Mr_Devil Part– 50th & last

0
3144

#Mr_Devil
Part– 50th & last
Writer– Aruhi khan (ছদ্মনাম)



ভোরের দিকে ইয়াশের ঘুম টা কিছুটা হালকা হয়ে আসে

ইয়াশ চোখ বন্ধ রেখেই বিছানার অন্য সাইডে হাতড়ে বুঝতে পারলো যে রশ্নি সেখানে নেই

ইয়াশ আড়মোড়া ভেঙে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখল
রশ্নি রুমের কোথাও নেই

তারপর ইয়াশের চোখ যায় বারান্দায়
সেখান থেকে এক টুকরো কাপড় মানে ওড়নার মতো কিছু হাওয়াতে ভাসছে

ইয়াশ বুঝতে পারলো রশ্নি বারান্দায় আছে

ইয়াশ উঠে সেখানে গেল

রশ্নি দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে
ইয়াশ গিয়ে ওর পাশে বসলো

রশ্নি বুঝেও কোনো রিয়েক্ট করলো না

ইয়াশ গিয়ে ওর আরেকটু কাছে বসলো
তারপর ওর মাথাটা নিজের কাঁধের উপর রাখলো

রশ্নি ওর হাতটা নিজের মাঝে জড়িয়ে নিলো

ইয়াশ– এত বাধা বিপত্তি ঝড় খর পেরিয়ে শেষে রশ্নি নীলের হলো

রশ্নি নীলকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো

ইয়াশ– কি হলো জান তুমি কাঁদছো কেন
এখন তো আমাদের হাসার সময়
দেখো সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে আমরা আবার এক হতে পেরেছি

রশ্নি– হুম তার জন্য আমি খুব খুশি কিন্তু নীল
আমার এই পৃথিবীতে আপন বলতে আর কেউ রইলো না
যাকে ছোট থেকে নিজের বাবার মতো ভালবাসলাম সেই কিনা আমাদের সাথে এমনটা করলো
নীল আজ আমার পৃথিবী থেকে বিশ্বাস নামের শব্দটা উঠে গেল

আমি মনে হয় না আর কখনো কাওকে বিশ্বাস করতে পারবো

প্লিজ কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না

ইয়াশ রশ্নিকে আরো জোরে আকড়ে ধরলো

— কখনো ছাড়বো না

ইয়াশ তারপর রশ্নির মুখটা উঁচু করে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিলো

ইয়াশ– তোমার জন্য একটা জিনিষ আছে
দেখবে চলো

ইয়াশ রশ্নিকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল

তারপর আলমারি থেকে একটা বক্স বের করে রশ্নির সামনে রাখলো

রশ্নি বক্সটা দেখা মাত্রই চিনে গেল

রশ্নি– এটা আপনার মানে তোমার না মানে আপনা তোমার ধুর ভাল্লাগে না

রশ্নির কান্ডে ইয়াশ হেসে দিলো

ইয়াশ– আমাকে তুমি করে বলতে পারো
কারন এটা এখন থেকে তোমার বাচ্ছা জামাই মানে নীল।
ইয়াশ আজ থেকে তোমার জন্য মৃত

রশ্নি– একদমই না। আমি কিন্তু এখন এই ইয়াশ মানে আমার #Mr_Devil কে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি

ইয়াশ– গাল টেনে ছিড়ে দিব অন্য ছেলের নাম মুখে আনলে
উপস ওটাও তো আমিই

রশ্নি– ??

রশ্নি– এবার বলো এটা কোথায় পেলে

ইয়াশ– আমাদের বিয়ের যখন তুমি এটা জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল তখন এটা আমারই মাথার উপর পড়ে
ভাগ্য ভালো যে হালকা ছিল নাহলে তোমার আক্রমণে সেখানেই খালাস হয়ে যেতাম

যাই হোক এটা পাওয়ার পর পরে এটাকে আমি আমার সাথে নিয়ে আসি

আর একটা ঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার

রশ্নি বক্সটা হাতে নিলো

এটার উপর 【?+?】লিখা
মানে বাচ্চা জামাই আর পিচ্চি বউ
ছোট বেলায় ওরা একে অপরকে এই নামেই ডাকতো

