#নিখোঁজ_প্রেমের_শহরে,পর্ব ৪,৫
লেখিকাঃ আতিয়া আদিবা
পর্ব ৪
ঈর্ষা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে। কিন্তু কি ঘটেছে তা বুঝতে পারছে না। অতি ভয়ংকর কিছু ঘটলেই তার বাবার চোখ লালবর্ণ ধারন করে। শ্বাস প্রশ্বাস ভারী হয়ে যায়। গলার স্বর গম্ভীর শোনা যায়। কিছুক্ষণ আগেই ড্রইং রুমের টেলিফোনটা বাজছিলো। টেলিফোন ধরে বাবা হাসিমুখে কথা বলতে শুরু করেন। হো হো হাসির আওয়াজ ঈর্ষা অন্য ঘর থেকে শুনেছে। বাবার চোখ লালবর্ণ হওয়ার সাথে টেলিফোনের যোগসূত্র থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। হেফাজত গম্ভীর গলায় ঈর্ষাকে বললেন,
বর্ষা কোথায়?
আপা মনে হয় ছাদে গিয়েছে।
হেফাজত করিম উচ্চস্বরে বললেন,
ওকে এক্ষুণি ছাদ থেকে নামতে বল। আমার সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ানো হচ্ছে? দুই মিনিটের মধ্যে বর্ষাকে আমার সামনে উপস্থিত হতে বলবি।
রুমানা রান্নাঘরে কাজ করছিলো। বসার ঘরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সে ছুটে আসলো। নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
কি হয়েছে? কি হয়েছে? এত চেঁচামেচি করছো কেনো?
চেঁচামেচি করবো না? তোমার মেয়ের একবার আমার নাক কেটে শান্তি হয় নি! নতুন করে নাক কাটার পরিকল্পনা করছে। এই ঈর্ষা, তুই দাঁড়িয়ে রইলি কেনো? ছাদে ল্যান্ড করার জন্য কি এখন হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করতে হবে? আর শোন, খবরদার বোনের লেংগুর ধরে এঘরে আসবি না। আমি না বলা পর্যন্ত মায়ের ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকবি।
ঈর্ষা মাথা ঝাঁকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
হেফাজত করিম বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
সব শেষ করে দিলো মেয়েটা আমার। রাস্তায় নেমে মুখ দেখাতে লজ্জা লাগে। বড় হয়ে এমন কাহিনী করবে জানলে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।
রুমানা বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
কি বলছো তুমি এসব? বাবা হয়ে এমন কথা তোমার মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে কিভাবে!
কিভাবে বেরুচ্ছে দেখছো না? সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছো! বংশের নাম ডুবিয়েও ক্ষান্ত হচ্ছে না। একদম মিটিয়ে দিতে চাইছে তোমার মেয়ে।
মেয়ের জীবনের চেয়ে সম্মান বড়?
অবশ্যই বড়।
রুমানা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। তার উচিত এঘর থেকে এখন বেরিয়ে যাওয়া। এমন অপমানজনক কথার পরেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বেমানান। কিন্তু সে দাঁড়িয়ে আছে তার মেয়ের জন্য। বড় মেয়ের জন্য তার বুকটা ভীষণ পুড়ে!
