#বেলাশেষে,পর্ব ১
#ছোটগল্প
ফ্লাগুনের রৌদ্র মেখে বাস স্ট্যান্ডে উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে সৌমিলি , এই একমাস হলো একটা কলেজে পার্ট টাইম লেকচারার জবটা পেয়েছে । শনি রবিটা বাড়িতে কাটিয়ে ছুটির রেশটা সোমবারও এসে পড়ে খানিক , সপ্তাহ ভর সময় পায়না , তাই যত কাজ ওই দুদিনেই সারতে হয় , তার উপর ছাত্রছাত্রীদের নোট বানানো , নিজের থিসিসের কাজ সব মিলিয়ে তো ঘুমাতেও সেই মাঝ রাত …. তাই তো আজ উঠতেও বেশ দেরি হয়ে গেল । সাত সকালে কোনো রকমে নাকে মুখে দুটি খাবার গুঁজে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে । কিন্তু ওই যে অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায় ___ ঠিক সেই কথাটা সত্যি করেই আজ একটাও বাসের দেখা নেই গত ১০ মিনিটে । বেজার মুখে দাঁড়িয়ে বাস এর অপেক্ষা করতে করতে ভাবলো সৌমিলি , ” একে দেরি হয়ে গেছে , তারউপর একটা বাস এর ও দেখা নেই । খুব বিরক্ত লাগে এই জিনিসটা ___ যখন প্রয়োজন হয় তখন কোনভাবেই কিছু পাওয়া যায় না । অথচ এমনি দিনগুলোতে একের পর এক বাস আসতেই থাকে । ”
বড়ো কষ্টের ফসল এই চাকরিটা ___ যখন সবার মতের বিরুদ্ধে জেনেরাল লাইনে এগিয়েছিল , চাকরি পাবেনা শুনতে শুনতে একপ্রকার অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিল সৌমি।
তবে PhD করতে করতেই যে এমন একটা সুযোগ চলে আসবে ভাবতেও পারেনি , বারবার ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অসফল হয়ে ফিরে আসা সৌমিলী । মনে মনে ধারণা হয়ে গেছিলো , সবার কথা আসলে ঠিক , সবটাই এখন টাকার খেলা । জোর যার মুল্লুক তার ___ তাই তো অ্যাকাডেমিক টপার , সৌমিলি ভীষন ভালো গ্রেড নিয়েও শুকনো মুখে ফিরে আস্তে বাধ্য হতো ইন্টারভিউয়ারের ঘর থেকে । তাকিয়ে যখন দেখতো চান্স পেয়ে যাচ্ছে ওর থেকে কম মার্কস এর ছেলেটা , মেয়েটা … শুধু কাস্ট সার্টিফিকেট আর না হলে বাবার টাকার জোরে , নিজেকে বড্ড অসহায় লাগতো ওর । মনে মনে ভাবতে লাগতো তবে কি পরিশ্রমের কোনো মূল্যই নেই ?
