দোটানা,পর্বঃ১৬,১৭

0
1416

#দোটানা,পর্বঃ১৬,১৭
#লেখিকাঃআরোহী_নুর
পর্বঃ১৬

(আজকে আদনান সাহেব আর উনার স্ত্রীর ২৮ তম বিবাহবার্ষিকী,,,,, বাড়িটা সকাল থেকেই খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে,,,,,সবার তো জানাই আছে নিধী উনাদের ফেমেলি ফাংশনে সামিল হবে না,,,,,কিন্তু আজকে যেনো সবাই ওকে এই ফাংশনে সামিল করেই ছারবে এই লক্ষ্যেই লেগে গেলো সব বিশেষ করে নিহান নিরব,,,,ও না আসলে যে ওরাও পার্টি এটেন্ড করবে না বলে দিয়েছে ওকে,,,,,তারপর আদনান আর উনার স্ত্রীর অনেক রিকুয়েষ্টের পর নিধী পার্টিতে সামিল হওয়ার সম্মতি দেয়,,,,অবশ্য নিধীকে রাজি করানোর পিছনে আসল হাত কথারই ছিলো,,,,,সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হবে,,,,,নিধী বাহিরের কাজ দেখে কি একটা কাজে নিজের রুমে গেলো,,,,, তখন ওর রুমের টেবিলের উপর একটা প্যাকেট রাখা পেলো আর ওটার উপর ছোট্ট একটা চিঠি,,,,,চিঠিটাতে লিখা,,,, এই শাড়ীটা তোমার জন্য এনেছি নিধী আশা করি তোমার পছন্দ হবে,,,,প্লিজ শাড়ীটা পড়ে নিও,,,,,নিরব…..
নিধী বুঝতে পারলো নিরব রেখে গেছে এটা শাড়ীটা প্যাকেট থেকে খুলে দেখলো মেরুন কালারের খুব সুন্দর একটা শাড়ী,,,,,,, শাড়ীটা খুব পছন্দ হয়েছে নিধীর তাও কোনো রিয়েক্ট না করে রেখে দিলো আবার প্যাকেটে ভরে,,,,,তারপর হঠাৎ চোখ গেলো বেডের বালিশের উপর ওখানে আরেকটা প্যাকেট আর আরেকটা চিঠি দেখতে পেলো নিধী,,,,,ওই চিঠিটা হাতে নিয়ে পরতে লাগলো ওটাতে লিখা,,,,,নিধী শাড়ীতে তোমাকে কখনো দেখি নি,,,,,কিন্তু মনে হয় শাড়ীতে তোমাকে দেখলে আরেকদফা প্রেমে পরে যাবো তোমার,,,তাই একটা শাড়ী নিয়ে এলাম তোমার জন্য,,,,,তুমি যে শাড়ীটা পড়লে ওটার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে,,,,,প্লিজ শাড়ীটা পরে নিয়ো,,,,,নিহান,,,,,নিধী চিঠিটা পড়ে একটা রহস্যময়ী মুচকি হাসি দিলো,,,,,
তারপর নিধী প্যাকেটটা খুলে দেখে একই সেইম দেখতে আরেকটা শাড়ী,,,,নিধী অবাক হলো দুই ভাই কি একসাথে শাড়ী কিনে এনেছে না এদের পছন্দই এক এটা ভেবে,,,,,তারপর নিধী ঐ শাড়ীটাও প্যাকেটে ভরে দিলো,,,,,
এসে গেলো সন্ধ্যা,,,,সব মেহমান এসে গেছেন,,,,নিহান নিরব কখন থেকে রেডি হয়ে এসে গেছে সেখানে শুধু নিধীকে শাড়ীতে দেখার আশায়,,,,, কখন থেকে এসে দুজনই ছটফট করছে নিধীর আসার নাম নেই,,,,,দুজনই মেরুন কালারের ডিজাইন করা পাঞ্জাবি পড়েছে,,,,,মেয়েরা তো চোখ গেড়ে বসে আছে এদের উপর দুজনকে যা লাগছে,,,,কিন্তু এদের চোখ তো শুধু নিজেদের মেঘপরীকে খুঁজছে,,,,,,,

নিহানঃএই তুই মেরুন কালার কেনো পরেছিস,,,,(ভ্রু কুচকে)

নিরবঃআগে বল তুই এই কালার কেনো পড়েছিস(আমতা আমতা করে)

নিহানঃআমার ইচ্ছে হয়েছে তাই,,,,(নিহানও আমতা আমতা করে বললো,,,,চোরের মনে যে পুলিশ পুলিশ করে,,,,)

নিরবঃআমারও ইচ্ছে হয়েছে তাই,,,,,

নিহানঃহুম,,,,,(ডন্ট কেয়ার লুক দিয়ে বললো)

(নিধীর অপেক্ষা করতে করতে দুই ভাইয়ের চোখে ব্যাথা করছে কিন্তু ওর কোনো খোঁজ নেই,,,,,হঠাৎ দুজনের নজর পড়লো সামনে হেলেডুলে আসা দুই রমনির উপর,,,,,মেরুন কালারের সেইম দুটি শাড়ী পরে মিতি আর ইতির এন্ট্রি হচ্ছে,,,,দুজন এমনভাবে আসছে যেনো সবকিছুই বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে যাবে,,,,,সব ছেলেরা আক্কাবাক্কা লেগে গেছে ওদের দিকে তাকিয়ে,,,,কি চাল ঢাল ওদের,,,,,নিহান নিরব আক্কাবাক্কা লাগে নি বরং রাগে ফুলছে কারন এই দুটি শাড়ী যে সেই শাড়ীগুলো যেগুলো ওরা নিধীকে দিয়েছে,,,,ওদের আর বুঝতে বাকি রইলো না শাড়ীগুলো নিধী ওদের দিয়েছে কারন ইতি মিতি ওদের কাছে এসে কি যে খুশিতে ধন্যবাদ দিতে শুরু করেছে,,,,)

মিতিঃথ্যাংক ইউ নিরব আমি জানতাম তুমি এখনও আমায় নিয়ে ভাবো তা না হলে আমাকে এতো সুন্দর শাড়ী দিতে পারতে,,,,,

ইতিঃওহ নিহান,,,,তুমি যে আমায় নিয়ে এতো ভাবো আমি জানতামই না,,,,থ্যাংক ইউ জান এতো সুন্দর শাড়ী দেওয়ার জন্য,,,,

নিরবঃজান টান বলে ন্যাকামি ছাড়ো আর বলো শাড়ীগুলো তোমরা কোথায় পেয়েছো??

