দোটানা,অন্তিম পর্ব

0
1911

#দোটানা,অন্তিম পর্ব
#লেখিকাঃআরোহী_নুর

নিরবঃ(নিধীকে ভালোবেসে ওর কাছ থেকে দূরে থেকেও ওর সুখে কাতর থাকি আমি প্রায় সারাদিন,,,,,ও অন্যের হয়ে গেছে ভাবলেই আমার ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে কিন্তু কথাও তো আমাকে ভালোবাসে,,,,,ও সারাদিন আমার সাথে থেকেও আমাকে অন্যের জন্য কষ্ট পেতে দেখে কি করে সহ্য করে নেয়,,,,কি করে মেনে নেয় তা,,,,,বরং আমাকে খুশি রাখার চেষ্টায় থাকে সারাদিন,,,,,আমার কষ্টটা দূর করতে যেয়ে নিজের মনে কষ্টের পাহাড় গড়ে যাচ্ছে,,,,,আর আমি স্বার্থপরের মতো নিজের কষ্ট দুর করার জন্য ওকে ব্যবহার করছি,,,,,বিয়ের আজ আট মাস আজ পর্যন্ত ভালো করে তাকাইও নি ওর দিকে,,,,,কতোটা কষ্ট পায় এই পিচ্ছি মেয়েটা কিন্তু সব ভুলে আমায় সামলানোর চেষ্টায় থাকে,,,,,আর নয় অনেক হয়েছে স্বার্থপরতা,,,,,এবার আমি উদার হতে চাই এই পাগলিটার প্রতি,,,,,ভালোবাসতে চাই একে,,,,,এতোটা ভালোবাসতে চাই যে ভালোবাসা ওর মনে জমে থাকা সব ক্ষত পুরন করে দেবে,,,,,)……(নিরব খেয়াল করলো কথা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ী পড়েছে এটা নিরবই ওকে এনে দিয়েছিলো,,,,,শাড়ীটাতে ওকে খুব মানিয়েছে,,,,,নিরব এই প্রথম ওকে এভাবে পর্যবেক্ষন করলো,,,,,খোলা চুল বাতাসে দুলছে,,,,, কথা বলছে গোলাপি ওই ঠোঁটগুলো অববতর,,,,,টানাটানা চোখগুলোও যেনো তাতে সায় মেলাচ্ছে,,,,,নিরব ঘোর লাগা কন্ঠে বললো)

নিরবঃতোকে অনেক সুন্দর লাগছে আজ,,,,,তুই দেখতে যতটা সুন্দর তোর মনটা তার থেকেও হাজারগুণ বেশি সুন্দর যদি আমি তোর মতো হতে পারতাম,,,,, (কথাটা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো কথা,,,,,নিরবের কথা যেনো বুঝেও বুঝতে পারছে না কথা,,,,,তারপর নিরব কথার একটা হাত নিজের দিকে নিলো আর পকেট থেকে একটা স্বর্ণের ব্রেসলেট বের করলো যেখানে খুব সুন্দর করে নিরব আর কথার নাম লিখা একসাথে,,,,নিরব ব্রেসলেটটা পড়িয়ে দিতে দিতে বললো)

নিরবঃনিহান বলেছিলো বাসর রাতে বউকে নাকি উপহার দিতে হয়,,,,গতবার তো কিছুই দেই নি এবার ভাবলাম না দিলে তো আর হয় না,,,,তাই এটা নিয়ে এলাম পছন্দ হয় নি তোর??

কথাঃপছন্দ হবে না কেনো খুব সুন্দর এটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে,,,,,(কথা ব্রেসলেটটা হাতে নিয়ে বার বার ওটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে এপাশ ওপাশ করে দেখছে মুখে এক ফালি হাসি নিরব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ওর মায়াবী চেহারার দিকে,,,,বুঝাই যাচ্ছে ওর ব্রেসলেটটা অনেক পছন্দ হয়েছে আর সব থেকে বড় কারন হলো ওটাতে ওর আর নিরবের নাম একসাথে করে দেওয়া আছে,,,,নিরব কথার দিকে তাকিয়ে ঘোরে চলে গেলো,,,,,ভাবতে লাগলো এতদিন কি করে পারলো এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে ইগনোর করতে,,,,,নিজের কষ্ট ভুলাতে গিয়ে ওকে কতো কষ্ট দিয়ে দিয়েছি তার হয়তো পরিমাপও হবে না,,,,,ওর দিকে তাকাতে তাকাতে নিরব ঘোরের মধ্যেই বলে উঠলো)

নিরবঃআই লাভ ইউ কথা,,,,,,(কথাটা শুনে কথা যেনো আচমকা শখ খেলো,,,,,অবাক দৃষ্টিতে তাকালো নিরবের দিকে,,,,,,,)

নিরবঃঅবাক হওয়ার কিছুই নেই কথা আমি যে সত্যিই তোকে ভালোবেসে ফেলেছি,,,,,হয়তো নিধীর জায়গায় তোকে কখনো বসাতে পারবো না কিন্তু আমার মনে যে তুই নিজের জন্য আলাদা এক টা জায়গা বানিয়ে নিয়েছিস,,,,,জানিনা কখন কিন্তু তোকে যে ভালোবেসে ফেলেছি আমি,,,,,নিধী আমার প্রথম ভালোবাসা হয়তো ওকে ওর জায়গা থেকে কখনো সরাতে পারবো না,,,,,কিন্তু তুই আমার শেষ ভালোবাসা কথা,,,,, প্রথম ভালোবাসা স্পেশাল হয় কথা কিন্তু শেষ ভালোবাসাটা বেঁচে থাকার সম্বল,,,,, নিধীকে ছাঁড়া তো তুই আমায় বাঁচতে শিখিয়ে দিয়েছিস কিন্তু তা করতে করতে যে তুই ই আমার বেঁচে থাকার কারন হয়ে উঠেছিস,,,,,আমি তোকে ভালোবাসতে চাই কথা,,,,,এই ৮ মাসে তোকে যতোটা কষ্ট দিয়েছি সব ভুলিয়ে দিতে চাই,,,,,দিবি কি তোকে ভালোবাসার সেই অধিকার টুকু,,,,,,(কথাটা শুনে কথার চোখ টপকে জল গড়াতে শুরু হলো,,,,কথার কান্না করা দেখে নিরব অস্থির হয়ে ওর চোখ মুছতে শুরু করলো,,,,)

নিরবঃকি হয়েছে কথা কান্না করছিস কেনো??আমার কোনো কথাকি তোর খারাপ লেগেছে,,,,,আমি শুধুই তোকে কষ্ট দেই তাই না রে কথা,,,,,,

কথাঃ(নিরবের হাত ধরে বললো)এটা যে কষ্টের কান্না নয় নিরব সাহেব,,,, (নিরব কথাকে ওর নাম ধরে ডাকতে বলেছে কিন্তু কথার এতে কেমন যানি লাগে তাই নামের সাথে সাহেব লাগিয়ে নিরব সাহেবই ডাকে,,,,,),,,,,এটা যে আনন্দের কান্না,,,,,সুখের কান্না,,,,,আমার কপালে যে আপনার ভালোবাসা পাওয়ার সুখ লিখা আছে সেটা বিশ্বাস করতে মন ভয় পাচ্ছে,,,,,সত্যিই কি আমার ভাগ্য এতো ভালো,,,,,

নিরবঃভাগ্য তোর নয় আমার ভালো যে আমি তোকে পেয়েছি,,,,,,কখনো ছেড়ে যাবি না তো আমায়,,,,,,

কথাঃকখনোই যাবো না,,,,,

(তারপর নিরব কথাকে জড়িয়ে ধরে কথাও সজোরে জড়িয়ে ধরেছে নিরবকে,,,,,)

