#দোটানা,পর্বঃ৮,৯
#গল্পকারঃআরোহী_নুর
পর্বঃ৮
(নিহান নিধীকে আনার উদ্দেশ্যে বের হলেই নিধী হাজির হলো দরজার সামনে,,,,কপালের সাইডে একটু কেটে গেছে আর এক হাত দিয়ে রক্ত পরছে খনিকটা কেটে,,,,নিহান নিধীকে দেখে ছুটে গেলো ওর পাশে অস্থির হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করতে থাকলো ও এতো সময় কোথায় ছিলো কি হয়েছে ওর,,,,নিহান প্রায় পাগলপ্রায় হয়ে আছে নিধীর রক্ত দেখে একটা কাজের লোককে ততক্ষণে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসতে বলে দিয়েছে,,,,,সবাই ওর এর অবস্থা দেখে হয়রান,,,,সবাই ওর পাশে ছুটে গিয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলেন,,,,নিধীর মা হুইল চেয়ারে বসে কান্না করছেন আর মেয়েকে পাশে ডাকছেন আর বলছেন কি হয়েছে তা বলতে,,,,নিধী স্বাভাবিক ভাবে ভিতরে চলে গেলো মায়ের পাশে,,,,)
মাঃকি হয়েছে মা তোর,,,,,কপাল কি করে কেটে গেলো আর হাত দিয়েও তো রক্ত ঝরছে,,,,, কোথায় ছিলি এতো সময়,,,আর ফোন বন্ধ ছিলো কেনো তোর,,,,বল না,,,,(সবাই নিধীকে নিয়ে চিন্তিত হলেও নিরব অন্য জিনিস নিয়ে চিন্তিত,,,,, আর সে চিন্তা হলো নিধী কিভাবে ফিরে আসলো,,,,,)
নিধীঃআরে মা কি তুমি,,,,এতো চিন্তা করো কেনো??কিছুই হয় নি আমার,,,,আসলে ফোনে চার্জ নেই তাই ওটা ওফ হয়ে গেছে আর আসার সময় যে রিক্সায় আসছিলাম সে রিক্সাটা রাস্তার পাশে একটু উল্টে পড়ে গেছিলো ড্রাইবারের ভুলে যাতে করে এসব ব্যাথা পেয়ে গেছি আর তেমন কিছু হয় নি আমার আমি ঠিক আছি,,,,(এটা বলে কি একটা নজরে তাকালো নিরবের দিকে,,,,,নিরব নিধীর চাহনি বুজতে পেরে সাথে সাথে চোখ নিচু করে নিলো,,,,কারন হয়তোবা সে তখন নিধীর চাহনিতে বুঝে গেছে যে সে ধরা পরে গেছে,,,,নিহান ততক্ষণে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে নিধীর সামনে চলে আসে,,,,,ওর হাতে ওষুধ লাগাতে চাইলে,,,,)
নিধীঃআপনাকে কষ্ট করতে হবে না আমি নিজেই করে নেবো,,,,আপনি আমাকে ফাস্টএইড বক্স টা দিন,,,,
নিহানঃএকদম না,,,,তোমার হাত বড্ড কেটে আছে,,,,এক হাত দিয়ে কিছুই করতে পারবে না,,,,কপাল দিয়েও তো রক্ত ঝরছে,,,,আমি করে দেবো,,,,,
দিশাঃ(নিহান নিরবের মা)হ্যাঁ মা জেদ করিস না নিহানকে ব্যান্ডেজটা করতে দে,,,,
নিধীঃনা মেম সাহেবা,,,,আমি একা সব করে নিতে পারবো,,,,
নিহানঃকিছুই পরবে না তুমি,,,,চুপচাপ বসো আমি হাতটা দেখছি(ধমকের সুরে বললো,,,,সবাই নিহানের নিধীর জন্য এমন কেয়ার করা দেখে আশ্চর্য হচ্ছে)
নিধীঃপ্লিজ মি.নিহান আপনি বক্সটা আমায় দিয়ে দিন আমি আপনার হাতে ব্যান্ডেজ করাতে কমফোর্টেবল নয়,,,,
আদনানঃতো কি হয়েছে,,,,ওর কাছে কমফোর্টেবল না হলেও মেয়ে তো বাবার কাছে কমফোর্টেবল হবে না,,,,আমার এই মেয়েটার খেয়াল আমি রাখবো,,,,নিহান দাও তো বক্সটা আমায়,,,,(এটা বলে নিহানের কাছ থেকে আদনান সাহেব বক্সটা নিয়ে ওর হাত ব্যান্ডেজ করতে শুরু করেন,,,,নিধী আর উনাকে মানা করলো না,,,,কারন ও উনাকে নিজের বাবা মতোই সম্মান করে,,,,উনি যে ওকে ঠিক নিজের মেয়ের মতোই আদর করেন,,,,নিধী যেনো উনার মধ্যে নিজের বাবার ছবি দেখতে পায়,,,,তারপর ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে নিধী ওর মাকে হোইলচেয়ারে করে নিজেদের রুমে নিয়ে যায়,,,,নিহান ওর কষ্টে ব্যাথার্থ চোখে চেয়ে আছে ওর যাওয়ার দিকে,,,,নিরব কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না তাই কাউকে ফোন করতে করতে এগিয়ে গেলো নিজের রুমের দিকে,,,,এদিকে নিধী যেতে যেতো মনে করলো একটু আগে ঘটা ঘটনা,,,,,)
