকাতেই থমকে গেলো পিয়াসা।
পিয়াসা: স্পর্শ?
খুশিতে চোখটা ঝলমল করে উঠলো পিয়াসার। কিন্তু স্পর্শের চোখের রুক্ষতা পিয়াসাকে বাঁধা দিলো কাছে যেতে।
মনের মধ্যে অদ্ভুত সব চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বাসে উঠে কিছুক্ষণ আগে দেখা স্পর্শকে ভাবনায় আনছে পিয়াসা।
পিয়াসা ভাবছে,
পিয়াসা: স্পর্শ চৌধুরী ছিলো না ছেলেটি? না, না, হয়তো আমার কোথাও ভুল হচ্ছে। কিন্তু…. আমার তো মনে হচ্ছে এটিই সেই স্পর্শ যে আমাকে গোলাপের চারাটি দিয়েছিলো, আমার জন্য বারান্দায় অপেক্ষা করতো, আর আমার মনে যার জায়গা হয়ে গেছে। আমি অনেক অপেক্ষা করেছি স্পর্শের! কিন্তু সে আমায় দেখেও দেখলো না? আমাকে কি চিনতে পারে নি? হয়তো আমার কথা মনে করার চেষ্টা করছিলো! আমার কি উচিত ছিলো তার পরিচয় জানার?
দুপুরে কলেজ শেষ করে টিউশন করিয়ে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। লোকাল বাসে উঠে পড়লো পিয়াসা। সাথে সাথেই আরেকটা ছেলে তার পিছু পিছু বাসে উঠে পড়ে৷ পিয়াসা পেছনের আগের সিটে বসলো।
ছেলেটি পিয়াসার দিকে ঝুঁকে বললো,
জানালার পাশে বসবেন? নাকি আমাকে ঢুকতে দেবেন?
পিয়াসা ছেলেটির দিকে না তাকিয়ে ভেতরে ঢুকে সিটটা ছেড়ে দিলো। স্পর্শ ধপ করে পিয়াসার গা ঘেঁষে বসে পড়লো। আর অনেকক্ষণ ধরে পিয়াসাকে ফলোও করছিলো সে। পিয়াসা ছেলেটিকে কাছে বসতে দেখে কিছুটা সরে বসলো।
বাস চলছে নিজ গতিতে। আর স্পর্শের দৃষ্টি পিয়াসাতে নিবদ্ধ। আজ প্রথম এই মেয়েটির এতো কাছাকাছি এসেছে সে। কিন্তু এই কাছে আসাতে কোনো স্বস্তি নেই। কোনো মোহ নেই। আছে শুধু ক্ষোভ আর সেই অপ্রিয় স্মৃতির আনাগোনায় সৃষ্টি হওয়া অভিমান ও ঘৃণা।
সন্ধ্যায় শহরের রূপ ব্যস্ত প্রকৃতির। এই ব্যস্ত শহরটির দিকে তাকিয়ে আছে পিয়াসা। ব্যস্ত মানুষ ও তাদের তৈরী ব্যস্ত যানগুলো দেখতে তার ভালোই লাগছে।
স্পর্শ হঠাৎ গলা খাঁকারি দিলো। তারপর পিয়াসার কানের কাছে এসে বললো,
স্পর্শ: আমার নাম স্পর্শ চৌধুরী।
পিয়াসা নামটি শুনে স্থির হয়ে গেলো। চোখ দুটি জানালার ফাঁক থেকে সরিয়ে স্পর্শের মুখের দিকে স্থির করলো। তাদের চোখদুটি একে অপরের কাছে হেরে যাচ্ছে।
হর্ণের শব্দে ঘোর ভাঙলো পিয়াসার। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো বাস তার গন্তব্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। তাই তড়িঘড়ি করে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললো,
পিয়াসা: আমি প………
স্পর্শ পিয়াসার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বললো,
স্পর্শ: সুচিস্মিতা। আমার জন্য তুমি এই নামেই পরিচিত। আমি তোমাকে সুচিস্মিতা নামে ডাকবো।
পিয়াসা হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। স্পর্শ একটা কলম বের করে পিয়াসার হাতে একটা নম্বর লিখে দিয়ে বললো,
স্পর্শ: তোমার ফোনের অপেক্ষায় থাকবো।
পিয়াসা তো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। বাস থেকে নেমে সে বাসটির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না যার জন্য এতোদিন অপেক্ষায় ছিলো, তার সাথে হঠাৎ এভাবেই দেখা হয়ে যাবে। দেখা হলেও হুট করে এতো সহজে স্পর্শের সাথে যোগাযোগ রাখার সুযোগ পেয়ে যাবে তা বুঝে উঠতে পারে নি পিয়াসা।
বাসায় এসে হাতে লেখা নম্বরটি তাড়াতাড়ি মুখস্থ করে ফেললো। কিন্তু কল দেওয়ার সাহস হচ্ছে না তার।
এদিকে স্পর্শ বারান্দায় বসে আছে সিগারেট হাতে নিয়ে। কিছুক্ষণ পর পর একটা টান দিচ্ছে। তার বন্ধু সিয়াম কাঁধে হাত রেখে বললো,
সিয়াম: নামটা জেনে নিলে ভালো হতো না?
