সে_আদরের_অন্য_নাম ? ১ম পর্ব

0
2377

? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?
১ম পর্ব
ইভা রহমান

অবন্তীর হাত থেকে নীল রঙের র্যাপিং পেপারে মোড়া বাক্সটা হাতে নিয়েই গেট লাগিয়ে দিলো হিয়া,অবন্তী কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু হিয়া সেই সুযোগ না দেওয়াতে অবন্তী মাথা নিচু করে চলে গেলো নিজের রুমে__কাঁপা কাঁপা হাতে গেট বরাবর ফ্লোরে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁটের কোণে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি এঁকে দিয়ে বাক্সটা খুলতেই প্রথমে হাতে আসলো একটা টুথব্রাশ,হিয়া টুথব্রাশ টার দিকে ভ্রকুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো,হয়তো এই মুহুর্তে টুথব্রাশ নামক বীজগণিতের কোনো সুএ খুঁজে চলছে হিয়ার দু চোখ__টুথব্রাশ টা পাশে রেখে বাক্সটার ভেতরে হাত দিতে এবার বেড়িয়ে এলো একটা কৃত্রিম তেলাপোকা,এবার হিয়া মুচকি হেসে দিলো হয়তো কিছু সুন্দর স্মৃতি মনে পড়ে গেলো মুহুর্তে,সাথে হাতে আসলো একটা পুড়ে যাওয়া নীল শাড়ি,কিছু শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ,একটা শুকনো গাদা ফুলের মালা___এরপর আর অন্য কিছু না খুঁজে বাক্সটা সম্পূর্ন উবুড় করে ধরলো হিয়া,এতে করে যা যা ছিলো সব বেড়িয়ে এলো ভেতর থেকে___সবকিছুর ভেতর হিয়ার চোখ পড়লো লাল নীল স্টাইপের খামে মোড়া ঔ চিঠি টার উপর__হিয়া চিঠি টা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো,লাল নীল রঙের উপর হাত ছুঁইয়ে দিয়ে সামনে তাকিয়ে সব জিনিস গুলোকে একনজর বুলিয়ে,নিজের পিঠ টা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে,চোখ টা বন্ধ করলো,কিছুসময় বাদে আবার চোখ খুলে চিঠি টা বের করে পড়তে শুরু করতেই কোথা থেকে যে পানির সাগর এসে ভীড় করলো হিয়ার চোখে বোঝা মুশকিল

?
এই যে ইডিয়ট
কি হ্যা,এভাবে কেউ কাঁদে কখনো,পাগলি একটা।চোখ তো নয় যেনো কোনো এক মহাসাগর শুধু পানি আর পানি পানি আর পানি__জানো আজকে যখন তুমি রুপমকে জড়িয়ে ধরে ওভাবে কাঁদছিলে দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা দেখতে যে কতোটা কষ্ট হচ্ছিলো এই ক্ষয়ে যাওয়া বুকটায়,তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।তুমি কাঁদছিলে সেই জন্য না কষ্ট টা হচ্ছিলো অন্যকারনে,তুমি যার বুকে মাথা রেখে কাঁদছিলে সেই বুক টা তো আমারো হতে পারতো,খুব যত্ন করে তো তোমাকে কাঁদিয়ে আবার সেই আমিই তোমার চোখ মুছে দিতে পারতাম__রুপম যখন তোমার মুখ টা তুলে তোমার সামনে আসা চুল গুলো কানের পাশে গুজেঁ দিয়ে ওর দুহাতে তোমার গালে লেগে থাকা পানি গুলো মুছে দিলো তখন কতো যে নাম না জানা ক্ষত এসে এই বুকটাকে রক্তাক্ত করে দিলো নিমিষে,সেগুলো হয়তো লিখে আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না__সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম নিজের প্রিয় দুটো মানুষের বিজয়ে আমি কি না এভাবে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছি,তুমি ঠিকি বলো আমি একটা স্বার্থপর ছেলে খুব স্বার্থপর___নিজেকে সামলে নিলাম ঔ মুহুর্তে কারণ জানি রুপম কখনো তোমার কোনো কমতি রাখবে না,নিজের সবটা দিয়ে হলেও তোমাকে আগলে রাখবে,তুমি ওর কাছেই সব চাইতে বেশি নিরাপদ____যাইহোক আমি ট্রান্সফার হবার আগে তোমাকে ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়ে দেবো ওহ নিয়ে তুমি ভেবে ভেবে তোমার নতুনসময়টা নষ্ট করো না কেমন____আর হ্যা একটা কথা,হিসাব কিন্তু এখন সমান সমান হ্যা,আমি তোমাকে যতোটা নিখুঁতভাবে অপমান করেছি তুমিও ঠিক ততোটাই গভীরভাবে এখন আমাকে ঘৃণা করায় ব্যস্ত,তাই সব এখন কাটাকুটি ঠিক আছে