ফ্লাসব্যাকঃ(নিধী অফিস শেষে বাড়ি আসছিলো রিক্সায়,,,,আসার পথে একটা খালি নির্জন রাস্তা দিয়ে রিক্সাটা আসতে থাকলে হঠাৎই তিনটা ছেলে বাইক দিয়ে নিধীর পথ আটকে দাঁড়ায়,,,,এগিয়ে গিয়ে নিধীকে নেমে আসতে বলে,,,,নিধী নেমে না আসতে চাইলে ওকে হাতে টান দিয়ে নামিয়ে আনে আর ছুড়ি বার করে রিক্সার ড্রইবারকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে চলে যেতে বলে ওখান থেকে,,,,ড্রাইবারটাও নিজের জীবন বাঁচাতে পালায় সেখান থেকে,,,,তারপর তিনজনই ডেবিল হাসি দিয়ে ওর চারপাশে ঘুরতে শুরু করে,,,,ওরা তো ভেবেছো আজকে বড্ড মজা করবে ওকে নিয়ে তারপর ওকে লাশ করে ফেলে রেখে যাবে কোনো জঙ্গলে,,,কিন্তু ওরা তো নিধীর ক্ষমতা জানে না,,,,এদের মধ্যে একজন এগিয়ে আসে নিধীর ওড়না নিয়ে নেবে বলে,,,,যেই ওর ওড়নাতে টান দিবে নিধী তৎক্ষনাৎ ওর হাতে ধরে ফেলে আর এক ঘুষিতে ওকে মাটিতে ফেলে দেয়,,,,এটা দেখে বাকি দুজনও ওর দিকে এগিয়ে আসে,,,,তখন নিধী ওদেরও দুইটা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়,,,,তারপর নিধী ওদের সাথে নিজের ইজ্জত বাঁচানোর লড়াই শুরু করে,,,,অবশেষে জয়টা অবশ্য নিধীরই হয়,,,,আর এই লড়াইয়ের মধ্যেই নিধীর কপাল আর হাতটা কেটে যায় খনিক,,,,আসলে নিধী নিজেকে এতোটাই শক্ত করে নিয়েছে যে তিনটা কেনো ১০ টা পুরুষও ওর সামনে পানিভাত হবে,,,,)
(তারপর ভাবনা শেষ করে নিধী ওর মাকে রুমে নিয়ে গেলো,,,,মা তো কান্না জুড়ে দিয়েছেন নিধীকে জড়িয়ে ধরে,,,,,)
মাঃকেনো এতো কষ্ট করিস রে মা,,,,সারাদিন শুধু কাজ কাজ কাজ করিস,,,,শুধুই আমার জন্য করিস,,,,যাতে কিছু টাকা উপার্জন করে আমার ভালো চিকিৎসা করাতে পারিস,,,ভালো মন্দ খাওয়তে পসরিস,,,,নিজের জন্য তো কিছুই করিস না,,,,কেনো যে বেঁচে আছি,,,,মরে গেলে হয়তো আমার বাচ্চাটার জীবনটা সুখের হতো,,,,এভাবে আমার জন্য রাত দিন খাটতে হতো না,,,,
নিধীঃচুপ করো তো মা,,,,তুমি ভালো করেই জানো আমি বেঁচে আছি তো শুধু তোমার জন্য,,,,নয়তো সেই কবেই মারা যেতাম,,,,,আমার সবই তুমি,,,,আর কখনোই এরকম বলবে না এই বলে দিলাম,,,,এবার চুপ করে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি তোমার জন্য,,,,,
(তারপর নিধী মায়ের চোখের জল মুছে গিয়ে উনার জন্য খাবার এনে উনাকে খাইয়ে তারপর ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় উনাকে,,,,এরপর রুম থেকে বেড়িয়ে যায় একটা কাজে,,,,,এদিকে নিরব এটাই ভাবছে নিধী কি করে বেঁচে আসতে পারলো,,,,বার বার সেই নাম্বারে ফোন করছে যে নাম্বারে সকালে নিধীর ছবি পাঠিয়েছিলো,,,,কিন্তু ফোনটা বন্ধ আসছে,,,,তখনি পিছন থেকে একটা কথা ভেসে আসলো নিরবের কানে)
নিধীঃউনার ফোন লাগবে না মি.স্যার,,,,,কারন উনার ফোন পুলিশের হাতে,,,,এমনকি উনি আর উনার সাথিরাও,,,,,
(নিরব পিছন ফিরে দেখে নিধী….নিরব নিধীকে দেখে কিছু বলছে না শুধু নিধীর কথা শুনে ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
নিধীঃওহ কিছু বুঝতে পারছেন না তাই তো,,,,প্রবলেম না আমি বুঝিয়ে বলছি,,,,তবে শুনেন,,,,আপনাকে আমি আগেই বলেছিলাম মেয়েরা নিজেদের শক্ত করে নিতে পারলে দশ টা ছেলেও ওদের সামনে ফিকে পড়ে যায়,,,,আপনার কি মনে হয় আমার এই জীবনটা সহজ ছিলো,,,,একা একটা মেয়ে হয়ে আমি সহজেই বেঁচে আছি,,,,না স্যার,,,,জানেন এই নিধীকে নিজেকে শক্ত করার জন্য এরকম আরও অনেক রেপিস্টদের সামনা হতে হয়েছে,,,,প্রথম প্রথম পালিয়ে বাঁচতাম কিন্তু পরে যখন বুঝতে পেরেছি যে পালিয়ে বাঁচা নিতান্তই কঠিন তখন নিজেকে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করেছি,,,,ওরা তো শুধু ৩ টা ছিলো ওদের মতো আরও ১০ টা থাকলেও আজকে উপড়ে ফেলে আসতাম,,,,তাই ভবিষ্যতে আর কিছু করার আগে ভালো করে নিধীর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হয়ে করবেন আশা করি,,,,
(নিরব কিছুই বলছে না,,,,কি বলবে বা কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না,,,,নিধী একা কি করে বেঁচে আসতে পারলো আর কি করে জানলো যে ওসব নিরব করিয়েছে তাই ভাবছে তাজ্জব হয়ে)
