এমন_কেনো_তুমি,part_11,12

0
734

#এমন_কেনো_তুমি,part_11,12
#ফাতেমা_তুজ
#part_11

আরহানের শরীর ক্রমশ দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। ছুটে চলেছে প্রাণ পনে। তবে আর পারছে না যেন। এখনো আকাশে আঁধার। ডুবে আছে চাঁদ। ঝি ঝি পোকারা নিত্য দিনের মতোই ঝি ঝি আওয়াজে ব্যস্ত। কোথাও একটা মানুষের ছায়া দেখা যাচ্ছে না। সবাই যেন এক ঘুমে ডুবে আছে। হঠাৎ করেই মনে পরলো কাছে পিঠেই ওর খুব কাছের এক বন্ধুর বাসা রয়েছে। শুনেছিলো ওর ফ্যামিলি নাকি খুব পাওয়ারফুল। তাই তৎক্ষনাৎ সাবিদ এর বাসার পথে ছুট লাগালো। মিনিট খানেক পর সাবিদের বাসার নিচে এসে স্বজোড়ে চেঁচানো শুরু করলো আরহান।
“সাবিদ, সাবিদ কোথায় তুই? কোথায় রে তুই। সাবিদ, এই সাবিদ। ”

আরহানের কন্ঠে ভয় আর কষ্ট জমে আছে। নানান আশংকায় স্বর্ণালি চেপে এসেছে। ভেতর টা ভয়ে দুমরে মুচরে যাচ্ছে। সাথে রয়েছে শরীরের মারাত্মক যন্ত্রনা।এতো চেচানোর পর ও আরহানের কন্ঠ যেন কেউ শুনতেই পাচ্ছে না। অনড়গল ডেকে যাচ্ছে সে অথচ কেউ আসছে না। ততক্ষণে ছেলে গুলো এসে পরেছে। আরহান নাকে হাত দিয়ে আছে। নাক থেকে র’ক্ত ঝরছে খুব। মুহূর্তেই গাড়ি এসে থামে ওর সম্মুখে। গাড়ি থেকে নেমেই গালি প্রদান করে জলিল বলল
” কারে ডাকতেছিস তুই? কে বাঁচাবে তোকে। শুধু আমার নাম বল যে আমি তোকে ধরছি। দেখি কোন মানুষ টা বাঁচাতে আসে তোকে। ”

আরহান ফোন দেয় সাবিদ কে। মিনিট খানেক পর সাবিদ নামে সাথে ওর বড় ভাই ও। সাবিদের ভাব এমন যে আরহান কে কেউ কিছু বললে মে’রে ফেলবে যেন। সাবিদ বলল
” কি হয়েছে তোর? ”

আরহান কথা বলার মতো পরিস্থিতি তে নেই। সাবিদ আবারো বলল
” কি হয়েছে দোস্ত। তোর এ অবস্থা কেন?”

কোনো মতে সব টা খুলে বললো আরহান। জলিল আর তাঁর লোক জন আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলো। কথা শেষ হতেই বের হয়ে আসে। সাবিদের চোখে মুখে উৎকন্ঠা ছড়িয়ে। জলিল ওদের কে উদ্দেশ্যে করে বলল
” কি ভাতিজা কেমন আছো? ”

এতোক্ষন বেশ ভাব নিয়ে ছিলো সাবিদ আর তাঁর বড় ভাই মাহিদ। তবে এখন চেহারায় দেখা মিলছে অন্য রকম একটা ছাপ। কাঁচুমাচু করছে তাঁরা। মাহিদ কাঁপা কন্ঠে উত্তর করলো
” জী আঙ্কেল ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন? ”

” এই তো ভালো। ”

” কি হয়েছে আঙ্কেল। কি হয়েছে ওর সাথে, কি করেছে ওহ? ”

