? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?
#৪র্থ_পর্ব
হোস্টেল ফিরে এসে হিয়া দেখে ওর রুমে যেই ছোট্ট মেয়ে টা থাকে মনীষা মানে ওর রুমমেট আরকি,ওহ রুমে নেই,মেয়ে টা হিয়ার এক বছরের জুনিয়ার ফাস্টইয়ারে পড়ে হিয়াকে বড় আপু বড় আপু বলেই ডাকে,হিয়া নিজেও তাকে কম আদর করে না একদম ছোট বোনের মতো আগলে রাখে__হিয়া ওর হাতে থাকা পার্চটা বালিশের তোলে রেখে,টেবিলের উপর ঢেকে রাখা এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেলে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে হিয়া ওর নিজের গা টা নিজের বিছানায় ধ্যাপ করে মেলে দিয়ে চোখ টা হালকা বন্ধ করে,বিছানার সাথে লেগে থাকা জানালাটা খোলা আর কিছুক্ষণ বাদে হয়তো মাগরিবের আযান দিবে তাই সন্ধ্যের আকাশ টা একরকম অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে তার উপর শীতের আলাদা আবেশ তো আছেই,জানালার পর্দাটা আলতো করে গ্রীলে গুজে দিয়ে বাহিরে একটা মগডালের দিকে তাকিয়ে হিয়া আনমনা হয়ে পড়ে,বিকেল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো এক এক করে স্মৃতিতে এসে জোড়ো হতে থাকে হিয়ার
হিয়াঃ আমার তো ভাইয়াকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ছিলো,কিন্তু উনি যে রকম করে রেগে ছিলেন তখন__রেগে থাকলেই বা কি আমার উপর তো রেগে ছিলেন না আমি তো একটা ছোট্ট করে হলেও____আর এই এক রুপম ভাইয়া সারাক্ষণ কি রকম আমার সাথে ফ্ল্যাট করে গেলো উফফ তবে ভাইয়া টা আমার সাথে হেঁসে খেলে কথা বললেও এক সেকেন্ড এর জন্যেও কিন্তু কোনোরকম বেয়াদবি করেনি আমার সাথে,খারাপ না ভালোই আছে
মনীষাঃ বড় আপুউউউ তুমি এসেছো__এই নেও খালা এটা তোমাকে দিলো
মনীষা ওর ঘাড়ের ব্যাগটা ওর হ্যাঙ্গারের এক কোণে রেখে একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে হিয়ার পাশে গিয়ে বসে পড়ে
হিয়াঃ তুই হাত মুখ না ধুয়ে আবার আমার বেডে এসে বসলি
মনীষাঃ এএ তোমার বেড যেনো হীরের তৈরি ময়লা লাগলে ক্ষয়ে যাবে
হিয়াঃ তা নয় তো কি কোহিনূর দিয়ে তৈরি আমার সব কিছু,ওহ অবশ্য তুই বুঝবি না
মনীষাঃ আমার ওতো বুঝে কাজ ও নেই__এই নেও খালা দিলো কে জানি নিচে তোমার নামে এটা রেখে গেছে,খালা তোমাকে ডাকতে আসতো পরে আমাকে দেখে আমার হাতে দিয়ে বললো তোমাকে দিতে
হিয়াঃ কি এটা!!আমার নামে!!আমাকে আবার কে কি পাঠাবে__আচ্ছা রাখ
মনীষাঃ খুলবে না,মানে দেখবে না কে কি পাঠালো এসময় হুট করে
হিয়াঃ ইচ্ছে নেই এখন__রাখ ওটা__আগে নামাজ টা পড়ে নেই
মনীষাঃ ঠিক আছে,আমিও ওয়াশরুমে যাই একবারে ওজু করে আসি
হিয়াঃ যা
হিয়া নামাজ পড়ে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পাশে রাখা প্যাকেট টা খুলতেই চমকে উঠে!!
হিয়াঃ একি এ-সব কি করে,এই চুড়ি গুলোতো আমি তখন ঔ দোকানে,আর এই টিপের পাতা, মেহেদী এগুলো আমাকে,কে,কেনো____এটা কি চিরকুট কি লেখা এতে!!
হিয়া জিনিস গুলো পাশে রেখে টপাটপ ছোট্ট চিরকুট টা পড়তে শুরু করে
?হিয়া,মনে হলো জিনিস গুলো তোমার খুব দরকার তাই আমি তোমার জন্য__জিনিস গুলো রাখো,রাখলে খুব খুশি হবো আমি?
