“প্রিয় দিও বিরহ,পর্ব:০৪,০৫
লেখিকা-নাঈমা হোসেন রোদসী
৪.
কেঁপে ওঠে অন্তরআত্মা। ললাট বেয়ে নামে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা। শুঁকনো ঠোঁটদ্বয় বারংবার জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নেয় মেহতিশা। চিন্তায় হাত কচলাতে কচলাতে চামড়ায় শুষ্কতা তৈরি হচ্ছে। তবুও হাত থামছে না। অতিরিক্ত অস্থিরতায় শরীরটাও কাঁপছে।
মেহতিশা বিয়ের রাত থেকে যে দর্পণকে দেখেছে সেটা এই দর্পণ নয়। এরকম হলে তো মেহতিশা যেই কাজে এই বাড়িতে এসেছে তা করা সম্ভব না। মেহতিশা বিছানা ছেড়ে উঠে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। নিজের মোবাইলটা বের করে নিজের বাবাকে কল করে। তিন বার রিং হওয়ার পর রিসিভড হলো। মেহতিশা ভীত গলায় বলে,
‘বাবা, তুমি আমাকে এখানে থেকে নিয়ে যাও! ‘
শামীউল্লাহ জামান চমকে উঠলেন। দুইদিন হলো না বিয়ে হয়েছে। তিনি নরম গলায় বললেন,
‘কী হয়েছে মা? এতো অস্থির হচ্ছো কেনো? ‘
‘বাবা, কালকে ভেবেছি দ্রুত উদ্দেশ্য সফল করে পালিয়ে যাবো। কিন্তু নাহ! দর্পণের আজকের রূপ দেখে আমার ভয় হচ্ছে, আমি ধরা পড়লে না জানি কী হবে! ‘
‘দেখো মা, ভয় পেয়ো না। বাবা তো আছি। তোমাকে যেটা করার জন্য এতো কষ্ট করে বিয়ে করিয়েছি, সেটা শেষ করতেই হবে। তুমি চাও না বলো, সবাই ভালো থাকুক? ‘
মেহতিশা ভাবুক গলায় মলিন স্বরে বলে,
‘চাই বাবা চাই। আমি এটা করলে সবাই ভালো থাকবে সত্যি? ‘
‘হ্যা মা, তুমি তোমার বাবাকে ভরসা করো না? ‘
‘করি বাবা। আচ্ছা ঠিকাছে আমি থাকবো। ‘
‘আচ্ছা মা, সাবধানে থেকো। আর তো মাত্র ছয়টা মাস। তারপর কাজ শেষ হলেই তোমাকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিবো। আর নিজেকে নরম দেখাবেনা একদমই। কাল যেমন ছিলে তেমনই থাকবে৷ আমাকে তুমি ওয়াদা দিয়েছো মনে রেখো। ‘
মেহতিশা কেটে যাওয়া কলটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘ শ্বাস। মেহতিশা মনে মনে সেইদিনের কথা ভাবে, যেদিন তার জীবনে হঠাৎ করেই এক কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। মেহতিশা চোখ বুঁজে ফেলে, চোখে ভেসে ওঠে একটা নির্মম দৃশ্য। জলন্ত আগুন সব ধ্বংস করে দিচ্ছে। লাল ডানা দিয়ে রাক্ষসীর ন্যায় জীবন্ত মানুষগুলোকে খেয়ে ফেলছে।
মেহতিশার দুই চোখ বেয়ে নেমে আসে নোনাজল। ঠোঁট চেপে মেহতিশা বিরবির করে বলে,
‘আর কতদিন নিজেকে আড়ালে রাখবেন দর্পণ শেখ?
একদিন না একদিন তো পতন হবেই। ‘
–
চুলোয় চায়ের পানি ফুটছে। সামনেই আনাড়ি মেহতিশা দাঁড়িয়ে আছে। কী করবে বুঝতে পারছেনা!
