Destiny_of_Love PART_11 ◆ kache ashar golpo

0
4898

Destiny_of_Love
PART_11
#Nishat_Tasnim_Nishi
_______________________________

বয়ফ্রেন্ড আমার দুইদিন থেকে কথা বলে না।আমাকে দেখলে তিনি ভাব দেখিয়ে হেটে পাশ কাটিয়ে চলে যান। তিনি নাকি আমার উপর অভিমান করে আছেন। কারন হলো আমার ছোট বেলার বন্ধু আমার গালে উম্মাহ্ দিয়েছিলো।
বারবার বললাম যে আমি তখন ছোট ছিলাম,তবুও তিনি মানছেন না।সে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। নিজের মত ক্ষেত খামারি নিয়ে থাকে। বুঝাতে না পেরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এ লোকটাকে বুঝানো বড় দায়। বান্ধবীকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম সমাধান দিতে উল্টো সে হাসতে হাসতে শেষ।হাসার জন্য কথাই বের হচ্ছিলো না।
সন্ধ্যা নেমেছে মাত্রই,সবাই সবার রুমে বসে আছে।চুপিচুপি পা ফেলে বের হলাম বফকে মানাতে।ঘর থেকে দু কদম না দিতেই তাকে দেখতে পেলাম,সাথে সাথে টেনে রুমে নিয়ে এসে দরজা টা লাগিয়ে দিলাম।
আবরার ভয় পেয়ে গেলেও পরক্ষণেই বুঝে যায় যে এটা আমি। সে আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়। রেগে টেনে বিছানায় বসালাম।

—‘কী সমস্যা?’
সে জবাব দেয় না,নিচে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বসে রয়েছে। তাকে দেখলে যে কেউ বলবে পৃথিবীর সবচেয়ে বলদ প্রাণী।একদম কিছু জানে না। তার এসব ঢং দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে।
–‘কথা বলবেন না?আচ্ছা ভালো। এক্ষুনি গিয়ে ইশতিয়াক ভাইয়াকে বলছি আমাকে আবার উম্মাহ দিতে তাহলে,,’
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে সে অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। এমনিতেই রেগে আছে, এখন আরে রাগালে বিষয়টা আরো খারাপ হয়ে যাবে। তাই আমি বললাম,সরি, সরি।আমি আসলে এমনিতেই বলেছি,আপনার মুখ থেকে কথা বের করার জন্য।কিন্তু এত লেইম কিছু বলবো নিজেও ভাবি নি।

ও আমাকে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,–‘কেনো?এ কথায় কেনো বলতে হবে?আর কোনো কথা মাথায় আসে নি। এমনিতেই তো ওই বুড়ি সারাদিন এই ছেলের নিয়ে নাচে,সাথে তুই নিজেও থাকোস। আমার সাথে কথা না বললেও চলবে তোর। আমাকে তো আর এখন ভাল্লাগে না,তাই না।আমি কে?হু আই এম?’
বলেই আমাকে ছেড়ে দিলো,ওর দু চোখ ভরে আসলো। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ও এমন হলো কবে?আগে কিছু হলে তো আমার খবর করে ছাড়তো,আর এখন কেঁদে দেয়।

ও নিজে নিজে কথা বললো,তারপর ফটাফট আমার গালে কয়েক টা উম্মাহ দিয়ে দিলো। সাথে সাথে তার রাজ্য জয়ের খুশী। ‘ও একটা দিয়েছে আমি তিনটা দিয়েছি।’

—‘এবার খুশি?’

ও আমাকে ধমক দিয়ে বললো,চুপ থাকো। হুমকি দিয়ে বললো,,–‘আর যেনো ছেলেটার আশেপাশে না দেখি। দেখলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দিয়ে ঘরে বসিয়ে দিবো।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর দিকে তাকালাম।হঠাৎ বাচ্চামো, হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে যাওয়া,ও এমন কেনো?

আবরার নরম গলায় ডেকে উঠলো,
—‘শ্রুতি? ‘

–‘হু’
ও আমার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো, নিভু নিভু গলায় বললো,–‘আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে? সারাদিন মাঠে কাজ করে ক্লান্ত,মাত্রই এসেছি।ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছিলাম খাওয়ার জন্য কিন্তু এখন আর ইচ্ছা করছে না।খুব ঘুম আসছে,দিবে?’

ওর করুণ কন্ঠ আমার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু করে দিলো। আমি জানি ও ভালো নেই, একদম ই ভালো নেই। ওর ভালো না থাকার পিছনে আসল কারণ টা কী?