হিয়াঃ আচ্ছা মুশকিল তো ছেলে টা কি করে জানলো এগুলো আমার দরকার,কেউ কি মেলার মাঠে আমাকে ফলো করছিলো!!কে?রুপম ভাইয়া!!না না উনি কি করে উনি তো স্টোলে বসে ছিলো তাহলে,আর এটা যে একটা ছেলেই দিয়েছে তার গ্যারান্টি কি,হ্যা খালাকে জিঙ্গেস করলেই তো হচ্ছে,আমিও না এতো বোকা
___________________
এদিকে বাড়িতে এসে উজান ওর রুমে ওর জ্যাকেট টা খুলে কোনোরকম পা টা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে এসে লেপ টা গায়ে জড়িয়ে গা টা বিছানায় মেলে দেয়__ডান হাত টা কপালে ভাজ করে রেখে উজান ওর চোখ দুটো বন্ধ করলেই চোখের সামনে ভেসে আসে হিয়া!হিয়ার কান্নামাখা চোখ জোড়া!নিজের বুকে লেপ্টে থাকা হিয়ার করুন চাহনী!__উজান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর বা হাত দিয়ে গলার কাছে আলতো করে চুলকাতে গিয়ে খেয়াল করে ওখানে কি যেনো একটা আঁটকে আছে,উজান টপাটপ চিমটি দিয়ে জিনিস টা হাতে নিতেই খেয়াল করে একটা কালো টিপ❤️উজান কিছুক্ষণ টিপ টার দিকে তাকিয়ে এর রহস্য ভেদ করতে থাকলে ওর মনে পড়ে হিয়া নাগরদোলায় উঠার সময় ওর বুক বরাবর গলার এই জায়গাটায় ওর মাথা গুঁজে দিয়েছিলো আর তখনি হিয়ার কপাল থেকে কি করে যে টিপ টা উজানের গলার কাছে গিয়ে আঁটকে গেলো আর তাছাড়া তখন অবন্তীও তো নাগরদোলা থেকে নেমে বললো হিয়া তোর কপালের টিপ টা কোথায়,হয়তো এই কালো টিপ টার হিয়ার কপালের চাইতে উজানের গলা টাই বেশি পছন্দ হয়েছে!!
উজান একটা মুচকি হেসে দিয়ে টিপ টা ওর ফোনের ব্যাকপেডে চিপকে দিয়ে চোখ টা আবার বন্ধ করে লেপ টা মুড়িয়ে শুয়ে পড়ে
__________________
এদিকে অবন্তী ওর মাকে বোলে হিয়ার মাকে ফোন লাগিয়ে দেয় যদি কোনোভাবে হিয়ার বাড়িতে রাজি করানো যায়,হিয়ার মা প্রমি আহমেদ প্রথমে অনেক না করলেও শেষ মেষ একরকম বাধ্য হয়ে,মনের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজি হয় হিয়াকে অবন্তীদের সাথে যেতে দেবার জন্য,কিন্তু এদিকে আবার হিয়াকেও উনি খানিকটা শাসন করে দেন কেনো অন্য কেউ ফোন করে বলবে বেড়াতে যাবার কথা,হিয়া কেনো অবন্তী কে পার্সোনালি মানা করতে পারলো না,মানা করলে কি আর অবন্তী ওর মাকে দিয়ে ফোন করাতো এখন যদি হিয়া বলেও যে ওহ মানা করেছিলো কিন্তু কে বিশ্বাস করবে হিয়ার কথা__উপরন্তু উনি হিয়াকে বলে সাবধানে থাকতে বড়ো বোনের মতো যেনো কোনো ভুল সে না করে
এরকম পারিবারিক চাপে কোনো মেয়েরই মন চাবে না বাহিরে গিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে মজা করে ঘুরতে,হিয়ার মন ও তাই চাচ্ছে না কিন্তু কোথাও না কোথাও হিয়ার ও তো ইচ্ছে করে এই হোস্টেলের চার দেয়ালের বাহিরে যদি নিজেকে একটু খোলা আকাশে নিজের ইচ্ছে মতো স্বাধীন ভাবে মেলে ধরতে পারতো সে তাই বাড়ি থেকে হাজার টা কথা শোনার পরো হিয়া সেগুলো দাতঁমুখ খিচে হজম করে নিয়ে তৈরি হয় অবন্তীদের সাথে বান্দরবান যাবার জন্য
কাল সকাল ৯টার বাস তাই হিয়া রাতে ডিনার করে এসেই ওর ব্যাগ ট্যাগ গুছাতে শুরু করলো সাথে নিলো মোট চারটে জামা দুটো বেরুতে যাবার হলে পড়বে আর দুটো হোটেলে রুমের ভেতর আর একটা তো বাসে পড়েই যাচ্ছে,সাথে নিয়ে নিলো সাজার জন্য ড্রেস গুলোর সাথে মিলিয়ে রাখা ম্যাচিং চুড়ি,একটা গাড় মেজেন্টা রঙের লিপস্টিক যদিও লিপস্টিক টা কেনার পর দু বারের বেশি হিয়া সেটা ঠোঁটে মাখে নি ওখানে গিয়েও যে মাখবে তার নিশ্চয়তা শূন্যের কোঠায় তাই ওটা নেওয়া না নেওয়া সমান,তারপর ব্যাগটায় ভরিয়ে নিলো একটা কোল্ড ক্রীম,একটা পারফিউম যদিও হিয়া একদম প্রয়োজন না হলে পারফিউম ব্যবহার করে না কারণ পারফিউম ব্যবহার করা তো মেয়েদের ক্ষেএে হারাম তাই হিয়া যতোটা সম্ভব এই ছোট্ট খাটো ব্যাপার গুলো মেনে চলার চেষ্টা করে,এরপর সাথে নিলো নিজের টুথব্রাশ আর সাইড ব্যাগ টায় ভরিয়ে নিলো একটা পানির বোতল,দুটো কালো টিপের একটা পাতা,ঔ চুড়ি গুলোর সেট,একটা মেরিল,আর টাকা রাখার ছোট পার্চ এইতো হয়ে গেলো হিয়ার ব্যাগপ্যাক হ্যা শেষে মনে পড়াতে টুক করে ভরিয়ে নিলো একটা গরম সোয়েটার যেটা এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডার জন্য অতীব জরুরি
সকাল ৯টার বাস ছাড়ার কথা থাকলেও বাস আধা ঘণ্টা লেট করেই ছাড়ে__দুটো মাঝারি সাইজের বাস আনা হয়েছে একটায় ফুল আর একটায় তিন ভাগের দু ভাগ ভর্তি,দুটো বাসেই মেয়েদের সংখ্যা বেশি তাই যাওয়ার সময় এলোমেলো করে গেলোও আসার সময় ঠিক হয় সব মেয়েরা একি বাসে আসবে___অবন্তী আর হিয়া পাশাপাশি বসেছে,হিয়ার শরীর টা মাঝরাত থেকে হালকা খারাপ হওয়ার অবন্তী হিয়াকে জানালার পাশের সিট টা ছেড়ে দিয়েছে__
অবন্তীঃ উফফ হিয়াআআআআ আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে না আজ,আমি তুই একসাথে বান্দরবানে যাচ্ছি,নিজেকে কি রকম আজ ভাইয়াদের মতো বড় বড় ফিল হচ্ছে ইসস___জানিস আমি কাল কথায় কথায় নাবিলাকে হুট করে এই ট্যাুরের কথা বলে ফেললাম যে আমি আর তুই একসাথে বান্দরবান যাচ্ছি তারপর বেচারি তো মনে হয় আমার উপর খুব ক্ষেপে গিয়েছিল আমি কেনো ওকে সাধি নেই আগে কথা টা__বল তো এটা কি আমার এ্যান্জেন্সি না আমার বাপের যে আমি ওরে টানমু,বোঝেও না
হিয়াঃ তা আমাকে টানলি কেনো তখন জিঙ্গেস করলে তুই কি উওর দিতি
অবন্তীঃ আরে তোর টা তো স্পেশাল কেস!!ভাইয়ার হবু বউ বলে কথা তোকে না টানলে কি চলবে আমার টুট
হিয়াঃ তুই আবার শুরু করলি এরকম করলে কিন্তু আমি নেমে যাবো বলে রাখলাম
অবন্তীঃ নাম দেখি কতো পাস আর শোন এতো ভাব নিস না আমি কিন্তু ইদানীং খুব ভালো করেই খেয়াল করছি ভাইয়ার মনে মনে কিন্তু তুই আবছার উপর ঝাপসা হয়ে গেথে যাচ্ছিস দিন দিন
হিয়াঃ হোয়াট আবছার উপর ঝাপসা
অবন্তীঃ আরে এটাও বোঝা না শোনো মেয়ের কথা,আরে এটা তো আজকাল কার কমন ডায়লগ মানে মনে আছে আবার মনে নেই এই টাইপ কিছু
হিয়াঃ মানে যা তা
এদিকে বাস ছাড়ার সময় হলে সবাই বাসে উঠে নিজ নিজ পছন্দ মতো সিটে বসে যায়,উজান আজ গায়ে একটা পাতলা সোয়েটার আর ওর আম্মুর গায়ে দেওয়া বিশাল চাদর টা জড়িয়ে নিয়েছে,উজান ভাবেনি বাহিরে এতো ঠান্ডা গাড়িতে ওঠার আগে উজানের কাপাকাপি দেখে বাসবি আন্টি নিজেই নিজের চাদর টা খুলে উজানকে লেপ্টে দিয়ে বলেছে গা থেকে চাদরটা না খুলতে__উজান আর রুপম হিয়াদের ডান সাইডের সিট টায় বসলেও রুপম অবন্তী কে পাক্কা পাঁচশ টাকার একটা নোট ঘুষ দিয়ে হিয়ার পাশে গিয়ে বসে পড়ে__আর অবন্তী গিয়ে উজানকে এ সাইডে সরিয়ে জানালার পাশে বসে যায়
অবন্তীঃ হিয়ার কিন্তু শরীর টা হালকা খারাপ খারাপ লাগছে রুপম ভাইয়া,ওকে কিন্তু একটু চোখে চোখে রেখো কেমন
রুপমঃ যদি কেউ রাজি থাকে তাহলে তো তাকে শুধু চোখে চোখে কেনো এখানেও(বুকের বা পাশে হাত দিয়ে)রাখতে রাজি আমি
তিশাঃ তুই কি রে হ্যা,তোর থেকে বয়সে কতো ছোট্ট একটা মেয়েকে লাইন মারছিস,তোর লজ্জা করে না
সন্ধিঃ ওর আর লজ্জা সেদিন মেলায় যা খেল দেখালো__হ্যা রে হিয়া কি করে সহ্য করো ওর এতো ফ্লাটিং আমি হলে তো ঠাটিয়ে একটা গালে বসিয়ে দিতাম
রুপমঃ হিয়া তোর আর তিশার মতো বেয়াদব নাকি যে কথায় কথায় পুরুষজাতির গায়ে হাত তুলে
তিশাঃ আমি কবে আবার কোন পুরুষ জাতির গায়ে হাত তুললাম শুনি
