শেষটা_সুন্দর পর্ব_৩

0
2814

#শেষটা_সুন্দর
পর্ব_৩

বাড়িতে আসলাম,,বাড়ি ভর্তি মানুষ,,কালকের পার্টি টা যদিও অভ্র ভাইয়াদের বাড়িতে হবার কথা ছিলো কিন্তু অনেক মানুষ ইনভাইটেড হওয়ার জায়গার অভাবে পাটির আয়োজন করা হয় এক বিরাট কমিউনিটি সেন্টারে,,পার্টি নিয়ে এক এক জনের এক এক রকম আনন্দ শুরু হয়ে গেলো,,তবুও সুযোগ বুঝে মা কে নিয়ে আসলাম ঘরে,,বললাম কালকে রাতের সেই বিভীষিকাময় ঘটনার কথা

মাঃ আমি কোনো ডক্টর বা বিজনেস আইকোন কে চিনি না রোদ,,কিন্তু যে বা যারা তোর সাথে এতো বড় একটা অন্যায় করেছে আমি তাকে ছাড়বো না,,,কখনোই না

রোদেলাঃ শান্ত হও মা,,বললেই তুমি সব করতে পারবা না মা,,আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই যে উনি আমার সাথে__আগে বাবা আসুক আজ,,আমরা এ বিষয়ে কথা বলবো,,এতো সহজে আমি ঔ লোককে ছাড়বো না মা

মাঃ তোর বাবা হয়তো আজ রিফাতদের বাড়ি থেকে ফিরবে না,,কিন্তু আমি দেখছি,ওনাকে বাড়িতে নিয়ে আসা যায় কি না

রোদেলাঃ শান্ত হও মা,,বাবাকে কালকের পাটি টা শেষ করতে দেও অনেকদিন পর রিফাত আঙ্কেল আসায় বাবা আজ অনেকটা খুশি এর মধ্যে তুমি আর,,আর এমনিতেও ডক্টরি পরীক্ষা করে প্রমাণ আনতে মিলতে আমার শরীরে আর কিছুই থাকবে না মা,,সময় অনেকটা পেড়িয়ে গেছে ___তবে আমি হেরে যাবো না ঔ শয়তান টাকে তো আমি শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো

মাঃ আমি কি এ কথা টা রিফাতদের থেকে লুকিয়ে যাবো মা??

রোদেলাঃ কখনোই না মা,,তুমি আর বাবা তো আমাকে ছোট থেকে সৎ থাকতে শিখিয়েছ বলো,,তাহলে কি করে ভাবতে পারলে আমি অভ্র ভাইয়ার থেকে এতো বড় একটা কথা লুকিয়ে যাবো,,,,এসব জেনেও যদি ভাইয়া আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় তো আমি রাজি কিন্তু এ কথাটা শোনার পর যদি উনি না করে দেন এতেও আমার কোনো আক্ষেপ থাকবে না মা!!!!
____________________

পার্টিতে আজ অভ্র ভাইয়ার দেওয়া শাড়ি টা পড়ে আমি মার সাথে স্ব পরিবারে এসেছি,,বাবা অবশ্য কাল থেকেই রিফাত আঙ্কেলের সাথে পার্টির ভেন্যুতে ছিলো,,এক এক করে সবার সাথে পরিচিত হয়ে খাবার দাবারের পর্ব টা সেরে নিয়ে এক পাশে বসে অবন্তী আপুর সাথে কথা বলতে শুরু করলাম।

আজ পার্টিতে এসেছে কতো লোক কতো বিজনেস আইকন,,কিন্তু আমি ভাবতে পারি নি আজ পার্টিতে উনিও উপস্থিত থাকবেন,,এভাবে ওনার সাথে পরপর তিন দিন দেখা হয়ে যাবে এটা আমার কাছে সত্যি অকল্পনীয় ছিলো!!