” আরে আর বলো না আমার ভাগ্নের ওয়াইফ এর সাথে বাজে কাজ করতে দেখলাম আমি। একে বারে হাতে নাতে ধরেছি আমরা। তো যা হয়েছে হয়েছে, আমি বললাম যে যাই করছিস সমস্যা নেই, ঐ মেয়ের সাথে আলোচনা করে কথা বলে তাঁরপর না হয় ছেড়ে দিবো তোকে। কিন্তু কিছু তেই কথা মানছে না ওহ। ”

জলিল এর কথা শুনে সাবিদ আরহানের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল
” আঙ্কেল তো অনেক ভালো মানুষ। আঙ্কেল যা বলছে তাই কর না। ”

সাবিদ এর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আকাশ থেকে পরলো আরহান। এমন টা আশা করে নি সে। এই অসময়ে ও দাঁড়িয়ে ভীষণ হাসি পাচ্ছে ওর। এই তাঁর বন্ধু! সাবিদ এর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে বাজে আচারন করেছিলো এক টা ছেলে। সাবিদ প্রতিবাদ করাতে সেই ছেলে ওকে আঘাত করে। এ কথা শোনা মাত্র ক্ষেপে যায় আরহান। ঐ ছেলে কে বাসা থেকে বের করে প্রচন্ড মেরেছিলো। আর সেই বন্ধু আজ এমন কথা বললো। ভীষন অবাক হচ্ছে আরহান। অবাক হওয়ার ই কথা। ভয় পাওয়া টা স্বাভাবিক তবে সেটা ওকে বললেই তো হয়। কিন্তু এভাবে বিপরীত প্রতিক্রিয়া ঠিক হজম হচ্ছে না আরহানের। সাবিদ নিজে ও জানে আরহান কেমন ধাঁচের ছেলে। সাবিদ আবার বলল
” আঙ্কেল যা বলে শোন। ভালো হবে। ”

ছেলেটাঅসহায় চোখে তাকালো। এই মুহূর্তে পরিবারের কাছে যাওয়া ও অসম্ভব। মান সম্মানের একটা বিষয় আছে। ওর এলাকায় উল্টো পাল্টা কিছু জানাজানি হলে ছোট হয়ে যাবে আরহান। মনে মনে স্থির করলো যাবে না সে। আর পালানোর চেষ্টা ও করলো না সে। সম্প্রীতি সিয়া আর ওর রিলেশন জানাজানি হয়েছে। এখন যদি পরিবারের কাছে যায় তো ডিরেক্ট বদনাম হবে সিয়া কে নিয়ে ধরা পরেছে আরহান। সেক্ষেত্রে ওর সাথে সাথে সিয়ার নামে ও খারাপ দুশ্চরিত্রা বদনাম রটবে। যা নিজের জীবন থাকতে হতে দিবে না আরহান। চাইলেই নিজের ফ্যামিলির কাছে যেতে পারতো ওহ। তবে সিয়ার কথা ভেবে আর গেল না। গাড়ি তে উঠানো হলো ওকে। জলিল বিদ্রূপ হেসে বলল
” তোর বন্ধু জানে এ দোষ তুই করিস নাই। তবু ও কিছুই করার নাই। ”

তখন পশ্চিমা আকাশে ক্ষীণ আলো ফুটেছে।একটা ক’ষাই এর দোকানে সামনে এসে গাড়ি টা দাঁড় করানো হলো। আজ বাদে কাল ঈদ। মানুষ মাং’স কিনবে আজ।দোকানে বসা ছিলো আরহানের বয়সী একটা ছেলে। এই ছেলের সাথে ছোট বেলায় খেলেতো আরহান। ছেলেটা প্রায় সময় ই আরহান দের বাসায় আসতো। আরহানের খেলনা দিয়ে এক সাথে খেলতো। ছোট থেকেই পরিচয়। সেই সুমনদের দোকান ই এটা। গাড়ির দরজা খুলতেই আরহান কে দেখতে পায় সে। জলিল ঐ ছেলে কে উদ্দেশ্যে করে বলল
” এই একটা চাকু দে। ”