নিধীঃএখন নিশ্চয়ই এটা ভাবছেন যে আমি জানলাম কি করে যে আপনি এটা করেছেন,,,,তবে এটাও শুনেন,,,,আপনার চেলাগুলোকে মেরে যখনি নাম জিজ্ঞেস করেছি যে এটা কে করেছে তখন ওরা বিড়বিড় করে আপনার নাম বলে দিয়েছে,,,,যদিও আমি আগেই অনুমান করেছিলাম যে এতো ঘৃণ্য কাজ আপনিই করাবেন,,,,,জানেন আমি শুধুই আপনাকে ঘৃণা করতাম,,,,, কিন্তু যথেষ্ট সম্মানও ছিলো আপনাকে নিয়ে আমার মনে কিন্তু আজ আপনি সেটাও হাড়িয়ে ফেললেন,,,,আপনি এতোটা নিকৃষ্ট এটা ভাবতে আমার একদম তাজ্জব হচ্ছে না,,,,,তবে ভয় পাবেন না মি. স্যার,,,,আমি আপনার ওই চেলাগুলোকে পুলিশে ধরিয়ে দিলেও আপনার নাম পুলিশের কাছে নিতে বারন করেছি,,,,ওরা আপনার নাম নিবে না,,,,তবে ওদের সাজাটা কম হবে বলেও মনে হয় না,,,,এতোই বোকা চেলা জুটিয়েছিলেন আপনি যে ওরা ওটাও খেয়াল করে নি যে রাস্তায় আমাকে আটকিয়েছিলো সেখানে একটা সিসিটিভিও ছিলো লাগানো,,,,,ওদের ভাগ্য খারাপ থাকায় সিসিটিভিটা আমার চোখে পড়েছে আর আমি সেই ক্ষনের ফোটেজটা সংগ্রহ করে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছি,,,,,আর হ্যাঁ আপনি আপনাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না,,,,আমি ঘরের কাউকেও আপনার এসব ঘৃণ্য চিন্তার কথা বলবো না,,,,আবার মনে করবেন না যে আপনাকে ভয় পেয়ে এসব করছি,,,, আমি আপনার কথা এজন্যই বলছি না কারন আপনার এমন মানসিকতার কথা শুনে আপনার মা-বাবা আর দিদুন অনেক কষ্ট পাবেন,,,,আর আমি উনাদের কষ্ট দিতে চাই না,,,,ওকে ঘুমিয়ে পড়েন,,,,আমি শুধুই আপনার মনের সব প্রশ্নের জবার দিতে এসেছিলাম মাত্র,,,,গুড নাইট,,,,মি.স্যার(এটিটিউড নিয়ে)
(নিধী চলে গেলে নিরব রাগে পাশে থাকা একটা ফুলদানি ছুঁড়ে মারে দেয়ালে,,,,নিধীর এসব কথা সহ্য হচ্ছে না ওর,,,,দুই টাকার একটা রাস্তার মেয়ে ওকে এমন কথা শুনিয়ে গেছে কি করে সহ্য করবে ও,,,,,অনেক রাগ হচ্ছে ওর,,,,কিন্তু তখনকার রাগ ওর নিধীর উপর হচ্ছে না নিজের উপর ও জানে না,,,,নিধীর কাছে পরাজিত হয়ে ওর খারাপ লাগছে,,,,না নিধীর সাথে এমন করতে চেয়েছিলো এটা ভেবে ওর খারাপ লাগছে বুজতে পারছে না,,,,,নিধী ওকে শুধু ঘৃণা করে,,,,ওর জন্য নিধীর মনে কোনো সম্মান রয়ে যায় নি ওটা বার বার নিরবের মনে আসছে যেটা নিরবকে খনিক কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু কেনো নিধীর ওকে ঘৃণা করার কথা শুনে ওর খারাপ লাগছে এটা ও ভেবে পাচ্ছে না,,,,কেউ ওকে নিয়ে কি ভাবে তাতে কখনোই ওর আসে যায় না,,,তবে নিধীর কথায় কেনো ওর খারাপ লাগছে তা বুঝতে ব্যার্থ নিরব,,,,এই কনফিউশনে বেডে গড়াগড়ি করতে করতে অবশেষে ঘুমিয়ে পড়ে নিরব,,,,,পরদিন অফিসে,,,,,কাল রাতে নিধী নিরবকে যাই যাই বলেছে তা নিরবের যেনো কানের কাছ থেকেই সরছে না,,,,তাই নিধীকে টর্চার করার কোনো পথ ছাড়বে না তা আগে থেকেই ভেবে রেখেছে,,,,তাই নিধীকে শুধু শুধুই এক্সট্রা এক্সট্রা কাজ করাচ্ছে,,,,নিধী ওর মনোভাব ভালোয় বুজতে পারছে কিন্তু ও তো আর হারার পাত্রী নয় তাই কাজ করেই যাচ্ছে,,,,,যেহেতু হাতটা কাটা কাজ করতে প্রবলেম হচ্ছে,,,,কপালটা কেটে আছে,,,খনিক রক্তও গেছে বটে তাই অতিরিক্ত কাজের চাপে মাথাটাও খনিক ঘুরছে,,,,নিহান এসব বুঝতে পারছে,,,,ও নিধীকে দিয়ে কোনো কাজ করাচ্ছে না,,,,ওকে তো আজ নিহান অফিস আসতেও বারন করেছিল কিন্তু নিধীতো ওর কথা শোনার পাত্রী নয়,,,,এখনও ওকে কাজ করতে বারন করছে কিন্তু নিধী ঠিকই ওর কাজ করছে,,,,,নিহান নিধীকে বুঝাতে ব্যার্থ হয়ে নিরবের কাছে যায় গিয়ে ওকে আটকাবার চেষ্টা করে,,,,,ওকে নিধীকে এতো কাজ করাতে বারন করে,,,,কিন্তু নিরব তা মানতে রাজি না,,,,,ওর কথা নিধী অফিসের পি.এ আর ওকে যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজ করতে হবে এটা নিয়ে নিহানকে মাথা না ঘামাতে,,,,তারপর নিহান আর নিরবের মধ্যে এটা নিয়ে খনিক কথা কাটাকাটি হয় আর নিহান রেগে নিজের কেবিনে চলে যায়,,,,ও জানে নিধীকে এমনিতে কাজ করা থেকে বিরত রাখা যাবে না,,,,তাই ও নিধীকে নিজের কাজের অজুহাতে নিজের কেবিনে ডেকে নেয়,,,যেহেতু নিধী ওরও পি.এ,,,,তারপর নিধীকে দিয়ে নিজের হালকা ফোলকা কিছু কাজ করায়,,,যেহেতু নিধী এমনিতে কাজ ছাড়া ওর কেবিনে থাকবো না আর বাইরে গেলেতো নিরব ওকে দিয়ে আবার ঘোড়ার খাটনি খাটাবে,,,,,এদিকে নিধী অনেক সময় ধরে নিহানের কেবিনে কাজ করছে,,,,,নিরববের কেনো যেনো তা সহ্য হচ্ছে না,,,,খারাপ লাগছে,,,,ও তো শুধুই এটাই ভাবে যে ওর খারাপ লাগার কারন হয়তো নিধী ওকে উল্টা জবাব দিয়ে দেয় আর তার যথেষ্ট জবাব সে রিটার্ন করতে পারে না,,,,,তাই বার বার নিধীকে কষ্ট দেওয়ারই চেষ্টায় থাকে যাতে মনে শান্তি পায়,,,কিন্তু ওর কি জানা আছে ওর খারাপ লাগার কারন এখন অন্য কিছু,,,,নিধী