#প্রিয়_অভিমান
পার্ট : ২১,২২
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
পার্ট : ২১
.
নিলয়ের কথায় কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না ,ও কে কি সব সত্যি কথা বলা
ঠিক হবে,বিষয়টা ওকে না জানানোই বেটার ,সবটা শুনে ওকে কি থেকে কি ভেবে বসবে কে জানে,আর উনি তো আমাকে সেদিন স্পস্ট করে মানা করে দিয়েছেন এ বিষয়ে যাতে নিলয়ের সাথে কোনো কথা না বলি ,উনি যদি জানতে পারেন নিলয়ের সাথে আমাদের রুমে বসে গল্প করেছি তাহলে খুব রাগ করবেন,আর যদি এটা জানতে পারেন আমাদের বিয়ের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে তাহলে তো আমার আর রক্ষা থাকবে না,
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে নিলয় বলে উঠল,
-আরে ইয়ার চুপ করে আছিস কেন ?প্রেমের কাহিনী তো মানুষ আনন্দের সাথে বলে তোর মুখটা এমন লাগছে কেন,প্রেম করলি পালিয়ে বিয়ে করলি কত কত ইন্টারেস্টিং ইভেন্ট রয়েছে নিশ্চই, নাকি কি এ বিষয়ে তোর বলার মতো কিছুই নেই,কি বলবি ভেবে পাচ্ছিস না,
নিলয়ের কথা শুনে আমি হকচকিয়ে ওর দিকে তাকালাম,আমি তাকাতেই ও হেসে আবার বলে উঠল,
-আরে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন আমি বলতে চাইছি যে কোনটা রেখে কোনটা বলবি সেইটাই কি ভেবে পাচ্ছিস না,তাহলে আমি তোকে সহজ করে দিচ্ছি প্রথমে এটা বল যে ,তোর মত মেয়ে যে সবকিছুতে ভীষন ভয় পায় সেই তুই পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলি কেন??যেখানে তোদের বিয়েতে সবাই এত খুশি।পরিবার থেকে তোদের মেনে নিবে না সেই ভয়ে তো তোদের ছিল না।
নিলয়রে কথা বার্তা আমাকে বেশ বিব্রত করতে লাগল ,কি থেকে কি বলবো আমি পালিয়ে বিয়ে করেছি নাকি আমাকে তো জোর করে বিয়ে করা হয়েছে ,সেটা তো এখন ওকে বলা যাবে না হুট করে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথাই বা বলবো কি করে,উনি থাকলে হয়তো একগাদা প্রেমের কাহিনী বানিয়ে বানিয়ে বলে দিতেন,
আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হেসে বললাম,
-আসলে হয়েছে কি নিলয় ,আমাদের প্রেম কাহিনীটা আর দশটা প্রেম কাহিনীর মত না এটা অনেক লম্বা একটা কাহিনী ।এটা বলতে হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন এখন আমার কাজ এত অল্প সময়ে বলতে পারবো না।অন্য একদিন সময় করে বলবো
ঠিক আছে,
আমার কথা শুনে নিলয় চাপা হেসে বলে উঠল,
-লম্বা কাহিনী তো হবেই আফটার অল এটা আমার রাগী বদমেজাজী কাব্য ব্রোয়ের প্রেম কাহিনী ,কিন্তু অল্প সল্প করে তো কিছু বলা যায় নাকি ,আর তোকে এতো নার্ভাস লাগছে কেন,প্রেমের কথা শুনে কোথায় খুশিতে তোর মুখ জলমল করবে তা না ,বাই দা ওয়ে সুহা কাব্য ব্রো আবার তোকে জোর টোর করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করে নি তো,বিয়ে কথা শুনে তোর মুখ যেভাবে শুকিয়ে গেল আর বিয়ে বা তোদের প্রেমের কথা শুনলে তুই এতো অপ্রস্তুত হয়ে যাস কেন? কাব্য ব্রো যে ধরনের মানুষ ওর দ্বারা কিন্তু সব পসিবল।বলেই হেসে উঠল ,
নিলয়ের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম,কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিলাম,
বিস্ময়টা নিজের মাঝে চাপা দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে ,ওর দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে একটু রাগি কন্ঠে বলে উঠলাম,
-কি সব বলছিস এমন কিছুই না ,আর উনি তোর বড় ভাই তার সস্পর্কে এভাবে কথা বলছিস কেন??
