শুধু তুই #পর্বঃ২০,২১,২২

0
1260

#শুধু তুই
#পর্বঃ২০,২১,২২
#Tanisha Sultana (Writer)
পর্বঃ২০

“আমাকে একটা চিমটি কাটেন তো

সায়ান ভ্রু কুচকে বলে

” কেনো?

“না মানে আপনি এখানে এসেছেন এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না

” না বিশ্বাস করার কি আছে?

“আমি তো আমার সব জিনিস নিয়ে এসেছি ভুলেও কিছু ফেলে আসি নি। তাহলে আপনি কেনো আমাকে বকতে এসেছেন?

” ইডিয়েট

“কে এসেছে রে তুলি

তুলির মা এগিয়ে আসতে আসতে বলে

” সায়ান বাবা যে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভেতরে আসো

সায়ান তুলিকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে আসে। জুজু সায়ানের কোলে ঘুমিয়ে আছে। তুলির মা সায়ানকে নিয়ে তুলির রুমে যায়। তন্নি আর জিসান কাপল ডান্স করছিলো সায়ানকে দেখে থামে। জিসান তন্নির থেকে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়।

সায়ান জুজুকে বেডে শুয়িয়ে দেয়। তারপর হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পড়ে জিসানের সামনে। জিসান বেশ বুঝতে পারছে তন্নিকে নিয়ে কিছু বলবে তাই জিসান ফট করে বলে ফেলে

“ব্রো তুমি এখানে? তুলিকে মিছ করছিলে বুঝি। আহা কতো ভালোবাসা

” সেরকম কিছু না জুজু কান্না করছিলো তাই এসেছি

তুলির মা খাবার আনতে চলে যায়।

“তাহলে এখন আসতে পারিস

সায়ান অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকায়

” হোয়াট

“জুজুকে পৌঁছে দিলেই এবার আসতে পারো। ওই দিকে দরজা

সায়ান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

” জিসান থাক না

তুলি জিসানকে বলে। জিসান রেগে বলে

“কি থাকবে বল আমায়

” আরে রাগ করছিস কেনো? তুই কি ভুলে গেলি না উনি আমার বস। বসকে ইমপ্রেস করতে পারলে তো আমারই লাভ। আজকে রাতটা বস আমাদের বাড়িতে থাকুক। আমরা বসকে খাতির যত্ন করি। সকালে চলে যাবে

“তুই যখন বলছিস থাক।

জিসানও তুলির সাথে তাল মিলায়। সায়ানের প্রচুর রাগ হচ্ছে

” জিসান আমার ঘুম পাচ্ছে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।

“ওই তোরা চল আমার বস ঘুমাবে

তুলি জিসান তন্নি চলে যায়।

” ইডিয়েট। সব থেকে বড় ইডিয়েট হলো আমার ভাই। আমাকে বেরিয়ে যেতে বলে সাহস কতো। সময় আমারও আসবে। সব ইডিয়েট আমার কপালেই জুটে। সোনায় বাঁধানো কপাল আমার।

সায়ান গাল ফুলিয়ে বেডে বসে পড়ে।

তুলির মা তুলিকে সায়ানের খাবার দিয়ে বলেছে। তুলির হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়েছে।

তুলি খাবার নিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে সাহস সঞ্চার করছে ভেতরে যাওয়ার জন্য

“আরে তুলি ভয় পাচ্ছিস কেনো? সায়ান যদি বাঘ হয় তাহলে তুই সিংহ। ভয় পাবো না আমি

অবুক ফুলিয়ে তুলি রুমে ঢুকে। সায়ান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তুলি সায়ানের পাশে দাঁড়ায়।
একটু কাশি দিয়ে বলে

” আপনার খাবার। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন

তুলি খাবার রেখে চলে যেতে নেয়। কয়েক পা বাড়ানোর পরে ঠাস করে পড়ে যায়। তুলির পরে যাওয়া দেখে সায়ান এগিয়ে আসে

“প্রতিবন্ধী না কি আপনি? ঠিক করে চলতে পারেন না

” মুখ সামলে কথা বলুন। তুলি সব সময় তুলির স্পিডে চলে। এখন যদি সামনে কিছু চলে আসে তো আমি কি করবো