এতোসময় ধরে নিহানের কাজ করছে ওর কেবিনে বসে যাতে নিরবের খারাপ লাগছে তাই ও নিধীকে আবারও একটা বড়সড় সাজা দিতে চাইছিলো,,,,যেহেতু ও মনে শান্তি পাচ্ছে না আর ও শুধুই মনে করে নিধীকে কষ্ট দিলে হয়তো ও নিজের মনে শান্তি পাবে,,,,,তাই ও বুদ্ধি করে কিছু পানি ফেলেরাখলো নিজের টেবিলের ঠিক সামনে আর সেখানের ঠিক সামনে টেবিলে একটা ছুরি রেখে দিলো কিছু একটাতে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে যাতে নিধী পা পিছলে এসে ওই ছুরির উপর পরে আহত হয়,,,,নিহত হলে তো ও আরও মজা পাবে হয়তো এটাই ভেবে ও নিধীকে নিজের কেবিনে ডাকালো আরেকটা কাজের বাহানায়,,,,নিহান নিধীকে আসতো বারন করলেও নিধী চলে আসলো যেহেতু ও নিজের কাজে কখনোই কোনো গাফিলতি করবে না,,,,নিহানের সব কাজ শেষ করেই এলো নিরবের কেবিনে,,,,নিরব টেবিলে বসে নিধীকে ওর টেবিলের সামনে এসে কিছু ফাইল্স নিয়ে যেতে বললো,,,,,নিধী ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকে ফাইল্সগুলো নিতে,,,,নিরব মনে মনে খুশি হচ্ছিলো এটা ভেবে যে নিধী এবার পা পিছলে ছুরিতে পরে আহত হবে,,,,,কিন্তু যতই নিধী এগিয়ে আসছে ততই নিরবের ভয় হচ্ছে কেনো যেনো,,,,নিধী যে সত্যিই ছুরিতে পরে কষ্ট পাবে এই ভাবনাটা ঘিরে ধরেছে নিরবকে,,,,,নিধী পানিতে পা দিবে ঠিক তখনি নিরব নিজের জেদের বিরুদ্ধে গিয়ে মনের অজান্তেই উঠে চলে আসে ওকে বাঁচাতে,,,,,নিধীকে বাঁচাতে গিয়ে নিরবের পা পরে যায় সেই পানিতে আর তখন নিরব পা পিছলে সেই ছুড়িটার উপর পরে যাবে এর আগেই নিধী এক হাত দিয়ে নিরবকে আটকায় আর অন্য হাত ছুরির উপর দিয়ে দেয় যাতে নিরব ওটার উপর পড়ে না যায়,,,,,যার ফলে ছুড়িটা নিধীর সেই ক্ষত হাতেই ঢুকে যায় খনিক,,,,নিধী ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে,,,,,সাথে সাথে নিরবের হাত চেঁপে ধরে ব্যাথায়,,,,তারপরও ওফ শব্দ করে নি,,,,শুধু কষ্ট সহ্য করার চেষ্টা করছে,,,,হাত দিয়ে অজস্র রক্ত ঝরতে শুরু হয়েছে,,,,,নিরব স্পষ্ট বুঝতে পারছে নিধীর অনেক কষ্ট হচ্ছে,,,,যাতে ওর মন খচখচ করছে,,,,,নিধীর রক্ত দেখে নিরবের মনে যেনো রক্ত পাত শুরু হয়ে গেছে,,,,নিরব পাগলপ্রায় হয়ে নিধীকে নিয়ে চেয়ারে বসালো আর ছুটে গিয়ে ফাস্টএইড বক্সটা আনলো ততক্ষণে নিহানও সেখানে উপস্থিত,,,, নিধীর খোঁজেই এসেছিলো আর এখানে এসে নিধীর এ হাল দেখে নিহানও পাগলপ্রায় হয়ে গেছে,,,,ছুটে আসে নিধীর কাছে,,,,নিরবও তখন ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নিধীর কাছে এসে বসে গেছে,,,,,)
নিহানঃনিধী কি হয়েছে তোমার,,,,তোমার হাত কাটলো কি করে,,,,অনেক রক্ত ঝরছে তো,,,,
নিরবঃকারনটা পরে জেনে নিস আগে ডাক্তারকে ফোন কর,,,,,(এটা বলে নিরব নিধীর হাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগবে তখনি)
নিধীঃদেখেন স্যার আমি একদম ঠিক আছি,,,,আমি নিজেই আমার হাতে বেন্ডেজ করে নিতে পারবো আপনার এতে মাথা ঘামাতে হবে না,,,,,আর মি.নিহান আপনারও ডাক্তারকে ফোন করতে হবে না,,,আমি ঠিক আছি,,,,
নিরবঃএকদম চুপ করে বসে থাকো বলে দিলাম,,,,নিজে করে নেবে,,,,দেখছো না হাত দিয়ে কতো রক্ত ঝরছে,,,,,বলে না কি ঠিক আছি,,,,,তুমি কোনো সুপার গার্ল না নিধী যে তোমার কোনো কষ্টই হবে না,,,,,
নিহানঃতুমিও মানুষ নিধী আর তোমারও কষ্ট হয়,,,,,, তুমি যতই লুকাতে চাও না কেনো মানুষের চোখে তা ঠিকই ধরা পরে,,,,অন্য কারো চোখে পরুক না পরুক তা আমার চোখকে কখনো ফাঁকি দিতে পারবে না,,,,,(এটা বলে নিহান ডাক্তারকে ফোন করতে শুরু করলো আর নিরব এতক্ষণে নিধীর হাতের রক্ত আটকাতে ব্যাস্থ হয়ে পড়েছে,,,,)
নিধীঃদেখেন আপনারা এমনি এমনিই অস্থির হচ্ছেন,,,,আমি একদম ঠিক আছি,,,,নিজেকে আমি ঠিকই সামলাতে পারবো আপনাদের প্রয়োজন নেই আমার,,,,(বলে উঠে যেতে চাইলে)
নিহানঃখরবদার উঠেছো তো,,,,চুপ করে বসো এখানে ডাক্তার আসছেন,,,,আজ তোমার কোনো কথাই শুনবো না আমি,,,,,
নিরবঃভালো করেই জানা আছে তোমার কাউকেই প্রয়োজন নেই,,,,কিন্তু এর মানে এটা নয় যে তুমি নিজের প্রতি এতো কেয়ারলেস থাকবে,,,,শাসন করার মতো কেউ নেই বলেই তুমি এমন তাই না,,,,,এখন চুপ করে বসো এখানে রক্ত অনেক পড়ছে তোমার,,,,দেখতে দাও আমাকে হাতটা,,,,