ইতি
তোমার অসভ্য ভালোবাসা

হিয়াঃ শুধু রুপম ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আমার কান্না করাটাই দেখলেন আপনি,আর এদিকে যে আমি রুপম ভাইয়াকে নিয়ে পুরো শহর জুড়ে আপনাকে খুঁজলাম সেটা আপনার চোখে পড়লো না!!

নিজমনে কথাটা বলেই হিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে__এতো এতো কান্না সত্যি উজান ঠিকি বলে হিয়ার চোখ তো না যেনো কোনো এক মহাসাগর!!__সামনের জিনিস গুলোকে আলতো করে হাত বুলিয়ে নিয়ে হিয়া ফ্লোরে শুয়ে পড়ে,মাথার মগজে ভীড় করছে তিন বছর আগের সব স্মৃতি,স্মৃতির বেড়াজালে পিশে উল্টেপাল্টে যাচ্ছে হিয়ার সব অনূভুতি

৩বছর আগে?

হিয়াঃ এই খুন্তি খোল না রে বাবা গেট টা।আর কতোক্ষন লাগবে__দেখ এবার কিন্তু আমার মেজাজ পুরো বিগড়ে যাচ্ছে হ্যা,ওয়াশরুমে হাত মুখ ধুতে যদি তুই এতো সময় নিস তাহলে গোসল করার সময় কি গোটা দিন পার করিস__এই খুন্তি__ধুর বাবা তোর বাড়িতে থাকতে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে

হিয়া দুমদুম করে ওয়াশরুমের গেট চাপড়াতে থাকে তবু অবন্তী দরজা খুলে না__কিছুক্ষণ বাদে অবন্তী বের হয়ে হিয়ার হাতে টুথপেষ্ট টা ধরিয়ে দিয়ে বলে

অবন্তীঃ আমার পেট টা ভীষণ গন্ডগোল করছে রে__এই নে টুথপেষ্ট তুই বারান্দায় গিয়ে ব্রাশ টা করে নে আমি এই বের হচ্ছি__আর একটু আর একটু__

হিয়াঃ তোকে না আমি?জাস্ট দু মিনিটে বের হবি নয়তো আমি কিন্তু

অবন্তীঃজানি জানি আমাকে রেখে চলে যাবি তো__যাস গিয়ে হু?

হিয়া ওর ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে অবন্তীর বারান্দায় গিয়ে ব্রাশ করতে করতে ভোর সকালের এই মায়াভরা প্রকৃতির সাথে এক পশলা গল্প শুরু করে,সেই সাথে হিয়ার গল্প শোনার জন্য বারান্দায় এসে হাজির হয় এক দোয়েল পাখি

হিয়াঃ খুন্তির রুম টা যতোটা সুন্দর তার চাইতে রুমের সাথে লাগানো এই বারান্দা টা উফফ দেখলেই কি রকম মন ভরে যায়__আমার আর আপুর রুমের বারান্দা টাও তো সুন্দর,হ্যা তবে এরকম নকশা করা টাইলস নেই সেখানে,নেই হাজাররকম পাতাবাহারের ছড়াছড়ি না আছে সামন টা জুড়ে প্রাণজুড়িয়ে যাওয়া এতো সুন্দর বাগান আছে একটা রঙ ওঠা জুতোর থাক যাতো আছে আমাদের বাড়ির সবার রঙ ওঠা ছিড়ে যাওয়া কিছু বাহারি জুতো,পাশে জমা আছে পুরোনো দিনের কিছু ময়লা কাপড় আর আমার আর আপুর স্কুল লাইফের কিছু বই__ওটাকে বারান্দা বললে ভুল হবে মা তো ওটাকে স্টোর রুম বলেই চালিয়ে দিতে ব্যাস্ত___হ্যা তবে এতো অসুন্দরের মাঝেও আছে একটা সুন্দর ঘাসফুলের গাছ,যখন মেজেন্টা রঙের অনেকগুলো ঘাসফুল এক সঙ্গে ফুটে কতো যে দারুণ লাগে দেখতে ইসস__আমার কাছে আমার ওই বারান্দা টাই বিশ্বের সেরা বারান্দা কারণ রোজ এই বারান্দায় দিয়ে আমি এলাকার সবার খোঁজ রাখতাম__একবার তো পাশের বাসের রহিমআঙ্কেল গলিদিয়ে হেটে যেতে যেতে আমাকে দেখে থেমে গিয়ে মাথা টা উঁচু করে বললো কি রে হিয়া আজ কি বাজার করেছি জানতে চাইলি না যে,তোর শরীরটরীর ঠিক আছে তো__আমি জিভে কামড় কেটে বললাম গাছে পানি দিচ্ছিলাম গো বুড়ো তাই দেখতে পাই নি__বুড়ো টা বললো আজ নাকি বড় রুই কিনেছে রাতে যেনো তার বাড়ি গিয়েই খাই, আমিও মিষ্টি হেসে মাথা নাড়ালাম হুমম খাবো___তো কি বুঝলা দোয়েলরানি কার বারান্দা টা বেশি সুন্দর আমার না খুন্তির

