আমার বর,পর্ব:০২

0
2265

আমার বর,পর্ব:০২
লেখা : মিশু মনি

.
দুচোখ বন্ধ করে গান শুনছিলাম। তন্ময় কি করছে সেটা দেখার জন্য এক চোখ মেলে তাকালাম। ও ফোনে কথা বলছে।নিশ্চয়ই ওর সেই ক্যাটরিনা কাইফের সাথে।মনে একটা প্রশ্ন জাগল।ক্যাটরিনার তো বয়স অনেক হয়েছে।এত নায়িকা থাকতে ক্যাটের সাথে তুলনা করল।ওর গার্ল ফ্রেন্ড কি তাহলে বয়স্ক মহিলা? হতেও পারে।আমার বরের বয়স তো আর কম হয়নি।প্রশ্নটা তোলা থাক,পরে জিজ্ঞেস করব।
.
অনেক চেষ্টা করছি ঘুমাতে।কিন্তু ঘুম আসছে না।ঘুম না আসাটাই স্বাভাবিক। বাসর রাত বলে কথা।কিন্তু এ কেমন বাসর? এটাকে তো কালোরাত টু বলা উচিৎ।
.
রাত ১ টা।
খুব ক্ষুধা লেগেছে।এটা আমার বদভ্যাস। খুব রেগে গেলে খাবার গিলতে থাকি।এখন খুব রেগে আছি,তাই খাবারের জন্য দাত কিড়মিড় করছে।কিন্তু এ বাড়িতে ফ্রিজ কোথায় জানিনা।এত রাতে কাউকে খাবার কথা বললে ব্যাপার টা বাজে হয়ে যাবে।তারচেয়ে বরং নিজের রাগ কমাই,রাগ কমলে খাবার ইচ্ছাটাও কমে যাবে।
রাগ কমানোর চেষ্টা করে লাভ কিছুই হচ্ছেনা।রাগগুলা সব মেয়বি জেদ করে অবরোধ ডেকে বসেছে।মনে মনে রাগগুলো কে কয়েকটা ভাগে ভাগ করলাম। এক ভাগ রাগ মা বাবার প্রতি,এক ভাগ রাগ শ্বশুর শ্বাশুরির প্রতি,আরেক ভাগ রাগ আমার আখাম্বা বরের প্রতি।যাক,এখন কিছুটা হালকা লাগছে।
.
তন্ময় এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আমি অন্যদিকে সরে ওকে জায়গা করে দিলাম।
হেডফোনটা খুলে রাখলাম।
অনেকক্ষণ পর তন্ময় বলল,আমাকে disturb করবা না।ঘুমাব।
– disturb করব কেন?
– অধিকার খাটানোর জন্য।
– করতেও পারি।আমাকে কেউ কিছু নিষেধ করলে সেটার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায় আমার।
– তোমার আকর্ষণ এমনিই কমবে।আব্বু আম্মু চলে যাক,আকর্ষণ টের পাবা।
– আহারে! কি সৌভাগ্য আমার!
তন্ময় দাতে দাত চেপে বলল,সেটা পরেই টের পাবা।ওরা চলে যাওয়ার পর তোমার মুখ আর আমি দেখতে চাইনা।
– ওকে তাহলে মুখোশ পড়ে থাকব।আমার হাত,পা,চুল এগুলা দেখবেন।
তন্ময়ের রাগ আরও বাড়ছে। আর আমার রাগ কমছে।ব্যাপার টা কি বুঝলাম না!
.
তন্ময় উঠে বসে বলল,ঘুমাতে দিবা না বুঝছি।
– বাসর রাতে কেউ ঘুমায়?
– বাসর রাতের গুল্লি মারি।
তন্ময় খুব রেগে গেছে।আমি বললাম,আপনি গুলি মারতে পারেন? আপনার তো রিভলভার থাকার কথা।থাকলে সেটা আমার মাথায় ঠেকিয়ে ঠুস করে দিন।আমি মরে গেলে ডেড বডি লুকিয়ে ফেলবেন। সবাইকে বলবেন বউ পালিয়ে গেছে।
তন্ময় বলল, এত শয়তানি বুদ্ধি পাও কই হুম? দেখেই বুঝেছিলাম তুমি একটা চিংড়িমাছ।
– চিংড়িমাছের মাথায় গু থাকে তাইনা?
তন্ময় ভীষণরকম রেগে বলল,আমাকে রাগাতে ভাল্লাগছে? তাইনা?
– হুম।বিষে বিষে বিষকক্ষয়,তেমনি রাগে রাগে রাগকক্ষয়।
