দোটানা,পর্বঃ১২,১৩

0
1200

#দোটানা,পর্বঃ১২,১৩
#লেখিকাঃআরোহী_নুর
পর্বঃ১২

(তারপর থেকে নিধী নিজের ডেক্সে বসে কাজ করতে থাকলো এদিকে দুই ভাই নিজেদের কেবিন থেকে এটা ওটা বাহানা করে বার বার এসে নিধীর দ্বিধার করে যাচ্ছে,,,,এখন দুজনই ভাবছে কি করে নিধীকে পটানো যায়,,,,যেহেতু দুজন কম্পিটিশনে আছে তাই যাই করতে হবে একটু ভেবে চিন্তে করতে হবে,,,,নিহানের ভাবনা ভাবনাই রয়ে গেছে কিন্তু ইতিমধ্যে নিরব একটা বুদ্ধি পাকিয়ে নিয়েছে আজ ও নিধীকে নিয়ে বেড়াতে যাবে কিন্তু তা তো আর সহজ ভাবে হবে না তাই একটা শয়তানি বুদ্ধি আয়ত্ত করলো,,,,কিছু একটা গভীরভাবে ভাবার পর ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি এনে আদনান সাহেবকে ফোন করলো,,,,আদনান সাহেব ফোন উঠালে উনাকে নিহানকে বাড়িতে ডাকাতে বললো এমনি যেকোনো একটা কাজে আর এটা যে নিরব করতে বলেছে তা নিহানকে জানাতে বারন করলো,,,,বাবা কিছুই বুঝতে পারলেন না,,,,নিরব অনেক কিছু বলে বাবাকে তা করতে বাধ্য করলো,,,,,আদনান সাহেব কারনটা জিজ্ঞেস করলেও বললো না,,,,আদনান সাহেব কারন না জানলেও যেনো আন্দাজ করতে পারছেন যে বিষয়টা নিধীকে নিয়েই হবে,,,,,,কিন্তু কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না এ দুই ছেলেকে নিয়ে যে বিরাট বিপাকে আদনান সাহেব,,,,অবশেষে নিরবের কথামতো এমনিতেই একটা কাজের কথা বলে নিহানকে বাড়ি ডাকালেন,,,,,নিহান যেতে চাইলো না কিন্তু ওর ডেড ডেকেছেন না গেলেও কেমন হয় তাই চলে গেলো,,,,,নিরব তো মহাখুশি,,,,,তারপর নিধীকে কেবিনে ডাকালো কিছু কাজে নিধী কেবিনে গেলো হঠাৎ ওর নজর পড়লো নিরবের হাতের উপর দুই হাতের দশ টা আঙ্গুলই ব্যান্ডেজ করা,,,,,)

নিধীঃস্যার আপনার হাতে কি হয়েছে??

নিরবঃকি আর বলবো নিধী স্টোরুমের আলমারি থেকে কিছু ফাইল্স আনতে গিয়েছিলাম হঠাৎ ভুলবশত আলমারির দরজার ফাঁক দিয়ে দুটো হাতই ঢুকে গিয়েছিলো আর তারপর হাতটা বার করতে গিয়ে ভুলবশত হাতটা কেটে গেছে,,,,,

নিধীঃদুটো হাতই,,,,,(আবাক হয়ে)তাও আলমারির দরজার ফাঁকে ঢুকে,,,,আপনি ফাইল্স আনতে গিয়েছিলেন না হাত কাটাতে,,,,,আমাকে বললেই পারতেন আমি এনে দিতাম নিজে কেনো গেলেন??

নিরবঃতুমি সারাদিন কতো কাজ করো তাই এই ছোট্ট একটা কাজের জন্য তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাইছিলাম না আর তাই নিজেই গিয়েছিলাম ফাইল্স আনতে কিন্তু হাতটা কেটে গেলো,,,,বড় কষ্ট হচ্ছে আমার,,,,(সত্যিই একটা পাথর,,,,, দেখছে হাতটা কেটে গেছে কই একটু আদর যত্ন করবে তা নয় শুধু শুধু সন্দেহ করছে আমায়,,,,আমিও একটা হাদারাম এতো বড় হয়ে গেছি ভালো করে একটা বাহানাও দেখাতে পারি না,,,,)

নিধীঃতবে হাতটা ব্যান্ডেজ কে করলো??এক হাত দিয়ে তো আর আরেক হাত ব্যান্ডেজ করা যাবে না যেহেতু আপনার হাত কেটে আছে,,,,,,??

নিরবঃ(এটা মেয়ে না কোনো সি.আই.ডি,,,,,,আজ দেখছি ফাঁসিয়েই শান্তি হবে,,,,,)আসলে,,,,মানে(তখন ম্যানেজার দরজায় নক করলো),,,,,

ম্যানেজারঃমে আই কাম ইন স্যার,,,,,

নিরবঃএই তো পেয়েছি,,,,

নিধীঃকি পেয়েছেন??

নিরবঃম্যানেজারকে,,,,

নিধীঃমানে????

নিরবঃ(আমতা আমতা করে,,,,)মা মানে ম্যানেজার সাহেব আমার হাতে ব্যান্ডেজ করেছেন,,,,,আরে ম্যানেজার সাহেব ভিতরে আসেন আর বলেন আপনি কি করে আমার হাতের ব্যান্ডেজ করেছেন,,,,,কতটা কেটে গেছিলো আমার হাত,,,,আমি কতো কষ্ট পেয়েছিলাম,,,,বলেন না…..(ম্যানেজার কিছুই বুজতে পারছে না ভ্যাবাচেকার মতো তাকাচ্ছে নিরবের দিকে নিরব শুধু ইশারা করে বুঝাচ্ছে ওর কথায় সম্মতি জানাতে,,,,নিধী একবার ম্যানেজারের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার নিরবের দিকে,,,,নিধী যখনই নিরবের দিকে তাকাচ্ছে তখনই নিরব নিজের ভাবভঙ্গি ঠিক করে নিচ্ছে আর পরক্ষণেই ম্যানেজারকে ইশারা করছে,,,,,)

নিধীঃকি হলো ম্যানেজারসাহেব চুপ করে আছেন যে,,,??