বর্ষা ছাদের কোণায় বসে আছে। এই কোণা থেকে আকাশ দেখতে ভালো লাগে। আকাশ দেখতে দেখতে সে কত কিছু ভাবে। বছরের তিনটে পার হতে পারে নি এর মাঝেই উঁচু উঁচু কয়েকটা বিল্ডিং হয়ে গেছে। সময় যায়, দিন যায়। তার সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছু বদলে যায়। নির্দিষ্ট একটি সময়ে সূর্য ওঠে, আবার ডুবে যায়। চাঁদ ওঠে আবার আলো ফুটলে হারিয়ে যায়। গাছের পাতা ঝরে যায়, মরশুম বদলালে আবার নতুন করে গজায়। সবাকিছু নিজের মাঝে নতুনত্ব নিয়ে বেঁচে ওঠে প্রতিনিয়ত। শুধু মানুষের জীবনটা আলাদা। খুব আলাদা। তারা নতুন করে বেঁচে ওঠতে পারে না। অতীতকে সাথে নিয়ে তাদের সামনে অগ্রসর হতে হয়।
বর্ষা ছাদে আসার সময় কিছু খাবারের দানা সাথে করে নিয়ে আসে। আজও এসেছে। সেগুলো ছাদে ছড়িয়ে দিতেই কই থেকে যেনো অনেকগুলো পাখি উড়ে আসলো। পাখিরা হয়তো তার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। তারা জানে, দিনের এই সময়টায় এবাড়ির ছাদে খাবার পাওয়া যায়।
সিড়ি দিয়ে কারো আগমনের আওয়াজ সুনিশ্চিত। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঈর্ষা এসেছে। মেয়েটার চোখে মুখে ভয়। সে কাঁপা গলায় বলল,
আপা, বাবা তোমাকে ডাকছে। অনেক রেগে আছে।
গতকাল রাতেও বললি বাবা রেগে আছে। কিন্তু উনি তো রেগে ছিলেন না।
আজ সত্যিই রেগে আছেন। অনেক চিল্লাচিল্লি করছে।
কেনো?
আমি সঠিক জানি না তবে অনুমান করতে পারছি।
কি অনুমান করলি?
একটা টেলিফোন পাওয়ার পর থেকে বাবা রেগে আছে। মনে হয় ছেলের বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছিলো। আপা, সত্যি করে বলো তো। তুমি কি এবারো বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে চাইছো?
বর্ষা দেখলো ঈর্ষার চোখে পানি টলটল করছে। উপচে পরবে পরবে অবস্থা। ছোট বোনটা তাকে অনেক ভালোবাসে। বর্ষার ভীষণ ইচ্ছে করছে ঈর্ষাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে চুমু খেতে। মাঝে মাঝে ইচ্ছেগুলো ইচ্ছেই থেকে যায়। তা পূরণ করা আর সম্ভব হয় না। সে বড় করে শ্বাস নিলো। ফ্যাকাসে হেসে ঈর্ষাকে বলল,
চল নিচে যাই।
বর্ষা ড্রইং রুমে ঢুকলো। হেফাজত করিম এর মাঝেই নিজেকে কিছুটা শান্ত করেছেন। চিৎকার করে আর যাই হোক এই সমস্যার সমাধান হবে না। মেয়ের সাথে খোলসা করে কথা বলা প্রয়োজন। সে স্বাভাবিক গলায় মেয়েকে বলল,
বোস।
বর্ষা বসলো।
পাত্রের মা ফোন করেছিলেন। তিনি বললেন, তুই ছেলেকে কন্ট্র্যাক্ট ম্যারেজের অফার দিয়েছিস। কথা কি সত্যি?
প্রতিটা ম্যারেজই কন্ট্র্যাক্ট বাবা। সিভিল কন্ট্র্যাক্ট।
অতিরিক্ত কথা বলবি না। শুধু হ্যা অথবা না জাতীয় উত্তর দিবি।
আচ্ছা।
ছেলেকে কন্ট্র্যাক্ট ম্যারেজের অফার দিয়েছিস?
হু।
কেনো? ছেলেকে তোর পচ্ছন্দ হয় নি?
বর্ষা চুপ করে রইলো।
হেফাজত এবার উঁচু গলায় বললেন,
চুপ করে থাকবি না অসভ্য মেয়ে কোথাকার! এই ছেলেকে পচ্ছন্দ না হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না। তাও যদি পচ্ছন্দ না হয়ে থাকে আমা্কে সরাসরি বলতে পারতি। মানুষের সামনে আমার সম্মান নিয়ে ফুটবল খেলে বেড়াচ্ছিস! এমনিতেই তোর বিয়ে নিয়ে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। নিজের সম্মানের মাথা তো আগেই খেয়েছিস। লোকে দেখে নাক সিটকায়। দশজনকে দাড়া করিয়ে তোর সম্পর্কে জানতে চাইলে আটজনই যাচ্ছেতাই বলে দিবে। আল্লাহর করুনায় যাও দু একটি জাতের প্রস্তাব আসে। কদিন পর তাও আসবে না। তখন কি করবি?