বিছানায় বসে আছি আমি আর আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আবরার।ও প্রচন্ড ক্লান্ত, মাথায় দুবার হাত বুলাতেই ও গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।মাথা থেকে হাত টা সরিয়ে মুখে দিলাম।মুখ টা শুকিয়ে একদম শুকনো কাঠ হয়ে আছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। কত সুন্দর উজ্জ্বল,গুলোমুলু চেহারা ছিলো তার আর এখন কেমন শুকনো কাঠের মতো হয়ে গিয়েছে।যদি এত প্রতিদানের ফল না পায় ও,তখন কী হবে?
মাথাটা খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।

১৯.
রাত ১১ টার কাছাকাছি সময়ে বাবার রুম থেকে শোরগোল শুনা গেলো। চোখ মেলছি না তবুও সব ঠিক শুনতেছি।আম্মু আর চাচীরা কান্নাকাটি করছে। জোর করে চোখ দুটো মেললাম।চোখ খুলতেই দেখলাম আমার গায়ে কম্বল জড়ানো, মাথার নিচে বালিশ দেওয়া। সোজা হয়ে শুয়ে আছি আমি। আশেপাশে তাকিয়ে আবরারকে খুঁজতে লাগলাম।কিন্তুু ওকে কোথাও দেখলাম না। এদিকে শোরগোলের শব্দ বাড়তে লাগলো,আমি দ্রুত উঠে ওড়না টা মাথায় জড়িয়ে দরজা খুলে বের হলাম।
শোরগোলের আওয়াজ অনুসরণ করে দিদুনের রুম আবিষ্কার করলাম। সেখানে যেতেই দেখলাম বাবা-চাচারা, মা-চাচীরা সবাই গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে। আম্মু আর চাচী রা বারবর দাড়িয়ে দিদুনকে নিয়ে অস্থির হচ্ছে। আমি গিয়ে বললাম কী হয়েছে?
সবাই মাঝখান থেকে সরে গেলো,তাকিয়ে দেখলাম দিদুন রক্তবমি করেছে। আমার হুশ উবে গেলো।
–‘দিদুন কী হয়েছে?’

দিদুন ইশারায় বলছে যে না কিছু হয় নি। সবাই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
–‘দিদুনের কী হয়েছে কেউ কি বলবে?’

কারো জবাব নেই, এর মধ্যেই গাড়ীর হর্ণ বেহে উঠলো। সবাই মিলে দৌড়াদৌড়ি করে দিদুনকে নিয়ে যেতে লাগলো। আমিও দৌড়ে উনাদের সাথে গেলাম।

২০. হাসপাতালের বাহিরে বসে আছি আমরা সবাই। টেনশনে সবার অবস্থা একদম খারাপ। আমি আসার সময় থেকেই কাঁদতেছি। চোখমুখ ফুলে গিয়েছে ইতোমধ্যে। দিদুনের কী হয়েছে?

ডক্টর বের হতেই আমি দৌড়ে গেলাম উনার কাছে।–‘ডক্টর, দিদুনের কী হয়েছে?’

ডাক্তার মুখের মাস্ক টা খুলতে খুলতে বললেন,—‘লিভার সিরোসিস হয়েছে।’

আমি সহ আমার পুরো পরিবার অবাক হয়ে বললাম,—‘লিভার সিরোসিস?সেটা কী?’

ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,

—”লিভার সিরোসিস। একটি মারাত্মক ও অনিরাময়যোগ্য রোগ। এতে যকৃৎ বা লিভারের কোষকলা এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যায় যে তা সম্পূর্ণ বিকৃত ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে যকৃতের যেসব স্বাভাবিক কাজ আছে, যেমন বিপাক ক্রিয়া, পুষ্টি উপাদান সঞ্চয়, ওষুধ ও নানা রাসায়নিকের শোষণ, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি ইত্যাদি কাজ ব্যাহত হয়। দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা। ধীরে ধীরে এই রোগ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় মানুষকে।”

আবরার সামনে এসে বললো,,
—”কেন হয়?”