নিরবঃআই লাভ ইউ কথা,,,,,

কথাঃআই লাভ ইউ টু নিরব সাহেব,,,,,(তারপর নিরব কথাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর কান্নামিশ্রিত চোখগুলো আলতো করে মুছে দিলো,,,,,তারপর ওর কপালে ভালোবাসার একটা পরশ দিলো,,,,,কথা শিহরনে চোখ বন্ধ করে নিলো,,,,,তারপর নিরব ওকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো বেডের দিকে,,,,,এরপর ওরা দুজনেরও ভালোবাসা পূর্ণ হলো,,,,,এভাবেই দিনগুলো চলতে থাকলো,,,,,এখন নিরব আর ইচ্ছে করেই নিধীর কথা মনে করে না,,,,,,নিজের সব ফোকাস কথার উপরই রাখে,,,,,একা থাকলে নিধীকে হারানোর একটা আক্ষেপ এলেও একা ও থাকে না জীবনের সব মূহুর্তেই কথাকে রাখে,,,,,সবসময় নিজের আশেপাশে কথাকে রাখে,,,,,ওকে ছাড়া এখন যেনো নিরব অচল কথা এখন ওর নিশ্বাসে পরিনত হয়েছে,,,,, ও না থাকলে যে নিরবও শেষ হয়ে যাবে,,,,,তারপর চারজন একজায়গাতেই হানিমুনে গেলো,,,,,নিরব কথা যেতে চাইছিলো না কারন ওরা এর আগেও একবার হানিমুনে গেছে কিন্তু নিধী নিহান মানলো না তারপর ওরা ও গেলো একসাথে অফিস এ ফাঁকে আদনান সাহেবই দেখলেন,,,,,প্রায় ২ মাস ওরা সুইজারল্যান্ডে হানিমুনে ছিলো এ ফাঁকে ৪ জন অনেক মজা করলো,,,,,নিরব এখন সত্যিই ভাবছে যে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন,,,,,ওর জন্য কথাই ভালো ছিলো তাই আল্লাহ কথাকেই রেখেছেন ওর কপালে,,,,, জীবনসাথী হিসেবে কথাকে পেয়ে না জানি কতোবার শুকরিয়া আদায় করেছে আল্লাহর কাছে,,,,,তারপর ওরা চলে এলো বাড়িতে এসে আবার কাজে লেগে গেলো সবাই,,,,নিধী কথা কাজটা ছেড়ে দিতে চাইছিলো,,,,,ওরা এক তরফা সংসারটাই দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু উনাদের সম্রাটরা তা দেন নি উনারা উনাদের প্রিয়সীদের সবসময় চোখের সামনে রাখতে চান,,,,,নিধী আর সে জায়গাতে বাড়ি না বানিয়ে ওর মা-বাবার নামে একটা অনাথ আশ্রম বানিয়েছে,,,,,যেহেতু ও এখন এই ঘরের বউ ও এখানেই থাকবে,,,,,ওর মাও তো ওর সাথেই থাকবেন,,,,,এভাবেই দিন চলছে,,,,,আজ শুক্রবার নিহান নিরব জুমার নামায এর পর আর বাড়ি আসে নি কোনো একটা কাজে দুই ভাই বাইরে ফিরতে সন্ধ্যা হবে,,,,এদিকে নিধী কথা বসে বসে লুডু খেলছিলো হঠাৎ কথা মুখ ঢেকে দৌঁড় দিলো ওয়াসরুমে নিধীও ওর পিছন গেলো গিয়ে দরজায় ওকে ডাকতে শুরু করলো তখন ভিতর থেকে বমির শব্দ শুনতে পেলো,,,,,কথা একটু সময়ে বাইরে আসলো)

নিধীঃকি হয়েছে কথা তুমি ঠিক আছো তো??

কথাঃঠিক আছি আপু,,,,,জানি না দু-চারদিন ধরে খুব বমি বমি পায়,,,,,মাথাটাও ঘুরে,,,,,

নিধীঃবলো কি তোমার শরীর খারাপ তাও দু-চারদিন ধরে আর তুমি কাউকে বলো নি,,,,স্যারকেউ বলো নি??

কথাঃআরে না আপু উনাকে বললে উনি শুধু শুধু পেরেশান হয়ে পড়বেন আমায় নিয়ে,,,,,আর আমার তেমন কিছু হয় নি তুমি চিন্তা করো না টক খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে,,,,,জানো দুদিন ধরে টক খেতে যা লাগে না আমার,,,,(কথাটা শুনে নিধীর একটা খটকা লাগে,,,,,সব সিনড্রোম দেখি মিলে যাচ্ছে এর মানে নিধী ভালো কিছু আশা করছে,,,,,তারপর নিধী ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি এনে বললো)

নিধীঃচলো…..