অবন্তীঃ রোদেলা আমি না উপরে রুমে একটা বড় গোলাপি রঙের ঝুড়িতে বাবুর ফিডার টা ফেলে রেখে আসছি,,একটু কষ্ট করে নিয়ে আসবি বোন আমার

রোদেলাঃ এটাতে এতো রিকুয়েস্ট করার কি আছে আপু,,আমাকে বললেই তো আমি এনে দিচ্ছি___আমার মিহি মনির খিদে পেয়েছে বলে কথা তার খালামনি তার জন্য এইটুকু করতে পারবে না___তুই বাবুকে নিয়ে বস আমি এখনি আসছি

আপুকে বসিয়ে রেখে আমি উপরে আসলাম মিহি মনির ফিডার আনতে,,কিন্তু তাড়াহুড়োর বসে আমি আপুর থেকে এটা জেনে নিতে ভুলে গেলাম আপু এসে কোন দিকের রুমে উঠেছিলো,,নিচে না নেমে খুঁজতে শুরু করলাম, কটাই বা আর রুম আছে এক এক করে দেখে নিলেই তো হচ্ছে,,দুটো রুম দেখে কিছু না পেয়ে তিন নাম্বার রুম দেখতে যেতেই থমকে গেলাম আমি,,রুমের বারান্দা দিয়ে একটা মেয়ের ঠোঁটে নিজের সব টুকু বিলিয়ে দিতে দিতে উনি রুমের কিনারে এসে দাঁড়ালো,,প্রথমে বুঝতে পারলাম না কাজ টা কারা করছে কিন্তু উনি মেয়ে টাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকাতেই ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি,,তাহলে এই নোংরা লোক টা এই কমিউনিটি সেন্টার টাকেও নিজের পাপে ভরিয়ে দিতে শুরু করছে!!

মেয়ে টার দিকে চোখ দিয়ে দেখলাম বুঝলাম সে আর কেউ না রহমান আঙ্কেলের মেয়ে যার সাথে এসেই মা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো,,আমার চাইতেও এক বছরের ছোট,,যতোদূর বুঝলাম মেয়ে টার সাথে আগে থেকে শাহরিয়ার সাহেবের পরিচিত ছিলো না পার্টিতে এসেই যা আলাপ,,মেয়ে টাকে তখনি দেখে বুঝেছিলাম বড় লোক বাবার বখে যাওয়া মেয়ে,,মা কে বা আপুকে যে একটু সালাম দিবে সেই আদব কায়দা টুকুও সে শিখতে পারে নি,,,তাই তো পেয়েছে নিজের মতোই একজনকে

শিশিরঃ আজকে থাক ডার্লিং বাকি টা না হয় অন্য একদিন!!

বলেই উনি আমারই সামনে মেয়েটার ঠোঁটে হাত বুলিয়ে দিয়ে ইশারা করে বললেন এখন যাও ফোনে কথা হবে,,যাওয়ার আগে মেয়ে টাও অবশ্য তাকে ইশারায় বললো তার যে জিনিস টা লাগবে সেটা যেনো উনি ঠিক সময় মতো মেয়ে টার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়!!!!

মেয়ে টা চলে যেতেই আমি ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ওনার দিকে,,না আর বেশি ক্ষন এই রুমে থাকা যাবে না,,আমি চোখ নামিয়ে পেছন ফেরে চলে যেতেই উনি এক টানে আমার হাত মচকে আমাকে তার বুকে এনে ফেললেন,,আমাকে নিয়ে জোরপূর্বক রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলেন,,

আমি চিৎকার করবো কি,,ওনার নিশ্বাসের গরম যে উওাপ টা আমার মুখে পড়ছে সেটাতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার!!

রোদেলাঃ আ__মা__কে যেতে দিন (কাঠ কাঠ কন্ঠে)

আমার কথার উওরে উনি ওনার এক হাত দিয়ে আমার দু হাত পেছনে ইচ্ছে মতো মচকে ধরলেন আর এক হাত দিয়ে আমার ঠোঁটে রাখলেন ওনার সেই অপবিত্র আঙ্গুল!!