সুমন আতঙ্কিত হয়। অসহায় মুখে তাকালো আরহানের দিকে। সে বুঝতে পেরেছে আরহানের সাথে কিছু হতে চলেছে। কিন্তু ওর কিই বা করার। জলিল এর চেহারা দেখলেই বোঝা যায় সে সাধারন কেউ নয়। সবাই কেমন ভয় পেয়ে আছে। যাঁর কাছে যা চাচ্ছে সে সেটাই দিয়ে দিচ্ছে নির্দ্বিধায়। আরহান কে নদীর পাড়ে নিয়ে আসা হলো সেই রুমের কাছে। জলিল কটাক্ষ করে বলল
” জামা কাপড় খোল। ”

” না আমি জামা কাপড় খুলবো না। ”

জলিল যেন এই উত্তরের আশা তেই ছিলো। তৎক্ষনাৎ একটা ঘু’ষি মে’রে দিলো ওকে।

” খুলবি না? ”

আবার মারলো আরহান কে। একটা ছেলে কে লাঠি নিয়ে আসতে বলেছিলো। চিকন তবে খুব শক্ত একটা লাঠি নিয়ে আসলো সেই ছেলেটা। সেই লাঠির আঘাত শুরু করলো জলিল। প্রতি টা কথার পর পর ই লা’থি ঘু’ষি আর লাঠি দ্বারা আঘাত করতে লাগলো। ব্যথায় আর্তনাদ করছে আরহান। তবু ও থামছে না পাষান লোকটার অত্যাচার। জলিল যেন এতে খুব পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছে।
এমন বাজে ভাবে আঘাত করছে যে আরহান বাধ্য হয় শার্ট খুলতে। আরহানের ফিটন্যাস খুব ভালো। নিয়মিত জিম করা হয়। জলিল পৈশাচিক হেসে বলল
” এমন শরীরেই পিটিয়ে মজা। ”

জলিল উচ্চশব্দে হেসে চলেছে আর আবার আঘাত করে যাচ্ছে। আরো কিছুক্ষণ মা’রার পর বলে
” প্যান্ট খোল। ”

” খুলবো না। ”

” প্যান্ট খোল বলছি। ”

আরহানের শরীর দূর্বল। ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। র’ক্ত পরছে নাক দিয়ে। আরহান আহত কন্ঠে বলল
” আমি প্যান্ট খুলবো না। আমারে মে’রে ফেলেন তবু ও না। ”

মূলত প্যান্ট খোলার পরিস্থিতি তে নেই সে। শরীরের প্রতি টা শিরা ব্যথায় আর্তনাদ করে। জলিল ড্রাইভার কে উদ্দেশ্যে করে বলল
” গাড়ি থেকে গামছা নিয়ে আয়। ”

লোক টা গাড়ি থেকে গামছা নিয়ে আসে। সে গামছা পরার পর প্যান্ট খুলে আরহান। ধীরে ধীরে আরো জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে। জলিল এর ছেলে রা আরহান কে চিনতো। তাই আরহানের পরিচয় দেয় তাঁরা। যেহেতু আরহান সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে তাই প্ল্যান চেঞ্জ করে সে। গাঁ’জা খাচ্ছিলো জলিল। আরহানের দিকে বাড়িয়ে বলে
” খা এটা। ”

” আমি খাই না। ”

না খেতে চাওয়াতে ও আরহান কে ঘু’ষি মারলো সে। এতো আঘাতের পর আবার আঘাত। আরহানের মনে হলো জাহান্নামে এসেছে সে। আর সেই জাহান্নামের রাজা হলো জলিল। যাঁর মনে দয়া মায়া তো নেই ই বরং পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট আজরাইল সে।