কথাঃকোথায়??

নিধীঃগেলেই বুঝতে পারবে,,,,,(তারপর নিধী কথাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো তারপর ডাক্তার ওকে টেস্ট দিলেন টেস্টটা করিয়ে খনিক বসে রিপোর্টাও নিয়ে এলো রিপোর্টা দেখার জন্য যে আর তস সইছিলো না নিধীর,,,,,রিপোর্টা হাতে পেয়েই খুশিতে নিধীর চোখ জ্বলে ভরে এলো,,,,,এদিকে কথা এখনও কিছু বুঝতে পারছে না,,,,,রিপোর্ট নিধীর হাতে আর কথা নিধীর দিকে চেয়ে বসে আছে,,,,,)

কথাঃআরে আপু তুমি রিপোর্ট দেখে কাঁদছো কেনো কি আছে রিপোর্টে আমি মরে যাবো কি আপু??

নিধীঃখবরদার যদি এমন কথা আবার বলেছো তো(রেগে গিয়ে),,,,,আর কখনো এমন কথা বলবে না এই বলে দিলাম,,,,

কথাঃ(কিউট ফেস বানিয়ে) ওকে সরি আর বলবো না এখন বলো রিপোর্ট দেখে কাঁদছো কেনো??

নিধীঃআরে পাগলি এটা তো খুশির কান্না আমি যে ছোট মা হতে চললাম,,,,,(খুশি হয়ে)

কথাঃমা হবার সময়ে তুমি ছোট মা হচ্ছো বিষয়টা বুঝতে পারলাম না আপু,,,,(মাথা চুলকিয়ে বললো,,,,,আসলে কথা এমনই যেকোনো জিনিস বুঝে কম,,,,,শুধু শুধু প্রশ্ন করে)

নিধীঃআরে পাগলি বোন আমার তুমি মা হতে চললে,,,,,

(কথাটা শুনার পর তো কথা খুশি তে আত্নহারা হয়ে পড়লো,,,,,ওরও চোখ বেয়ে নেমে পড়লো খুশির জল,,,,,একে ওপরকে জড়িয়ে ধরলো,,,,,দুজন যে খুশির খবররা আর পেটে পুরে রাখতে পারছে না হাসপাতাল থেকেই সবাইকে জানিয়ে দিলো সংবাদটা,,,,,সবাই তো খুশিতে আত্নহারা,,,,,নিহান নিরব কথাটা শোনার পরপরই নাচতে নাচতে বাড়ির উদেশ্যে রওয়ানা দিলো সব কাজ ফেলে,,,,,নিরবের যেনো রাস্তাই শেষ হচ্ছে না কবে ও কথার কাছে পৌঁছাবে কবে ও কথার পেটে হাত রেখে নিজের অংশকে অনুভব করবে,,,,,আসতে আসতে দুজন বিপুল পরিমাণ মিষ্টি নিয়ে এসেছে এদিকে ওদের আসার আগেই আদনান সাহেব বাড়িতে মিষ্টির ঝর বইয়ে দিয়েছেন,,,,সবার আনন্দ উন্মাদ দেখে কথা লজ্জায় রুমে চলে গেলো,,,,,তখনি নিহান নিরব এলো বাড়িতে নিরব আর কাউকে কিছু না বলে সোজা ছুটে গেলো নিজের রুমের দিকে নিজের প্রিয়সীর কাছে,,,,,কথা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তখন নিজের পেটে হাত দিয়ে মুচকি হাসছিলো তখনি নিরব এসে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওকে কোলে তুলে ঘোরাতে শুরু করলো কথা তো হেসে হেসে পাগল,,,,,তারপর কথাকে বেডে নিয়ে বসিয়ে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললো)

নিরবঃও কথা তুই জানিস না তুই আমাকে কতো বড় সুখ দিয়েছিস,,,,,তোর ঋন যে আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না,,,,,,

