আমি_খুনী_হতে_চাইনি পর্বঃ- ১

0
1736

গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি
পর্বঃ- ১
লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার

দু-মাসের শিশুকে মাতৃ দুগ্ধ পান করানোর সময় হঠাৎ
পেছন থেকে ননদের ইচ্ছে কৃত ধাক্কায় শান্তার কোল
থেকে শিশুটি মেঝেতে পরে গেলো। কচি দেহের হার
গুলো মুহূর্তেই ভেঙে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ফলে কয়েক
মিনিটের মধ্যেই শিশুটি মারা যায়। হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়ারও সুযোগ টুকু আর পায়নি তারা। এতে শান্তা
তার ননদ কে দ্বায়ী হিসেবে সবার সামনে গন্য করলে
অস্বীকার করে তার ননদ তখন বলে ছিলো,

–দেখেছিস ভাই? তোর বউ নিজের অসাবধানতার কথা
না উল্লেখ করে, আমাকে কি ভাবে ফাঁসানোর চেষ্ঠা
করছে?

প্রতি উত্তরে বিস্মিত হয়ে যখন শান্তা বলল,

-আমি সত্যি কথাই বলছি সোহান? ট্রাস্ট মি” তোমার
বোন ইচ্ছে কৃত ভাবেই পেছন থেকে আমাকে ধাক্কা
দিয়ে ছিলেন। যার জন্য আজ আমি বুক, কোল শূন্য!
সেই শুরু থেকেই তিনি আমায় সয্য করতে পারতেন
না। তোমার বোন মানুষ নয় অমানুষ একটা নারী। সে
তো কখনোই মা-হতে পারবেন না। তাই বোধ হয়,উনি
অন্যের মাতৃত্বের সুখও দেখতে পারেন নি? ডিভোর্সী
বন্ধ্যা মেয়ে কোথা কার?

চোখের অশ্রুতে জর্জরিত হয়েই কথা গুলো বলেছিলো
শান্তা।কিন্তু শান্তার কথাগুলো,তার স্বামী বা অন্য কেউ
একদমই বিশ্বাস করেনি।সন্তান মারা যাওয়ার বেদনায়
শান্তার স্বামীও এখন নিঃস্তব্ধ।তবে সোহানও পরিশেষে
নিজের স্ত্রী শান্তাকেই সন্তানের মৃত্যু নিয়ে দোষা-রোপ
করে পরিবারের প্ররোচনায় বেশ একটা মার-ধর পর্যন্ত
করেছিলো। যা মুখ বুজে সয্য করে নিয়ে ছিলো শান্তা।
মা-বাবার পছন্দ করা পাত্রকে ঠুকরে বরিশাল থেকে
সোহানের হাত ধরে ঢাকা পালিয়ে এসেছিলো।যার-পর
মিরপুর সোহানের বাড়িই হয়ে উঠে শান্তার একমাত্র
স্থায়ী নিবাস।স্টোর রুমে বসে ঠান্ডায় মূলত প্রতিনিয়ত
কেঁপে উঠছে শান্তা।সেই সকালে শান্তাকে মারধর করে
এখানে আটকে রাখা হয়েছে। ব্যথায় বারবার কুকরে
উঠছে সে। কিন্তু এই যন্ত্রণা যে শান্তার কাছে এই মুহূর্তে
কিছুই নয়। তবে সন্তান হারানোর বেদনা কেনো যেন
শান্তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর অনুকূলে নিয়ে যাচ্ছে।বেঁচে
থাকার আস্থা গুলো প্রতিনিয়ত হারিয়েই ফেলেছে সে।
নিজের ননদের কথা ভাবলেই শান্তার শরীর শিউরে
উঠে।ননদ যে এতো নিষ্ঠুর ও জঘন্য হিসেবে একসময়
পরিচয় দিবে, সেটা কল্পনারও শত বাহিরে অবস্থান
করছিলো শান্তার। হঠাৎ কেউ দরজা খুলে ভেতরে
প্রবেশ করলো। যেটা মূলত শান্তার ননদ ছিলো।এসেই
প্রথমত পেছন থেকে শান্তার চুলের মুঠি ধরলো এবং
দেয়ালের সাথে ঠেশ-মেরে তীক্ষ্ণ গলায় বলল,

–আমাকে সবার সামনে ডিভোর্সি,বন্ধ্যা নারী বলে ছিলি
তাই না? হ্যাঁ আমি তোকে সেই মুহূর্তে সম্পূর্ণই ইচ্ছে কৃত
ভাবে ধাক্কা দিয়েছিলাম। তোর হাতেই তোর সান্তানকে
আমি জন্মানোর দু-মাসের মাথাতেই পর-দুনিয়ায়
পাঠিয়ে দিয়েছি। এটা তো জাস্ট খেলার শুরু মিসেস
শান্তা।