একবার টি টেবিলের দিকে উঁকি দেয়। একগাদা মহিলারা বসে আছে। এরা লালিমা শেখের বাপের বাড়ির আত্মীয়। বিয়ের সময় আসতে পারেনি বলে আজ এসেছে। সেই উপলক্ষে লালিমা শেখ বলেছেন মেহতিশাকে সবার জন্য হাল্কা নাস্তার ব্যবস্থা করতে।
চা সঙ্গে ফুলকপির পাকোড়া। বিপদের ঘড়ি, কপালে ঘোর শনি! অতএব চুলোয় পানি ফুটতে দিয়ে অসহায় দৃষ্টি মেহতিশার। মোবাইলটা কাছে থাকলে এই মুহুর্তে ইউটিউব দেখেই চটপট বানিয়ে ফেলতে পারতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মোবাইলটা দ্বিতীয় তলায় ঘরে। ড্রইংরুম পেরিয়ে গেলেই প্রশ্ন করা হবে, নাস্তা বানানো শেষ? কচুর শেষ! পানি ফুটতে ফুটতে পাতিল পুড়ে যায় প্রায়। বুঝতে পারেনা মেহতিশা। আন্দাজেই পানিতে প্রথমে চিনি ঢেলে দেয়। তারপর ছয় সাত চামচ চায়ের পাতা ৷ প্রথমে দুই চামচ দিয়ে কম মনে হওয়ায় এতগুলো দিলো সে৷ কিন্তু তারপর পানি লাল রঙের জায়গায় কুচকুচে কালোতে পরিণতি হলো।
ভড়কে গেলো মেহতিশা। এমন তো হওয়ার কথা না। চায়ে অল্প একটু দুধ মেশালো। ওমা! রক্তের মতো দেখা যাচ্ছে! মেহতিশা করুণ চোখে চায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে যেনো চায়ের পাতিলটা ওকে উপহাস করছে। রাগে ফসফস করতে থাকে।
রান্নাঘরের দিকে ধীরে ধীরে হুইলচেয়ার চালিয়ে দর্পণ এলো। অনেকক্ষণ ধরে ঘরে নেই বলেই এসেছে। মেহতিশার দিকে তাকিয়ে আর পাতিলটা দেখেই বুঝতে পারে দর্পণ। উল্টো পাল্টা কাজ করে বেচারি ফেঁসে গেছে। ঠোঁট টিপে হেসে দর্পণ মৃদুস্বরে বলল,
‘কোনো সমস্যা হয়েছে বউজান? ‘
মেহতিশা ঘুরে তাকায়। দর্পণের সামনে নিজের অসহায়তা প্রকাশ করতে নারাজ সে। তাই নাক ফুলিয়ে বলে,
‘নাহ, কোনো সমস্যা নেই। ‘
‘চা বানাতে পারেন না, এটা বললেই পারেন! ‘
মেহতিশা অহং দেখিয়ে বলে,
‘আমি আপনাকে কিছু বলেছি? আপনি যান তো যান! ঘরে যান।’
দর্পণ মুচকি হেসে বলে,
‘এতোবার জান বললে কীভাবে যাই? ‘
মেহতিশা বেকুবের মতো বলল,
‘আমি কখন জান বললাম! ‘
‘এই যে এইমাত্র বললেন। ‘
মেহতিশা বিরক্তি নিয়ে তাকায়। দর্পণ সেদিকে তোয়াক্কা করে না। চুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,
‘পাতিলটা নামিয়ে ফেলুন পুড়ে যাচ্ছে। ‘
মেহতিশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পাতিল নামায়। দর্পণ আদেশ দেয়ার গলায় বলে,
‘নতুন পাতিল বসান পানি দিয়ে। ‘
মেহতিশা বুঝতে পারলো, দর্পণ ওকে সাহায্য করতে এসেছে। মেহতিশা নিঃশব্দে নতুন পাতিল বসায়। সে জানে, এখন ভাব দেখিয়ে দর্পণকে যেতে বললে নিজেরই বিপদ। সবার সামনে হেয় হতে হবে। পাতিল বসিয়ে দর্পণের দিকে তাকায়। অর্থাৎ, এখন সে কী করবে? দর্পণ হাসিমুখেই গাইড করে মেহতিশাকে। চায়ের মশলা বের করে পাশে রাখে। তারপর ফুলকপি ধুয়ে নিয়ে পিস করে কেটে নেয়। মেহতিশা একদমই কাটতে পারছিলো না বিধায় দর্পণ শান্ত গলায় বলল,
‘ওটা আমাকে দিন। ‘
