প্রিয়_অভিমান পার্ট : ১৩,১৪

0
1225

#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ১৩,১৪
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
পার্ট : ১৩

আমি বসে আছি আন্টির মুখমুখি বুক ধুর ধুর করে মৃদু কাঁপছে ,
কি বলবেন উনি ,আন্টিকে বেশ সিরিয়াস দেখাচ্ছে,
আমার আর কাব্য ভাইয়ার বিয়ের বিষয় নিয়ে কি কিছু বলবেন,উনি ও কি সবার মতো আমাকে দোষী ভেবে কথা শুনাবেন,
আপু মুখে শুনেছি কাব্য ভাইয়া উনার খুব আদরের সন্তান ,উনার বড় ছেলেকেও তিনি খুব ভালবাসেন কিন্তু কাব্য ভাইয়ার প্রতি উনার বেশী দুর্বলতা,দুলাভাই ও কাব্য ভাইয়াকে প্রচন্ড ভালোবাসেন,মা আর ভাইয়ে চোঁখের মনি উনি।এদের এই অতিরিক্ত আদর পেয়েই উনি আদরে আদরে বাঁদর হয়েছেন,
আন্টির নিশ্চই ছোট ছেলের বৌ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল ,কিন্তু আমার সাথে এমটা হওয়ায় উনি হয়তো কষ্ট পেয়েছেন,আমাকেও নিশ্চই খুব খারাপ মেয়ে ভাবছেন,কিন্তু আমার তো এতে কোনো দোষ নেই এটা আমি উনাকে কিভাবে বুঝাবো,
আন্টির সামনে বসে এই সবই ভাবছি ,প্রচন্ড গরম লাগছে,ঘেমে আমি একাকার হয়ে যাচ্ছি,উনি কিছু বলছেন না ,আমি অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বসে রইলাম,
-কি হলো সুহা তুমি কি কোন কারনে ভয় পাচ্ছো ,এভাবে ঘামছো কেন ??আন্টি শান্ত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লেন ,
-না মানে কিছু হয় নি আন্টি ,আমি ঠিক আছি ।আমি শুকনো একটা হাসি দিয়ে আন্টি প্রশ্নের জবাব দিলাম,
-সুহা আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো তুমি প্লিজ মন দিয়ে শুনার চেষ্টা করো ,আন্টির কন্ঠস্বর গম্ভির হয়ে এলো।
আন্টির গলার স্বর শুনে আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম ভয়ে ভয়ে বললাম,
-জি বলেন কি বলবেন,
আন্টি উঠে দাড়িয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন ,
আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
উনি ওখানে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
কাব্য তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছে এ কথা কেউ বিশ্বাস না করলেও আমি করেছি ,এ বিয়েতে তোমার কোনো মত ছিল না ও তোমাকে ভয় দেখিয়ে জোর করে বিয়ে করেছে তাই না,
আন্টির কথাগুলো শুনে আমি চমকে উঠলাম,
বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
-খুব অবাক হচ্ছো তাই না আমার কথা গুলো শুনে,
তোমার মনে হয়তো এই প্রশ্ন জাগছে সবটা জেনেও আমি কেন চুপ করে রইলাম,
বলেই উনি আমার দিকে ঘুরে তাকালেন,আমি তখনও বিস্মিত হয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