কথাঃকি বলছেন আপনি এসব,,,,,সুখ তো আপনি আমায় দিলেন মা হবার সুখ,,,,,

নিরবঃ,,,,,(কথার পেটে হাত রেখে)বল না আমাদের ঘরে প্রথম কে আসবে,,,, রাজকুমারীই চাই আমার,,,,,ঠিক তোর মতো একটা কিউট রাজকন্যা চাই আমি,,,,,

কথাঃআমার তো ঠিক আপনার মতো একটা রাজকুমার চাই,,,,,

নিরবঃরাজকুমার হোক বা রাজকুমারী হবে তো আমাদেরই,,,,,(এটা বলে নিরব কথাকে জড়িয়ে ধরে,,,,হঠাৎ অনুভব করে কথা কাঁদছে,,,,,নিরব হয়রান হয়ে জিজ্ঞেস করে)

নিরবঃকি হয়েছে কথা তুই কাঁদছিস কেনো,,,,কি হয়েছে তোর,,,,,বল আমায়,,,,,??

কথাঃআজ মা-বাবা থাকলে কতো খুশি হতো তাই না,,,,,,

নিরবঃ(ওর চোখের জল মুছে দিয়ে),,,,,,এভাবে কান্না করলে যে উনাদের আত্মার কষ্ট হবে,,,,,কাঁদিস না আর তুই জানিস না আমার তোর কান্না সহ্য হয় না,,,,উনারা চলে গেছেন কিন্তু দেখিস আমাদের বাচ্চারা আমাদের জীবনে উনাদের কমতি পুরন করে দিবে,,,,আর যেনো কান্না করতে না দেখি তোকে,,,,,এবার লক্ষি মেয়ের মতো একটা হাসি দে তো দেখি,,,,,

(তারপর কথা উৎফুল্ল একটা হাসি নিয়ে জড়িয়ে ধরে নিরবকে,,,,,এদিকে নিধী রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গোছাচ্ছে তখনি ওর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিহান,,,,,)

নিধীঃকি হচ্ছে এসব??

নিহানঃরোমান্স হচ্ছে,,,,,

নিধীঃওরে আমার রোমান্টিক বর,,,,,

নিহানঃহুম,,,,আমিও বাবা হতে চাই,,,,,তুমি বলেছিলে ভাইয়া কথা যতোদিন না জীবনে আগে বেরুবে ততদিন আমরা বেবি প্লান করবো না এখন তো ওরা জীবনে অনেক আগে চলে গেছে এখন আমাদেরও বেবি প্লানে সমস্যা নেই তো,,,,,

নিধীঃসমস্যা হবে কেনো আমার কি আর মা হতে ইচ্ছে করে না,,,,,

নিহানঃসত্যিই,,,,,,তবে বলো না আমি কতোদিনে বাবা হবার গুড নিউজ পাবো,,,,

নিধীঃওটা আমি কি জানি মিস্টার ওটা তো আপনার উপর ডিপেন্ড করে,,,,(লজ্জা পেয়ে,,,,)