মেহতিশা প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো। হুইলচেয়ারে বসে কীভাবে কাটবে? দর্পণ মুচকি হেসে নিজেই কাটিং বোর্ড নিয়ে নেয়। মেহতিশাকে ইশারা করে সামনের ছোট টুলটা এগিয়ে দিতে। মেহতিশা চুপটি করে এগিয়ে দেয়। দর্পণ বোর্ডের উপর রেখে কাটতে শুরু করে। মেহতিশা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ মেহতিশা টের পায়, সামনে বসে থাকা শ্যামবর্ণীয় মায়াময় পুরুষের মুখটা তার ভীষণ স্নিগ্ধ ঠেকছে।
স্নান করা ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে গুছিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। এমন বেয়াদব চিন্তা ভাবনাকে লাথি মেরে বের করে মেহতিশা। চোখ সরায়। চা প্রায় হয়ে এসেছে। এবার সে বুঝতে পেরেছে, কেনো চা হয়নি তখন। মনে মনে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে দর্পণের প্রতি। মস্তিষ্কের কোথাও একটা প্রশ্ন জাগে, এত সুন্দর নিরীহ দেখতে মানুষটা কী আদৌও এতোটা ভালো? নাহ! একটুও না। যে লাখ লাখ মানুষকে কয়েকটা টাকার জন্য মারে সে কীভাবে ভালো মানুষ হয়! ঘৃণায় মুখ কুঁচকে আসে মেহতিশার৷ অন্তঃকরণে সৃষ্টি হয় ক্রোধ।
দর্পণের ফুলকপি কাটা শেষ। সে যত্ন করে বাটতে উঠিয়ে সেগুলো মশলা মেখে দেয়। মেহতিশার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘এবার শুধু বেসনে ভেজে নিলেই হবে। ‘
মেহতিশা বাটিটা উঠিয়ে নেয়। কিছুটা কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে,
‘আপনি রান্না জানেন কীভাবে? ‘
‘কারণ জানতাম, আমার ফুলনদেবী রান্না পারেনা। তার জন্য আমাকে অবশ্যই রান্না শিখতে হবে। তাই শিখে ফেললাম! ‘
মেহতিশা ভ্রু কুচকে বলল,
‘ফুলনদেবী কে? ‘
দর্পণ দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে বলল,
‘আমার গার্লফ্রেন্ড। ‘
মেহতিশা রাগে ফেটে চৌচির, কন্ঠ উঁচু হয়ে যায়,
‘বেহায়া লোক! বিয়ের পর কীসের গার্লফ্রেন্ড? ‘
দর্পণ হাসে কিছু বলেনা। হাতটা টিস্যু দিয়ে মুছে নেয়। হুইলচেয়ার চালিয়ে চলে যায় রান্নাঘর ছেড়ে। মেহতিশা রেগে মুখ ফুলিয়ে ফেলে। গটগট করে ফুলকপি গুলো ভেজে পাকোড়া বানায়। মেহমানদের দিয়ে দুইটা কথা বলে ঘরে চলে যায়। রাগে গা কাঁপছে। যদিও আরেক মনে প্রশ্ন আসে, দর্পণের গার্লফ্রেন্ড থাকলে তার কী! তবুও রাগ কমেনা। মনে মনে ভাবলো, ঘরে এসে সবার আগে দর্পণকে ইচ্ছে মতো ধুয়ে বের করবে, কে ওর গার্লফ্রেন্ড! থাপড়িয়ে কানপট্টি গরম করবে। গার্লফ্রেন্ডকে জুতোপেটা করে দেশছাড়া করবে। প্রেমের ভূত নামাবে। ঘরের দরজা খুলে ঢুকে যায়। রান্নাঘরের গরমে শাড়ির আঁচল সরে যায় কোমর থেকে। এলোমেলো পায়ে এসে ধপ করে দর্পণের পাশে বসে। প্রশ্ন করার জন্য যেই কলারটা টেনে ধরবে, দর্পণ মেহতিশার খুব কাছে চলে আসে। দুই হাতে কোমড় জড়িয়ে উন্মুক্ত কোমরে নাক ঘষে বলে,
‘আমার ফুলনদেবীকে রাগলে ভয়াবহ রকমের সুন্দর লাগে।’
চলবে-
লেখিকা-নাঈমা হোসেন রোদসী।
“প্রিয় দিও বিরহ ”
৫.