এই বলে হিয়া হেসে দিলো দোয়েল পাখি টাও ডানা ঝাপটিয়ে চলে গেলো দূর আকাশে,হয়তো যেতে যেতে বললো তোমার বারান্দা টাই বেশি সুন্দর__হিয়া দোয়েলপাখির সাথে গল্প করতে করতে নিচে কয়েকবার মুখে আসা পেস্টের ফেনা গুলো ফেলছিলো কিন্তু সমস্যা বেঁধে যায় এবার ফেলতে গিয়ে__উজান যে কখন নিচে এসে ঠিক অবন্তীর বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে গেলো হিয়া বুঝতে পারেনি আর ঔ যে ঘটে গেলো অঘটন হিয়া যেই এবার সব ফেনা গুলো মুখ থেকে নিচে ফেললো ওমনি গিয়ে সব পড়লো উজানের মুখে__ইসস কি বিশ্রী একটা ব্যাপার

উজানঃ (উপরের দিকে চোখ মুখ খিচে তাকিয়ে)What The hell is this

হিয়াঃ সর্বনাশ__আল্লাহ গো এবার আমাকে বাঁচিয়ে নেও প্লিজজজজজজ

উজানঃ Are you gone an insense মাথা টাথা কি ঠিক আছে তোমার,কোথায় কি ফেলছো,আমাকে কি তোমার ভেসিনের সাবটিটিউট মনে হয়??

উজানের প্রশ্নের প্রতিউওরে হিয়া ফটাফট না সূচক মাথা নাড়িয়ে একটা ঢোক গিলে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি হিয়ার হাত ফোসকে টুথব্রাশ টা টুক করে নিচে পড়ে যায়,পড়ে তো পড়ে সোজা গিয়ে উজানের মুখে দুম করে পড়ে যায়

হিয়াঃ সরিইইইইইই___সরি সরি সরি

উজানঃ হোয়াট দা___যেমন আমার ছোট বোন তেমনি তার বান্ধবী__ডিজগাস্টিং

উজান আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়।হিয়া দাঁত মুখ খিচে নিজের মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে এসে দেখে অবন্তী কেবলমাত্র বেড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছে__হিয়া অন্তীর কাছে গিয়ে অবন্তীর পিঠে দুম করে একটা বসিয়ে বলে সবটা তোর জন্য হয়েছে,বেয়াদব মেয়ে__অবন্তীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হিয়া তোয়ালেটা ছো মেরে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়__অবন্তী হিয়ার এই আচরণের আগামাথা কিছুই বুঝলো না শুধু কয়েকসেকেন্ড ওয়াশরুমের গেটের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো

দুপুরে,খাবার টেবিলে সবাই গোল হয়ে বসে যায়।হিয়া ডাইনিং এ বসে সবার সাথে খেতে চায় না কারণ ডাইনিং এ সবার সাথে উজানো বসেছে তাই হিয়া বায়না করে ও অবন্তীর রুমে বসেই খাবে কিন্তু অবন্তীর মা রাজি হয় না তার কথা হিয়া সবার সাথে বসেই ডাইনিং এ খাবে,হাজার হোক হিয়া অবন্তীর বান্ধবী মানে এ বাড়ির অতিথি__হিয়া তাই আর মানা করে না ভয়ে ভয়ে ডাইনিং এ গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় যদি উজান ওকে কিছু বলে বকা দিয়ে দেয় তখন__তবে হিয়ার এই ভয় বেশিক্ষণ থাকে না উজান হিয়াকে আড়চোখে দেখে নিয়ে আবার সবার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লে হিয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে

রুপমঃ মেয়ে টা কে রে মামা,দেখতে তো ভারী মিষ্টি

উজানঃ অবন্তীর বান্ধবী

রুপমঃ নাম কি

উজানঃ নিজে জিঙ্গেস কর আমাকে কেনো বলছিস

রুপমঃ (হালকা কেশে নিয়ে)এটা কি তোর বান্ধবী নাকি অবন্তী আগে তো দেখিনি

অবন্তীঃ দেখেছো হয়তো খেয়াল করো নি__কি রে হিয়া দাঁড়িয়ে আছিস যে বস না

হিয়াঃ হুমম বসছি

বাসবিঃ অবন্তী মা এদিকে একটু আয় না সোনা__একা একা কি সব নিয়ে যাওয়া যায়__কোথায় একটু মাকে হেল্প করবি তা না নিজে গিয়ে আগে বসে পড়লি তো খেতে

অবন্তী উঠতে ধরলে হিয়া অবন্তী কে থামিয়ে দেয়

হিয়াঃ থাক তোর না হাত কেটেছে আজ__আমি যাচ্ছি তুই বস

অবন্তীঃ এই না হলো আমার বেস্টি

হিয়াঃ সাড় তো__ন্যাকা

হিয়া রান্নাঘরের দিকে চলে গেলে রুপম উজানের কানে আবার ফিসফিস শুরু করে

উজানঃ এতোই যখন ইন্টারেস্ট পাচ্ছিস মেয়ে টার মাঝে তো নিজে গিয়ে জিঙ্গেস কর না আমাকে কেনো টানছিস এর মাঝে

রুপমঃ ধুর তুই একটা বা..___তোকে দিয়ে জীবনে কিচ্ছু হবে না___এই অবন্তী শোন না

অবন্তীঃ হ্যা ভাইয়া বলো

রুপমঃ তুই আর হিয়াকি এক সাথে একি কলেজে পরিস

অবন্তীঃ কেনো কেনো__পছন্দ হয়েছে নাকি আমার বেস্টিকে শুনি

রুপমঃ বল না মেয়েটা কি রকম

অবন্তীঃ হ্যা একি কলেজে পড়ি আর কি রকম সেটা তো বলতে পারবো না তবে এটুকু বলতে পারি হিয়ার সাথে থাকলে নিজেকে কখনো কোনো সিচুয়েশনে তোমার নিজেকে একলা লাগবে না__হিয়ার মাঝে একটা ম্যাজিক আছে জানো,তুড়ি মরে সব কিছু ঠিক করে দেওয়ার ম্যাজিক

রুপমঃ তাই নাকি তাহলে তো তোর ম্যাজিক কুইনের সাথে একবার হলেও সময় কাটাতে হয় দেখছি

অনিকঃ এই অবন্তী চুপ__রুপম ভাইয়া বাবা আসছে খেতে চুপপপ করো

রুপমঃ আঙ্কেল বাড়িতে আছে আগে বলবি না__আমি গেলাম বাবা এরপর আঙ্কেল আমাকে চিবিয়ে খাবে আজ সেদিন যা করলো

উজানঃ এই রুপম শোন__রুপম যাস না বাবা কিছু বলবে না তোকে__রুপ শোন খেয়ে তো যা

রুপম আর কিছু না বলে সামনে থাকা একটা আপেল হাতে নিয়ে কামড়াতে কামড়াতে দৌড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়__এতোক্ষণে হিয়া আর বাসবি মিলে এক এক কড়ে সব আনতে শুরু করে

হিয়াঃ আন্টি আপনি বসুন না আজ আমি বেড়ে দিচ্ছি সব

বাসবিঃ তুমি কি আর পারবে মা__আমার বাড়িতে কে কতটুকু খায় সে তো তুমি জানো না

হিয়াঃ কেনো বলে বলে দেবো তাহলেই তো হয়ে যাবে

বাসবি একটা মুচকি হেসে উজানের বাবা আর তার দাদীর পাতে ভাত বেড়ে দিতে দিতে বলে উঠে

বাসবিঃ বলে বলে দিলেও হবে না মা__একজনকে ডালের নিচের ভারীটা দিতে হয় আরেকজনকে উপরের পানি টা__একজনের আবার মাঝখানে তরকারি ঢেলে দিতে হয় তো আরেকজনকে এক পাশে__এ বাড়ির সবার যে কতো রঙঢঙ সে আর তুমি বুঝবে না