শিশিরঃ চুপ____তুমি আমার কাছে আসছো নিজের ইচ্ছেয় আর আমি এখন তোমাকে ছাড়বো আমার ইচ্ছেয়

রোদেলাঃ আপনি জানেন আমি এখন চিৎকার করলে আপনার ঠিক কি অবস্থা হবে,,আপনি জানেন আপনি এখানে কার পার্টিতে এসেছেন,,জানেন না__আপনি যার পার্টিতে এসেছেন সেই মিস্টার আহমেদ আমার বাবা আর রিফাত আঙ্কেল হলো আমার বাবার বন্ধু,,এখন যদি আপনি আমার সাথে কোনো রকম নোংরামো করেন আমি কিন্তু

শিশিরঃ বলা শেষ___তোমার বাবা মিস্টার আহমেদ,,মাস খানেক আগে টিউলিপে এডমিট ছিলেন তাই না___হার্টের প্রায় কুড়ি টার মতো জায়গায় ব্লক যার মধ্যে পাঁচ টাতে রিং বসানো হয়েছে বাকি টা শুধু সময়ের অপেক্ষা

ওনার কথা শুনেই বুক টা শূন্য হয়ে আসলো আমার,,খা খা করতে শুরু করলো আমার ভেতরের সব কিছু,,ওনার কথার ইঙ্গিত কিছুতেই আমার ভালো ঠেক ছিলো না,,

শিশিরঃ ভয় হচ্ছে রোদেলা মুনতাসীর___আমি মানুষ কে সারিয়ে তুলি রোদেলা তাদের কে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেই না (অস্ফুটে)

রোদেলাঃ আপনি তাহলে কেনো এসবে আমার বাবাকে নিয়ে আসছেন??

শিশিরঃ আমি তো আনি নি,,তুমি তো শুরু করলে ফাস্ট,,এই পার্টি যে থ্রো করেছে সে তোমার বাবা,রিফাত তোমার আঙ্কেল,ব্লা ব্লা ব্লা_______তো রোদেলা মুনতাসীর কিসের জন্য আমার কাছে আসা হলো টাকার প্রয়োজন নাকি খুব

রোদেলাঃ ছিঃ___আপনার এটাই মনে হয় না টাকা দিলেই যে কোনো মেয়ে কে বশে আনা সম্ভব

শিশিরঃ সম্ভবই তো,,এই যে সেদিন টাকার ওতোগুলো বান্ডিলের গন্ধ সুকে তুমি ছুটে আসলে আমার কাছে

রোদেলাঃ ছিঃ কতো নোংরা আপনার চিন্তা

উনি কিছু না বলে আমার আরো কাছে আসলেন,,আমি পুরো মিশে গেলাম ওনার সাথে,,উনি শাড়ির ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিলেন আমার খোলা কোমড় বরাবর বুকের উপর,,চোখ বন্ধ করে নিয়ে সহ্য করে যাচ্ছি ওনার সেই অপবিত্র ছোঁয়া,,একটা সময় আমার ঠোঁট টাকে উনি ওনার দখলে নিয়ে নিলেন পুরোটা,,ওনার গায়ে এতো জোর যে ওনার সাথে পেরে উঠলাম না আমি,,

কিছু ক্ষন সহ্য করার পর আর পারলাম না,,গায়ের সব জোর দিয়ে ওনাকে এক ধাক্কা দিয়ে সারিয়ে দিলাম,,নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে আবার ওনার গালে বসিয়ে দিলাম পর পর দুটো থাপ্পড়!!এদিকে আমার শাড়ির আঁচল তখন খুলে নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে,,আমার উর্ধাঙ্গ এখন পুরোটাই ওনার কাছে দৃশ্যমান

রোদেলাঃ আপনি কি মানুষ,,আপনি তো একটা জানোয়ার??__ছিঃ ঘৃনা হয় আমার আপনাকে দেখলে বমি আসে আমার আপনার স্পর্শ পেলে__একটা মানুষ কি করে,,,,

ঘেন্নায় ওনার থেকে পেছাতে পেছাতে দেওয়ালের পাশে গিয়ে ঠেকা খেলাম আমি,,উনি গুটি গুটি পায়ে আসলো আমার কাছে,,এসে আমার শাড়ির আঁচল টা নিচ থেকে তুলে সেটা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন আমাকে!!সাথে চোখ দিয়ে আসা জল গুলো খুব যত্ন ভরে মুছে দিলেন উনি!!