আমার কথা শুনে নিলয় হাসতে হাসতে বলে উঠল,
-আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেন আমি তো জাস্ট একটু ফান করলাম ,ব্রোয়ের সাথে থেকে থেকে তুই ও কিন্তু ওর মতো রাগী হয়ে যাচ্ছিস,কেমন সামন্য একটা কথায় রেগে গেলি ,দেখিস ওর মতো আবার বদ রাগী হয়ে যাস না যেন,
নিলয়ের কথা শুনে আমি রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম ,
আমার এভাবে তাকানো দেখে ও বলে উঠল,আচ্ছা
আচ্ছা আমি আর এমন কিছু বলবো না ,প্লিজ রাগ করিস না,আর হ্যা শুন তোকে আর কোনো কিছুই বলতে হবে না তুই শুধু তোদের বিয়ে কাহিনীটা আমাকে বল,
আমি পরলাম মহা মুশকিলই এতো দেখছি পিছনই ছাড়ছে না ,আমি ওকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই শুনতে পেলাম বাহির থেকে আন্টি আমাকে ডাকছেন,
আন্টির ডাক শুনে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম যাক বাঁচা গেল,ওর প্রশ্নের সম্মোখিন থেকে বেঁচে গেলাম,যেভাবে চেপে ধরেছিল আজ বোধ হয় সব সত্যি কথা আমার মুখ দিয়ে বের করিয়েই ছাড়তো ,
আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
-আন্টি আমাকে ডাকছেন নিলয় ,নিশ্চই কিছুর প্রয়োজন আমি এখন যাই ,বলেই আমি ওকে বসা রেখেই রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
.
প্রথম দিন উনাকে ছাড়া বেশ ভালই কাটল ,কোনো প্যারা নেই,যখন তখন কেউ পিছন থেকে জরিয়ে ধরার ভয় নেই ,রান্না ঘরে ও শান্তি মত যেতে পারছি,হুটহাট উনার চলে আসার ভয় নেই,
সারাদিনে কত বার যে কানে কাছে এসে আই লাভ ইউ সুহারানী বলতেন তার তো হিসেব ছাড়া ,
প্রথম প্রথম উনার এমন কান্ডে তো আমি ভয় পেয়ে যেতাম,ভুত ভুত বলে চেচিয়ে উঠতাম।তখন উনি আমার ভয় পাওয়া দেখে খিলখিল করে হেসে উঠতেন।
ভাবলাম এখন থেকে এসব জামেলা থেকে মুক্ত আমি ,সারাদিন একটু নিজের মত করে স্বাধীনভাবে চলবো কিন্তু এখন শুরু হয়েছে নতুন জামেলা ,বাসায় না থাকলে কি হবে একটু সময় পর পরই ফোন দিয়ে বলতে লাগেন ,সুহা কি করছো,খাবার খেয়েছো,খাবার খাওয়ায় অনিয়ম করলে কিন্তু আমি খুব রেগে যাবো,একটা ভিডিও কল দাও না তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে,সুহা তোমাকে ভীষন মিস করছি ,আর কথার ফাঁকে ফাঁকে তো এ কথা আছেই আই লাভ ইউ সুহা রানী,অসহ্য লোক একটা কিছুতেই আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না,কোনো সময় যদি ফোন ধরতে না পারি তাহলে তো অফিসের কাজ কর্ম ফেলে রেগে মেগে সোজা বাসায় চলে আসেন।
সেই ভয় থেকে এখন সারাদিন ফোন সাথে নিয়ে চলতে হয়।
উনি অফিসে জয়িন করার পর থেকে একটা জিনিস আমার খুব ভাল লাগে সেটা হলো উনি
অফিস থেকে ফিরার সময় প্রতিদিন আমার প্রিয় বেলিফুল আর আইসক্রিম নিয়ে আসেন ,এই একটা জিনিস কোনদিন মিস হয় না ,প্রতিদিন উনি আসার পর টেবিলের উপর আমি এই জিনিস গুলো পাই,প্রথম দিন তো এগুলো দেখে খুশিতে আমি উনাকে জরিয়ে ধরেছিলাম,তারপর আমি যে কি লজ্জা পেয়েছিলাম নিজের এমন কান্ডে ,উনার সামন থেকে দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
উনি দিনে আমাকে ফোন করে জ্বালান আর আমি উনাকে রাতে জ্বালাই চাঁদ দেখবো বলে বয়না ধরে উনাকে নিয়ে বেনকুনিতে বসে থাকি আর রাতের হিমেল হাওয়া চাঁদের আলো মনমুগ্ধের মতো উপভোগ করি,সেখানেই ঘুমিয়ে পরি আবার সকালে নিজেকে বিছানায় উনার বুকে আবিষ্কার করি।
.