নিরবঃহ্যা ম্যানেজার সাহেব বলেন আপনি কি করে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করেছিলেন??(আবারও ইশারা করছে ওর কথায় সম্মতি জানাতে,,,,শেষমেষ অবস্থা বুঝতে পেরে ম্যানেজার সম্মতি জানালো)

ম্যানেজারঃহ্যাঁ হ্যাঁ স্যারের হাতটা বড্ড কেটে গিয়েছিলো তারপর আমি দেখতে পেয়ে স্যারের হাত ব্যান্ডেজ করেছি,,,,,স্যারের কি কষ্ট যে হয়েছে তা শুধুই আমি জানি,,,,

নিরবঃ(যাক ডেড একটা ম্যানেজার রেখেছে বটে একদম দেখছি কাজের বান্দা,,,,,)আচ্ছা ম্যানেজার সাহেব আপনি এবার আসেন,,,,

নিধীঃআপনার হাতটা যখন কেটে গেছে তবে আপনি বাড়ি চলে যান,,,,এমনিতেই তো অফিস আওয়ার শেষ হতে এলো আর কাটা হাত নিয়ে তো আপনি কোনো কাজও করতে পারবেন না,,,,,

নিরবঃবাড়ি যাবো তো ভালো কথা কিন্তু ড্রইব কি করে করবো আমি তো পারবনা হাতে বড্ড ব্যাথাও করছে,,,,,

নিধীঃকোনো ব্যাপার না আমি নিয়ে যাবো আপনাকে,,,,আমি তো ড্রাইব জানি(আসলে অনেক কাজে দরকার হবে বলে নিধী ড্রাইবিং শিখে নিয়েছে আর কথাটা নিরব জানে,,,,,আর নিরব জেনেবুঝে প্লেন করে এসব করছে আর প্লানটা ওর কাজেই লাগছে,,,,)

নিরবঃনা তোমাকে কষ্ট দিয়ে কি হবে??

নিধীঃনা না কষ্ট কিসের,,,,আপনি আমার বস আর আপনার হেল্প করার আমার দায়িত্বের ভিতর পরে,,,,,আমি আপনাকে নিয়ে যাবো,,,,কিন্তু আপনার কোনো অসুবিধা হলে থাক,,,,,,

নিরবঃ(বলে কি এটার জন্যই এতোকিছু করলাম আর এখন কি না আমার অসুবিধা হবে এটা কোনো কথা হলো)না না আমার কেনো অসুবিধা হবে,,,,আসলে আমি তোমাকে কষ্টে ফেলতে চাইছিলাম না কিন্তু তুমি এতো করে যখন বলছো তবে চলে যেতেই পারি তোমার সাথে,,,,,

নিধীঃহুম,,,,,

(নিরব তো মহাখুশি অফিস আওয়ার শেষে গাড়ি সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে নিধী বেড়িয়ে আসতেই এক ফালি হাসি নিয়ে তাকালো ওর পানে নিধী পাশে এসে গাড়ির পিছনের দরজা খুলে দিলো নিরব উঠবে বলে,,,,)

নিরবঃআসলে আমি পিছনে বসতে কমফোর্টেবল না,,,,,

নিধীঃঅহ আচ্ছা,,,,(এটা বলে সামনের দরজা খুলে দিলো তারপর নিধীর পাশের সিটে বসে পরলো নিরব,,,,নিধীও গাড়িতে উঠে ড্রাইব করতে শুরু করলো)

নিরবঃ(যাক অবশেষে এই মহারানির সাথে একা কিছু সময় কাটাতে পারবো,,,,,)

(তারপর নিরব নিধীকে এটা ওটা জিঙ্গেস করতে থাকলো ওর পছন্দ অপছন্দ ভালোলাগা খারাপলাগা নিয়ে,,,,,নিধী আলাদা করে বিশ্লেষন করে কিছু বললো না,,,,যেগুলোর উত্তর ওর কাছে আছে সহজ আর অল্প ভাষায় সেগুলোর আনসার করলো,,,,,নিরব নিধীর সাথে কথা বলে এতটুকুতো বুঝতেই পারলো ওর জীবনে এখন পছন্দ অপছন্দ ভালো লাগা না লাগা কিছুই রয়ে যায় নি,,,,,শুধুই আছে মাথার উপর এক গাদা দায়িত্ব,,,,, নিধীকে ওর বন্ধ বইয়ের মতো মনে হচ্ছে যাকে নিরব গভীরভাবে পরতে চায়,,,,,হাড়িয়ে যেতে চায় সেই বইয়ের ভাষাতে,,,,,তারপর হটাৎ নিধী বাড়ির রাস্তার মোড় নিবে তখনি)

নিরবঃআরে আরে কি করছো,,,,বা দিকে মোড় নাও,,,,(নিধী ঝটপট ব্রেক কষলো)

নিধীঃবাড়ি তো ডান দিকে তবে বা দিকে যাবো কেনো??

নিরবঃবা দিকে পার্ক আছে আর আমি এখন পার্কে যাবো,,,,,

নিধীঃকিন্তু আমি পার্কে যাবো না,,,,আমার বাড়িতে কাজ আছে,,,,তাছাড়া এভাবে আপনার সাথে যাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না,,,,

নিরবঃওকে তবে তুমি যেও না,,,,আমি তো যাবো,,,,তুমি না এলেও যেতাম,,,,,এখন তো আমার হাত কেটে আছে কষ্ট করে যেতে হবে তা ও যাবো,,,,তুমি না হয় যাও এমন অবলা মানুষের সাথে থেকে নিজের মুল্যবান সময় খারাপ করো না,,,,চলে যাও,,,,(আল্লাহ সত্যি যেনো আবার চলে না যায়,,,,,আল্লাহ রহম করো)

নিধীঃহাতটা যখন কেটে আছে তবে আজ পার্কে না গেলেও পারেন

নিরবঃনা আমি পার্কে আজ যাবোই তুমি চলে যাও আমি একাই যাবো,,,,দাও আমি ড্রইব করছি,,,,

নিধীঃআচ্ছা কষ্ট করতে হবে না আমি নিয়ে যাচ্ছি,,,,তবে বেশিক্ষণ থাকবো না ওখানে,,,,

নিরবঃওকে,,,,,(খুশি হয়ে)