শিশিরঃ শিশির শাহরিয়ার এক জিনিস কখনো দুই বার ইউস করে না রোদেলা মুনতাসীর__একটা মেয়ে কে তো নয়ই__তুমিও একটা লোভী মেয়ে রোদেলা মুনতাসীর তুমিও একটা লোভী মেয়ে

বলেই উনি আমাকে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন,,আর আমি!!
________________

নিচে নেমে আপুকে আপুর ঝুড়ি টা হাতে দিয়ে বললাম আমি আর একটা মুহুর্ত এই পার্টিতে থাকবো না,,মা কে খুঁজতে শুরু করলাম,,মা বললো ইখতিয়ার আঙ্কেলদের ফ্যামিলিকে বিদায় দিয়ে উনি ফিরছেন আমাকে নিয়ে,,আমি দাঁড়িয়ে আছি একটা কোনাতে,,একটু আগের সেই ঘটনা গুলো না চাইতেও বারবার আমার মাথায় চেপে বসছে,,কিছুতেই ওনার সেই নোংরামো গুলো মাথা থেকে বের করতে পারছিলাম না আমি,,এমন সময় অভ্র ভাইয়া আমার সামনে একটা গোলাপ নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো,,অভ্র ভাইয়া মানুষ টা তার নামের মতো সুন্দর,,ওনাকে আমি যতো দেখি তোতোই মুগ্ধ হতে থাকি রোজ

অভ্রঃ এই যে রোদপাখি পার্টি তো শেষ হতে চললো,,এবার কি আমি আমাদের বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি

রোদেলাঃ অভ্র ভাইয়া আমার কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে

অভ্রঃ কি বললি!!তোর কথা আছে আমার সাথে,,মানে সূর্য আজ পূর্ব দিক থেকেই উদিত হয়েছিলো তো রোদ

রোদেলাঃ ভাইয়া প্লিজ

অভ্রঃ আচ্ছা আচ্ছা আর ওসব বলে তোকে রাগাবো না,,দেখি এদিকে ঘুর তো

বলেই অভ্র ভাইয়া আমার কানের মধ্যে গোলাপ টা গুঁজে দিলো

অভ্রঃ কে বেশি সুন্দর রোদ তুই না এই গোলাপ টা,,আই থিংক আমার রোদ পাখি বেশি সুন্দর

রোদেলাঃ বলেছে তোমাকে,,কঁচু জানো তুমি

অভ্রঃ আমার কাছে তো তুই সবার চাইতে সুন্দর রোদ রানী

ভাইয়া আর কিছু বলতে যাবে তার আগে শাহরিয়ার সাহেব আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হলেন,,ওনার সাথে ছিলো আজ নীলিমা আপু,,এই প্রথম আমি নীলি আপুকে দেখলাম কিন্তু তখন বুঝতে পারি নি ওটা নীলি আপু,,ভেবে ছিলাম পার্টিতে আসা অন্য আরেকটা মেয়ে কে উনি আবার ওনার টাকার লোভ দেখিয়ে,,ছিঃ

অভ্র ভাইয়া আর উনি হ্যান্ডসেক করে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে একে অপরকে অভিবাদন জানালেন

অভ্রঃ তাহলে টপ ফেমাস বিজনেস আইকন,,উপস দা ফেমাস হার্ট স্পেশালিষ্ট কি বলে আপনাকে সম্বোধন করি বলুন তো

শিশিরঃ আপাতত বিজনেস রিলেটেড পার্টিতে যখন এসেছি তখন বিজনেস ম্যান টাই থাক

অভ্রঃ এটা ভালো বললেন,,তা ইনি নিশ্চয়??