স্পর্শ: না, ও আমার জীবনে একজন অপরিচিত মানুষ হয়ে থাকুক। আমি তাকে এই মনে আর কোথাও স্থান দিতে চাই না। তার সেই হাসি আর চোখের গভীরতায় ডুবেই ছিলাম এতোটা বছর। নাম জেনে, তার পরিচয় জেনে, তাকে পুরোপুরি সত্য করতে চাই না আমার জীবনে। একটাবার আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হোক, সেই মিথ্যে মোহ ছেড়ে আমি অনেক দূরে চলে যাবো। নাম জেনে গেলে হয়তো সেই নামটি অন্য কোথাও শুনলে তার স্মৃতি ভেসে উঠবে। আমি সেই স্মৃতিও রাখতে চাই না।
সিয়াম: এখন কি করবি? এভাবে কাছাকাছি আসা যায়? অবশ্যই সম্পর্কে গেলে মানুষ একে অপরকে জানতে চাইবে।
স্পর্শ: সে আমাকে ভালো করেই চেনে। আর আমার মনে হয় না তার কাছে আমার পরিচয় জানা বা তার পরিচয় বলা টাকার চেয়ে বেশি মূল্যবান। যেই অর্থের লোভে সে আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই অর্থ দিয়ে তাকে আমি এতোটা মুড়িয়ে রাখবো যে সে কখন আমার খাঁচায় পা দেবে সে নিজেও জানবে না।
||
স্পর্শের প্রতিশোধ আর পিয়াসার অনুভূতি দুটি একত্রে একটি ভিন্ন সম্পর্কের সৃষ্টি করছে৷ একটি ভাঙা সেতুকে জোর পূর্বক জোড়া লাগানোর চেষ্টায় আছে প্রকৃতি। যেখানে নেই কোনো বিশ্বাস, যা সম্পর্ককে মজবুত করবে। যা আছে তা শুধুই কুয়াশা। আবছা যা বোঝা যায় তাই ধরে এগিয়ে চলা। পিয়াসা স্পর্শের ভালোবাসাটা দেখেছে, কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ঘৃণাটা বুঝে নি। স্পর্শও হয়তো পিয়াসাকে লোভী ও প্রতারক হিসেবে দেখেছে, কিন্তু আবছা আলোয় তার মনের এক কোণ থেকে জন্ম নেওয়া স্পর্শের প্রতি গভীর অনুভূতি আর অপেক্ষাটা দেখে নি।
||
ফোন হাতে নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করার পর স্পর্শের নম্বরে কল করলো পিয়াসা। রাত সাড়ে এগারোটার এদিক ওদিক হবে সময়টা। স্পর্শ সবে মাত্র ডায়নিং ছেড়ে উঠেছে রাতের খাবার শেষে। এঁটো হাতে ফোনের দিকে তাকিয়ে অপরিচিত নম্বর দেখে বাঁকা হাসলো স্পর্শ।
মনে মনে বললো,
স্পর্শ: পাখি তবে খাঁচায় ঢুকে পড়েছে। এবার খাঁচা বন্ধ করার দায়িত্ব শিকারীর।
দেরী না করে ফোনটা রিসিভ করলো স্পর্শ।
কারণ মেয়েদের একটা স্বভাব আছে, প্রথমবার ফোন দেওয়ার পর রিসিভ না করলে দ্বিতীয়বার কখনো চেষ্টা করে না। তবে এটা শুধুই সম্পর্কের শুরুর দিকে। সম্পর্কের একদম মাঝামাঝিতে এসে মেয়েরা হয়ে পড়ে বেহায়া। কল না ধরলেও পানি চক্রের মতো কল দিতেই থাকবে। কখনো টানা, কখনো বা থেমে থেমে। পাশাপাশি থাকে বৃষ্টির সাথে স্নিগ্ধ হাওয়ার মতো আবেগী বা উৎকণ্ঠা জনিত মেসেজ, কখনো বা বজ্রপাতের মতো আঘাত হানে কড়াকড়ি ভাষায় লেখা কিছু হুমকি-ধমকি।
তবে সম্পর্কের শেষের দিকে মেয়েরা হয়ে পড়ে পাথরের ন্যায় শক্ত। ফোন কলের ধারা বজায় রাখাতে নেমে আসে বিশৃঙ্খলা। কল দেওয়া তো বহুদূর, কল ধরতেও যেন তাদের এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
পিয়াসা যখন দেখলো অপর পাশ থেকে ফোনটা রিসিভ করা হয়েছে, তখনই তার বুকটা ঢিপঢিপ করতে লাগলো। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারছে না। কথাগুলো ধলা পাঁকিয়ে গলার সাথে আটকে আছে।
স্পর্শ কাঁধ দিয়ে ফোনটা কানের কাছে ধরে তার এঁটো থালাবাটি ধোয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
পিয়াসা চুপ করে আছে দেখে স্পর্শ মায়া জড়ানো কন্ঠে পিয়াসাকে ডাকলো।
স্পর্শ: সুচিস্মিতা!