কথাগুলো বলার পরপরই শান্তার ননদ চলে যায়। এবং
বাহির থেকে আবার ভালো করে দরজা লাগিয়ে যেতে
কোনো,ত্রুটি রাখে নি সে।নিস্তব্ধতা বিরাজ-মান শান্তার
মনে। কোনো কিছুই না বোঝার উপক্রম তার! কি হচ্ছে
তার সাথে এসব? কেনোই বা শান্তার ননদ তার সাথে
এরূপ করছেন? কিছুই যেন ডুকছে না শান্তার মাথার
গহীনে। সব-কিছুই ঘোলাটে-ঝাপসা লাগছে তার নিকট
।ডুকরে ডুকরে কাঁদছে শান্তা। হঠাৎ আবারও দরজা
খোলার শব্দ শুনে, এবার একটু নড়ে-চড়ে উঠলো সে।
অতএব দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো সোহান।
যাকে দেখা মাত্রই শান্তা উঠে দাঁড়িয়ে একটা বারের
জন্য হলেও জড়িয়ে ধরার অ-প্রান চেষ্টা করে ছিলো। কিন্তু শান্তা ব্যর্থ! পর মুহূর্তেই সোহানের তীব্র প্রহারে,
কপালের কিঞ্চিৎ পরিমাণ কেটে সেখান থেকে রক্তের
সূত্র পাত হতে আরম্ভ করে শান্তার। অতঃপর প্রচন্ত
রাগান্বিত হয়ে সোহান বলল,

–খবর দ্বার! তুই আমার কাছে আসার একদমই চেষ্টা
করবি না! আমার নিষ্পাপ সন্তানের খুনী কোথা কার?

“বাম হাত দিয়ে কিঞ্চিৎ কেটে যাওয়া স্থান চেপে ধরে
শান্তা বলল,

–এসব কি বলছো সোহান? মা হয়ে আমি কেনো নিজ
গর্ভের সন্তানের খুনী হতে যাবো? স্বয়ং তোমার ওই বড়
বোন যে মূলত সবার সম্মুখে ভালো মানুষের মুখোশ
পরে থাকে, সেই আমাকে তখন পিছন থেকে ইচ্ছে কৃত
ভাবেই তীব্র শক্তিতে ধাক্কা দিয়ে ছিলো, যার ফল সরূপ
মাতৃ দুগ্ধ পান করা অবস্থায় কোল থেকে আমার দু-
মাসের নিষ্পাপ শিশুটি মেঝেতে পরে গিয়ে মারা যায়।

–জাস্ট এনাফ শান্তা! কেনো তুই শুধু শুধু আমার বোন
সম্পর্কে এরূপ বাজে কথা বলছিস? নিজের দোষ,ভুল
ঢাকার জন্য তুই এভাবে, আমার বোনকে ফাঁসানোর
চেষ্টা করছিস? শুধু মাত্র তোর অসাবধানতার কারণেই
আজ আমার সন্তান নেই এ ভূবণে! তুই তো মা নামের
কলঙ্ক! সন্তানের প্রতি এতটা অন্যমনস্ক মা হয়ে তুই কি
করে হতে পারিস?

আচমকা সোহানের মা এসে বলল,

–তোকে সেই প্রথমেই বলেছিলাম সোহান! এই মেয়ে
একদমই ভালো না, শতবার ভেবে দেখতে? কিন্তু তুই
আমার কথা সেদিন মোটেও শুনিস নি। আমাদের
প্রত্যেকেরই পছন্দ আমার ভাইয়ের সুন্দরী, শিক্ষিত
মেয়েকে প্রত্যাখান করে গ্রামের কোন এক নিচু বংশের
মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসে ছিলি। আমার
ভাইয়ের মেয়ের নখেরও যোগ্য কিন্তু এই মেয়ে ছিলো না
তবু্ও আমি মেনে নিয়ে ছিলাম, শুধু সেদিন তোর এই
মুখচ্ছবিটার দিকে তাকিয়ে। নতুবা এরূপ মেয়ে
আমাদের বাড়ির বউ তো শত দূরে, কাজের মেয়ে
হওয়ার যোগ্য রাখে কিনা বেশ একটা সন্দেহের। আর
এমনিতেও তোর বউ আমার মেয়ের উপর, যে ভাবে উঠে পরে লেগেছে ফাঁসানোর জন্য? আমার তো মনে
হচ্ছে, ইচ্ছে কৃত ভাবেই ও-ওর কোল থেকে সন্তানকে
ফেলে দিয়ে নাটক করছে?এখনো বলছি সোহান ভালো
করে খোঁজ খবর নিয়ে দেখ? আড়ালে কারো সাথে
তোর স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক আছে কি না?

নিজের শাশুড়ীর মুখ থেকে এরূপ কুরুচিপূর্ণ গলার
কন্ঠ স্বর শুনে শান্তা আর চুপ থাকতে পারলো না। এক
প্রকার কান্না মিশ্রিত কন্ঠেই সে বলল,

-আপনি ভুল ভাবছেন মা?