কিন্তু এখন আর ওসব ভাবার সময় নেই , যাও বা একটা জুটেছে , এমন দেরি হলে আর সেটাও থাকবে কিনা সন্দেহ , রোজ , প্রতি সোমবার এই জিনিসটা হয়ে আসে ওর সাথে এমন দেরি __ নিজেই বিরক্ত সৌমিলি মুখ বাড়িয়ে দেখলো __ কিন্তু বাস তো দুর বাসের চিন্হ টুকুও নজরে এলো না তার । মনে মনে প্রস্তুত হয়ে পড়লো , কলেজে গিয়েই আবার সেই সহকর্মীদের খোটা শুনতে হবে । অদ্ভুত কিছু মানুষ ___ কেনো যে নিজের কাজ ছেড়ে অন্যকে নিয়ে এত ভাবতে যায় ! বড্ড বিরক্ত লেগে সৌমিলির ।
” উফফ এত চিন্তা করিস না তো ! শোন তুই যা ভাববি সেটাই হবে __ এই যে তুই নেগেটিভ ভাবে ভাবছিস বাস আসবেনা , তাই আসছেনা … মনে মনে ভাব , এই বাস এলো বলে । দেখবি ঠিক চলে আসবে ” ____
হঠাৎ মনে পড়লো , কলেজ যাওয়ার পথে যখন বাস পেতো না , প্রাকটিক্যাল এ দেরি হলে ঢুকতে দেবে না সেই ভয়ে ঘাবড়ে যেতো , এই কথাগুলোই বলতো সাগ্নিক ___ মাথায় পুরোনো কথাটা মনে আসতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো সৌমিলি , আগে সাগ্নিকের এসব কথায় বিশ্বাস না করলেও হুট করে কি ভেবে মনে মনে বিশ্বাস নিয়ে দুবার আওরায় সৌমীলি ,
কিন্তু বাস আসলো না ঠিকই , তবে আচমকা ভীষন রকম অপ্রত্যাশিতভাবে সামনে বাইকে থাকা সাগ্নিককে প্রায় ৩ বছর পর দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে রইলো সৌমিলি । সাগ্নিক ও বেশ চমকেছে ।
দুজনের উপস্থিতিই দুজনকে যে ভীষন রকম অবাক করেছে সেটা বলাই যায় ।
সাগ্নিক বোধহয় ওকে দেখেই দাঁড়ালো , কয়েক মুহূর্তের ব্যাবধানে নিজেকে সামলে প্রশ্ন করলো ,
” কি রে ? এখানে দাঁড়িয়ে ? বাস এর জন্য নাকি? ” , সাগ্নিক মিষ্টি হেসে বললো ঠিকই তবে সৌমিলির কান অবধি কতটা পৌঁছালো সেটা বলা বেশ দুষ্কর । সে বোধহয় তখনো ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি ___ আবারও ভুল ভেবে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও পারলো না আর এবার ।
সৌমিলিকে এমন থ মেরে যেতে দেখে সাগ্নিক নিজেই নেমে এলো , সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো , ” কি রে ? চিনতে পারছিস না ? এর মধ্যে মুখটাও ভুলে গেলি নাকি ? ” কথাটা স্বাভাবিক ভাবে বলা হলেও তার মধ্যে প্রচ্ছন্ন অভিমানটা বুঝতে দেরী হলো না সৌমিলির ,
একবার ছবি তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল বছর তিনেক আগে দেখা বাউন্ডুলে চেহারার ছেলেটা এখন অনেকটা অন্যরকম ।
সেই রুক্ষ এলোমেলো চুল ,পরনের পাতলা ফতুয়া সবটাই বদলেছে সময়ের সাথে ।
সৌমিলি ভাবলো , এই নিয়ে তো কম অশান্তি হয়নি সাগ্নিক এর সাথে । কতবার নিজেই বলেছে , ” কি এমন বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরিস বলতো ? কি হয় একটু ভদ্র সভ্য হয়ে কলেজে আসতে ? ”
সাগ্নিক হেসে বলতো , ” দেখবি যখন অন্যরকম ভাবে আসবো তোরই ভালো লাগবেনা ”