রুপমঃ না সোনা তুমি হাত তুলতে পারো নাকি এজন্য তো আমাদের রাসেল ভাইয়ার গাল টা সবসময় লালটুসটুসা হয়ে থাকে আমরা কি বুঝি না
রুপম এর কথায় বাসের সবাই হেঁসে দিলেও তিশা মুখ ফুলিয়ে রাসেল এর দিকে তাকিয়ে থাকে এদিকে তাসফিয়া উজানের আরো একজন লেডিলাভ সে অবন্তীর উপর ক্ষেপে মুখ ফুলিয়ে এতোক্ষণ বসে থাকলেও এবার মুখ খুলে ন্যাকামো শুরু করে দেয়__নীলিমা যাও উজান কে পছন্দ করে বলেও ভদ্রতা বজায় রাখে কিন্তু এই মেয়ে তো ন্যাকামির ম্যাক্স প্রো লাইট একটা,অসহ্য
তাসফিয়াঃ উজান বেবি
উজানঃ হ্যা বেবি(ফোনের দিকে মুখ গুঁজে রেখেই)
তাসফিয়াঃ আসার সময় কে কোথায় বসেছি বসেছি যাওয়ার সময় কিন্তু আমি আর তুমি একসাথে একি সিটে বসবো,আর এই কথা টা তোমার বোন কে ভালো করে একটু বুঝিয়ে দিও প্লিজজ,ওকে বেবি
উজানঃ ঠিক আছে বেবি
অবন্তী ক্ষেপে গিয়ে সিটের উপর উঠে পেছনে ঘুরে ভ্রু-কুচকে চিৎকার দিয়ে উঠে__উজান আর অবন্তী কে মানা করে না কারণ সে জানে তার চটপটি টাইপ বোন ঠিক কি কি করতে পারে এই মুহুর্তে এমনকি ওখানে পৌঁছেও,তাই তাসফিয়া কে শাস্তি দেবার এই সুযোগ উজান মোটেও হাত ছাড়া করে না সারাক্ষণ তো ভার্সিটিতে উজান বেবি উজান বেবি বলে বলে মাথা এক বারে পাগল করে দেয় অসহ্য মেয়ে একটা
অবন্তীঃ কেনো কেনো কেনো আমি কেনো আমার সিট ছেড়ে দেবো,why
তাসফিয়াঃ এরকম করো কেনো তুমি অবন্তী, তোমার ভাইয়ারো তো কিছু পার্সোনাল স্পেস দরকার তাই না বলো
অবন্তীঃ পার্সোনাল স্পেস!!তা এই পার্সোনাল স্পেস এ কি কাজ শুনি বলো বলো বলো
তাসফিয়াঃ ওটা তো পার্রসোনাল না ওটা কি আর পাব্লিকলি এরকম করে বলা যায় বলো
অবন্তীঃ যায় না__ওকে তাহলে আমিও আমার সিট ছাড়বো না যাও,দেখি কে কি করে আমাকে ভাইয়ার পাশ থেকে সারিয়ে দেয় হু
হিয়াঃ এই মেয়েটা সত্যি পাগলি বড় ছোট কিচ্ছু লেহাজ করে না
উজানঃ আ অবন্তী বস না,পড়ে যাবি তো
অবন্তীঃ আ হা পড়বো না
সন্ধিঃ তা নীলিমা তুই কিছু বলছিস না যে তাসফিয়া তো চললো বলে উজানের পাশে পাশে
নীলিমাঃ আমি আর কি বলবো,আমি তো জানি অবন্তী পাশে না বসলে উজান আসার সময় আমার পাশে বসেই বাড়ি ফিরবে এটু্কু ভরসা উজানের উপর আছে আমার
অবন্তীঃ(নিজ মনে)তবে রে এতো ভরসা আমার ভাইয়ার উপর,তোমাদের কাউ রেই আমার ভাবি হিসেবে পছন্দ হয়নি কেমন বোরিং বোরিং টাইপ গো তোমরা দুটোতেই,এই তাসফিয়া না কাসফিয়া তো এসে থেকেই মেক-আপ ডলছে মুখে উফফ,আমার ভাবি তো হবে আমার বেস্টি,আমরা দুজন এক লগে ঝাঁপাঝাপি করবো,মারামারি করবো,লুকোচুরি খেলবো,চুল ছেড়াছেড়ি করবো ইসস কতো মজা হবে তাই তোমরা নট এলাও হুহ____
কথাটা বলেই আপন মনে খিলখিল করে হেঁসে উঠে অবন্তী,হিয়া একটু মাথা বাকিয়ে অবন্তীর দিকে তাকাতেই অবন্তী হিয়াকে দেখে একটা চোখ মেরে দিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে উঠে,হিয়া অবন্তীর ওরকম ভিলেন ভিলেন মুখটা দেখেই একটা ভেঙ্গেচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নেয়
অবন্তীঃ(হালকা কেশে নিয়ে) এই ট্যাুরে না আসলে তো জানতামই না যে আমাকে সবাই তাদের কলিজার ননদ বানানোর জন্য এরকম উঠে পড়ে লেগে আছে,উফফ আমার ড্যাশিং ভাইয়াটার উপর তাহলে নজর রাখতে হবে দেখছি____শোনো আপুরা আমার ভাইয়ার পাশের সিট পেতে হলে না আগে আমাকে ইমপ্রেস করতে হবে যে আমাকে সুন্দর করে ইমপ্রেস করতে পারবে আমি তাকেই এই সিট খানা উপহার দেবো নয়তো আমি চললুম টা টা বাই বাই
সন্ধিঃ অবন্তী তুই কিন্তু দিন দিন আরো বেশি ছটফটে হয়ে যাচ্ছিস,হিয়াকে দেখতো কতো শান্ত এ বয়সেও আর তুই
