অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,পর্ব ৩৪

0
1075

#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,পর্ব ৩৪
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ

||

তুবা একাকী বসে কাঁদছে। নিজেকে তার খুব নিঃস্ব মনে হচ্ছে। মন হালকা করার মতো কেউ তার পাশে নেই। পিয়াসা থাকলে হয়তো বলতো,
“কাঁদিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তো আছিই, তাই না?”

যখন তুবার মন দুর্বল হয়ে পড়তো, পিয়াসা এই একটা কথা তাকে অনেকবার বলতো। আর তখন সাথে সাথেই আবার মনোবল ফিরে পেতো সে। কিন্তু আজ এমন সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। বরং সান্ত্বনা দেওয়ার মানুষটিকে সে নিজের স্বার্থের জন্য দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

ক্ষণিকের জন্য পিয়াসার কথা মনে পড়তেই তুবার কষ্ট আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। তবুও নিজেকে শান্ত করে মনে মনে বললো,
“পিয়াসা এখন রিয়াদের সাথে সুখেই আছে। আর স্পর্শের সাথে তার এমনিতেই কোনো ভবিষ্যৎ ছিলো না। হ্যাঁ, আমার জন্যই পিয়াসা অনেক কিছু সহ্য করেছে। কিন্তু পরিশেষে ও তো ভালো আছে। আর আমিও পিয়ালের সাথেই ভালো থাকতে চাই।”

পিয়ালের কথা মনে পড়তেই তুবার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। পিয়ালকে বাবা-মায়ের সম্পর্কের কথা বললে, সে ঠিকই তাকে সাহস দেবে৷ আর তখন তার মনোবল এমনিতেই চলে আসবে। তুবা ফোন হাতে নিয়ে পিয়ালের নম্বরে কল করতেই পিয়াল কল কেটে দিলো। তুবা কিছুটা অবাক হলো। পরক্ষণেই ভাবলো, হয়তো চাপ পড়ে কল কেটে গেছে। দ্বিতীয় বার কল দিতেই পিয়াল আরো কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর কল কেটে দিলো। তুবা এবার চিন্তায় পড়ে গেলো। দুই দিন সে পিয়ালের সাথে কোনো যোগাযোগ করে নি। কারণ বাবা-মার মধ্যে অনেক ঝামেলা চলছিলো। আর এরমধ্যে কোনো পরিবেশই ছিলো না পিয়ালের সাথে কথা বলার৷ তার মনটাও ভীষণ খারাপ ছিলো। কারণ যেই বাবাকে সে অনেক ভালোবাসতো, সেই বাবা-ই তার মাকে ধোঁকা দিয়েছে। এই সত্যটা মানতে পারছিলো না তুবা। তাই পিয়ালের সাথেও কোনো কথা বলে নি। কিন্তু এখন পিয়াল কেন ফোন কেটে দিচ্ছে?

তুবা ভাবলো,
“হয়তো আমি যোগাযোগ করি নি, তাই রাগ করে কল কেটে দিচ্ছে।”

তুবা এবার পিয়ালকে একটা মেসেজ দিলো। অপরপাশে পিয়াল মেসেজটি পড়ে দেখলো। তুবা লিখেছে,
“আমি যোগাযোগ করি নি, তাই কি রাগ করে আছো? সরি। আমার মন ভালো ছিলো না। কাল দেখা করো, সব বলবো তোমাকে।”

পিয়াল এবার তুবাকে ফোন করলো। তুবা সাথে সাথেই কল রিসিভ করলো। সে কিছু বলার আগেই পিয়াল গম্ভীরমুখে বললো,
“তোমার সাথে দেখা করা আমারও খুব প্রয়োজন। কাল সানমারের সামনে থেকো।”

তুবা পিয়ালকে সবসময় নরম সুরেই কথা বলতে দেখেছে। কিন্তু আজ হঠাৎ তার গম্ভীর স্বর তুবার মনে ভীতির সৃষ্টি করছে। সে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই পিয়াল কল কেটে দিলো। তুবা আরো কিছুক্ষণ পর আবার কল করলো পিয়ালকে। কিন্তু এরপর থেকেই নম্বরটি বার বার ব্যস্ত দেখাচ্ছে। তুবা মনে মনে বললো,
“ব্যস্ত কেন দেখাচ্ছে? এতোক্ষণ পিয়াল কার সাথে কথা বলছে? তাহলে কি ও আমার নম্বরটি ব্লক করে দিয়েছে? কিন্তু কেন? পিয়াল এমন রুক্ষভাষায় কথা কেন বললো আমার সাথে? তাহলে কি ও আমার সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছে? না, না, না। পিয়াল আমার সম্পর্কে কিছু জেনে গেলে, আমার কি হবে? আমি পিয়ালকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? ও সব জেনে গেলে তো আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখবে না।”

