#এমন_কেনো_তুমি,part_2
#ফাতেমা_তুজ
পুরো ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খাবার। কিছু মুহূর্ত আগেই চেঁচামেচি করেছে আরহান। চার জন স্টাফ মিলে ধরে কোনো মতে ঘুমের ইনজেকশন পুস করেছে। এখন কিছু টা ক্লান্ত ছেলেটা। হয়তো কিছুক্ষণ পরেই ঘুমের অতলে ডুবে যাবে।
নিষ্প্রাণ ব্যথিত চোখ ওর। অঝর ধারায় কতো অশ্রু গড়িয়েছে তাঁর হিসেব স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা জানেন। চোখের নিচের অংশ টা অনেক টা ডেবে গেছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত কালো আঁধার এই চোখে বর্ষিত হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা যেন নিজ হাতে দিয়েছেন এই ব্যথা। তাঁর সাথে দিয়েছেন অসীম সাত সাগর কিংবা তাঁর থেকে ও বেশি মায়া আর ভালোবাসা। যা শুধু মাত্র এক নামের সাথে জুড়ে আছে। নাম টা ঠিক ঠাওর হলো না আরহানের। তাঁর পূর্বেই ঠলে পরলো বিছানায়।
****
কিছু দিন পূর্বেই আরহান দের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। আরহান এখন পঞ্চম শ্রেনির বৃত্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রচন্ড চাপের মধ্যে থেকে ও টেনশনে পরে গেল ছেলেটা। ইদানিং লক্ষ্য করেছে ওদের নতুন ভাড়াটিয়া সিয়া আর ওর বড় বোন সুমা ওর রুমের কাছে এসে একে অপরের কানে কানে ফিস ফিস ফিস করে কি যেন বলে আর হাসে। আরহানের কেবলি মনে হলো’ আমাকে কি গরুর মতো লাগে যে ওরা হাসে? ‘
ওদের হাসি দেখে বেশ কৌতুহল পেলো ছেলে টার। কলম নাচাতে নাচাতে বলল
” এই তোমরা কানে কানে কি বললা? ”
সিয়া কি বুঝলো কে জানে তবে বেশ লজ্জা পেয়ে দৌড় দিলো নিজেদের ঘরে। আরহান নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো। কি অদ্ভত এরা!
পূর্ন মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো আরহান। মাত্র দশ মিনিট অতিবাহিত হয়েছে। ওমনি এসে হাজির সিয়া। বিষয় টা বেশ ভাবাচ্ছে আরহান কে। আরশি তে নিজেকে দেখতে লাগলো। না সব তো ঠিক ঠাক। তবে ঐ মেয়ে দুটো এমন কেন করছে?
তিন চার দিন পার হলো। সিয়া আর সুমা একি কান্ড করছে রোজ। আরহানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। আজ সুমা আসে নি। হয়তো পড়ছে, আরহান আর সুমা সমবয়সী। ছোট ছোট করে একটা কাগজে লিখলো আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাগজ টা ভাঁজ করে ফিচেল হসলো অরহান। কাগজ টা সিয়ার হাতে দিয়ে বলল
” এটা তোমার। ”
সিয়া কি বুঝলো জানা নেই তবে হঠাৎ করেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল ওর মুখ। কাগজ টা নিয়ে ছুটতে লাগলো সর্ব শক্তি দিয়ে।এক দৌড়ে নিজের ঘরে। দশ মিনিট গিয়ে পনেরো মিনিট অতিবাহিত হলো। অথচ সিয়ার কোনো নাম গন্ধ ও নেই। এখন ভয় হচ্ছে আরহানের। দেখতে দেখতে এক ঘন্টা হয়ে গেল। সিয়া আসলো না। ঘরের মধ্যেই পায়চারি করতে লাগলো আরহান। বুক টা ছ্যত করে উঠছে। কেন যেন দুষ্টুমি করতে গেল। যদি বিচার দেয় তো মায়ের হাতের টাটকা মেডিসিন একটা ও মাটি তে যাবে না। প্রায় দেড় ঘন্টা পর সিয়া আসলো। মুখ টা গম্ভীর।চোখ মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে প্রচুর রেগে আছে। চোখ থেকে যেন আগুন জরছে। আরহান কিছু বলতে পারলো না আর। গলা শুকিয়ে কাঠ। সিয়া হাতের পেছন থেকে একটা গোল কাগজ ওর মুখে মেরে চলে গেল। আরহান হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। এটা কি হলো?