নীলিমা আপু কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু উনি নীলি আপুকে থামিয়ে দিলেন

শিশিরঃ আমার ফ্রেন্,, বলতে পারেন বিজনেস পার্টনার

অভ্রঃ oh I see,,nice to meet you miss beautiful,,,,meet my beautiful fiancee রোদ,,রোদেলা মুনতাসীর আহমেদ

অভ্র ভাইয়া আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে যেই বললেন আমি ওনার হবু স্এী সেটা শুনেই শাহরিয়ার সাহেব কেমন জানি আঁতকে উঠলেন,,নীলি আপু আমাকে জড়িয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই উনি কিছু না বলে সেখান থেকে হনহন করে বেড়িয়ে আসলেন,,ঘটনা কি হলো কারোই বুঝে আসলো না,,নীলি আপু সাথে সাথে ওনার পেছনে যেতে শুরু করলেন,,আমি আর অভ্র ভাইয়া শুধু দাঁড়িয়ে ওনাদের কান্ড দেখতে থাকলাম!!
________________________

বাড়িতে ফিরে আমার শাহরিয়ার সাহেব নিজের রুমের সব কিছু তছনছ করতে শুরু করলেন,,আসলে অভ্র ভাইয়ার কথা টা ঠিক ওনার হজম হয় নি,,কাবাডের মধ্যে সাজিয়ে রাখা নামি দামি মদের সেই বোতল গুলো এক এক করে বের করে বিছানায় ছুঁড়ে দিলেন,,ওখান থেকে একটা খুলে ঢকঢক করে ওনার শার্ট ভিজিয়ে খেতে শুরু করলেন সেই হারাম পানীয়__এদিকে নীলি আপু কিছুতেই তার এই হুট করে রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না,,শত আঘাত সহ্য করেও আপু চেষ্টা করছে ওনাকে থামাতে

শিশিরঃ জাস্ট লীভ মি নীলিমা,,কেনো এসেছিস তুই আমার পেছন পেছন___নিজের বাড়িতে যা,দয়া করে দয়া করে আমাকে একটু একা থাকতে দে প্লিজ একটু একা ছাড় আমাকে।

নীলিমাঃ আমি তোকে এই অবস্থায় একা রেখে কোথাও যাবো না,,কি কষ্ট হচ্ছে বল আমাকে,,কেনো কেনো এরকম করছিস তুই

শিশিরঃ Don’t touch me আমি তোকে বলেছি না তুই আমাকে স্পর্শ করবি না,,আমার মতো একটা কাঁদার মধ্যে নিজের হাত ডুবিয়ে হাত টাকে নষ্ট করে কি শান্তি পাস তুই??just gate out fron my room,,just leave

নীলিমাঃ তোর কিসে কষ্ট হচ্ছে বল না আমাকে শিশির,,আমি আমি কিছু করেছি পার্টিতে,,আমি কোনো ভুল করেছি,,কোনো অন্যায় করেছি বল আমাকে

শিশিরঃ তুই ছাড়বি না তো আমার পেছন,,ঠিক আছে___আহির___আহির___আহি

উনি টানতে টানতে নীলি আপুকে নিয়ে আসলেন বাড়ির গেটের বাহিরে,,আহির ভাইয়াকে আদেশ করলেন আহির ভাইয়া যেনো নীলি আপুকে ঠিক মতো বাড়ি পৌঁছে দেয়,,বলেই আহির ভাইয়ার হাতে গাড়ির চাবি ধরিয়ে দিয়ে উনি সদর দরজা লাগিয়ে উপরে চলে আসলেন

নীলিমাঃ আমি একা ফিরতে পারবো আহির,,তুমি শুধু তোমার স্যারকে একটু দেখে রেখো

আহিরঃ না ম্যাডাম স্যার যখন আদেশ করেছে আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে আপনি প্লিজ আমাকে না করবেন না,,আমাকে স্যারের আদেশ টা পালন করতে দিন

নীলিমাঃ ঠিক আছে,,তবে তোমাকে একটা রিকুয়েষ্ট করবো আহির??