পিয়াসা: সরি, আমি আসলে সুচিস্মিতা না। আমার নাম……
স্পর্শ: হুশশ!! তুমি আমার সুচিস্মিতা। বাকীদের কাছে তুমি অন্যকিছু। কিন্তু আমার কাছে তুমি শুধুই সুচিস্মিতা।
পিয়াসা: আপনি কি আমায় চিনতে পেরেছেন?
স্পর্শ হালকা হাসলো। পিয়াসা স্পর্শের হাসির কারণটা বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো।
পিয়াসা: আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?
স্পর্শ গলার স্বর নামিয়ে নরম কন্ঠে বললো,
স্পর্শ: তুমি তো দেখি খুব সুন্দর করে প্রশ্ন করো! বড় হয়ে কি হবে? পুলিশ অফিসার নাকি উকিল?
পিয়াসা: ইচ্ছা আছে আর্মিতে জয়েন করার।
স্পর্শ: বাহ! বেশ বড়সড় স্বপ্ন তোমার!
পিয়াসা: আচ্ছা, আমার প্রশ্নের উত্তরটা কি দেওয়া যাবে?
স্পর্শ: প্রথম প্রশ্ন তোমায় চিনতে পেরেছি কিনা! তোমাকে তো সেদিনই চিনে ফেলেছি যেদিন তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন মজা করছি কিনা! তবে বিনোদন ছাড়া জীবনের কোনো মূল্য নেই।
পিয়াসা: আমি ঠিক বুঝলাম না আপনি কি বলতে চাইছেন!
স্পর্শ: আমি বলতে চাইছি তুমি আমার কাছে সুচিস্মিতা, আর তুমি আমার জীবনের বিনোদন। তুমি ছাড়া আমার জীবনে কোনো আনন্দ ছিলো না। আর তুমিই এখন আমার জীবনে আনন্দ হয়ে এসেছো।
স্পর্শের এক বন্ধু পেছন থেকে তার কথা শুনে স্পর্শের কান থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে ফেললো।
স্পর্শ: ফোনটা দে পিয়াল।
পিয়াল: কে এই সুচিস্মিতা!
পিয়াল ফোন কানে নিয়ে বললো,
পিয়াল: হ্যালো সুচিস্মিতা ভাবী, কেমন আছেন? আমার বন্ধু এখন রান্নাঘরে কাজ করছে। পরে ফোন দিয়েন। নয়তো কাজগুলো সব আমাকে দিয়েই করাবে।
পিয়াসা লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দিলো।
স্পর্শ: এইটা কেমন ফাইজলামি!
পিয়াল: বন্ধু প্রেমটা কবে থেকে শুরু করলি বল। সিয়ামকে বলিস নি? নাকি শুধু আমরাই জানি না।
স্পর্শ: আরে মাত্র শুরু।
পিয়াল: ভাবী রান্না-বান্না পারে?
স্পর্শ: কেন?
পিয়াল: প্রতিদিন বুয়ার হাতের রান্না আর ভালো লাগে না। ভাবীকে আমাদের জন্য কিছু বানিয়ে নিয়ে আসতে বল।
স্পর্শ: যাবি এখন?
পিয়াল দীর্ঘশ্বাস ফেলে যেতে যেতে বললো,
পিয়াল: আজ একটা প্রেমিকা থাকলে কতো মজার মজার খাবার কপালে জুটতো!
রাত সাড়ে বারোটার দিকে স্পর্শ ছাদে উঠে পিয়াসার নম্বরে একটা ফোন দিলো।
পিয়াসা সাথে সাথেই কল রিসিভ করলো। এতোক্ষণ সে ফোনের কাছেই বসে ছিলো।
পিয়াসা: হ্যালো।
স্পর্শ: কি করছো সুচিস্মিতা?