অবন্তীঃ হা হা হা সন্ধি আপু কাকে শান্ত বলছো বলো তো,হিয়াকে চেনা না এখনো বহুত বাকি গো তোমাদের,তোমরা অচেনা বলে মহারানী ভদ্রসভ্য সেজে আছে ওদিকে আমরা যখন সব ফ্রেন্ডরা আলাদা হই না তখন ওহ যা করে শুনলে তুমি জলে ডুব দিবা__ওর মতো পাকনি তুমি এই পুরো দেশ কেনো আমার তো মনে হয় এই পুরো ওয়াল্ড জুড়ে খুঁজলেও আর একটা পাবে না
রুপমঃ তা কি কি করে হিয়া এমন শুনি,হিয়া তো বলবে না তুই একটু বলে দে
রুপমের প্রশ্নের উওরে অবন্তী এমন করে লাফিয়ে উঠলে যে তাকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ ওকে বিসিএসের ভাইভায় সব চাইতে সহজ প্রশ্ন টা করা ফেলেছে
অবন্তীঃ কি করে না সেটা বলে__ধরো একসাথে টিউশন থেকে ফিরছে ও কি করে জানো দুম করে কারো বাড়ির কলিংবেজ বাজিয়ে দেয় দৌড় আর আমরা সব গুলো বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকি কি হলো এটা ও দৌড় দিলো কেনো ওমা সাথে সাথে গেট খুলে একজন মহিলা বেড়িয়ে বলে উঠে এই মেয়েরা কি চাই ভর দুপুরে এরকম করো কলিং বেল বাজাচ্ছ কেনো
অবন্তীর কথায় সবাই হিয়ার সিটের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে কিন্তু উজান বাদে উজান তখনো ওর ফোনে মুখ গুজে থাকে যেনো অবন্তীর কোনো কথা ওর কানে যাচ্ছে না
অবন্তীঃতারপর ধরো বায়োলজি টিউশনে যদি কেউ আগে গিয়ে ওর ফাস্টের সিট টা ব্লক করে নেয় তখন ও একটা চুইংগাম চাবিয়ে ইচ্ছে করে সেই মেয়ে টার জামার মধ্যে বা চুলের মধ্যে গুঁজে দেয় তার মনের রাগ মেটানোর জন্য___তারপর এই যে ধরো আমাদের সাথে যে নাবিলা পড়ে তো ওর বয়ফ্রেন্ড রোজ আসে, আমাদের যে টিউশনের সাথে লাগানো গলি টা আছে ওখানে নাবিলার সাথে দেখা করতে তো হিয়া একবার কি করছিলো জানো চুপ করে স্যারের বাড়ির প্রাচীরের সাথে লাগানো পেয়ারা গাছ টায় উঠে টপাটপ কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছে ওদের তাও আবার দুজনের চিপকে থাকা পিক
সন্ধিঃ এ মা তারপর
অবন্তীঃ তারপর আবার কি সেই পিক দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে নাবিলা কে দিয়ে আমাদের সবার পুরো বায়োলজি প্রাক্টিকেল করিয়ে নিয়েছে___এরকম যে আরো কতো কি করে ওহ রোজ,এখন ভাবো তাহলে এই ভদ্র সভ্য মেয়েটা আসলো কতো ড্যান্জারাস মহিলা
সন্ধিঃ হিয়া সত্যি তোমাকে দেখলে কিন্তু বোঝার উপায় নেই তুমি এতো দুষ্টু
রুপমঃ আমি তো অবন্তীর কথা শুনে ইমপ্রেসড হয়ে গেলাম সন্ধি!!তা ম্যাজিক কুইন এরপর গাছে উঠে এরকম পিক তুলবার আগে আমাকেও ডেকে নিও কেমন,দুজনে না হয় একসাথে
সন্ধিঃ হ্যা হ্যা হিয়া ডেকে নিও,রুপম ভাই আবার আমাদের ছবি তোলায় দারুণ এক্সপার্ট
হিয়া কিছু না বলে শুধু সবার কথা শুনে হেসে যায়,শরীর টা কেনো জানি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হবে হবে ভাব করে আসছে হিয়ার__অবন্তী তখনো সিটের উপর দাঁড়িয়ে সবার সাথে গল্প দেওয়াতে ব্যস্ত,উজান অবন্তী কে বকলেও অবন্তী কিছু তেই বসছে না
অবন্তীঃ এই রুপম ভাইয়া কি তখন থেকে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছো বলো তো হিয়ার সাথে,ওসব দাদা-দাদি নানা-নানির কাহিনি শুনালে না হিয়া ইমপ্রেস হবে না তার চেয়ে একটা গান শুনাও দেখবে ম্যাজিকের মতো হিয়া গলে গিয়েছে
রাইসাঃ হ্যা রে রুপম গা না একটা গান অনেকদিন তো হলো তোর বা উজান কারোরি গান শুনি না,আর এই যে উজান রাখ না এখন ফোন টা কি এসে থেকে ফোনে মুখ দিয়ে আছিস
রুপমঃ ম্যাজিক কুইন গান শুনবে
হিয়াঃ শুনালে শুনবো
সন্ধিঃ এই যে এবার তো হিয়াও পারমিশন দিয়ে দিয়েছে এবার তো গা
সবার রিকুয়েষ্ট রুপম গান শুরু করে,আজ কুয়াশা ভীষণ থাকায় গাড়ি অনেক ধীরে চলছে
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
মেয়ে তুমি এখনো আমায় বন্ধু ভাবো কি?