চলবে

#এমন_কেনো_তুমি [ সত্য ঘটনার অবলম্বনে ]
#ফাতেমা_তুজ
#part_12

আরহানের শরীরে র’ক্তের ফোয়ারা। নির্দেশনা মতো কোনো কাজ না করলে ও আঘাত করা হচ্ছে তো আবার করলে ও আঘাত করছে। পাগলের মতো অদ্ভুত রকম আচারণ করছে জলিল।
” ঐ দিকে যা। ”

আরহান দ্রুত ঐ দিকে গেল। আবার ঘু’ষি মারলো ওকে।
” ঐ দিকে গেলি কেন? ”

আঘাতের চিহ্ন একটু একটু করে আরহান এর নকশা বদল করে দিচ্ছে। এতো এতো আঘাত জীবনে কখনো অনুভব হয় নি। জলিলের মাথায় কিছু টা চিন্তা বহাল। সে বলল
” এই রাতের বেলা তে ঐ মেয়েরে নিয়ে চিপায় কি করছিলি তুই? ”

” আমি তো চিপাতে যাই ই নি। ”

কথা টা বলায় আবার আ’ঘাত করলো আরহান কে।
” বল গেছোস। ”

” না আমি যাই নি। ”

আরহানের চুল গুলো মুঠোবন্দী করে ঝাঁকাতে লাগলো জলিল। আবার বলল
” বল গেছোস তুই। ”

” না আমি যাই নাই যাই নাই আমি। ”

” গেছোস তুই। ঐ মেয়ের সাথে ন’ষ্টামি করছিস তুই, ন’ষ্টামি করা অবস্থায় ধরছি তরে আমি। ”

” না আমি যাই নাই। ”

কিছুতেই আরহানের মুখ থেকে স্বীকার করাতে পারছে না জলিল। ইচ্ছে মতো আঘাত করে যাচ্ছে সে। যেন এই মানবদেহ কে জড় বস্তু অথবা মৃ’ত মাং’স পিন্ড মনে হচ্ছে ওর কাছে।
মা’রার এক পর্যায়ে জঙ্গলের ঝোপ থেকে দৌড় দেওয়ার মতো একটা শব্দ কানে আসে। সবাই চকিত হয়ে যায়। ভোরের হালকা আলো ফুটেছে মাত্র।
” এই দেখ তো দেখ তো কি গেল এই খান দিয়ে। ”

সব গুলো ছেলে জঙ্গলের দিকে ছুট লাগালো। কয়েক মিনিট পর জঙ্গলের ভেতর থেকে একটা মেয়ে কে নিয়ে ফিরে এলো তাঁরা। নিস্তেজ হতে যাওয়া শরীর টা একটু উঁচু করে মেয়ে টা কে দেখলো আরহান। মেয়েটার বয়স ষোলো কিংবা সতেরো হবে। হাতে বাজারের ব্যাগের মতো কিছু একটা। নিভু নিভু চোখে স্পষ্ট দেখতে পেলো না সব টা। মেয়েটি কে আরহানের সামনে বসানো হলো।গাঁ’জা রেখে জলিল বলল
” কি রে তুই এখানে কি করছিস? ”

” আমি বাসায় যাবো। শরীয়তপুর যাবো আমি। ”

ভয়ে ভয়ে উত্তর করছে মেয়েটি। প্রচন্ড ভয়ে হাত পা শীতল হয়ে গেছে।
” তো এখানে কি করিস? ”

” আমি এখানে গারমেন্স এ চাকরি করি। ”

” গারমেন্স এ চাকরি করিস তো এই জায়গা তে কি? এই দিকে তো গারমেন্স না। ”

” স্যার আমি তো বিয়ে করেছি। আমার হাসবেন্ড আমারে মা’রে টাকার জন্য। সেই জন্য আমি পালিয়ে আমার দেশে মানে আমার গ্রামে চলে যাইতেছি। ”

” তো হাতের মধ্যে কি? ”

বাজারের ব্যাগ টা দেখিয়ে বলল জলিল। মেয়েটা ভীত হওয়া কন্ঠে উচ্চারণ করলো
” আমার জামাকাপড় এতে। ”