যেটাই করি অন্তত তোমাদের গলার কাটা হয়ে থাকবো না।
এসব ফিল্মি ডায়লোগ আমার সামনে দিও না। অসভ্য মেয়ে কোথাকার। বাস্তবতা সম্পর্কে কি ধারনা আছে তোমার? মুখের ওপর তর্ক করছো!
বর্ষা সহজ কণ্ঠে বলল,
বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলেও নৈতিকতা আছে আমার মাঝে।
কিসের নৈতিকতার কথা বলছিস তুই?
আমি অতীত ছাপিয়ে কাউকে বিয়ে করতে চাই না, বাবা। আর সত্যিটা জেনে তোমার জাতের পাত্ররা আমাকে বিয়ে করবে না।
তাহলে তুই কি করতে চাস? আজীবন আমার ঘাড়ে বসে খেতে চাস?
না। তোমার ঘাড়ে বসে আর খাবো না। আমাকে কটা দিন সময় দাও, নিজের ব্যবস্থা আমি নিজে করে নিবো।
কি করবি তুই?
প্রয়োজনে ভিক্ষা করবো। তাও তোমার কাছ থেকে একটা টাকাও আমি নিবো না।
বর্ষা নিজের ঘরে ফিরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। বুক ভেঙ্গে কান্না আসছে তার। মাথার বালিশ কোলের ওপর রেখে মুখ চেপে ধরলো সে। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। তার কান্নার শব্দ চার দেয়ালের মাঝেই বন্দী হয়ে রইলো।
লেখনীতে, আতিয়া আদিবা
চলবে…
. #নিখোঁজ_প্রেমের_শহরে
(পর্বঃ পাঁচ)
ঈর্ষার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে বর্ষার। সে শোয়া থেকে উঠে বসে। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টের পায় নি। তবে বেশ আরাম করে ঘুমিয়েছে সে। দীর্ঘসময় ধরে কান্না করলে চোখজোড়া ক্লান্ত হয়ে পরে। ঘুম ভালো হয়।
বর্ষা চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। কয়টা বাজে সে অনুমান করতে চাইছে। কিন্তু করতে পারছে না। তাদের ঘরে কোনো ঘড়ি নেই।
ঈর্ষা হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা বলল,
আমি খাবো না।
ঈর্ষা অনুনয়ের স্বরে বলল,
আপা, সকালে তোমার পেটে দুটো দানা পরেছে কি পরে নি! তা নিয়ে পুরো দিন পারি করে দিবে? একটু খেয়ে নাও।
বললাম তো খাবো না। খিদে নেই। কানের কাছে প্যান প্যান করিস না তো।
আমি তো প্যানপ্যান করছি না।শুধু বলছি খাবার খেয়ে নাও।
খাবার খেতে বলা আর কানের কাছে প্যানপ্যান করা একই।
ঈর্ষা চুপ করে রইলো।
বর্ষা আবার বলল,
খাম্বার মত দাঁড়িয়ে থাকবি না প্লিজ। অন্য ঘরে যা। মন মেজাজ ভালো নেই। গালে থাপ্পর বসিয়ে দিবো।
ঈর্ষা থাপ্পর খাওয়ার ভয়ে তার বড় বোনের আদেশ অর্ধেক পালন করার সিদ্ধান্ত নিলো। সে প্যান প্যান করা বন্ধ করলো। কিন্তু অন্য ঘরে গেলো না। খাবার হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। প্যানপ্যান করলে সত্যিকার অর্থেই থাপ্পর খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু অন্য ঘরে না গেলে সম্ভাবনা নেই। এই ঘর তার বোনের একার না, সেও অংশীদারি।
বিকালের দিকে বর্ষা ফুরফুরে মেজাজে রান্নাঘরে ঢুকলো। রুমানা খাবার বাটিতে বারছে। ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখা হবে। আমেনাকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। বর্ষা সহজ গলায় জিজ্ঞেস করলো,
মা, আমেনা কোথায়?
ছাদে। কাপড় তুলতে গিয়েছে। কেনো?
আমি এক কাপ চা খাবো।
তা বেশ তো। আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
না। তোমার বানানো চা খাবো না। আমেনার বানানো চা খাবো। ওর বানানো চায়ের স্বাদ ভিন্ন।
কেমন ভিন্ন?