(নিরবের কথায় নিধী যেনো একসাথে ৪ দফা শক খেলো,,,,,নিহান তো প্রতিনিয়ত নিধীকে নিয়ে এতো অস্থির থাকে তাই ওর অস্থিরতা দেখে নিধী তেমন অবাক হলো না,,,,কিন্তু নিরবের কথায় তো নিধী যেনো আকাশ থেকে পড়লো,,,,,যে নিধীকে নিরব সহ্যই করতে পারে না ওকে ঘৃণা করে সেই নিধীকে নিয়ে সে আজ এতো অস্থির হয়ে পড়েছে,,,,যে কিনা নিজের কথা ছাড়া কখনো কারো কথাই ভাবে না সে আজ নিধীকে নিয়ে ভাবছে,,,,,তারপর দুই ভাই ই ব্যাস্থ হয়ে পড়েছে নিধীর হাতের রক্ত বন্ধ করতে,,,,নিধী অবাক হয়ে দেখছে দুজনকেই,,,,ওদের দেখে নিধী নিজের কষ্টটাই ভুলে গেছে,,,,,নিধীর তখন মনে হচ্ছে যেনো ছুড়িটা ওর হাতে ঢুকে নি ঢুকেছে এই দুই ভাইয়ের মনে,,,,,
চলবে……
#দোটানা
লেখিকাঃআরোহী নুর
পর্বঃ৯
(নিধী অবাক হয়ে দেখছে দুজনকে,,,,,দুজন তো ওর হাতের রক্ত আটকাতে ব্যাস্থ,,,,,তারপর৷ ডাক্তার এসে নিধীর হাতটা দেখে বেন্ডেজ করে দিয়ে গেলেন,,,, ওর হাতের অবস্থা খারাপ তাই ওকে এখন আর কোনো কাজ না করতে বলে গেলেন,,,,সাথে কিছু ওষুধও লিখে দিলেন,,,,তারপর ডাক্তার চলে গেলো,,,,)
নিহানঃহয়েছে এখন আর তোমাকে কোনো কাজ করতে হবে না,,,,আমি তোমাকে বাড়ি নিয়ে দিয়ে আসছি তুমি বাড়ি গিয়ে রেস্ট করো,,,,,
নিরবঃঠিক বলেছিস নিহান,,,,কিন্তু তুই না ওকে বরং আমি নিয়ে দিয়ে আসছি তুই অফিস দেখ,,,,
(নিরবের কথায় নিধী নিহান তো পুরো থ,,,,নিরব এতক্ষণ নিধীর এতো কেয়ার করলো আর এখন না কি ওকে নিয়ে বাড়িতেও দিয়ে আসবে,,,,অবিশ্বাস্য একটা বিষয়,,,,যে নিধী মরে গেলে হয়তো নিরব খুশি হবে,,,,সে নিধীকে নিয়ে এখন ভালো ভাবছে নিরব ভাবতেও কেমন লাগছে নিহানের আর নিধীর,,,,ওরা তো বিশ্বাসই করতে পারছে না এসব,,,,নিহান এতো সময় নিধীর ধ্যানে পাগল ছিলো কিন্তু এখন নিরবের নিধীকে নিয়ে অস্থিরতা ওর চোখে পড়ছে,,,,নিরব কে কখনো কারো জন্যই এতো অস্থির হতে দেখে নি নিহান এতো ভাবতে দেখে নি,,,,কিন্তু আজ নিধীকে নিয়ে ভাবছে,,,,কেমন একটা খটকা লাগছে নিহানের,,,,,নিহান নিধী দুজনেই অবাক হয়ে তাকাচ্ছে ওর দিকে,,,,,)
নিরবঃকি হয়েছে ওভাবে তাকাচ্ছো কেনো তোমরা,,,,ওই আসলে আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিধীর এসব হয়ে গেছে তাই বলছিলাম ওকে নিয়ে বাড়িতে ড্রপ করে আসি,,,,যেহেতু ওর রেস্ট দরকার,,,,(কথাটা ওদের বুঝালো না নিজের মনকে এটাও জানে না নিরব)
নিধীঃআসলে আপনাদের কারোই কষ্ট করতে হবে না,,,,আমার জন্য এতোটা করেছেন তার জন্য আপনাদের দুজনকেই ধন্যবাদ,,,,কিন্তু এখন আমি কোথাও যাবো না,,,,আমি আমার কাজ শেষ করে অফিস আওয়ার পরেই বাড়ি যাবো,,,,,আপনারা প্লিজ নিজেদের কাজ করেন আমায় নিয়ে ভাবতে হবে না,,,,আর হ্যাঁ আপনাদের যার যার যা যা কাজ আছে সব দিয়ে দিতে পারেন আমি করে দেবো,,,,
নিহানঃকিন্তু নিধী ডাক্তার তো বলেছেন তোমার হাতের রেস্ট দরকার,,,,কাজ করলে তোমার কষ্ট হবে তো,,,,
নিধীঃদেখেন মি.নিহান,,,,আমি কোনো আলালের ঘরের দুলালি নয়,,,,আমার খেটে খেতে হবে আর তার জন্য হাত চালাতে হবে,,,,,এসব রেস্ট প্রশান্তি আমার জন্য নয়,,,,আমি আমার ডেক্সেই আছি আপনাদের দরকার হলে ডাকবেন,,,,,(চলে গেলো নিধী,,,,দুই ভাই তাকিয়ে আছে ওর যাওয়ার দিকে,,,,তারপর নিহান এক পলক নিরবের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো,,,,,নিরব ওর জায়গায় বসে পড়লো,,,,বার বার ভাবছে নিধী কেনো ওকে বাঁচালো,,,,ওকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের পরবাও করলো না,,,,তারপর ভাবলো এর জবাব ওকে নিধীর কাছ থেকেই জানতে হবে,,,,,তারপর সারাদিন দুই ভাই আর নিধীকে কোনো কাজ দিলো না,,,,নিধী ওর এক্সট্রা যা যা কাজ ছিলো তা করেছে,,,,নিহান কয়েকবার এসে ওকে কাজ করতে বারন করলেও নিধী শোনে নি,,,,নিরবও কয়েকবার ওকে এসে কাজ করতে বারন করতে চেয়েছিলো কিন্তু এটিটিউডের বশে পরে আসে নি,,,,,তারপর যাওয়ার সময় দুই ভাই তাদের দুই গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,,)
নিহানঃআরে ভাইয়া তুই এখানে দাঁড়িয়ে কেনো বাড়ি যাবি না,,,,??