—-”হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস সংক্রমণ কারও কারও ক্ষেত্রে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি আকার ধারণ করে সিরোসিসে পরিণত হয়। বিশ্বজুড়ে এটাই প্রধানতম কারণ। তবে সব ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ সিরোসিসে পরিণত না-ও হতে পারে। দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হেপাটাইটিস বি পজিটিভ রোগীর পাঁচ থেকে ২০ বছর পর লিভার সিরোসিস হতে পারে। তবে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই হার অনেক বেশি। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের মদ্যপানের অভ্যাস, যকৃতে চর্বি জমা থেকে জটিলতা, কিছু জিনগত সমস্যা, কিছু ইমিউন সিস্টেমের জটিলতায়ও লিভার সিরোসিস হতে পারে।”

ডাক্তার আরো বললেন,,

—-”’লিভার সিরোসিসে সেরে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী পাঁচ বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকার আশা করতে পারেন। সিরোসিস থেকে যকৃতের ক্যানসারেও রূপ নিতে পারে। তাই রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করাই ভালো। হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, যেমন শিরায় নেশাদ্রব্য ব্যবহার, অনিরাপদ রক্ত গ্রহণ বা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলুন। যাঁরা হেপাটাইটিস বি নেগেটিভে আক্রান্ত, তাঁরা সংক্রমণ এড়াতে টিকা দিয়ে নিতে পারেন। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান এড়িয়ে চলুন। হেপাটাইটিসে সংক্রমণ হলে ঝাড়ফুঁক-জাতীয় চিকিৎসা না করে দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা নিন।  মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।”

মেঝো চাচী বললেন,–”আম্মার এত বড় অসুখ আমরা কেনো বুঝলাম না?”

ডাক্তারঃ “প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়তে দেরি হয়
হঠাৎ রক্তে লিভার এনজাইমের অস্বাভাবিকতা বা আলট্রাসনোগ্রাফিতে যকৃতের আকার-আকৃতির পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে গিয়ে লক্ষণ ধরা পড়ে।”

এটা বুঝার মাধ্যম হলো,,, “”সাধারণত খাদ্যে অরুচি, ওজন হ্রাস, বমি ভাব বা বমি, বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত, শরীরে পানি আসা ইত্যাদি হলো মূল উপসর্গ। পরে যকৃতের অকার্যকারিতার সঙ্গে কিডনির অকার্যকারিতা, রক্তবমি, রক্তে আমিষ ও লবণের অসামঞ্জস্য ইত্যাদি জটিলতা।”

আমি ধপ করে বসে পড়লাম, তখন ই ডক্টর বললো,,
—‘”উনার হাতে সময় খুব কম,হাতে গোনা কয়েক টা দিন উনি বাঁচবেন। এর আরেকটা কারন হলো,উনার শরীরের আরো অনেক অঙ্গ সমূহ অকার্যকরী হয়ে গিয়েছে।তাছাড়া উনার একটা কিডনি নাই,যে একটা কিডনি রয়েছে সেটারও বিভিন্ন সমস্যা দেখাচ্ছে। “”

আমি কপাল কুচকে বললাম,,—”একটা কিডনি মানে?আরেকটা কিডনির কি হয়েছে?”

ডাক্তার কিছু বলবেন তার আগেই পাশ থেকে বাবা বললেন,–‘”সেটা তোমাকে দিয়ে দিয়েছেন।”

আমি অবাক হয়ে গেলাম। একদম অবাক।আমাকে দিয়েছেন মানে? আমি সাথে সাথে প্রশ্ন করলাম যে কখন দিয়েছেন? কিন্তু কেনো আম্মু তখন কেঁদে কেঁদে বললেন,আমি যখন ছোট ছিলাম তখন। দোকানের রঞ্জক পদার্থের কারণে আমার কিডনি অচল হয়ে গিয়েছিলো। তখন দিদুনের সাথে আমার টিস্যুর, ব্লাড এসবের মিল থাকায় উনি আমাকে দিয়ে বাঁচিয়ে ছিলেন। একবার বললাম না ছোট বেলায় আমি অনেকদিন হাসপাতালে ছিলাম, তখন এই কারণেই ছিলাম।
স্তব্ধ হয়ে নিচে বসে আছি আমি। এজন্যই দিদুনের আমার প্রতি এত টান।মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করতাম যে এত ছোট বয়সে যে আমি সবসময় দিদুনের সাথে থাকি তাতে মাবাবার কোনো সমস্যা হয় না কেনো? দিদুন কেনো এত টা আগলে রাখতো আমাকে?

(আসসালামু আলাইকুম।
কতগুলো বড় বড় মন্তব্য করলেই রাতেই আরেক পর্ব পোস্ট করবো।আসলে বোনাস পর্ব দেওয়ার ইচ্ছে আছে,যদি আপনারা চান। বোনাস পর্বে ধামাকা রয়েছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here