গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি,পর্ব ৫,৬
লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার
পর্ব ৫
–কারণ ও-আমার ভাই! চাচাতো ভাই। যেটা আমি
জেনেও বলিনি তোমায়?
অবাকের শীর্ষ সীমানার দেয়াল ভেঙে শান্তা বলল,
–কিহ!
–হ্যাঁ শান্তা। তুমি ঠিকই শুনেছো?এতোদিন তোমাকে
এসব কথা না বলার বিশেষ একটা কারণ ছিলো
হয়তো জানো না,তুমি যেদিন আমাকে সব কিছু খুলে
বলেছিলে,সেদিন থেকেই আমি তদন্ত শুরু করে দিয়ে
ছিলাম। সর্বপ্রথম আমি যে রহস্যের উন্মাদ ঘটাতে
সক্ষম হতে পেরেছি, সেটা হলোঃ- আমার চাচাতো
বোন রৌহিকা সংসার জীবনে কখনো সুখি হতে পারে
নি। আমার জানামতে সন্তান না হওয়ার জন্যই মূলত
তার সংসার ভেঙে গিয়ে ছিলো।যাই-হোক মূল কথায়
আসি,প্রথমত দু’জন, দু’জনকে ভালোবেসে এই বিয়ে
করার বিষয়টা যতই আমার চাচি অর্থাৎ সোহানের মা
মুখে বলুক না কেনো,সে মেনে নিয়েছে কিন্তু সত্যি
বলতে তো এটাই ছিলো, সোহানের মা কোনো দিনি
কিন্তু তোমাদের বিয়ে মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি
কারণ তিনি সর্বদাই চাইতেন পুত্র-বঁধু হিসেবে নিজের
বড় ভাইয়ের মেয়েকেই বাড়িতে নিয়ে আসতে। তাই
তো মাঝে-মধ্যে প্রায়ই সময় তিনি সোহানকে বিভিন্ন
ভাবেই, নানা ধরনের কায়দা অবলম্বন করে, তোমার
বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা শুনিয়ে মূলত সংসার ভেঙে
দেওয়ার নিখুঁত আকারে চেষ্টা করতেন। কিন্তু তিনি
প্রতিবারই ব্যার্থই হতেন। কারণ সোহান তখন মোটেও
মাথার গহীনে এসব ভুলেও প্রবেশ করাতো না। ব্যাস
এতটুকুর মধ্যেই তিনি সীমাবদ্ধতায় ছিলেন। দ্বিতীয়ত
ফারিয়ার মনের গহীনে সোহান এতোটাই গেঁথে ছিলো,
ওর দেহের রক্তের সাথে মিশে ছিলো—যে, সোহানকে
সম্পূর্ণই নিজের করে পাওয়ার জন্য সে, যা ইচ্ছে তাই
করার সক্ষমতা রাখতো।
“শান্তা বলল,
–যা ইচ্ছে তাই??
–হুম। অবশ্য স্বয়ং ওই ফারিয়া নামক জঘন্য মেয়েটার
মাতৃত্ব নিয়ে উস্কানিমূলক কথার বশীকরণের শিকার
হয়েই, মূলত সেদিন দু-মাসের শিশুকে মাতৃ দুগ্ধ পান
করানোর মুহূর্তে ইচ্ছে কৃত ভাবেই তোমাকে রৌহিকা পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ছিলো।তাছাড়া এমনিতেও সে
তোমাকে প্রথম থেকেই সইতে বা সয্য করতে পারতো
না।যেটা তুমি পূর্বেই বেশ উপলব্ধি করেছিলে। রৌহিকা
এবং ফারিয়া উভয়কেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ওদের
দু’জন কেই আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তি প্রধান করা
হবে। এতক্ষণে হয়তো তাদের থানায়ও নিয়ে যাওয়া
হয়ে গিয়েছে।
জবাবে শান্তা দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনেই, গম্ভীর কন্ঠ স্বর
প্রয়োগ করে বলল,
–তাহলে সন্ত্রাসীদের কন্ট্রাক্ট দিয়ে লঞ্চে আমাকে
মেরে ফেলার অপচেষ্টায় সোহান কে এখনো কেনো
গ্রেফতার করা হলো না এহসানুল ভাই?
–ভুল!
–মানে?
–সোহান তোমাকে মারার জন্য সন্ত্রাসীদের কন্ট্রাক্ট
দেয়নি।
–তাহলে কে দিয়ে ছিলো?