(এদিকে নিহান বাড়িতে শান্তি পাচ্ছে না নিধী এখনো আসে নি,,,,সেই কভে অফিস আওয়ার শেষ হয়েছে,,,তাছাড়া নিরবও তো আসে নি তাই কেমন জানি খটকা লাগছে ওর,,,,নিহান,,,,নিরব নিধীকে ফোন করছে কারো ফোনই লাগছে না,,,,নিরব ইচ্ছে করে ফোন উঠাচ্ছে না আর নিধী ড্রইভ করছে তাই তুলতে পারছে না,,,,,তারপর নিহান ম্যানেজারকে ফোন করে জানতে পারলো নিরব নিধী একসাথেই বেরিয়েছে,,,, সাথে সাথে এটাও বলেছে যে নিরবের হাত কেটে গেছে তাই নিধী ড্রইভ করে ওকে নিয়ে আসবে,,,,,কারন নিরব যাওয়ার আগে ম্যানেজারকে বলে গেছে যে বাড়ি থেকে কেউ ফোন করলে উনাকে এটা বলে দিতে আর হাত কাটার সত্যটা লুকিয়ে রাখতে,,,,,নিহানের ব্যাপারটা সন্দেহ লাগলো,,,,,ও ভালোয় বুঝতে পারছে নিরব নিধীর সাথে আসবে বলে এসব ধান্দা করেছে ও কিছুটা আগেও আন্দাজ করতে পেরে গেছিলো যখন ওর ডেড ওকে বাড়ি ডেকেছেন কারন বাড়ি আসার পর উনি ওকে
দিয়ে তেমন কোনো কাজ করান নি,,,,,তাই ও বুঝতে পারছে এসব নিরবেরই প্লান,,,,ও তো বিষ খেয়ে বিষ হজম করছে,,,,,বারান্দায় গিয়ে বসে আছে কখন নিধী আর নিরব আসবে সে পথ চেয়ে,,,,ফোন করছে কিন্তু নিরব উঠাচ্ছে না আর নিধী নিহানের ফোন তেমন উঠায় না কারন নিহান ফোন দিয়ে ওর সাথে ভালো ভালো কথা বলার চেষ্টায় থাকে সর্বক্ষণ যা ওর কাছে বিরক্ত লাগে,,,,,তারপর পার্কে গিয়ে নিরব এক প্রকার জোরপূর্বক নিধীকে নিয়ে পার্কে কিছু সময় হাটাহাটি করলো,,,,নিধীর বিষয়ে অনেক কিছুই জানার চেষ্টা করলো,,,,নিধী বেশি কিছু বললো না একটু একটু বললো যা বলতে ইচ্ছে হলো,,,,,তারপর নিধীর জোরেই দুজন বাড়ি চলে আসলো নিরব আরও কিছুক্ষণ বসতে চাইলেও নিধী মানলো না,,,,এদিকে নিহান রাগে গজ গজ করছে বসে বসে,,,,এদিকে নিরবকে ফাসানোর ধান্দা মনে মনে এটে নিয়েছে,,,,,নিরব ও নিধী বাড়িতে প্রবেশ করে গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই নিহান দৌঁড়ে গিয়ে নিরবকে বললো)

নিহানঃআরে ভাই তুই ঠিক আছিস তো ম্যানেজার সাহেব বললেন তোর নাকি হাত কেটে গেছে,,,,,তা কতটুকু কেটেছে দেখি বলেই টান দিয়ে নিরবের হাতের অঙ্গুলে করা সব কয়টা ব্যান্ডেজ খুলে নিলো,,,,নিধী তাকাতেই বুঝতে পেলো নিরবের হাতে কিছুই হয় নি,,,,নিরব নিধীর দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচেকা হয়ে আছে,,,,কি বলবে এবার নিধীকে,,,,,নিধী যে ওকে ভুল বুঝবে,,,,নিহান মুচকি মুচকি হেসে বললো)

নিহানঃআরে ভাই নিরব তোর হাতে দেখি কিছুই হয় নি একদম ঠিক আছে তবে তুই নিধীকে মিথ্যে বললি কেনো??

নিধীঃআপনি আমায় মিথ্যে বললেন স্যার,,,,,আমায় বোকা বানিয়ে এতসময় এসব করালেন,,,,কেনো স্যার,,,,আমি তো ভেবেছিলাম আপনি বদলে গেছেন কিন্তু আপনি হয়তো এখনও আমার কাছ থেকে বদলা নেওয়ার মুডে আছেন আমাকে ছোট করার ধান্দায় আছেন,,,,ছি স্যার আপনি সত্যিই শুধু ঘৃণারই যোগ্য,,,,(এটা বলে নিধী ভিতরে চলে যাবে তখনি নিরব ছুটে গিয়ে নিধীর হাত ধরে নেয়,,,,, নিহানের তাতে খারাপ লাগলেও কিছু বললো না যেহেতু নিরবকে তো এমনিতেই ফাঁসিয়ে দিয়েছে,,,,)

নিরবঃনিধী তুমি আমায় ভুল বুঝছো,,,,, আমি সত্যিই বদলে গেছি আর আজকে এসব তোমাকে নিচু করার জন্য করি নি বিশ্বাস করো,,,,

নিধীঃছাড়েন আমায় করি না আমি আপনাকে বিশ্বাস,,,,, (ঝাটকা দিয়ে নিরবের হাত ছাড়িয়ে,,,) আপনি কখনোই ভালো হবেন না,,,,,(এটা বলে নিধী আবারও যেতে চাইলে)

নিরবঃতবে তোমার এজন্যই খারাপ লাগছে যে আমার হাত সত্যি সত্যিই কেটে যায় নি,,,,,এসব মিথ্যে ছিলো,,,,তবে এটা যদি সত্যি হয়ে যায় তখন তো তুমি আমায় বিশ্বাস করবে তাই না,,,,,ক্ষমা করে দিবে আমায়,,,,তবে চলো ওটাও সত্যি করে দেই,,,,(এটা বলেই নিরব গাড়ির গ্লাসে দিলো একটা শক্ত ঘুষি তারপর তৎক্ষনাৎ ওপর হাত দিয়েও দিলো যাতে গাড়ির গ্লাস ফেটে কাচের কিছু টুকরো ঢুকে গেলো নিরবের হাতে,,,,হাত কেটে রক্ত ঝরছে অনেক,,,,বিষয়টি দেখে নিহান আর নিধী ছুটে গেলো ওর কাছে,,,,,)

নিহানঃএটা কি করলি ভাইয়া তুই,,,,(অস্থির হয়ে)

নিধীঃআপনি পাগল হয়ে গেলেন না কি,,,,,এটা কি করলেন,,,,??