“হুম তাই তো। আসেপাশের সব কিছু দোষ আপনার দোষ নেই

তুলি সায়ানের গাল টেনে বলে

” আমার টুনুমুনু উম্মা

“ছি ছি ছি এসব কি

” চুমু কিছ পাপ্পি

“এসব ভালো না।

” নিরামিষ

তুলি উঠে দাঁড়ায়। সায়ানও দাঁড়ায়। তুলি চলে যেতে নেয় সায়ান হাত টেনে ধরে

“কিহহ। প্রেম টেম করবেন না কি?

” একা খেতে ভালো লাগে না

তুলি বসে আছে সায়ান খাচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে মুখ নিয়ে হা করে

“কি

” খাইয়ে দেন খিদে পেয়েছে

তুলির ইনোসেন্ট মুখটা দেখে সায়ানের মনে লাড্ডু ফুটে। হা করে তাকিয়ে আছে

“কি হলো দেন

সায়ান তুলির মুখে ভাত দেয়। তুলি বাচ্চাদের মতো করে খায়।
খাওয়া শেষে সায়ান তুলির মুখটা মুছিয়ে দেয়।

তুলি প্লেট নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়

” তুলি

তুলি পেছনে তাকায়। এই প্রথম সায়ান তুলিকে নাম ধরে ডাকলো। তুলি প্লেটটা টেবিলে রেখে সায়ানের হাত ধরে টেনে বেলকনিতে নিয়ে যায়।

“খুব ভালো লাগছে আমার

” কেনো?

“আপনি আমার নাম ধরে ডাকলেন তাই

” ওহহ

“হুম। বসুন না

তুলি সায়ানকে বসিয়ে দেয়।

” এক মিনিট

তুলি দৌড়ে চলে যায়। একটু পড়ে হাতে একটা গিটার নিয়ে ফিরে আসে।

“এটা কেনো?

” আপনি গান গাইবেন

তুলি সায়ানের পাশে বসে পড়ে

“আমি গান গাইবো না

” হুম তা গাইবেন কেনো? আমি তো কেউ না

“হুমম

” কেউ না আমি

“জানি না

” বলতে হবে কে আমি?

“আমার

” আপনার

“আমার

” আমার শুনছি তারপর

“পিএ

তুলি এবার ফিক করে হেসে ফেলে।

” আপনার পিএ আমি।

সায়ান কিছু না বলে গিটার বাজানো শুরু করে। তুলি সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে। সায়ান একটু মুচকি হেসে শুরু করে

#শুধু তুই শুধু তুই আর চাইছি না কিছু

গান শেষে তুলি সায়ানের পায়ের কাছে বসে।

“ওখানে বসলেন কেনো?

” বসের পাশে বসাটা উচিৎ না

“আপনি সত্যি ইডিয়েট।

” হয়তো

“তুলি আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি

” নিরামিষ একটা। বলবে তুলি আই লাভ ইউ তা না। বলদ একটা। তবে আমি যদি তোমার মুখ থেকে লাভ ইউ না বের করতে পারি তাহলে আমার নামও তুলি না।
তুলি মনে মনে বলে

“কি ভাবছেন?

তুলি হালকা হেসে বলে

” কিছু না

“ফ্রেন্ড হবেন?

” হতে পারি বাট একটা শর্তে

“কিহহ

” আমাকে তুমি করে বলতে হবে

সায়ান হালকা হেসে বলে

“ঠিক আছে।

দুজনই চুপ।

” তুলি

“হুম

” সরি

“কেনো

” তোমার সাথে অনেক বাজে বিহেব করেছি। তোমাকে হার্ট করছি। মা বাজে বিহেব করছে। সব কিছু মিলিয়ে সরি

“ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করি নি।

” খুব সহজে কি করে সবটা মেনে নাও তুমি

“খুব সহজে সবটা মেনে নেই বলেই তো এতো হ্যাপি থাকতে পারি। ভালো থাকতে পারি। তা না হলে তো দম বন্ধ হয়ে মরে যেতাম।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২১
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমি যাই ঘুমোবো