আজ সাগ্নিকের কথাটাই আপাদমস্তক ঠিক বলে মনে হল সৌমিলির । এই শার্ট প্যান্ট পরিহিত সাগ্নিক।কে দেখে পুরোনো সাগ্নিক এর সাথে মিলাতে না পারার অস্বস্তিটা খোঁচা দিচ্ছে ভীষণভাবে ।
সৌমিলি ঠিক ভেবে পেল না কি বলা উচিত , মৃদু স্বরে বললো , ” কেমন আছিস সাগ্নিক ? ”
একপলক তাকিয়েই অদ্ভুত রকম হাসলো সাগ্নিক , বললো , ” যেমন থাকার কথা ” , বলেই মাথাটা নিচু করে নিলো মুহূর্তে ,
সেই স্কুল থেকে বন্ধুত্ব সৌমিলি আর সাগ্নিকের । সময়ের সাথে সাথে সেই বন্ধুত্ব অন্য এক পরিণতিও পেয়েছিল । একি কলেজে ভর্তি হয়েছিল দুজনে । আর তখনি বন্ধুত্বটা একটু একটু করে রূপ নিয়েছে প্রণয়ের ।
কিন্তু সমস্যাটা বাঁধলো বছর চারেক আগে , কখন হটাৎ সৌমিলির বাবার যক্ষ্মা ধরা পড়লো … কাশতে কাশতে রক্ত উঠে যাচ্ছে মুখে , খাওয়ারে অরুচি হতে হতে ভগ্নপ্রায় শরীর ___ ছোটবেলায় মা কে হারানো সৌমিলি এবারে বাবাকে হারানোর ভয়ে গুটিয়ে গেছে এক্কেবারে ।
তখন কতই বা বয়স ওর , ২১ হয়তো __ সবে মাস্টার্স করছে , ওর দাদা তখনো চাকরি পায়নি ……. মধ্যবিত্ত পরিবারে যেনো বজ্রাঘাত । বাবার অবস্থা খারাপ হচ্ছে ক্রমাগত , ডাক্তারও প্রায় শেষ জবাব দিয়ে দিয়েছে …. তার মধ্যেই বাবার আবদার , মৃত্যুর আগে একমাত্র মেয়েটাকে পাত্রস্ত করে যেতে পারলে একটু শান্তি পাবে মনে ।
একদিকে মৃত্যু পথযাত্রী বাবার অনুরোধ , মুখের উপর কিভাবে না বলবে বুঝতে পারছে না সৌমিলি __ ভয়ে ভয়ে যখন সাগ্নিকের কথাটা বললো , বেশ ক্ষেপে উঠেছিল বাবা । ছেলেটা নিজেই তখনো ছাত্র , রোজগার নেই … তার উপর আজন্ম ব্রাহ্মণ হওয়ার অহংকার নিয়ে চলা মানুষটা সাগ্নিক এর মত অ-ব্রাহ্মণ পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে নারাজ । জাতপাতের চিন্তায় মনুষত্বের বোধটুকু হারিয়েছিল শেষ বয়সে ।সেই অহঙ্কারে মেয়ের চোখের জলটা যেনো চাপা পড়ে গেছিলো , চোখে পড়েও পড়েনি মেয়েটার মনের গোপন বেদনা।
সৌমিলি ভেবে পায়নি কি করবে । শেষ অবধি জন্মদাতা পিতার শেষ অনুরোধই বলা হোক বা আদেশ সেইটাই মেনে নিতে বাধ্য হয় আজীবন বাবা-মায়ের বাধ্য মেয়েটি ।
কিন্তু সাগ্নিক ? সে যে তার ভালোবাসা , প্রথম প্রেম … তার বন্ধু , কি বলবে তাকে ? মনে প্রাণে চেয়েছিল , সাগ্নিক যেনো তাকে ঘৃনা করে ___অপূর্ণ ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে অন্তত ঘৃনা নিয়েই বাঁচুক । সৌমিলি জানতো , সাগ্নিক ওকে কতটা ভালোবাসে , ওর জীবনে সাগ্নিক ছিল দমকা হাওয়ার আগমন , যেটা বারবার শীতল করে দেয় মনকে ।
ছেলেটা যে কতটা ভেঙে পড়তে পারে সেটা জানা ছিল সৌমিলির , ছেলেটা যে বড্ড ভালোবাসার কাঙাল ।
সেদিন নিজেকে শক্ত করে রেখেছিল সৌমিলি , সাগ্নিকের সামনে ভেঙে পড়লে চলবেনা । হলোও তাই __ ওর নিখুঁত অভিনয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছিলো সাগ্নিক ।
মেয়েটার চোখে এক বিন্দু জল দেখলেও মরিয়া হয়ে উঠতো সাগ্নিক , বুঝে যেতো সৌমিলির বলা একটা কথাও ওর মনের কথা নয় ।