কখনো কি আমায় ভেবেছিলে বন্ধুর চেয়ে একটুখানি বেশি
নাকি ভেবে নেব আজও তুমি আমায় চেনোনি?
ভালো লাগেনা তোমায় এ কথা বলেছি বার বার বার
তোমার মন ভেঙ্গে যাবে হেসেছিলাম আমি আবার
সবই ছিল ভালোবাসা বুঝলেনা বুঝলেনা
বুঝতে যদি দেখতে আমায় লাগছে অচেনা
হাসছি আমি বলছি কথা, ভাবছো দেখি না তোমায়
তুমি আমার হৃদয়ে আর দুর থেকে তাকিয়ে দেখায়
ক্ষণিকের বন্ধুরা যখন আর থাকবে না
খুঁজে দেখো পাবে আমায় আমি সেই চিরচেনা
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
রুপমের গান শেষ হলে সবাই হাততালি দেয় আর পেছন থেকে সন্ধি খোঁচা দিয়ে উঠে
সন্ধিঃ গান টা সুন্দর গেয়েছিস তবে একটা মিস্টেক হয়ে গেছে তো
অবন্তীঃ মিস্টেক!! কি মিস্টেক গো আপু আমি যতোদূর জানি সব তো ঠিকই ছিলো
সন্ধিঃ ওটা বন্ধু না হয়ে হওয়া উচিৎ ছিলো ভাইয়া__মেয়ে তুমি এখনো আমায় ভাইয়া ভাবো কি, কখনো কি ভেবেছিলে ভাইয়ার চেয়ে একটু খানি বেশি__বুঝলা অবন্তী বোনু
সন্ধির গানের লাইন শুনে উজান থেকে শুরু করে সবাই মুচকি হাসি দিয়ে উঠে আর অবন্তী যে কি মজা পেয়েছে সন্ধির মুখে এই লাইন টা শুনেহায় রে তার হাসি থামবার কোনো নামই নেই আর
সারারাস্তা এরকম করে গল্পের মাঝে কাটিয়ে এখন গাড়ি ফুটভিলেজে,আর এক ঘন্টা বাদে হয়তো সন্ধ্যা নামবে তাই বিকেলের পরিবেশ টা নিতান্তই মনে দাগ কাটার মতে,খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই একটু যে যার মতো ফুট ভিলেজের চারপাশ টায় হাটা চলা করে কেউ বা সোজা বাসে উঠে সিটে গা মেলে দেয়,অবন্তী ওয়াশরুমে গেছে তাই হিয়া রেস্টুরেন্ট টা থেকে বেড়িয়ে সামনে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে অবন্তীর জন্য অপেক্ষা করছিলো
উজানঃ হিয়া (অস্ফুটে)
হিয়াঃ (পেছন ফিরে) ভাইয়া আপ-নি
উজানঃ এদিকে আসো
হিয়াঃ জ্বী বলুন
হিয়া এগিয়ে গিয়ে উজানের সামনে আসলে উজান ওর ফোনের ব্যাকপ্যাডে রাখা সেদিনের টিপ টা বের করে হিয়ার কপালে পড়িয়ে দেয়,হিয়া কি বলবে বুঝতে পারে না শুধু ওর মায়ামাখা চোখ দুটো দিয়ে তাকিয়ে থাকে উজানের দিকে
উজানঃ Now it’s look perfect
হিয়াঃ অবন্তীর ভাইয়া তার ফোনের ব্যাকপ্যাডে যে মেয়েদের সাজসজ্জার জিনিস রেখে দেয় জানা ছিলো না তো
উজানঃ (হালকা হেসে চোখ নামিয়ে নিয়ে)__শরীর কেমন লাগছে এখন
হিয়াঃ বুঝতে পারছি না,তবে স্বস্তি পাচ্ছি না
উজানঃ যাও বাস-এ গিয়ে সন্ধিদের সাথে কথা বলো আমি অবন্তী কে নিয়ে আসছি
হিয়া একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে বাসে গিয়ে বসে পড়ে,এদিকে উজান আর হিয়ার এই কান্ড সন্ধির চোখে পড়ে ঠিকি,কিছুক্ষণ পর অবন্তী আর উজান আসলে যে যার সিটে আগের মতো বসে পড়ে,সারাটা রাস্তা রুপম হিয়ার সাথে ওর শৈশব কাল থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত লাইফে যা যা ইন্সিডেন্ট হয়েছে সব কিছু বলে ফেলে যদিও হিয়ার এতে কোনোরকম বিরক্ত আসে না কারণ রুপমের কথা বলার ভঙ্গি যে রকম সুন্দর এরকম করে ছন্দ মিলিয়ে কথা বললে সব মেয়েরই শুনতে ভালো লাগবে তবে রুপম যাই করুক নিজের লিমিট টুকু বজায় রেখেই হিয়ার সাথে ফ্লাট করে কোন রকম বেয়াদবি ছাড়া
হিয়াঃ ভাইয়া কিছু মনে না করলে আপনি আমার এ পাশে বসবেন না মানে আমার কেনো জানি খুব শীত করছে,জানালা টা লাগালাম তারপরো কোথা থেকে যে বাতাস আসছে
রুপমঃ আরে বোকা মেয়ে এতে এতো হেজিটেশন ফিল করবার কি আছে,থামো গাড়ি টা স্লো হলেই আমি যাচ্ছি ওপাশে
