আয়নামতী #পর্ব_২৫,২৬

0
796

#আয়নামতী
#পর্ব_২৫,২৬
#পুষ্পিতা_প্রিমা
পর্ব_২৫

বিয়ের দুইদিনের মাথায় আয়ান, নামিরা আর রূপা এসে দেখে গেল আয়নাকে। আয়শা বেগম আর আজহার সাহেব দাওয়াত করা ছাড়া আসবে না। মানসম্মানের একটা ব্যাপার আছে। আয়না সায়ান আর রূপাকে দেখে দারুণ খুশি হলো। সায়ান তো সেই কোলে ঝাপ দিল ফুপীকে দেখে, আর কারো দিকে তাকায় ও না। গালে গাল লাগিয়ে চুপটি করে আয়নার কোলে বসে থাকে। নামিরা বলল
‘ এই ছেলে তো তোমাকেই বেশি ভালোবাসে আয়না। দেখো আমাদের দিকে তাকাচ্ছে ও না।
আয়না আর ও শক্ত করে গালটা লাগিয়ে রাখলো। বলল
‘ এটা তো আমার আব্বা। আব্বা মেয়েকে একটু বেশি ভালোবাসবে না?
খিকখিক করে হাসলো সায়ান। আয়ান বলল
‘ দেখ কিভাবে হাসে, মনে হচ্ছে সে আমাদের কথা কতকিছু বুঝে ফেলেছে।
রূপা বলল
‘ পাকনা বুড়ো।
সায়ান ডাক দিল জোরে,
‘ পাহহহ!
রূপা বলল
‘ ওরেবাবা, ভয় পাইছি।
সবাই হেসে কুটিকুটি হলো তার কান্ড দেখে।

আয়না দুইদিনের মাথায় বাড়িতে চলে গেল। অনুরাগ দুইদিন না যেতেই নিয়ে আসলো। আয়না তো ভীষণ ক্ষেপে গেল। অনুরাগ বলল
‘ আমার ভার্সিটি থেকে কলিগরা আসবে। স্যারেরা ও আসবে। সেজন্যই নিয়ে আসা। ওনাদের সামনে ভালো করে কথা বলবে।
আয়না বলল
‘ আমি কারো সামনে যেতে পারব না। কথা ও বলতে পারব না। ওসব আমি কেন করব? লোক দেখানো রংঢং করত পারব না আমি। আপনি আশা ছেড়ে দিন।
অনুরাগ বলল
‘ কিন্তু আমি তো ওনাদেরকে আসতে বলেছি। ওনারা আসছেন।
আয়না মুখের না বলে দিল। অনুরাগ মহাচিন্তায় পড়ে গেল।
অনুরাগের কলিগরা আসার পর খাওয়া দাওয়া কথাবার্তা অনেক চললো।

আনহিতাকে বারবার অনুরাগ ইশারায় বলছে আয়নাকে একবার যেন রাজি করায়। গিয়াসউদ্দিন সেলিম অনুরাগের অনেক সিনিয়র। বেশ স্নেহ করে অনুরাগকে। তিনি বললেন
‘ আমাদের সাথে মিসেসের আলাপ করিয়ে দাও অনুরাগ।
অনুরাগ কান চুলকালো। আনহিতার দিকে তাকালো বারবার। অনিমা মুখ মোচড়ে চলে গেল। ওই মেয়ের এত ঢং দেখলে গা জ্বলে তার। বিরক্ত লাগে।
আনহিতা কাজের বুয়ার সাহায্যে আয়নার ঘরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। দেখলো ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ। আনহিতা হতাশ হলো পরপর কয়েকবার ডেকে। বসার ঘরের দিকে যেতেই অনুরাগ এসে বলল
‘ আসবে না?
আনহিতা মাথা নামিয়ে ফেলে বলল
‘ দরজা তো বন্ধ। ওনাদের বলো ও কারো সামনে যেতে চায় না। অনুরাগ বলল
‘ এভাবে বলা যায় নাকি মা? বিয়ে উপলক্ষেই তো ওনারা এখানে এসেছেন।
আনহিতা বলল
‘ আমি অনেক ডেকেছি।
অনুরাগ বলল
‘ আমি একবার ডেকে দেখি।
আনহিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

দু তিনবার দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুললো আয়না। খোলা চুল, কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচলটা সরানো। গায়ের অর্ধেকাংশ উন্মুক্ত। শাড়িটা কোনোমতে পেঁচিয়েছে।
চট করে ঘুরে দাঁড়ালো অনুরাগ। আয়না ঠেস গলায় বলল,