নিরবঃমিথ্যাকে সত্য করলাম (ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি এনে)

নিধীঃচলেন ঘরে চলেন আপনার হাত দিয়ে অনেক রক্ত ঝরছে,,,,,,মি.নিহান প্লিজ ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে আসেন জলদি,,,,,(তারপর নিহান ছুটে গিয়ে ফাস্টএইড বক্সটা আনলো আর নিধী নিরবকে নিয়ে সোফায় বসালো,,,,তারপর নিধী নিরবের হাতের কাচ বের করে ওতে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করতে শুরু করে দিলো,,,,পরম যত্নে নিধী নিরবের হাতটা ব্যান্ডেজ করছে,,,,নিরব নিধীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ওর জন্য নিধীর কেয়ার করা দেখছে,,,,,মনে ওর অনেক তৃপ্তি কাজ করছে,,,,এদিকে নিহানের ভাইয়ের হাত কেটে যাওয়াতে খারাপ লাগলেও তার থেকে বেশি খারাপ লাগছে নিধীর নিরবের জন্য এতো কেয়ার করা দেখে,,,,নিধী নিরবের হাত ধরে ধরে ব্যান্ডেজ করছে মাঝে মাঝে ফোও দিচ্ছে যাতে ওর লাগানো ওষুধটায় নিরবের হাতের জ্বালাটা কম করে,,,,নিহান এসব সহ্য করতে পারছে না,,,,,)

নিহানঃনিধী তুমি কেনো কষ্ট করে বেন্ডেজ করছো দাও আমি করে দেই,,,,

নিরবঃনিধী যখন করছে ওকে করতে দে,,,,একজন করলেই হয়,,,,

নিধীঃহ্যাঁ মি.নিহান আমিই করে নেই এই তো হয়েই এসেছে,,,,(নিহান আর কি করবে কিছুই ওর করার নেই শুধুই নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে জ্বলছে,,,, সবাই যার যার রুমে ছিলেন এতক্ষণে বাইরে এসে নিরবের হাতের অবস্থা দেখে সবাই অস্থির,,,,উনারা কারন জানতে চাইলে নিধী বলবে এর আগেই নিরব নিহান কারনটা পাল্টে নেয়,,,,ওরা আসল কারনটা উনাদের বলতে চায় না কারন কারনটা শোনার পর সবাই না জানি কি ভাববেন নিধীর উপর একটা সন্দেহের আঙ্গুলও উঠতে পারে তাই,,,,ওরা চায় না ওদের জন্য নিধী দোষী হোক,,,,,এদিকে নিধী ওদের মিথ্যা বলার কারন বুঝতে না পেরে হতবম্ভ,,,,তবে আসল কারনটা ও বললো না যেহেতু দুই ভাই আগেই মিথ্যা বলে দিয়েছে,,,,নিধী ভাবলো হয়তো নিরব নিজে থেকে হাত কেটেছে এটা জানতে পারলে ঘরের সবার খারাপ লাগবে তাই হয়তো ওরা তা বলতে চাইছে না,,,,তাই নিজেও বললো না,,,,,তারপর রাতে নিধী সোফায় বসে কিছু কাজ করছে লেপটপে,,,,নিহানও ওর পাশে বসে কাজ করছে নিজের লেপটপে,,,,আসলে কাজ তো একটা বাহানা মাত্র ও এখানে বসেছে শুধু নিধীকে দেখবে বলে ওর পাশে থাকবে বলে,,,,কাজ করছে আর আঁড়চোখে নিধীকে দেখছে,,,,নিধী এক মনে কাজ করে যাচ্ছে এদিক ওদিক না তাকিয়েই,,,,বাইরে থেকে বাতাস এসে দোলিয়ে দিচ্ছে নিধীর ঘন কালো চুলগুলো,,,,,নিহান ঘোর লাগা নজরে তাকিয়ে আছে ওর দিকে,,,,,ওর মনে হচ্ছে এক মায়াবতী পরী ওর সামনে বসে আছে,,,,এদিকে ঘোর শুধু নিহানের লাগে নি লেগেছে উপরে দাঁড়িয়ে নিধীকে দেখতে থাকা অন্য কারও আর সে আর কেউ নয় নিরব,,,,,কিছুক্ষণ ঘোরলাগা নয়নে নিধীর দিকে তাকিয়ে মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি আয়ত্ত করে নিচে নেমে আসলো,,,,,তারপর টেবিলের কাছে গিয়ে জগ থেকে পানি ঢালতে গিয়ে ইচ্ছে করেই একটা চিৎকার করলো নিধীকে শুনিয়ে যাতে নিধী মনে করে ও জগ থেকে পানি ঢালতে গিয়ে হাতে ব্যাথা পেয়েছে,,,,নিধীও তাই ভাবলো,,,,ছুটে আসলো নিরবের কাছে)

নিধীঃআরে আরে কি করছেন পানি পান করবেন কাউকে ডাকলেই তো পারেন,,,,,নিজে কেনো ঢালতে গেলেন??

নিরবঃকি করবো কাউকে কষ্ট দিতে চাইছিলাম না,,,,তাই,,,,

নিধীঃএখানে কষ্টের কি আছে দাঁড়ান আমি ঢেলে দিচ্ছি,,,,,(পানি গ্লাসে ঢেলে দিয়ে)এই নিন খেয়ে নিন,,,,,

নিরবঃঢেলে দিয়ে লাভ কি হাত দিয়ে তো খেতেও পারবো না,,,,

নিধীঃসমস্যা নেই আমি পান করিয়ে দিচ্ছি,,,,নিন পান করেন,,,,,

নিহানঃ(জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে তাও নিজেকে সামলে বললো)আরে নিধী তুমি কেনো কষ্ট করছো আমি পান করিয়ে দিচ্ছি তুমি তোমার কাজ করো,,,,,

নিরবঃআমার মনে হয় না নিধীর আমাকে পানি পান করাতে কোনো প্রবলেম হচ্ছে বলে,,,,,তোমার কি কোনো প্রবলেম হচ্ছে নিধী,,,,,প্রবলেম হলে পান করাতে হবে না,,,,,

নিধীঃনা না প্রবলেম হবে কেনো,,,,,আর আমি যখন উঠে চলেই এসেছি তবে পানিটা পান করিয়েই যেতে পারি এতে কোনো সমস্যা নেই,,,,নিন পান করেন,,,,,,

(তারপর নিধী নিজের হাতে নিরবকে পানি পান করাতে শুরু করলো আর নিরব নিহানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে একটা ডেবিল হাসি দিয়ে পানি পান করতে শুরু করলো,,,,,নিধী নিরবের প্লানটা বুঝতে না পারলেও নিহান ভালোয় বুঝতে পারলো,,,,কিন্তু ও এখন কি করবে কিছু করার নেই ওর,,,,রাগে তো নিজের শরীর জ্বলছে,,,,ইচ্ছে করছে মাটি ফাটুক আর ও ওতে ঢুকে যাক,,,,অবশেষে কি একটা ভেবে কিচেনের দিকে গেলো নিহান,,,, কিছুক্ষণ পর কিচেন থেকে নিহানের চিৎকার ভেসে আসলো নিরব আর নিধীর কানে ওরা ওর চিৎকার শুনে তৎক্ষনাৎ ছুটে গেলো কিচেনের দিকে,,,,