-চুপ-করো! তোমার কথাবার্তা শুনলে পর্যন্ত আমার গা
জ্বলে উঠে।

কথাটা বলার পরপরই হনহনিয়ে চলে গেলেন সোহান
এর মা বিলকিস বেগম। যার-পরে সোহানও রাগতে
রাগতে স্টোর রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার আগে
অবশ্য দরজাটা বাহির থেকে আবারও আটকে দেয়।
অসহায়ত্ব বোধ করছে শান্তা। কষ্টও হচ্ছে বেশ! এটা
ভেবে, শেষ অবধি কেনো নিজের ভালোবাসার মানুষ
তার কথা-গুলো একটু হলেও বিশ্বাস করেনি? সিজারে
সন্তান হয়ে ছিলো শান্তার। সেলাইয়ের স্থানে বেশ একটা
যন্ত্রণা হচ্ছে তার। আজ বেশ কয়েক দিন যাবত স্টোর
রুমেই এভাবে পরে রয়েছে শান্তা। তবে বাড়ির সমস্ত
কাজ কর্মে শান্তাকে যেন তারা খাঁটিয়ে মারার অ-প্রান
চেষ্টা করেই যাচ্ছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে
হেনস্তা, অপমান,ও অত্যাচারেই কেটেছে শান্তার বেশ
খানিক মাস। তবে আজ যখন বাড়িতে নিজের স্বামী
সোহানের সাথে তার মামাতো বোন ফারিয়াকে দেখলো,
তখন কেনো যেন শান্তার অন্তরমহলে কম্পনের সৃষ্টি
হয়। অতএব ফারিয়া সোহানকে জড়িয়ে ধরেই বলল,

–ফুফি আজ আমি খুব, খুব খুশি। তুমি জানো, সোহান
আমাকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়েছে?

যা শোনা মাত্রই চোখ থেকে অজস্র অশ্রুর সূত্র-পাত
ঘটে শান্তার। নির্বাক হয়ে মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ল।
ভেতরটা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে তার। মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
বাঁচার ইচ্ছে আকাঙ্খা গুলো হারিয়ে ফেলেছে সে।
অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকিয়ে রয়েছে, সোহানের দিকে কিন্তু
সোহান একবারও তাকিয়ে দেখলো না শান্তার ওই
করুণ মুখচ্ছবিটার নিকট! দু-দিন পর শান্তাকে বাড়ি
থেকে বের করে দেওয়া হলো। যাতে একটুও অবাক
হয়নি শান্তা। যদিও এটাই তার সাথে হবে, যা সে পূর্বেই
আন্দাজ করে ছিলো। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে
উঠেছে শান্তা। এতটা দিন পর নিজের মা-বাবার নিকটে
গিয়ে,তাদের সম্মুখে দাঁড়ালে, তাদের রিয়াকশনটা ঠিক
কি হবে? তারা কি আদৌ এতো সহজে সব কিছু মেনে
নিবেন? যা ভেবে চিন্তিত শান্তা। কম টাকায় বহু কষ্টের
ভিত্তিতে মূলত লঞ্চের একটা ছোট্ট কেবিন পেতে সক্ষম
হয়েছে শান্তা। চোখে ঘুম নেই তার। রাত আনুমানিক
বারোটা হবে।সেই সময় কেউ একজন শান্তার কেবিনের
দরজা নক করলো। যাতে শান্তা একটু চমকে উঠলো।
অতঃপর দরজা খুলতেই বেশ কয়েক জন ঝাপিয়ে
পড়ল শান্তার দিকে। মুহুর্তেই তারা শান্তার হাত,পা,মুখ
চেপে ধরলো। ভেতর থেকে কেবিন এর দরজা লাগিয়ে
দিয়ে শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে লোভাতুর
দৃষ্টিতে একজন লোক বলল,

-বুঝলি নয়ন,বোহা না হইলে,কোনো স্বামী কি এমন এক সুন্দরী বউয়ের লগে আকাম-কুকাম করার পর মেরে
ফেলার জন্য আমাদের মতো কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের
কন্ট্রাক্ট দেয় নাকি?

লঞ্চের সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় নিজের কেবিনের
উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো সেরু ভাই। হঠাৎ পেছন থেকে
তার একজন সহযোগী বলে উঠলো,

–বস আমরা গতকাল, যে মহিলাকে নৃশংস ভাবে খুন
করে ছিলাম, সে স্বয়ং আপনার গর্ভ ধারিণী মা ছিলেন?
যা আপনি জানতেন কিন্তু তবুও কেনো তখন বলেন নি?

আর আজ একটু আগে আমরা যাকে ধাক্কা দিয়ে লঞ্চ
থেকে নদীতে ফেলে দিলাম, এমনকি সেও আপনার
নিজের আপন রক্তের ভাই ছিলেন? তাও কিন্তু আপনি
খুব ভালো করেই জানতেন তবুও কেনো বলেন নি,
আমাদের?

চলবে

ভুল ত্রুটি এবং বানান ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে
দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here