ভিন্ন মানে আলাদা। অন্যরকম মজা। এরকম মজার চা তুমি বানাতে পারবে না।
রুমানা নিচু স্বরে বলল,
তুই এভাবে বিয়েটা না ভাঙ্গলেও পারতি।
আমি বিয়ে ভাঙ্গি নি মা। বিয়ে ভাঙ্গবে এমনটা আগে থেকেই আমার ভাগ্যে লিখা ছিলো।
তুই ছেলেকে এরকম ফালতু কথা বলবি তাও আগের থেকে ভাগ্যে লিখা ছিলো?
অবশ্যই ছিলো। ভাগ্যে লিখা ছিলো বলেই বলেছি। মা শোনো, প্রতিটি মানুষের জীবনে পূর্বে যা ঘটেছে, যা বর্তমানে ঘটছে এবং যা ভবিষ্যতে ঘটবে সব আগের থেকে লিখা। প্রি প্ল্যান্ড।
বর্ষা।
বলো, মা।
নিজের জীবনটা এভাবে নষ্ট করিস না।
বর্ষা হেসে ফেললো।
নষ্ট জিনিস নতুন করে নষ্ট করা যায় না, মা।এসব চিন্তা বাদ দাও। আমেনা আসলে ওকে বলবে ফার্স্ট ক্লাস এক কাপ চা বানিয়ে আমার ঘরে রেখে আসতে। আমি গোসলে যাচ্ছি। চায়ের কাপটা যেনো পিরিচ দিয়ে ঢেকে রাখা থাকে। আমার গোসল করতে সময় লাগবে। দেখা যাবে, আমি চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার আগেই মশা, মাছি চা খেয়ে বসে আছে।
বর্ষা নিজের ঘরে চলে এলো। তার শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে। আলমারি থেকে পুরানো একটি সুতির শাড়ি বের করলো সে। হালকা সবুজ রঙের মাঝে সাদা ছোট ছোট ফুল। শাড়িটা নিয়ে সে বাথরুমে ঢুকলো। বেসিং এর ওপর দেয়ালে ডিম্বাকৃতির আয়না। বর্ষা ভীষণ আগ্রহ নিয়ে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে লাগলো। কতদিন পর সে নিজের চেহারা আয়নায় দেখছে! চোখের নিচে হালকা কালি পরেছে। গহীন রাতের অন্ধকারের সাথে তার যে গোপন সম্পর্ক রয়েছে, চোখের নিচের কালি তার সাক্ষী। যত্নের অভাবে চামড়া খসখসে হয়ে গেছে। চেহারায় রুক্ষ্ম ভাব।
অথচ কয়েকটা বছর আগেও সে এমন ছিলো না। নিজের প্রতি ভীষণ যত্নশীল ছিলো। দিনে পনেরো থেকে বিশ বার আয়নায় নিজেকে দেখতো। বাড়িতে থাকলেও তার চোখে শোভা পেতো কালো কাজল। আর এখন আয়নায় নিজেকে দেখার ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনীহা! কি যেনো নেই। আহাঃ কি যেনো নেই!
বর্ষার চোখ আবার ঝাপসা হয়ে এলো। গাল গড়িয়ে পানি পরতে লাগলো। সে তার চোখের পানি সমগ্র মুখে ঘষে ঘষে মাখতে লাগলো।
রুমে আমেনা চা রেখে গেছে। পিরিচ দিয়ে কাপ ঢেকে রাখা। বর্ষা চায়ের কাপে চুমুক দিলো। ঠান্ডা হয়ে গেছে। চা গরম করার জন্য রান্নাঘরে যেতে হবে। চুলা জ্বালাতে হবে। পাতিলে চা ঢেলে গরম করতে হবে। সামান্য গরম চা খাওয়ার জন্য এত আয়োজন করতে ইচ্ছে করছে না বর্ষার। ঠান্ডা চা খেতে বিস্বাদ লাগে না। সে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ছাদে চলে আসলো। সিমেন্টের বেদির ওপর বসলো। চারিদিকে কুয়াশার পাতলা চাদর পরেছে। যদিও আবহাওয়া খুব একটা ঠান্ডা না। মেঘের ফাঁক ফোকর দিয়ে সূর্য তার আলো সূক্ষ্ম সূতার ন্যায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমন নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার বিকালগুলো ভীষণ সুন্দর হয়। এই সুন্দর বিকালগুলো সবসময় একা উপভোগ করতে ইচ্ছে করেনা। পাশে কারোর উপস্থিতির প্রয়োজন পরে। সেই মানুষটা ছাদে হাত ধরে হাঁটবে। চায়ের কাপে ভাগ বসাবে। গুটুর গুটুর করে গল্প করবে। বর্ষার ভাবতে লাগলো।
তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য কার উপস্থিতি এখন প্রয়োজন?
