শুধু তুই #পর্বঃ১

0
3065

#শুধু তুই
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer)

কবুল বলেই বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায় সায়ান। বিয়ে বাড়িতে হট্টগোল পরে যায়। সবার মুখে এক কথা বর কোথায় গেলো। সায়ানের মা বলে

“আমার ছেলেটার সাথে এটা তুমি না করলেও পারতে

সায়ানের বাবাকে কথাটা বলে চলে যায়।

রাত বারোটা। সবাই এখানে ওখানে ফোন করছে। সায়ান কোথায় গেলো খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তুলি সোফায় বসে ঝিমাচ্ছে। খুব ঘুম পাচ্ছে তুলির।

” একদম সোজা হয়ে বসে থাক। তোর বরকে পাওয়া যাচ্ছে না আর তোর ঘুম পাচ্ছে।

তুলির মা তুলির কানে ফিসফিস করে বলে। তুলি বিরক্তি নিয়ে একবার মায়ের দিকে তাকায়

“তোমরা এরকম একটা ছেলের সাথে কেনো আমার বিয়ে দিলে? উনাকে আর কখনো খুঁজে না পাওয়া গেলে বাঁচি।

” চাপকে গাল লাল করে দেবো। চুপ করে বসে থাক।

তুলি মাকে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে।

“সায়ান

সায়ানের মায়ের কথায় তুলি মাথা তুলে তাকায়। প্রচন্ড লম্বা একটা ছেলে ঢুলতে ঢুলতে আসছে। হাতে মদের বোতল। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে। সায়ানের মা এগিয়ে গিয়ে সায়ান জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে

” কোথায় গেছিলি তুই?

“আমি রুমে যাচ্ছি

সায়ান ঢুলতে ঢুলতে রুমে চলে যায়।

” কেমন ছেলেরে বাবা মা কাঁদছে একটু সান্ত্বনা দেবে তা না চলে গেলো।

“মনা (সায়ানের বোন) এই মেয়েটাকে সায়ানের রুমে দিয়ে আয়। কর্কশ গলায় বলে সায়ানের মা চলে যায়।

তুলির মা বাবাও বিদায় নিয়ে চলে যায়। এখন শুধু সায়ানের বাবা মুরাদ মনা আর তুলি দাঁড়িয়ে আছে

“তুলি রুমে যাও।

মুরাদের নরম গলার কথায়ও তুলি চমকে ওঠে। রুমে যাও শব্দটাতেই তুলির ভয়। মাতাল একটা ছেলের ঘরে তুলি কি করে যাবে যদি মারধর করে। এসব ভেবে তুলির আরও ভয় করছে।

মনা তুলির হাত ধরে বলে

” চলো

মনা তুলিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তুলি বারণও করতে পারছে না। মনা তুলিকে সায়ানের রুমের সামনে দাঁড় করায়।

“তুমি ভেতরে যাও আমি যাচ্ছি।

তুলি মাথা নারায়। মনা চলে যায়। এবার তুলি ভাবছে কি করবে।

” তোমাকে এখানে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে কেউ বলে নি

সায়ানের মায়ের কথায় তুলি চমকে ওঠে।
সায়ানের মা তুলির হাতে একটা গ্লাস ধরিয়ে দেয়।

“এটা আমার ছেলেকে খাইয়ে দিও

তুলি দরজাটা একটু ফাঁকা করে উঁকি মারে। সায়ান বিছানায় শুয়ে আছে।

” এই সুযোগে আমি দৌড়ে বেলকনিতে চলে যাবো আর বেলকনির দরজা বন্ধ করে দেবো

যেই ভাবা সেই কাজ। তুলি লেহেঙ্গারটা একটু উঁচু করে ধরে এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়। আর দরজা বন্ধ করে দেয়।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

“যাক বাবা বেঁচে গেছি। কিন্তু ওই করলা মহিলা যে বললো এইটা মাতালকে খাওয়াতে। এবার

তুলি কিছুখন ভাবে

” ধুর এটা আমিই খেয়ে ফেলি। খুব টেষ্টা পেয়েছে।

তুলি ঢকঢক করে লেবুর শরবতটা খেয়ে ফেলে।

“এবার শুয়ে পরি।

বেলকনির দোলনায় শুয়ে পড়ে তুলি। প্রচুর ক্লান্ত থাকায় তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরে।