উনি আবার বলতে লাগলেন,আমি কাব্য কে খুব ভালো করে চিনি কাল যখন ও তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে এসে ওই সব বললো ওর কথা বলার ধরন আর ওর চোঁখ মুখ দেখে আমার কিছুটা কটকা লাগে কেন জানি মনে হচ্ছিল কাব্য কিছু আড়াল করতে চাইছে আর তুমি খুব ভয় পেয়ে আছো।কিছু একটা গন্ডগোল আছে,তুমি যখন বললে ও তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছে আর এর পর কাব্য যা বলেছে কেন জানি তোমার বলা কথাগুলো আমার বিশ্বাস যোগ্য মনে হয়েছে,তখন আমি কিছু বলিনি কারন আমি কাব্যের কষ্ট সহ্য করতে পারবো না,তোমাকে যখন ও বিয়ে করেছে ও সত্যি তোমাকে ভালোবাসে কারন কাব্য মন থেকে কিছু না চাইলে তার জন্য কখনও জোর করেনা।
আমি যদি তখন তোমার সাপোর্টে চলে যেতাম তাহলে তোমার ফ্যামেলি ও তোমার কথা বিশ্বাস করতো আর তারা এ বিয়ে কিছুতেই মেনে নিত না,
আর তারা যদি তোমাকে নিয়ে যেত তাহলে কাব্য তোমাকে পাওয়ার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে উঠতো সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না,
তোমাকে পাওয়ার জন্য ও যা করেছে তুমি চলে গেলে হয়তো এর থেকে বেশি ভয়ংকর কিছু করে ফেলতো ,
ছোট বেলা থেকেই ওর যেটা ভালো লাগে বা পছন্দ হয় সেটা ও না পেলে জোর করে নয়তো বা চিনিয়ে নিয়ে নিজের করে নেয়,
সবার ভালের জন্য আমি সব জেনে ও চুপ করে রইলাম,আমার ছেলেটা ওতোটাও খারাপ নয় ,ও হয়তো একটু বেশী রাগী কিন্তু ওর ভালো লাগার জিনেসের যত্ন নিতে জানে মন প্রান দিয়ে ,ওর সাথে কখনই তুমি অসুখি হবে না ,
ও যখন তোমায় ভালবেসে তাহলে ও নিজের সব কিছু দিয়ে তোমাকে ভালো ও সুখী রাখার চেষ্টা করবে ,ও যতটা রাগী ওর ভালোবাসা ততোটা গভীর।
আমি ভাষাহীন ভাবে আন্টির বলা কথাগুলো শুনতে লাগলাম ,
আন্টি আমার পাশে এসে বসলেন,
তারপর আবার বলতে লাগলেন,আমার ছেলেটা তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে ওর চোঁখে আমি তোমার জন্য তীব্র ভালোবাসা দেখেছি,
তোমাকে পাওয়ার পথটা হয়তো অন্যায় ছিল,কিন্তু ওর ভালবাসাটা সত্য,
আন্টি আমার হাত ধরে বলতে লাগলেন ,
তুমি ওকে একটু মানিয়ে নেওয়া চেষ্টা করো মা ,
আমার ছেলেটা তোমাকে ছাড়া ভালো ভাবে বাঁচতে পারবে না,
ওর ভালো থাকা সুখে থাকা তোমার উপর নির্ভর করছে,ছোটবেলা থেকে ও যা চেয়ে তাই পেয়েছে ,
আমরা ওর কোনো চাওয়াই অপূর্ন রাখিনি,
জানি না তোমার ব্যাপারে ও আমাদের কিছু না জানিয়ে এমনটা কেন করল,
ওর কষ্ট আমি বেঁচে থাকতে কিছুতেই সহ্য করতে পারবো না ,
বলেই আন্টি মাথা নিচু করে রইলেন আন্টি চোঁখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে আমার হাতে পরল,
সাথে সাথে আমার বিস্ময়ের ঘোর কাঁটল,আমি উনাকে ডেকে উঠলাম,
-আন্টি !!
আমার ডাক শুনে উনি মাথা তুলে তাকালেন আমার দিকে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে উনি নিজের হাত দিয়ে চোঁখের জল মুছতে মুছতে বলে উঠলেন,
-তুমি আমাকে আন্টি না ডেকে মা বলে ডাকলে আমি বেশি খুশি হবো,
আন্টির কথার প্রতুত্তরে আমি কি বলব কিছুই খুঁজে পেলাম না,
আমি কিছু না বলে ছলছল চোঁখ নিয়ে বেরিয়ে এলাম উনার ঘর থেকে ।
.