প্রথম প্রথম সব ঠিক থাকলেও এখন উনি অফিসে চলে গেলে নিজেকে কেমন একা একা লাগে,সব খানে উনার উপস্তিতি ভীষনভাবে মিস করি ,নিজের এমন কান্ডে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম,কি হচ্ছে আমার সাথে এমন কেন লাগে ,উনি যত সময় আমার আশেপাশে থাকেন তত সময় যেন আমি সবচেয়ে বেশি খুশি থাকি,
উনার অফিসে থাকা সময়টা যেন আমার কাছে বিষাক্ত মনে হয়,এই অপেক্ষাতেই থাকি কখন উনি বাসায় আসবেন ,উনার উপস্তিতি যেন সমস্ত মন জুরে ভাল লাগার আবেশ ছড়িয়ে দেয়,
উনার জন্য মনের মাঝে কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত ফিলিংস হয় ,যা কখনও কোনোদিন কারো জন্য হয় নি,উনি প্রায়ই বলেন অফিস থেকে ফিরে আমার মুখটা দেখলে নাকি উনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়,উনার কথা শুনে আমি তখন হেসে বলতাম কি সব পাগলের মত কথা,এমটা আবার হয় নাকি,কিন্তু এখন আমার ও এমন মনে হয় উনি যখন অফিস থেকে ফিরেন তখন উনার মুখটা দেখলে আমার সারাদিনের অবসাদ দূর হয়ে যায়।নিজের অজান্তেই কখন যে এই বিরক্তিকর রাগী মানুষটাকে নিজের মনের মাঝে জায়গা দিয়ে ফেলেছি বুঝতেই পারলাম না।
.
আজ কাল নিলয়ের আচরন কেমন যেন লাগছে ,কেমন হেয়ালি করে কথা বলে ,বেশীরভাগ কথাই আমার আর উনার বিয়ে নিয়ে বলে ,উনি অফিস চলে গেলে নানা বাহানায় আমার সাথে কথা বলতে চলে আসে ,হঠাৎ হঠাৎ এমন সব কথা বলে বসে যা শুনে আমি চমকে যাই,সেদিন হুট করে আমাকে জিজ্ঞেস করে বসল,
-আচ্ছা সুহা জোর করে বিয়ে করে তার উপর স্বামীর কর্তৃত্য ফলালেই কি ভালবাসা হয়ে যায়,ওর কথা শুনে আমি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম,
-হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?
আমার কথা শুনে ও হেসে কথাটা এড়িয়ে চলে গেল,
ওর এমন আচরন এখন আমার খুব বিরক্ত লাগে ।
.