চলবে,,,,,

#দোটানা
#লেখিকাঃআরেহী_নুর
পর্বঃ১৩

(নিধী আর নিরব ছুটে গিয়ে দেখে গ্যাসের চুলা ওন করা আর নিহানের দুটি হাতই খারাপভাবে অনেকটা জায়গা পুড়ে গেছে নিহানের হাতদুটো কাঁপছে কিছুই বলছে না নিহান চোখ মুখ শক্ত করে কষ্ট সহ্য করার চেষ্টা করছে,,,,নিধী নিরব ছুটে গেলো গিয়ে আগে নিহানের হাতে ঠান্ডা পানি দিলো,,,,তারপর নিরব বরফ নিয়ে আসলো,,,,,নিধী বরফগুলো হাতে নিয়ে ওর হাতে দিতে শুরু করলো,,,,,)

নিধীঃএসব কি করে হয়ে গেলো মি.নিহান,,,,,কতখানি পোড়ে গেছে,,,,

নিহানঃকষ্ট হচ্ছে তোমার আমার জন্য,,,,

নিধীঃআপনি হাতের যা অবস্থা করেছেন তা দেখে যেকোনো কারোরই কষ্ট হবে,,,,আপনি আসেন,,,,,, (এটা বলে নিধী ওকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে ফাস্টএইড বক্স টা নিয়ে আসলো,,,,তারপর ওর হাতটাতে মলম লাগাতে লাগলো,,,,এবার নিহানের মনে তৃপ্তি কাজ করছে,,,,,নিধী যে পরম যত্নে ওর হাতটাতেও ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে,,,,মাঝে মাঝে ফু দিচ্ছে যাতে ওর হাতে জ্বালা কম করে,,,,নিরব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব দেখছে,,,,ওরও অনেক খারাপ লাগছে নিহানের হাত জ্বলে গেছে দেখে,,,,,এদিকে নিধীর নিহানের এভাবে কেয়ার করা দেখেও তো আর খারাপ লাগারই কথা ওর,,,,,ও জানে নিহান এসব ইচ্ছে করেই করেছে তাই ওকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না,,,,এদিকে ঘরের সবাই ততক্ষণে সেখানে উপস্থিত,,,,সবাই অস্থির নিহানের জন্য)

মাঃতুই তো কখনো কিচেনে যাস না তবে আজ সেখানে কি করতে গিয়েছিলি,,,,হাতটা কতোটা জ্বলে গেছে,,,,(কেঁদে কেঁদে)

নিহানঃআসলে মা নিজের জন্য এক কাপ কফি করতে গিয়েছিলাম আর ভুলবশত এসব হয়ে গেছে,,,,(নিহান ইচ্ছে করেই এসব করেছে যাতে নিধীর কেয়ার পায়,,,,আর সবাইকে মিথ্যে বলে শান্তনা দিচ্ছে)

নিধীঃকফি চাই তবে ঘরের কাজের লোককে বলবেন নয়তো আমাকেই বললে পারতেন নিজে কেনো করতে গেলেন,,,,কতটা পোড়ে গেছে হাতটা,,,,

নিহানঃতোমার জন্য হাত কি নিজেকেও পোড়াতে রাজি আমার মেঘপরী,,,,,(বিড়বিড় করে)

নিধীঃকিছু বললেন,,,,??

নিহানঃনা না আমি আবার কি বলবো,,,,তুমি ওষুধ লাগাও,,,,

নিধীঃহুম,,,,(নিধী আবার ওষুধ লাগাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো আর নিহান নিধীকে দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো,,,,আর নিরব জ্বলতে ব্যাস্ত,,,(হা হা হা),,,,এদিকে বাবা পুরো বিষয়টাই যেনো বুঝতে পারছেন,,,,এক ছেলের হাত কাটা তো অন্য জনের হাত পোড়া তাও একসাথে উপর থেকে ছেলেদের নিধীর প্রতি আচার আচরন দেখে সম্পূর্ণটা বুঝতে পারছেন আদনান সাহেব,,,,)

আদনানঃ(ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো ঠেকছে না,,,,আমি ভালোয় বুঝতে পেরেছি আমার দুই বজ্জাত নিধী মায়ের পিছন লেগেছে,,,,বজ্জাতগুলোর মধ্যে পরিবর্তনটা আমি ঠিকই দেখতে পাচ্ছি তা যে নিধী মায়ের জন্য তাও আমি ভালোয় জানি কিন্তু একসাথে দুজন নিধী মায়ের পিছন পড়ে থাকলে যে ভবিষ্যতে এদের জীবনে কষ্ট ছাড়া কিছুই থাকবে না,,,,আমার তো নিজের বজ্জাতদের জন্য কোনো টেনশন নেই টেনশন তো বেচারি নিধীকে নিয়ে,,,,মেয়েটা জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে ওকে আর কষ্ট পেতে দেবো না আমি,,,,এই বজ্জাতদের একটা ব্যবস্থা আমিই করবো,,,,,)

(তারপর রাতে খাওয়ার টেবিলে দুই ভাই হাত টাঙিয়ে বসে আছে,,,,,সবাই এখনও খেতে আসে নি নিধী এই মাত্র সবাইকে ডেকে আসলো,,,,এসে দেখে দুই জনাব বসে আছেন সামনে খালি খাবার প্লেট নিয়ে,,,,নিধী নেমে আসতেই দুজনই নিধীর দিকে এক ফালি হাসি নিয়ে তাকিয়ে রইলো,,,,)

নিধীঃকি হলো আপনারা এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো,,,,,

নিহান+নিরবঃখাওয়াবে বলে,,,,,,(একসাথেই বললো দুজনই,,,,,বলে আবার একসাথে দুজন দুজনের দিকে তাকালো)

নিরবঃখাওয়াবে মানে,,,,নিধী তোকে নয় আমাকে খাওয়াবে…..

