পিচ্চি_বউ,part_9

0
2961

#পিচ্চি_বউ,part_9
#Writer_Kabbo_Ahammad
.
-: হঠাৎ কি যেন একটা ধাক্বা দিয়ে আমাকে শূন্যে উড়িয়ে ফেলে দিলো। পাশদিয়ে একটা বাস চলে গেলো। আমি ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় একপাশে গড়িয়ে পড়লাম। চোখদুটি রক্তে বন্ধ হয়ে আসছে। নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। অনুভব করতে পারছি কেউ একজন আমাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আর বলছে। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায় আমি তোমার মিরা। তোমার কিছুই হবে না। আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারো না তুমি। তারপর আর কিছু মনে নেই। অন্যদিকে একদল লোক এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে মিরাকে আজ পাগল পাগল লাগছে। ফোনটা বের করেই কাব্যর বাবার কাছে ফোন দিয়ে কাঁদতে লাগলো।

—কিরে, মা কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? কথা বলছিস না কেন?(বাবা)

—বাবা, কাব্য…………..

—কাব্য…..কি হয়েছে কাব্যর.?

—বাবা কাব্য একসিডেন্ট করেছে। বাবা ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। ওকে বাঁচান বাবা। আমার মেয়েটার কি হবে বাবা? আপনি প্লিজ সদর হসপিটালে আসেন।

এদিকে মিরার মুখে কাব্যর বাবা কাব্যর দুর্ঘটনার কথা শুনে তাঁর পায়ের নিঁচের মাটি সরে গেলো। তাড়াতাড়ি তার মাকে ডেকে বললো।

—কই গো কাব্যর মা চলো। হসপিটালে যেতে হবে আমাদের কাব্য একসিডেন্ট…….

কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা ধরে গেলো।

—কি হয়েছে আমার বাবার? তোমাকে বলেছিলাম আমার ছেলেটাকে আর কষ্ট দিয়ো না। কিন্তু তোমরা সবাই মিলে আমার ছেলেটাকে প্রতিরাতে কাঁদিয়েছো।
.
.
.
এদিকে হসপিটালে এসে দেখে কাব্যকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে।

মিরা কাঁদছে, রফিক সাহেব ও আসছে মিরাকে বুঝাচ্ছে। মিরা কাব্যর মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।

—মা ও কোন কথা বলছে না। ওকে ছাড়া সত্যি আমি মরে যাবো। ওই যে আমার নিঃশ্বাস। আমি বাঁচবো না মা কাব্যকে ছাড়া। ওকে চিরদিনের জন্য পাওয়ার জন্য কত কিছুই না করেছি, এখনো প্রতিরাতে তাঁর দেওয়া শেষ অবলম্বন রাইসাকে বুকে নিয়ে বেঁচে আছি।(মিরা)

তখন হঠাৎ অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই মিরা দৌড়ে গেলো।

—প্লিজ ডাক্তার বলেন, আমার স্বামী কেমন আছেন? ওর কিছু হবে না তো? প্লিজ ডক্টর চুপ করে থাকবেন না! (মিরা)

কিন্তু ডাক্তার চোখ থেকে পানি ছেড়ে দিয়ে বললো।

—দেখুন আমরা আমাদের সর্বাত্মাক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন আমাদের আর করার কিছু নেই। আল্লাহ্কে ডাকেন। তিনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে বাঁচতে পারেন। রোগী ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছে (ডাক্তার)

ডাক্তারের কথা শুনে মিরার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। চোখ থেকে টুপ-টাপ করে পানি ঝরছে।

—ডাক্তার সাহেব আমি কি কাব্যর সাথে দেখা করতে পারি? (মিরা)

—হুম জান তবে কোন কথা বলবেন না। (ডাক্তার)

এদিকে মিরা ডাক্তারের কথা মতো কাব্যর কেবিনে ঢুকতেই বুকটা হু হু করে কেঁদে দিলো।

সারামুখ বেন্ডেজ করা। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। খুব কষ্ট লাগছে মিরার কাছে। কাব্যর মায়াবী মুখটা বারবার ভেসে ওঠছে। মিরা কিছু ভাবতে পারছে না। তখন কাব্যর পা দুটি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আর কাঁদতে কাঁদতে বললো।