” কি ভেবেছিস তুই সাগ্নিক ? এমন বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়াস __ সারাদিন গল্প , গান নিয়ে পড়ে থাকিস ! এই বাজারে একটাও চাকরির জুটবে তোর ? আর আমার হবু বর কে দেখ __ কত ভালো চাকরি করে কত টাকা ! সুখে থাকবো অন্তত ! সেসব ছেড়ে , তোর সাথে ___ এমন একটা ইনসিকিউর লাইফের জন্য এই সম্বন্ধটা ভেঙ্গে দেবার কোন মানেই হয়না । ”
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না বোধহয় সাগ্নিক , একটু ধাতস্থ হয়ে বুঝে উঠতে সৌমিলির পায়ে ধরতেও বোধহয় বাকি রাখেনি সেদিন । তিনটে বছর সময় চেয়েছিল কাঁদতে কাঁদতে ।
সেই দিনটার কথা ভাবতে আজও শিউরে ওঠে সৌমিলি কি করে পারল এতটা পাষাণ হতে ! ছেলেটার আকুল কান্না , কাতর আবেদন সেই মুহূর্তে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছলো ওকে ___ একদিকে বাবা আর একদিকে ভালোবাসা এই দুয়ের মধ্যে চাপা পড়ে ভেঙে যাচ্ছিলো একটু একটু করে ।
সাগ্নিক এর প্রতি এতটা অবিচার , ওর ভালোবাসাকে এতটা অপমান করা মেনে নিতে পারেনি স্বয়ং ঈশ্বরও । সেইদিনই বাড়ি ফেরার পর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে সৌমিলির বাবা ।
সেদিনের পর প্রচন্ড অভিমানে দূরে সরে গেছিলো সাগ্নিক , সৌমিলির মুখ থেকে বেড়ানো কথা রেখেছিল … আর আসেনি কখনো ওর সামনে । দীর্ঘ দশ বছরের বন্ধুত্ব এর অবসান ঘটেছিল ওভাবেই ।
লজ্জায় আর পরে সাগ্নিকের সাথেও যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি সৌমিলি ___ বলে ওঠা হয়নি সে অন্য কাউকে নয় শুধুই সাগ্নিক কে ভালোবেসেছে ।
তবে সেবার বিয়েটাও হয়নি __ বাবাকে একপ্রস্থ শান্তি দিতে বিয়েতে রাজি হওয়া , সেই বাবাই যখন থাকলো না তখন নিজের অনিচ্ছায় আর বিয়ের পিঁড়িতে বসার কোনো কারণ খুঁজে পায়নি সে । হয়তো সাগ্নিক ওকে ভুল বুঝেছে .. ঘৃনা করছে , অবশ্য সেটাই তো করা উচিত। তাতে কষ্ট আফসোস সবটা থাকলেও অন্য কাউকে বিয়ে করা আর সম্ভব হয় ওঠেনি ওর পক্ষে ।
চিরটা কাল বাবার কোল ঘেঁষা মেয়েটা যখন ভীষন ভেঙে পড়েছিল বাবার মৃত্যুতে , ওর দাদা মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল , ” কষ্ট পাস না বোন , যা হয় ভালোর জন্যই হয় । বাবাও কষ্ট পাচ্ছিলো , আর আমাদের উপরেও চাপ পড়ছিলো __”
সেদিন ভেবে পায়নি বাবার মৃত্যুতে ভালোটা কোথায় হল ? বাবার জন্য ভালোবাসাকে হারালো আবার বাবাকেও হারালো ।
তবে আজ তিন বছর পর সাগ্নিককে সামনে দেখে সৌমিলীর মনে হলো , ভালো তো হয়েছিল বটেই ! ভাগ্যিস বিয়েটা হয়নি ___ বাবাকে খুশি করতে গিয়ে বিয়েটা যদিও বা হতো তাতে না সুখী হতো সে নিজে , না সুখী হতো সেই অপরিচিত ছেলেটা আর না ভালো থাকতো সাগ্নিক ।
রোগ আর বয়সের ভারে বাবা আজ না হয় কাল পৃথিবীর মায়া কাটাতো , কিন্তু তার এক অযথা জেদের বশে নষ্ট হতো তিন তিনটে জীবন … সেদিন ২১ বছরের মেয়েটা সেটা না বুঝলেও আজ ২৫ বছরে এসে অনুভব করছে সত্যি ভালো হয়েছে যা হয়েছে ।
