#এমন_কেনো_তুমি,part_18 [ সমাপ্তি পার্ট ]
[ সত্য ঘটনার অবলম্বনে ]
#ফাতেমা_তুজ
দিন যেতে থাকে। মিমির কেয়ার গুলো আলোর থেকে ও অধিক বেগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ আবেগ দ্বারা আচ্ছন্ন। তদ্রুপ ছিলো আরহানের ভেঙে যাওয়া মন। আজকাল মানসপটের ভেতর কেমন একটা অনুভূতি হয়। উহু সেটা ভালোবাসা নয় তবে অপরাধবোধ হয়।
কেবলি মনে হতে থাকে এই সমস্ত কেয়ার গুলো কে অবমাননা করে চলেছে সে। নিজের মন কে বোঝানোর চেষ্টা চালাতে থাকে বিরতহীন ভাবে। কিছু ক্ষেত্রে সফল হলে ও অধিক ক্ষেত্রে হেরে যায়। মিমির হাজার খানেক বায়নার একটি হলো আরহান যেন নিজে পছন্দ করে দেয় বিয়ের শাড়ি টা। কিছু টা মায়া হয় ওর। একটা মেয়ে কে নিজের সহধর্মিনী হিসেবে গ্রহন করতে চলেছে। আর এখন যদি এই বায়না ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তো শুরুতেই অপমান করা হবে সম্পর্ক টা কে। যা কোনো মতেই চায় না আরহান। সেই কারনে মন কে স্থির করে সিদ্ধান্ত নেয় করবে সে শপিং। মিমির কথা মতোই বিয়ের শাড়ি টা নিজে গিয়ে কিনে নিয়ে আসে আরহান।
আরো কিছু দিন অতিবাহিত হয়। আরহান এখন সর্বস্ব দিয়ে স্বাভাবিক থাকার লড়াই করে চলেছে। পৃথিবীর সব থেকে কঠিন লড়াই এর একটি হলো নিজের সাথে নিজের লড়াই। তা প্রতি মুহূর্তে করতে হচ্ছে তাকে। এর থেকে গভীর যন্ত্রণা আপাততো মাথায় আসলো না। এখন মোটামুটি সবার সাথেই কথা বার্তা বলা হয়। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত তথা চাঞ্চল্যকর চেহারা টা হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে সিয়া নামক তুমির সাথে। আরহান ভেবে পায় না নিজ প্রণয়ী কে কেমন করে ভুলে থাকে মানুষ। আরহান তো পারে না এক মুহূর্তের জন্য সিয়ার একটি কথা ভুলতে। ভুলে না হীম করা অনুভূতি। যদি ও এখন তাঁর কাছে অবশিষ্ট কোনো প্রকার স্মৃতি নেই মেয়েটার। বাবা মা খুব যত্ন নিয়ে শেষ করে দিয়েছে স্মৃতির ডানা গুলো। এমন কি বন্ধুদের থেকে টাকা দিয়ে ফোন কিনে নষ্ট করা হয়েছে প্রিয় স্মৃতি। ফোন গুলো পুরিয়ে ফেলা হয়েছে আগুনের স্ফুলিঙ্গের সাহায্যে। ঘন নিশ্বাস ফেললো আরহান। চোখে ঘুম নেই তাঁর। সমস্ত টাই জলাঞ্জলি দিয়েছে সিয়ার নামক তুমি তে।
আজ বৃহস্পতি বার। কাল বাদে পরের শুক্রবারে ওদের বিয়ে। আরহান আর ওর বন্ধু বিয়ের কার্ড নিতে গিয়ে রাত হয়ে গেল খুব। সময় বারো টার কাছাকাছি। এতো রাতে বন্ধু কে যেতে দিবে না কিছুতেই।
তাই রাত্রি যাপনের কড়া নির্দেশ দেয়। সাজিদা খাবারের ব্যবস্থা করছেন। ফ্রেস হয় দুজনেই। আরহান আর তাঁর বন্ধু মাত্র জমিয়েছে হালকা আড্ডার মিনিটের আসর। ঠিক তখনি দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়। দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে সাজিদা বলেন