,
নিচে ড্রয়িং রুমে চলে এলাম,এসে দেখলাম কাব্য ভাইয়া সোফায় শুয়ে শুয়ে ফোন
টিপছেন,আমি আড় চোঁখে একবার উনাকে দেখলাম,সুন্দর নিখুঁত সব দিকে পার্ফেক্ট একজন সুপুরুষ ,এই মানুষটা আমার স্বামী ,উনার মতো এমন একজন পুরুষকে স্বামী হিসেবে পাওয়া সব মেয়েদেরই স্বপ্ন,
এমন একজন মানুষ আমার মতো সাধারন ভীতু একটা মেয়েকে ভালবাসেন,সত্যি কি উনি আমাকে এতোটা ভালবাসেন,
কিছুই বুঝতে পারছি না ,কি করবো আমি কি করা উচিত আমার ,আমি কেন উনাকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না,
কিচ্ছু ভালো লাগছে না ,কিছুই আর ভাবতে পারছি না,সত্য মিথ্যার বেড়াজালে জরিয়ে গেছি আমি ,কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে কিছুই বুঝতে পারছি না।
উনার কাছে যেতে লাগলাম নাস্তা করছেন কিনা জিজ্ঞেস করার জন্য ,উনার একটু কাছে গিয়ে ও ফিরে এলাম জিজ্ঞেস না করে,
.
,
ডাইনিং টেবিলে আসতেই আপু নাস্তা করার জন্য বলতে লাগলেন,আমি আপুকে কিছু না বলে চেয়ারে বসে পরলাম ,আন্টির বল কথাগুলো মাথার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে,উনার বলা কথাগুলো আবার ভাবতে লাগলাম,
হঠাৎ কানের কাছে কেউ ফিসফিয়ে বলে উঠল,
আই লাভ ইউ বউ!!!
আমি চমকে উঠে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি কাব্য ভাইয়া আমার পাশে হাসি হাসি মুখে বসে আছেন,
-স্বামীকে ছাড়াই খেতে বসে গেলে ,তোমার সাথে খাবো বলে না খেয়ে বসে আছি আর তুমি কিনা আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করলে না আমি খেয়েছি কি না,কাব্য ভাইয়া দু:খি দু:খি মুখ বানিয়ে কথাগুলো বললেন,
-আমি তো কাউকে খেতে মানা করিনি,বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বলে আমি পাশ ফিরে তাকাতেই উনি কাজের লোক আপু সবার সামনে আমার গালে চটাস করে কিস করে বসলেন,উনার এমন নির্লজ্জ কাজে আমি বেকুব বনে গেলাম,গালে হাত দিয়ে অস্বস্তি নিয়ে সবার দিকে তাকালাম,
তাকিয়ে দেখি কাজের ছেলে মেয়ে গুলি একে অন্যের কানে কিছু ফিসফিস করে বলছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে,আপুও অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছেন,
লজ্জায় আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল,
অসভ্য লোক কোথাকার,অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি সে যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে খাবার খাচ্ছে,
ইচ্ছে হচ্ছে এই বজ্জাতটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি ,শয়তানের নানা,ফাজিল ছেলে শুধু আমাকে বিব্রত করা,

.