হিয়াঃ কেনো রে অবন্তী আমার এই ভালো আন্টি টাকে তোরা এতো জ্বালাস

দাদিঃ না জ্বালিয়ে উপায় আছে__তোরা দুটোর বিয়ে দিয়ে দিলে তোরাও বুঝবি সংসার নামক জিনিস টা কতো প্যারাময়

অনিকঃ প্যারাময়!! বাহ দাদি তো দেখছি আমাদের জেনারেশনের ভাষাও বলতে পারে__বাহ বা My moderrrrrn দাদি

অনিকের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।এদিকে হিয়া সবার পাতে জোড় করে মাংস বাড়তে বাড়তে উজানের সামনে গিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়।উজান হাতের ইশারায় বলে ওর লাগবে না।হিয়া উজানকে টপকে যেই অবন্তী কে মাংস দিতে যাবে ওমনি হাত টা কিরকম করে একটা ফস্কে যায় আর মাংসের বাটিটা কাত হয়ে একটা মাংসের পিচ সহ খানিকটা ঝোল গিয়ে পড়ে উজানের বাহু বরবার বা হাতের ভাঁজে

উজানঃ what the

হিয়াঃ সরিইইইইইই

উজানঃ যে কাজ টা পারো না সেটা আগ বাড়িয়ে করতে যাও কেনো,ইডিয়ট

হিয়াঃ আমি আসলে বুঝতে পারিনি,কীভাবে যে হাত টা ফস্কে____সরি

বাসবিঃ আহ হয়েছে,পড়ে গেছে ভুল করে এখন কি ওরকম করে ওকে বকবি তুই__যা গিয়ে শার্ট টা চেন্জ করে নে আমি বরং তোর রুমে খাবারটা দিয়ে আসছি__ওখানে শান্তিমতো আরাম করে খাস

উজান আর কিছু না বলে ওখান থেকে উঠে ওর রুমে চলে যায়।হিয়া আর আগ বাড়িয়ে কিছু না বেড়ে অবন্তীর পাশে গিয়ে বসে পড়ে

অবন্তীঃ তোর লাইফের সব গন্ডগোল গুলো কি ভাইয়ার সাথেই ঘটে__ফেললি ফেল পুরো বাটি টাই তো আমার গায়ে ফেলতে পারতি তা না

হিয়াঃ আচ্ছা মুশকিল তো আমি কি ইচ্ছে করে ফেলেছি নাকি

অবন্তীঃ হয়েছে এখন ড্যাপ ড্যাপ করে না তাকিয়ে খাবার টা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো ম্যাজিক কুইন

হিয়াঃ ম্যাজিক কুইন এই নামে আবার আমাকে কবে থেকে ডাকতে শুরু করলি তুই

অবন্তীঃ আজকে,এখন থেকে__রুপম ভাইয়া দিয়ে গেলো নাম টা জোস না

হিয়াঃ না?___কেনো যে তোর কথা শুনে আমি তোর বাড়িতে থাকতে আসলাম আল্লাহ রক্ষা করো

বাসবিঃ তা হিয়া মা আজকে কি আবার হোস্টেলে ফিরে যাবি না রাতে থাকবি

হিয়াঃ না গো আন্টি এমনিতে কাল,বাড়ি থেকে সোজা তোমাদের বাড়িতে এসেছি আর আজ যদি হোস্টেলে না ফিরি তাহলে তো জানোই__আর আমাদের হোস্টেল মিস যে কি কড়া ওনার ছায়া দেখলেও গা থরথর করে কাপে জানো

বাসবিঃ আমার থেকেও কড়া

হিয়াঃ বালাইষাট তুমি কড়া হতে যাবে কেনো তুমি তো কত্তোওওও মিষ্টি

অবন্তীঃ মা মিষ্টি না ধানি লঙ্কা সেটা তুমি মার মেয়ে হলেই বুঝতা বুঝলা

হিয়াঃ হুমম বলেছে তোকে
________________
এক সপ্তাহ পরঃ

অবন্তীঃ এটা তোর আসার সময় হলো__কোথায় আজ আমার জন্মদিন আমাকে সারাদিন সময় দিবি তা না উনি আসলো এখন এই অবেলায়