নিহানঃতোকে কেনো খাওয়াবে আমাকে কেনো নয়,,,??(রেগে গিয়ে)

নিরবঃকারন আমার হাত কেটেছে,,,,আমি খেতে পারছি না,,,,

নিহানঃএমনভাবে বলছিস যেনো আমি নেচে নেচে খেতে পারছি,,,,দেখছিস না আমারও হাতটা জ্বলে গেছে,,,,আমি কি করে খাবো,,,,

নিরবঃতো কি হয়েছে তোকে মা খাইয়ে দেবে নিধী আমাকে খাওয়াবে,,,,

নিহানঃতোকে মা খাওয়াবে আর নিধী আমাকে,,,,

নিরবঃআমি কি ছোট বাচ্চা যে আমায় মা খাওয়াবে,,,,

নিহানঃআমিও তো আর বাচ্চা রয়ে যাই নি যে আমাকে মা খাওয়াবে,,,,,

নিরবঃনিধী আমাকেই খাওয়াবে,,,,

নিহানঃনা আমাকে,,,,,

নিরবঃনা আমাকে,,,,

নিধীঃস্টপ ইট,,,,(চিৎকার করে,,,,নিধীর চিৎকারে দুজনই আবার চুপ),,,,,,আমি কাউকেই খাওয়াচ্ছি না,,,,আপনারা আমার এমন কেউ না যাকে আমি আদর করে মুখে তুলে খাওয়াবো,,,,আর আপনাদের আদর করে খাওয়ানোর জন্য আপনাদের মা আর দিদুন আছেন,,,,উনারাই খাওয়াবেন,,,,(ততোসময়ে সেখানে বাকি সবাই এসে পড়লেন,,,,)

দিদুঃহ্যাঁ হ্যাঁ আমার নাতিদের আমিই খাওয়াবো,,,,লক্ষি দুটি নাতি আমার,,,,চল দুজনকে খাওয়াই,,,,,তারপর দিদুন এসে দুজনকেই একসাথে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন,,,,দুজনই নিধীর পানে তাকাচ্ছে আর নিরাশ হয়ে খেয়ে যাচ্ছে,,,,মাঝে মাঝে একে ওপরকে দেখছে আর ইশারায় যেনো ঝগড়ায় মেতে আছে,,,,কারন একজনের জন্য আরেকজনের খাওয়া হয়ে উঠে নি নিধীর হাতে,,,,,নিধী নিজের আর নিজের মায়ের খাবার নিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে,,,,,নিধীর ওদের পরিবারের কোনো অনুষ্ঠানে যেমন অংশগ্রহণ করে না তেমন উনাদের পারিবারিক সময়েও ওদের সাথে থাকে না,,,,কারন ও এ পরিবারকে নিজের মানলেও উনাদের তা মানতে দিতে চায় না কারন ও একদিন চলেই যাবে তাই মায়া বাড়াতে চায় না,,,,উনারা ওকে অনেক বার বলেছেন উনাদের পারিবারিক সময়ে উনাদের সাথে থাকতে কিন্তু নিধী তো নাছোর বান্দা আবার,,,,ও নিজের সব নিজেই দেখবে,,,,একাই থাকবে কাউকেই জরাবে না জীবনে,,,যাকগে নিধী রুমে চলে গেলো দুই ভাইয়ের দিকে আর ফিরেও তাকালো না,,,,)

নিরবঃ(কি পাথর রে বাবা একে কি করে গলানো যায়,,,,, হে আল্লাহ একে গলানোর তৈফিক দাও খোদা,,,,জানি জীবনের সব পাপের সাজা দিচ্ছো আমায় কিন্তু একে কেরে নেওয়ার মতো সাজা দিও না খোদা সইতে পারবো না,,,,বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি ওকে,,,,একবার ওকে আমার জীবনে এনে দাও খোদা আমি ওকে প্রাণ দিয়ে হলেও আগলে রাখবো,,,)

নিহানঃ(মালিক তুমিই পারো নিধীর মনে আবারও আমার ভালোবাসার ছোঁয়া পাইয়ে দিতে,,,,,আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি খোদা কিন্তু আর কখনোই ওকে কষ্ট পেতে দেবো না মালিক,,,,আবার একবার ওকে আমার জীবনে এনে দাও মাওলা আর কখনো হারাতে দিবো না ওকে,,,,)

(তারপর খাওয়া শেষে দুই ভাই ছাঁদে বসে গল্প করছে,,,,)

নিরবঃধুর কই ভেবেছিলাম নিধীর হাতে খাবো শুধু তর জন্যই আজ তা পারলাম না,,,,

নিহানঃতোর জন্য তো আমিও ব্যার্থ হয়েছি নইলে আজ নিধীর হাতে খাবারটুকু খেতে পারতাম,,,,তা ভাইয়া তুই হাত কেটে ভালো করিস নি,,,,কতোটা কেটে গেছে তোর হাতখানি,,,,

নিরবঃআর তুই বুঝি হাত পুড়িয়ে অনেক ভালো করেছিস,,,,দেখেছিলি হাতে অবস্থা,,,,

নিহানঃকি করবো বল নিধীর ভালোবাসার জন্য যে প্রাণটা দিতেও দ্বিধা হবে না আমার,,,,

নিরবঃআমারও,,,,,আসলেই নিধী স্পেশাল,,,,, আমাদের মতো অমানুষদের মানুষ বানিয়ে দিলো,,,,,কতো নরপশুই না ছিলাম আমরা আর আজ একটা মেয়ের প্রেমে পাগল হয়ে দুজনই মরতে রাজি,,,,তোর মনে আছে সেদিনকের সে মমের সাথে ঘটা ঘটনা

নিহানঃভুলবো কি করে ভাইয়া,,,,৫ বছর আগে মমের রুমে কি আগুন লেগে গিয়েছিলো আর মম ভিতরে রয়ে গিয়েছিলে আর দরজাটা লক হয়ে গেছিলো ভিতর থেকে,,,,মম এসে খুলতে পারছিলেন না আগুন উনাকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে রেখেছিলো,,,,মম চিৎকার করছিলো বাঁচাও বাঁচাও বলে আমরা দুজন ধাক্কা দিয়ে দরজাটা ভেঙেছিলাম বটে কিন্তু ভিতরে যাই নি এই ভয়ে যে যদি আমাদের কিছু হয়ে যায়,,,,তারপর ডেড এসে মমকে বাঁচালেন,,,,কতো সার্থপরই না ছিলাম আমরা ভাইয়া,,,,,নিজের টা ছাড়া আর কিছুই ভাবতাম না,,,,সেদিন দরজা ভাঙার পর বার বার নিজের হাত পা দেখেছি কোথাও লাগে নি তো,,,,আর আজ দেখ কি থেকে কি হয়ে গেছি আমরা একটা মেয়ের জন্য এখন মরতেও যেনো ভালো লাগবে আমাদের,,,,,,,

