#বিভাবতীর_জীবন
পর্বঃ৭
#লেখিকাঃতামান্না
–” ভেঙ্গে যাওয়া জিনিস হয়তো জোড়া দেওয়া যায়।
বিশ্বাস আর কখনও জোড়া দেওয়া যায় না চাচি!”
–” এভাবে সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি! আল্লাহ তোমাকে সুখে রাখুক মা, আল্লাহ বিচার করবে দেইখো। ওদের কারোরে আল্লাহ সুখে রাখবে না। তোমার মত সরল মাইয়াটার সাথে যারা এমন করছে তারা কোনদিন সুখে থাকতে পারবে না। দেইখো তুমি ও নিজের জীবনে সুখে শান্তিতে ঘর করতে পারবে!”
বিভা প্রতিউত্তরে হেসে দিল। এ জীবনে মানুষ কেন বারবার সুখের কথাটাই উচ্চারণ করে? জীবনে সুখের জন্য বিয়েটাই কি সব? বিভা ফোনটা কেটে দিয়ে এগিয়ে এসে সোফায় বসে পরল। খানিকটা অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য বিভা গান ছেড়ে দিল। খানিকটা প্রশান্তির প্রয়োজন এই মুহুর্তে। এই কষ্টের মুহূর্তটাকে ভুলতে হলে কিছুটা প্রশান্তি দরকার।
দেখতে দেখতে মাস খানেক পেরিয়ে গেছে বিভার এই বাড়িতে আসার পর। বিভার মা নিজেই বিভার সামনে আসেন না কথা বলতে, বিভা ও বাহিরে বাহিরে সারাদিন কাটিয়ে দেয়। বাড়িতে যাওয়ার তার কোন ইচ্ছে নেই, সারাদিন বাইরে থেকে রাতটা তার বাড়িতেই কাটে।
কখনও সময় করে ভার্সিটিতে যেতে হয় তাকে।
সময়টাকে নিজের মত কাটাচ্ছে। বাড়িতে এলে বাবাই তাকে সময় দিচ্ছে, মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মা কিছুটা ইচ্ছে করেই পাশ কাটিয়ে যান। মনে হয় তার ভিতরে রাগের পরিমান করা কিছুটা এখনও আছে।
এই তো সেদিন ডাইনিং টেবিলে বসে বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বিভা মাকে ডেকে বলল –
–” মা তুমি আমাদের সাথে খাবে না?”
উত্তরে তিনি কিছুই বললেন না, চুপচাপ বাবা-মেয়ের খাবারে খাবার বেড়ে পাশের রুমে চলেগেলেন।
বিভা মায়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এবং একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। আসা অবধি না সে কথা বলেছে না মা কথা বলছে। বিভা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা, বাবার ও মায়ের উপর একটা তীব্র রাগ আছে। সেটা বিভার বাবার মুখ থেকেই শুনেছে আর রাগটা তাকে ঘিরেই আছে।
বিভা কোনরকমে খাবার খেয়ে উঠে আসলো। গলা দিয়ে আর নামবে না।
______________________________________
পাড়া-প্রতিবেশিদের মধ্যে একটা নিত্যদিনেই নতুন নতুন টপিক থাকে। পাড়ায় কিছু ঘটলেই এঘর থেকে ও ঘরে একটা হইচই পরে যায়। বিভার ফিরে আসা নিয়ে কিছুটা আলোচনা হলেও কমে গিয়েছিল এখন আবার ও সেই কথা উঠেছে কিন্তু এবার বিভার বিয়ে নিয়ে। বিভার কি বিয়ে হবে না? ডিভোর্সি মেয়েদের নাকি এখন নতুন একটা নিয়ম বেড় করেছে শর্ট ডিভোর্সি আর লং ডিভোর্সি।
শর্ট ডিভোর্সি মেয়েদের বিয়ে করতে অসুবিধা নেই লং ডিভোর্সি মেয়েদের বিয়ে করতে অসুবিধা। রিসেন্ট বা এক দু বছরের মধ্যে ডিভোর্স হয়েছে এদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলেই ভালো পরে নাকি ভালো ছেলে পাওয়া যায় না।