আমি মাথা নিচু করে নাস্তা করছি এমন সময় কারো চিৎকার শুনে সবাই মিলে দরজার দিকে তাকালাম, কে এসেছে দেখার জন্য ,সামনে তাকিয়ে আমি বিম্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম,
আমার নাম ধরে একটা চাপা চিৎকার দিয়ে এই মাএ আসা আগন্তুকটি দৌড়ে এসে সবার সামনে আমায় জড়িয়ে ধরল,
আচমকা এমন একটা ঘটনায় আমি থতমত খেয়ে গেলাম,
সবকিছু আগে আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকালাম,
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়ার চোঁখ মুখের ভয়ংকর অবস্থা ,উনি রক্তচুক্ষু নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।

(চলবে)

#প্রিয়_অভিমন

পার্ট : ১৪

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
উনার এমন এক্সপ্রেশন দেখে ভয়ে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল,আজ যে আমার কপালে কি পরিমান দু:খ আছে সেটা একমাএ আল্লাহ ভালো জানেন
উনার দিক থেকে চোঁখ সরিয়ে নিলাম,
এখানে আসা আগন্তুক ব্যাক্তিটি হচ্ছে আমার কলেজ লাইফের বন্ধু নিলয় ,
আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু,ও দেখতে শুনতে খুবই হ্যান্ডসাম একটি ছেলে,
কলেজের অনেক মেয়ের ক্রাস ছিল,কিন্তু আমি ওকে সবসময় বন্ধুর নজরে দেখেছি ওর জন্য আমার মনে বন্ধুর থেকে বেশী আলাদা কোনো ফিলিংস নেই ,এ যে আমাকে ধরেছে তো ধরেছেই ছাড়ার কোনো নামই নেই,কাব্য ভাইয়ার চোখ মুখের ভয়ংকর অবস্তা দেখে,
আমি দ্রুত ওকে বলতে লাগলাম,
এই নিলয় কি করছিস ছাড় আমাকে ,এভাবে জরিয়ে ধরে দম বন্ধ করে মেরে ফেলবি নাকি,তারপর বিরবির করে বলতে লাগলাম ,এখানে কে উপস্থিত আছে তুই তো জানিস না ,তুই নিজে মরবি সাথে আমাকেও মারবি।আমি আবার বললাম,কি হল ছাড় না রে ভাই,
আমার কথা শুনে নিলয় আমাকে ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক স্বরে এক্সসাইটেড হয়ে বলে উঠল,
‘ও মাই গড সুহা !!!তুই এখানে ???আমি তো ভাবতেই পারছি না তোকে এখানে এভাবে পেয়ে যাবো,,
আমি ওর চেয়ে দ্বিগুন অবাক হয়ে বলে উঠলাম,
‘তুই এখানে কিভাবে???আর তুই কবে ইংলেন্ড থেকে দেশে ফিরেছিস ????
‘আরে এটা তো আমার ফুফির বাসা ,এক সপ্তাহ হলো আমি দেশে এসেছি,কিন্তু তুই এখানে কি করছিস???নিলয় বলল অবাক হয়ে,
আমাদের কথোপকথন শুনে আপু আর কাব্য ভাইয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন,তারা হয়তো এখানে কি ঘটছে সেটাই বুঝার চেষ্টা করছেন,
কাব্য ভাইয়ার চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়,
আপু আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন ,
‘সুহা তুই উনাকে কি ভাবে চিনিস,
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম,আপু ও আমার কলেজ লাইফের খুব ভালো একজন বন্ধু ,আমরা একি সাথে কলেজ লাইফ শেষ করেছি,ভার্সিটিতে উঠার পর ও ইংল্যান্ড চলে যায়,
আপুকে দেখে নিলয় বলে উঠল,
তুমি তো স্নিগ্ধ ভাইয়ার ওয়াইফ ,হায় ডিয়ার সুইট ভাবি ,
আপু নিলয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