‘ এসব দেখার জন্য তর সইছে না? ফিরে গেলেন কেন? ভালো করে দেখুন।

কান জ্বলে উঠলো অনুরাগের।

‘ তাড়াতাড়ি এসো।

বলেই চলে গেল অনুরাগ। আয়না ধপ করে আওয়াজ সমেত দরজা বন্ধ করলো।

অনুরাগকে ফিরে আসতে দেখে আনহিতা বলল
‘ আসছে।
‘ হ্যা।
আনহিতা বড় করে শ্বাস ফেলল। যাক শান্তি!
খয়েরী রঙের শাড়ি আর একটি কালো ওড়না গায়ে জড়িয়েছে আয়না। ওড়নাটার উপর চকচকে সোনালি রঙের ফুলের কাজ করা। বেশ পুরু দেখতে।
আনহিতা তাকে বেরোতে দেখে বেশ খুশি হলো। শায়লা বেগম সহ লুকিয়ে দেখতে দেখতে বলল
‘ রাণীমা হাজির।
আনহিতা খিক করে হেসে উঠলো।

_____________

গম্ভীর সম্ভীর আর তেজীয়ান মুখখানা হাসিখুশি দেখালো যখন গিয়াসউদ্দিন সেলিম আর বাকিদের সাথে আয়নার কথাবার্তা চলছিল। বেশ হাস্যরসাত্মক কথাবার্তা চলছিল। অনুরাগকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলল
‘ আরেহ দাঁড়িয়ে আছ কেন অনুরাগ। বসে পড়ো। দেখি দুজনকে কেমন মানিয়েছে।
আয়নার মুখে তখুনি অন্ধকার নেমে পড়লো। অনুরাগের তা খেয়াল হতেই সে বলে উঠলো

‘ আছি তো এখানেই। আপনারা কথা বলুন আমি আসছি।

গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলল

‘ মিসেস চৌধুরীরকে নিয়ে শহরে উঠো। এখান থেকে যাতায়াত করতে তোমার তো অসুবিধা। রাজনীতির কি অবস্থা? তোমার মতো একজন আদর্শ শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় মানায় অনুরাগ। রাজনীতির মাঠে তোমাকে দেখে আমি তো রীতিমতো শিহরিত। এমনটা কখনো ভাবিনি।

আয়না মাথা নামিয়ে বসে রইলো। অনুরাগ বলল

‘ মামাদের ইচ্ছে ছিল আর বাবার ও। আমার ওই বাঁধাধরা জীবন ভালো লাগছেনা। তাই ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছে জাগলো।

‘ তাহলে তো তোমাকে চাকরি ছাড়তেই হবে।

অনুরাগ বলল

‘ হ্যা, লেটার দিয়েছি। কোনো খবর নেই।

‘ তোমার মিসেস কি বলে? সে খুশি?

অনুরাগ তাকালো আয়নার দিকে। বলল

‘ হ্যা হ্যা খুব।

‘ তাহলে তো ঠিক আছে। ভালো কিছু করো। অনেক বড় হও। সাবধানে ও থেকো।

অনুরাগ মাথা ঝাঁকালো।

সবাই চলে যাওয়ার সময় আয়নাকে অনেক উপহার সামগ্রী দিল। গিয়াসউদ্দিন সেলিম আয়নাকে চুপিসারে বলল
‘ অনুরাগ কিন্তু আমার ছেলের মতো। সেই হিসেবে তুমি আমার ছেলের বউ। দারুণ লেগেছে আমার ছেলেবউ হিসেবে। ভালো থেকো।
আয়না মিষ্টি করে হাসলো ভেতরে তিক্ততা পুষে রেখে। বলল
‘ আবার আসবেন।

_______________

হাতের মেহেদী তাড়াতাড়ি চলে না যাওয়ার জন্য রান্নাঘরে পা রাখতে দিল না কেউ আয়নাকে। আয়না কারো কথা শুনলো না। নিজেই রান্নাঘরে চলে গেল। সে শুধু শুধু ঘাড়ে বসে খেতে পছন্দ করেনা। আম্মা তাকে আসার সময় পইপই করে বলেছে কাজ দেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকবি না৷ রান্না না করলে ও রান্নার কাজে সাহায্য করবি। কাজের বুয়া দুজন জমিলা আর চামেলি । আয়নাকে সন্ধ্যায় রান্নাঘরে দেখে জমিলা বলল
‘ বৌরাণী আপনারে রান্নাঘরে আসতে বারণ কইরা দিছে দাদীসাহেবা।
আয়না বলল
‘ কেন?
‘ হাতের মেহেদী নষ্ট হইবো তাই।
‘ নষ্ট হবে না। কি রান্না হবে রাতের জন্য ?
চামেলি বলল
‘ বড়মা মাছ রান্না করতে বলছে। ছুড চাহেবের লগে বেয়ুন ভাজা, চিংড়ি আর ডাল। চে আবার ঝাল পছন্দ করেনা। মাংচ খায় না। মিডা মিডা কইরা রান্না করা লাগে।
মাংচ রান্না করা আছে। তাই আর রান্না করতে হইবো না। বুড়ির লগে শুঁটকি ভর্তা করা লাগবো। একেকজনের একেক ঢং এই বাড়িত। কামের চেছ ( শেষ) নাই।