পিয়াসা: কিছু না। বসে ছিলাম।
স্পর্শ: কার অপেক্ষায়? আমার ফোনের?
পিয়াসা একটু লজ্জা পেয়ে বললো,
পিয়াসা: আসলে, আমি একটু দেরীতে ঘুমাই।
স্পর্শ মিনমিন করে বললো,
স্পর্শ: পিশাচী।
পিয়াসা: হুম? বুঝি নি।
স্পর্শ: বললাম, নিশাচরী।
পিয়াসা মুচকি হেসে বললো,
পিয়াসা: আসলে অভ্যাসটা হয়ে গেছে। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি আপনাকে?
স্পর্শ: না।
পিয়াসা দমে গেলো।
স্পর্শ: আপনাকে শব্দটা কেমন যেন শুনাচ্ছে! সুচিস্মিতা কি শব্দটার রূপান্তর ঘটাতে পারবে?
পিয়াসা: কিভাবে?
স্পর্শ মনে মনে বললো,
স্পর্শ: যেমন ভাব করছে যেন কিছুই বুঝতে পারছে না।
গলা ঝেড়ে বললো,
স্পর্শ: আপনি বলবে আমায়? এতো দূরে ঠেলে দিচ্ছো? তুমি শব্দটা অনেক কাছের মানুষদের সম্বোধন করে বলে। বুঝেছো?
পিয়াসা লজ্জায় কথাও বলতে পারছে না। প্রথম কোনো ছেলের সাথে সে কথা বলছে। আর প্রথম দিনেই আপনি থেকে তুমিতে নামা কি সম্ভব?
পিয়াসার চুপচাপ ভাবটা দেখে স্পর্শ বললো,
স্পর্শ: রাত জাগার অভ্যাসটা যেভাবে করেছো আমাকেও সেভাবে আপনি থেকে তুমি করে নেওয়ার অভ্যাসটা আয়ত্ত করে ফেলো।
পিয়াসা: হুম।
স্পর্শ: তো প্রশ্নটা কি ছিলো?
পিয়াসা: আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন? আ…স…লে আমি আপনাকে আর দেখি নি বাসায় আসার পর।
স্পর্শ: আমি তো এক মাস তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। তুমি তো আসলে না। তবে এসব অতীতের কথা ছাড়ো। এখন আমি আছি, যতোদিন সুচিস্মিতা আছে ততোদিন।
পিয়াসা স্পর্শের কথায় মুগ্ধ হচ্ছে। কথার ফাঁকে পিয়াসার স্কুল-কলেজ, তার বাবা-মা কি করে, গ্রামের বাড়ি কোথায় সব জেনে নেয়। শুধু পিয়াসার নামটা ছাড়া। বিষয়টা পিয়াসাকে ভাবাচ্ছে। কেন স্পর্শ পিয়াসাকে তার নাম জানাতে নিষেধ করেছে?
স্পর্শ উত্তরে বলেছিলো।
যেদিন সুচিস্মিতা তার একার হবে, সেদিনই নামটা জেনে নেবে। আর বেশি পরিচয় জেনে গেলে নাকি আগ্রহ কমে যায়। তাই কিছু না কিছু অজানা থাকা ভালো। তখন সেই জানার আকাঙ্খা থেকে সম্পর্কের সুতোটা আরো গাঢ় হবে।
এখন স্পর্শের কাছ থেকে পিয়াসা নতুন নাম পেলো,
সুচিস্মিতা। এখন তার দুইটা পরিচয়। বাস্তব জীবনে সে পিয়াসা, কিন্তু মিথ্যে কল্পনার জগতে সে সুচিস্মিতা।
স্পর্শের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোই এই মিথ্যে জগতের সৃষ্টি করেছে। কারণ স্পর্শের কাছে এই মুহূর্ত প্রতিশোধস্পৃহা। আর পিয়াসার কাছে ভালোবাসা।
এই মুহূর্ত কারো কাছে প্রিয়, কারো কাছে অপ্রিয়। তবে এর সাক্ষী থাকে একটি শুকনো গোলাপ, যেটি এখনো স্পর্শ ডায়েরীর ভাঁজে লুকিয়ে রেখেছে, যেই ডায়েরীর পাতায় লেখা হয়ে গেছে স্পর্শের অপ্রিয় মুহূর্তের স্মৃতিকথা।
||
চলবে–
#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-০৯:
||
পিয়াসা এখন অনেক খুশি। কারণ সে তার প্রিয় মানুষটিকে খুঁজে পেয়েছে দুই বছর পর। স্পর্শ নামটাতেই সে একেবারে ডুবে গেছে। স্পর্শকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে পিয়াসা। সে যা বলবে তাই সঠিক মনে হয় পিয়াসার।
স্পর্শ আজ সকালেই পিয়াসাকে ফোন দেয়। কয়েক বার রিং হওয়ার পরও পিয়াসা ফোন রিসিভ করছিলো না। তাই ফোন দিতে দিতেই বারান্দায় এসে দাঁড়ালো স্পর্শ।
হঠাৎ তার চোখ গেলো পিয়াসার বারান্দার দিকে। আর যা দেখলো তাতে স্পর্শের রাগ মাথায় চড়ে বসলো। সে হাতের মুঠো শক্ত করে গ্রিলটা কিছুক্ষণ আঁকড়ে ধরলো। তারপর রুমে এসে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো।
স্পর্শের বন্ধু সিয়াম, পিয়াল আর তকির সেইসময় রুমেই বসে ছিলো। স্পর্শের রাগান্বিত চেহারা দেখে তারা ভীষণ অবাক হলো।
সিয়াম স্পর্শের কাছে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বললো,
সিয়াম: কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?