হিয়াঃ আরে অবেলা কোথায় সবে তো দুপুরের আযান পড়লো।দেখ তুই এখন এরকম করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলে কিন্তু আমি আর থাকবো না চলে যাবো__জানিস কতো কষ্ট করে হোস্টেল মিস কে মিথ্যে বলে আসলাম

অবন্তীঃ কি মিথ্যে বললি শুনি

হিয়াঃ বললাম আজ আমার চারটে টিউশন আছে আমার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হবে তবে অন্ধকার হবার আগে ফিরে আসবো

অবন্তীঃ ওরে আমার মিথ্যেবাদী বান্ধবী রে মিথ্যে বলে আমার কাছে এসে অনেক পূন্যের কাজ করেছিস এখন আয়,বস,একটু পর নবনীরা সবাই আসছে__ওরা আসলে আমি আর হাতে মেহেদী পড়ার সময় পাবো না এখন তুই সুন্দরমতো বসে আমার দু হাত ভর্তি করে মেহেদী দিয়ে দিবি আয়

হিয়াঃ সে আর বলতে__চলুন মিস অবন্তী শাহরিয়ার

হিয়া যে খুব সুন্দর মেহেদী দিয়ে দিতে পারে তা না তবে যেটা দেয় সেটা কোনোক্রমেই মন্দের খাতায় পড়বে না__অবন্তী কে মেহেদী দিয়ে দিতে দিতে নবনীসহ বাকি সব মেয়ে গ্যাং এসে হাজির__শুরু হয় রুমের ভেতর মেয়েগ্যাং দের সেই লেভেলের আড্ডা কে কার সাথে পালিয়েছে,কে কাকে লাভ লেটার দিয়েছে,কোন মেয়ের দিকে দিকে কলেজের ক্রাশবয় ভালোবাসা নিবেদন করছে সে সব থেকে শুরু করে কোন স্যার কোন ম্যাডামের দিকে ক্রাশখেয়ে উল্টে পড়ছে সব গল্প__সত্যি মেয়েরা যখন এক হয় তখন গল্পের অভাব হয় না!!

বিকেলের দিকে সবাই ডাইনিং এ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে যায় কারণ এখন অবন্তী কেক কাটবে যদিও এখনো অবন্তীর দুটো কাজিন ছাড়া অন্য কোনো আত্নীয়রা কেউ আসে নি কারণ তাদের রাতের ডিনারে একবারে ইনভাইট করা হয়েছে__কেক টা দু থাকের চকলেট কেক উপরে খুব সুন্দর করে সাদা পেস্ট্রি দিয়ে লেখা Happy Birthday Our Princes Obonti__কেক টা হয়তো উজান আর অনিক মিলে কিনেছে তাই অবন্তী নাম টার পাশে প্রিন্সেস কথাটা লেখা কারণ বাড়িতে শুধু উজান আর অনিকই তাদের এই ছোট্ট বোনকে প্রিন্সেস বলে ডাকে__ডাকবে নাই বা কেনো অবন্তী তো দেখতে কোনো রাজকন্যার থেকে কম না!!যেমন গায়ের রঙ তেমনি মাথাভর্তি চুল তারউপর সবার আদরের

বাসবিঃ কিছুদিন পর বিয়ে দিলে তো স্বামীর ঘরে চলে যাবি এখন এই বয়সে এসে এসসব না করলেই কি নয়__এটাই লাস্ট কিন্তু হ্যা__জানিস না এগুলে করা জায়েজ না

অবন্তীঃ তুমি বললেই যেনো আমি বিয়ে করে স্বামীর ঘরে চলে যাবো__আমার বয়স কতো হ্যা সবে ফাস্টইয়ার শেষ করবো আর তুমি কি না

এমন সময় রুপম এসে অবন্তীর হাতে এক গাদা চকলেট ধরিয়ে দিতে দিতে মুচকি হেসে উজানকে একটু খুঁচিয়ে দিয়ে

রুপমঃ আন্টি অবন্তী কে ছাড়ো আগে তো তোমার বড়ো ছেলের বিয়ে নিয়ে ভাবো__কিছুদিন বাদে মাস্টার্স শেষ করছে আগে তো তার দিকে দেখো__এমনিতে ভার্সিটিতে তোমার এই হিরোর মতো ছেলের পেছনে মেয়েদের যে লাইন লেগে থাকে বাপরে বাপ___কতো মেয়ে আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করে জানো শুধু তোমার ছেলের নাম্বার টা পাবে বলে__আর আমি বোকার মতো শুধু সবার কাহিনি দেখে যাই