হিয়াঃ থ্যাংকস
রুপম হিয়াকে এপাশে দিয়ে নিজে গিয়ে জানালার পাশে বসে পড়ে
রুপমঃ হিয়া তুমি একটু চোখ টা বন্ধ করে রেস্ট করো তোমার মনে হয় জ্বর আসছে
হিয়াঃ আমারো তাই মনে হচ্ছে
রুপমঃ হুম__আমি আছি বেশি খারাপ লাগলে আমাকে ডেকে নিও কেমন
হিয়াঃ হুম
হিয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে,এদিকে উজানো বাসে ওঠার পর থেকে অবন্তীকে একটা মুভি ধরিয়ে দিয়ে নিজের গায়ের চাদরটা লেপ্টে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমোনের চেষ্টা করছিলো__সময় পেরুতে থাকে আর দু ঘন্টা পেরুলেই গাড়ি গিয়ে থামবে রিসোর্টে,আর গাড়ি যতো বান্দরবান এর দিকে এগোতে থাকে শীত যেনো তোতোই প্রবল বেগে আছড়ে পড়তে শুরু করে,বাসে কারো জানালা খোলা কারো বন্ধ,সবাই যেই এনার্জি নিয়ে এতোটা রাস্তা হইহল্লোড় করলো তার ছিটেফোঁটা এনার্জিও এখন কারো শরীরে নেই তাই যে যার মতো নিজেকে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে,বাস এর পরিবেশ টা নিমিষে কিরকম চুপচাপ আর গম্ভীর হয়ে গেলো
এদিকে রুপমো চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে হালকা সে নিজেও টের পাই নি,উজান ওর মুখ টা হিয়ার দিকে করেই ঘুমোচ্ছিলো হঠাৎ করে বাসের ঝাঁকুনি তে উজানের ঘুম টা পাতলা হয়ে পড়লে উজান চোখ মেলে সামনে তাকিয়েই হালকা অবাক হয়ে যায় হিয়া এই সিটে কখন এলো?এই সিটে তো রুপম ছিলো তাহলে,উজান একটু সোজা হয়ে বসে হিয়ার দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকে,হিয়া তখন চোখ বন্ধ করে ছিলো যদিও সে আর সবার মতো ঘুমোয়নি,হিয়ার শরীর টা সময় বাড়ার সাথে সাথে ক্রমশ খারাপ হতে থাকে,আর মনে হয় পুরো বান্দরবানের শীত যেনো এসে হিয়ার উপর হামলা করছে,হিয়া ওর সিটের মধ্যে নিজের দু হাতে নিজেকে লেপ্টে আছে যদি এতে শীত একটু কমে,মাথা টাও তো ধরেছে ভীষণ,হাত পা কাপছে আর হিয়ার শরীরের এই অসুস্থতা যেনো উজান পাশে বসেও অনুভব করতে পারছে__আচমকা চোখ খুলে তাকাতেই হিয়ার চোখ পরে উজানের উপর উজান কিরকম করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,হিয়ার চোখে চোখ পড়তেই উজান তৎক্ষনাৎ ওর চোখ নামিয়ে নেয়,নিজেকে একটু ইজি করে নিয়ে
উজানঃ হিয়া
হিয়াঃ হুম
উজানঃ শীত করছে খুব
হিয়াঃ হ্যা
উজানঃ দেখি একটু উঠে বসো তো হালকা
হিয়াঃ কেনো
উজানঃ যেটা করতে বলছি সেটা করো
হিয়া হালকা উঠে বসলে উজান ওর সিট থেকে হিয়ার দিকে ফিরে নিজের গা থেকে বড়ো চাদরটা খুলে আলতো করে হিয়ার গায়ে জরিয়ে দিয়ে হিয়ার মাথা থেকে কোমড় অবধি ঢেকে দেয়__হিয়া শুধু মুখ তুলে উজানের দিকে তাকিয়ে আছে কি করছেন উনি এটা এখন যদি ওনার ঠান্ডা লাগে তখন
উজানঃ আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না,জ্বর টা তোমার আসছে আমার না
হিয়াঃ উনি কি করে সবসময় আমার মনের কথা টা বুঝে তার উওর দিয়ে দেন
সন্ধিঃ কি মামা কি চলে তখন টিপ এখন চাদর,তুমি তো দেখছি এ যুগের মীরজাফর ম্যাক্স প্রো,এভাবে পারলে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে
রাইসাঃ ভাগ্যিস রুপম বেচারা ঘুমিয়ে আছে নাহলে এরকম ফিল্মেটিক সিন দেখলে তো বেচারা কোমায় চলে যেতো
এই বলে রাইসা আর সন্ধি নিজেদের মধ্যে হেসে ফেলে,উজান ওদের কে চোখ রাঙিয়ে নিজের সিটে ঠিক হয়ে বসে কানে হেডফোন গুজে মাথা এলিয়ে আবার শুইয়ে পড়ে__এদিকে হিয়া এরকম একটা উইয়ার্ড সিচুয়েশনে ঠিক কি রকম রিয়াকশন দেওয়া উচিৎ ভেবে ভেবে কোনো কূল কিনারা না পেয়ে নিজেও ওর গায়ের চাদর টা লেপ্টে চোখ বন্ধ করে ফেলে