কাগজ টার দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো আরহান। ভাবনায় আসলো না কাগজ টা কিসের। হয়তো বা বাসা থেকে নিয়ে এসেছে ওর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। তবে কৌতুহল জাগলো খুব। ভাবলো ‘ দিয়েছে যখন তো খুলেই দেখি। ‘
ধীরে ধীরে কাগজ টা খুললো। যা দেখলো তাঁতে চার শ চল্লিশ ভোল্ট এর ঝটকা খেলো আরহান। এতো দেড়ি হওয়ার কারন কাগজে ভাসমান। একটা পুরো কাগজে বিশ থেকে বাইশ বার লিখা আছে ‘ আমি ও তোমাকে ভালোবাসি। ‘ তবে প্রতি টা লাইন কাঁটা। কারন লেখা গুলো সুন্দর হয় নি। ক্লাস টু এর বাচ্চার হাতের লেখা কতো সুন্দর ই বা হতে পারে?
ছোট্ট আরহান হতাশা ভরা চোখে তাকালো। কি হলো কিছুই যেন বুঝতে পারলো না। শেষের দিকে বর্ডার টেনে লেখা একটা সম্পূর্ন লাইন। যেটা কে সিয়ার মনে হয়েছে সুন্দর হয়েছে লেখা টা। কে জানতো ছোট বয়সে করা এই দুষ্টুমি টাই সময়ের সাথে প্রেম হয়ে যাবে।
——–
সপ্তাহ খানেক পর
ফারেগ দেখা করতে এসেছেন। খবর এসেছে আরহান এখন সুস্থ। মা বাবার সাথে দেখা করতে চায় সে। কথা টা শোনা মাত্র ছুটে এসেছেন তিনি। মূলত আরহান বহু দিন পূর্বেই সুস্থ হয়ে যেতো। ব্যবসায়িক লাভের জন্য কর্তৃপক্ষ চাল খাটিয়েছিলো। নানান মেডিসিনের সাহায্যে ওকে অর্ধ সুস্থ করে রাখতো। আর স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার জন্য ভিটামিন দেওয়া হতো। যাঁর ফলে শরীর মুটিয়ে গেছে।
ছেলে কে দেখার জন্য দু চোখ যেমন চঞ্চল ঠিক তেমনি ভাবে ঐ মুখ থেকে আব্বু ডাক শোনার জন্য পাগল তিনি। প্রায় চৌদ্দ টা মাস ধরে ছেলের থেকে দূরে আছেন। কত টা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন ওনারাই জানেন। এক টা সময় দু চোখে কতো স্বপ্ন ছিলো। অথচ আজ সব ধুয়াশা। নেই কোনো বড় ইচ্ছা, শুধু একটাই চাওয়া ছেলেটা সুস্থ হয়ে যাক। আগের মতো হাসি খুশি থাকুক। দরজা খোলার ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজে ফিরে তাকালো আরহান। ফারেগ কে দেখে আবেগী হয়ে পরলো। এই মানুষ টা চিনতে পেরেছে ও। এই যে ওনি তো ওর বাবা। ভারী শরীর টা নিয়ে ফারেগ কে জাপটে ধরলো আরহান। দু চোখের কোন বেয়ে নেমে যেতে লাগলো ধারা। কেবলি মুখ থেকে উচ্চারণ করলো ” আব্বু। ”
****
সময় পেরিয়ে যেতে লাগলো। এই কয়েক মাসে আরহান বুঝে গেছে সিয়া প্রচন্ড পাকনি মেয়ে। আরহানের সাথে লেপ্টে থাকাই ওর অভ্যাস। সব থেকে অবাক করা বিষয় হলো চার পাশে যখন যা দেখতে পায় সেটা সবার আগে আরহানের উপর প্রয়োগ করে। এই যে কিছুক্ষণ আগে দেখেছে কোনো কাপল কে চুমু খেতে ওমনি এসে হুট করে আরহানের গালে চুমু খেয়ে নিয়েছে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আরহানের মুখ। আশে পাশে তাকিয়ে সর্তক হয়ে বলল