এখন সবার মুখে সেটাই চলছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের ব্যাবস্থা করতে।
পাত্র দেখতে শুরু করেছেন বিভার মা, কথাগুলো মিথ্যে না ইদানিং তাই হচ্ছে। বিভার জন্য আজ একটি বিয়ের ঘর নিয়ে আসছে ঘটক। ছেলের আগে একবার বাগদান হয়েছিল সব ঠিক ছিল কিন্তু সমস্যাটা ছিল মেয়েটাকে নিয়ে মেয়েটা বিয়ে ঠিক হওয়ার মধ্যেই পছন্দের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছে। বিভার জন্য অন্তত খারাপ হবে না।
ছেলের পক্ষ থেকে ডিভোর্সি ও কোন সমস্যা নেই শুনেই তিনি রাজি। এসে দেখে যাক মেয়েকে মেয়ে তো তার দূর্বল নয় যথেষ্ট সাবলম্বি। বিভার ও কিছুটা কাজ কমেছে,
কাজ সেরে বাড়িতে এসে দেখল মা সব ঘুছিয়ে নিচ্ছে।
বিভা আসতেই তিনি ডেকে বললেন-
–” রেডি হয়ে নে,লোক আসছে দেখতে।”
বিভা কিছুটা অবাক হয়ে বলল-
–” কারা দেখতে আসছে? আর কেন? ”
–” তোকে দেখতে আসছে, ছেলে ভালো একটা কোম্পানিতে আছে, ছেলেরা একটা নরম মনের মেয়ে চায়। আর কিছুই চায় না,”
–” মা, আমি এই মুহূর্তে কোন বিয়ে করতে পারবো না!”
–” বিয়ের কথা বললেই বিয়ে হয়ে যায় না। রেডি হয়ে নে।”
বিভা মায়ের কথামত পরিপাটি হয়ে সেখানে গেল রুমে প্রবেশ করেই সে খানিকটা লজ্জিত হয়ে পরল।
ছেলে, ছেলের সঙ্গে এসেছে তার বাবা, মা, বোনের জামাই, এত এত লোকের সামনে বিভা কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বসল।
এতগুলো লোক তার দিকে চেয়ে আছে। বিভা কারোর মুখের দিকে ভালো করে তাকাতে পারল না। উপস্থিত লোকজনদের একজন একজন করে কথা বলছেন। বিভা মাথা নিচু করে সব উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছের বিরুদ্ধেই সব করতে হচ্ছে তার চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে সে। উপস্থিত সবাই যে বিভার মায়ের আতিথেয়তা আর বিভাকে পছন্দ হয়েছে তার কিছুটা মনে হলো ছেলের বাবা আর ছেলের বোন জামাইয়ের কথায়। বিভা অস্বস্তি নিয়ে উঠতে চাইলে ও পারছেনা অনেক সময়ের পর ছেলের পক্ষ থেকে তার দুলাভাই বলে উঠলেন –
–” আপনি এখন ভিতরে যেতে পারেন।”
স্বস্তি পেয়েই উঠে চলেগেল বিভা। বিরক্ত লাগছে তার এভাবে পাত্র পক্ষের সামনে বসে তাকে তাদের কথার কত জবাব দিতে হয়েছে। ড্রয়িং রুম জুড়ে কথা চলছে। এর মধ্যেই ছেলেকে বিভার রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
বিভার রুমে এসে ছেলেটি একটি চেয়ারে বসে পরল। বিভা পাশে থাকা সোফায় বসতেই ছেলেটি গলাটা পরিষ্কার করে নিল। বিভা মাথা নিচু করে রেখেছে, ছেলেদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে নেই। যা ছিল ঐ একজনের জন্যই ছিল ঐ একজনকেই সে মন থেকে মেনে নিয়েছিল, বিভা কোন কথা বলছে না। ছেলেটি ও মনে হয় অস্বস্তিতে পরেছে সে কিছুটা নিচু গলায় বলল-
–” আপনার নাম টা কি?”
–” নাম তো ঐ রুমে বলেছি একবার, আবার বলতে হবে?”