–ফারিয়া।
–কিন্তু ওদের মুখে তো সেদিন আমি স্পষ্টই শুনে
ছিলাম, সোহানের নাম-খানা।
–ওটা পূর্বেই কন্ট্রাক্ট দেওয়ার সময় ফারিয়া তাদের
বলে রেখেছিলো, তোমার সম্মুখে সোহানের নামটা
উল্লেখ করতে কারণ ফারিয়া চেয়ে ছিলো, মৃতুর ঠিক
আগ-মুহুর্তেও তুমি শুধু এটাই জানবে, যে সোহান-ই
তোমাকে মারার জন্য এই সব সন্ত্রাসীদের পাঠিয়েছে।
কথার জবাবে শান্তা আর কোনো কিছুই বলল না।চুপ
করে রইলো।অতএব খানিক্ষন ভাবায় বিভোর থাকার
পর এবার শান্তা বলল,
–সব বুঝলাম।কিন্তু জানি না কেনো,তবে আমি অতি
সহজেই সোহানকে ক্ষমা করে দিতে পারবো না?সেই
দিন একটু হলেও আমার প্রতি, আমার কথাগুলোর
উপর ওর বিশ্বাস রাখার উচিত ছিলো?
মুচকি হাসলেন এহসানুল।তেমন কিছুই বললেন না
আর।তিনি চলে গেলেন বাম দিকে থাকা রুমটাতে।
এতক্ষণ যাবত এহসানুলের মা-ও এখানেই ছিলেন।
অতঃপর তিনিও সোফা থেকে উঠে চলে গেলেন।
এখনও চুপ-চাপ ভাবেই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে
রয়েছে সোহান।আর বা কতক্ষণ?পারছেনা সোহান
এভাবে চুপটি মেরে থাকতে।আচমকাই শান্তার হাত
শক্ত করে চেপে ধরলো সোহান এবং কান্না ভেজা
কন্ঠেই বলল,
–আমায় ক্ষমা করো শান্তা? সেদিন তোমার কথাগুলো
একটু হলেও আমার বিশ্বাস করার উচিত ছিলো কিন্তু
আমি করিনি।সন্তানকে নিয়ে মনে অনেক বড় বড় স্বপ্ন
পোষণ করে ছিলাম কিন্তু হঠাৎ নিজের ওইটুকু বয়সী
সন্তানের এরূপ মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারিনি।আমার
মাথা প্রায়ই কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সেদিন।
ভেবেই নিয়ে ছিলাম তোমার অসাবধানতার কারণেই
আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।তাই তো মনে ভিষণ রাগ
এর উৎপত্তি হয়ে ছিলো আমার! তোমাকে নিয়ে বলা
মা-বাবা, পরিবারের ছোট ছোট মিথ্যা কথা গুলোও
কেনো যেন আমার নিকট তখন সত্যি মনে হয়েছিলো।
পরিশেষে পরিবারের প্ররোচনা ও তাদের প্রত্যেকের
উস্কানিমূলক কথা আমাকে বেশ বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে
দিয়ে ছিলো।তাই বেশ রাগে-ক্ষোভে বাধ্য হয়েই সেদিন
তোমায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বলেছিলাম, আমি
ফারিয়ার সাথে বিবাহে আবদ্ধ হবো। কিন্তু সেটা আমি
মন থেকে বলিনি। তুমি চলে যাওয়ার পরপরই আমি
এক প্রকার সবার সম্মুখেই ফারিয়াকে বিয়ে না করার
কথা সোজা-সাপটা শুনিয়ে দিয়ে ছিলাম। যার মাত্রই
ক’টা দিন পর আমি কিন্তু তোমার নাম্বারে ফোন দিয়ে
ছিলাম।কিন্তু তোমার অবর্তমানে ফোনটা তোমার বাবা
ধরেছিলেন। আমাকে কিছু একটা বলতে গিয়েও তিনি
কেনো যেন বলতে পারেননি।তার পূর্বেই ফোনটা ওনার
থেকে হয়তো এক প্রকার কেঁড়েই নেওয়া হয়েছিলো।
মূলত স্বয়ং তোমার মা-ই তোমার বাবার কাছ থেকে
ফোনটা কেঁড়ে নিয়ে ছিলো এমনকি আমায় থ্রেড দিয়ে
বলেছিলেন, তোমার অনত্রে কোথাও বিয়ে ঠিক হয়ে
গিয়েছে। আমাকে স্পষ্টই আর ফোন করতে নিষেধ
আজ্ঞা প্রধান করেছিলেন। তবুও আমি বেশ কয়েক