পরেরদিন সানমারের সামনে এসে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো তুবা। কিন্তু পিয়ালের আসার কোনো চিহ্নও নেই। ফোন হাতে নিয়ে নম্বর ঘুরাতেই দেখলো এখনো ব্যস্ত। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো পিয়াল আসলে খুব রাগ দেখাবে। কিন্তু পিয়াল যখন এলো তখন সে আর কি রাগ দেখাবে, উলটো পিয়ালের রাগী চোখমুখ দেখে সে ভয়ে চুপসে গেলো। পিয়াল তুবাকে এক নজর দেখে তাকে পাশ কাটিয়ে সানমারের ভেতরে ঢুকে পড়লো। তুবা পিয়ালের হাবভাব দেখে ইতস্ততভাবে তার পিছু পিছু গেলো।

পিয়ালের মুখোমুখি বসে আছে তুবা। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে রেখেছে সে। বুকটা ঢিপঢিপ করছে, কারণ এর আগে সে পিয়ালকে এতোটা গম্ভীর কখনোই দেখে নি। কাঁপা কন্ঠে তুবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিয়াল বললো,
“তিয়াশা, তিয়াশা আজীজ।”

তুবা পিয়ালের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হয়েছে তোমার?”

পিয়াল তুবার কন্ঠ শুনেই টেবিলে হাত দিয়ে খুব জোরে আঘাত করলো। আর সাথে সাথেই তুবা কেঁপে উঠলো।

পিয়াল দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“প্রেম-ভালোবাসা, অনুভূতিকে তুমি ছেলেখেলা মনে করেছো?”

তুবা অবাক হয়ে বললো,
“কি করেছি আমি?”

“কিচ্ছু করো নি। তুমি কিছুই তো করতে পারো না। তোমার মতো অতি ভদ্র, শান্ত মেয়ে তো পুরো বাংলাদেশে একটাও নেই। যা করেছে সব…. ওই মেয়েটা করেছে। কি নাম যেন তার?”

তুবা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে পিয়ালের দিকে তাকিয়ে রইলো।

পিয়াল চেঁচিয়ে বললো,
“কি নাম তার?”

তুবা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“ক…..কি নাম…? তুমি কি বলতে চাইছো? পাব্লিক প্লেসে আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন তুমি?”

“পাব্লিক প্লেস? এক মিনিট… তোমার সম্মানে লাগছে? দেখো, আমি চেঁচাচ্ছি তাই তুমি লজ্জিত হচ্ছো, এটা একদম আমার সামনে বলো না৷ কারণ তোমার মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমি আজ প্রথম দেখেছি।”

তুবা মুখে হাত দিয়ে বসে রইলো। পিয়াল কি বলবে সে বুঝে ফেলেছে, কিন্তু এখন মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো পিয়াল সত্যটা কতোটুকু জানে। আর এই সত্যকে মিথ্যে প্রমাণ করার জন্য তার কি বলা উচিত।

পিয়াল বলতে লাগলো,
“অতিন্দ্রিয়া, পিয়াসা, তিয়াশা, আইরিন, পিয়ু, প্রীতিলতা, তুবা।”

পিয়ালের মুখে এই নামগুলো শুনে তুবার পুরো পৃথিবী থমকে গেছে। কারণ তার জীবনে আসা প্রতিটি ছেলের জন্য সে আলাদা যেসব ছদ্মনাম রেখেছে, তার সবকটি এখন পিয়ালের মুখে। তার অর্থ দাঁড়ায়, পিয়াল তার আদ্যোপান্ত সব খবর জেনে গেছে।