বাসায় বসে বসে বোর হচ্ছি ভাবলাম নিজের হাতে রান্না করে খাবার নিয়ে গিয়ে উনাকে সারপ্রাইজ দিলে মন্দ হয় না,
যেই ভাবা সেই কাজ রান্না করতে লেগে গেলাম ,
রান্না বান্না শেষ করে রেডি হতে চলে এলাম,
আমাকে হঠাৎ দেখে উনার এক্সপ্রেশনটা কি হবে সেটা ভেবেই খুব এক্সসাইটেড লাগছে ,ফুরফুরা মন নিয়ে রেডি হচ্ছি,
উনার তো আবার নির্দেশ আছে শাড়ী পরে বাইরে যাওয়া যাবে না ,তাই গ্রীন কলারের একটা গাউন পরে রেডি হয়ে গেলাম ,
আন্টিকে বলে খাবার ঘুচিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম বাসার গাড়ী দিয়ে উনার অফিসে পৌচ্ছে গেলাম,
আমাকে দেখেই অফিসের ম্যানেজার ব্যাস্ত হয়ে পরল,
উনি আমাকে আগ থেকেই চিনেন,বাসায় কেয়েকবার দেখা হয়েছে উনার সাথে।
এই প্রথম আমি উনার অফিসে আসলাম,চারিপাশ অবাক করা দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম ,অফিসটা খুব সুন্দর পরিপাটি পারিপাশ,কিন্তু অফিসের মেয়ে গুলিকে দেখে আমার খুব রাগ লাগল ,কেমন ছোট ছোট জামা কাপড় পরে আছে ,এরা এই ভাবে উনার সামনে ঘুরে বেড়ায়,অসভ্য মেয়েরা এর একটা বিহিত করতে হবে,
ম্যানেজার আমাকে উনার কেবিনের সামনে দিয়ে চলে গেলেন ,
আমি আস্তে আস্তে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম ঢুকেই আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ,রাগে সমস্ত গা রিরি করে উঠল।
(চলবে)
#প্রিয়_অভিমান
পার্ট :২২
লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
.
আমি ভেতরে ঢুকে দেখি উনার পাশে অতি মডার্ন এবং অত্যন্ত সুন্দরী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ,মেয়েটা একদম উনার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর উনি হেসে হেসে মেয়েটার সাথে কথা বলছেন,আর কি যেন একটা ফাইল দেখছেন কিন্তু মেয়েটা ফাইলের দিকে তাকানোর চেয়ে উনার দিকেই বেশি তাকাচ্ছে,
আমি যে ভেতরে ঢুকেছি সে দিকে কারো খেয়াল নেই,
উনার পাশে এতো সুন্দর একটা মেয়েকে কেন জানি আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না,উনাকে অন্য মেয়ের সাথে এভাবে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে আমার একটু ও ভালো লাগলো না,ওদেরকে এই অবস্তায় দেখে আমার খুব রাগ লাগল,
আর এই মেয়েকে দেখো এতো গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে আর একটু হলে কোলে বসে পরবে,
উনার কথা আর নাই বা বললাম,
অফিসে এসে তো খুব ফুর্তিতে আছেন কি সুন্দর দাঁত কেলিয়ে হাসছেন,
আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো ভালো হয়ে গেছেন কিন্তু এই ছেলে লুইচ্ছা ছিল ,লুইচ্ছা আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে,অফিসে এসেও লুচুগিরি শুরু করে দিয়েছেন,
আমি রাগে গজগজ করতে করতে টেবিলের কাছে গিয়ে খাবারের টিফিনটা শব্দ করে রখলাম,
শব্দ শুনে দুজনই চমকে উঠে সামনে দিকে তাকালো ,
আমি কপাল কুচকে অগ্নি দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
উনি আমাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে উঠলেন,
-সুহা তুমি এখানে!!!!হোয়াট আ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ ,ও মাই গড আই কান্ট বিলিভ দিস।।।
উনার পাশে থাকা মেয়েটা বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে,
আমি একবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তারপর উনার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলাম,
-সারপ্রাইজ দিতেই তো আসলাম বাট তুমি একা সারপ্রাইজ হও নি আই এম অলসো সারপ্রাইজড !!