–” কি করব বলুন, ওখানে আপনি ছাড়াও আর চারজন ছিলেন যাদের কথার কারনে আমি কিছু শুনতে পাইনি।”
বিভা কিছুটা চমকালো কারন ছেলেটি তথাকথিত ভদ্র ভাষায় মাথা নিচু করে রাখেনি, এখানে এসে ছেলেটি মাথা উচু করে তার সামনে মূচকি মূচকি হাসছিল এখন একদম হাসতে হাসতে বলল। বিভা কিছু বলল না, এবার ছেলেটি বলে উঠল –
–” আপনার কোন সমস্যা নাহলে একটা কথা বলবো?”
–” হুম বলুন,”
–” আমার মনে হয় আপনি এই বিয়েতে রাজি নন,”
–” কেন মনে হলো আপনার? ”
–” কারন আপনার মুখটা কেমন চুপসে গেছে, অনেকটা রাইসার মত। আমি যখনই ওর সঙ্গে কথা বলতে চাইতাম ও ততদিনই মন খারাপ করে বসে থাকতো।”
–” আপনাকে কে বলল মন খারাপ করে বসে থাকলে মেয়েরা অসুন্তষ্ট থাকে? সচরাচর সব মেয়েই তো এভাবে থাকে। তাহলে আপনি কিভাবে বুঝবেন তার মনের অবস্থা।”
–” উমমম, কথাটা মন্দ নয় তবে আমার মনে হলো।
আচ্ছা যাইহোক আপনার একটা জিনিস আমার ভালো লাগলো। তা হলো আপনি অন্যমেয়েদের মত চুপ করে সাধু সেজে বসে থাকেননি একদম শক্ত জবাব দিচ্ছেন।”
বিভা খুব একটা কথা বলল না। ছেলেটি এবার বলল –
–” একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন? আসা অবধি আমি এত কথা বললাম আপনি কিছুই বললেন না। তার মানে আপনি রাজি নন এই বিয়েতে? আমার ধারণাই ঠিক।”
বিভা শক্ত চোখে তাকিয়ে রইল ছেলেটির দিকে।
____________________________________
ছেলেটির মা বিভার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন –
–” আপনার মেয়ের নাকি কি সমস্যা ছিল! কি সমস্যা ছিল ওর? শাশুড়ির সঙ্গে বনিবনা হতো না, নাকি জামাইকে পছন্দ করতো না?”
–” আসলে আমার মেয়ে একটা ভুল করেছিল। মেয়েটা খুব ছোটছিল তো না বুঝেই বিয়ে করেছিল। সেই সংসারে তার শাশুড়ি বা ননদ কেউ সুবিধার ছিল না।”
–” পালিয়ে বিয়ে করেছিল? মানি প্রেমের বিয়ে ছিল?”
–” জী, আপা!
–” মহিলা কিছু একটা ইশারা করলেন মেয়ের জামাই আর তার স্বামীকে। প্রায় দশমিনিট পর উঠে পরলেন তারা বিভার রুম থেকে ছেলেটিকে ডেকে আনলেন।
বিভা এতক্ষণে ছেলেটির নাম শুনতে পারল ছেলেটির নাম সায়েম। সায়েম ছেলেটা বিভার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে। বিভাকে ডেকে তারা কথা বলে চলে যাচ্ছে কিন্তু সায়েমের মা বিভাদের সঙ্গে আর বেশি কথা বললেন না। তাদের বিদায় করে বিভা বারান্দায় এলো। গাড়িতে উঠার আগে সায়েমের মা খুব কড়া স্বরে বলে উঠলেন –
–” মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে এমন মেয়েকে বিয়ে করালে, মেয়ের অভাব পরে নাই। যে মেয়ে মা বাবারে না জানাইয়া অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করে সে মেয়ে স্বামী সংসার ফালাইয়া পর পুরুষের সঙ্গে চলে যেতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।”
বিভা চটকরে বারান্দা থেকে সরেগেল। ছি! কি একটা লজ্জা।
চলবে।
#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃ৮
–” মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে এমন মেয়েকে বিয়ে করালে, মেয়ের অভাব পরে নাই। যে মেয়ে মা বাবারে না জানাইয়া অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করে সে মেয়ে স্বামী সংসার ফালাইয়া পর পুরুষের সঙ্গে চলে যেতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।”
বিভা চটকরে বারান্দা থেকে সরেগেল। ছি! কি একটা লজ্জা। কেউ যদি হঠাৎ উপরে দেখত, সায়েমের মা যা বলেছে তা নিয়ে বিভা খুব একটা মা ঘামালো না।
সব মাই তার ছেলের মঙ্গল চায়। ছেলের মঙ্গলের জন্য বিভাকে ঘরের বউ করতে রাজি হবে না।
সায়েম মায়ের এমন হুটকরে এমন আচরণে বিরক্ত হয়েগেল। তারপর সে গাড়িতে উঠে বসল, সবাই চলেগেল।
তারা যাওয়ার পরপরই বিভার বাবা মশিউর রহমান এলেন বাড়িতে। খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে বসতেই বিভার মা বিভার ব্যাপারে বলেন তার স্বামীকে। মশিউর সাহেব অবাক হয়ে চেয়ে আছেন। এখন যেন তার রাগ চারগুণ বেড়েগেছে, এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও তিনি সতর্ক না হয়ে আবার আরেক কান্ড করছেন। মশিউর সাহেব বলে উঠলেন –
–“তোমার যা মন চায় তাই করো, সারাজীবন যা ভেবেছো তাই করেছো। এখন ও তাই করবে আমাকে বলার কি আছে?”
মশিউর সাহেবের উত্তরে কিছুটা মন খারাপ হয়েগেল বিভার মায়ের।
________________________________
এনজিওর কাজে অভিজাত এলাকা ছেড়ে বিভাকে যেতে হয় অনেক বস্তি, প্রত্নত গ্রাম, বিভা যখনই গ্রামে তার দলবল নিয়ে আসে তখনই তার মনে পরে যায় আগের মুহূর্তের কথা। নিজেকে বহুকষ্টে দমিয়ে রেখে হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলে। সবাই খুব মিশুক, আরও ভালো যে বিভা ভুলেই যায় তার সব কষ্টকে। কয়েক সপ্তাহ পরপর বিভাকে উচুনিচু পাহাড় বেয়ে চলতে হয়, চলতে হয় কাদামাখা মেঠোপথ ধরে। কখনও বা যেতে হয় নৌকায় চড়ে এদিক সেদিক। এভাবে চলতে গিয়ে পুরোনো অনেক স্মৃতিই তার মনে পরে যায়। আবার ভুলেও যায়!
বিভা রংপুরের একটি প্রতন্ত গ্রামে এসেছে যেখানে তার এনজিও থেকে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কিছু উপহার সামগ্রী ও খাবার আনার ব্যবস্থা করেছে। বিভাদের দলে প্রায় দশজন আছে, এদের মধ্যে অনেকেই বিভার থেকে বড় কয়েকজন খুব ছোট।
বিভা তাদের সঙ্গে হেসেখেলে কথা বলে, অনেক মানুষের সঙ্গে বিভার চলতে হয়, কত গরীব অসহায় মানুষ তার আসেপাশে আছে সে বুঝতেই পারতো না যদি সবুজ তার জীবনে না আসতো। বাবার বাড়িতে রাজকন্যার মত বেড়ে উঠা বিভা সবুজের ঘরে পা দিতেই বুঝেছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের জ্বালা। এখন এই অসহায় মানুষগুলোর সঙ্গে থাকতে থাকতে তাদের দুঃখের বানী শুনতে শুনতে আরও বুঝতে পারল জীবনটা সবার জন্য সুখের নয়। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই সুখ আর দুঃখের মিশ্রণ।
বিভাদের এনজিওর পক্ষ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি প্রতিযোগিতা হচ্ছে যেখানে খেলছে বাচ্চারা।