রশ্নি বক্সটা পাশে রেখে ইয়াশকে গিয়ে জাপটে ধরে

রশ্নি– থ্যাংক ইউ সো মাচ
ইয়াশ– ফর হোয়াট
রশ্নি– ফর এভরিথিং

দুইজন দুইজনকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে





★——- ২৪ বছর পর ——–★

এই এত গুলো বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু

ইয়ানাফ আহমেদের ইচ্ছেতে ইয়াশ আর রশ্নি ঢুকধাম করে আরেকবার বিয়ে হয়েছে

ইয়াশ আর রশ্নির ঘর আলো করে একটা পরীও এসেছে

অনিমা বেগমও রশ্নিকে মেনে নিয়েছে

শুভ আর অনুরও জমজ বাচ্ছা হয়েছে
এক ছেলে এক মেয়ে

সাহিদ চৌধুরী এখন আর পৃথিবীতে নেই
নাহিদ জেইল থেকে পালাতে গিয়ে এক্সিডেন্টে নিজের এক পা হারিয়েছে

নিশা আর নেহারও উচিত শিক্ষা হয়েছে

নিশা ব্রেইন টিউমারে ভুগছে
আর নেহাও স্কিন ক্যানসারের মতো ভয়াবহ একটা রোগে ভুগছে

এখন সে তার নিজের চেহারা নিজেই আয়নাতে দেখতে ভয় পায়

এই কয়েক বছরে বদলেছে অনেক কিছুই কিন্তু
নীল আর রশ্নির ভালোবাসা তেমনটাই রয়ে গেছে বরং আরো বেড়েছে

.

★★★———-বর্তমানে——–★★★

ঠাস ঠাস ঠাস…….

এই থাপ্পড় গুলো মাত্র সায়শার গালে পড়লো
আর থাপ্পড় যিনি মেরেছেন তিনি আর কেউ না স্বয়ং ইয়াশের গুণধর পুত্র নিশ

এত জোরে জোরে থাপ্পড় খেয়ে সায়শার মাথাটা পুরো ঘুরাচ্ছে

(যারা সায়শা কে তা নিয়ে কনফিউজড তাদেরকে বলে দেই। এটা হলো শুভর মেয়ে)

নিশ– সায়শা তুই কবুল বলবি নাকি আমি আরেকটা থাপ্পড় মারবো

সায়শা এতক্ষনে প্রায় কেঁদেই দিয়েছে

আর এদিকে এসব দেখে কাজী সাহেব থরথর করে কাঁপছে

সায়শা– আমি তোকে বিয়ে করবো না। এ্যা এ্যা এ্যা?

নিশ– উফফ আবার এর এ্যা এ্যা ম‍্যা ম‍্যা শুরু
এই একদম চুপ, একদম কাঁদবি না
দেখ সুইটহার্ট তোকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলছি
কবুল বলে দে এ ছাড়া তোর কাছে আর কোনো দ্বিতীয় পথ নেই

সাইশা– প্লিজ ভাইয়া আমাকে যেতে দে, আমি তোকে বিয়ে করবো না??

নিশ– বলবি না তো ঠিকাছে

বলেই তার প্যান্টের পকেটে থেকে ছুরি বের করে কাজী সাহেবের গলায় ধরলো

নিশ– আজ যদি তুই কবুল না বলিস তাহলে এর গর্দান যাবে

কাজী– এ মা….বাবারা তোমাদের ঝগড়ার মাঝে আমাকে টানছো কেন? (তুতলিয়ে)

নিশ– এই তুই তো একদম চুপই থাক

সাইশা– হ্যা একে মেরে দাও চলবে কিন্তু প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও

কাজী– এ মা…..এগ্লা কেমন কথা? (ঘামতে ঘামতে বললেন)

নিশ– বুঝেছি তুই সোজা কথার মানুষ না
বলেই ছুরি টা নিজের গলার কাছে ধরলো

সাইশা– না না প্লিজ এগুলা করিস না আমি কবুল বলছি

সাইশা তাড়াতাড়ি করে তিনবার কবুল বলে দিল
তারপর বিয়ের সব কিছু সম্পূর্ণ করে নিশ সাইশাকে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে গেল

রশ্নি ওকে থামাতে চেয়েও পারেনি

কাজী সাহেব ওদের বিয়ে পরিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন

উনি উঠে চলে যাচ্ছিলেন তখনই আরশি এসে বাধা দেয়

(আরশি ইয়াশ আর রশ্নির ছোট মেয়ের নাম)

আরশি– সব কাজ শেষ না করে কোথায় চললেন কাজী সাহেব
কাজী– আআআ আবার কককি হলো
আরশি– অর্ধেক কাজ তো এখনো বাকি আছে
কাজী– মানে?