তোমার কথা স্নিগ্ধ আর মায়ের মুখে অনেক শুনেছি ,তোমার ফটোও ও দেখিয়েছে কিন্তু তুমি আমাকে কিভাবে চিনলে,
‘তোমাদের বিয়ের ফটো দেখেছি ,তাই চিনতে অসুবিধা হয় নি,আপুর কথায় হেসে জবাব দিল নিলয়,
কাব্য ভাইয়া যে এখানে উপস্থিত আছেন সেটা ও লক্ষ্যই করলো না ,
সে আমাদের সাথেই কথা বলায় ব্যাস্ত রইল,
ও আবার আমাকে প্রশ্ন করল ,সুহা তুই উনাদের কিভাবে চিনিস,আর তুই তো আগের থেকে আরো বেশী সুন্দর হয়ে গেছিস,শাড়ী পরে আছিস কেন ?তোকে দেখতে একদম বৌ বৌ লাগছে ,
নিলয়ের কথায় আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম ,কার সামনে কি বলছে বোকাটা বুঝতেও পারছেনা,উনার দিকে যদি ও একবার তাকাতো তাহলে কথাগুলো গলায়ই আটকে যেত আর বাইরে বের হতো না,আমি একবার আড় চোঁখে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বিব্রতভাবে হেসে নিলয়কে বলে উঠলাম,
এটা আমার বোনের শশুড় বাড়ি ,আপুকে চোঁখ দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে বললাম,উনি আমার বড় বোন।
আমার এই কথাটা বলা মাএ কাব্য ভাইয়া রাগে ফোঁসফোঁস করে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন,উনাকে এভাবে আসতে দেখে আমি ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,
কাব্য ভাইয়াকে দেখে নিলয় একটা চাপা চিৎকার দিয়ে কাব্য ভাইয়াইকে জরিয়ে ধরে বলে উঠল,
ব্রো !! কেমন আছো??কতদিন পর তোমার সাথে দেখা,
কাব্য ভাইয়া নিলয়কে উনার থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলতে লাগলেন ,
এতোক্ষনে ভাইয়ের কথা মনে পরলো ,কলেজের বন্ধুকে পেয়ে এতো এক্সাইটেড হয়ে পরলি এখানে আর কারো উপস্থিতিই লক্ষ্য করলি না,সবার সামনে একেবারে জরাজরি শুরু করে দিয়েছিস,
‘আসলে ব্রো দেশে আসার পর একটা প্রয়োজনে সুহাকে খুঁজছি ,ভার্সিটিতে গিয়ে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি তাই এখানে এসে হঠাৎ ওকে পেয়ে একটু বেশী এক্সাইটেড হয়ে পরেছি ,মাথা চুলকে একটু লজ্জিত হাসি হেসে উনাকে কথা গুলো বলল নিলয়,
আমাকে ও এতো খুঁজছে কিন্তু কেন,কথা গুলো ভেবে আমি কপাল কুচকে তাকালাম নিলয়ের দিকে,
নিলয় আমার দিকে তাকিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠল,
‘এটা তোর বোনের শশুড় বাড়ি ,তুই ভাবির ছোট বোন ওয়াউ গ্রেট!!!!
ওর কথা গুলো শুনে কাব্য ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে হেসে বলে উঠলেন,
এটা সুহার বোনের শশুড় বাড়ি শুনে এতো খুশি হয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছিস এর পরের খবরটা শুনলে তো খুশিতে দাঁত গুলো খুলে পরবে,
কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে নিলয় অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠল,
‘কি বললে বুঝতে পারলাম না ব্রো !!
‘এটা শুধু সুহার বোনের শশুড় বাড়ী নয় এটা সুহার ও শশুড় বাড়ী।।
কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে আমি বিব্রত ভাবে নিলয়ের দিকে তাকালাম,নিলয়ের মুখটা কেমন যেন দেখালো,ওর মুখটা পাংশুবর্ন হয়ে গেল ও অবিশ্বাস্য সুরে বলে উঠল,
মানে!!!!