বিভার পাশেই এনজিও থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ডাঃ আরাফাত রহমান ফাইয়াজ যিনি এই এলাকার নাম করা একজন ব্যাক্তিত্য। ডাঃফাইয়াজ এই গ্রামেরই ছেলে, ঢাকায় বসবাস করলেও ফাইয়াজ গ্রামে কয়েকদিন বাদে বাদে এসে ঘুরে যায়। আর মাঝে মাঝে স্কুল কলেজের তদারকি করে। ডাঃফাইয়াজ প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবে খেলায় অংশ গ্রহনকারিদের পুরস্কার তুলে দিচ্ছে। ডাঃফাইয়াজের পিছনে বিভা বাচ্চাদের পুরস্কার একে একে তুলে দিচ্ছে।
ফাইয়াজ পুরস্কার বিতরন করে বসে পরল নিজের স্থানে।
বিভা ও কিছু বসল, এর মধ্যে সবাই যে যার মত বসে পরল কারন বাচ্চাদের মধ্যে অনেকে নাচ করবে। বিভার মধ্য থেকে একজন সিনিয়র দাড়িয়ে ডাঃ ফাইয়াজকে দেখিয়ে দিয়েছে তখন । বিভা আড়চোখে ডাঃফাইয়াজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখল। লোকটি খুব গম্ভীর একদম গম্ভীর।
সবাই কথা বলছে যে যার মত কিন্তু তিনি চুপচাপ বসে রয়েছেন। ফাইয়াজ সাহেব অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সবার সঙ্গে আরেকবার দেখা করে নিলেন। তারপর চলেগেলেন সেখান থেকে।
পুরোদিন একটি রিসোর্টে থেকেছে বিভাদের দল।
সেখান থেকে বিভা ও তার দল মিলে ঢাকায় এসে পরল।
বাসায় আসার পর বিভা দেখল তার মা কারোর সাথে কথা বলছেন। দরজা লাগিয়ে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে যেতে চাইলে একজন ডেকে বলল –
–” ভাবী কে এসেছে? বিভা নাকি?”
বিভার মা বিভাকে দেখেই ইশারা করলেন এখানে আসতে।
বিভা ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখল মহিলাটি সোফায় বসে আছে। বিভা রুমে ঢুকে সালাম দিয়ে বলল –
–” কেমন আছেন?”
–” খুব ভালো, তুমি কেমন আছো?”
–” জ্বী ভালো আন্টি,”
–” শুকিয়ে কেমন হয়েগেছে চেহারাটা। আহারে যত্ন নিতে পারো না? এত ইয়াং বয়সে চামড়া কেমন হয়েগেছে।
স্মার্ট হও, আগে কি হয়েছে তা মনে রেখো না, ভুলে যাও,
পাস্ট ইজ পাস্ট। এখন একটা কাজ করো মায়ের কথা শুনে চলতে চেষ্টা করো। যে ভুল করেছো তুমি, কেন যে তোমরা এমন করো বুঝি না। বিয়ে করেছো তো করেছো একদম নিচু পরিবারের ছেলেকে। এখন নিজের মত চলাফেরা বন্ধ করে একটু গুছিয়ে চলতে শেখো। মায়ের আর বাবার কথা শুনতে থাকো ক্ষতি হবে না। ”
বিভা চুপ করে শুনতে লাগল। কিছুই বলল না এইসব কথা তাকে উঠতে বসতে শুনতে হবেই, বিভা একদম নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।
–” আচ্ছা, ও কি আবার ফিরে আসবে? ”
–” আন্টি ভুল আমি একবারই করেছি, আর করব না।
আমি আর কখনই তার কাছে ফিরে যাবো না।”
–” হুম ঠিক আছে, আর শুনো যতটা সম্ভব এখন এইসব ভুলে নিজেকে পুরোপুরি ঠিক রাখার চেষ্টা করো। ”
বিভা ওনার সাথে কথা বলে উঠে চলেগেল।
বিভা চলে যেতেই উনি বলে উঠলেন –
–” ভাবী ঐ দিনের ছেলেটির পরিবার বিভাকে পছন্দ করেছিল। কিন্তু মা টা রাজি হয়নি খুব রাগী মহিলা।