স্পর্শ: সি ইজ এ বিগ লায়ার। ও আমার সাথে আবার ছলনা করছে।
পিয়াল: কে? কার কথা বলছিস?
সিয়াম পিয়ালের দিকে তাকিয়ে ইশারায় চুপ থাকতে বললো।
তারপর স্পর্শকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো,
সিয়াম: দোস্ত, কি হয়েছে বল!
স্পর্শ: বারান্দায় গিয়ে দেখে আয়।
সিয়াম স্পর্শের কথা মতো বারান্দায় গিয়ে পিয়াসাকে দেখতে পেলো। পিয়াসা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, আর রাস্তায় একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
তারা উভয়ে ইশারায় কিছু একটা বলছে, আবার মাঝে মাঝে ফোনেও কথা বলছে। পিয়াসার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে ভীত। ছেলেটি হয়তো তাকে কোনো একটি বিষয়ে ধমকাচ্ছে।
সিয়ামের পেছন পেছন পিয়াল আর তকির এসে দাঁড়ালো।
পিয়াল: এটাই কি আমাদের সুচিস্মিতা ভাবী?
সিয়াম: হুম।
তকির: স্পর্শের গার্লফ্রেন্ড আছে?
পিয়াল: হ্যাঁ। কিছুদিন আগেই প্রেম শুরু হয়েছে হয়তো।
তকির: আরেহ, মেয়েটা তো আস্ত একটা ছ্যাঁচড়ি। দেখ, কীভাবে আরেকটা ছেলের সাথে ইশারায় কথা বলছে!
সিয়াম: চুপ। এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলবি না।
স্পর্শ মাথায় হাত রেখে বসে আছে। সিয়াম স্পর্শকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
তারা মোট আটজন বন্ধু এই বাসায় থাকে। সবাই সেই মুহূর্তে বাসায় উপস্থিত ছিলো, আর স্পর্শের জীবনের গল্পটাও বিদ্যুৎ গতিতে সবার কাছে পৌঁছে গেলো।
ডাইনিংয়ে বসে স্পর্শের সব বন্ধুরা মিলে এই ব্যাপারেই আলোচনা করছিলো। সবকিছু শোনার পর তাদের মধ্যে একজন বললো,
নিশান: এই মেয়েটাকে একদম ছেড়ে দেওয়া উচিত হচ্ছে না। এক দিনও কেন সে শান্তিতে থাকবে?
তকির: বন্ধু, আমার মনে হচ্ছে মেয়েটার আরো কয়েকটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে! এই সব মেয়েদের সাথে শুধু মিথ্যে প্রেম করে লাভ নেই, কারণ এসব তারা গায়ে মাখবে না। অন্যকিছু ভাবতে হবে।
শাকিল: খবরদার, বাজে বুদ্ধি দিবি না কেউ স্পর্শকে। বন্ধু তুই এমন কিছু করিস না যেখানে তোর ক্ষতি হয়। আমরা সবাই ফেঁসে যাবো তখন। আমাদের সবার ভবিষ্যতের কথা ভেবে দেখিস। আর তোর দুইটা বোনও আছে।
নিশান: তাই বলে মেয়েটাকে ছেড়ে দেবে?
শাকিল: না, ছাড়বি না। কিন্তু এমনভাবে সব কিছু হ্যান্ডেল করতে হবে, যাতে আমাদের কোনো তথ্য মেয়েটার হাতে না যায়।
পিয়াল: আচ্ছা, তুই এই বাসায় থাকিস, সেটা কি জানে?