আমার বলা কথার মানে বোধহয় উনি বুঝতে পারেনি তাই আমার কথা শুনে উনি হেসে হেসে আমার পাশে এসে আমার কাঁধে ধরে বলে উঠলেন,
– তুমি এসে কিন্তু খুব ভালো করেছো তোমাকে ভীষন মিস করছিলাম সুহারানী ,
উনার বলা কথাটা শুনে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল,এতক্ষন তো খুব হ্যাপি ছিলেন দেখে তো মনেই হয় উনি কাউকে মিস করছিলেন এখন আমাকে সামনে পেয়ে আধিখ্যাতা করা হচ্ছে ,
আমি ঝটকা মেরে উনার হাত সরিয়ে উনার থেকে একটু দূরে সরে চোঁখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলাম,
আমার এমন কান্ড উনি বোধ হয় একটু আশ্চার্য্য হলেন ,উনার চোঁখ মুখে সেটা ফুঠে উঠলো ,মুহূর্তের মধ্য নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে উনি মৃদু হেসে আমার আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন,
মেয়েটা তখন ও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ,
উনি আমার কাছে এসে বলতে লাগলেন ,
-কি হয়েছে সুহা তোমার চোঁখ মুখ এমন লাগছে কেন??এনি প্রবলেম বলেই আমাকে আবার ধরতে এলেন,
উনি আমাকে ধরতে আসায় আমি বিব্রতভাবে একবার উনার দিকে তাকিয়ে আবার মেয়েটার দিকে তাকালাম,উনি মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পারলেন আমাকে না ধরে পিছন ফিরে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
-মিস আরিয়া তোমার এখানে আর কোনো কাজ নেই ,ইউ ক্যান গো নাউ,
-বাট স্যার নিউ প্রজেক্টের জন্য ইম্পর্ট্যান্ট ডিসকাশন বাকি রয়েছে ,মেয়েটি আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে তাড়িগড়ি করে বলে উঠল,
মেয়েটির কথা শুনে উনি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন,
-ইউ নো হোয়াট মিস আরিয়া এই কাজ প্রজেক্ট এসবের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একজন এখন আমার সাথে রয়েছে ,এগুলোর থেকে তার প্রায়রেটি আমার কাছে অনেক বেশি,সো এখন আর কোনো কাজ হবে না তুমি আসতে পারো,
-বলছিলাম কি স্যার কাজটা কমপ্লিট করে ফেললে ভালো হতো ,অনেক বড় একটা প্রজেক্টের কাজ,
মেয়েটির কথায় আমার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল ,কি ছ্যাচড়া মেয়ে রে বাবা কিছুতেই উনাকে আমার সাথে রেখে যেতে চাইছে না ,কাজের বাহানায় উনার কাছেই তাকতে চাইছে,আর চাইবেই না কেন এরকম হ্যান্ডসাম বস পেলে আর সে যদি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসি দেয় তাহলে তো তার কাছেই সারাদিন বসে থাকতেই মন চাইবে,আর উনাকে দেখো আমাকে দেখে সাধু পুরুষ সাজা হচ্ছে,
আমি রাগি কন্ঠে বলে উঠলাম,-আমি বোধ হয় ভুল সময়ে এসে পরেছি ,নো প্রবলেম আপনারা বরং কাজ করুন আমি চলে যাচ্ছি ,বলেই আমি চলে যেতে লাগলাম,
আমাকে চলে যেতে দেখে উনি চাপা চিৎকার করে বলে উঠলেন ,
-আই সে স্টপ সুহা
উনার চিৎকার শুনে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম সাথে সাথে উনি এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে উনার চেয়ারে বসিয়ে দিলেন,তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
-আরিয়া আই সে লিভ নাউ
উনার ধমক শুনে মেয়েটা একবার আমার দিকে ক্ষোভের দৃষ্টিতে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেল,
উনি আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে আমার দু হাত ধরে আমার দিকে তাকালেন সাথে সাথে আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে উঠলাম,
-এতোক্ষন তো খুব রসিয়ে রসিয়ে গল্প করছিলেন আমাকে দেখে সুর পাল্টে ফেললেন কেন?
তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন ,সে তো তোমাকে ছেড়ে যেতেই চাইছিল না ,বেচারি কে শুধু শুধু তাড়িয়ে দিলেন আমি না হয় চলে যেতাম,
আমার কথা শুনে উনি বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলেন,
-এসব কি আবোল তাবলো বলছো সুহা,ও আমার পি এ ওর সাথে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করছিলাম না কাজের কথা বলছিলাম,
উনার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম,
-ও হো কাজের কথা বলছিলে তাই না ,তা কাজের কথা কি একটু দূরে বসে করা যা না ,কাজের কথা কি তাকে পাশে নিয়ে গা ঘেষে বলতে হয়,অফিসে এসে তাহলে এসবই করা হচ্ছে,
আমার কথায় উনি আমার কাছে এসে হাত ধরে বলে উঠলেন,
-ওহ সুহা তুমি ভুল বুঝছো আমাকে ,
উনার কথায় আমি ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম,
-কোনো ভুল বুঝছি না আমি সব কিছু একদম পরিষ্কার বুঝতে পারছি ,অফিসের বসের পি.এ সব সময় সুন্দরী সুন্দরী মেয়েই হতে হবে কেন,ছেলেরা কি পি.এ হতে পারে না ,
মেয়েদের এজন্যই রাখা হয় তাই না যাতে লুইচ্ছামি করা যায় ,নিজের চোঁখেই তো এসে সব দেখলাম,
-আরে আমার কথাটা তো শুনে নিজের মনেই সব বানিয়ে ফেলছো,
উনার কথায় আমি রেগে গিয়ে বললাম,-আমার আর কিছুই শুনার নেই তুমি তোমার পি.এ কে নিয়েই থাকো বলেই আমি দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলাম উনি পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডাকতে লাগলেন আমি সেটা উপেক্ষা করে রাগে গজগজ করতে করতে দ্রুত গাড়িতে এসে বসে ড্রাইভারের উদ্দেশ্য করে বললাম,তারাতার গাড়ী স্টার্ট দিতে আমি এক্ষুনি বাড়ী যেতে চাই।
সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দিল আমি গাড়ীর জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ও দ্রুত পায়ে অফিস থেকে বের হচ্ছেন ।উনি কাছে আসার আগেই গাড়ী উনার অফিস থেকে বেরিয়ে গেল।
.
বাড়ীতে এসে আমি কোনো দিকে না তাকিয়ে এক ছুটে রুমে চলে এলাম,
আমার রাগ কিছুতেই কমছে না ,উনার এতো কাছে একটা মেয়ে কেন দাড়িয়ে থাকবে ,এটা আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছিনা ,
রুমে বসে এই সব ভাবছি এরি মাঝে উনি ও চলে এলেন ,উনাকে দেখে আমি অন্য দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম,
উনি দরজা লক করে আমার পাশে এসে বসে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলেন,
-ও মাই গড সুহারানী আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না তুমি আমাকে নিয়ে জেলাসি ফিল করছো,
আমার কি যে আনন্দ হচ্ছে,
উনার কথায় আমি অবাক হয়ে উনার দিকে কপাল কুচকে ফিরে তাকালাম,
আমি তাকাতেই উনি আবার ডংয়ের সুরে বলে উঠলেন,
-পুরা পুরা গন্ধ পাচ্ছি ,আমি নিশ্চিত কারো মন পুরছে,
উনার কথায় আমি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলে উঠলাম,
-কিসের জেলাসি ,আমার বয়েই গেছে কারে ব্যাপারে জেলাসি হতে ,তুমি ওকে পাশে কেন কোলে নিয়ে বসে থাকলে ও আমার কিছুই যায় আসে না ,
-সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি কেউ একজনের মন জ্বলে পুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে ,
উনার কথা শুনে আমি রাগে কটমট করে উনার দিকে তাকালাম ,আমি তাকাতেই উনি হেসে উঠে বললেন,