” আগে তো আমি আর তুমি এক রুমেই থাকতাম

“হুমম

” থাকো না এখানে

তুলি কিছু না বলে জুজুর পাশে শুয়ে পরে। সায়ান সোফায় শুতে যায়

“আমার খাটটা ভালোই বড়। তিনজনের জায়গা হবে

সায়ান জুজুর আপর পাশে শয়। তুলির এখন জুজুকে কাবাব মে হাড্ডি মনে হচ্ছে।

” এতোদিন কোলবালিশ এখন জুজু। ধুর ভাল্লাগে না

তখন দরজায় টোকা পরে।

“আমি দেখছি

সায়ান উঠে দরজা খুলে দেখে জিসান দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

” তুই এখানে

“হাড্ডিকে নিতে এলাম।

” হাড্ডি কে?

জিসান রুমে ঢুকে জুজুকে কোলে নেয়

“ও কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস

” জুজু আমার কাছে ঘুমোবে

জিসান তুলিকে চোখ মেরে চলে যায়। সায়ান দরজা বন্ধ করে এসে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ে।

“সোনায় বাঁধানো কপাল আমার। নিরামিষের বাচ্চা নিরামিষ

” তুলি তুলি কোন ইয়ারে স্টাডি করো

সায়ানের এই প্রশ্নে তুলি অবাকের দশম পর্যায়ে উঠে যায়। তিন মাস এক সাথে থেকেও স্বামী জানে না স্ত্রী কোন ক্লাসে পড়ে। ভাবা যায়

“কিছু জিজ্ঞেস করছি

“পড়ি না

” মিথ্যা বলো কেন

“তো কি বলমু

” আজব একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো না ইডিয়েট

“তিন মাস এক সাথে থেকেও আপনি জানেন না আমি কোন ক্লাসে পড়ি। এরপর আর কিছু বলার থাকে না

সায়ান আর কিছু বলে না। তুলি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে।

সকালবেলা মুখের কারো স্পর্শ পেয়ে তুলির ঘুম ভেঙে যায়। তুলি ৯৯% শিওর সায়ান। তাই একটু রোমান্টিক মুড নিয়ে চোখটা খুলে। চোখ খুলেই দেখে জুজু। তুলির মুখটা কালো হয়ে যায়

” গুড মর্নিং নতুন মা

তুলি জুজুর গাল টেনে বলে

“গুড মর্নিং টু সোনা

” তুমি জানো কতোগুলা মিছ করছিলাম তোমায়

“আমার সোনাটা আমায় মিছ করেছে।

” হুম

তুলি জুজুকে একটা পাপ্পি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সায়ান ল্যাপটপে কাজ করছে।

“গুড মর্নিং জামাই

সায়ান তুলির দিকে একনজর তাকিয়ে বলে

” জামাই কি শব্দ

“জানেন না তাহলে আপনাকে ডিটেইলস বলি

তুলি আগ্রহ হয়ে সায়ানের পাশে বসে

” আমি শুনবো না

“তা শুনবেন কি করে। গোমড়ামুখো কোথাকার

” হুম

“আপনি কি জানেন আপনি পৃথিবীর সব থেকে বড় অনরোমান্টিক পারসন।

” সায়ান ল্যাপটপ বন্ধ করে তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

“আমি অনরোমান্টিক

” হুম। নিরামিষ

“রিয়েলি

” হুম

সায়ান তুলির দিকে মুখটা একটু এগিয়ে দেয়। ভাবে তুলি হয়ত ভয় পাবে পিছিয়ে যাবে। কিন্তু তুলি সায়ানকে অবাক করে দিয়ে আরও একটু এগিয়ে আসে।

সায়ান পিছিয়ে যায়

“কি হলো

” কিছু না পানি খাবো

তুলি বিরক্তি নিয়ে উঠে যায়। সায়ান বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