মিতিঃকেনো নিধীই আমাদের দিয়ে বললো তোমরা নাকি ওকে আমাদের এগুলা দিতে বলেছো,,,,

নিহানঃওহ এই নিধী প্রাণ নিয়েই জান ছাড়বে,,,,(রেগে গিয়ে)

নিরবঃমানুষ এতো নির্দয়ও হয় জানতাম না,,,,আচ্ছা নিহান আয়তো এদিকে,,, (এটা বলে নিরব নিহানকে মিতি ইতির পাশ থেকে নিয়ে এলো সরিয়ে,,,)

নিহানঃকি হয়েছে বল….??

নিরবঃতুইও শাড়ী দিয়েছিস নিধীকে তাও আমার শাড়ীর মতো সেইম টু সেইম,,,,

নিহানঃআমার তো মনে হয় তুই আমার শাড়ী দেখে তারপর সেইম শাড়ী এনেছিস,,,,

নিরবঃদেবো মাথা ফাটিয়ে আমি তোর দেখে শাড়ী কিনতে যাবো কেনো,,,,তুই আমার দেখাদেখি করেছিস বল,,,,,

নিহানঃনা আমিও দেখি নি তোর,,,,

নিরবঃতবে কি আমরা নিধীর জন্য একই শাড়ী পছন্দ করলাম,,,,,

নিহানঃভাই এখানে তাজ্জব হওয়ার কিছু নেই,,,,,নিধীকেও আমরা দুজনই পছন্দ করি ভুলিস না,,,,তাই ওর শাড়ী সিলেক্টে আমাদের পছন্দ একই হওয়াও বর জিনিস মনে হচ্ছে না আমার,,,,

নিরবঃহ্যাঁ রে আমাদের পছন্দ এখন দেখি সব কিছুতেই একই হয়ে যাচ্ছে,,,,হা হা হা,,,,কিন্তু নিধী এটা মোটেও ভালো করে নি,,,,,একটা শাড়ী তো পড়ে নিতে পারতো ওখান থেকে একই তো ছিলো দুটোই একটা পড়লে দুজনই মনকে বোঝাতে পারতাম যে আমাদের দেওয়া শারীটাই পড়েছে হয়তো বলতে তো আর পারতাম না কার টা পড়েছে,,,,

নিহানঃহ্যাঁ রে এটা নিধী একদম ঠিক করে নি,,,,(মুখ ঘোমড়ো করে)তবে এখনও আসছে না কেনো,,,,

নিরবঃএসে গেছে ভাই,,,,,সামনে দেখ,,,,,

(নিহান নিরবের কথায় সামনে তাকালো দেখতে পেলো সেই মেষবতী কন্যা আসছে বাতাসে চুলগুলো মুক্ত বিহঙ্গে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হেটে,,,,খয়ারী কালারের একটা শাড়ী পড়েছে,,,,মুখে কোনো সাজ নেই একটু কাজল দিয়েছে চোখে আর ঠোঁটে হাকলা গোলাপি কালারের লিপস্টিক,,,, হাতে কিছু খয়ারী রেশমী চুড়ি,,,আর কানে ছোট্ট দুটি কানের দুল খয়ারী কালারের আসলে নিধী ওসব পড়তে বা একটু যে সেজেছে তাও চায় নি,,,,কথা জোর করে ওকে শাড়ী পরিয়েছে আর কাজল আর লিপস্টিকও ও দিয়ে দিয়েছে,,,,ওগুলা পড়িয়েও দিয়েছে,,,,কথাও সেইম কালারের শাড়ী পরেছে,,,,চুড়ি আর কানের দুলও সেইম,,,,আর একটু কাজল আর লিপস্টিক দিয়েছে নরমালভাবেই ওদের যেনো ওপসরা লাগছে,,,,,দুজনকেই যেনো একই মনে হচ্ছে,,,,দুজনের চেহারা গোলগাল চোখ টানাটানা,,,ছোট্ট সরু নাক,,,,হাইটও তো একই,,,,চুলগুলোও কোমড় পর্যন্ত আর আলতা রাঙা গায়ের রং,,,,,সব ছেলেরা হা হয়ে গেছে ওদের রুপে,,,,ইতি মিতির শরীর দেখানো দেখে ছেলেরা পাগল হলেও এখন ছেলেরা নিধী কথার প্রাকৃতিক অকৃত্রিম রুপে পাগল হয়ে গেছে,,,,,নিহান নিরব তো হা হয়ে গেছে নিধীকে দেখে,,,,,নিধী ওদের সামনে আসছে ক্রমশও আর ওরা ততো ঘোরের রাজ্যে তলাচ্ছে,,,,নিধী ক্রমশ পাশে আসায় ওরা ভাবছে হয়তো নিধী ওদের সাথে কথা বলতে আসছে,,,,,কিন্তু ওদের চিন্তা ভুল করে নিধী ওদের পাশ কেটে চলে গেলো আদনান সাহেবের কাছে,,,,তারপর আদনান সাহেব নিধীর কানে কানে কিছু বললেন আর নিধীও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে কোথাও যেনো গেলো,,,,,আসলে নিধীর আজকে হঠাৎ করে এমনভাবে অনুষ্ঠান জয়েন করার আর সাজার দুটো কারন আছে,,,,,একটা হলো নিধী অতি শিগ্রই এখান থেকে চলে যাওয়ার পথ দেখছে কারন ওর বাড়ি তৈরির কাজ আগামী পরশু থেকে শুরু হবে এখানে আর কদিন থাকবে নিধী,,,,,তাই এই কদিন সবার সাথে আনন্দ করে যেতে চায় আর অন্য একটা বড় কারন আছে একটা দায়িত্ব যা আদনান সাহেব নিধীর ঘাড়ে দিয়েছেন তা পূরন করবে নিধী,,,,,তাই আদনান সাহেবের কথামতো কিছু আনতে উনার রুমে গেলো,,,,,নিহান নিরবও তখন নিধীর পিছন যাবে তখনি আদনান সাহেব মাইকে কিছু এনাউন্সমেন্ট করে দেন,,,,,যা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না নিহান নিরব,,,,)

আদনানঃলেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান,,,,, আজকে যারা এখানে আছো সবাইকে আমার পক্ষথেকে জানাই সালাম আদাব শুভেচ্ছা,,,,, সবাই জানেন আজকে আমার আর আমার স্ত্রীর ২৮ তম বিবাহবার্ষিকী তাই এই অনুষ্ঠানটা রাখা,,,,,কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানটা শুধুই আমার বিবাহবার্ষিকী নিয়ে না আরও দুটি বিয়ের আগমনের সুখবার্তা,,,,,(কথাটা শুনে কেউ কিছু বুঝতে পারছে না)আপনারা সবাই হয়তো এটাই ভাবছেন যে আরও দুটি বিয়ে তা কাদের,,,,তবে আমি আপনাদের আর সাসপেন্সে রাখছি না,,,,আমার দুটোই রত্ন আর আজ এই শুভলগ্নে আমি চাই আমাদের ছেলেদের জীবনেও সুখের এক নতুন অধ্যায় নিয়ে আসি,,,,তাই আমি আজ এই অনুষ্ঠানটি শুরু হবার আগেই আমার আদরের ছোটবোনের দুই মেয়ের সাথে আমার আদরের দুই ছেলের এনগেজমেন্টটা সেরে ফেলতে চাই,,,,তবে আর দেড়ি না করে শুরু করা যাক ফাংশনটা,,,,(কথাটা শুনে নিহান নিরবের পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো,,,,,মাথার উপর ভেঙে পড়লো আকাশ,,,,,ওরা আরও শকড হলো আদনান সাহেবের বলা পরের কথা শুনে,,,,,),,,,,আসলে আমাকে এই এনগেজমেন্টের সবদিক দেখতে নিধীই হেল্প করেছে,,,,,ও সত্যিই আমার আর আমার পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছে আর আজকে আমি চাই আমার ছেলেদের জীবনের শোভ শুরুটা ওর হাতেই হোক,,,,,তাই সবাই একটা হাততালি দিয়ে স্টেজে নিধীকে স্বাগতম জানাবেন আশা করি,,,,নিধী মাই গার্ল কাম ওন দ্যা স্টেজ,,,,(এটা বলতে না বলতেই হাতে একটা ঢালা নিয়ে নিধী আগমন করলো স্টেজে,,,,,স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে ডালাটাতে ৪ টা আংটি বক্স,,,,,মিতি ইতি তো খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে হচ্ছে,,,,,নিহান নিরব মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে ওদের যে বিশ্বাস হচ্ছে না নিজের কান আর চোখকে,,,,,নিজের কানে ওদের ডেডের বলা সেই কথাগুলো শোনার পর নিধীকে এতো স্বাভাবিক হয়ে স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুজনেই তাজ্জব,,,,, ওদের মনে শুধু একটাই প্রশ্ন এতোদিন ধরে দুইভাই ওর পিছন ঘুরছে ওর মনে কি ওদের কারো জন্যেই একটু জায়গা তৈরী হয় নি,,,,,দুজনই তখন কি রিয়েক্ট করবে ভেবে পাচ্ছে না,,,,,তখন ওদের ডেড আবার বললেন)

আদনানঃএবার আমি মিতি ইতি আর নিহান নিরবকে স্টেজে আসার আমন্ত্রণ জানাবো,,,,,আমার নিধী মায়ের হাত থেকেই ওরা নিজেদের মধ্যে আংটি বদল করে নিলেই এনগেজমেন্টটা সম্পন্ন হবে,,,,তবে ৪ জনকে স্টেজে আনার জন্য সবাই একটা করতালি তো দিতেই পারেন,,,,,তারপর ইতি মিতি চট করে স্টেজে এসে পরে,,,,,সবাই করতালি দিতে শুরু করে তখন নিহান নিরবও স্টেজের দিকে তেড়ে আসতে শুরু করে,,,,এসেই নিধীর হাতের ডালাটার নিচ থেকে থাক্কা দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দেয় দুই ভাই,,,,,সাথে সাথে সবার হাততালি বন্ধ হয়ে যায়,,,,,সবাই আশ্চর্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে সব থেকে বেশি আশ্চর্য হলো নিধী,,,,,)

নিহানঃতুমি এটা কি করে করতে পারো নিধী,,,, কেউ এতো পাথর কি করে হয়ে যেতে পারে বলোতো,,,,

নিরবঃতোমার মনে কি বিন্দু মাত্র ফিলিংস নেই কারো জন্য,,,,,বলো নিধী,,,,,, (নিধী কিছুই বলছে না শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,নিধী কিছু না বললেও আদনান সাহেব বলে উঠেন)

আদনানঃএটা কোন ধরনের ব্যাবহার নিহান নিরব,,,,,তোমাদের এংগোজমেন্ট ফাংশনে তোমরা নিধীকে এটা কোন ধরনের প্রশ্ন করছো আর ডালাটা এমনভাবে ফেলে দিলে কেনো??তোমাদের কি এখানে কোনো প্রবলেম আছে,,,,,

নিহানঃআছে বাবা,,,,

নিরবঃআমরা এনগেজমেন্টটা করতে পারবো না,,,,,

আদনানঃকেনো জানতে পারি,,,,,আমি যতটুকু জানি তোমরা মিতি ইতিকে পছন্দ করো তবে এনগেজমেন্ট না করার কারন,,,,,??

নিরবঃআমরা মিতি ইতিকে পছন্দ করি কিন্তু ভালোবাসি না,,,,,আর বিয়ে তাকে করা দরকার যাকে নিয়ে মনে ভালোবাসা থাকে,,,,,

নিহানঃআর যেহেতু আমরা মিতি ইতিকে ভালোবাসি না তাই এনগেজমেন্টটাও করতে পারবো না,,,,,(মিতি ইতি এতক্ষণে কান্না করে স্টেজ থেকে নেমে গিয়েছে)

আদনানঃপাগল হয়ে গেলে না তো তোমরা,,,,ভালোবাসা নামক জিনিসটার গুরুত্ব তোমাদের জীবনে এলো কোত্থেকে???