নিহানঃতবে তাই,,,,তবে চলো তোমাকে আজ দেখিয়ে দেই নিজের দক্ষতা (নিধীর দিকে দুষ্টু লুক নিয়ে চোখ মেরে বললো,,,,,নিধী তৎক্ষনাৎ লজ্জায় মুখ লুকালো নিহানের বুকে,,,,,তারপর নিহান ওকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো বেডের দিকে,,,,দুমাস পরে নিধীরও মা হবার সংবাদ এলো,,,,সবাই ডাবল খুশিতে মেতে উঠলো,,,,এভাবেই চলতে থাকে দিন,,,,,নিহান নিরব তাদের প্রিয়সীদের খুব খেয়াল রাখছে চোখের বাহির হতে দিচ্ছে না,,,,দিন দিন কথা নিধী অনেক কিউট হয়ে যাচ্ছে,,,,,নিহান নিরব ওদের উপর আরও ফিদা হচ্ছে দিন দিন,,,,নিরব এখন ভুলেও নিধীর কথা ভাবতে চায় না,,,,,কারন এখন নিধী অন্যের বউ আর অন্যের বাচ্চার মা হতে চলেছে,,,,আর ওর স্ত্রীও ওর অনাগত বাচ্চার মা হচ্ছে এ অবস্থায় অন্য নারীর কথা ভাবাও পাপ,,,,,তাই এসব কথা এখন কল্পনাতেও ভাবে না,,,,,আজ শহরে অনেক বড় মেলা বসেছে নিধী কথা জেদ ধরেছে সেখানে যাবে বলে,,,,,সবাই প্রথমে না মানলেও পরে মেনে নেয় কিন্তু নিহান নিরবের এক কথা না না না,,,,কারন এই সময় ওদের বাইরে যাওয়া রিস্কি,,,,কিন্তু ওরা যে মানছেই না ওরা যাবে সেখানে,,,,,তারপর আর কিছু করতে না পেরে নিহান নিরব মেনে যায় যেহেতু ডাক্তার বলেছেন ওদের এ সময়টাতে সবসময় খুশি রাখতে,,,,,তাই ওরা ওদের নিয়ে যেতে রাজি হয়,,,,বাইরে অনেক শীত পড়েছে,,,,মাঘ মাস চলছে,,,,নিহান নিরব নিধী কথাকে ভালো করে ঢেকে নিয়ে এসেছে যাতে শীত কোনো দিক থেকে হামলা না করতে পারে,,,,কথার তখন ৯ মাস মাত্র শুরু হলো,,,,আর নিধীর তখন ৬ মাস,,,,, নিধী কথা পিছন বসে গল্প করছে আর নিহান ড্রইব করছে নিরব ওর পাশের সিটে বসেছে বার বার পিছনে তাকাচ্ছে ওদের কিছু লাগবে না তো সেটা জানতে,,,,তারপর ওরা পৌঁছে যায় মেলার জায়গায়,,,,,নিহান নেমে গিয়ে নিধীর দরজা খুলে দেয়,,,,নিরবও নেমে যায় কথার পাশের দরজা খুলতে কিন্তু এর আগে কথা নিজে দরজা খুলতে চাইলে নিরব কেয়ারভর্তি বকা দেয়,,,,)

নিরবঃএই কি তুই আমি আসছি না নিজে থেকে কেনো পাকনামি করছিস,,,,একটা ঘটিয়েই শান্ত হবি তুই,,,,,সারাদিন ছটফট তোর করতেই হয় না,,,,

কথাঃ(কিউট ফেস বানিয়ে বললো)সরি,,,,,

নিরবঃ(ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওকে মোজা পরায় নি),,,,,এই দেখেছো আসলে তোর সাথে থাকতে থাকতে আমি নিজেই স্টুপিড হয়ে গেছি তোকে সব কিছুই পড়িয়ে এনেছি কিন্তু মোজা পরাই নি এখনি ঠান্ডা লেগে যেতো,,,,,দাঁড়া আমি মোজা সাথেই এনেছি পড়িয়ে দেই,,,,(এটা বলে গাড়ি থেকে একটা ব্যাগ বের করে ওটা থেকে মোজা বের করলো,,,,)

নিধীঃকিন্তু স্যার এগুলা আপনি কি ভেবে আনলেন??

নিরবঃআরে নিধী তুমি জানো না এই স্টুপিড মেয়েটাকে সবসময় একটা না একটা গড়বড় করে তাই এর যখন যা লাগে আমি সবসময় এক্সট্রা এক্সট্রা নিজের সাথেই রাখি,,,,দেখো আজ মোজা রাখায় কাজে লাগলো,,,,আমি তো এর শীতের কাপড়ও সাথে এনেছি আরও,,,,,এটা বলে নিরব ওকে মোজা পড়াতে গেলো)

কথাঃআরে লাগবে না আমি নিজে পারে নিবো,,,,,

নিরবঃবলেছি না পাকামো না করতে,,,,,চুপচাপ বসে থাক,,,,,(তারপর ওর পায়ে মোজা পড়াতে ব্যাস্থ হয়ে পড়লো নিরব,,,,, নিধী ওদের দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির একটা নিশ্বাস ফেললো,,,,,তারপর নিহান ওর কানে কানে বললো)

নিহানঃভাইয়া ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে তাই না নিধী,,,,