চোখে রোদের আলো পরতেই তুলির ঘুম ভেঙে যায়। বেলকানির দরজাটা খুলে রুমে উঁকি মারে কোথাও কেউ নেই।
তুলি নিশ্চিত হয়ে রুমে চলে আসে। তুলির লাকেজটা খুঁজে লাকেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।

ফ্রেশ হয়ে বাইরে গিয়ে দেখে সবাই খাচ্ছে। করলা থুক্কু শাশুড়ী সবাইকে খাবার বেরে দিচ্ছে। তুলি খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান নেই। তুলি ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। তুলিকে দেখে তুলিল শশুর বলে

” এখানে বসে ব্রেকফাস্ট করে নাও

তুলি বসে পড়ে।

“জানো তোমার স্বামী কোথায়?

তুলি মাথা নিচু করে ফেলে সত্যিই তো জানে না।

” সত্যিই তো সায়ান কোথায়? তুলি
মুরাদ জিজ্ঞেসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুলি মাথা নিচু করে বলে

“আমি জানি না

” দেখো কেমন মেয়ে এনেছো স্বামীর খবরই রাখতে পারে না আমাদের খবর রাখবে কি করে

“আহ আয়শা৷ চুপ করো তো। তুলি তুমি কোথায় ছিলে?

তুলি পরেছে এখন ঘোর বিপদে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখন হুরমুর করে একটা মহিলা একটা পুরুষ আর একটা মেয়ে ঢোকে। মেয়েটা মনা আর মনার মাকে জড়িয়ে ধরে। এদের কথা শুনে তুলি বুঝতে পারলো সায়ানের কাকা কাকিমা আর তাদের মেয়ে ডলি।

ওদের আলাপ শেষে সবাই খেতে বসে যায়। সায়ানের কথা আর তোলে না। তুলি বুঝতে পারে সায়ানের মা জানে সায়ান কোথায়।

তুলির আর খাওয়া হয় না রুমে চলে আসে। খুব কান্না পাচ্ছে তুলির। সবাই পর পর বিহের করছে। কেউ একটু ভালো করে কথা বলছে না পর্যন্ত। রাগে দুঃখে তুলি এবার কেঁদেই ফেলল।

” আমার রুমে ড্রামা নটএলাও

সায়ানের কন্ঠ শুনে তুলি কান্না থামিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়। কোথাও গিয়েছিলো। পরনে সাদা শার্ট আর কালো জিন্স। শার্টের বোতাম খোলায় ব্যস্ত।

তুলি বেলকানিতে চলে যায় কাঁদতে। সায়ান ফ্রেশ হয়ে কফির মগ হাতে নিয়ে বেলকনিতে যায়।

“এই সময়টা আমি বেলকনিতে কাটায়। আশা করবো নেক্সট টাইম এই সময় এখানে আপনাকে দেখবো না।

তুলি দোলনায় বসে ছিলো সায়ানের কথায় উঠে দাঁড়ায়। সায়ান দোলনায় বসে কফি খাওয়ায় মন দেয়। তুলি একটু দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়।

” এ আমি কোথায় এসে পরলাম। করলার বংশধর। কারো মুখে মধু নেই। এখানে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো। বাবা মায়ের ওপর খুব রাগ হচ্ছে। ওনারা কেনো আমাকে করলার বাগানে পাঠালো।

বিরবির করে এসব বলছে তুলি। তখন মনা আসে রুমে

“শুনো

তুলি মনার দিকে তাকায়

” জ্বী

“মা তোমার জন্য এই শাড়ি গুলো পাঠিয়েছে

তুলি শাড়িগুলো নিয়ে কিছু বলতে যাবে দেখে মনা চলে যাচ্ছে

” যাহ বাবা এমন করে চলে গেলো কেনো? আমার সাথে কথা বললে কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না কি?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here