নিরবঃএসেছে ডেড আর সেই ভালোবাসাই আমাদের বদলে দিয়েছে,,,,,,

নিরব নিহানের মাঃতবে বল বাবা কারা তারা যাদের আমার ছেলেরা পছন্দ করেছে আমরা ওদের সাথেই তোমাদের বিয়ে দেবো,,,,,

নিহানঃও কারা নয় মা কে,,,,,

(নিহানের কথায় সবাই আরেক দফা ঝাটকা খায়,,,,,আদনান সাহেব যে আগে থেকেই অনেকটা ইংগিত করে নিয়েছেন আর নিধীও যে তা অনুমান করতে পারছে মনে মনে শুধু এটাই প্রার্থনা করছে ওরা যাতে নিধীর নাম না নেয়,,,,,তারপর সবাইকে আরেকদফা শকড খাইয়ে নিহান নিরব একসাথেই বললো)

নিহান+নিরবঃসে আর কেউ নয় মা নিধী,,,,,আমরা নিধীকে ভালোবাসি,,,,,(কথাটা শোনার পর সবার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে,,,,কথার চোখ বেয়ে পানি ঝরতে শুরু হয়ে গেছে কারন নিরবও নিধীকে ভালোবাসে,,,,,নিধীর তো ইচ্ছে হচ্ছে এখন মাটি ফাটুক আর ও এর ভিতর ঢুকে যাক,,,,,সবাই কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে,,,,,নিধী তা বুঝতেই পারছে,,,,একজন তো স্পষ্টই বলে দিলো সরাসরি তীব্র কন্ঠে,,,,,,)

একজন মহিলাঃহুম এসব মেয়েদের সম্পর্কে আমার ভলোই জানা আছে বড় ঘরের ছেলেদের নিজের রুপের ঝালে ফাঁসিয়ে ওদের থেকে টাকা লুটার ধান্দা এরা ভালোই পারে,,,,,এই নিধী মেয়েটাকে তো ভালোই মনে হতো এখন দেখি এ অন্য ১০ টা মেয়ে থেকেও এক্সপার্ট,,,,দুই ভাইকেই পিছন ঘুরাচ্ছে,,,,,এমন মেয়েরা যে জন্মগতভাবেই খারাপ হয়ে থাকে,,,,,(কথাটা শুনেই মাথায় রক্ত উঠে গেছে নিহান নিরবের,,,,ওরা তেড়ে যায়
ওই মহিলার দিকে)

নিহানঃআপনাদের মতো নারীদের জন্যই আজ সমাজে মেয়েরা নিরাপদ না,,,,,সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে না,,,,,কথায় আছে না নাড়ীরাই নারীরদের শত্রু হয়,,,,)

নিরবঃআর আপনি কতটুকু জানেন নিধীকে নিয়ে যে ওকে নিয়ে এমন কিছু হুট করে বলে দিলেন,,,,,আর আমরা নিধীকে ভালোবাসি নিধী আমাদের কারোই ধার ভিরে না,,,,,আর আপনি বলছেন নিধী খারাপ,,,,,আমরা দুজন ওকে ভালোবাসলে আমরা খারাপ না কিন্তু ও খারাপ তাই না,,,,,কারন ও একটা মেয়ে আর এটাই ওর দোষ,,,,,আসলে আপনাদের মতোই নারিদের জন্যই আজও দেশের নারীরা এখনও অনেক পিছন রয়ে গেছে তারা মাথা তুলে বাঁচতে পারছে না ঠিকমতো,,,,,

নিধীঃএনাফ মি.নিহান এন্ড নিরব,,,,(ঝাঁঝালো গলায় বললো নিধী,,,,,,)ঠিকই তো বলছেন আন্টি,,,,,আপনাদের ঘরে আমি থাকি আর আপনারা দুজনই সবার সামনে বলছেন আমাকে ভালোবাসেন,,,,মানুষ এর আর কি মানে বার করবে আপনারা বলেন,,,,,

নিরবঃআমাদের কথা অন্ততো শুনো নিধী,,,,,

নিধীঃআমি আর কিছু শুনতে চাই না স্যার,,,,,আপনারা সবার সামনে বলেছেন তো আমাকে ভালোবাসেন,,,,,আমিও সবার সামনে বলছি আমি আপনাদের কাউকেই ভালোবাসি না,,,,,,শুনেছেন আপনারা আমি কাউকেই ভালোবাসি না,,,,,বড় সাহেব আপনি উনাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন আমি এখনই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি,,,,,,

আদনানঃকিন্তু তুই কোথায় যাবি রে মা,,,,,,তোর বাড়ির কাজ তো এখনও শুরু হয় নি আর হুট করে থাকার জায়গা কোথায় পাবি,,,,,??

নিধীঃতিন বছর আগে যখন অসহায় ছিলাম তখন যখন একা সব করতে পেরেছি তবে এখন তো আমি সহায় এখনও একাই সব করে নিতে পারবো,,,,,, মা তুমি এখানে থাকো আমি সবকিছু গোছিয়ে নিয়ে আসছি,,,,,

কথাঃদাঁড়াও আপু,,,,,আমিও তোমার সাথে যাবো,,,,,তোমার মতো একটা বোন আর এমন একটা মাকে যে আমি হারাতে চাই না,,,,,জীবনে যে মায়া মমতা আপনদের কাছ থেকে আশা করেছি তা যে পর হয়েও তুমি আমাকে দিয়েছো আপু,,,,,সেই মায়ার টানে কি নিয়ে যাবে না আমাকে নিজের সাথে,,,,,

নিধীঃকেনো নিবো না বড় বোন কি তার ছোট বোনকে ছেড়ে চলে যেতে পারে,,,,,যাও কাপড় গুছিয়ে নিয়ে আসো আমরা অল্প সময়েই বেরুবো,,,,,

মিতিঃ(যাক একটার সাথে আরেকটা আপদও দেখছি বিদায় হচ্ছে যাক ভালোই হলো)

(তারপর কথা নিজের রুমে গেলো কাপড় গোছাতে আর নিধী ওর রুমে চলে গেলো,,,,,ওর মা কান্না করছেন মনে মনে এটাই ভাবছেন উনার মেয়ের জীবনে কি কোনো সুখ নেই,,,,,সারাজীবন কি এভাবে দুঃখের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হবে,,,,,,নিধীর মায়ের অবস্থা বুঝতে পেরে আদনান সাহেবের স্ত্রী উনাকে সান্তনা দিচ্ছেন,,,,সব মেহমানদের চলে যেতে বলে দিয়েছে নিহান নিরব যেহেতু আজকে আর কোনো পার্টি হচ্ছে না,,,,,সবাই চলে গেলে নিহান নিরব অস্থির হয়ে যেতে শুরু করে নিধীর রুমের দিকে)