পিয়াল বললো,
“অতিন্দ্রিয়া, নিজের খালাতো বোনের ছবি দিয়ে ফেইক একাউন্ট খুলে, সেই বোনকে যেই বখাটে ছেলেটি উত্যক্ত করতো তার সাথেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে। শুধু প্রেম ছিলো না, অশ্লীল প্রেম ছিলো। নিজের বোনের প্রতি মিনিটের ছবি সেই রকি নামের বখাটে ছেলেটিকে পাঠিয়ে নিজেকে পিয়াসা প্রমাণ করে সে অনেক টাকা, অনেক দামী দামী উপহার হাতিয়ে নিয়েছিলো। আর পরিশেষে কি হয়েছে? খুন হয়েছে, একটা পরিবার ধ্বংস হয়েছে, তিনটা সন্তান বাবা হারা হয়েছে, স্ত্রী স্বামীকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে, আর একটা বোন তার ভালোবাসার মানুষটি থেকে লাঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু সেই অতিন্দ্রিয়া তো দিব্যি সুখে আছে। পিয়াসা, যার আসল নাম পিয়াসা নয়, কিন্তু সে ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে আসল পিয়াসার ছবি ব্যবহার করে সোহান নামের বরিশাল জেলার একটা ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। পরিশেষে ছেলেটি অনেক খুঁজেও মেয়েটিকে আর পায় নি। পরবর্তীতে ছেলেটি তার এক বন্ধুর মাধ্যমে জেনেছে এই মেয়েটা পিয়াসা নয়, তার আসল নাম আইরিন। আর এই আইরিন ছিলো সোহানের বন্ধুর ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড৷ সেই ছেলেটির সাথেই আইরিন তার আসল চেহারা নিয়ে নিউমার্কেট দেখা করতে গিয়েছিলো। আর বলেছিলো ছবির মেয়েটা তার মৃত বোন। বোনকে খুব ভালোবাসে, তাই সব জায়গায় তার ছবি রেখেছে। আইরিনের তো সেই ছেলেটির সাথে চার বছরের প্রেম ছিলো। পাশাপাশি সে প্রীতিলতা আর পিয়ু সেজে দুই দুইটা ছেলের সাথে প্রেম করেছে। আর এর মধ্যে আরেকটা টক্সিক রিলেশন ছিলো তুবার সাথে মিনারের৷ যার কথায় শুধুমাত্র সে সবাইকে জানিয়েছে। দাবী করেছে মিনার তার প্রথম ভালোবাসা। মিনারের সাথে ব্রেকাপ করে, সে আবার রাতুলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে, কারণ মিনার খুব পজেজিভ। সে ভদ্র মেয়েটিকে শুধুই সন্দেহ করতো। আর জানো সেই মিনার এখন কোথায়? সে এখন ড্রাগ এডিক্টেড। কিন্তু তুবা নামের মেয়েটি রাতুলের সাথে ভালোই প্রেম চালিয়েছে। তবে এবার সে ভুল করেছে। এমন একটা ছেলের সাথে প্রেম করেছে যাকে সহজে বোকা বানানো সম্ভব নয়। রাতুল যখন জানতে পারলো তুবার অনেক ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো, তখন সে কথার ছলে তার সোশ্যাল একাউন্ট থেকে সব চ্যাটের তথ্য বের করে ফেললো। আর এরপর তাদের ব্রেকাপ হয়ে গেলো। কিন্তু এরপর সে রাতুলেরই বন্ধু আরিফের সাথে সম্পর্কে চলে যায়। এটা যখন আসল পিয়াসা জানতে পারলো, তখন তুবা নামের সেই মেয়েটিকে সরে আসতে বাধ্য করলো। এরই মধ্যে না জানি আরো কতো প্রেম আড়ালেই রয়ে গেছে। কিন্তু তার আজকের দিনের শেষ প্রেমিকটা বোধহয় পিয়াল, অর্থাৎ আমি।”

তুবা মাথা নিচু করে বসে রইলো। পিয়াল এবার বললো,
“এখন তুমি স্বীকার করবে নিজের আসল পরিচয়?”

তুবা ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“আমার নাম তুবা। অতীতে আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু আমি এখনো ভার্জিন। আর আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি।”

পিয়াল তুবার কথা শুনে শব্দ করে হাসলো। মনে মনে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
“ভার্জিন।”

তুবা বললো,
“হাসছো কেন তুমি?”