নিধীঃআমি বলেছি না একদিন স্যার কথাকে ভালোবাসবেনই,,,,

নিহানঃহুম,,,,,কিন্তু আমিও তোমায় কম ভালোবাসি না জানপাখি,,,,,আমিও যে তোমার জন্য এক্সট্রা শীতের কাপড় নিয়ে এসেছি,,,,,

নিধীঃকি আপনিও,,,,,

নিধী+নিহানঃহা হা হা,,,,,,

(তারপর ওরা মেলাতে অনেক ঘুরলো নিহান নিরবতো ওদের হাতটাই ছাড়ছে না,,,,,তারপর অনেক ঘুরাঘুরির পর ওরা বাড়ির জন্য রওয়ানা দিলো কারন নিধী কথাকে নিয়ে এভাবে বেশিক্ষণ বাইরে থাকা ঠিক না,,,,,কথা নিধী যেতে চাইছিলো না ওদের প্রিন্সরাই জোর টোর করে ওদের ম্যানেজ করলো,,,,,তারপর নিরব ড্রাইব করছিলো অনেক আস্তে করে যেহেতু নিধী কথাকে নিয়ে জোরে ড্রাইবিং করা ভালো হবে না,,,,,কিন্তু হঠাৎই একটা ট্রাক এলো সামনে থেকে ট্রাকটার গতি দেখে বুঝা যাচ্ছিলো ওটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে,,,ওটা ওদের গাড়ির দিকেই তেড়ে আসছিলো নিরব নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে কারটা অন্যদিকে নিয়ে গেলো,,,, হুট করে ঘুড়াতে গিয়ে গাড়িটা অনেক বেশি নড়েচড়ে গেলো যেটা প্রেগনেন্ট মেয়েদের জন্য একদম ঠিক না,,,,,ট্রাকটা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো নিরবও গাড়ি থামালো আর দুজনই নিধী কথার কাছে ছুটে গেলো পাগলপ্রায় হয়ে,,,,,)

নিহানঃনিধী তুমি ঠিক আছে তো,,,,,

নিধীঃআমি ঠিক আছি কিন্তু কথা,,,,,

নিরবঃকথা,,,,(চিৎকার করলো),,,,,(কথা আমার বাচ্চা বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলো,,,,কথা পেটে ব্যাথা পেয়েছিলো গাড়ি এমনভাবে নড়ে যাওয়ায়,,,,,তাড়াতাড়ি ওরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো,,,,,ডাক্তার নিধীর চেকআপ করলো ও একদম ঠিক আছে,,,,,কিন্তু কথাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো,,,,,ডাক্তার বলেছেন ওর এখনই ডেলিভারি করতে হবে,,,,,,আর আচমকা এই এক্সিডেন্টের কারনে বাচ্চারা নিজেদের স্থান পরিবর্তন করে নিয়েছে এতে অনেক কমপ্লিকেশন হচ্ছে,,,,,কথার অবস্থা খারাপ,,,,,ডাক্তার কারো বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না,,,,,অপারেশন চলছে সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে সবার চোখ বেয়ে জল নামছে,,,,,মনে মনে সবাই আল্লাহ নাম জপছে,,,,,নিরব নামাযের রুমে নামায পড়ে আল্লাহর কাছে ওর জীবন ভিক্ষা চাইছে,,,,,কথা ছাড়া যে ও বাঁচবে না,,,,,মোনাজাত শেষ করতে গিয়ে সজোরে কান্না
শুরু করে দেয় নিরব,,,,,নিধী দুরাকাত নফল নামায পরে কথা এবং বাচ্চাদের মঙ্গল চাইলো তারপর নিরবের পাশে গিয়ে বসলো,,,,,নামায শেষে নিরব গিয়ে ওটির বাইরের বেঞ্চে বসেছে,,,,,বার বার ওটির দরজার দিকে তাকাচ্ছে চোখের জল ওর থামার নামই নিচ্ছে না,,,,নিহান এবং বাকিরা সামনে
দাঁড়িয়ে আছে নিধী গিয়ে নিরবের পাশে বসে ওর কাধে হাত রাখলো,,,,,নিধীর স্পর্শে নিরব আরও কান্নায় ভেঙে পড়লো,,,,,

