Destiny_of_Love PART_12 | kache ashar golpo

0
5704

Destiny_of_Love
PART_12
#Nishat_Tasnim_Nishi

২০.
পুরো পরিবার বসে আছি দিদুনের সাথে। ডাক্তার বলেছে দিদুনকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য। দিদুন সাফ মানা করে দিয়েছেন। উনার কথা হলো উনি এখানে থাকবেন না।ডাক্তার আবার বলতেই দিদুন হাসিমুখে বলেছেন যে, –”ডাক্তার,সবাইকে মরতে হবে,সেটা তার নির্ধারিত সময়ে। আমি আর বাচবোই বা কয়দিন?কী দরকার শুধুই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকার? এখানে থাকলে বাঁচা আর মরা সমান লাগবে। এরথেকে বরং আমি শেষ সময়ে পরিবারের সাথে আনন্দ করে কাটাই।”

এর মধ্যেই হুড়মুড় করে প্রবেশ করলেন নিরা ফুফি। ফুফি কে দেখে আমার পুরো পরিবার চমকে গিয়েছে,সাথে আমিও। ফুফি এসেই দিদুনকে জড়িয়ে কান্না করতে লাগলেন,আর আমরা সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। ফুফিকে দেখে দিদুন ও বড় রকম ঝাটকা খেয়েছে।

ও এখানে কী করছে?
বলেই চাচ্চুরা সবাই তেড়ে আসতে লাগলেন।দিদুন ইশারায় সবাইকে চলে যেতে বললেন। উনাদের নড়চড় না দেখে দিদুন আমাকে বললেন,ওদের সবাইকে বল চলে যেতে। আমি সবার দিকে তাকালাম,সবাই ধীরে ধীরে বের হতে লাগলেন।

ফুফি কাঁদছে,দিদুনের পা জড়িয়ে কাঁদছে। দিদুন তেমন কোনো রিয়েকশন দেন নি।উনি শুধু অন্য দিকে চেয়ে রয়েছেন।
—‘কেমন আছেন আম্মা?এখন কেমন লাগছে?’

—‘দিদুন কোনো কথা বলছে না।শুধু শুনছেন।’
ফুফি এবার শব্দ করে কাঁদতে লাগলেন।দিদুনের পা জড়িয়ে বারবার মাফ চাইতে লাগলেন।

—‘জানো আম্মা,আমার সোসাইটির সবাই মনে করে আমি নাকি সবচেয়ে সুখী। কিন্তুু বিশ্বাস করো আমি সবচেয়ে অসুখী। এ ত্রিশ বছরে একটা রাতেও শান্তিতে ঘুমাতে পারি নি। কিশোর বয়সের আবেগ সামলাতে না পেরে চলে গিয়েছিলাম তার হাত ধরে। কয়েক মাস ভালোই চলছিলো সংসার। টাকা ফুরাবার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় অশান্তি। ওর কাছে টাকা না থাকলে ও পাগল হয়ে যেতো। শুরু করে দিতে আমার উপর অত্যাচার। মুখ বুঝে সব সহ্য করছিলাম কারন তখন আমার গর্ভে আবরার ছিলো। আমি গর্ভবতী জানার পর ও আরো বদলে যায়। আমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে না পেরে ও জড়িয়ে যায় অন্য নারীতে। আমি এ নিয়ে ওর সাথে কথা বললেই ও এক সেকেন্ড দেরী করতো না আমার গায়ে হাত তুলতে। এরপর একদিন ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়,তখন আবরারের বয়স ১ মাস।আমি একদম অসহায় হয়ে যাই।কই যাবো?কী করবো?কীভাবে থাকবো এক মাসের ছেলেকে নিয়ে? আমার কাছে তখন কিছুই ছিলো না,বাড়ী থেকে যা নিয়ে গিয়েছিলাম সেসব বেঁচে প্রথম কয়েক মাস সংসার চলেছিলো।
বাড়ী ফিরে আসতে চাইলেও পারতাম না।কোন মুখে ফিরে আসবো? এক মাসের বাচ্চা টাকা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি কাজের খোঁজে। না হলে আমি আর আমার বাচ্চা মরে যেতাম। আল্লাহর কী কুদরত সেদিন রাস্তায় আমার জীবন একদম বদলে যায়।