পিয়াল দুই হাত টেবিলের উপর রেখে, তার উপর ভর দিয়ে বললো,
“ভালোবাসা কি বুঝো? তোমার কাছে হয়তো আমি কিছুই না। কিন্তু তুমি আমার কাছে কি ছিলে, তুমি নিজেও জানো না। আর সেই তুমি এখন কি হয়ে গেলে!”

তুবা কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো,
“সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে…..”

পিয়াল তুবাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“শাট আপ। তুমি অনেকের জীবন এলোমেলো করে দিয়েছো। তোমাকে ক্ষমা করা অসম্ভব। যে অনিচ্ছায় নষ্ট হয়, তাকে আগলে রেখে আবার পরিপূর্ণ করা যায়, আর যে স্বেচ্ছায় নষ্ট হয়, তার পরিপূর্ণ হওয়ার কোনো অধিকার নেই। কারণ নিজের নোংরা বাসনা পূরণের জন্য তারা আগে থেকেই পরিপূর্ণ হয়ে যায়।”

“আমি কারো সাথেই এতোটা ঘনিষ্ঠ হই নি।”

“চুপ, একদম চুপ। এই মেয়ে, তোমার লজ্জা করছে না, আমার সামনে মাথা তুলে বসতে? আজ তোমাকে ডেকে এনেছি এই সম্পর্ক শেষ করার জন্য, আর তোমার নোংরামিগুলো তোমাকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। সেদিন রেস্টুরেন্টে রাতুল তোমাকে আর আমাকে একসাথে দেখে ফেলেছিলো। এরপর সে-ই আমার ঠিকানা খুঁজে আমার সাথে যোগাযোগ করে, সব কথা আমাকে জানিয়েছে। প্রথমে আমি বিশ্বাস করি নি৷ তারপর সে আমাকে সব প্রমাণ দেখায়। আর এরপর তাকে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই।”

“প্রমাণ তো মিথ্যেও হতে পারে।”

“তুমি তো স্বীকার করে ফেলেছো। আর অপরাধীর চোখে অপরাধবোধ থাকবেই। পিয়াসা কিছু মিথ্যে প্রমাণে ফেঁসে গিয়েছিলো। কিন্তু ওর চোখ আমাদের বারবার ভাবতে বাধ্য করেছিলো, সে অপরাধী নয়। কিন্তু তোমার চোখ, তোমার সম্পর্ক শুরুর আগেই দেওয়া শর্ত আমাকে বাধ্য করেছে তোমাকে সন্দেহ করতে। আর তুমিই পিয়াসা আর স্পর্শের ব্রেকাপ করিয়েছিলে, যাতে আমি কিছুই জানতে না পারি। কিন্তু আজ সব আমার সামনে। আর পিয়াসা, ও তো তোমার নামও মুখে নেয় নি, সব সত্য জানার পরও।”

“কারণ ও বোকা।”

“হ্যাঁ, আসলেই মেয়েটা বোকা। ও ভেবেছে পরিবারের একটা মেয়ের সম্মান তো গেলোই। আরেকজন কেন হারাবে? তাই চুপ করে ছিলো। অবশ্যই সে বোকা। কারণ সে তোমাকে আপন বোনের চোখে দেখেছে। আরেহ, ক’জনই বা এমন বোন পায়? তোমার বোকা বোন পিয়াসার মতো?”

তুবা অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?”

পিয়াল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি শুধু আমার গালে একটা চড় বসিয়েছো। তুমি যে সেই চড় মেরে আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছো, তা দেখলে না!”

তুবা চোখের পানি মুছে মাথা নিচু করে ফেললো।

পিয়াল বললো,
“তোমাকে অসম্ভব ভালোবেসেছিলাম আমি। তাই সেই ভালোবাসার মূল্য দিতেই আজ তুমি শুধু আমার মুখোমুখি হয়েছো। তোমাকে আমার বন্ধুদের সামনে ছেড়ে দিলো, তোমাকে ছিঁড়ে ফেলতো। তখন আর তুমি মুখ দেখানোর অবস্থায় থাকতে না। স্পর্শ পিয়াসার সাথে যা করেছে তা ভুল ছিলো। কিন্তু সে পিয়াসাকে কষ্ট দিয়ে নিজেও অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। স্পর্শ মানসিক দ্বন্ধে ছিলো। একদিকে বাবার হত্যার প্রতিশোধ, অন্যদিকে প্রেমিকার ছলনা। একবার যদি প্রমাণ হতো পিয়াসা এরমধ্যে জড়িত ছিলো না, তাহলে স্পর্শ তার গায়ে একটুও দাগ লাগতে দিতো না।”