তৃষ্ণা মেটাবার আকুল প্রয়াস। চোখে চোখে নিবিড় আলাপ। স্বচ্ছ টলটলে নদীর রিনরিনে স্রোত যেনো আছড়ে পড়ে হৃদয়সংযোগে। বিপরীত বস্তুের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। কখনোবা ঝড়ের পূর্ব সংকেত। তা কীসের! জবাব শূন্য। দর্পণের তীক্ষ্ণ চোখদুটি থেকে নিজের দৃষ্টি সরায় মেহতিশা ৷ অস্বস্তিতে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। দর্পণ আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে আছে বিছানায়। মেহতিশার তুলতুলে দেহ আবদ্ধ সেই সুদীর্ঘ সুঠাম দেহে। মোহাচ্ছন্ন হয়ে মিনিট দুয়েক কাটালেও এখন বুকে ছলকে উঠছে ঘৃণ্যতা। সামনের মানুষটার চেহারাটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না। হাহাকারে বিভীষিকাময় আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছে। মেহতিশা মনে মনে ভাবে, হয়তোবা এই চিৎকার গুলো শুধু তার কানেই বাজে! মাঝে মাঝে নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী মনে হয়। না লেগে উপায় কী! সেই হাজারো মানুষের আর্তনাদের মাঝে যে মেহতিশার এক আপনজনের চিৎকারও যে ভেসে আসে! পুড়িয়ে ছারখার করে ছাড়ে তাকে। মেহতিশা ধাক্কা দিয়ে সরে আসে। দর্পণ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। যেনো এটা হবে সে পূর্বেই অবগত। মেহতিশা নিজের শাড়ির আঁচল টেনে পিঠ অব্দি আড়াল করে। তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দিয়ে গমন করতে করতে বলে,
‘চরিত্রহীনতার একটা লিমিট আছে দর্পণ শেখ। যখন তখন ছুঁয়াছুঁয়ি, এগুলো খুব বাজে স্বভাব। ‘
গরমে ঘেমে যাওয়া শরীর ও গরম মস্তিষ্কে বাথরুমে ঢোকে মেহতিশা। উদ্দেশ্য গোসল করে মাথা ঠান্ডা করা। সেদিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে দর্পণ। কী কারণে যেনো হো হো করে হেঁসে ওঠে। পাশ বালিশটা বুকে জড়িয়ে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,
‘আমার চরিত্রহীন হতে বড্ড ইচ্ছে করছে বউজান। ‘
–
‘সংসার’ নামটা সরল সোজা ৷ পড়তে ও লিখতে বড়ই ছিমছাম। তবে গড়তে? এতোটাও সোজা নয়। দুইদিনেই টের পেয়েছে মেহতিশা। এসবে ভীষণ বিরক্ত লাগছে। মনে মনে মেহতিশা নিজের ধৈর্যের প্রশংসা করে। নিজের বাবার বাড়ি থাকতে সামান্য কিছুতেও বাড়ি মাথায় তুলেছে সেই বদরাগী মেয়েটা এই দু’টো দিন কত কিছুই না সহ্য করলো! এই যে এখনও করছে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করবার নেই। রাতের এই অবেলায় হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেনো দর্পণের তথাকথিত বান্ধবীর দেখা মিলেছে শেখ বাড়িতে। দেখতে যদিও সুন্দরী তবে মেহতিশাকে টপকাতে পারেনি৷ এই দিক থেকে গর্বিত বোধ করলেও দর্পণের উপর গায়ে লেগে হাস্যরসিক কথাবার্তা সহ্য হচ্ছে না মেহতিশার৷ গায়ে হাতা কাটা টপস আর লেগিংস। সাদা লেগিংস পড়ায় প্রথমে যে কারো ভুল হতে পারে এই ভেবে, মেয়েটা শুধু টপস পড়েছে। এমন উশৃংখল যে মেহতিশা নিজেও ছিলো না৷