নিহানঃনা নিধী যেতে পারে না,,,,,,

নিরবঃনিধীকে আমি কোথাও যেতে দিবো না,,,,,

(এটা বলে নিহান নিরব নিধীর রুমের দিকে এগুলেই আদনান সাহেব পিছন দিকে গর্জন করে উঠেন)

আদনানঃদাঁড়াও নিহান নিরব,,,,,কোন অধিকারে যাচ্ছো ওই মেয়েটাকে আটকাতে,,,,,কি বলে আটকাবে ওকে শুনি,,,,,

নিরবঃ ভালোবাসার অধিকারে আটকাবো ওকে,,,,,

নিহানঃওকে যেতে দিবো না

চলবে,,,

#দোটানা
#গল্পকারঃআরোহী_নুর
পর্বঃ১৭

নিধীঃনিহান,,,,(নিহানকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বুক ফাঁটা আর্তনাদ ভরা একটা চিৎকার করলো নিহান বলে,,,,,চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে আসতে শুরু হয়েছে,,,,,)

নিধীঃতুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না নিহান,,,,,তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে থাকবো,,,,,তিনটা বছর তোমার কাছ থেকে দূরে থেকেও তোমাকে ভুলার চেষ্টা করেও ঘৃণা করার চেষ্টা করেও তা করতে পারি নি,,,,,বার বার এই বোকা মন তোমার কথা মনে করত,,,,এই তিন বছরে এমন কোনো দিন যায় নি যেদিন তোমার কথা মনে করি নি,,,,,তুমি ফিরে এসে যখন বললে সত্যিই ভালোবাসো তখনও ইচ্ছে করছিলো তোমাকে জড়িয়ে ধরি মন খুলে বলি আমিও তোমায় ভালোবাসি,,,,,কিন্তু পারি নি নিহান ঐ যে তোমার দেওয়া ঘা গুলো তাজা ছিলো তখন তার উপর মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত ধোকা তোমার উপরও আর বিশ্বাস করতে দেয় নি,,,,তাই তোমার কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম,,,,,তোমাকে অবহেলা করতাম তারপরও দিনশেষে এই বোকা মনটা তোমার কথাই ভাবতো,,,,,তোমার আমাকে ভালোবাসি বলাটা যে অনেক ভালো লাগতো আর আজ এভাবেই এই ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো তুমি,,,,,ছেড়ে চলে যাচ্ছো তোমার নিধীকে,,,,,একবারও ভাবলে না তুমি ছাড়া কি আমি ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবো,,,,আমি পারবো না নিহান তোমায় ছাড়া থাকতে,,,,তিন বছর দূরত্ব সহ্য করেছি আর পারবো না,,,,,আমি যে সেদিনও তোমায় ভালোবাসতাম আর আজও বাসি,,,,,শুধুই তোমায় ভালোবাসি,,,,,আই লাভ ইউ নিহান আই লাভ ইউ,,,,,ডন্ট লিভ মি প্লিজ,,,,,,(নিহানের গালে হাত দিয়ে ডাকতে ডাকতে),,,,,নিহান এই নিহান দেখো না তোমার নিধী ফিরে এসেছে কথা বলছে তোমার সাথে,,,,কথা বলো না নিহান,,,,বলো না কথা আমার সাথে,,,,প্লিজ কথা বলো,,,,আর পারবো না আমি তোমায় ছাড়া থাকতে আর পারবো না জীবনে কিছু হারাতে,,,,প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না,,,,,,(এক তো নিজের ভাইয়ের রক্তাক্ত শরীর সামনে পরে আছে আর এদিকে নিজের ভালোবাসার মানুষ চিৎকার করে করে বলছে যে ও অন্য কাউকে ভালোবাসে,,,,ওর ভালোবাসাতে নিরবের নাম কোথাও নেই,,,,,নিরব যেনো সেই মূহুর্তে মুর্তি হয়ে গেছে,,,,,কি করবে না করবে সেদিকে কোনো হুশ নেই ওর,,,,,হঠাৎ ওর ধ্যান ভাঙলো নিধীর চিৎকার ভরা ডাকে,,,,,)

নিধীঃআপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো প্লিজ আমার নিহানকে বাঁচান ওকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন প্লিজ,,,,,

নিরবঃনিহান ভাই আমার তোর কিছুই হবে না আমি তোকে কিছুই হতে দেবো না,,,,

(নিধীর কথা শুনে হুশ ফিরলে নিরব নিহানকে তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে নিতে সময় লাগালো না,,,,তারপর সবাই পৌঁছে গেলো হাসপাতাল,,,,,বাড়িতে শুধু নিহানের দিদুন আর নিধীর মা বাকি সবাই হাসপাতালে,,,,,সবার কেঁদে কেঁদে হাল বেহাল,,,,,নিহানের চিকিৎসা চলছে বাইরের সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর নিধী বেঞ্চে বসে আছে চোখ দিয়ে ঝড়ে পড়ছে অজস্র জল,,,,,নিহানের অবস্থার কথা সবাই চিন্তা করছে এদিকে সমপরিমান অবাক হচ্ছে সবাই নিধীর চোখে পানি দেখে,,,,,যে নিধীকে গত এক বছরের পরিচয়ে কখনো কান্না করতে দেখে নি কেউ সে নিধী আজ না থেমেই কান্না করে যাচ্ছে,,,,,নিরবও নিধীর পানে তাকিয়ে আছে,,,,,নিধী নিহানকে ভালোবাসে সে কথা বার বার কানে বাজছে নিরবের,,,,,নিধীর চোখের জল দেখে আফসোস হচ্ছে যদি আজ নিহানের জায়গায় ও হতো আর নিধী ওর জন্য চোখের জল ফেলতো তাহলে হয়তো ওর মরণটাও সার্থক হতো,,,,,,এমতাবস্থায় ডাক্তার বেড়িয়ে এলেন,,,,সবাই দৌঁড়ে গেলো উনার কাছে নিধীও ছুটে গেলো ওর নিহান কেমন আছে জানতে,,,,,নিধী যেনো আজ নিজের আয়ত্তে নেই পাগলপ্রায় হয়ে আছে,,,,,ডাক্তার বললেন নিহানের অনেক রক্ত গেছে ওর রক্ত লাগবে যা উনাদের এখানে বর্তমানে নেই,,,,,তারপর নিরব ওকে রক্ত দিলো কারন দুজনেরই ব্লাড গ্রুপ সেইম,,,,,ডাক্তার বললেন এখনই কিছু বলা যাবে না আল্লাহ আল্লাহ করতে,,,,,কথাটা শুনে নিধী আরও কান্নায় ভেঙে পড়লো,,,,,নিধীর কান্না সহ্য করতে না পেরে কথা আসলো ওর কাছে,,,,)