একে একে তার পরিচিত প্রতিটি মানুষকে সে কল্পনা করতে লাগলো। মা এবং বাবা অতি আবেগপ্রবণ। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, বিয়ে সংক্রান্ত আলাপ ছাড়া অন্য কোনো আলাপ তাদের সাথে করা সম্ভব না। ঈর্ষা অথবা শাহানার সাথে কথা বলতে ভাল্লাগবে। কিন্তু বিকালের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে না। তবে কার থাকা উচিত ছিলো?
বর্ষার মাথায় একজনের নাম আসলো। সে সিমেন্টের বেদি ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এই মানুষটাকে নিয়ে অল্প কিছুক্ষণের জন্য তার কল্পনায় জগতে হারিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
বর্ষা হাঁটতে শুরু করলো। তার পাশে কল্পনার সেই মানুষটিও হাঁটছে।
কেমন আছেন?
ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?
জ্বি ভালো আছি। আপনার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে আজ ফোন করা হয়েছে।জানেন?
জানি।
আমাদের বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো।
হু।
আপনি খুশি হয়েছেন?
না।
কেনো হোন নি? আমার মত খারাপ মেয়েকে বিয়ে করে খুশি হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখি না।
আপনি খারাপ মেয়ে?
অবশ্যই খারাপ মেয়ে। সাথে দুশ্চরিত্রা।
হোয়াট ইজ ‘দুশ্চরিত্রা?’
দুশ্চরিত্রা মানে বোঝেন না?
না।
বুঝবেন কিভাবে? ইংলিশ পড়তে পড়তে তো বাংলা ভুলে গেছেন। আপনাদের মত লোকদের কি করা উচিত জানেন?
কি করা উচিত?
নিতম্বে লাত্থি দিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।
‘নিতম্ব’ কি জিনিস আবার?
‘নিতম্ব’ মানে প্রগতীপন্থি। সহজ বাংলায় পাছা।
ও আচ্ছা ‘হিপ!’ আই গট ইট।
বর্ষা হেসে ফেললো।
আপনি কি জানেন আপনি ‘দ্যা গ্রেট বলদ’?
মাত্রই জানলাম।
আজকের বিকালটা সুন্দর তাই না? শিহাব মাথা নেড়ে বলল, হু।
আপনাকে কল্পনায় কেনো ডেকেছি জানেন?
কেনো?
আমার হাত ধরে হাঁটতে। হাঁটবেন?
হাঁটবো।
আমার সাথে গুটুর গুটুর করে গল্প করবেন?
করবো।
সাথে আমার কাপ থেকে আপনি এক দুই চুমুক চাও খাবেন। যদিও ঠান্ডা হয়ে গেছে। তবুও বিস্বাদ লাগবে না।
আমি তো চা খাই না।
সেটা আমার দেখার বিষয় না। যেহেতু বলেছি খাবেন, সেহেতু খেতে হবে।
শিহাব হেসে চায়ের কাপ হাতে নিলো।
সূর্য পশ্চিমে হেলে পরেছে। শেষ বিকালের আলো কুয়াশার পর্দা ভেদ করে ছুঁয়ে দিচ্ছে সব। কেমন অদ্ভুত এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা রেলিং ঘেঁষে একা দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে। পূর্ব দিকের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি শোনা গেলেই ঘরে ফিরে যাবে সে।
চলবে
লেখিকাঃ আতিয়া আদিবা