শুধু তুই #পর্বঃ২৯,৩০

0
1200

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৯,৩০
#Tanisha Sultana (Writer)
পর্বঃ২৯

মেইন দরজার কাছে বসে আছে তুলি। সায়ান জুঁইকে নিয়ে ফিরবে তখন তুলি জুঁইয়ের গায়ে লংকা গুড়ো ঢেলে দেবে তাই। কিন্তু ওদের ফেরার নামই নাই। তুলির এবার ঘুম পাচ্ছে। কোনোরকম চোখটা খোলা রেখেছে।

হঠাৎ কলিং বেল বাজায় তুলি হাত পেছনে রেখে দরজা খুলে দেয়। একি সায়ান একা জুঁই ফুল কই?
তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান ভেতরে আসতে আসতে বলে

“চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছ কেনো?

” জুঁই ফুল থুক্কু আপু কই

“হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে আসছি?

” কেনো?

“জুঁইয়ের বাবা বললো জুঁই না কি পাগল হয়ে গেছে। আমি ছাড়া কাউকে চিন্তে পারছে না। ওকপ আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে বললো। আর আমি মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে আসলাম

” ????
এই না হলো আমার জামাই। বেবি আসো আদর করি

তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরতে যায় তখন শাশুড়ী কাশি দেয়। তুলি ছেড়ে দুরে দাঁড়ায়

“শাশুড়ী রুমে যাচ্ছি।

তুলি শাশুড়ীকে বাই বলে সায়ানকে টেনে রুমে নিয়ে যায়।

” হইছে কি

“আমাকে কেমন লাগছে

” মানে

“আমি যে শাড়ি পড়ছি সাজুগুজু করছি আপনি তো কইলেন না আমাকে কেমন লাগতেছে।

সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

” ভালোই

“নাহহহহহহ

” তাহলে

“হিরো রা হিরোইন দের যা বলে তাই বলেন

” কি বলে

“জানেন না

তুলি সায়ানের খুব কাছে গিয়ে বলে

” না মানে

“বলেন

” হহ

“তারপর

” ট

“এবার এক সাথে

” হট

“আমার বেবিটা

তুলি দুরে গিয়ে বসে। সায়ান হাত দিয়ে ঘাম মুছছে

” এখন তো শীত কাল তাও আপনি ঘামছেন

“এরকমভাবে এটাক করলে কে না ঘামবে
সায়ান বিরবির করে বলে

” কিছু বললেন

“ফ্রেশ হবো

” তো আমি কি তোমাকে চেঞ্জ করতে সাহায্য করবো

“না না আমি একাই পারবো

” তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

সায়ান দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তুলি তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। জুঁইকে ফোন দেয়

“আমি তোমার জন্য বরণডালা সাজালাম আর তুমি আসলা না। কেনো গো?

” মজা নিচ্ছো

“এভাবে নিজেকে মিরাক্কেলের মঞ্চে দাঁড় করালে কে না মজা নিবে। সময় আছে ভালো হয়ে যাও। নিজেকে হাসির পাত্র বানিয়ো না।

” রাখছি

“আপু আর একটা কথা পৃথিবীর সব থেকে শ্রেষ্ঠ জিনিসটা তোমার আছে তোমার জুজু। সন্তানকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করো। সুখী হবে। আমাকে আর সায়ানকে সারাজীবন পাশে পাবে।

জুঁই ফোন কেটে দেয়। তুলি পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান।

” এতো ভালো কেনো তুমি? সবাই কে কি করে এতো সহজে হ্মমা করে দাও বলো তো।

“হ্মমা করা মহৎগুন
আপনি

” খাবো

“আমাকে?

” খাবার?

“নিরামিষ

তুলি ভেংচি কেটে চলে যায়।

” আমার পাগলি

একটু পরে তুলি আসে

“ও গো শুনছো

” বলো

“সবার সাথে বসে খেতে হবে

” চলো

সবাই এক সাথে খাচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে বসেছে।

“বাবা

” বলো তুলি

“আমি আর ও তো হানিমুনে গেলাম না

” পিচ্চিরা হানিমুনে যায় না (জিসান)

“আমারে তোর পিচ্চি মনে হয়? দুদিন পরে আমিই তো পিচ্চির মা হবো

তুলির কথায় সায়ান বেষম খায়। সায়ানের মা পানি এগিয়ে দেয়

” আমি যখনই বাচ্চার কথা বলি আপনি বেষম খান কেনো বলেন তো? ভয় পান না কি?