আরশি– দাঁড়ান বলছি

বলেই আরশি গিয়ে ঈশানকে টেনে নিয়ে ইয়াশ আর শুভর সামনে দাঁড়ালো

(ঈশান শুভর ছেলের নাম)

আরশি– পাপাই আর শুভ আঙ্কেল
তোমাদের মেয়ে ঈশানকে বিয়ে করতে চায়

ওর কথায় ঈশান ওর বড় বড় গোল গ্লাসের চশমাটার মাঝখানে এক আঙ্গুল দিয়ে সেটাকে ভিতরে ঢুকিয়ে আরশির দিকে হা করে তাকায়

ঈশান– জী…?
আরশি– এই তুমি চুপ করে থাকো তো
হ্যা যা বলছিলাম, পাপা তোমার মেয়ে ঈশানকে বিয়ে করতে চাইছে

শুভ আর অনু তো রাজি

ইয়াশ– ঠিক আছে কিন্তু ঈশান তুমি রাজি তো?

আরশি– ও রাজি হোক বা না হোক
আই ডোন্ট কেয়ার, বিয়ে তো আমি ওকেই করবো
তুমি শুধু পারমিশন দাও

ইয়াশ– আমি তো রাজি কিন্তু ও

ইয়াশকে থামিয়ে দিয়ে রশ্নি বলা শুরু করলো

রশ্নি– কিন্তু আরু মা ঈশানের মতটাও তো জানা উচিত

আরশি এবার চোখ রাঙিয়ে ঈশানের দিকে তাকালো
তা দেখে ঈশান চোখ নামিয়ে নিলো

ঈশান আরশিকে আগের থেকেই ভালোবাসে কিন্তু যেমন ডেঞ্জেরাস মেয়ে…… আর ঈশান খুবই ভদ্র আর লাজুক প্রকৃতির একটা ছেলে
তাই ও আরশিকে ওর মনের কথা বলতে ভয় পেত

আরশি– তুমি কি রাজি ঈশান

বলেই পিছন থেকে ওর পিঠে একটা চিমটি কাটলো

ঈশান– আউচ্
আরশি আবার চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকালো

ঈশান– ইয়ে মানে জি

ঈশানের জবাব শুনে আরশি টেডি হেসে ঈশানের কোমরে স্লাইড করতে লাগলো (সবার আড়ালে?)

ঈশান কোনো ভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে

ইয়াশ– ঠিক আছে তাহলে আমরাও রাজি

তারপর কাজী সাহেব আরশি আর ঈশানএর বিয়েটাও পরিয়ে দিলেন

বিয়ে পড়ানো শেষে আরশি ঈশানের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিল

তা দেখে ঈশান চশমা টা আবার আঙ্গুল দিয়ে ঠিক করে মাথা নামিয়ে নিলো

আরশিও তারপর ঈশানকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেল

সাইশা– ভাইয়া তুমি গেইট লক করলে কেন, আর শার্টের বোতামই বা খুলছো কেন

নিশ– আরেহ বোকা বাসর কি কেউ দরজা খুলে করে নাকি

সাইশা– ভাইয়া এগুলা কি বলছিস প্লিজ আমাকে যেতে দে

নিশ সাইশার কথায় কান না দিয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে ব্যাস্ত

সাইশা– ভাইয়া প্লিজ এমনটা করিস না

নিশ শার্ট টা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো

তারপর সাইশার দিকে নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— এ মা….বিয়ে করেছি, বাসর করবো না