কথাঃকান্না করো না আপু কিছু হবে না ছোট সাহেবের উনি একদম ঠিক হয়ে যাবেন,,,,,(তৎক্ষনাৎ নিধী কথাকে ঝাপটে ধরে)

নিধীঃকথা প্লিজ বলো ও বাঁচবে তো,,,,,ওর কিছু হয়ে গেলে আমি সহ্য করতে পারবো না,,,,,আর সইতে পারবো না ওর দূরত্ব,,,,, আমি যে ওকে বড্ড ভালোবাসি কথা,,,,,(নিধী কান্না করছে আর এসব বলছে,,,,,নিধীর কান্নায় কথাও কান্না করছে আর বাকি সবাই বার বার অবাকের চরম সীমায় পৌঁছাচ্ছে নিধীর বলা কথাগুলো শুনে,,,,,নিরব এই মাত্র রক্ত দিয়ে এসেছে,,,,,শরীরটা কিছু দূর্বল করছে কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ওর,,,,,শুধু মাথায় একটা কথাই ঘুরছে নিধী ওকে না নিহানকে ভালোবাসে,,,,,,তারপর ঘন্টাখানিক পর খবর এলো নিহান আউট অফ ডেঞ্জার,,,,, সবাই সস্তির শ্বাস ফেললো,,,,,ডাক্তার বললো নিহানের জ্ঞান ফিরতে খনিক সময় লাগবে,,,,তারপর বেশি মানুষকে ওকে দেখার পারমিশন দিলেন না,,,,,তাই একজন একজন করে এসে এসে নিহানকে দেখে গেলেন,,,,এখন নিহানের একদম পাশে ওর হাতে হাত ধরে বসে আছে নিধী,,,,,চোখের পানি তার এখন অব্ধি শুকোয় নি,,,,,মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছে নিরব,,,,নিধীর চোখের পানি ওর চোখ এড়াতে পারছে না,,,,,খাটের ওপরপাশে দাঁড়িয়ে আছে কথা,,,,,ও নিরব নিধী দুজনেরই মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টায় আছে,,,,,হঠাৎ ওরা খেয়াল করলো নিহানের যেনো জ্ঞান ফিরছে,,,,,নিহান মিটমিট করে নিজের আখিদ্বয় খুলেই দেখলো সামনে ওর মেঘবতী বসে আছে,,,,,চোখে অজস্র জল খেলা করছে,,,,,প্রিয় মুখখানি দেখে নিজের মুখে ওর নাম উচ্চারন করলো,,,,)

নিহানঃনিধী,,,,,,(নিহানের মুখে নিজের নামটা শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারলো না নিধী,,,,,ঝাপটে পড়লো নিহানের বুকে,,,,,আর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো,,,,,)

নিধীঃকেনো এমন করলে নিহান,,,,,কেনো আমায় ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলে,,,,তুমি কি ভেবেছিলে তুমি চলে গেলে আমি ভালো থাকবো,,,,,আমি খুশি হবো,,,,,একা কি তুমিই আমাকে ভালোবাসেছো আমি বুঝি ভালোবাসতে পারি না,,,,,

নিহানঃতুমি আমায় ভালোবাসো নিধী,,,,,??(আনন্দের অনুভুতি কন্ঠে)

নিধীঃহ্যাঁ হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি,,,,,সেই তিন বছর আগেও ভালোবাসতাম আর আজও বাসি,,,,আর সারাজীবন বাসবো,,,,,

নিহানঃতুমি সত্যিই আমায় ভালোবাসো নিধী,,,,(সুখের অশ্রুমিশ্রিত কন্ঠে,,,,,)

নিধীঃহ্যাঁ নিহান আমি তোমাকে ভালোবাসি,,,,,, শুধুই তোমাকে ভালোবাসি,,,,

নিহানঃআমিও যে শুধু তোমাকে ভালোবাসি নিধী,,,,প্লিজ কখনো ছেড়ে যেও না আমায়,,,,আমি মরে যাবো তুমি ছাড়া,,,,

নিধীঃআর কখনোই মরার কথা বলবে না এই বলে দিলাম,,,,আমি আর কখনোই তোমাকে ছেড়ে যাবো না,,,,,