“কা কে ভয় পাবো? সায়ান মাহবুব কাউকে ভয় পায় না?

” তাইতো আমি ধরলে বলেন ছেড়ে দাও প্লিজ

সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। সায়ান তো রেগে আগুন হয়ে গেছে।

“জিসানের বিয়েটা হোক তারপর তোমরা চারজন হানিমুনে যাবে ওকে (বাবা)

” আমার সোনা বাবা(তুলি)

“হানুমুন থেকে ফিরে খুশির খবর দিবি (মা)

” তোমার ছেলে রাজী থাকলে আমি এখনই খুশির খবর দিয়ে দেবো
সায়ান ঠাস করে তুলির পায়ে লাথি দেয়।

“মা

” কি হলো

“তোমার ছেলে তো লাজুক মুখে বলতে পারছে না তাি ইশারায় বুঝিয়ে দিলো

সবাই এক সাথে কিহহহহহ

” তোমার ছেলে রাজী

সায়ান চলে যায়

“এরে বেশি বেশি করে ফেললাম মনে হয়।

” তোর কপালে দুঃখ আছে (জিসান)

“ও মা (তুলি)

“কি

” আজ আমারে বাঁচাও

“কিচ্ছু হবে না

রাত দশটা। তুলি রুমে উঁকি ঝুঁকি মারছে। লাইট অফ।

” করলাটা কোথায় গেলো?

তুলি পা টিপে ভেতরে ঢুকে আর সায়ান দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি চমকে পেছনে তাকায়

“দদরজা বন্ধ করলেন কেনো?

” আমিষ কাকে বলে এটা দেখাতে

তুলি পিছতে পিছতে বিছানায় পরে যায়। সায়ান তুলির ওরনা ধরে টান দেয়

“ওড়না নেবেন বললেই তো দিয়ে দেই টানাটানি করার কি আছে?

তুলি ওড়না খুলে সায়ানকে দিয়ে দেয়। সায়ান তুলির ওপর ঝুঁকতে যায় তুলি বলে

” আপনি অনেক ভারি। আমি হালুয়া হয়ে যাবো

সায়ানের এবার নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। সায়ান বিছানায় সুয়ে তুলিকে টান দিয়ে ওপরে ওঠায়

“এবার ঠিক আছে?

” হুম

“শুরু করি

” এক মিনিট

“আবার কি

” ভিডিও করবো

“কিহহহহহ

” তারপর ফেসবুকে পোষ্ট দিমু। ইস কতো লাইক কমেন্ট শেয়ার হইবো

“থাপড়াইয়া কান ফাটাই দিমু

” কেনো?

“এতো সয়তান কেন তুমি

” আপনার বউ

“সাইনবোর্ড টাঙায় দিয়ো

” আইডিয়াটা খারাপ না

সায়ান এবার ভালোবাসা দিয়ে তুলির বকবক বন্ধ করে দেয় ?

সকাল বেলা

“এই উঠুন তো

সায়ান ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে

” কি হয়েছে?

“ওড়নাটা খুঁজে পাচ্ছি না। খুঁজে দিন

” পাঁচ মিনিট ঘুমতে দিন

“কেনো ঘুমতে দিবো। আপনার জন্যই তো আমি ওড়না খুঁজে পাচ্ছি না। আপনার দোষ খুঁজে দিন না হলে বাড়ির সবাইকে বলে দিবো। কাল আপনি আমারে

” দিচ্ছি ???

“জানটা?

সায়ান খুঁজে দেখে খাটের নিচে পড়ে আসে।

” ধরো

“লাভ ইউ জান। এবার ঘুমাও

” ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এবার ঘুমাও

সায়ান বিরবির করে বলে।

“কিছু বললেন?

” গোছল করে বেরিয়ো

“কেনো?

” গা থেকে মরা ইদুরের গন্ধ আসছে

“???