ছেলের বিয়ে ঠিক সব ঠিক এর মধ্যেই মেয়েটা তার পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে করে নিয়েছে। সেই থেকে উনি আর ভরসা করতে পারেন না। চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
–” আমি যে কি করবো আপা, মেয়েটা আমার এমন বোকা, কি করে এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল। কি ভাবে কি সামলাবো বুঝতে পারছিনা। আবার মেয়ের বাবা রেগে আছে, কেন আমি ঐ ঘটনার পর আবার বিয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। অপেক্ষা না করেও তো উপায় নেই,
এই মেয়েকে আমি যদি ফেলে রাখি সামনে তো আর বিয়ের ঘর পাবো না।”
–” কি করবেন আর এখন।”
সায়েমের পরিবারে সবাই বিভাকে পছন্দ করেছে, বিভা দেখতে যথেষ্ট মার্জিত ও সুন্দর। ভদ্রই বুঝা যায় বিভাকে দেখে। বিভার পরিবার ও তাদের পছন্দ হয়েছে। কিন্তু বাদ সাধলো বিভার বিয়ের ঘটনা নিয়ে। বিভার বিয়ের পরবর্তী জীবনের কথা শুনেও তারা খুব আফসোস করেছে। যা বিভার শরীর দেখেই বুঝেছে। হয়তো মেয়েটার চোখের দিকে তাকালে খুব সহজে বুঝা যায় মেয়েটি খুবই দূর্বল।
কিন্তু বাদ সাধলেন সায়েমের মা। তিনি কোন ভাবেই এই মেয়েকে ঘরে তুলবেন না। এই নিয়ে সায়েম ও খুব ক্ষুদ্ধ।
মাকে বুঝিয়ে ও সে কিছুই করতে পারছেনা। অনেক সময় অনেক কিছুই চেয়ে করা যায় না, মেনে নিতে হয় সব।
বিভা ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পরল। বিছানায় শুতেই দেখল রায়হানের মায়ের কল। কিছুটা বিরক্ত হলো বিভা আবার কিসের জন্য ফোন করল।
ধরতেই অপর পাশ থেকে তিনি বলে উঠলেন –
–” কেমন আছো মা তুমি?”
–” জী ভালো, ”
–” ও, তোমার শরীর কেমন আছে?”
–” ভালোই আছে,”
–” ও, সবুজের মা বলতেছিলি সবুজরে নাকি বিয়ে করাইবো। মানি মানুষের লজ্জা শরম বলতে কিছু নাই।
কয়দিন হইছে তোমারে এমন কইরা বিদায় করলো এখন আবার বিয়ার জন্য চেষ্টা করতেছে। আর পোলাডারে ও ভালো মানুষ মনে করছিলাম, পোলাডা আরও খারাপ।”
–” চাচি এগুলো আমাকে বলে কি লাভ? আমি তার স্ত্রী এখন? না আমার বাচ্চা আছে? যে আমি তার কথা চিন্তা করবো? বাচ্চা থাকলেও হয়তো সেই চিহ্ন ও প্রমাণ স্বরূপ আমার বারবার তার কথা মনে পরতো। কিন্তু এখন আর মনে পরবে না চাচি।”
–” কি বলো এইগুলো, বাচ্চা থাকলে মানে?”
–” চাচি রাখছি, আমি আর এই বিষয়ে কোন কথা বলতে পারবো না।”
বিভা ফোন রেখে ভাবতে লাগল সবাই মানুষকে করুণা করতে ভালোবাসে। সহানুভূতির আড়ালে মানুষের কথা নিয়ে বেচাকেনা করা গ্রামের মানুষের স্বভাব। যেদিন রায়হানের মা তার সাথে কথা বলে সেদিন সবুজ তাকে ফোন করে ডিস্টার্ব করে। নিশ্চয়ই উনি ও গিয়ে কথার তালে বলে ফেলেন বউ তো এটা বলেছে ওটা বলেছে।
বিভার মাথাটা খুব ধরেছে। সন্ধ্যা ধরেই বিরক্ত লাগছে তার। আবার এই মহিলার এইসব কথা, বিভা ফোন নাম্বার টা ব্লক করে দিয়ে ভাবলো যার সঙ্গে সম্পর্কই নেই তার গ্রামের লোকের সঙ্গে কথা বলে লাভ কি? নাম্বারটি ব্লক করে ফেলে রাখলো।
চলবে।