(কথাগুলো এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলো নিরব নিরবে,,,,,এখন আর পারলো না সহ্য করতে তাই হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে চলে গেলো কোথাও বেড়িয়ে,,,,,চোখ দিয়ে ওজর ধারা বইতে শুরু হয়ে গিয়েছিলো ওর,,,,,নিহান নিধী এটা লক্ষ্য না করলেও কথা ঠিকই লক্ষ্য করলো,,,,হয়তোবা এখন কথা আর নিরবের মনের অবস্থা একই তাই পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছে কথা,,,,,আর তাই ছুটে গেলো নিরবের পিছন ওকে শান্তনা দিবে বলে,,,,,কিন্তু ততক্ষণে নিরব গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো,,,,কথাও ওর পিছন গেলো রিক্সা নিয়ে,,,,,নিরবের ইচ্ছে করছে ড্রিংক করতে যাতে ওর মনের ব্যাথা একটু কমে,,,,কিন্তু তাও করতে পারবে না কারন ও যে নিধীর প্রাণের খাতিরে আল্লাহর কাছে শপথ করেছিলো যে কোনো খারাপ কাজ করবে না,,,,,হারাম জিনিস ধরবে না,,,,,তাই আজ নিধীর দেওয়া মনের ব্যাথা সহ্য করা ছাড়া আর ওর কোনো রাস্তা নেই,,,,,বাড়ি চলে গেলো নিরব,,,,,রুমে ঢুকে সবকিছু ভাঙতে শুরু করলো,,,,,ঘরটাকে মুহুর্তেই একটা ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে দিয়েছে,,,,,কোনো কিছুতে লেগে হাতটাও অনেকটা কেটে গেছে কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ওর,,,,,ভাঙা জিনিসগুলোর মধ্যে বসে আছে বোবার মতো একধ্যানে,,,,,কানে বার বার ভেসে আসছে নিধীর বলা কথাটা আমি তোমাকে ভালোবাসি নিহান,,,,,,আফসোস এটাই কেনো নিহানের জায়গায় নিরব হলো না,,,,,তখনই কথা ওর রুমে প্রবেশ করে,,,,,কথা রিক্সা করে এই মাত্র বাড়ি পৌঁছালো,,,,,নিরবের রুমে ঢুকে রুমের এই অবস্থা দেখে কথা হয়রান,,,,,তারপর নিরবের হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে দেখে কথা পাগলপ্রায় হয়ে নিরবের কাছে আসলো,,,,,,ওকে এক প্রকার জোর করে উঠিয়ে নিয়ে বেডে বসালো তারপর ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে ওর হাতে ওষুধ লাগাতে শুরু করলো রক্ত মুছে দিয়ে,,,,,নিরবের সেসবে কোনো খেয়াল নেই এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল চোখে চোখ দিয়ে ওজোর ধারা বইছে,,,,,কানে শুধু নিধীর বলা সেই কথাটাই ঘুরছে যে ও নিহানকে ভালোবাসে,,,,,ওর যেনো নিশ্বাসটাই বন্ধ হয়ে আসছিলো তখন,,,,,,,কথা ওর হাত দেখতে ব্যাস্থ,,,,,হঠাৎ নিরব বলে উঠে,,,,,)

নিরবঃজানিস কথা নিধী না আমায় ভালোবাসে না,,,,,ও শুধু নিহানকে ভালোবাসে,,,,,কিন্তু আমি কি করবো বলনা আমি তো শুধু ওকে ভালোবাসি,,,,,,কি করবো বল না কথা,,,,আল্লাহ কেনো দিলেন এতো বড় শাস্তি আমায়,,,,,আমি অনেক খারাপ না রে কথা তাই হয়তো খোদা আমায় এত বড় সাজা দিলেন ,,,,বল না তাই সাজা দিয়েছেন না,,,,,(কথা খেয়াল করলো নিরবের চোখ দিয়ে পানি শ্রাবন ধারা হয়ে ঝরে পড়ছে,,,,,এতো শক্ত মানুষটা যে কখনো কাঁদতে পারে এটা ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না,,,,,কথা যেনো অনুমান করতে পারছে নিরবের মনে নিধীর জন্য ভালোবাসার পরিমানটা আর সেটা যেনো অসীম,,,,,নিজের মন ভাঙার কষ্ট থেকেও যেনো ভালোবাসার মানুষটার কষ্ট ওর অনুভব হচ্ছে বেশি,,,,,কথা আলতো করে নিরবের চোখগুলে মুছে দিয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বললো)

কথাঃআপনি খারাপ না বড় সাহেব,,,,,আপনি অনেক ভালো মানুষ,,,,জানেন আল্লাহ যাই করেন ভালোর জন্যই করেন,,,,,হয়তোবা এটা করার পিছনেও উনার এমন কোনো কারন ছিলো হয়তোবা আপনার ভাগ্য অন্য কিছু লিখেছেন উনি যা আপনার জন্য ভালো হবে,,,,,(কথাটা শোনার পর নিরব কথাকে জড়িয়ে ধরে,,,,,কথার স্পর্শে যেনো ও কিছুটা সাহারা অনুভব করলো নিরব ওকে জড়িয়ে ধরলে কথাও ওকে যথেষ্ট সাহারা দেওয়ার চেষ্টা করলো,,,,,)

নিরবঃআর কি ভালো হবে আমার কপালে,,,,,আমার ভালোবাসাটাই ব্যার্থ হয়ে গেলো,,,,,জীবনে প্রথম কাউকে ভালোবেসেছিলাম আর সেটাই আমার কপালে জুটলো না,,,,,ওকে যখন কেড়েই নিবেন তবে কেনো এনেছিলেন খোদা আমার জীবনে আমার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে কথা,,,,,এই কষ্টটা তোকে যে আমি কথায় বোঝাতে পারবো না,,,,,

কথাঃ(বুঝাতে হবে না বড় সাহেব,,,,,ভালোবাসার মানুষটা যখন অন্যের জন্য কাঁদে তখন কতোটা কষ্ট হয় তা আমার থেকে বেশি কেউ বুঝবে না,,,,এই কষ্টটা কাউকে বলে বুঝানো দায়,,,,)