বাসবিঃ তা খুঁজে দে না একটা মেয়ে তাহলে আমার আর তোর আঙ্কেলের কাজ টা একটু এগিয়ে যায়

রুপমঃ খুঁজবো বলছো ঠিক আছে যাও কাল থেকে কাজে নেমে পড়বো কি বলো

উজানঃ চিন্তা করিস না আদাজল খেয়ে কাঁদায় নামলে তোকেও সাথে নিয়েই নামবো after-all ছোট থেকে সব কাজ এক সাথে করেছি বলে কথা

রুপমঃ সে দেখা যাবে____তা অবন্তী তোর বান্ধবীদের সাথে একটু আলাপ করিয়ে দে

অবন্তীঃ আমার বান্ধবীদের সাথে আলাপ করে তোমার কি কাজ শুনি

রুপম চোখের ইশারায় বলে তার কোনো কাজ না শুধু একটু ঔ হিয়ার সাথে যদি আলাপ করানো যায় কোনোভাবে

অবন্তীঃ বুঝেছি বুঝেছি___থামো পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি

অবন্তী এক এক করে সবার সাথে রুপমের পরিচয় করিয়ে দেয় কিন্তু রুপমের কোনো ইন্টারেস্ট আসে না এদের মধ্যে কারো উপর__অবন্তী ইচ্ছে করে সবার শেষে হিয়াকে কাছে টেনে এনে

অবন্তীঃ আর এ হলো আমাদের

রুপমঃ ম্যাজিক কুইন তাই তো

অবন্তীঃতাই তাই

রুপমঃ তা ম্যাজিক কুইন আই মিন হিয়া কোথায় থাকো তুমি

হিয়াঃ(মুখে এক বালতি হাসি দিয়ে) এই শহর থেকে একটু দূরে আমাদের বাসা__যাতায়াত এ অসুবিধে হয় বলে হোস্টেলে থাকি____কিন্তু আপনি আমাকে ম্যাজিক কুইন বলে সম্বোধন কেনো করলেন,সেদিন অবন্তীকেও দেখলাম এই নামে আমাকে ডাকছে

রুপমঃ অবন্তীর কাছে শুনেছি তুমি পাশে থাকলে নাকি লাইফের সব সমস্যা ম্যাজিকের মতো ভ্যানিস হয়ে যায় তাই ভাবলাম একটা নাম দেই তোমাকে তাই আরকি

হিয়াঃ ওহ বুঝেছি__কি জানি আমার তো মনে হয় আমি যেখানে যাই সাথে করে সমস্যা নিয়ে যাই__আমার বড় আপু তো বলে আমি নাকি মাথা থেকে পা অবধি গোটা টাই একটা সমস্যার গোডাউন

উজানঃ ঠিকি বলতো ভুল কি আর এতে,ইডিয়ট

রুপমঃ কিছু বললি তুই

উজানঃ কোথায়,না তো

রুপমঃ ওহ কি জানি মনে হলো তুই কিছু বললি__বাদ দে__কিরে তোরা কি এখন দাঁড়িয়ে থাকবি না কেক টাও কাটবি

অবন্তীঃকাটছি কাটছি

অবন্তী মোমবাতি টায় ফু দিয়ে কেক টা কেটে প্রথমে ওর মাকে তারপর এক এক করে উজান,অনিক,হিয়া,নবনী সহ সবাইকে খাইয়ে দেয়__সবাই অবন্তীর সাথে তালে তাল মিলিয়ে অবন্তীকেও কেক খাইয়ে দিতে থাকে__সবার খুনসুটি শেষ হলে যে যার রুমে চলে যায় এদিকে নবনী ওর হাতের কেক টা নিয়ে অবন্তী কে লাগিয়ে দিতে ধরলে অবন্তী পালিয়ে যায় আর এই সুযোগে নবনী হিয়ার পুরো মুখ জুড়ে টুক করে কেক লাগিয়ে দেয়___

হিয়াঃ তবে রে থাম নবনী তোকেও যদি আজ আমি কেকের সাগরে না ডুবিয়েছি আমার নামো হিয়া না___থাম থাম বলছি__দৌড়ে আর কোথায় পালাবি__আমাকে ভূত সাজিয়ে দিয়ে এখন পালাচ্ছিস,পাই একবার শুধু তোকে