” দেখ তো বাবা মিমির আম্মু কান্না করছে ক্যান। ”
ফোন দিয়েই ছুট লাগান সাজিদা। ওনার একটি বিশেষ অভ্যাস রয়েছে। মানসপটে কোনো রকম আশংকা জন্মালেই তৎক্ষনাৎ ছুটে যান সৃষ্টিকর্তার কাছে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে।
” কি হয়েছে আন্টি। হঠাৎ এতো রাতে আপনি কান্না করছেন কেন। ”
ওর কন্ঠ শুনে আরো জোড়ে কেঁদে উঠেন ভদ্র মহিলা। আরহান তো পরে যায় মহা বিপাকে। এই মধ্য রাতে কোন কারনে কান্না করতে পারে মানুষ।
কান্না থামছে না কোনো মতেই। ওপাশ থেকে হালকা স্বরে মিমির কান্নার শব্দ ও শ্রবণ হলো ওর। আচমকা বিকট শব্দ হয় অপর পাশ থেকে। খুব সম্ভবত মাথা ঘুরিয়ে পরে গেছেন মিমির আম্মু। ফোন ধরেন মিমির কোনো এক ভাবি।
” ভাইয়া আপনারা কি বিয়ের দাওয়াত দিয়ে দিয়েছেন। ”
” হ্যাঁ। দাওয়াত তো দেওয়া হয়েছে। এখন কার্ড দিয়ে আরেক বার দাওয়াত পাঠানো হবে এই যা। কিন্তু কেন কি হয়েছে কি? ”
” একটা কথা বলি কিছু মনে করিয়েন না।”
” মানে, কি এমন কথা যে কিছু মনে করবো না। আমি বুঝতে পারলাম না ঠিক। ”
” আসলে মিমি তো পালিয়ে গিয়েছিলো। ”
” পালিয়ে গিয়েছিলো মানে! ”
” একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। কাজি অফিস থেকে ধরে আনা হয়েছে। তো মিমি অনেক পাগলামি শুরু করেছিলো। এর জন্য ওর মা ওকে খুব মা’রে। আশে পাশে ও রটে যায়। এখন তো আপনাদের থেকে ও লুকানো যাবে না কথা টা। আজ বাদে কাল তো ঠিক ই জানবেন। ”
আরহানের মাথা খোলসা লাগছে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। যেন চোখ দিয়ে দাবানল গলে পরছে।
” ও কেন এমন করলো। অপরাধ টা কি আমার। কি দোষ করেছি আমি। ওরে তো প্রথমেই বলেছি কাউ কে ভালোবেসে থাকলে যেতে পারে। প্রয়োজনে আমি বিয়ে দিয়ে দিবো ওদের। আমার লাইফ নিয়ে কেন খেললো ও। কেন এমন করলো আমার পরিবারের সম্মান নিয়ে। কাল তো সবাই জিজ্ঞাসা করবে। তখন আমার পরিবার কি বলবে? ”
” এখন কি বলবো ভাইয়া। ও বললো যে আপনার সাথে লোক দেখানো কথা বলতো যাতে কেউ সন্দেহ না করে। বাকি ঘন্টার পর ঘন্টা আপনার নাম করে ঐ ছেলের সাথে কথা বলতো। ”
বড্ড হাসি পেলো ওর। সদ্য নিজেকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা আরহান কে কি না টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হলো। এই দিনের জন্য বুঝি সিয়ার জায়গা তে আরেক জন কে ঠায় দেওয়া তে মত দিয়েছিলো সে। বড্ড আফসোস হচ্ছে নিজের উপর। কারো কথা না ভেবে নিজ মতের উপর একনিষ্ঠ থাকা টাই ছিলো সব থেকে উত্তম।