নিরবঃআসলে আল্লাহ আমাদের সুধরানোর জন্যই হয়তো নিধীকে পাঠিয়েছেন,,,,,আর আমাদের পাপের সাজাই হয়তো এটা যে আমরা দুজনই নিধীকে ভালোবাসি কিন্তু পাবো তো যেকোনো একজনই,,,,

নিহানঃভাইয়া মনে আছে তোর ডেড আমাদের অন্যত্র কেনো পাঠাতে চেয়েছিলেন,,,,

নিরবঃআর কি আমাদের ভালো করবে বলে,,,,,কই আমরা তো আর অন্যত্র গিয়েও শুধরাই নি,,,,,,বরং অন্যত্র গিয়ে আরও বার বেড়েছিলাম,,,,,কিন্তু দেখ ডেড আমাদের সুধরানোর চাবি নিজের অজান্তেই নিজের ঘরে এনে রেখেছে,,,,,

নিহানঃআসলেই নিধী আমাদের সুধরানোর চাবি,,,,,

নিরবঃচল এবার ঘুমিয়ে পড়ি ফজরে উঠে আবার নামায পড়ে আল্লাহর কাছে নিধীকে চাইতে হবে,,,,

নিহানঃহুম আমারও,,,,

নিরবঃগুড,,,,,তবে আল্লাহর কাছে দোয়া করিস নিধীকে যেনো তোর ভাবী বানিয়ে দেন,,,,,,

নিহানঃদোয়া করবো তবে আমার বউ আর তোর ভাবী বানিয়ে দেওয়ার জন্য,,,,হা হা হা,,,,

নিরবঃতবে রে দাঁড়া,,,,(এটা বলে দুজনে ছুটোছুটি করতে শুরু করে দেয়,,,,,দুদিন পর এক সকালে বাড়িতে হঠাৎ করে কারা যেনো এলো,,,,সবাই তখন নাস্তা করছিলো,,,,নিধী আগেই নাস্তা করে এই মাত্র বাইরে এলো মাকেও নাস্তা করিয়ে,,,,এসেই দেখে মেইন ডোর দিয়ে কিছু লোক প্রবেশ করলেন ঘরের সবার নজর উনাদের দিকেই,,,,একটা আধবয়সী মহিলা আর পুরুষ,,,,দুটি মেয়ে যাদের পরনে পুরো কাপড় নেই,,,,আধোআধো ডিজাইন করা কাপড় পড়া,,,,,আর সাথে একটা কিউট মেয়েও,,,,যার কাপড়চোপড়ে অত্যন্ত ভদ্রতা বজায় আছে,,,,,মেয়েটা দেখতে অনেক কিউট,,,,,অনেক বেশি লম্বা নয়,,,,৫ ফুট ২ হবে নিধীর হাইট,,,,বয়সও তেমন হবে না,,,,২০ হবে,,,,নিধী থেকে দের এক বছরের ছোট হবে বলে মনে হচ্ছে,,,,,দেখতে মাশাআল্লাহ নিধীর মতোই সুন্দরী,,,,,,মেয়েটা উনাদের সবার ব্যাগপত্র বয়ে আনছে,,,এটা দেখে নিধী চাকরদের ওর কাছ থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে ভিতরে রাখতে বললো)

আদনানঃআরে মিজান কেমন আছিস,,,,,

মিজানঃএই তো ভালো আছি শালাসাহেব,,,,

আয়শাঃহুম বন্ধুর সাথে তো দেখতেই কোলাকুলি আর বোনকে বুঝি চোখে পড়ে না,,,,

আদনানঃপরবে না কেনো আয় আয় আমার বুকে আয় পাগলী বোন আমার,,,,

আয়শাঃভাইয়া,,,,(বলে আদনানকে জড়িয়ে ধরলো,,,,)