বারই কল করেছিলাম কিন্তু তৎক্ষনাৎ ফোন বন্ধ করে
রাখা হয়েছিলো। যদিও বা আমি তোমার সাথে অনেক
অন্যায় করেছি,তোমাকে অজথায় ভুল বুঝে নানাভাবে
কষ্ট দিয়েছি।প্লিজ ক্ষমা করো আমায়।
এতক্ষণ চুপচাপ সোহানের কথা গুলো দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে শুনে ছিলো শান্তা। একটুও শব্দ করেনি
সে। নিজেকে শক্ত করে কিছুটা নিচ দিকে তাকিয়ে
জাটকা দিয়ে সোহানের কবল থেকে নিজের হাত
ছাড়িয়ে নিয়ে নিশ্চুপ হয়েই চলে গেলো শান্তা।
পেছন থেকে সোহানের কাঁধে হাত রেখে এহসানুল
বলল,
–চিন্তার কোনো কারণ নেই সোহান?আস্থা রাখ!খুব
দ্রুতই সব কিছুরই সমাপ্তি হবে।
হঠাৎ এহসানুল এর ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ
করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে একজন কনস্টেবল
বলল,
–স্যার আপনার চাচাতো বোন এবং তার মামাতো
বোন উভয়কেই থানায় নিয়ে আসতে না আসতেই
তারা দু’জনেই আচমকা বমি করতে শুরু করে দিয়ে
ছিলো। মুহূর্তের মধ্যেই তাদের অবস্থা খুবই গুরুতর
হয়ে উঠে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পাওয়া
যায়নি।তারা দুজনই ধম ছেড়ে দিয়েছেন।
–মানে??
–সরি স্যার!তারা দু’জনেই মারা গিয়েছেন।
কথাটা শোনা মাত্রই হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো
এহসানুল সরকারের।সেই মুহুর্তেই শান্তার রুম থেকে
চিৎকারে শব্দ ভেসে আসলো তাদের কানের নিকট।
__________________চলবে__________________
গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি (পর্ব ৬)
লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার
কথাটা শোনা মাত্রই হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো
এহসানুল সরকারের।সেই মুহুর্তেই শান্তার রুম থেকে
চিৎকারে শব্দ ভেসে আসলো তাদের কানের নিকট।
তারা উভয়ই দ্রুততার সাথে এগিয়ে গেলো রুমের
দিকে।এবং দেখলো, কালো রঙের একটি খাম হাতে
নিয়ে শান্তা সেন্স লেস অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে রয়েছে।
যা তাদের দু’জনকে-ই হতবাক করে তুলল।মাথার
পেছনের দিক থেকে প্রচুর রক্ত-পাত হচ্ছে। মূলত
মাথা ফেটে গিয়েছে শান্তার। অতএব শান্তাকে অতি
শিগগিরই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিন্তিত হয়ে
এহসানুল কে উদ্দেশ্য করে সোহান চোখের কোণের
অশ্রু মুছে বলল,
–ভাইয়া শান্তার কিছু হয়ে যাবে না তো?
কাঁধে হাত রেখে ভরসা প্রধান করে এহসানুল বলল,
–এতো নেগেটিভ চিন্তাধারা মাথার গহীনে নিস না?
শান্তার কিছুই হবে না সোহান।প্লিজ আস্থা হারাস না?
অতঃপর ডাক্তার বেরিয়ে আসলেন এবং খানিকটা
নরম কন্ঠ স্বর প্রয়োগ করে বললেন,
–তেমন একটা রক্ত ক্ষরণ হয়নি বলেই আজ সে
বিপদমুক্ত। সঠিক সময়ে নিয়ে এসেছেন। দু’ঘন্টা
পর ওনার জ্ঞান ফিরবে।তখন চাইলে কথা বলতে
পারবেন। তবে ওনাকে অবশ্য দু-তিনেক দিনের
মতো হাসপাতালেই থাকতে হবে।
সোহান বলল,
–Thank You Doctors!