আয়না হেসে বলল
‘ আপনি স এর জায়গায় চ বলেন কেন?
জমিলা তার মাথায় টোকা মেরে বলল
‘ বেয়াদব বেডিরে আমি কতবার কয়, হুনেনা।
চামেলি মাথা ঢলে বলল
‘ তুমি আমার লগে চবচময় ওরকম করো কিল্লাই? আমি ছুড চাহেবরে বিচার দিমু। তিনিই তো আমারে রাখছে।
আয়না বলল
‘ ঝগড়া করছেন কেন? কাজে মনোযোগ দিন।
চামেলি বলল
‘ আমি চেটা কই, চে ছুনতে চাই না। চবচময় খালি মারে।
আয়না আবার ও হেসে ফেলল। তরকারির সেল্প থেকে বেগুন নিয়ে বলল
‘ আজ ঝাল ঝাল বেগুন ভাজা হবে। আমি করব।
জমিলা আর চামেলি চোখ পাকিয়ে তাকালো। আয়না বলল
‘ আপনারা তো খুব ফাঁকিবাজ। হা করে কি দেখছেন?
চামেলি বলল
‘ ছুড চাহেব ঝাল খাইতে পারেনা বৌরাণি।
‘ খাওয়া শিখবে। সমস্যা কি?
‘ কুনো চমচ্যা নাই।

আয়নাকে রান্নাঘরে দেখে খানিকটা অবাক হলো আনহিতা। অনিমা নাকতুলে বলল
‘ বাহবা অনুরাগ চৌধুরীর বউ তো একেবারে রান্নাঘর দখল করতে চলে এসেছেন।
অনুরাগ বাইরে থেকে এসে জিজ্ঞেস করলো
‘ কি হয়েছে?
অনিমা বলল
‘ আপনার বউ রান্না করছে, দেখছেন না সুগন্ধে মৌ মৌ করছে।
অনুরাগ কিছু না বলে চলে গেল। রুমের দিকে পা বাড়ানোর আগে চামেলি এসে বলল
‘ চাহেব আপনার লগে কথা আছে।
অনুরাগ বলল
‘ কি হয়েছে আবার?
‘ আপনি রাতের খাবারে বেয়ুন ভাজি খাইবেন না। বৌরাণি তো ঝাল মিচাই দিছে।
অনুরাগ বলল
‘ তোমার চচচ শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছি আমি। যাও এখন। দেখা যাবে।
বলেই রুমে ঢুকে গেল অনুরাগ। চামেলি মুখটা মোচড়ে বলল
‘ বাপরে বাপ ছালারে ভালা কথা কইছি, ছালা আমারে ধমকায়।
অনুরাগ ভেতর থেকে বলল
‘ কি বকবক করছ চামেলী আপা? কি সমস্যা তোমার?
চামেলী বলল
‘ কুনো চমচ্যা নাই।

খাওয়ার টেবিলে চামেলি অনুরাগকে ইশারা করে বলছে যাতে বেগুন ভাজা না খায়।
অনুরাগ চামেলির কথা তোয়াক্কা করলো না। কিন্তু ভয়ে থাকলো। সত্যি ঝাল দিয়েছে আয়নামতী?
আয়না খাবার বেড়ে দিল আনহিতা, অমি আর শায়লা বেগমকে। বাকিদের দিল না। চামেলি আর জমিলা অনিমা আর শায়খ চৌধুরীকে বেড়ে দিতে লাগলো। অমি বলল
‘ মামিমা খেতে বসো আমাদের সাথে। খাবে না?
আনহিতা বলল
‘ বউমা আমার পাশে এসে বসো।
অনিমা চোখ উল্টে তাকালো। খাওয়া শুরু করলো। আয়না আঁড়চোখে অনুরাগের দিকে তাকালো। বলল
‘ না আমি খাব না।
আনহিতা আর জোর করলো না। শায়লা বেগম বলল
‘ নাতবউ আমার নাতির কি লাগে দেখো।
অনুরাগ বলল
‘ না দরকার নেই।
আয়না নিজ থেকে এগিয়ে গেল। এক একটা বাড়িয়ে দিল। বেগুন ভাজা আর চিংড়ির তরকারি তুলে দিল। অনুরাগ বেগুন খেয়ে দেখলো কোনো ঝাল নেই। মনে মনে বেশ খুশি হলো।