” যাও গোছল করো

তুলি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যায়। সায়ান আরাম করে সুয়ে পড়ে। তুলি গোছল করে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে দেখে সায়ান আরাম করে ঘুমচ্ছে।

“আহারে কতো আরাম করে ঘুমচ্ছে। দেখাচ্ছি তোমাকে

তুলি সায়ানের গা থেকে কম্বলটা সরিয়ে সায়ানের গায়ে পানি ঢেলে দিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

” সয়তান মাইয়া

তুলি কিচেনে যায়। মনা আর শাশুড়ী রান্না করছে। কাকিশাশুড়ী বাপের বাড়ি গেছে।

“এতো সকালে গোছল করছোস কেনো?

” আমার গা থেকে না কি ইঁদুর মরা গন্ধ আসছিলো তাই

“কে বলছে

” তোমার ছেলে

মনা আর শাশুড়ী হাসতে হাসতে শেষ

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ৩০
#Tanisha Sultana (Writer)

“হাসতেছো কেন?

শাশুড়ী হাসি চেপে বলে

” এমনি। সায়ান উঠছে

“হুম গোছল করতেছে?

” কেনো? ভাইয়ার গায়ে ও কি ইঁদুর মরা গন্ধ না কি?
মনা বলে

“না আমি ভিজিয়ে দিছি?

” ইউ আর গ্রেট ভাবি

“দেখতে হবে না কার বউ?

” হুম করলা, গোমড়ামুখো, নিরামিষ সায়ানের রোমান্টিক মিষ্টি বউ

“মা তুমি তো ফাটিয়ে দিয়েছো।

” কার শাশুড়ী দেখতে হবে না?

তুলিও ওদের সাথে সাহায্য করে। রান্না শেষে তুলি সায়ানকে ডাকতে যায়। সায়ান কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতেছিলো আর গেমস খেলতেছে। তুলি সায়ানকে কয়েকবার ডাকে সারা দেয় নাই। তুলি একটা নকল টিকটিক নিয়ে আসে জুজুর থেকে তারপর সায়ানের মোবাইলের ওপর ছেড়ে দেয়।

সায়ান এক চিৎকার দিয়ে লাফ দিয়ে ওঠে। তুলি হাসতে হাসতে শেষ

“এটা কি হলো?

” আপনারে গুনে গুনে এিশবার ডাকছি সারা দেন নাি তাই এই পদ্ধতি

“এখানে কি চায়

” আপনারে খেতে ডাকতে আইছি

“আমি খাবো না

” কেনো?

“তুমি তো সবাইরে সব বলে দিছো। লজ্জায় মুখ দেখাবো কি করে

” মুখ ঢেকে চলেন

“তোমাকে তো আমি

” কিহ চুম্মা দিবেন

“থাপ্পড় দিবো দাঁড়াও তুমি

তুলি এক দৌড়ে চলে যায়। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে হাঁপাতে থাকে।

” কি রে কি হইছে? (জিসান)

“আর কইস না তোর ভাই দৌড়ানি দিছে

” কেন তুই কি করছিলি

“মোবাইলের ওপর টিকটিক ছাড়ছিলাম?

” দোস্ত তুই তো মানুষ না

“তাহলে আমি কি?

” এলিয়েন

“আর তুই হিরো আলম

” এতো বড় অপবাদ দিতে পারলি

“হ পারলাম

” কষ্ট দিলি

“কোথায়

” কিহহ

“কোথায় কষ্ট দিছি

” মনে

“ওহহহহ

” হুম

“হুমমম

কাল জিসানের গায়ে হলুদ। বাড়ি সাজানো হচ্ছে। এই বিয়ের মধ্যেই নিরবের কোনো একটা ব্যবস্থা করবে তুলি।

হঠাৎ তুলির গা গুলিয়ে আসে। ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে দেয়। সায়ান কাজ করছিলো। তুলি খুশিতে নাচতে নাচতে গিয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

” কি হয়েছে?

“আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন। যাই সবাইকে বলে আসি

সায়ান তুলিকে টেনে রুমে নিয়ে আসে।

” এখানে আনলেন কেন?

“খুইলা কও

” আমার শরম করে?