“আল্লাহ এটা মেয়ে না কি? একটু হলেই যাচ্ছিলাম। আল্লাহ বাঁচাইছো

তুলি সায়ানের সামনে ঠাস করে পানির বোতল নামায়

” খেয়ে নিন

“একটু মিষ্টি করে বলো

তুলি সায়ানের কলার ধরে বলে

” দুই দিন সময় দিলাম

কলার ছেড়ে দিয়ে হন হনিয়ে চলে যায়

“কিসের জন্য দুইদিন সময় দিলো। কিছুই তো বুঝলাম না

খাবার টেবিলে সায়ান জিসান তুলি আর তুলির বাবা খাচ্ছে। জুজু আগেই খেয়ে নিয়েছে।

সায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে। তুলি একটু খাচ্ছে আর সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে।

” খাচ্ছে দেখো মনে হয় জীবনেও খায় নাই। হনুমান একটা। জীবনটাই বেদনার

“তুলি ঠিক করে খা

তুলির মা তুলির প্লেটে রুটি দিয়ে বলে

” খাচ্ছি তো

খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। সায়ান অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে দাঁড়ায়

“কিহহ

” আপনার সাথে অফিসে যাবো

“যাও রেডি হয়ে এসো

তুলি খুশি হয়ে চলে যায়।

সায়ান গাড়ি ডাইভ করছে। আর তুলি সাজুগুজু করছে

” আমরা কোনো প্রোগ্রামে যাচ্ছি না

“আই নো

” তাহলে এরকম সং সাজার মানে কি?

“ছেলে পটানোর ধান্দা

” মানে

“মানে সাজুগুজু করলে আমার খুব হট লাগে। তো ছেলেরা আমার প্রতি ইমপ্রেস হবে আর প্রপোজ করবে

” যাতা চিন্তা ভাবনা

“গুড চিন্তা ভাবনা

” ছেলে পটাবে কেনো?

“ও মা বিয়ে করবো তাই।

” বিয়ে তো করেছোই

“আপনার মতো নিরামিষের সাথে থাকা যায় না কি

” আমিষ হওয়ার জন্য কি করতে হবে

“কিছ

সায়ান গাড়িটা থামিয়ে টুক করে তুলির গালে একটা চুমু দেয়। তুলি গালে হাত দিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়

” এটা কি ছিলো

“কিছ

” এটাকে কিছ বলে

“হুমম

” ধুর। জুজুও তো এর থেকে ভালো কিছ করতে পারে।

“আমি এর থেকে ভালো পারি না

” পারেন কি?

“সব

” কথা বাদ দেন তো।

সায়ান গাড়ি চালানো শুরু করে

“জীবনে সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। এই যে আমি নিরামিষ এটাও কিন্তু প্রয়োজন আছে। আমাকে একটু সময় দাও আমি সব ঠিক করে দেবো। আসলে আমার না মানিয়ে নিতে সময় লাগে। তোমার মতো এতো সহজে সব মেনে নিতে পারি না। আমি মানুষের মন পড়তে পারি না। কারো মন বোঝার চেষ্টাও করি না। কারো সাথে মিশতে পারি না। আর মেশার চেষ্টাও করি না। আমি যাদেরি আপন ভাবি তারাই আমাকে ঠকায়। বিপদে ফেলে। তাই আমি আমার মতো থাকি।

তুলি সায়ানের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে।

” জুঁই আমি আর নিরব মানে জুজুর বাবা এক ভার্সিটিতে পড়তাম। খুব ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা। নিরবই আমার মনে কথা জুঁইকে বলতে হেল্প করেছিলো। পরে আবার ওই আমাদের মাঝে দেয়াল তৈরি করে দিলো। জুঁইকে আমি ভালোবাসতাম ঠিকই তবে নিরব যদি একবার বলতো জুঁইকে ও বিয়ে করবে আমি ওদের মধ্যে থেকে দুরে চলে যেতাম। কিন্তু

সায়ান চুপ হয়ে যায়

“তারপর

তুলি জিজ্ঞেস করে

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানের কেবিনে সায়ান যে চেয়ারটাতে সায়ান বসে তুলি সেখানে বসে।

“ম্যাম স্যার খুব রেগে যাবেন

” কেনো?

“এই চেয়ার কেউ টাচ করলেই স্যার বকাবকি করে আর আপনি তো বসেছেন

” আমি কে?