তুবা চুপ করে রইলো। পিয়াল এবার জিজ্ঞেস করলো,
“পিয়াসার বাসায় গিয়েছি। দেখলাম তারা বাসা ছেড়ে দিয়েছে। এখন কোথায় আছে পিয়াসা? ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন। আমার বন্ধু স্পর্শের জন্য এই একটা উপকার করতে পারলে আমি শান্তি পাবো।”

তুবা মলিন মুখে বললো,
“পিয়াসার বিয়ে হয়ে গেছে রিয়াদ ভাইয়ার সাথে।”

পিয়াল কথাটি শুনে চমকে উঠলো। ধীর কন্ঠে বলল,
“মিথ্যে কথা।”

“মিথ্যে না। রিয়াদ ভাইয়া খুব ভালোবাসে পিয়াসাকে। তার সাথে বিয়েও ঠিক হয়েছিলো৷ পিয়াসার অপহরণের পর রিয়াদ ভাইয়ার পরিবার এই বিয়ে ভেঙে দেয়। কিন্তু তিনি পিয়াসাকে সবার অমতে গিয়ে বিয়ে করেন।”

কথাটি শুনে পিয়াল উঠে দাঁড়ালো। তুবা পিয়ালকে আটকাতে গিয়েও আর পারলো না। পিয়াল সেখান থেকে বের হয়েই একটা রিক্সায় উঠে পড়লো। তার মুখটা একদম থমথমে হয়ে গেছে। তুবার সাথে শেষ দেখা করার মূল কারণ বন্ধুকে তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু এখন কি মুখ নিয়ে সে স্পর্শের সামনে দাঁড়াবে সেটাই ভাবছে।

||

নিয়তি মানুষকে হঠাৎ কোন মোড়ে দাঁড় করিয়ে দেবে, সেটা সে নিজেও বুঝবে না। স্পর্শ হয়তো এই সত্য জানার পর আরো উন্মাদ হয়ে যাবে। সুচিস্মিতাকে আঘাত করার পর সে যখন জানতে পারলো তার সুচিস্মিতা নিরপরাধ, তখন কি পাগলামোই না করলো। আর আজ যখন শুনবে পিয়াসা তার কখনোই হবে না। তখন কি হবে?

বর্ণ ম্যাগাজিনটা বালিশের পাশে রেখে আদির হাত ধরে বললো,
“পিয়াসা ভালো থাকুক। আর পিয়াসার ভালো থাকার জন্য যা করা প্রয়োজন, তুমি তা-ই করবে।”

“রিয়াদ আর পিয়াসাকে কি তোমার একসাথে ভালো লাগছে না? নাকি স্পর্শকে পিয়াসার সাথেই দেখতে চাও?”

“আমি চাইলেই কি লেখক সাহেব তার গল্পের মোড় ঘুরাবে?”

“সমাপ্তিটা কেউ জানবে না। আমার যেমন ইচ্ছে ঠিক সেভাবেই এই গল্পের ইতি হবে।”

“যদি জানতে চাই এ গল্পের শেষটা বিষাদের নাকি আনন্দের, তখন কি উত্তর দেবে সে?”

“উত্তর হবে না। জীবনে বিষাদ আনন্দ উভয়ের পাশাপাশি অবস্থান। আজ এই মুহূর্তে পৃথিবীর এক প্রান্তে নতুন শিশুর আগমনে পুরো ঘর আলোকিত হয়েছে, অন্য প্রান্তে, প্রিয় মানুষকে হারিয়ে অনেকে অশ্রু ঝরিয়েছে। কেউ আজ ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে সুখী হয়েছে, কেউ সব হারিয়ে পৃথিবীর মায়া নিজ ইচ্ছায় ছেড়েছে।”

“তুমি বলতে চাইছো…..”

আদি বর্ণকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“আজ না হয় এসব কথা পরের দিনের জন্য তুলে রাখি।”

বর্ণ মুচকি হেসে আদির কাঁধে মাথা রাখলো।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here