স্পর্শ: না।
পিয়াল: গ্রেট। ভালো ভাবেই ফলো করতে পারবি ওকে।
স্পর্শের বন্ধুদের মধ্যে আরো দুইজন ছিলো, আকাশ ও হাবীব। তারা খুবই শান্ত। তারা এই বিষয়ে কোনো মত না দিয়েই উঠে পড়ে।
তাদের একটাই উত্তর ছিলো, মেয়েটা খারাপ হলে, সে শাস্তি কোনো এক দিন পাবে। নিজের হাতে শাস্তি দিয়ে নিজেকে কলুষিত করার কোনো দরকার নেই।
আর স্পর্শকে তারা আরো বললো,
তুই মেয়েটাকে এতোটাই ভালোবাসলে ক্ষমা করে দে। আর শাস্তি দিতে মন চাইলে ওর বিরুদ্ধে মামলা করে দে। খুনের সাথে তার কোনো সম্পর্ক থাকলে পুলিশ তদন্ত করে বের করবে। শুধু শুধু নিজেকে ঝামেলায় জড়িয়ে ফেলিস না।
সিয়াম আর শাকিল যদিও স্পর্শকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছিলো। কিন্তু বাকীরা তাকে আরো উসকে দিচ্ছে।
এদিকে-
পিয়াসা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো স্পর্শের অনেকগুলো কল এসেছে। সে তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করলো।
স্পর্শের ফোনটা বিছানায় পড়ে ছিলো। সিয়াম সেটি হাতে নিয়ে দেখলো সুচিস্মিতার কল। তারপর ফোনটা স্পর্শকে দিয়ে বললো,
সিয়াম: আগে বিষয়টা জিজ্ঞেস করে দেখ। হয়তো এটা শুধুই তোর সন্দেহ!
স্পর্শ কল রিসিভ করে চুপ করে রইলো। পিয়াসা শান্ত কন্ঠে বললো,
পিয়াসা: সরি। আমি আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম।
স্পর্শ: কি করছিলে?
পিয়াসা আমতা-আমতা করে বললো,
পিয়াসা: আ…স…লে…. আমি….. বাসার কাজ করছিলাম। মা-বাবা অফিসে চলে গেছে তো! সব আমাকে গুছিয়ে রাখতে হচ্ছে।
স্পর্শ হাত মুঠো করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
স্পর্শ: আচ্ছা, আমি রাখছি। আমি এখন ব্যস্ত আছি।
পিয়াসাকে কিছু বলতে না দিয়ে স্পর্শ কল কেটে দিলো। তারপর হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
পিয়াসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুবাকে ফোন দিলো। তুবা কল ধরার পর চেঁচিয়ে উঠলো পিয়াসা।
পিয়াসা: তুবা, তোর জন্য আমি বিপদে পড়েছি। তুই কি করলি এইটা?
তুবা: আমি আবার কি করলাম?
পিয়াসা: তোর সেই বাবু সোনা আমাকে কেন ফোন দিচ্ছে? আর সে তো আজ আমার বাসার সামনে চলে এসেছে। আমায় কি বলেছে জানিস?
তুবা: কি বলেছে?
পিয়াসা: বলেছে। তোকে বোঝাতে যে তুই কি হারাচ্ছিস। আরো কি বলে জানিস? আমি যদি তোদের মিল করিয়ে না দেই, আমার নামে মামলা করবে।
তুবা: কি মামলা করবে? প্রেমের মিল না করিয়ে দেওয়ায় পিয়াসা আজিজের নামে মামলা করেছেন তুবার বাবু সোনা। আর সেই শাস্তি স্বরূপ পিয়াসা কখনোই বিয়ে করতে পারবে না।
পিয়াসা: হুহ, আমি তোর আগেই বিয়ে করবো। আর তুই যে ছেলেটাকে এভাবে ঝুলিয়ে রেখেছিস তা কি ঠিক হচ্ছে?
তুবা: আমার দোষ কোথায়? ও আমায় শান্তিতে পড়াশুনা করতে দেয় না। সারাদিন ফোন দেয়। তাই কয়েকমাসের জন্য ব্রেক চাইলাম। জাস্ট পরীক্ষাটা শেষ হোক আগে। কিন্তু না, সে ভাবছে আমি অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে চলে গিয়েছি। আচ্ছা, তুই বল, এসব আট দশটা ছেলের সাথে প্রেম করার মতো সময় আছে আমার? মেডিকেলের প্রিপারেশন নেবো নাকি প্রেম করবো? এতো পজেজিভ কেন হয় মানুষ!