রাস্তায় হাটতেছিলাম তখন দেখলাম এক মহিলা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে।প্রেশারের রুগী ছিলো।কেউ এগিয়ে আসছিলো না, আমি দ্রুত উনাকে পাশের হাসপাতালে ভর্তি করাই। ভদ্র মহিলার সেন্স ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। উনার সেন্স ফেরার পর উনি উনার ছেলেকে আর মেয়েকে ফোন দেয়। এর মধ্যেই উনি আমার জীবনের পুরো কাহিনী শুনেন। ছেলে মেয়ে এসে আমাকে অনেক বার শুকরিয়া জানালেন। আমি আবরারকে নিয়ে চলে আসতে চাইলাম কিন্তু ভদ্র মহিলা দেন নি।উনি আমাকে নিয়ে যান উনার বাড়ীতে। নতুন আশ্রয় হয়ে উঠে আমার।এক সপ্তাহ পর ছিলো উনার মেয়ের বিয়ে। মেয়ে বিয়ে দিয়ে উনি একলা হয়ে যান তাই এর মাস খানেক পরেই উনি উনার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দেন। মেয়ে টা উনাদের আগের পছন্দ করা ছিলো,ছেলেটার ক্লাসমেট ছিলো। উনার ছেলের বউ বিয়ের ১ মাস না যেতেই পালিয়ে যায় তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে। ছেলেকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বললে ছেলে সরাসরি না বলে দেয়, কারন পাত্রী ছিলাম আমি। ভদ্র মহিলার কথা শুনে আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি নিজেও বারন করে দেই। কারণ আমি একবারেই বুঝেছি যে বিয়ে কেমন।
ভদ্র মহিলা দিন দিন আরো অসুস্থ হচ্ছিলেন, এরপর একদিন আমাদের দুজনকেই কসম দিয়ে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন।
জানো আমি না খুব ভয়ে ছিলাম,কারন ছেলে টা তো আমাকে পছন্দ করে না।আমার সাথে কোনোদিন প্রয়োজন ছাড়া একটা কথা বলতো না। বিয়ের আগে প্রায় সারাদিন আমার ছেলেকে আদর করতো। ভাবতাম এখন হয়তো আমার ছেলেকে দেখতে পারবে না। ভয়ে ভয়ে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে নিচে বিছানা পাতিয়ে শুয়েছিলাম। সে এসে আমাকে নিচে দেখে এমন ধমক দিয়েছিলো যে আমার তা আজ এত বছর পরেও মনে রয়েছে। ছেলের নাকি ঠান্ডা লেগে যাবে, আমি নাকি কেয়ারলেস এসব বলে ও আমাকে আর আমার ছেলেকে বিছানায় শুয়েছিলো। আবরার আমাদের মাঝেই ছিলো।ও প্রতিদিন আবরারকে জড়িয়ে ঘুমাতো,মনে হতো ওর নিজের ছেলে। আমার থেকেও বেশি আমার ছেলের খেয়াল রাখতো।যা হয়েছিলো আমার জন্য কাল,কারণ আমি তখন রেহানের উপর একদম দূর্বল হয়ে যাই। ওর কেয়ার,আচরণ,বিহেভ আমার আর আবরারের প্রতি যত্ন নেওয়া সব কিছুর জন্যই ওর প্রতি দূর্বল হয়ে যাই। কিন্তু আমি তো জানি ও আমাকে কখনও ভালোবাসবে না। জানো সেটা ছিলো আমার সবচেয়ে বড় ভুল ধারনা। কারণ রেহান প্রথম দিন থেকেই আমার উপর দূর্বল ছিলো, আমার আগ থেকেই আমাকে ভালোবাসতো। আর ওর যে বিয়ে টা হয়েছিলো সেটা বিয়ে ছিলো না,মেয়ে টা কে উনি রিকুয়েস্ট করেছিলেন কয়েকদিন এমন নাটক করার জন্য। কেননা তাহলেই হয়তো উনার মায়ের বড়লোক ঘরের মেয়েদের প্রতি বিশ্বাস চলে যাবে,আর ওর বিশ্বাস ছিলো এরপর নাকি আমাকে বিয়ে করার জন্য বলবেন। এসব উনার ডায়েরী পড়ে জেনেছিলাম। বিশ্বাস করো আমি এত খুশি ছিলাম বলার বাহিরে। আবরারের পাঁচ বছর বয়সে কোল জুড়ে আসে রিয়া। সেদিনও ছিলো আমার পরিবারের অন্যতম খুশির দিন। এরপর আবার হুট করে ঝড়ের মতো সব বদলে যায়। আমি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে যাই, সেটাও ব্রেইন ক্যান্সার। কাউকেই জানাই নি, চুপচাপ নিজের ভেতর অসুখ পুষতে লাগলাম।কথায় আছে না অতীতের পাপ পিছু ছাড়ে না,ঠিক তেমন বিপদ আমার পিছু ছাড়ে নি। হয়তো তোমাদের মনে কষ্ট দিয়েছিলাম বলে সুখী হয়েও হতে পারতাম না। আমার স্বামী কে বললাম, মরার আগে অন্তত একবার হলেও যেনো আমি বাবামা থেকে ক্ষমা চাইতে পারি সেটার ব্যবস্থা করে দেও।সে চুপ করে ছিলো,আমি জানতাম না যে ও এর আগ থেকেই আমার পরিবারের খবর নিচ্ছিলো। আর আমার ছোট ভাইয়ের সাথে মিলে আমাদের পরিবারের সমস্যা মিটানোর ব্যবস্থা করতেছিলো। আমার ছেলেকেও পাঠিয়ে দিয়েছিলো আপনাদের মন জয় করার জন্য। সেদিন যখন স্ট্রোক করেছিলাম, তখন ছেলের থেকে জেনেছিলাম এসব। সব শুনার পর আমি ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিলাম আসার জন,কিন্তু ছেলে আমায় বারন করে দিয়ে বললো আরো পরে যেতে। আজ যখন ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো আপনার অসুখের কথা তখন আমি আর থাকতে পারি নি, ছুটে চলে এসেছি পাপের ক্ষমা চাইতে। আম্মা গো আম্মা, আমাকে মাফ করে দেন নাহলে মরেও শান্তি পাবো না।

ও মাই গড ফুফি এত কষ্ট সহ্য করেছেন?

ফুফি মাথা নিচু করে কাঁদছেন। পিছন থেকে মেঝো চাচ্চু বাদে উনার সব ভাইয়েরা উনার কাঁধে হাত রাখলেন। কথায় এত মনোযোগ ছিলাম যে উনারা কখন এসেছে খেয়াল ই করি নি। ফুফির সব ভাইয়ের চোখে পানি।
ফুফি আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছলেন।

মেঝো চাচ্চুর মুখ তখনও লাল হয়ে আছে। ফুফির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রেখেছেন। হঠাৎ উনি,,,

.
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here