ওর কথায় কাব্য ভাইয়া আমার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলেন,ওর সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দেই
ও হচ্ছে মিসেস কাব্য মেহরাব আর তোর ছোট ভাবি,
তাই ওকে নাম ধরে না ডেকে ভাবি বলে ডাকলে আর তুইতুকারি না করে তুমি করে বললে বিষয়টা ভালো দেখায়,,,
উনার বলা কথাটা আমার কানের মাঝে কয়েক বার প্রতিধ্বনী হলো,মিসেস কাব্য মেহরাব ,আমি মিস থেকে মিসেস হয়ে গেছি,গতকাল সকাল পর্যন্ত আমি মিস সুহা ইসলাম ছিলাম এবং দুপুরে কবুল বলার পর থেকে আমি মিসেস সুহা কাব্য মেহরাব হয়ে গেলাম,একদিনের ভিতরে আমার সম্পূর্ন জীবন বদলে গেল,আমার জীবনের সঙ্গে অন্য একটা জীবন জরিয়ে গেল,বিষয়টা আমার নিজের কাছে কেমন অবিশ্বাস্য লাগে,
নিলয় একবার আমার দিকে তাকাল,তারপর আবার উনার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠল,
ব্রো তুমি বিয়ে করেছো আর আমরা কিছু জানি না, মা ও তো আমায় কিছু বললেন না তুমি নিশ্চই মজা করছো আমার সাথে তাই না?নাইস জোকস ব্রো।
‘আমি একদম মজা করছি না নিলয়,আমরা ভালেবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছি আর পালিয়ে বিয়ে করলে নিশ্চই কারো জানার কথা না,বিয়ে করেছি মাএ একদিন হয়েছে এতো অল্প সময়ের মধ্যে কাউকেই জানানো হয় নি,কাব্য ভাইয়া কথা গুলো বলে উঠলেন দ্বিদাহীন ভাবে,
সব শুনে নিলয় কেমন অদ্ভুত নয়নে তাকল আমার দিকে তারপর থমথমে গলায় বলে উঠল,
‘সুহা তুমি ব্রোকে ভালবাসো আর তুমি কি সত্যি বিয়ে করে ফেলেছো,তুই তো এসব বিষয়ে ভয় পেতি সব সময় এই বিষয়গুলি এড়িয়ে চলতি,আর সেই তুই কিনা পালিয়ে বিয়ে করেছিস??আমি তোর মুখ থেকে আরো একবার সব শুনতে চাই,
আমি কিছু না বলে চুপ করে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না ,ওর একটা প্রশ্নের উওর আমার কাছে আছে কিন্তু অপর একটা প্রশ্নের উওর আমার জানা নেই,
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আপু আমাদের পাশে এসে বলে উঠলেন,হ্যা নিলয় ভাইয়া ওরা কালই কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।
কথাটা শুনে ওর চেহারা যে পরিবর্তন হয়ে গেছে সেটা আমার চোঁখ এড়ালো না,আমার বিয়ে কথা শুনে ওর মুখটা এমন হয়ে গেল কেন কে জানে,
কাব্য ভাইয়া নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
আমার বিয়ে সম্পর্কে আর কোনো কনফিউশন থাকলে মায়ের কাছ থেকে জেনে নিস ,আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি না কি উপরে মায়ের কাছে যা তোকে দেখলে মা খুব খুশি হবেন,ভাবি ওকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও,বলেই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
সুহা আমার সঙ্গে একটু আসো তো,
উনার ডাকটা শুনে আমার অন্তর আত্মা কাঁপে উঠল,
উনার কন্ঠটা অন্য রকম শুনালো,উনার কি হলো এতো রেগে আছেন কেন,আমি না শুনার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলাম,
উনি আবার একি কন্ঠে বলে উঠলেন,
সুহা তোমাকে আমি কিছু বলছি ,এক্ষুনি আমার সঙ্গে রুমে আসো না হলে কিন্তু,
উনাকে এভাবে রেগে যেতে দেখে ভয়ে আমি দ্রুত রুমের দিকে যেতে লাগলাম ,অপ্রস্তুত ভাবে হাঁটায় শাড়ী পায়ে জারিয়ে পরে যাচ্ছিলাম,আমি মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলাম,
কাব্য ভাইয়া আর নিলয় দুজনই দৌড়ে এলো আমাকে ধরার জন্য কিন্তু উনি এসে আমায় ধরে নিলয়কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
আমার বৌকে সামলানোর জন্য আমি আছি ,আমি যতদিন বেঁচে আছি ওকে রক্ষা করার জন্য কারো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই ,বলেই উনি আমাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটতে লাগলেন ,আমি অবাক হয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,উনি নির্বিকার ভাবে হাঁটতে লাগলেন,
অন্য দিকে ভাংচুর হৃদয় নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কেউ একজন তাকিয়ে রইল ওদের যাওয়ার দিকে।

(চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here