(আসলে আয়শা হলো আদনানের আপন ছোট বোন,,,,নিজের বন্ধুর সাথে বোনের বিয়ে দিয়েছিলেন প্রায় ২৫ বছর আগে,,,,উনারা স্বপরিবারে ফ্রন্সে থাকেন,,,,,উনাদের দুই মেয়ে মিতি আর ইতি,,,,দুটোই বজ্জাত যেমনটি নিহান নিরব ছিলো তেমন আরকি ধরতে পারেন আর ওদের টার্গেটও নিহান নিরব,,,,আদনান সাহেব উনার বোনকে দাওয়াত করে আনলেন আসলে অনেক দিন হয় বোনকে দেখেন না,,,,আর অন্য একটা কারন হলো নিজের ছেলেদের বন্ধনে বেঁধে ফেলা,,,,মিতি আর ইতি নিরব নিহনের অনেক ভালো বন্ধুও তাই উনি ওদেরই ওদের জন্য বাধার দড়ি বানাবেন ভাবছেন আর কি করার আছে বেচারা নিরব নিহানের ডেড এর,,,,সবাই সবার সাথে কুলাকুলি করছে কথা বলছে কতো দিন পর দেখা সবাই খুশি,,,,কিন্তু নিহান নিরব একেবারেই খুশি নয়,,,,দুজনেরই মুখ লটকে আছে মিতি আর ইতিকে দেখে,,,,দুটো বোনই যে বড়ই চিপকু,,,,,ওদের নিয়ে নিধী আর নিজেদের মাঝে ভুলবোঝাবুঝি হতে পারে এই টেনশনই মাথা খাচ্ছে বেচারা শুধরে যাওয়া দুইটি পাপী প্রাণের,,,,আসলে দুটো ভাই এ দুটি বোনের সাথেও অনেক খেলা করেছে,,,,এটা বাচ্চাদের খেলা নয় অন্য খেলা,,,,আর এখন জীবনে পুণ্য করে ফল পাবার সময় যে পুরাতন পাপ জীবন লন্ডবন্ড করতে এসেছে তাই ভেবে হয়রান দুই ভাই,,,,একে ওপরের দিকে তাকাচ্ছে আর শুকনো ঢোক গিলছে,,,,দুই বোন এসেই ওদের হাগ করতে চাইলে ওরা সরি বলে সাইড হয়ে গেছে,,,,এতে মিতি ইতি রাগে একাকার,,,,,এদিকে ওরা খেয়াল করলো সেই পিচ্ছি ডলটার উপর,,,,ও কথা,,,,কথা বলতেই কথা অনেক কথা বলে,,,,,ওকেও ওরা আগে থেকেই চেনে,,,,বাবা মা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে ওর বয়স যখন ৭ তারপর থেকে মামার কাছেই থাকে মামা বলতে নিরব নিহানের ফুফা,,,,,ওর এই পৃথিবীতে ফুফা আর উনার পরিবার ছারা কেউ নেই,,,,,ফুফা ওকে নিজের মেয়ের মতো আদর করলেও পরিবারের বাকি কেউই ওকে সহ্য করতে পারে না,,,,,মিতি ইতি তো ওকে একদমই সহ্য করতে পারে না,,,,,,এমনকি ওদের মাও না,,,,সারাদিন ওকে ঘরের কাজ করায়,,,,ফুফার কারনে এখনও পড়ালেখায় আছে নয়তো ওরা ওকে মুর্খ করেই রাখতো,,,,কথা অনেক চঞ্চল আর বোকা প্রকৃতির,,,,যে যাই বলে তাতে বিশ্বাস করে,,,,সারাদিন হাসে আর কথা বলে,,,,,সব কাজেই নিপুন,,,,,তবে যে কাজ সামলে করার কথা কেউ বলবে সে কাজই নষ্ট করবে,,,,,নিহান নিরব ওর সাথেও খেলা করেছে কিন্তু সেটা সেই খেলা নয় বাচ্চাদের খেলা,,,,,ও বাচ্চাসুলভ আর ওই একমাত্র মেয়ে যার দিকে হয়তো নিহান নিরব কখনো খারাপ দৃষ্টিতে তাকায় নি,,,,,বরং ওর সাথে ওরা খুব লাগালাগি করতো সেই ছোটবেলা থেকেই,,,,,ওর সাথে দুজন লাগালাগি করতো আর ও কান্না করতো এতে মজা পেতো দুই ভাই,,,,,আর বড় কথা হলো দুই ভাই ওর সাথে যতটা লাগতো ততই ওকে বিপদ আপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করতো,,,,,বলতে পারেন কথা ওদের জন্য একটা খেলার পুতুল ছিলো যাকে ওরা ভাঙতে বা ওকে কখনো খারাপ করতে চায় নি বরং ওকে সাজিয়ে রাখতে চেয়েছে,,,,আলগে রাখতে চেয়েছে পৃথিবীর ময়লা থেকে,,,,,আসলে ওদের মধ্যে একটা ভালো মানুষ অনেক আগে থেকেই সুপ্ত ছিলো যা জাগিয়ে তোলেছে নিধী,,,,,নিহান নিরব ওকে দেখে অনেক খুশি হলো কারন ওদের একটু এন্টারটেইনমেন্ট হয়ে যাবে কথার সাথে লাগালাগি করে,,,,কথা ওদের দেখেই ভয় পায়,,,,পরক্ষণেই একটা ভেংচি কাটে,,,,,নিহান নিরব দুজনেই হাসে ওর কান্ড দেখে,,,,ও এমনই ভয় পাবে কিন্তু লাগতেও আসবে,,,,,তারপর সবাইকে বসানো হলো ড্রয়িংরুমে,,,,চাকরেরা সবাইকে চা কফি দিচ্ছে সাথে কথা আর নিধীও হেল্প করছে,,,,,নিধী ভুলেও নিহান নিরবের পাশে আসছে না ওদের কফি নিয়ে জানে আসলেই কিছু না কিছু নিয়ে এরা দুজন আবার ওকে দোটানায় ফেলবে,,,,,তাই নিধী ওদের কফি কথাকে দিয়ে আসতে বললো,,,,,নিহান নিরব নিধীর পানে তাকিয়ে রয়েছে কবে ও এসে ওদের কফি দিয়ে যাবে কিন্তু ওদের ভাবনায় ছেদ বসিয়ে কফি নিয়ে ওদের পাশে এলো কথা,,,,

কথাঃএই যে বড় আর ছোট ক্যালেঙ্কারি সাহেব,,,,থুক্কু মানে বড় আর ছোট সাহেব আপনাদের কফি,,,,,(কথা ওদের একসাথে বড় ছোট ক্যালেঙ্কারি সাহেব ডাকে কিন্তু ওদের সামনে ডাকে না ভয়ে)

নিহান+নিরবঃকি বললি শাঁকচুন্নি (ভ্রুকুচকে)

কথাঃকই কিছু নাতো,,,,,(আমতা আমতা করে)কফি নিন আপনারা,,,,,

নিরবঃতোকে কে বলেছে কফি নিয়ে আসতে ওই নিধী ম্যাম এমনিতেই নিয়ে আসতো,,,,,পাকনামি করার সখ এখনও গেলো না তোর,,,,,

কথাঃউনিই আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাদের কফি দিবো বলে,,,,

নিহানঃউনি পাঠালেন আর আপনিও চলে এলেন,,,,,শোন ও যখনি আমাদের কোনো কাজের কথা করতে বলবে তখন বলবি যে তুই তা করতে পারবি না,,,,ওকে নিজে করে নিতে বলবি,,,,,

কথাঃআমি উনাকে এমন কেনো বলবো,,,,,উনি অনেক ভালো আর আমি উনার সব কথাই শুনবো,,,,

নিহানঃউনি তো ভালোই কিন্তু আমরা কেমন তা তুই ভালো করেই জানিস,,,,,

নিরবঃআমাদের কথা না শুনলে নিয়ে জঙ্গলে রেখে আসবো যেমনটা ছোটবেলায় রেখে এসেছিলাম মনে আছে তোর,,,(কথাকে ভয় দেখিয়ে বললো কথাটা দুই ভাই),,,,,(কথার মনে পড়লো সে দিনটার কথা,,,,,তখন কথার বয়স ৯ বছর,,,,মামা মামির সাথে এখানে বেড়াতে এসেছিলো,,,,,তখন নিরবের বয়স ১৫ আর নিহানের বয়স ১৩ ছিলো,,,,,ওরা সারাদিন কথার সাথে লাগালাগি করতো,,,,,এটা ওটা কাজ করাতো আর ওদের কোনো কথা না শুনলে ওকে শাস্তি দিতো,,,,এমনি একদিন কথাকে ওরা কি একটা কাজ করতে বলেছিলো কিন্তু কথা তা শুনে নি তাই ওকে শাস্তিসরুপ দুটো ভাই জঙ্গলে রেখে এসেছিলো,,,,,পরবর্তীতে প্রায় ২ ঘন্টা পর ওকে ওরাই সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলো,,,,,সেদিন কথা না জানি কতো ভয় পেয়েছিলো আর সে কি কান্না করেছিলো কথাটা মনে হতেই কথা ভয় পেয়ে ওদের কাছ থেকে সরে দাঁড়াবে তখনি পিছনে হুট করে আসা মিতির সাথে ধাক্কা খেয়ে যায় আর দুটো কাপের ?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here