ঠিক রাত ৮টার দিক গাড়ি গিয়ে থামে রিসোর্টে তারপর ওখান থেকে আরেকটা গাড়ি নিয়ে পৌঁছাতে হয় মেইন কটেজে
রূপম রা যে কটেজ বুক করেছে সেটার নাম আকাশনীলা যেমন নাম দেখতে তেমনি সুন্দর মার্বেল পাথরে খোদাই করা কারুকার্য থেকে শুরু করে বিদেশি ডিজাইনের সব ইকুইপমেন্ট,এসব কটেজে উঠতে সেনাবাহিনীর আলাদা পারমিশনের প্রয়োজন হয় আর রুপমের চাচ্চু সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়াতে তাকে এ নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না,তবে এই কটেজে রুপমদের সাথে উঠেছে অন্য আর এক ফ্যামিলি উনিও রুপমের চাচ্চুর পরিচিত তাই এ নিয়ে রুপম আর বার্রগেনিং করে নি,অল্প খরচে এর চেয়ে বেশি আর কি চাই,
অবন্তী এতোক্ষণ খেয়াল করেনি হিয়া ওর ভাইয়ার চাদর গায়ে দাঁড়িয়ে আছে,হুশ ফিরতে অবন্তী দৌড়ে হিয়ার কাছে গিয়ে হিয়ার কোমড় চেপে ধরে
অবন্তীঃ কেস টা কি ডার্লিং ভাইয়ার চাদর তোমার গায়ে
হিয়াঃ সেটা তোর ভাইয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর আমাকে কেনো প্রশ্ন করছিস
অবন্তীঃ বাহ বা মেয়ের কথা বলার ধরন দেখো কি না আবার মিটমিট করে হাসছেও তো দেখছি,তলে তলে তাহলে ট্যাম্পু বাস রিক্সা বাইক সবই চলে দেখছি,শোনো মেয়ে আমার নজর কিন্তু কিচ্ছু এড়ায় না,আমার ভাবি হবার জন্য না তোমাকেও আমাকে ইমপ্রেস করতে হবে বুঝলা
হিয়াঃ বালাইষাট আমার বয়েই গেছে তোকে আমি আমার ননদ বানাবো হুহ
অবন্তীঃ সে দেখা যাবে সময় আসুক
___
রুপমঃ শালা তোর চাদর হিয়ার গায়ে কেনো why,তুই কোনোভাবে আমার থেকে আমার ক্রাশ কুইন হিয়াকে কেড়ে নিতে চাইছিস না তো
উজানঃ শেট আপ রুপম মাথা ঠিক আছে তোর মেয়েটা অসুস্থ এতটুকু তো অন্তত ভাব,সবসময় ই আর কি ভালো লাগে না
রুপমঃ আরে এতো রাগ করছিস কেনো আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম,আচ্ছা আয় খাবি চল
উজানঃ হুম
কটেজের মোট সাত টা দুই বেডের রুম বুক করা হয় তিনটা তে চারজন চারজন করে মোট বারো জন ছেলে আর বাকি চারটাতে চার জন করে মোট ১৬জন মেয়ে__হিয়া অবন্তী সন্ধি আর রাইসা এক রুমে আর তাদের দুটো রুম পেড়িয়ে উল্টোদিকে উজান রুপম রাসেল তুষার এই চার জন__সবাই বাস থেকে নেমে রুমে না গিয়ে নিচের রেস্টুরেন্ট এড়িয়াতে গিয়ে হালকা ফ্রেশ হয়ে রাতের ডিনার টা করে যার যার রুমে চলে যায়
অবন্তীঃ তুই বরং একবারে শুয়ে পড় হিয়া,ঔষধ তো খেলি,দেখ কালকে সকল অবধি যদি শরীর টা বেটার লাগে
হিয়াঃ হুমম থ্যাংকস বোনু আমার এতো কেয়ার করার জন্য
অবন্তীঃ বোনুউউউউ নাআআআআ বললল জল্লাদ ননননদদ
হিয়াঃ আস্তে আপুরা শুনবে,পাগলি একটা
অবন্তীঃ ঘুমো তো তুই,অসহ্য একটা
এমন সময় উজান এসে গেটে নক করলে সন্ধি উঠে গেট খুলে দেয়
উজানঃ সন্ধি এই ঔষধ গুলো হিয়াকে খাইয়ে দিবি প্লিজ,মেয়েটার শরীর টা ভালো না জ্বর আছে হালকা
অবন্তীঃ(ফোনের মধ্যে মুখ গুঁজে দিয়েই)তুমি লেট করে ফেলেছো ভাইয়াআআ,রুপম ভাইয়া এসে একটু আগে হিয়াকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে চলে গেছে হে হে
অবন্তীর কথায় উজান ওর মনে একটা কি রকম আঘাতের মতো অনুভব করে,কিন্তু কিছু বলে না মুখে একটা মেকি হাসি দিয়ে সন্ধিকে বলে গেট লাগিয়ে দিতে
সন্ধিঃ আরে ঔষধ গুলো তো দিয়ে যা উজান,আমাদের ও তো লাগতে পারে নাকি,উজান শোন,আরে শোন না
রাইসাঃ বেচারা মনে দুঃখ পাইছে বহুত ওরে আর খুচাস না তো তুই