অতএব ডাক্তার চলে গেলেন। তারা উভয়ই এখন
শান্তার বেডের পাশে বসে রয়েছে।অবশ্য অপেক্ষার
অবসান ঘটিয়ে মিটমিট করে চোখ মেলে তাকালো
শান্তা। যার-পর সাথে সাথেই নিজেকে আর কোনো
ক্রমেই সংযোত করতে না পেরে শান্তাকে খানিকটা
জড়িয়ে ধরেই সোহান বলল, তুমি ঠিক আছো তো?
যা দেখে এহসানুল বাম দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে
বলল,
–কন্ট্রোল সোহান?শান্তাকে জিজ্ঞেসা বাদ করতে হবে।
থতমত খেয়ে সোহান বলল,
–ওহ সরি ভাইয়া।
অতএব শান্তার নিকটে এসে,দাঁড়িয়ে এহসানুল প্রশ্ন
করলেন,
–কি হয়েছিলো শান্তা?
কিছুটা ধীরে ধীরে শান্তা বলল,
–রুমে আসার পর মুহূর্তে জানালার ধারে হঠাৎ কালো
রঙের একটা খাম দেখে আমি কিছুটা আঁতকে উঠে
ছিলাম। কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে খামটা হাতে নিতেই
আচমকা বাহিরে একটা লোক কে দেখতে পাওয়াকে
কেন্দ্র করে আমি চিৎকার দিয়ে উঠি এবং জানালার
নিকটবর্তী স্থান থেকে পিছু পা হলে শক্ত কিছু একটার
সাথে বেজে পড়ে যাই ফ্লোরে। তারপর ঠিক কি হয়েছে
তা অবশ্য সম্পূর্ণই আমার অজানার মধ্যেই পরে। তবে
লোকটার সেই,কুৎসিত,বিকৃত,পোড়া,ঝলসানো মুখটি
এখনও আমার চোখের সম্মুখে প্রতিনিয়ত ভাসছে।
আচ্ছা সেই কালো খামটা এখন কোথায়? কি ছিলো
খামের ভিতরে?
কিছুটা হিমসিম খেয়ে এহসানুল বলল,
–ওহ সিট” ওই খামটা মনে হয় বাড়িতেই রয়েছে।
তাড়াহুড়োই খামের ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিলাম।
আচ্ছা সোহান তুই তাহলে এখানেই শান্তার পাশে
থাক! আমি আসছি। এখনি ইমিডিয়েটলি পুলিশ
স্টেশন যেতে হবে।
খানিকটা আশ্চর্য হয়ে সোহান বলল,
–কি হয়েছে ভাইয়া এই মুহূর্তে পুলিশ স্টেশন কেনো?
–কারণ ফারিয়া এবং রৌহিকা দু’জনকেই থানায় নিয়ে
আসার সময় আচমকা তারা বমি করতে করতে মারা যায়।
এহসানুলের এরুপ কন্ঠ স্বর শুনে সোহান এবং শান্তা
উভয়ই চমকে উঠলো।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোহান
বলল,
–এসব কি বলছো ভাইয়া?কিন্তু কিভাবে সম্ভব এটা?
–সত্যি কথাই বলছি?শান্তার এরুপ ঘটনার একটু
পূর্বেই একজন কনস্টেবল ফোন করে আমায় এসব
জানিয়ে ছিলেন।
–তাহলে এতক্ষণ যাবত কেনো বলোনি আমায়?
–বলতে ইচ্ছে করেনি তাই। আমি যাচ্ছি! তুই একদমই
শান্তার দৃষ্টি গোচর হবি না। সার্বক্ষণিক ওর পাশেই
থাকবি,বিপদ কিন্তু বলে আসবে না, যে আমি আসছি!
আর শোন শান্তা” তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?
–জ্বি বলুন ভাইয়া?
–যেদিন তোমার মায়ের কবল থেকে বাঁচার জন্য তুমি
পালিয়ে ছিলে,সেদিনকার পর থেকেই তোমার মা এবং
তার বান্ধবী দুজন’ই নিখোঁজ। এখনও তাদের কোথাও
খুঁজে পাওয়া যায়নি।
–কিহ!!তাহলে কোথায় তারা?কি হচ্ছে এসব?
–জানিনা আমিও।তবে তুমি শান্ত হও।তোমার বাবার
খুনের মামলা তো বরিশালের কুয়াকাটায় করা হয়েছে
তাই না?