“কে আপনি

” সায়ানের বউ

“হুম জানি। তবুও

” যাও আমার জন্য কফি নিয়ে আসেন

“কিন্তু

” যেতে বলছি

মায়া হতাশ হয়ে চলে যায়। তুলি এবার টেবিলের ওপর পা রেখে বসে। কিছুখন বসে তুলির বিরক্ত লাগে।

“সায়ান ঠিকি বলে। আমি সত্যিই স্টুপিট। পাঁচটা মিনিটও চুপ চাপ বসতে পারি না।

তুলি ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছে। আলমারির পেছনে একটা ময়লা একটা চিঠির খাম দেখে। তুলি সেটা তুলে ময়লা পরিষ্কার করে খুলে দেখে তাতে সায়ান আর জুঁইয়ের হাসি মাখা অনেক ছবি।আর একটা চিঠি। তাতে লেখা

” তোর এই হাসি মাখা মুখটা আমার একদম সয্য হয় না। বিরক্ত লাগে। তোর চোখের পানির মাঝেই আছে আমার ভলো থাকার মেডিসিন। জুঁইকে খুব তারাতাড়ি আমি আমার করে নেবো। রেডি থাক। আর হ্যাঁ এর পরও যদি কোনো মেয়ে তোর হাসি মুখের কারণ হয় আমি তাকেও তোর থেকে দুরে করে দেবো। আই প্রমিজ

এটা তো রিতিনত থ্রেট। সায়ানকে কেউ দিয়েছিলো চিঠিটা। সায়ান নিশ্চয় এটা পড়ে এখানে ফেলে দিছে। আমি শিওর চিঠিটা নিরব দিছে। আর আমি এটাও শিওর নিরব বেঁচে আছে। নিরব কি এখন আমাকে টার্গেট করবে? আর জুঁই আপু উনি কোথায় গায়ের হয়ে গেলো

এসব আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনা করছে তুলি। জিসান যে কখন থেকে তুলিকে ডাকছে সেদিকে তুলির খেয়াল নেই। জিসান এবার তুলির মাথায় গাট্টা মারে

“কি হয়েছে?

” কখন থেকে ডাকছি তোকে

“কেনো ডাকছিস

” দোস্ত

তুলি চোখ ছোট ছোট করে জিসানের দিকে তাকায়।

“হেল্প মি

” কেসটা কি

“আগে বস

তুলি চিঠিটা আগের জায়গায় ফেলে বসে. জিসান তুলির পায়ের কাছে বসে

” একটা ভুল হয়ে গেছে

“কি রকম

” তন্নি প্রেগন্যান্ট

তুলি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

“কিহহহহহহহহহহ

জিসান তুলি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান। জিসান সোফার পেছনে চলে যায়।

” এতো নোংরা তুই ছি। আমার ভাই তুই এটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে

“এতো ছি ছি করার কি আছে? ভালোবাসে তন্নিকে। বিয়ে করবে

” এটাকে ভালোবাসা বলে?

“হুম এটাকেই ভালোবাসা বলে। কতো ফাস্ট জিসান দেখছেন। বিয়ের আগেই বউ প্রেগন্যান্ট। আর আপনি বিয়ের তিন বছর হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত একটা কিছও করেন নাই। আবার বড় বড় কথা বলছেন।

” আমিও তো তন্নিকে কিছ কি হাতটাও ধরি নি

জিসান সোফার পেছন থেকে বলে। সায়ান তুলি দুজনই অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকায়

“মানে

জিসান এবার সোফার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে

” মানে না আমিও বুঝতেছি না। সকাল থেকে তন্নির মাথা ঘুরছে বমি হচ্ছে। আমি কিছু করি নি

সায়ান তুলি দুজনই ফিক করে হেসে ওঠে। জিসান হাবলার মতো তাকিয়ে আছে

“আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি আর তোমরা হাসছো

” পাগল ওর গ্যাসে পবলেম হইছে তাই এমন হইতেছে।

তুলির কথায় জিসান বুকে থু থু নেয়

“আল্লাহ বাঁচছি।

” এতো গাধা কেনো তুই

“এক ভাই গাধা আর একটা নিরামিষ

জিসান কাশি দেয়। সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকায়।
সায়ানের জরুরি মিটিং থাকায় তুলিকে একা বাড়ি ফিরে যেতে বলেছে। তুলি জুজুকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। তাই জুজুর স্কুলের যায়। স্কুল ছুটে হতে এখনো দশ মিনিট বাকি আছে। তাই তুলি স্কুলের চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে

” এক্সকিউজ মি

কোনো একটা ছেলের কন্ঠ শুনে তুলি পেছনে তাকায়। দেকে একজন সু দর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার হাসি।

তুলি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলে

“আমাকে বলছেন?