কিন্তু চিংড়ির ঝোল মেখে মুখে দিয়ে খেতে খেতে মনে হলো গলা জ্বলে যাচ্ছে তার। চোখের কোণায় জল জমে গেছে। রক্তলাল দেখাচ্ছে। কপালে ঘাম ছুটে গেছে তার। টিস্যু দিয়ে কপাল মুছে পানি খেতেই আয়না বিড়বিড় করে বলল
‘ ঝাল বউ বিয়ে করেছেন, ঝাল রান্না তো খেতেই হবে।
আনহিতা তাকালো ছেলের দিকে। বুঝে গেল ঝাল লেগেছে। চিংড়ি নিয়ে খেতেই দেখলো অনেক ঝাল হয়েছে। যা অনুরাগের জন্য অনেক বেশি। জোরে চেঁচিয়ে চামেলি আর জমিলাকে ডাকলো আনহিতা। বলল
‘ চিংড়ি এত ঝাল হয়েছে কেন?
‘ চিংড়ি তো আমরা রান্না করিনাই বড়মা।
‘ তো কে রেঁধেছে?
‘ আজ তো সবকিছু বৌরাণি রাঁনছে।
আয়নার ভাবান্তর নেই। অনুরাগ চেয়ার ছেড়ে উঠলো না। চুপচাপ খেতে খেতে বলল
‘ ঝাল হয়নি মা। সব ঠিকঠাক আছে।
আনহিতা তাকালো আয়নার দিকে। আবার চোখ সরিয়ে নিল। অনিমা বলল
‘ এখন যদি ভুলটা জমিলা আর চামেলি করতো তাহলে তো তুই চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতি ভাই।
অনুরাগ খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে উঠে গেল। বলল
‘ এখন ও তো উঠলাম। কথা না বলে চুপচাপ খা।

__________

নারকেল পাতার শলা দিয়ে বাঁধানো বেডঝাড়ু। জোরে জোরে আঘাত করে করে বেড ঝেড়ে নিল আয়না। বেডশিট বিছালো। তারপর ঘুমিয়ে পড়লো মশারি না টাঙিয়ে। ঘরে ও সে এই কাজটা করতো না। আম্মা বকে বকে করাতো। আজ ও করলো না। খুব একটা ভালো করলে বুঝা যাবে তার মাথার নিচে বালিশটা ভিজে উঠেছে অনেকটা। সবটা কেমন উলটপালট হয়ে গেল এক লহমায়।
অনুরাগ মশারি টাঙিয়ে দিল। দেখলো আয়না ঘুম। আয়নার শাড়ির আঁচলটা তার জায়গায় পড়ে আছে। তাই সে ধীরেসুস্থে শাড়ির আঁচলটা দিয়ে দিল তার গায়ে। আয়না চট করে ফিরে তাকালো। চোখের কোণা ভেজা। শাঁড়ির আচলটা সরিয়ে অনুরাগের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ নিন। এভাবে কি দেখছেন? আমি কি কিছু বুঝিনা ভেবেছেন? একা একটা ঘরে এত কাছে পেয়ে পুরুষত্ব ফলাতে ইচ্ছে করছে না? অতটা ভালো মানুষ তো আপনি নন।

অনুরাগ রোষপূর্ণ চোখে তাকালো। বলল

‘ কারণে অকারণে ভুল বুঝাটা তোমার পেশা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সারা বিছানায় শাড়ি মেলে শুলে সেখানে আমার কি করার থাকে? শাড়ির উপর শুলে তো অন্য কথা বলতে।

বলেই ফিরে শুয়ে পড়লো অনুরাগ।
আয়না ফোঁসফোঁস করতে করতে ফিরে গেল। পা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিল পায়ের নিচের কাঁথা। টান দিয়ে মশারির এককোণ ছাড়িয়ে নিয়ে মশার কামড় খেয়ে খেয়ে ঘুমালো।
অনুরাগ মাঝরাতে উঠে আবার মশারি টাঙিয়ে দিল। আয়না টের পেয়ে পুরো মশারিটা খুলে ছুঁড়ে ফেলল। মশারির ভেতর তার দমবন্ধ লাগছে নাকি অন্য কোনো কারণ তা বেশ ভালো করে টের পেল অনুরাগ।
আয়না সকাল সকাল ঘুম থেকে বলল
‘ মশা সারারাত খেয়েছে আমাকে এই লোকের জন্য।
অনুরাগ তা শুনে বলল
‘ ভাগ্য ভালো মানুষে খায়নি। ইন্ডাইরেক্টলি চরিত্রহীন উপাধিতে ভূষিত করলে। চরিত্রহীন হইনি বলে কুহেলী অন্যের কাছে গিয়েছিল।
আয়না চমকে তাকালো। বলল
‘ জঘন্য মানুষের মুখে জঘন্য কথায় মানায়।
‘ আমি জঘন্য, তুমি অনন্য হও।

চলবে,

#আয়নামতী
#পর্ব_২৬
#পুষ্পিতা_প্রিমা

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বইচ্ছায় পদত্যাগ করা অনুরাগ চৌধুরীকে দেখার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভীড়। তাদের মতে স্যার সাদাসিধে, সরল মনের এবং বেশ পরোপকারী একজন শিক্ষক। সাহায্যর জন্য যখনি স্টুডেন্টরা ছুটে এসেছে খালি হাতে কখনো ফিরিয়ে দেননি। তবে তার রাগ সম্পর্কে বিস্তর ধারণা না থাকলে ভয়ংকর এক ঘটনার কথা ছাত্রছাত্রীদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ১ম বর্ষের এক মেয়ের সাথে অভদ্র আচরণ করায় ৩য় বর্ষের ইংরেজি বিভাগের একটা ছেলেকে লোকসম্মুখে চড় মেরেছেন। এতটা ক্ষেপে গিয়েছিলেন যে ছেলেটাকে অনেক পোহাতে হয়েছিল। মেয়েটার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল লোকসম্মুখে। অভিভাবকদের সাথে ও অনেক ঝামেলা চুকাতে হয়েছিল এরজন্য। থানা পুলিশ কেসফেস অনেক হয়েছিল।
যা এখনকার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় না।
কতিপয় সাংবাদিক অনুরাগকে যখন বিদায়বেলায় ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে দেয়া হয় তখন সে বলল