–হ্যাঁ।
–আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি এখন বিশ্রাম নেও।আর
এসব নিয়ে তুমি কিংবা সোহান মোটেও ভেবোনা।
অতঃপর এহসানুল হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সোজা
থানায় চলে এলেন।লাশ দু’টোর দিকে তাকাতেই বেশ
আঁতকে উঠলেন তিনি।এবং একজন কনস্টেবল কে
ডেকে বললেন,
–এদের মৃত্যুর কোনো কারণ কি খুঁজে পাওয়া গেছে?
–নাহ স্যার!একটু পরই তাদের লাশ-গুলো পোস্ট মর্টেম করার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।আশা করছি তার পরই
কিছু হয়তো জানা যাবে তাদের এরূপ মৃত্যুর কারণ
সম্পর্কে।
–পোস্ট মর্টেমের পর রিপোর্ট আসলে আমাকে
অবশ্যই জানাবেন?
–ঠিক আছে স্যার।
অতএব এহসানুল থানা থেকে বেরিয়ে এলেন। গলির
ছোট্ট একটা রাস্তা ধরে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে গমন
আরম্ভ করলেন তিনি।কারণ থানা থেকে তাদের বাড়ি
কিন্তু বেশ একটা দূরে নয়। বাড়িতে পৌছানো মাত্রই
তার মা জিজ্ঞেস করলেন,
–শান্তা ঠিক আছে তো?
–হ্যাঁ মা!শান্তা সম্পূর্ণই ঠিক আছে।
–তুই এসেছিস।ভালোই হয়েছে,এখন আমাকে একটু
হাসপাতালে শান্তার নিকট নিয়ে চল?
–তুমি অসুস্থ মা! তোমার না যাওয়াটাই উত্তম হবে।
ওখানে সোহান রয়েছে,শান্তার পাশে,সব কিছু সামলে
নিবে।
কথা গুলো বলার পরপরই বেশ একটা তাড়াহুড়োই
শান্তার রুমে এসে কালো খামটা খুঁজতে লাগলো সে।
কিন্তু কোথাও পেলেন না।হতাশ হয়ে বিছানায় বসার
সাথে সাথে পিছন থেকে এহসানুল এর মা বললেন,
–কি হয়েছে এহসানুল?এভাবে কি খুঁজছিলি?
–তেমন কিছুনা মা!এখানে একটা কালো রঙের খাম
ছিলো।কিন্তু এখন কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না?তুমি কি
দেখেছো?
–আমি জানিনা বাবা!কাজের মেয়েটা ঘর পরিষ্কার
করেছিলো,হয়তো ফেলে দিয়েছে।
–ওহ..হো..ওটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা খাম ছিলো মা!
–সরি বাবা! আমি জানলে তো আগে থেকেই খামটা
সযত্নে রেখে দিতাম।
অতঃপর এহসানুল আর তেমন কিছুই বলল না। বাড়ি
থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। যাওয়ার
পূর্বে ফোন করে অবশ্য একবার সোহানকে বলেছিলো
সে বরিশালের কুয়াকাটা যাচ্ছে। অতএব ঘন্টার পর
ঘন্টা দীর্ঘক্ষণ যাবত জার্নির পর এহসানুল কুয়াকাটা
এসে পৌছায়। পরিশেষে শান্তার বাবার খুনের মামলা
যেই থানায় করা হয়, সেই থানার ওসির সাথে সাক্ষাৎ
করেন তিনি। এবং জানতে পারলেন সেরু-ভাই সম্বন্ধে
আরও বিভিন্ন ধরনের কিছু তথ্য। অবশেষে এহসানুল
ওসি সাহেবের সাথে আলাপ-আলোচনা করার পর
নিজের গন্তব্যের পথে রওনা দেন।কিন্তু এটা তিনি যেন
কল্পনাও করতে পারেন নি।নিজের বাড়ির নিকট এসে
তাকে এতো বড় হৃদয় বিদারক ধাক্কা সামলাতে হবে।
____________________
সাহানা ভুতির কন্ঠ স্বরে এসআই হাবিবুল্লাহ বললেন,
–আপনি আসার মাত্র ত্রিশ মিনিট পূর্বে মূলত এই
দূর্ঘটনাটা ঘটেছে। অতি দুঃখের সাথেই বলতে হচ্ছে
আমায়, গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে বাড়িতে আগুনের
সুত্রপাত ঘটেছিলো।যার ফল সরূপ আগুনে দগ্ধ হয়েই
মূলত আপনার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। লাশের অর্ধাংস
পুড়ে গিয়েছে। না দেখার বিশেষ অনুরোধ রইলো! !
__________________চলবে__________________