” এই কি করলে এটা? ”
” আমি দেখেছি আজ। ঐ যে বাহিরে একটা আপু ভাইয়া কে চুমু খেয়েছে। ”
” তোমার কি কোনো কাজ নেই? ”
র,ক্ত লাল চোখে তাকালো সিয়া। যেন জ্বলন্ত চোখ দিয়ে এখনি গিলে নিবে ওকে। ফাঁকা ঢোঁক গিলে নিলো আরহান। সিয়ার হাতের থাপ্পড় কে বেশ ভয় পায় ও।
আঠার মতো লেগে থাকে সিয়া। কিছুক্ষণ পূর্বেই বায়না ধরলো দোকানে যাবে। আর আরহানের সাথেই যাবে। অগত্যা যেতেই হলো ওকে।
রাস্তার অন্য পাশে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে একটি ছেলে আর মেয়ে। সম্ভবত দুজন কাপল। কারন তাঁরা হাত ধরে একে বারে লেপ্টে হেঁটে যাচ্ছে। সিয়ার চোখ স্পষ্টত লক্ষ্য করলো সেটা। ওর ছোট্ট মস্তিষ্কের নিউরন গুলো সংকেত দিলো। তাই দ্রুত গিয়ে চেপে ধরলো আরহানের হাত। আরহান প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকাতেই ইশারা করে দেখালো। বলল
” ওরা হাঁটছে তাই আমি ও হাটবো। ”
” দূরে যাও সিয়া। ওরা হাঁটলেই হাঁটতে হবে? ”
” হুম হবে। ”
সিয়ার নাছোড়বান্দা কন্ঠ। ফ্যাসাদে পরলো আরহান। সিয়ার হাত ধরেই হাঁটা লাগালো। দোকান থেকে চকলেট কিনে ফিরছিলো। হঠাৎ করেই ইটের মাঝে পা লেগে পরে যায় আরহান। সিয়ার কান্না দেখে কে। কান্না করতে করতে চোখ মুখ একদম লাল করে ফেলেছে। আরহান দেখলো পায়ের গোড়ালির একটু উপরে কিছু টা থেঁতলে গেছে। হালকা র,ক্ত ঝরছে তবে তেমন ব্যথা করছে না। অথচ সিয়া কে দেখো, মনে হচ্ছে আরহান নয় ও ব্যথা পেয়েছে। আশ্চর্য মেয়ে তো!
আরহান দের বাড়ি টা চার ফ্ল্যাট করে করা। ওরা যে ফ্লোরে থাকে তাঁর অর্ধেক টায় নিজস্ব থাকার জন্য বড় করে একটা ফ্ল্যাট করা। বাকি দু ফ্ল্যাটের একটায় থাকে সিয়ার ফ্যামিলি আর একটা তে থাকে এক হিন্দু ফ্যামিলি। ঐ ফ্ল্যাটের একটি মেয়ের নাম দীপা। আরহানের সমবয়সী, এক সাথেই খেলা করে ওরা। খেলছিলো ওরা, তখনি কোথা থেকে হাজির হলো সিয়া। বলল
” দোকানে নিয়ে চলুন। ”
” পারবো না এখন। ”
” নিয়ে চলুন এখনি। ”
” আমি এখন খেলছি, সুমা কে বলো। ”
” আপুর সাথে যাবো না আমি। তুমিই নিয়ে যাবা আমাকে। ”
” এমন কেনো তুমি? ”
” এমনি আমি। আপনিই নিয়ে যাবেন। ”
দু বছরের বাচ্চা দের মতো বায়না করছে সিয়া। এমনি তে প্রচুর ভয় পায় আরহান কে। তবে প্রায় এমন সব কান্ড করে বসে যাঁর ফলে সিয়া কেই ভয় পায় আরহান।
আর সব থেকে হাসির বিষয় আপনি, তুমি কতো ভাবে সমোন্ধন করে। পাকনি একটা!
** মূলত ছোট বেলার কাহিনী টুকু স্মৃতি চারন। আর হ্যাঁ বিশেষ কারনে শীয়া নাম টি পরিবর্তন করে সিয়া দেওয়া হয়েছে। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। **
চলবে