নিরবঃযাবো,,,,একটু পরে এক জনকে নেওয়ার অপেক্ষায় আছি,,,,আর তুই কেনো বাড়ি যাচ্ছিস না,,,,??
নিহানঃআমিও যে একজনকে নিতে দাঁড়িয়েছি,,,,(কথাটা বলতে না বলতেই তাদের কাঙ্ক্ষিত সেই একজন বেড়িয়ে এলো আর সে আর কেউ নয় নিধী,,,,,নিধী তো দুইভাইকে এভাবে দাঁড়িয়ে দেখে অবাক,,,,ওকে দেখতেই একজনের মুখে বড়সড় একটা হাসি আর অন্যজনের মুখে সেই হাসিটা আসতে চাইলেও এটিটিউডের বশে তা আনতে চাইছেন না হাসির মালিক এটা বুঝতে পারছে নিধী,,,,তারপর নিধী আর ওদের দিকে না তাকিয়েই রাস্তার পানে এগোতে শুরু করলো রিক্সার খোঁজে,,,,,)
নিহানঃআরো নিধী কোথায় যাচ্ছো,,,,আমার গাড়িতে চলে আসো একসাথে বাড়ি যাবো,,,,,??
নিরবঃতোর গাড়িতে কেনো যাবে,,,,আমার গাড়িতে গেলেওতো পারে,,,,(কথাটা শুনে তাজ্জব হয়ে নিরবের দিকে তাকায় নিহান,,,,নিরব আমতা আমতা করে বলে)আমি বলছিলাম যে তুই কষ্ট করে ওকে বাড়ি নিয়ে যাবি কেনো আমিই বরং নিয়ে যাই,,,,
নিহানঃএখানে কষ্টের কি আছে ভাইয়া,,,,নিধীকে নিয়ে যেতে আমার কোনো কষ্ট হবে না,,,,তুই বরং বাড়ি যা আমি ওকে নিয়ে আসবো,,,,,(নিরব কিছু বলবে এর আগে নিধী বললো)
নিধীঃআসলে আপনারা ভালো করেই জানেন আমি আমার কাজে বাড়ির গাড়ি ইউজ করি না,,,,আর আপনারা ২,,,,২ টা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন,,,,আমি রিক্সায় একাই চলে যেতে পারবো আপনাদের শুধু শুধু আমায় নিয়ে ভাবতে হবে না,,,,আপনারা বরং যান,,,,(এটা বলে নিধী রিক্সা দাঁড় করিয়ে চলে গেলো তারপর দুই ভাই একে ওপরের দিকে তাকালো আর নিরাশ হয়ে যার যার কারে ঢুকে চলে গেলো,,,,রাতে নিধী ছাঁদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে,,,,খনিকে মনে পরলো কাল রাতের সেই ঘটনার কথা,,,,,সবাইকে নিধী নিজের সাহসি রুপ দেখালেও যে ভিতর থেকে ততটাই ভয় এখনও পায় নিধী,,,,কাল রাতেও ওর ভয় করছিলো,,,,কিন্তু নিজেকে তখন শক্ত প্রমান করতে হয়েছে ওকে নয়তো নিজের ইজ্জত হারাতে হতো,,,,হয়তো কাল রাতে পারতো না ওদের সাথে লড়াইয়ে কিন্তু কৌশল জানা থাকায় আজ সে নিজের সম্মান রক্ষা করতে পারলো,,,,তারপর নিধীর মনে পরলো আরও দুবছর আগের একটা ঘটনার কথা,,,,সেদিনও তিনটা ছেলে নিধীর পিছন নিয়েছিলো,,,, সে এক অন্ধকারাময় রাত ছিলো,,,একা রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলো নিধী,,,,তখনি তিনটা বখাটে ওর পিছু নেয়,,,,নিধী যখন বুজতে পারে বখাটেরা ওর পিছু নিয়েছে তখন ভয়ে পালাতে শুরু করে,,,,,ওরাও নিধীর পিছন আসতে শুরু করে,,,,,একসময় বখাটেরা ওকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে নেয়,,,,নিধী ওদের কাছে নিজের ইজ্জত ভিক্ষা চাইতে শুরু করে,,,,ভয়ে তখন ওর শরীরটা কাঁপতে শুরু হয়ে গিয়েছিলো,,,,,চোখ দিয়ে বেয়ে পড়ছিলো অজস্র জল,,,,তখনি একটা শক্ত হাত ওকে বাঁচাতে এসেছিলো,,,,একটা আধ বয়সি পুরুষ আধ বয়সি হলেও বলিষ্ঠ ছিলো,,,,ছেলেগুলাকে সেই মারটাই না মেরেছিলো লোকটা নিধী শুধু দাঁড়িয়ে দেখছিলো,,,,নিধীর গায়ে একটা আচও পড়তে দেয় নি লোকটা,,,,তারপর ছেলেগুলা পালিয়ে গেলে লোকটা নিধীর পাশে এসে ওর মাথায় হাত বুলায়,,,,তারপর ওর বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়,,,,নিধীর কেনো যেনো একটু সময়ে লোকটার প্রতি অসীম বিশ্বাস চলে আসে তাই ও উনাকে বাড়ির এড্রেস বললে উনি ওকে বাড়ি পৌঁছে দেন নিজের গাড়িতে করে,,,,পথিমধ্যে উনার নিধীর সাথে ভালো করে পরিচয় হয় আসলে উনিই উনার পরিচয়টা দিয়েছিলেন নিধীকে ইজি করতে,,,,,উনি রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার ছিলেন,,,,,ছোটবেলা থেকেই নাকি উনার আর্মি হবার সপ্ন ছিলো,,,,তাছাড়া উনি কারাতে ও জানতেন,,,তাই এ বয়সেও অনেক নওজোয়ান গোন্ডারাও উনার কাছে ফিকে ছিলো,,,,উনি নিধীর বিষয়ে সবকিছু জানতে চাইলে নিধী সবকিছু না বললেও ওর বিষয়ে অনেক কিছুই বলে উনাকে তখন উনি বলেন যে এভাবে একা গোন্ডাদের কাছ থেকে ও কদিন আর বেঁচে ফিরবে