—কাব্য প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। আমায় ছেড়ে কোথাও যেও না। তোমার পায়ের নিচে থাকতে দিও আমায়। তোমার পায়ের নিচের যে আমার সব সুখ। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। প্লিজ আমায় ছেড়ে দিও না। তুমি না বলেছো তোমার যদি কখনো মেয়ে হয় তার নাম রাইসা রাখবে। তুমি জানো না রাইসা তোমার আর আমার মেয়ে। জানো তোমার মেয়ে জানে তুমি ওর বাবা। তোমাকে কতবার বাবা ডেকে বুকে জড়িয়ে নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি তোমাকে বাবা বলে ডাকতে দেয়নি। তুমি তোমার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিবে না। ওই আমার জীবন আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। তোমাকে ছাড়া যে আমি আমাকে কল্পনাও করতে পারি না।

(কথাগুলো বলতে বলতে পা দুটো বুকের সাথে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো আর সমানে পায়ে চুমু খেতে লাগলো)
.
.
.
.
এদিকে পিছন থেকে একজন নার্স এসব দেখে নিজের অজান্তেই কেঁদে দিয়েছে। তারপর মিরার কাধে হাত রেখে বললো।

—বোন প্লিজ এভাবে কান্না করো না। রোগীর ক্ষতি হবে। আল্লাহকে ডাকো। (নার্স)

নার্সের কথা শুনে কাব্যর পা ছেড়ে দিলাম। কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে। বাসা থেকে ফোন দিলো রাইসা নাকি খুব কাঁদছে। তাঁর বাবার জন্য কেউ তাঁর কান্না থামাতে পারছে না। রাইসা শুনেছে কাব্য নাকি একসিডেন্ট করেছে।

তারপর আমি বাবাকে বলে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হতেই এক লোক বললো।

—ম্যাডাম হসপিটালে আসার সময় আপনার হাতে এ ডাইয়িটা ছিলো।

তারপর মিরা ডাইরিটা হাতে নিয়ে বাসায় আসতেই।

—তুমি আমার বাসায় আসবে না। তুমি বাবাইকে কষ্ট দিয়েছো। আমি সব শুনেছি। তুমি আঙ্কেলকে যখন ফোনে বলেছো যে বাবাই একসিডেন্ট করেছে তাও আবার তোমার জন্য। তুমি আমাকে বাবা ডাকতে দাওনি। আমার বাবা অনেক ভালো সেদিন আমার জন্য কান ধরেছিলো। আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেছিলো। আমার গালে-মুখে পাপ্পি দিয়েছিলো। আমি বাবাই ডাকতে চেয়েও বাবা ডাকতে পারিনি। কারন তুমি ডাকতে নিষেধ করেছিলে বলে। ছোটবেলা থেকেই বাবাই এর ছবি দেখিয়ে বলেছো ওটা তোর বাবা। যেদিন বাবাইকে প্রথম দেখলাম সেদিন দৌড়ে বাবার কুলে গিয়ে বলতে পারিনি বাবাই তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। কিন্তু পারিনি, স্কুলে যখন সব ছেলে-মেয়েরা বাবার কুলে চড়ে। তখন তাঁদের বাবা জড়িয়ে ধরে আদর করে। তখন আমি তাঁদের দিকে চেয়ে থাকি। আমার খুব কষ্ট হতো তখন।

(কান্না করতে করতে কথাগুলো বললো রাইসা)

—রাইসা মামনি বাবাই ভালো হয়ে যাবে। মা আমার তুমি কেদোনা।

—তুমি আমায় মা ডাকবে না। তুমি আমার কেউ না। তুমি বাবাই কে কষ্ট দিয়েছো। আমার বাবাইকে বাবাই বলে ডাকতে দাওনি।

(কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো রাইসা)

আমি কি করবো রাইসার কথাগুলো শুনে কলিজা ফেঁটে যাচ্ছে। সত্তিতো তাঁর বাবা থেকে রাইসাকে আমি দূরে রেখেছি। বার বার কাব্যর কথা মনে পড়ছে। রফিক ভাইয়াও কিছু বলছে না। শুধু বললো।

—মানুষটাকে বড্ডবেশী কষ্ট দেওয়া হয়ে গেছেরে মিরা।

তারপর আমি দরজাটা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে, বালিশে মুখটা লাগিয়ে কাঁদতে লাগলাম। হঠাৎ মনে পড়লো কাব্য একটা ডাইরি দিয়ে গেছে। টেবিলের উপর থেকে ডাইরিটা তুলে বুকে জড়িয়ে নিলাম।

তারপর ডাইরিটা খুলতেই আমি চমকে গেলাম।
ডাইরির প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা।