নিরবঃকেনো নিধী,,,,কেনো,,,,,আল্লাহ যখন আমাকে বেঁচে থাকার একটা আশা দিয়েছেন তবে কেনো এখন তা কেড়ে নিচ্ছেন,,,,,আমি যে কথাকে অনেক ভালোবাসি ও আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্ভল,,,,ওর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না,,,,,,

নিধীঃধৈর্য্য ধরেন স্যার কিছুই হবে না কথার,,,,,আপনার কথা আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না,,,,,আল্লাহ ওকে ঠিকই আপনার কাছে ফিরিয়ে দিবেন,,,,,(তারপর অনেকক্ষণ পর ডাক্তার বেড়িয়ে সুখবর দেন,,,,,অনেক কষ্ট করে হলেও উনারা মা এবং বাচ্চাদের বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন,,,,,নিরব আর কথার দুদুটি ছেলে হয়েছে ঠিক একই রকম দেখতে,,,,,হ্যাঁ আপনারা ঠিকই ধরেছেন টুইনস,,,,, সবাই সস্থির নিশ্বাস ফেলে খুশি হলো,,,,নিরবতো মরতে মরতে বাঁচলো,,,,,বাচ্চাগুলোকে কোলে নিয়ে আর নিজের প্রিয়সীর সুস্থ মুখের হাসি দেখে ভুলে গেলো সব দুঃখ,,,,,৪ মাস পর নিধীর কোল আলো করে আসলো একটা ছোট্ট ময়নাপাখি,,,,,, নিহান তো মেয়ের বাবা হয়ে মহাখুশি,,,,,সবাই ডাবল খুশি উদযাপন করছে,,,,,এভাবেই কেটে গেলো ছয় টি বছর এ ছয় বছরে ওদের মধ্যাকার ভালোবাসার বন্ধন আরও মজবুত হয়েছে,,,,,এমনি এক বিকেলে নিহান নিরব বাগানের দোলনায় বসে গল্প করছে সামনে খেলা করছে ওদের বাচ্চারা,,,,,সায়ান আয়ান আর আরুশি,,,,,সায়ান আয়ানের বন্ধু মানেই আরুশি,,,,,ও ছাড়া অন্য কোনো বাচ্চার সাথে খেলা তো দূর কথাও বলে না সায়ান আয়ান,,,,,,)

নিহানঃআমার তো আমার মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে রে ভাই,,,,,

নিরবঃকেনো??

নিহানঃএজন্যই যে নিধীর মতো না আমার মেয়েকেও এই দুই ভাইদের নিয়ে দোটানায় পড়তে হয়,,,,,

নিরবঃআশা দোটানায় পরুক এর আগে কথার মতো কাউকে নিয়ে আয় তবেই তো সব সমাধান হয়ে যাবে,,,,,

নিহানঃহ্যাঁ এটা ছাড়া এখন আর কোনে রাস্তাও নেই দেখছি,,,,

(তারপর দুজনেই খক করে হেসে উঠে,,,,এদিকে বাচ্চারা ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে মায়েরা ঝগড়া ভাঙতে ব্যাস্ত,,,,)

আয়ানঃআশা আমার সাথে খেলবে,,,,

সায়ানঃনা আশা আমার সাথে খেলবে,,,,

আশাঃআমি কারো সাথেই খেলবো না তোমরা দুজনই পঁচা,,,,,

আয়ানঃআমি পঁচা না আশা সায়ান পঁচা,,,,,

সায়ানঃআমি পঁচা না আয়ান পঁচা,,,,

নিধীঃকি বাচ্চারা ঝগড়া করছে আর আপনারা হাসছেন বসে বসে,,,,,

নিহানঃআমরা কি আর কম ঝগড়া করেছি,,,,মনে নেই তোমার,,,,,(এটা বলে নিহান নিরব আবারও একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো,,,,,আর নিধী কপালে হাত দিয়ে বলে উঠলো)

নিধীঃওফ আবারও দোটানা,,,,,

কথাঃমানে???(মাথা চুলকিয়ে)

সমাপ্ত,,,,,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here