বলে সাইশার দিকে আরো এগিয়ে গেল

আজ যে নিশ সাইশার কোনো কথাই কানে তুলবে না সেটা ও খুব ভালো করেই বুঝে গেছে

এদিকে ঈশানকে বসিয়ে রেখে সেই কখন যে আরশি বাথরুমে ঢুকে ছিল
এখনো বেরোনোর কোনো সাড়া নেই

শেষে আধা ঘন্টা পর আরশি দাড়িয়ে আসলো

ওকে দেখেই ঈশান আরো ঘামতে শুরু করলো
চশমাটা আবারও উঠিয়ে ঠিক করে নিলো

আরশি একটা সাদা রঙের শাড়ি পড়েছে
চিকন স্লিভসের ব্লাউজ
শাড়ি টা অনেক পাতলা হওয়ার কারনে পেটটা দেখা যাচ্ছে

চুল গুলো ছাড়া ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক
চোখে মোটা করে কাজল
ব্লাশন আর হাইলাইটসএর ছোঁয়াতে গাল গুলো আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে

দেয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে অন্য হাত কোমরে রেখে ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

আর এদিকে ঈশান হা করে তাকিয়ে আছে

আরশিকে এর আগে জিন্স, টি শার্ট জাতীয় কাপড় ছাড়া দেখেনি ও
তাই যেন একটা ঝাটকা খেয়েছে

ঈশান– ছিঃ ছিঃ আপনি অমন ভঙ্গিতে শাড়ি পড়েছেন কেনো

আরশি– আজব তো নিজের জামাইর সামনেই তো পড়ছি অন্য কোনো পর পুরুষ তো না

আর তুমি আমার তারিফ করবা কি তা না করে মাথা নিচু করে বসে আছো

আচ্ছা যাই হোক এখন বলো আমাকে কেমন লাগছে

বলেই পোস নিয়ে দাঁড়ালো

ঈশান– জি ইয়ে মানে

আরশি– ধুর রাখো তো তোমার মানে মানে

আচ্ছা ওসব বাদ দাও
এখন চলো আমরা রোমান্স করবো

আরশির কথায় ঈশান দাঁড়িয়ে গিয়ে কাশতে শুরু করলো

আরশি– আর ইউ ওকে বেবি?

ঈশান দুটো শুকনো ঢুক গিলে বললো
— জী??

আরশি– বুঝাচ্ছি (বাঁকা হেসে)
বলেই ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো
তারপর নিজেও ওর উপর চরে বসলো

বারান্দায় আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে রশ্নি
সব সময়ের মতো এবারও দুটো পরিচিত হাত এসে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো

রশ্নি ইয়াশের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো

রশ্নির এহেন আচরণে কিছুটা অবাক হলো ইয়াশ

রশ্নিকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগে ও নিজের থেকেই বলতে শুরু করলো

রশ্নি– একটা ছেলে মেয়েও আমার মতো হয়নি সব কটা নিজের বাপের উপর গেছে

ইয়াশ হেসে আবার রশ্নিকে জড়িয়ে ধরলো

তো আমার মতো হবে না তো কি নিজের মার মতো ভীতু হবে নাকি

রশ্নি– আমি মোটেও ভীতু না
ইয়াশ– হ্যা জানা আছে আমার
রশ্নি– Huh?

ইয়াশ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো
— I love you❤️

রশ্নি– হাহ বুড়া কালে ভীমরতি যত্তসব ?
ইয়াশ– তাই না

বলেই রশ্নিকে কোলে তুলে নিলো

রশ্নি– আ কি করছেন ছাড়ুন
ইয়াশ– দেখাচ্ছি বুড়ো কে
রশ্নি– ওকে ওকে আই এ্যাম সরি, আপনি বুড়ো নন
ইয়াশ– আচ্ছা এবার ওটা বলো
রশ্নি– কোনটা
ইয়াশ– বলবে না তো ঠিক আছে
রশ্নি– না না না…!!! I love you too

ইয়াশ– চলো আরেকবার বাসর করি ?
রশ্নি– ধুর কিসব যে বলেন না আপনি

বলেই লজ্জায় ইয়াশের বুকে মুখ লুকায়

ইয়াশও ওকে জড়িয়ে ধরে

— খুব ভালোবাসি আপনাকে আমার #Mr_Devil ❤️

★———–◆———-●সমাপ্ত●————◆———–★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here