জলিলের চোখে মুখে উল্লাস। যেন এক পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে ওর। হাসি যেন অধরে রয় না আর। তৎক্ষনাৎ আরহান বুঝে গেল কি চলছে এই জলিলের মনে। এতোক্ষণ তো সবাই কে মুখে বলতো আরহান ন’ষ্টামি করতে এসে ধরা পরেছে। কিন্তু এখন তো প্রমাণ ও দেখাতে পারবে। ওর ভাবনার মাঝেই জলিল এসে হাজির। চোখে মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।
” তুই এই মেয়ের সাথে নষ্টামি করতে এসে ধরা পরছোস আমার কাছে। ”

ভাবনা টা এতো দ্রুত বাস্তবে পরিপূর্ণতা পাবে তা কল্পনা তে ও আসে নি আরহানের। জলিলের চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন ঘৃনা হলো মানুষ রূপের এমন অমা’নুষের প্রতি। মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আরহান পারছে না শুধু আত্মহ’ত্যা করে বেঁচে যেতে। কে বলেছে আত্মহ’ত্যা করে মানুষ ম’রে যায়। আরহান তো শতভাগ নিশ্চিত আত্মহ’ত্যা করে মানুষ বেঁচে যায়। তবে আফসোস আত্মহ’ত্যা করার মতো পরিস্থিতি তে নেই সে। সময় সুযোগ সব কিছুই তো হাতের বাহিরে।আরহান বিস্ফোরিত হতে পারলো না। তবু ও আধো আধো বুলি তে উচ্চারণ করলো
” না আমি এমন কিছুই করি নাই। ”

কথা শেষ হতে দেরি জলিল আঘা’ত করতে সময় নিলো না। সাথে ঐ মেয়েটা কে আ’ঘাত করলো। দুজন ই মা’র খেয়ে অসহায় হয়ে বসে রইলো। আশে পাশে পুরো গ্যাং ঘেরাও করে আছে। আরহান কে এমন ভাবে আঘা’ত করা হয়েছে যাঁর ফলে এক পা আগানোর শক্তি টুকু অবশিষ্ট নেই দেহে। জীবনে বেঁচে থাকা এতো কঠিন তা সেকেন্ডে সেকেন্ডে অনুভব করছে আরহান। জলিলের নিশ্বাসের সাথে গাঁ’জার গন্ধ ভেসে আসে। অন্তর যেন বিষিয়ে যায় প্রতি পদক্ষেপে।
” ঐ এই দুই টা রে নিয়ে আয়। ”

আরহান আর মেয়েটা কে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো জলিলের ছেলেরা। লোক টার মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না সঠিক। তবে ভয়ঙ্কর কিছু করবে সে।

নদীর পাড় ঘেঁসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওদের। কিছু দূর পরেই একটা ব্রিজ। সেই ব্রিজের নিচে টিন সেট করা ব্যাচেলর ঘর। মূলত সেখানে রিক্সা চালক, দিন মজুর রা থাকেন। সেখানে উপস্থিত করা হলো ওদের। একটা ঘরের দরজা সামান্য খোলা। জলিল তাঁর নিকৃষ্টতম পা দিয়ে লা’থি মেরে দরজা টা খুলে ফেললো পুরো টা। ঘরের ভেতর একটা লোক। খুব সম্ভবত রিক্সা চালান তিনি। কালো শরীরে লাল গামছা টা পরিকল্পিত হয়। লোক টা পান্তা ভাত খাচ্ছিলো।
” ঐ ভাই আপনি কে? এভাবে ঘরে ঢুকলেন ক্যান! ”

লোক টা ভাত নিয়ে বসা অবস্থা তেই প্রশ্ন করলো। সেই অবস্থা তেই জলিলের লা’থি পরলো রিক্সা ওয়ালার দেহে। জলিল সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তাঁর। সম্পূর্ন অচেনা ব্যক্তি। লোক টা উঠে পরলো। রেগে গিয়ে বলল
” আপনি কে? ”