পিয়াসা: এক দিকে আমার স্পর্শ অনেক ভালোই। ও কিন্তু আমাকে অনেক বুঝে।
তুবা: জি না, নতুন নতুন শুরু হয়েছে, তাই খুব ভালো লাগছে। একটু বাসি হোক, তারপর বুঝবি এসব যে কতো প্যারাময়! তার চেয়ে প্রেম না করাই ভালো।
পিয়াসা: না, আমার স্পর্শ অনেক ভালো। সবার চেয়ে আলাদা।
তুবা: আচ্ছা বাবা, ভালো। এখন আমি পড়বো। ফোন রাখ। আর ওই গবলেট আরেকবার ফোন দিলে বলিস, যদি তুবাকে চাও, তবে নামাজ পড়ে ওর পরীক্ষা ভালো হওয়ার জন্য দোয়া করো। পরীক্ষায় যদি আমি কম নম্বর পাই, তবে সত্যি সত্যিই ব্রেকাপ।
পিয়াসা: আচ্ছা।
||
ভালোবাসায় আজকাল কোনো শ্রদ্ধা বা বিশ্বাস নেই। যা আছে তা শুধুই একটি খালি কলসের মতো। যা মিথ্যে বা ভুল ভ্রান্তিতেই ভরে আছে। যার ফলে ঝগড়া, হিংসা-বিদ্বেষে সম্পর্কে অহেতুক গুঞ্জন শুরু হয়। যদি শুধুই ভালোবাসা আর বিশ্বাসে পূর্ণ থাকতো তবে হয়তো এতো গর্জন কানে আসতো না।
কানে শোনা কথায় বিশ্বাস না রাখলেও চোখের দেখায় বিশ্বাস রাখতে হয়। তবে আরেকটাবার যদি সেই চোখের দেখাকেও যাচাই করা যায় তবে ক্ষতি তো নেই!
এমনও তো হয়,
চোখের দেখাতেও ভ্রান্তি রয়।
||
আজ স্পর্শের জন্মদিন। পিয়াসা কলেজ থেকে সোজা চলে গেলো একটি গিফটের দোকানে। ছেলেদের জিনিসপত্রের ব্যাপারে খুব একটা ধারণা তার নেই। তবুও পুরো দোকান ঘাটাঘাটি করে একটি ঘড়ি পছন্দ করলো সে। ঘড়িটি গিফট পেপারে মুড়িয়ে বাসায় চলে এলো।
বাসায় এসেই স্পর্শকে ফোন দিচ্ছে, কিন্তু স্পর্শের কোনো খবর নেই। ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা ভেবে স্পর্শের জন্য একটা চিঠি লিখতে বসলো পিয়াসা। চিঠি লেখা শেষে চিঠিটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
মনে মনে বললো,
পিয়াসা: স্পর্শ চৌধুরী, তোমায় আমি সব জানিয়ে দিয়েছি। আমার জীবনের যেই অংশে তুমি ছিলে, আর যেই অংশে তুমি ছিলে না। এখন এই চিঠি পড়ে তুমি আমার অতীত ও বর্তমানের সব প্রিয় ও অপ্রিয় মুহূর্ত জুড়ে থাকবে। খুব ভালোবাসি তোমায়।
স্পর্শ রিম-ঝিমের সাথে দেখা করতে আজ মামার বাসায় গেলো। স্পর্শ বেল দেওয়ার পর প্রিয়াংকা এসে দরজা খুলে দিলো।
স্পর্শকে দেখে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো প্রিয়াংকা।
স্পর্শ প্রিয়াংকার মুখটা দেখে বললো,
স্পর্শ: মুখটা এমন ডিম্বাকৃতির করে ফেলেছিস কেন?
প্রিয়াংকা: তুই কে?
স্পর্শ চোখ ছোট করে বললো,
স্পর্শ: রিম-ঝিমের ভাই।
প্রিয়াংকা: আমি বিশ্বাস করি না। দেখতে মনে হচ্ছে কোনো জেলখানার কয়েদি। দশ বছর পর ছাড়া পেয়ে এসেছে বাড়ি।
স্পর্শ: বাসায় ঢুকতে দিবি না?
মামী পেছন থেকে এসে প্রিয়াংকাকে বললেন,
মামী: কি রে, কে এসেছে?
স্পর্শকে দেখে বললেন,
স্পর্শ: আরেহ ছেলেটা কতোদিন পর এসেছে প্রিয়া! আর তুই ওকে ভেতরে আসতে দিচ্ছিস না?