হিয়া ডাইনিং থেকে এক মুঠ কেক নিয়ে নবনীর পেছন পেছন দৌড় শুরু করে__অবন্তীদের বাড়ি টা বিশাল বড়ো হওয়ার ধরাধরি খেলতে নবনী আর হিয়ার ভালোই সুবিধে হয় কিন্তু ঔ যে অঘটন ঘটার সেটা তো ঘটবেই।না ঘটলেই যে তার না___নবনী দৌড়ে ছাঁদের সিড়ির কাছে লুকিয়ে পড়লে হিয়া ভাবে নবনী হয়তো দৌড়ে ছাঁদ এ গিয়ে ঘাপটি দিয়ে বসে আছে তাই হিয়া যেই দৌড়ে সিড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠবে ওমনি সিড়ির শেষ মাথায় দুম করে বারি খেলো উজানের সাথে আর উজানের সাদা শার্ট লেপ্টে গেলো হিয়ার হাত ভর্তি কেকের মিষ্টি ফেলেবারে
উজানঃ What the?___তুমি আবার!!

হিয়াঃ সরিইইইইইই___সরি সরি সরি

উজানঃ আর কতো সরি__মানে আমার সাথেই কি তোমার এসব দূর্ঘটনা ঘটে না তুমি ইচ্ছে করে

হিয়াঃ বিশ্বাস করুন ঔ নবনীকে কেক লাগাতে গিয়ে ভুল করে আপনার সাথে এভাবে

উজানঃ না এবার তোমাকে একটা শাস্তি দিতে হবে now you cross your all limit

হিয়াঃ না ভাইয়া প্লিজজজ দেখুননন আমি আসলে

হিয়া আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়াকে পুরো অবাক করে দিয়ে উজান করে ফেলে এক কান্ড যেটা উজানের কাছ থেকে আশা করা টা আনএক্সপেক্ট ছাড়া অন্য কিছুই না__উজান সপাটে হিয়ার কাছে গিয়ে হিয়ার দু গালের নিচ বরাবর কানের কাছে নিজের এক হাত আর হিয়ার মাথার পেছনে আরেক হাত শক্ত করে দিয়ে হিয়াকে চেপে ধরে মুখের সামনে এনে হিয়ার বা গালে দুম করে একটা কামড় বসিয়ে দেয়__কামড়ে দেওয়ার ব্যাথায় হিয়া যতো টা না কাতর তার চেয়ে বেশি হতভম্ব উজানের এরকম একটা কাজে,তাই তো এতো জোড়ে কামড়ে দেবার পরো হিয়ার মুখ দিয়ে এখন অবধি টু শব্দ পর্যন্ত বের হচ্ছে না

উজানঃ(হিয়াকে ছেড়ে দিয়ে)___আজকে তো এক গালে কামড়িয়েছি নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে দেখলে পাশের গাল টাও বাকি রাখবো না__ইডিয়ট

উজান হিয়াকে পাশ কাটিয়ে নিচে নেমে আসলে হিয়া কিছুক্ষণ থ মেরে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে__আসলে এই দু তিন মিনিটে হিয়ার সাথে ঠিক কি ঘটলো তা বোঝার চেষ্টা করছে হিয়া__

হিয়াঃ(গাল হাত দিয়ে কাতর কন্ঠে) উনি এরকম বোলতার মতো এসে আমাকে ছো মেরে কামড় বসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন আর আমি কি না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেবলাকান্ত হয়ে ওনাকে দেখে গেলাম__আরে আমি কি ইচ্ছে করে ওনার শার্টে কেক মাখিয়ে দিয়েছি নাকি,কি করে এরকম নির্মম ভাবে উনি আমাকে কামড়ে দিতে পারলেন,দিলের মধ্যে কি দয়ামায়া বলে কিচ্ছু নেই ওনার____ওনার আশেপাশে আসতে মানা করলো তো ঠিক আছে,শুধু উনি কেনো ওনার এই বাড়িতেও আমি আর কোনোদিন আসবো না__পুরো সিলেট জুড়ে আইলা সাইক্লোন আম্ফান নামক ঝড় আসার পরো যদি অবন্তীর বাড়ি টাই নিরাপদ আশ্রয় বলে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে আমি তাও এ বাড়িতে আসবো না__আসবো না আসবো না তো আসবোই না__

__________________?_________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here