আহিরঃ হ্যা ম্যডাম বলেন

নীলিমাঃ আজ কি তোমার বাড়ি না ফিরলে কোনো সমস্যা হবে,,আজ যদি তুমি এই রাত টা তোমার বসের সাথে

আহিরঃ আপনি একদম চিন্তা করবেন না ম্যাডাম,,আমি এমনিতেও স্যারকে এ অবস্থায় একা ফেলে যেতাম না__ম্যাডামের তো কাল আসার কথা ছিলো কিন্তু স্কুলের কাজে আটকা পড়ে উনি আসতে পারেন নি,,উনি আসলে তো উনিই স্যারকে সামলে নিতেন,,অবশ্য স্যার ওনার মায়ের সামনে এসব মাতলামি করার সাহস পেতেন না

নীলিমাঃ হুম
_________________

রুমে এসে তছনছ করা রুম টাকে আরো তছনছ করে দিলেন উনি,,বিছানার এক কানি থেকে মদের বোতল হাতে নিতেই ওনার চোখ পড়ে আমার সেই মাথার কিলিপ আর চুড়ি গুলোর উপর,,ওনার রুম প্রতিদিনই মেডরা এসে গুছিয়ে দিয়ে যায় কিন্তু ওনার কোনো জিনিস ভুলেও এদিক থেকে সেদিক নাড়াচাড়া করে না!!

চুড়ি গুলো আর কিলিপ টা হাতে নিতেই উনি এবার গলা কাঁপিয়ে রোদেলা কখনো বা রোদ কখনো বা মুনতাসীর বলে চিৎকার করতে থাকে,,মদের বোতল টা মেঝেতে ভেঙে নিয়ে সেটা দিয়ে নিজের ডান হাতে ইচ্ছে মতো আঘাত করতে শুরু করলেন।হাতে থাকা চুড়ি গুলো মুঠো করে ভেঙে ফেললেন,,কাচের চুড়ি গুলোর ভাঙা টুকরো গুলো ওনার হাতে বিঁধে গিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করলো!!

শিশিরঃ এই হাত দিয়ে তোমার বুকে আজ আমি স্পর্শ করেছি তো মুনতাসীর এই হাত টাকেই আজ আমি শেষ করে দেবো___তুমিও লোভী একটা মেয়ে রোদেলা মুনতাসীর,,খুব লোভী___অভ্রর মতো বিজনেস ম্যানকে চুজ করে ভালোই তো নিজের ফিউচার টা সিকিউর করে নিলে তুমি___আরে কি নেই আমার, তোমার ঔ সো লকড অভ্রর থেকে কম কিসে আমি___তবু তুমি রাজি হয়ে গেলে তো বিয়ে করতে___আমি একটু হলেও তোমাকে আলাদা ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি এক বার না বার বার বার বার এটা প্রমাণ করে দিলে তুমিও ঠিক সেই বেছে বেছে বড় লোকের ছেলে ধরা টাইপ একটা মেয়ে,,একটা Lavish life লীড করা যার একমাত্র উদ্দেশ্য____I hate you মুনতাসীর I just hate you!!

আমি ভেবেছিলাম সেদিনের ঔ টাকা গুলো নেবার কথা শুনে উনি আমাকে প্রথম ভুল বুঝেছিলেন কিন্তু না এর আগেও একটা কারণে ওনার মনে হয়েছিলো আমিও সেই বড়লোকের বখে যাওয়া মেয়ে যার শুধু টাকার নেশা,এই জিনিস টা বুঝতে পারি নি আমি তখন।

__________

পার্টি শেষে সবাই যে যার মতো বাড়িতে চলে আসলাম,,ঘড়িতে তখন রাত ২টা,,মা বাবাকে ডেকে এনে সব খুলে বললো,,বাবা সব শুনে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,,আমি স্পষ্ট দেখতে পারছিলাম সব শোনার পর বাবার চোখে আগুন জ্বলছে,,বাবা তো পারলে পুলিশ নিয়ে তখনি ওনার বাড়িতে চলে যায়,,কিন্তু মা বাবাকে শান্ত করে বুঝালো,,যা করার কাল সকালে উঠে এসে বাবা যেনো করে,,আমি শুধু ভাবছিলাম এসব শুনে বাবার হার্টে না আবার,,কিন্তু আমি জানতাম আমার বাবা অনেক স্ট্রঙ্গ অনেক!!