‘ আমি যখনই পড়াতে আসি তখনই নিজেকে শিক্ষক ভেবে পড়াই না। আমি তাদের একজন বন্ধু হয়ে উঠি তখন। যাতে তারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে আমাকে এবং আমার পড়াকে। আমি শুধু তাদের শিখাই না, আমি ও তাদের কাছ থেকে অনেককিছু শিখি। সবার উদ্দেশ্য যা বলব তা হলো,
আমি চাই প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট শুধু মেধাবী নয়, একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। সবকিছুর আগে প্রয়োজন মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ।
‘ বিদায়বেলার অনুভূতিটা কেমন?

অনুরাগ বলল,
‘ some feelings that cannot be expressed. Which are unpublished and invisible. That’s it for me.
সত্যি বলতে গেলে আমি এতদিন একটা গন্ডির ভেতর শিক্ষক হিসেবে ছিলাম। কিন্তু আজ থেকে আমাকে এই গন্ডির বাইরের মানুষ আমাকে ও শিক্ষক হিসেবে চিনবে। তাই খুবি এক্সাইটেড এন্ড দিনটা ইনজয় করছি।

‘ কোনো বাজে স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে?

‘ নাহ।

ডোন্ট মাইন্ড স্যার। শুনেছি অনুরাগ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীর লুকায়িত প্রেমিকপুরুষ। এই বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

‘ গুজব শব্দটা বোধহয় এজন্যই আবিষ্কার হয়েছে। আমার কখনো এমনটা মনে হয়নি। আর যদি হয়ে ও থাকে তাহলে বলব এসব তাদের বয়সের দোষ।

‘ প্রফেসর অনুরাগ চৌধুরী রিসেন্ট বিয়ে করেছেন। শোনা গেছে আপনার মিসেস গ্রামের একটি ন্যাশনালে ইউনিভার্সিটিতে ১ম বর্ষে পড়ে। আপনার সাথে কেমন বেমানান হয়ে গেল না?

‘ আমিই তার সাথে বেমানান। সে নয়।

‘ আপনি কেন?

‘ কারণ সে ভীষণ বুদ্ধিমতী আর আমি বোকা। বোকার সাথে বুদ্ধিমতী অবশ্যই বেমানান।

‘ ঢাকা শহরের এত বড় বড় মানুষের সাথে আপনার লেনদেন, যোগাযোগ, উঠাবসা । আপনি গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করলেন কেন?

‘ ফ্যামিলি আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। সো ফ্যামিলির পছন্দ।

‘ আপনার প্রথম স্ত্রী নিয়ে কিছু বলতে পারি।

‘ অবশ্যই, কেন ভয় পাব?

‘ ওনি তো চলচ্চিত্রের একটি জনপ্রিয় মুখ। সম্প্রতি মহিবুল হাসানের সাথে তার ডিভোর্স হয়েছে। আপনার কথাই বলি,যে মানুষটা নিয়ে মানুষ এতটাই পঞ্চমুখ তার সাথে কেন ডিভোর্স হলো কুহেলী সরকারের?

‘ আমার মনে সে উত্তরটা ভালো বলতে পারবে। কারণ তার সাথেই কেন বারবার ডিভোর্স হয়?

‘ আমরা কারণটা জানতে চাই।

‘ সে একজন অভিনেত্রী। আমি তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলে তার ক্যারিয়ারে ব্যাড এফেক্ট পড়বে। আমি তা চাই না। সে তার মতো থাকুক।

‘ আপনার বর্তমান স্ত্রী আর আপনার সম্পর্কটা কতটা মজবুত? কুহেলী সরকারের মতো হবে না তো?

‘ যেখানে মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা নেই সেখানে একটি সম্পর্কের নিশ্চয়তা আমি আপনাকে কি করে দেব? তবে এটুকু বলতে পারি। আমি আমার সবটা দিয়ে সম্পর্কটাকে চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করব। তাদের দুজনের মধ্যে তুলনা করতে চাইলে, পাতালে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট আর আকাশের চাঁদের সাথে তুলনা করতে পারেন। অবশ্য সেটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। তুলনাই হয় না।

‘ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে রাজনীতির মাঠে পা দিয়েছেন। মনে কোনো ভয় কিংবা উত্তজেনা কাজ করছে?