পরপর দুটো বাস বেরিয়ে গেল কিন্তু খেয়াল করলো না সৌমিলি , পুরনো ভাবনায় এতটাই ডুবে গেছিলো আছে খেয়াল নেই আশেপাশের কোন কিছুই । সাগ্নিক আলতো ধাক্কা দিতেই যেনো স্বপ্ন ছেড়ে বাস্তবে ফিরে এলো সৌমিলি ,
” কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি ? ”
কিছু বলতে পারলো না সৌমিলি , সেদিনের নিখুঁত অভিনয় আর আজ ওর সহায় হলো না , জড়ানো গলায় কোনরকমে বললো , ” পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস সাগ্নিক ! ”
আর কিছু বলতে পারলো না সৌমিলি , দুর থেকে বাস আসতে দেখে এগোতে গেলেই হাতে টান পরে ওর , ” তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে সৌমি ! জানি আমার মত বাউন্ডুলে ছেলের সাথে জীবন কাটানো যায়না , কিন্তু তার আগেও তো আমরা বন্ধু ছিলাম … সেই বন্ধুত্বের খাতিরেও কি একটু কথাও বলা যায় না ? ”
কি বলবে ভেবে পেলো না সৌমি , অস্ফুটে বললো , ” ৩ :২০ তে ক্লাস শেষ __ নম্বরটা একি আছে , কাছে থাকলে ম্যাসেজ করে দিস পৌঁছে যাবো ”
ঘাড় নাড়লো সাগ্নিক … ” পৌঁছাতে হবেনা … আমিই চলে যাবো তোর কলেজের সামনে ” ব্যাস এতটুকু , তারপর পা বাড়িয়েছিল সৌমি , কিন্তু আজ বোধহয় ভাগ্য দেবতার অন্যরকম কিছু পরিকল্পনা ছিল । দেরি হয়ে গেছে বেশ অনেকটা , এদিকে বাস এর দেখাও নেই ।
তারই মধ্যে সাগ্নিক বলে বসলো , ” চাইলে আমি ড্রপ করে দিতে পারি ”
সৌমিলি প্রথমে না করলেও আর কোনো উপায় না পেয়ে শেষে রাজি হয়ে উঠে বসলো বাইকের পিছনে । ব্যাস অতটুকুই , সারা রাস্তা আর কোনো কথা হয়নি ওদের মধ্যে।
কলেজে এসেও কেমন আনমনা হয়ে ছিল সৌমি , ” কি আজও ছুটির রেশ কাটে নি নাকি ? ” , সহকর্মীর রোজকার খোঁচা চুপচাপ হজম করে নেওয়া মেয়েটাও মুচকি হেসে উত্তর দিলো , ” নানা আমার রেশ কেটেছে তবে ওই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ যাতায়াত করতে হয় তো ! নিজের গাড়ি থাকলে হয়তো দেরীটা হয়না… ”
এই সহকর্মী একদিন রসিয়ে রসিয়ে ওকে শুনিয়েছিল নিজের গাড়ি থাকার গর্ব , আজ আপাদমস্তক শান্ত মেয়েটার থেকে পাওয়া উল্টো খোঁচাটা বুঝে চুপ হয়ে গেলো সে । এতদিন কম অপদস্ত করার চেষ্টা তো হয়নি তাকে , পার্টটাইম লেকচারার বলেই হোক বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক ।
অল্প হাসলো সৌমি , সাগ্নিক একবার বলেছিল , ” ছোবল মারতে না পারলেও অন্তত একবার ফোঁস করে দেখিস , মানুষ দুবার ভাববে আঘাত করতে ”
যে জীবনের এতটা জায়গায় জুড়ে , তাকে ছাড়া কিভাবে কি তিনটে বছর কাটিয়ে দিলো কে জানে ? বোধহয় সময়ের গুণ , ঠিক সবটা সইয়ে দেয় । তবে মনে মনে ঠিক করলো সৌমিলি , যদি একবার সুযোগ পায় … শেষবারের মতো একবার চেষ্টা করবেই সাগ্নিক কে ফিরে পাওয়ার । অবশ্য যে আঘাতটা সাগ্নিককে নিজের হাতে দিয়েছে সেটা ভুলে সাগ্নিক শেষ অবধি ফিরবে কিনা জানা নেই । তার আত্মসম্মানবোধ বরাবরই যে বড্ড প্রবল সে যে জানে সৌমি ।
চলবে