সকালে ফোন করতেই রিফাত আঙ্কেল অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে আসলেন আমাদের বাড়িতে,,বাবা রিফাত আঙ্কেল আর মুনতাহা আন্টিকে সব খুলে বললো,,রিফাত আঙ্কেল ব্যাপারটা হালকা করে নিলেও মুনতাহা আন্টি যে ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখতে পারলেন না আমি ওনার কথা শুনে বেশ বুঝতে পারলাম।

রোদেলাঃ সব তো তুমি শুনলে অভ্র ভাইয়া,,এর পরো কি তুমি আমার মতো একটা ধর্ষিতাকে গ্রহন করবে নিজের ওয়াইফ হিসাবে?

অভ্রঃ আমি তোকে ভালোবেসেছি রোদ,,এতো সহজ একটা কারণে কি করে ভাবতে পারলি আমি তোকে ছেড়ে দেবো__অপরাধ টা তুই করিস নি তুই শুধু অপরাধ টার স্বীকার মাএ__আমি শুধু ভেবে অবাক হচ্ছি তুই কাল কেনো ওসময় চুপ ছিলি যখন শাহরিয়ার এর সাথে আমি তোকে পরিচয় করিয়ে দিলাম____তুই জাস্ট তখন বলতি দেখতি আমি ঔ লোকটার ঠিক কি অবস্থা করতাম

রিফাতঃ ওসব কথা থাক এখন অভ্র,,আমি পুলিশ কে ফোন দিয়েছি ওরা আসছে,,তোরা রেডি হ

মুনতাহা আন্টিঃ একটা কথা বলি অভ্র,,,,রোদেলা ধর্ষিতা জেনেও তুই ওকে বিয়ে করতে চাইছিস আমার কোনো সমস্যা নেই বাবা এতে,,কিন্তু এভাবে পুলিশ ডেকে কথা টা পাঁচ কান করার খুব প্রয়োজন আছে কি

অভ্রঃ মা!!

মুনতাহা আন্টিঃ আমাকে তুমি ভুল বুঝো না অভ্রর আব্বু,,তোমাদের কাছে কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই শিশির বলে ছেলে টা রোদেলার সাথে___কথা টা ছড়াতে কিন্তু বেশি সময় নেবে না আর তখন সবাই এটাই বলবে রিফাত হোসেন শেষ মেষ কি না ঘরের বউ করে আনলো একটা ধর্ষিতাকে!!

রিফাতঃ মুনতাহা!! তোমার থেকে এরকম কথা কিন্তু আমি আশা করি না মুন

মুনতাহা আন্টিঃ আমি শুধু ভবিষ্যৎ টা তোমাদের দেখিয়ে দিলাম,,এই যা রিফাত!!

অভ্রঃ লিসেন মা,,কে কি বললো কে কি ভাবলো এতে জাস্ট কিচ্ছু যায় আসে না আমার,,আমি শুধু রোদের সাথে জাস্টিস চাই এটাই এখন মেইন আমার কাছে,,বাবা তুমি আঙ্কেল কে নিয়ে আসো,,আমি গাড়ি বের করছি

অভ্র ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,,ওদের সাথে যেতে আমিও বায়না করলাম আর এমনিতেও ভিকটিমকে থাকতে হতো তাই সবাই কে নিয়ে গাড়িতে বসে গেলাম,,গন্তব্য শিশির শাহরিয়ার এর বিশাল সেই বাড়ি!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here