‘ ভয় নেই তবে উত্তেজনা এবং সাহস পাচ্ছি। আর জনগণের সাপোর্ট ততটাই পাচ্ছি যতটা আমি আশা করিনি।

‘ কি কি উৎখাত করতে চান এই সমাজ থেকে? আর কি প্রতিষ্ঠা করতে চান?

‘ এই সমাজের আনাচেকানাচে যে ব্যাধিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেসব উৎখাত করব। পথশিশু, অনাথ,এতিম, আর অবহেলিত মানুষগুলো অধিকার আদায়ের পক্ষে লড়বো। রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি, দস্যুতন্ত্র, সৈরতন্ত্র চলছে সব দূরীভূত করে একটি সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই আমার এই মাঠে নামা।

‘ আপনার জীবনের সফলতার মূল চাবিকাঠি কোনটি?

‘ মায়ের দোয়া।

‘ আর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা ?

‘ সোজাসাপটা না হলে ও, ইন্ডাইরেক্টলি আমার স্ত্রী।

‘ স্ত্রী কি করে অনুপ্রেরণা হয়?

‘ কারণ সে একদিন আমায় বলেছিল। মানুষের জন্য কিছু করতে পারেন না? এই যে এত এত অন্যায় অবিচার হচ্ছে রোজ রোজ, সেসব রুখে দিতে পারেন না। ওই কথাগুলোকে আমি অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছি৷

‘ বুঝাই যাচ্ছে পার্ফেক্ট একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছেন? কি নামে ডাকেন আপনি তাকে?

‘ আয়নামতী।

‘ অনেক সুন্দর।

_______________

কাপড়চোপড় নিয়ে আয়না ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে। শেষমেশ বিরুক্ত হয়ে তেজগলায় বলল

‘ আপনি কি আজকে সারাদিন ওখানপ বসে থাকবেন পণ করেছেন? গোসল নিতে এতক্ষণ লাগে। কোথা থেকে কি নোংরা মেখে এসেছেন কে জানে?

অনুরাগ ভেতর থেকে বলল

‘ তোমার সমস্যা কি?

‘ আমি অনেক্ক্ষণ ধরে গোসল করব তাই দাঁড়িয়ে আছি। দেরী হলে গেলে খাবার টেবিলে কথা আমাকেই শুনতে হবে।

অনুরাগ দরজা খুলে দিল। বলল

‘ হয়ে গেছে আমার। প্যানপ্যানানি বন্ধ করো।

আয়না বলল

‘ বের হন তাড়াতাড়ি। বের হচ্ছেন না কেন?

অনুরাগ দরজা খুললো ভালো করে। টান দিয়ে আয়নাকে ভেতরে নিয়ে গেল। উদাম গায়ে আয়না তাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো। বলল
‘ ছিঃ অসভ্য বেয়াদব লোক। ছাড়েন। যান। আল্লাহ আমি এখন নিজের মাথা নিজে ফেটে ফেলব।
অনুরাগ উচ্চস্বরে হেসে দিল। ঝর্ণার নিচে দাঁড় করিয়ে পানির টেপ ছেড়ে দিল। বলল
‘ গরম মাথা তুমি ঠান্ডা হও।
আয়নার চেঁচিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। রাগে সব এক এক করে ভাঙতে ইচ্ছে হলো। অনুরাগ নাক টেনে দিয়ে বলল
‘ আহা রাগ!
আয়না নাক ঝামটে বলল
‘ অভদ্র লোক।
অনুরাগ আবার ও হাসলো। বলল
‘ রাগী বউ আমার। কপাল কপাল। সবই কপাল।
আয়না ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল
‘ আপনি যদি না যান এখন? আমি?
‘ কি করবে তুমি?
‘ চেঁচাবো। চামেলি আপা আর জমিলা আপাকে ডাকব। ডাকি?
‘ ডাকো।
আয়না থতমত খেল। বলল
‘ আপনি ওই,, ভালো হচ্ছে না।
অনুরাগ হো হো করে হেসে বলল
‘ ভাইরে ভাই যাহা পারিবে না তাহা বলিতে যাও কেন?
আয়না তাকে ধাক্কা দিল। বলল
‘ এক্ষুণি বের হয়ে যান। আল্লাহ আমি এখন কি করব নিজে ও জানিনা।
অনুরাগ এসে মুখ চেপে ধরলো তার।বলল
‘ গলার আওয়াজ তো নয় যেন ভাড়া করা মাইক। ফালতু মেয়ে।
আয়নার চোখো আগুন। অনুরাগ মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল। আয়না ভয়ার্ত চোখে বলল
‘ একদম শেষ করে দেব। খবরদার।
অনুরাগ দ্রুত সরে গেল। নাকতুলে বলল
‘ ইয়াক মাছের গন্ধ, পেঁয়াজের গন্ধ। ধুরর রাক্ষসী রান্নাঘর থেকে এসেছ বলবে না।
আয়নার চোখে জল জমে এল। অনুরাগ বলল
‘ ওমা রাক্ষসীর চোখে জল? বাপরে বাপ। আমি গিয়ে সবাইকে বলে আসি।
আয়না ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল তাকে। তারপর ধপাস করে দরজা বন্ধ করলো। চামেলি ঠিক তখনি এসে বলল
‘ চাহেব বৌরাণি কুনহানে গেছে?
‘ গোসল সাড়তে।
চামেলি লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলল। বলল
‘ আইচ্ছা মুই যাইতাছি। আবার আসুম।
অনুরাগ তার হাসির রহস্য ভেদ করতে পারলো না। মেয়েমানুষ মানেই রহস্য।