ওকে লড়াই করতে শিখতে হবে,,,,উনি রিটায়ার্ড হবার পর নিজের একটা কারাতে স্কুল খোলেছেন,,,,,উনি নিধীকে সেখানে গিয়ে উনার কাছ থেকে কারাতে শিখতে বললেন,,,,তারপর নিধী উনার কাছ থেকে কারাতে শিখতে শুরু করলো,,,,নিজের রক্ষার জন্য এটা যে নিধীর জরুরি ছিলো,,,,তারপর উনি নিধীকে কারাতে শিখালেন,,,, নিতান্তই মেয়েরা ছেলেদের থেকে শক্তির দিক থেকে অনেকটা দূর্বল হয় তাই ওদের থেকে বাঁচতে কিছু কৌশলও দরকার তাই উনিই নিধীকে নিজের সাথে পেপার স্প্রে,,,,ছুড়ি এসব রাখতে বলেছেন,,,,এসব ব্যবহারের কৌশলও শিখিয়ে দিয়েছেন,,,,উনি তখন উনার স্কুলে ফ্রিতেই নিধীকে যোগ্য করে তোলেছিলেন,,,,নিধী উনাকে টাকা দিতে চাইলেও উনি তা নেন নি,,,,নিধীও পরে জোর করে নি কারন উনি ওকে নিজের মেয়ের জায়গা দিয়েছিলেন কারন উনার কোনো পরিবার ছিলো না সবাই গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছিলো,,,,উনি ওকে নিজের মেয়ের মতোই দেখতেন তাই নিধীও উনার অনুভুতির অমর্যাদা করে নি,,,,,কিন্তু তার কয়েকমাস পরে উনিও কার এক্সিডেন্টে মারা যান,,,,নিধীর সেদিন অনেক খারাপ লেগেছিলো,,,,উনি মারা গেলেও নিধীর মনে আজীবন গুরুর পদে রয়ে যাবেন উনি,,,,আজ উনার জন্যেই নিধী এতো যোগ্য,,,,যতই যোগ্য হোক তা সব মানুষের সামনে,,,,মনের ভয় টা আজও তাজা,,,,কাল রাতেও নিধীর অনেক ভয় করছিলো কিন্তু তা সেই গুন্ডাদের বুঝতে দেয় নি,,,,কারন ওর গুরু ওকে বলেছিলেন মনে যতই ভয় থাকুক না কেনো কাউকে তা দেখানোটা দূর্বলের কাজ,,,,যা মানুষকে সফল হতে বাঁধা দেয়,,,,কাল রাতে ওই ছেলেগুলোকে ঘুষি মেরে রাস্তায় ফেলার পর ওদের চোখে পেপার স্প্রে মেরে দিয়েছিলো নিধী নায় হয়তো ও কালকে সেই তিনটা রাক্ষসের সাথে পেরে উটতো না,,,,তখন আচমকা ভয় কাজ করছিলো নিধীর ভিতর তা কাউকে না দেখালেও এখনও যেনো সে ভয়টা খনিক কাজ করছে ওর ভিতর,,,,তখনি কাঁদে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে নিধী,,,,খনিকটা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে পিছনে তাকায়,,,,)
নিরবঃকি হয়েছে এমন চমকে উঠলে কেনো,,,??
নিধীঃকিছু না,,,,(এটা বলে চলে যেতে গেলে নিধীর হাত ধরে নেয় নিরব,,,,নিধী ঝাটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে রাগি চোখে তাকায় নিরবের দিকে)
নিরবঃহয়েছে আর রাগি লুক দিতে হবে না,,,,আমি খারাপ মাইন্ডে তোমার হাত ধরিনি,,,তুমি আমায় যতটা খারাপ ভাবো ততটা খারাপ নয় আমি,,,,একটু কথা বলার ছিলো তোমার সাথে তাই হাতটা ধরে আটকাতে চাইছিলাম মাত্র,,,
নিধীঃআমি কোনো কথা বলতে চাই না আপনার সাথে,,,,
নিরবঃআমি তো বলতে চাই,,,,দেখো আজ আমি ঝগড়া করতে আসি নি,,,,একটু কথা বলতে এসেছি তোমার সাথে আশা করি ফিরিয়ে দেবে না,,,,,
নিধীঃ(নিরবের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে)হুম বলেন কি বলবেন??
নিরবঃবেশি কিছু না,,,,শুধু একটাই কথা জিজ্ঞেস করতে চাই যে আজকে অফিসে তুমি আমাকে বাঁচালে কেনো??তুমি তো আমায় ঘৃণা করো,,,আমার কিছু হয়ে গেলেতো তোমার খুশি হওয়ার কথা ছিলো,,,,কিন্তু তুমি তখন নিজের প্রাণের পরোয়া না করে আমায় বাঁচালে,,,,তা কেনো শুনতে পারি,,,,??
নিধীঃআপনিও তো তখন আমায় বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন,,,,যেহেতু নিজেই প্লেনটা করেছিলেন তারপরও ,,,,তবে তখন কেনো বাঁচাতে এসেছিলেন জানতে পারি তাও নিজের প্রাণের পরোয়া না করে,,,,
নিরবঃতুমি কি করে জানলে তখন তা আমি করেছি,,,,??
নিধীঃদেখেন স্যার তখন সেখানে পানিটা হয়তোবা এমনি এমনি পরে যেতেও পারে এটা স্বাভাবিক কিন্তু ছুড়িটা এভাবে সেখানে সুন্দর করে দাঁড় না করিয়ে রাখলে ও তো আর নিজে থেকে দাঁড় হতে পারবে না,,,,
নিরবঃহুম,,,তুমি দেখছি খুব ইনটেলিজেন্ট,,,আসলে বললাম না যে আমি এতোটাই খারাপ না তাই হয়তোবা তখন আমার ভিতরের ভালো মানুষটা খনিকের জন্য উদয় হয়েছিলো তাই তোমাকে বাঁচাতে এসেছিলাম,,,,তা তুমি আমায় কেনো বাঁচালে বললে না তো??