কী রকম নোংরা মেয়ে-ছেলের সঙ্গে চলাচল করতো দর্পণ! ছিহ! এজন্যই বোধ করি সৃষ্টিকর্তা তার পায়ের শক্তি কেঁড়ে পুরোপুরি অচল বানিয়েছে। মনে মনে ধিক্কার দেয় দর্পণকে। তবে দর্পণের বোধ হয় এখন তেমন একটা সময় বা ইচ্ছে নেই মেহতিশার দিকে তাকানোর। সে গম্ভীরসূচক হাসি ফুটিয়ে কথা বলছে।
মেহতিশা প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে একটা সোফায় বসে আছে। দর্পণের বান্ধবী সিরিনা ছাড়াও এখানে সিরিনার বড় ভাই মৃন্ময় রয়েছে। সেও মাঝে মাঝে এটা ওটা বলছে। তবে মেহতিশার এই লোকটাকে খুব একটা সুবিধাজনক লাগছেনা। কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টি। মেহতিশা সজাগ থাকে। নিজের জামাকাপড় টেনে একেবারে আড়াল করার চেষ্টা করে। সিরিনা কথা বলতে বলতে মেহতিশার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘হেই, তোমার সঙ্গে তো কথাই বলা হলো না! এই দিপু শোন না! তোর বউয়ের সঙ্গে পরিচয় করা আমাকে! ‘
দর্পণ মেহতিশার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট প্রশস্ত করে। কিছুটা রহস্য মেশানো গলায় বলে,
‘তোর নতুন করে কিছু জানার বাকি আছে কী সিরিনা?’
‘হেয়ালি বন্ধ কর তো। ‘
‘হাহাহা, এই হচ্ছে আমার একমাত্র বউজান। মেহতিশা শেখ। ‘
হাসতে হাসতে পাশ থেকে মৃন্ময় বলে উঠলো,
‘সিরিনা যেমন ছবি দেখিয়েছিলি, দর্পণের বউ তার থেকেও বেশি সুন্দর। চোখ ফেরানো দায়। ‘
‘একেবারে ঠিক বলেছিস বড়দা! এই মেয়েকে আগে পেলে আমি আমার ভাইয়ের জন্যই ওকে নিতাম। হাহা।’
এমন নানা হাস্যকর কথায় সবাই তাল মিলিয়ে হেসে উঠলো৷ দর্পণও কথা বলতে বলতে, পাশে বসে থাকা মেহতিশার নরম হাতটা বুকে চেপে হেসে কথা বললো দর্পণ। প্রচুর শক্তি দিয়ে চেপে ধরায় মনে হলো মেহতিশার হাতের হাড় মর্মর করে উঠলো।
চোখে এক ছটাক উষ্ণ জলের কণা ভেসে এলো। দাঁত চেপে মুখটা স্বাভাবিক রাখলো মেহতিশা। তবে টের পেলো অবচেতনে, কিছু একটার ক্ষোভ প্রকাশের ধরণ ছিলো এটি৷ একদমই অপ্রকাশিত রেখে ক্ষোভ মেটাচ্ছে যেনো। দর্পণ অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বলল,
‘বউজান, আপনার ঘুম পাচ্ছে জানি। ঘরে যান। আমি আসছি। ‘
এই অতি ঠান্ডা নিশ্চল কন্ঠে শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো মেহতিশার৷ কেনো যেনো মনে হলো, দর্পণ কিছু একটার জন্য প্রচুর রেগে গেছে। ধীর পায়ে হলরুম ত্যাগ করে ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো মেহতিশা। ভীরু মনে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে মেহতিশা। চোখ বন্ধ করে থাকে। রাত গভীর হতে থাকে। আধারের কালো রাক্ষস বেরিয়ে আসে জগতে।
শিয়ালের গগণ কাঁপানো ডাক ভেসে বেরায়। যখন নিদ্রায় ডুবে গিয়ে মিষ্টি কোনো স্বপ্নের অপেক্ষায় মেহতিশা। তখনই অনুভব করে, কেউ তার গলায় দড়ি বেঁধে হুড়হুড় করে খাট থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে কূলকিনারা খুঁজে পেতে ব্যার্থ হয় মেহতিশা৷ চোখ উল্টে শূন্যে চেয়ে থাকে। চোখের তাকানোর পরিধি ক্রমশ বেড়ে চলে, যখন মেহতিশা বুঝতে পারে কারো উষ্ণ রক্ত তার উপর ঢেলে দেয়া হচ্ছে, সঙ্গে ..
চলবে-