________

নদীটার নাম কানুয়া। নদীর নামানুসারে গ্রামটার নাম ও কানুয়া। নদীর প্রায় দশ বারো মিনিট পথ ফেরোতেই একটি বড় বাসভবন। এটি শায়খ চৌধুরীর। বাড়িটা অনুরাগের নামে। সেখানে বিচিত্র মাল্টিমিডিয়া থেকে একদল অভিনেতা আর অভিনেত্রী এসেছে নাটকের শুটিং করতে। দলে দলে গ্রামের মানুষ ছুটছে শুটিং দেখার জন্য। রূপা ও তার ব্যতিক্রম নয়। লোকজনের ভীড়ে সে ও গেল সেখানে। কুহেলীকে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তার। এই মহিলা এখানে ক্যান আসছে আবার। বেয়াদব।

নাটকের শুটিং শুরু হবে পরের দিন থেকে। নদীর পাড়ে দুই তিনটা সিন নিতে হবে। তারপর গ্রামের কোন এক কুটির বাড়িতে। যেখানের জায়গাটা খুব সুন্দর দেখতে হবে। এবং ছবির মতোই দেখাবে। ডিরেক্টর আজমল খয়রাত খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো আয়নামতীর বাগান নামের একটা বাগান আছে, ওখানে একটি ছোট্ট কুটি বাড়ি আছে। যেটাতে রূপা আর ফজলু মিয়া থাকতো। আজমল খয়রাত দেখতে আসলো। জায়গাটা খুব পছন্দ হওয়ায় ভাড়া চাইলো কয়েকটা দিনের জন্য। আয়নার কাছে খবর এল রহমত মিয়ার হাত ধরে
আয়না শুরুতেই দিতে চাইলো না। ডাবল টাকা দিবে বললে ও না।
কিন্তু শায়লা বেগম বলল
‘ টিভিতে তোমার বাগান দেখা যাইবে নাতবউ। ভালো হবে। রাজী হয়ে যাও।
আয়না রাজী হলো। শর্ত লিখে পাঠালো যাতে বাগানবাড়ির কোনো ক্ষতি না হয়। কুটিবাড়ির কোনো ক্ষতি না হয়।

অনুরাগ বাড়িতে আসতেই কানে এল খবরটা। বলল
‘ ভালো। আয়নামতীর বাগান তাহলে এবার নাটকে দেখাবে। ভালো।
আয়না বলল
‘ ভালো তাই দিয়েছি। আপনাকে অত ঘটা করে বলতে হবে না।
অনুরাগ হাসলো। বলল
‘ একা একা ওই বাগানবাড়িতে যাবে না। সাথে রহমত মিয়াকে রাখবে।
‘ কেন? আমি ছোট বাচ্চা নই।
‘ যেকোনো কথাকে অগ্রাহ্য করবে না আয়নামতী। আমি তোমার শত্রু নই যে তোমার ক্ষতি চাইবো?
‘ বন্ধু ও তো নন।
অনুরাগ আর কথা বাড়ালো না। চলে গেল।