নিধীঃআমার কাছে কাউকে বাঁচানোর তেমন কোনো কারন থাকতে পারে না স্যার,,,,আমি তখন আপনাকে বাঁচিয়েছি শুধু মনুষ্যত্বের খাতিরে,,,,আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলেও হয়তো আমি এমনই করতাম,,,,(জবাবটা শুনে খুশি হতে পারলো না নিরব,,,,হয়তো ও অন্য কোনো আনসার আশা করছিলো,,,,)
নিধীঃওকে এখন চলি অনেক রাত হয়েছে,,,, (এটা বলে নিধী পিছন মুড়ে গেলে)
নিরবঃসরি নিধী,,,,,(নিধী কথাটা শুনে আচমকা পিছনে তাকায়,,,,)এখানে অবাক হচ্ছো কেনো নিধী,,,,আমি সত্যিই এতোটা খারাপ নয় যতটা তুমি ভাবো,,,,কালকের ওই বিষয়টার জন্য এখন সত্যিই আমার খারাপ লাগছে তাই সরি বলছি,,,,আসলে আমার মতে আমি কখনোই ভুল করি না,,,,কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কালকে আমি সত্যিই খারাপ করেছি,,,,তাই সরি,,,,
নিরবঃইট’স ওকে স্যার,,,,আপনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে গেছেন এটাই বড়,,,,আমার আপনার উপর ওটা নিয়ে এখন আর কোনো ক্ষোভ নেই,,,,বাট আপনি সরিও বলতে জানেন তা জানা ছিলো না আমার,,,,
নিরবঃযাক এর মানে আমায় মাফ করেছো তাহলে,,,,শান্তি পেলাম মনে,,,,হুম এর আগে কখনো সরি বলি নি কাউকে তুমিই ফাস্ট,,,,তার মানে তুমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করতে পারে,,,,(খনিকটা মসকরা করে)
নিধীঃআমি যেটা নয় সেটা ভাবতেও চাই না স্যার,,,,
নিরবঃনিজেকে এতো কম ভাবাও ঠিক নয় নিধী,,,,হয়তোবা তোমার ভাগ্যে অনেক ভালো ভালো জিনিস লিখা আছে যা তুমি হয়তো দেড়িতে পেতে পারো,,,,যাকগে এসব ভাগ্যে আমি তেমন বিশ্বাস করি না,,,,আর আজকে এমন ভালো ভালো কথা কেনো বলছি আমি তা নিজেও জানি না,,,,আচ্ছা বাদ দাও এসব এটা বলো তুমি কি আমার ফ্রেন্ড হবে,,,,হাতটা সামনে বাড়িয়ে)
নিধীঃসরি স্যার,,,,আমি একা থাকতেই ভালোবাসি,,,,আর আমার কোনো ফ্রেন্ড চাই না আর আমার যতটুকু মনে হয় আপনিও একটা রাস্তার মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাইবেন না,,,,ও
তাই চললাম আমার ঘুম পাচ্ছে অনেক,,,,,
(নিধী চলে যেতে নিলে নিরব ওকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিলিয়ে ধরে নেয় ওকে,,,,নিধী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে শুরু করেছে,,,,)
নিরবঃভালোভাবে কথা বলছি বলেই এটিটিউড দেখাচ্ছো না,,,,ঠিকই রাস্তার মেয়েদের সম্মান দেখাতে নেই,,,,
নিধীঃএসে গেলেন না নিজের আসল রুপে,,,,আমি জানতাম আপনি কখনোই সুধরাবেন না,,,,পশু যতই মানুষের চামড়া পড়ে নেক পশু তো পশুই হয়,,,,আপনি শুধুই ঘৃণার যোগ্য,,,,আর আমি আপনাকে শুধুই ঘৃণা করি,,,,
নিরবঃএটা কিন্তু একটু বেশি বলে ফেলছো নিধী,,,,পরে না হয় পস্তাতে হয় তোমাকে,,,
নিধীঃকি করবেন আপনি,,,,গুন্ডা পাঠাবেন আবার আমার রেপ করার জন্য,,,,না আবার কোনো প্লেন করবেন আমাকে আহত বা নিহত করার,,,,যা করার তাই করুন নিধী আপনাকে ভয় পায় নি আর পাবেও না,,,(এটা বলে নিরবকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ছাঁদ থেকে বেড়িয়ে যাবে তখনি সামনে থেকে আসে নিহান এক হাতে গ্লাস আর অন্য হাতে ওষুধ,,,,)
নিহানঃকি নিধী,,,,আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজছি আর তুমি এখানে,,,,ডাক্তার যে ওষুধ লিখেছিলেন তা তো আনও নি আর খাও নি,,,,,তাই আমিই নিয়ে এলাম,,,,এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি,,,,নাও ওষুধগুলা খেয়ে নাও আর রেস্ট করো গিয়ে,,,,
নিধীঃথ্যাংক্স বাট আমি ঠিক আছি আপনার আমার খেয়াল রাখতে হবে না,,,,,(নিধী চলে যেতে গেলে নিহান ওকে সামনে থেকে আটকায় আবার)
নিহানঃতুমি জেদি হলে আমি সুপার জেদি,,,,ওষুধতো তোমাকে খেতেই হবে নয়তো আমি তোমাকে এখান থেকে যেতেই দেবো না,,,,,আর একটু ওষুধই তো খেতে বলছি অন্য কোনো আবদার তো আর করছি না,,,,খেয়ে নাও প্লিজ,,,,,
(তারপর নিধী কোনো রাস্তা না পেয়ে ওষুধটা খেয়ে নিলো,,,,না খেলে এই নাছোরবান্দা আবার পিছন ছাড়বে না,,,,তারপর ওষুধটা খেয়ে নিধী আর কিছু না বলে চলে গেলো সেখান থেকে,,,,নিধী ওষুধ খেয়ে নেওয়ার অনেক খুশি হলো নিহান,,,,এদিকে ওদের একসাথে দেখে এতোক্ষণ জেলাস হচ্ছিলো পিছনের জন,,,,যে নিজেও জানে না এই মুহুর্তে ওর ভিতরে চলা অনুভুতিটার নাম কি,,,,,শুধুই জ্বলছিলো ওদের দেখে,,,,)
নিরবঃ(আমার সাথে ভালো করে কথাও বলতে চায় না আর নিহানের হাতে কতো সুন্দর করে ওষুধ খেয়ে নিলো,,,,ঠিকই রাস্তার মেয়েদের মাথায় চড়াতে নেই,,,,ওদের সাথে দূরব্যবহার করাই উত্তম,,,,,)
নিহানঃ(ভাইয়া এখানে কি করছে,,,,নিধীও তো এতোসময় এখানেই ছিলো,,,,এর মানে কি ও এতোসময় এখানে ভাইয়ার সাথে গল্প করছিলো,,,,,)
(দুই ভাই দুই ভাবনা নিয়ে দুজনের দিকে তাকালো,,,,তারপর একে ওপরকে কিছু না বলেই দুদিকে চলে গেলো)
চলবে……