-আরে রেগে যাচ্ছো কেন ,তোমার কি ধারনা রাগলে তোমাকে ভীষন সুন্দরী লাগে ,এক্কেবারে ভুল ধারনা সত্যিটা শুনে রাখো সুহারানী রাগলে তোমাকে খুব বাজে দেখায় ,
উনার কথা শুনে মাথা আরো গরম হয়ে গেল আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
-আমাকে তো বাজে লাগবেই,পৃথিবীর সেরা সুন্দরী তো তোমার পি.এ ,এখানে এসোছো কেন তার কাছেই বসে থাকলে পারতে ,বলেই চলে যেতে চাইলাম তখনই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন ,
আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে উনার পাশে বসিয়ে জরিয়ে ধরে বলে উঠলেন,
-তুমি আমাকে ভালবেসে ফেলেছো তার জন্যই তো অন্যকারো পাশে আমাকে দেখে কষ্ট হচ্ছে তোমার,আমাকে ভালোবাসো সুহারানী,একটিবার বলো না,তোমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনার জন্য আমি কত দিন থেকে ওয়েট করে আছি ,
উনার কথা শুনে আমি ভাবলেশহীন ভাবে বসে রইলাম,কি বলবো এ কথার উওর তো আমার জানা নেই ,
আমাকে নিশ্চুপ দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
-কি হল বলো না ,প্লিজ একটি বার বলো তুমি আমাকে ভালবাসো ,
উনার কথা শুনে আমি উনার দিক থেকে চোঁখ নামিয়ে মাথা নিচু করে বলে রইলাম,
তখন উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন,
-একটা কথা কি জানো সুহারানী যাকে অন্যের পাশে সহ্য হয় না তাকে নিজের পাশে যত্ন করে রাখতে হয়,
বলেই উনি রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন,
আমি থ মেরে বসে রইলাম উনার বলা কথাটা আমার মনে ভীষন ভাবে নাড়া দিল।
.
এভাবেই রাগ অভিমান ,খুনশুটির মাঝে উনার সাথে আমার দিন কাটতে লাগল ,
সেদিন কি একটা প্রয়োজনে উনি অফিস থেকে হঠাৎ বাসায় চলে এলেন তখন নিলয় আমাদের রুমে বসে আমার সাথে গল্প করছে,উনি নিলয়কে আমার সাথে দেখে ভীষন ক্ষেপে গেলেন উনাকে দেখেই নিলয় রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর উনি রেগে আর অফিস না গিয়ে আমাকে সারা দিন রুমের মধ্যে বন্ধি করে রাখলেন,সেই সাথে ওয়ার্নিং দিয়ে দিলেন এরকম আর কোনো দিন হলে এর চেয়ে ভয়ংকর শাস্তি দিবেন,সেই ভয়ে এখন উনি অফিস গেলে আমি যখন রুমে থাকি দরজা লক করে বসে থাকি,
নিলয়কে ও এখন এড়িয়ে চলি ওর আচরন কেমন যেন অন্যরকম লাগে।
আজ বিকেলে ড্রয়িং রুমে বসে আন্টির সাথে গল্প করছি হঠাৎ নিলয় এসে জোর করতে লাগল ওর সাথে বাইরে যাওয়ার জন্য,
আমার ওর সাথে কোথাও যেতে একটুও ইচ্ছে হলো না ,আমি ওকে বললাম উনাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি যদি উনি বলেন তো যাবো তখন ও বাঁধা দিয়ে বলে উঠল,
-আরে ব্রোকে বললে আমি সিউর ও মানা করবে ,ওকে জানানোর প্রয়োজন নেই ও আসার আগেই আমরা চলে আসবো,প্লিজ সুহা চল না আমি তো চলেই যাবো আর কখন দেখা হবে
ঠিক নেই,
বলেই আবার আন্টিকে বলতে লাগল,
-প্লিজ আন্টি তুমি একটু ওকে বুঝিয়ে বলো না তুমি বললে ও যাবে,
আন্টি প্রথমে মানা করলেন ,শেষে
ওর জোরাজোরি দেখে আন্টি ও বলতে লাগলেন,ও যখন এতো রিকোয়েস্ট করছে ওর সাথে যেতে ,
আর নিলয়কে বলে দিলেন যাতে উনি চলে আসার আগেই আমাকে নিয়ে চলে আসে উনি জানতে পারলে খুব রাগ করবেন।
অবশেষে তাদের এতো রিকোয়েস্ট দেখে আমি আর না করতে পারলাম না হতাশ হয়ে রাজি হলাম ওর সাথে যাওয়ার জন্য।
(চলবে )