(তারপর কথা কোনো কথা বললো না কারন নিরবকে শান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই ওর,,,, শুধু নিরবের পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে সাহারা দেওয়ার চেষ্টা করছে,,,,,নিরব তো নিজের জ্ঞানে নেই মনে হচ্ছে কথাকে জড়িয়ে ধরে যেনো মনের কোনে কিছুটা প্রশান্তি বোধ করছে,,,,,চোখের জলধারা এখন অব্ধি বন্ধ হয় নি,,,,কিছুক্ষণ পর কথা অনুভব করলো নিরব অনেক শান্ত তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো নিরব ওর বুকেই ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,,তারপর কথা ওকে আলতো করে বালিশে শুইয়ে দিলো,,,,ওর পায়ের জুতো খোলে ওর উপর চাদর দিয়ে দিলো,,,,তারপর ভালো করে ওর হাতটা ব্যান্ডেজ করলো,,,,,ওর কপালের পাশে গিয়ে কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ দিয়ে ছুটে চলে গেলো নিজের রুমে,,,,,নিরবকে সাহারা দিতে পারলেও নিজেকে কোনো সাহারা যে দিতে পারছে না,,,,,কান্না যে থামছে না ওর,,,,হয়তো নিধী থাকলে ওকে জড়িয়ে ধরে কিছু সময় কেঁদে মনটা শান্ত করতো কিন্তু এখন তো নিধীও নেই এখানে,,,,,তাই একা একা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো কথা,,,,মনে মনে পণ করলো যাই হোক নিজের যতই কষ্ট হোক না কেনো নিরবের কষ্ট ও ভুলিয়েই ছাড়বে,,,,,রাতে নিধী থেকে গেলো নিহানের সাথে আর আদনান সাহেবও বাকিরা থাকতে চাইলেও নিধী আর আদনান সাহেব ওদের পাঠিয়ে দিলেন হাসপাতালে তো আর সব থাকা যাবে না,,,,,মিতি ইতি আর ওদের মা কেউ কিছু বলার আগেই চলে এসেছে ওদের তো নিজেদের স্বার্থের তাড়াই আগে,,,,,তারপর এভাবেই তিন দিন গেলো,,,,,এর মধ্যে নিরব একবারও নিজের রুম থেকে বেরোয় নি কারো সাথে কথাও বলে নি,,,,,যে ঘরে এসেছে ওর সাথে কথা বলতে বলেছে ওকেই ঝারি দিয়েছে,,,,,শুধু কথা আসলে কিছু বলতো না কেনো যেনো একটু হলেও কথার মাঝে প্রশান্তি পেতো,,,,,কথা ওকে একটুর জন্যও একা ছাড়তে চাইতো না,,,,,বার বার ওর কাছে আসতো,,,,,জোর করে ওকে খাইয়ে দিতো নিরব কখনো খেতো কখনো খেতো না ছুড়ে ফেলতো,,,,কথা এতে মন খারাপ করতো না আবারও নিরবের জন্যে খাবার নিয়ে আসতো,,,,,কয়েকবার খারাপ আচরন করলেও কথার ভালো আচরণের কাছে হার মানতো নিরব আর ওর সাথে ভালো আচরন করতে বাধ্য হতো,,,,,খাবার খেতে বাধ্য হতো যদিও তেমন খেতো না,,,,,মনে ব্যাথা হলে কি আর গলা দিয়ে খাবার নামে,,,,,এই তিনদিনে নিজের হাল বেহাল করে ফেলেছে,,,,,কথা যতটুকু পারে ওকে সাহারা দিয়ে যাচ্ছে কথা না থাকলে নিরবের যে কি হতো আল্লাহ মালুম,,,,,নিরব আর যায়নি হাসপাতাল ওর নিজেরই খবর নেই আর কার কি খবর রাখবে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে দাড়ি বেড়ে গেছে শুকিয়ে গেছে খনিকটা তিনদিনেই,,,,,তারপরও কথার কাছে নিহানের খবর নিয়েছে ও ভালো আছে কি না,,,,,নিহান নিধীও ওর খোঁজ নিয়েছে ওকে ফোনও করেছে অবশ্য নিরব ফোনে কথা বলেছে নিহানের সাথে ওকে নিজের হাল বুঝতে দেয় নি আর নিধীর সাথে কথা বলে নি কারন নিজের অনুভুতিকে আটকাতে পারবেনা ওর সাথে কথা বললে,,,,,নিরব ওর অবস্থা বুঝতে না দিলেও ওরা ঠিকই বুঝতে পেরেছে,,,,,কিন্তু ওদের আর কি করার আছে,,,,,,তারপর দুজন কথাকে বললো ওর খেয়াল করতে কথা বলে দিয়েছে ও থাকতে নিরবের কিছুই হবে না,,,,,এই তিনদিন নিহানের খেয়াল নিধীই রেখেছে,,,,,নিধী যেনো সেই আগের নিধী হয়ে গেছে,,,,,দুজনেই যেনো একটা নতুন জীবন পেয়েছে,,,,,ওদের জীবন যে সুন্দর একটা মোড় পেয়েছে যেই মুড়েই কাটিয়ে দিতে চায় ওরা সারাটাজীবন,,,,,মনের জমে থাকা ভালোবাসাটা যে পূর্ণ হয়েছে ওদের,,,,,কিন্তু এই খুশির সাথে ওদের মাঝে নিরবের জন্য খারাপ লাগাটাও আছে,,,,,আগামীকাল সকালেই নিহানকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে,,,,,এদিকে প্রতিদিনের মতোই কথা নিরবকে এই মাত্র খাবার খাইয়ে এলো জোর করেই খুব বেশি খায় নি একটু খেয়েছে,,,,,খাবারটা খাইয়ে প্লেটগুলো নিচে রেখে আবার নিরবের রুমে গেলো কথা,,,,এদিকে তিন দিন ধরে কথার উপর নজর রাখছিলো ইতি ও মিতি আজকেও ঠিক তাই,,,,,

ইতিঃওই নিধী তো আমার কপালটা খেলো আর এই কথা মনে হয় এবার তোর কপালটা খাবে আপু,,,,,

মিতিঃআমার কপাল খাওয়া কি মুখের কথা না কি,,,,,আর এই ফকিন্নি খাবে আমার কপাল,,,,,এর আগে আমি ওর প্রাণ খেয়ে নিবো,,,,

ইতিঃএই আপু তুই ওকে প্রাণে মেরে ফেলবি না তো??

মিতিঃআরে না আমি মারবো কেনে ও নিজে নিজেই মরবে,,,,,

ইতিঃমানে,,,,??

মিতিঃমানে খুব সোজা এসব ফকিন্নিদের নিজেদের ইজ্জত খুব প্রিয় থাকে যেটাতো দাঁগ লাগা মানে নিজেদের মরণ মনে করে এরা,,,,,আর আমি কথার এই দূর্বলতাটাই কাজে লাগাবো,,,,বড় শখ না বার বার নিরবের রুমে যাওয়ার বার করছি তবে,,,,(শয়তানি একটা হাসি নিয়ে এলো ঠোঁটের কোনে)

(এদিকে কথা জানে নিরবের ঘুম আসবে না,,,,তাই ও গেলো ওর রুমে গিয়ে দেখে নিরব বালিশে চিৎ হয়ে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে পলক ফেলছেই না,,,,কথা গিয়ে ওর পাশে বসলো তারপর ওর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেই ও চট করে চলে আসলো কথার কোলে,,,,মুখ গুজে নিলো ওর কোলে,,,,,শব্দ করছে না কিন্তু ও যে কাঁদছে তা কথা ভালোয় বুঝতে পারছে,,,,,কথা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,,,,,কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরব ঘুমিয়ে পড়লো কথার কোলে,,,,,ওর কোলে যে নিরব শান্তির একটা ঠিকানা পায়,,,,নিরব ঘুমিয়ে পড়লে কথা ওকে বালিশে শুইয়ে দেয় তারপর রুমের লাইট অফ করে ডিম

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here