ছেলেটা মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

” জ্বী আপনাকে বলছি

“বলুন

” নাম কি আপনার?

“সরি

” আরে নাম জিজ্ঞেস করলে নাম বলতে হয়। কিন্তু আপনি সরি বলছেন তো আমি কি ধরে নেবো আপনার নাম সরি

তুলি বোকার মতো তাকিয়ে আছে

“সরি কি আপনার ডাক নাম

“যদি ভাবেন আপনি আমাকে পটাবেন তো আমি বলবো আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন

ছেলেটা এবার হো হো করে হেসে ওঠে। হাসলে ছেলেটাকে মারাক্তক সুন্দর লাগে

” এই ছেলে কি পাগল না কি? এতো সুন্দর ছেলে পাগল?
তুলি মনে মনে ভাবছে

“আপনি যে দাঁত ব্রাশ করেছেন সেটা আমি জানি। দাঁত কেলিয়ে দেখাতে হবে না

” হুম ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করছি কিন্তু আফসোস আপনি এখনো দুরেই দাঁড়িয়ে আছেন। কাছে আসলেন না

“কোন দেশের পাগল আপনি

ছেলেটা হাসি দ্বিগুন বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে ভয়ংকর সুন্দর ছেলেকে তুলির বিরক্ত লাগছে। তাও আবার প্রচন্ড বিরক্ত

তুলি যেতে নেয় ছেলেটা তুলির সামনে দাঁড়ায়

” হোয়াট

“জাস্ট নামটা জানতে চায়

” আমি বিবাহিত একটা মেয়ে আছে

“নাম, এসব না

” বললাম তো বলবো না

“কেনো?

” কেনো বলবো?

“জিজ্ঞেস করছি তাই

” বলবো না বলবো না বলবো না

তুলি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কি বিরক্তিকর লোকরে বাবা।

মনে মনে ছেলেটাকে হাজারটা গালি দিচ্ছে আর হাঁটছে তুলি।

রাতে তুলি বেলকনিতে বসে আছে। হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সায়ান তুলির পাশে এসে বসে

“কি ভাবছো?

” কতো কিছু

“যেমন

” আমার বেবি চায়

সায়ান বেষম খায়। তুলি টুস করে সায়ানের গালে একটা পাপ্পি দেয় আর আপনা আপনি সায়ানের কাশি থেমে যায়

“বাহহ আমার পাপ্পির কি জাদু

” ভয়ংকর ইডিয়েট তুমি

“আর

” কিছু না

তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়েই আছে

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

” ভয় পাচ্ছেন

“ননা তো

” তাহলে সমস্যা কি তাকিয়েই থাকি

না মানে

“না মানে কি

” তুমি খেয়েছো?

“খাই নি খাবো

” চলো খায়। আমিও খাবো

“কি

” কি মানে কি

“ধুর একটু রোমান্টিক মুডে ছিলাম নষ্ট করে দিলো

তুলি বিরক্তি নিয়ে বলে। সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুলি সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে।

“আমি আপনাকে ভালো বাসতে চায়। আপনার সাথে থাকতে চায়। আপনার হাসি মুখের কারণ হতে চায়। আপনার বেবির মা হতে চায়

সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর তুলির কথা গুলো শুনছে।

” আপনি কি আমার হবেন

সায়ান কিছু বলছে না। তুলির সায়ানের কাঁধ থেকে মাথা তুলে সায়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়

“বললাম তো আমার একটু সময় চায়। একটু সময় দাও।

তুলি কিছু না বলে রুমে চলে যায়

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here