_________

বাগানের আগাছা পরিষ্কারের জন্য দুইজন মহিলা নিয়োগ দিয়েছে আয়না। নিজে তো ছিলই। শাড়ির উপর ওড়না পড়েছে। চৌধুরী বাড়ির পেছনে হওয়ায় একদম আনহিতা আর শায়লা বেগমের নখদর্পনে সে। শুটিংয়ের কাজে অনেক মানুষ চারপাশে। কিন্তু অনুরাগ দারোয়ান রাখায় অনুমতি ব্যতীত কেউ বাগানে ঢুকতে পারেনা। তাই আয়নার সমস্যা ও নেই। বাগান পর্যবেক্ষণের সময় মনে হলো কারো সাথে কথা কাটাকাটি চলছে দারোয়ানের সাথে। আয়না সেদিকে এগোলো। দেখলো গলার সাথে ওড়না ঝুলিয়ে সেলোয়ার-কামিজ পড়া একটা মেয়ে। গায়ের কাপড় এতটাই ফিট যে দেখতে বাজে লাগছে আয়নার চোখে। আয়না এগিয়ে গেল। বলল
‘ কি হয়েছে মামা?
দারোয়ান ভড়কে গেল আয়নাকে দেখে। মেয়েটি তাকালো আয়নার দিকে। আগাগোড়া আয়নাকে দেখলো। বলল
‘ তুমি কে?
আয়না উল্টো জিজ্ঞেস করলো
‘ আপনি কে?
মেয়েটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসলো। হেঁটে কিছুদূর গিয়ে টান মেরে গাঁদাফুল ছিঁড়ে নিল। বলল
‘ তুমি চিনবে না আমায়। বাদ দাও।
আয়না ফিরলো সেদিকে। মনে করার চেষ্টা করলো কোথায় যেন দেখেছে সে এই মেয়েকে। কোথায় দেখেছে?
আয়না কিছু জিজ্ঞেস করলো না মেয়েটিকে। মেয়েটি নিজেই বলল
‘ তুমি আমার ছোট তাই তুমি করে বলছি। কিছু মনে করছ না তো?
আয়না বলল
‘ কি করে বুঝলেন?
‘ বুঝে গিয়েছি। আমার চোখ অনেক গভীর।
‘ তোমার বিয়ে কবে হয়েছে?
‘ বেশিদিন নয়। কেন?
‘ এমনিই বলছি।
‘ বাগানটা তো অনেক সুন্দর। তোমার নাম কি?
‘ আফসানা আহমেদ আয়না।
‘ আয়নামতীর বাগান কেন? আয়নামতী কে ডাকে?
আয়না সাইনবোর্ডটার দিকে তাকালো। আয়নামতীর বাগানবিলাস। উফফ ওই লোকটা তাকে মেরেই ছাড়বে। এসব দেওয়ার কি দরকার ছিল ?
‘ কি হলো চুপ কেন? তোমার স্বামী আদর করে ডাকে বুঝি?
আয়নার গলায় কথা আটকে গেল। বলল
‘ আপনি বোধহয় নাটকদলের সাথে এসেছেন?
‘ হ্যা। কথা ঘুরাতে তো ভালোই জানো। পিচ্চি তবে অনেকটা ম্যাচিউর।
‘ আমি পিচ্চি?
‘ হ্যা। আমার ঠিক চার পাঁচ বছরের ছোট হবে তুমি।
‘ ওহহ।
‘ তোমরা গ্রামের মেয়ে, তাই লেখাপড়া না করে শুধু বিয়ে আর বিয়ে। বিয়ে ছাড়া কিছুই বুঝোনা তোমরা। আমার এটাই ভালো লাগেনা।
‘ আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। প্রথম বর্ষ।
পিছু ফিরে আবার আয়নার দিকে তাকালো মেয়েটি। বলল
‘ তাই নাকি? ডিফারেন্ট। তুমি খুব সুন্দর। অভিনেত্রী হতে পারতে। সুযোগ আসলে কি হবে?
‘ নাহ।
‘ কেন?
‘ আমার আম্মা আব্বা পছন্দ করবে না। আমার ও পছন্দ নয়। আবার অপছন্দ এমন ও নয়। আমি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। রক্ষণশীল পরিবারের বউ। তারা এসব পছন্দ করবে না। আমি কারো অপছন্দের কাজ করব না।
তোমার হাজবেন্ড কি করে?
আয়না বলার সময় থামলো। পরে বলল
‘ শিক্ষক এবং রাজনীতিবিদ।
‘ ভালোই। তোমার স্বামী কয়টা বিয়ে করেছে?
‘ আপনি কি করে জানলেন? প্রশ্নটা তো ব্যক্তিগত।
‘ আমি সব জানি। কয়টা করেছে বললে না তো। তুমি আছ নাকি আর ও অনেকে আছে।
আয়না বলল
‘ কিসব বলছেন? আপনি কি কি ওনাকে চেনেন?
মেয়েটি হেসে ফেলল। আরও কিছু বলার আগে বাগানে অনুরাগ ঢুকে এল আয়নামতী ডেকে ডেকে। কুহেলীকে দেখে চোখদুটো স্বাভাবিকের চাইতে বড় হলো। কপাল কুঁচকে গেল। মেজাজ গরম হলো। আয়না বলল
‘ আমি যাচ্ছিলাম।
অনুরাগ এসে ধরলো আয়নার হাত। টেনে নিয়ে গেল। কুহেলী ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। আবার আরেকটি ফুল ছিঁড়লো। বলল
‘ এই মেয়ের নামই তাহলে আয়নামতী!

আয়না হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
‘ বলদের মতো টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আশ্চর্য! আমার উপর সব জোর কাটান। নাকি আপনার সব বউয়ের সাথে? আর কয়টা বিয়ে করে রেখেছেন আপনি? আমি কত নাম্বার? আর ও কয়টা করবেন । আপনার মতো লম্পট বেয়াদব, আর অসভ্য মানুষ খুবই কম দেখেছি।
অনুরাগ নিজেই আয়নার হাতটা ঝেড়ে ফেলে দিল। রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল।
আয়নার চোখে তখন জল। শেষমেশ এমন চরিত্রহীন লোকই তার কপালে জুটলো?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here