“আমার এই হৃদয়ে লিখিলাম তোমারি নাম”
ডাইরির পরের পাতা উল্টাতেই,

ওগো “হৃদয়রাঙিনী”
জানিনা কিভাবে শুরু করবো। আমি যে অনেক বড় অপরাধী। তোমার অবুঝ ভালোবাসাকে আমি অবহেলা করেছি। জানো যেদিন তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি। সেদিন বুঝেছি তুমি কতটা জুড়ে আমার জীবনে ছিলে।
জানো প্রতিদিন তোমার জন্য কেঁদেছি। মাঝরাতে উঠে আল্লাহর কাছে চাইতাম যেন আল্লাহতালা তোমাকে আমার করে দেই।

প্রতিরাতে তোমার ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমাতাম। তোমার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতাম। জানো মানুষ মারা গেলে নাকি তারা হয়ে যায়। তাই প্রতি সন্ধায় আকাশের তারাদের সাথে কথা বলতাম। বলতাম যেন আমার হৃদয়রাঙিনীকে তারা যেন কষ্ট না দেয়। রাতের আকাশের সব চেয়ে উজ্জল তারাকে তুমি মনে করে কাঁদতাম আর বলতাম।

অভিমান ভেঙে এসো না জড়িয়ে নাও না তোমাতে। আমি যে আর পারছি না তোমার বিরহে। এসব বলে কাঁদতাম। কিন্তু তুমি এতটাই আমার প্রতি অভিমান করেছিলে যে যার জন্য আমার সাথে কথা বলো না।
শুধু করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে।
সত্যি কি তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না? জানো খুব ইচ্ছা করে তোমাকে এই মরুরবুকে জড়িয়ে নিয়ে শান্ত করতে আমারি প্রাণ।

মিরা জানো আজ একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে তোমার কথা বড্ড বেশী মনে পড়ছে। বাচ্চাটা দেখতে ঠিক তোমার মতই। আমি এতটাই হতভাগী নিজের বাচ্চাকে নিজের হাতে নষ্ট করেছি। জানো এখনো সেই রাতের কথাগুলো ভুলতে পারি না। তোমাকে দেওয়া প্রতিটা চড়ের আঘাত আমার কলিজাতে লেগেছে।

জানো পরের দিন যখন বাচ্চাটাকে ব্ল্যাড দিলাম। সেদিন মনে হয়েছে আমার খুব কাছের কাউকে আমি রক্ত দিচ্ছি।

বাচ্চাটার জন্মদিনে বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে নিতেই তোমার শরীরের গন্ধ পেলাম। কিন্তু যখনি সিড়িতে তোমার মতোই কাউকে দেখলাম। তখন সত্যি ভেবে নিয়েছিলাম। আল্লাহ্ আমার ডাক শুনেছে। আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন শুনেছিলাম। ওটা তুমি মিরা নও আমাকে চিনো না তখন আমার কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছিলো। যখন রফিক সাহেব এসে হাত ধরলো। আমার কাছে তখন মনে হয়েছিলো কেউ যেন আমার কলিজাটা ধুমড়ে মুচড়ে ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

জানো তুমি নেই যেনেও নিজের অজান্তে পাগলামী করেছি। আর বাসায় এসে কেঁদে বুক ভাসিয়েছি। পরের দিন ঠিক করলাম। তোমার জন্য লেখা ডাইরিটা তানিয়া আপুকে দিয়ে তোমার কাছেই চলে আসবো।

আমি যে আর পারছিনা মিরা। মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। তোমাকে ছাড়া যে এখন আমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। কষ্টটা আরো বেশী হয় যখন তোমারি মতো তানিয়া নামক মেয়েটা তাঁর স্বামীর হাত ধরে আমারি সামনে দিয়ে হেঁটে যায়। জানো তখন বড্ড বেশী তোমার কথা মনে পড়ে।
কি করবো আমি তোমাকে ছাড়া আর যে বাঁচতে পারছি না। তোমাকে নিয়ে লেখা শেষ অবলম্বনটা তোমাকে মনে করে তানিয়া আপুকেই দিয়ে গেলাম। জানো খুব কষ্ট হচ্ছে লেখাগুলো লিখতে। আমি আসছি মিরা।
.
.
.
.
ডাইরিটা পড়তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো মিরার। মিরার আজকে একটা মিথ্যার জন্যই কাব্য মৃত্যুর কিনারায়। খুব কষ্ট হচ্ছে মিরার কাব্যর মুখটা বারবার মিরার সামনে ভেসে ওঠছে। মিরার কানে বার বার বাজছে। কাব্যর লেখা শেষ কথাগুলো। মিরা এসব ভাবছিলো। আর তখনি হঠাৎ বাহিরে কিছু ভাঙার শব্দ পেলো।
.
.
চলবে……………♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here