” তুই চিনোস না আমারে? ”

কতো গুলো অকথ্য ভাষায় গালি প্রদান করলো। লোক টার চারপাশে জলিল এর লোক ঘেরাও হয়ে আছে। কথার মাঝে আরো দুই তিন টা লা’থি মেরে দিলো জলিল। কথার থেকে হাত পা চলে বেশি তাঁর। প্রতি টা আচারন ই জঘন্য।
” এই ঘর থেকে বের হ। ”

কোনো মতে বের হয়ে যায় লোক টা। শার্ট অব্দি নিতে পারে নি। মাত্র ই খেতে বসেছিলো সে। খাবার প্লেটে পরে আছে পুরো টাই। লোক টা সারা দিন রিক্সা চালাবে। পেট খালি একদম। রিক্সা চালিয়েই জীবন চলে। লোক টা মিনিট খানেক পর আবার আসে। বলে
” ভাই আমার শার্ট টা দিলে। ”

রিক্সা চালকের মুখের মধ্যে লা’থি মারে জলিল। ঘর টা সামান্য উঁচু। সেখান থেকে নিচে পরে যায় সে। বাচ্চা দের মতো কান্না করতে করতে চলে যায় লোক টা। অসহায় মানুষ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি সব টা জ্বলন্ত হয়ে উঠে আরহানের কাছে। কিচ্ছু করার নেই।
আরহান আর গারমেন্স এর মেয়ে টাকে রুমে প্রবেশ করানো হয়। আর শুরু হয় যতো প্রকার অকথ্য ভাষা।
” তুই ওর সাথে এক ঘরে ধরা পরছিস। ”

মোট কথা অঙ্গভঙ্গি করে বিবরণ দিচ্ছে আরহান কে অশ্লীল দোষারোপের। এতো বিশ্রী মুখের ভাষা যে গা গুলিয়ে আসে। আরহান বলে
” না আমি কিছু করি নাই। ”

অস্বীকার করা তে আরহান কে আঘাত করে। মেয়েটা কে ও আঘাত করে। ভয় পেয়ে সব স্বীকার করা শুরু করে দেয় মেয়েটা।
” হুম আমি ওর সাথে নোংরামি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। ”

হতবাক হয় আরহান। মেয়েটা মা’রের ভয়ে সব স্বীকার করে নিচ্ছে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর। জলিল এর দিকে হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পরতে ইচ্ছে করছে। তবে শরীরে নেই অবশিষ্ট এক ফোঁটা শক্তি।
” ঐ ব্যাগ থেকে সব জামাকাপড় বের কর। ”

কান্না করতে করতে সব জামাকাপড় বের করে মেয়েটি। বেশ অনেক গুলো আঘা’ত করা হয়েছে তাকে। জামা কাপড় থেকে এক টা সাদা রঙের থ্রি পিস দেখিয়ে বলে
” এটা পর। ”

” আমি এখানে কিভাবে পরবো। ”

” আমাদের সামনেই পরবি। ”

আবার মেয়েটি কে আ’ঘাত করলো জলিল। মার খেয়ে মেয়েটি উঠে বসেছে। ভাব এমন তে এখুনি সব খুলে ফেলবো। বস্তুত আঘাতের ভয়েই এমন কাজ তাঁর। এসব দেখতে না পেরে আরহান বলল
” ভাই আমি বাইরে যাই। প্লিজ আমি বাহিরে যাই। ”

” ক্যান দেখতে লজ্জা লাগে? ইন্টারনেটে দেখোস নাই। তাহলে সামনে দেখতে সমস্যা কি। ”

আরহান দেখবে না দেখে আবার মা’রে জলিল। কতো গুলো আঘা’ত করার পর ও আরহান চোখ খুলে না। কোনো মতে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। ওর সাথে সাথে জলিল ও বের হয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here