প্রিয়াংকা দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো। স্পর্শ ভেতরে ঢুকে সোফায় গিয়ে বসলো। রিম-ঝিম ভাইয়ের আওয়াজ পেয়ে দৌঁড়ে এলো।
রিম: ভাইয়া তুমি এসেছো? আমরা কতো মিস করেছি তোমাকে জানো?
স্পর্শ হাঁটু গেড়ে বসলো দুজনের সামনে।
স্পর্শ: কেমন আছিস তোরা?
রিম: অ-নে-ক ভালো। জানো, মামা-মামী আর আপু অনেক ভালো। আমাদের অনেক আদর করে।
কিন্তু ঝিম কোনো উত্তর না দিয়ে ভেতরে চলে গেলো। স্পর্শ ঝিমের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। কয়েক সেকেন্ড পরই আবার লাফিয়ে লাফিয়ে ভাইয়ের কাছে ফিরে এলো ঝিম।
ঝিম: চোখ বন্ধ করো তো!
স্পর্শ মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করলো।
ঝিম একটা ড্রয়িং স্পর্শের মুখের সামনে ধরে চেঁচিয়ে বললো,
ঝিম: হ্যাপি বার্থডে।
রিমও হাততালি দিয়ে বলতে লাগলো, হ্যাপি বার্থডে।
স্পর্শের চোখটা ছলছল করে উঠলো। ড্রয়িংটা হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো।
রিম: আমরা দুজন মিলে এঁকেছি। এইটা তুমি, এই বাবু দুইটা আমরা। এইটা মা, আর এইটা বাবা।
স্পর্শ ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে। ছবিটিতে ঘরের বাইরে বাগানে স্পর্শ রিম-ঝিমের হাত ধরে হাঁটছে। আর বাড়ির ভেতরে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে তাদের মাকে। আর তাদের বাবা আকাশের সাদা মেঘের মধ্যে বসে আছে।
বাচ্চা দুটির চিন্তাশক্তি দেখে অবাক হলো স্পর্শ। চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগেই আটকে দিলো।
প্রিয়াংকা স্পর্শের কাঁধে হাত রেখে বললো,
প্রিয়াংকা: মন খারাপ করিস না, ভাই। তোর এখন নিজেকে শক্ত রাখতে হবে।
স্পর্শ রিম-ঝিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
স্পর্শ: অ-নে-ক সুন্দর হয়েছে। একদম হান্ড্রেডে হান্ড্রেড।
রিম-ঝিম খুশিতে ঘরে ঘরে দৌঁড়াচ্ছে।
মামী স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললো,
মামী: স্পর্শ তুমি আজ মাকে দেখতে যাবে না?
স্পর্শ: একটু পর বের হবো। আজ বাড়িতেই থাকবো হয়তো।
প্রিয়াংকা: ফুপী কি কখনো সুস্থ হবে না? এভাবে ফুপী আর কতোদিন বন্দি থাকবে?
স্পর্শ: যতোদিন আমি বেঁচে আছি। আমি যেদিন আর থাকবো না, মাও হয়তো মুক্ত হয়ে যাবে। হয়তো তাকে কোনো এক রাস্তায়…….
স্পর্শকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
মামী: আমরা আছি স্পর্শ। এমন কথা কখনো বলবে না!
স্পর্শ: মামী, বাস্তবতা অনেক কঠিন, তবে সান্ত্বনা দেওয়া সহজ। অতিথি এক সপ্তাহের নিচে মিষ্টি, এর উপরে ঝাল, এক মাসের বেশি তেঁতো আর সারাজীবনের অতিথি বিষ। যেখানে সুস্থ অতিথিকে এক মাসের বেশি সহ্য করা যায় না, সেখানে মায়ের এই অবস্থায় কেউ মাকে দেখে রাখবে এইটা নিতান্তই পরিহাসের। তবে রিম-ঝিমের জন্য তোমরা যা করছো, তার জন্য আমি সারাজীবন ঋণী থাকবো তোমাদের কাছে।
আজও স্পর্শ এক গ্লাস পানি খেয়েই বের হয়ে গেছে। ছেলেটা প্রতিবারই শুকনো মুখে বিদায় হয়, যা মামীর খারাপ লাগে।
প্রিয়াংকা: স্পর্শ, আর সেই স্পর্শ নেই মা। ও অনেক কঠিন হৃদয়ের মানুষ হয়ে গেছে।
মামী: স্পর্শ কতোটা আঘাত পেয়েছে তা হয়তো আমাদের বোঝার বাইরে। ওর ক্ষতটা অনেক গভীর। এতো সহজে এই ক্ষত শুকিয়ে যাবে না।
||
চলবে—