মিমির বয়ফ্রেন্ড ওর ই ক্লাসমেট। পারিবারিক অবস্থা ও ভালো নয় তেমন। বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় সামান্য টাকা অব্দি নেই। সেই কারণেই নিজ মনের উপর চাপ দিয়ে সাজায় এক প্ল্যান। আরহানের বাড়ি থেকে যে গহনা পাবে সেই গহনা বিক্রি করে বিয়ে করবে। কিছু গহনা দেওয়া ও হয়েছিলো। সেগুলো বিক্রি করেই নাকি বিয়ে করতে গিয়েছিলো তাঁরা। তবে ধরা পরে যায়। সব থেকে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে মিমির ফ্যামলি বলে এই সব জেনে যদি মিমি কে নিতে চায় তো বিয়ে দিবেন
ওনারা। পরবর্তীতে এমন কাজ কখনোই করবে না সে। এটা নাকি গ্যারান্টি তাঁদের।
বিষয় টা মজা লাগে আরহানের। মানুষ পৃথিবীর সব থেকে ঘৃনিত প্রানী বোধহয়। না হলে এমন কথা বলার মতো সাহস পেতো না তাঁরা। আরহানের পরিবার সহ আরহান সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করবে। তাই একদিন ঠিক করে মিমি কে নিয়ে ঘুরতে যাবে। সেই কারনেই মিমির বাসাতে উপস্থিত হয় সে। সকলের মাঝে হাসি খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আরহানের প্রতি তাঁদের সমাদর চোখে পরার মতো। তাঁদের ভাষ্য এমন যেন এই পৃথিবীর শেষ্ঠ জামাতা আরহান। মিমি কে সাজিয়ে দেওয়া হয়। আরহানের বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। কষ্ট কে সাথে নিয়ে ও একটি কল্পনা করেছিলো সে। মিমির মাঝে সিয়া কে খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। যাতে করে মেয়েটা কখনো অভিযোগের সুযোগ না পায়। কিছু টা অতল সাগরে ডুবে গিয়ে এক টুকরো কাঠ খুঁজে পাওয়ার মতো। তবে মিমি পাল্টে দিলো সব টা। মিমি কে নিয়ে সোজা কাজী অফিসে চলে আসে আরহান। কোনো দিকে না তাকিয়ে মিমি আর তাঁর বয়ফ্রেন্ডের বিয়ে দিয়ে দেয়। ছেলের মধ্যে জোড় ছিলো বটে। সে বলল
” বাসা তে ম্যানেজ করতে পারবো আমি।”
কৃতঙ্গতা জানিয়ে চলে যায় তাঁরা। আরহান গরম নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় নিজের পথে। সেদিন রাতেই মিমির পরিবার ফোন করে আরহান কে। গালি গালাজ করতে থাকে। তাঁদের মতে মিমি কে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে আরহান। এসবে তাচ্ছিল্য হাসে আরহান। আজ সকালে ও যাঁদের চোখে আরহান ছিলো শেষ্ঠ এখন সেই আরহান হয়ে গেছে সব থেকে নিকৃষ্ট।
সকল চিন্তা কে ফেলে চলে আসে আরহান। ব্যলকনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে চাঁদের মহিমায়। চোখের কোনে জমেছে বিন্দু বিন্দু পানি কনা। বুকের মধ্যি খানে বেঁধেছে যন্ত্রনা। সকলের চোখে হয়তো কাজ টা ঠিক হয় নি। তবে আরহান জানে প্রিয় মানুষের সাথে বিচ্ছেদ কতো টা ভয়ঙ্কর হয়। পৃথিবীর সমস্ত ঠিক ঠাক থাকলে ও দুই প্রান্তে দুটো আত্মা জীবন্ত লা’শে পরিণত হয়। যাঁর একটি উদাহরণ ছদ্দবেশে লুকিয়ে থাকা আরহান।
সমাপ্ত