“কি হইছে সেটা বলো?।

” বমি হইছে

“তো

” তো আমি প্রেগন্যান্ট

“একদিনে কিছু হয় না

” আমার থেকে বেশি জানেন

“হুম জানি

” কচু জানেন আপনি।

“তুলি শুনো

” আপনি শুনেন

“ঠিক আছে চলো ডাক্তারের কাছে যায়

” আমার টুনুমুনু। চলো জান উম্মা

“পাগল

” আপনারই বউ

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে সায়ান তুলি

“আমি প্রেগন্যান্ট তাই না ডাক্তার আংকেল। আমি জানতাম তাও উনি নিয়ে আসলেন। দেখছেন আপনি৷ খালি বেশি বুঝেন।

” তুমি চুপ করবা

“আপনি চুপ করুন। ডাক্তার আপনি বলুন ছেলে না মেয়ে। আমি তো ৯০% শিওর মেয়ে হবে। আমার মা বলে আমি যখন পেটে ছিলাম তখন না কি খালি বমি করতো। তো আমার ও মেয়ে হবে। তবে ছেলে হলেও পবলেম নেই

” মানে (ডাক্তার)

কিহ মানে মানে করছেন। বলেন কি হবে

” আসলে।

“আসলে নকলে পরে হবে আগে বলুন

” ফুড পয়জেন হইছে

“কিহহহহহহ???

সায়ান আর ডাক্তার কান চেপে ধরে

” ওই জামাই চলেন

“এখন মানলা তো

” এতো কওয়ার কি আছে

গাড়িতে বসে সায়ান হেসেই যাচ্ছে।

“এতো হাহা করার কি আছে। কাছে আসবো ম
না। যতই ক্লোজ আপ এর এড দেন

” পাগল না কি তোমার কাছে যাবো

“আসবি না তো

” নাহহ

তুলি সায়ানের কলার ধরে কাছে আনে

“দুই মাসের মধ্যে বেবি চায়

” হুমমম

তুলি কলার ছেড়ে গ্লাস দিয়ে বাইরে তাকায়। দেখে নিরব দাঁড়িয়ে আছে

“এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো বেডাটা। মতলব কি? দাঁড়াও বেবি তোমাকে তো জিসানের বিয়ের মধ্যে মজা দেখাবো

সন্ধায় তুলি জিসান সায়ান মনা আড্ডা দিতেছে।

” দোস্ত (জিসান)

“কও(তুলি)

“ইউটিউব দেখে সার্জারী শিখছি। তোর ডেলিভারিটা আমিই করবো (জিসান)

” আমিও তো শিখছি। তোর বউয়ের ডেলিভারি আমি করবো (তুলি)

“তোরা থাম (মনা)

” পাগলরা কি কখনো চুপ থাকতে পারে(সায়ান)

“তুই পাগল তোর বউ পাগল (তুলি)

” হাছা কথা কইছোস? (জিসান)

“তুইও পাগল (তুলি)
ও জামাই

” বলো (সায়ান)

“মদ খামু (তুলি)

” ভাবি কও কি (মনা)

“ইয়াম্মি খেতে তোমারেও দিমু (তুলি)

” একদম না

“আমি খামু তাই আপনার কি (তুলি)

” তোমার লুঙ্গি ডান্স দেখার ইচ্ছে নেই??

মনা জিসান ??

“তুলি?

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। সায়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে

” আমার জামাই এতো রোমান্টিক হলো কবে

“যবে থেকে তোমার পাল্লায় পড়ছি

” তাহ ঠিক।

সায়ান তুলি দোলনায় বসে

“জানো যখন জুঁই হারালাম নিজের ভাগ্যের ওপর খুব রাগ হতো। নিজেকে অনলাকী মনে হতো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আল্লাহ আমাদের থেকে যা নেয় তার থেকে বেশি দেয়৷ আমি তোমাতেই সন্তুষ্ট। তোমার আঙুল ধরে চলতে চায়। ছোট্ট সংসার সাজাতে চায়। ভালো থাকতে চায়। লাভ ইউ তুলি

” লাভ ইউ টু। আমি আপনার বেবির মা হতে চায়

“তুলি তুমি ছোট আর একটু বড় হও

” আমার অনেক ফ্রেন্ড মা হয়ে গেছে। আমাকে আপনার ছোট মনে হয় কেনো?

“ঠিক আছে দেখছি

” হুম দেখুন। আপনাকে কিছু বলতে চায়

“বলো

” নিরব বেঁচে আছে

“হুমমম

” তাও আপনি চুপচাপ

“আমি নিরবের লাইফ টা শেষ করে দিছি। নতুন কোনো শাস্তি দিতে চায় না

” ওহহহহ

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here