– shut up.
.
আমি একেবারেই shut down হয়ে গেলাম।বিছানার এক কোনো গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলাম।যদিও খুব দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু এখন লক্ষী মেয়ের মত ঘুমানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
.
আবারো মনে প্রশ্নটা উদয় হল।তন্ময়ের গার্ল ফ্রেন্ড বয়স্ক মহিলা কি না?
আসতে করে বললাম,ঘুমিয়ে গেছেন?
– উহুম।কি হইছে?
– আপনার গার্ল ফ্রেন্ড কি বয়স্ক?
– non sense.
.
আমি আর কিছু বললাম না।হায় রে বিয়ের রাত! নিজের বিয়ে নিয়ে কত্ত পরিকল্পনা ছিল! আব্বু আম্মু সব নষ্ট করে দিলো।
.
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা।
মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙল।
– হ্যা আম্মু বলো।
– কিরে এত বেলা অব্দি ঘুমাচ্ছিস?
– হুম।তোমার জামাই এত ভালো যে…… থাক বাকিটা আর বললাম না।
– সব ঠিক আছে?
– কিচ্ছু ঠিক নাই।তাড়াতাড়ি এসে আমাকে নিয়ে যাও।
– নারে।দুটা দিন থাক।বেয়াই সাহেবরা চলে গেলে এসে অনেকদিন থাকিস।
– ওহ আমার ত নতুন মা বাবা হইছে।তোমাদের দায়িত্ব তো শেষ। তাহলে কল দিছো ক্যানো?
– রাগ করিস না মা।কয়েকদিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
কল কেটে দিলাম।আজ আম্মুর সাথেও কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
.
ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই শ্বাশুরিমা এসে অনেক কথা বললেন, উপদেশ দিলেন। ওনাদেরকে মা বাবা বলে ডাকতে বললেন। নিজের মা বাবা ছাড়া কোনো ভাগ্নিকেও শখ করে আম্মু আব্বু বলিনি।কিভাবে সম্ভব?
অনেক চেষ্টা করে বলতে পারলাম। দুজনেই খুব খুশি।
বাবা আমাকে তুলে খাওয়ালেন। তারপর বললেন, এই সংসার টা আমরা দুইজন মিলে অনেক কষ্টে আর যত্নে সাজিয়েছি।আমরা আর কয়দিনই বা বাঁচব? আমার আর ছেলেমেয়ে নাই।এখন তুমি আর তন্ময় ই এসব দেখবা।তন্ময় খুব রাগী, কিন্তু অনেক ভালো ছেলে।ওকে সামলে রেখো। একটু কষ্ট হলেও সহ্য করো।কিন্তু সংসার টা টিকিয়ে রেখো।আমরা যদি হজ্ব থেকে আর ফিরতে না পারি,যদি সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করি,আর তো বলতে পারব না মা।
আমি বাবার হাত ধরে বললাম,দোয়া করি বাবা আপ্নারা যেন সুস্থ শরীরে ভালভাবে ফিরে আসতে পারেন।
মা বললেন , আমার পাগল ছেলে টাকে দেখে রেখো মা।
কি বলব বুঝতে পারছি না।দুজনেই মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছেন। ভরসা দিয়ে বললাম,দোয়া করবেন আপ্নারা।
– মা,তোমার তন্ময়কে পছন্দ হয়েছে?
মনে মনে বললাম,এই প্রশ্নটা বিয়ের আগে করলে কি হত?
কিন্তু সেটা বলতে পারলাম না।বললাম,হুম।
– তুমি নাস্তা নিয়ে গিয়ে তন্ময়কে ডেকে তুলে খাওয়াও। নিজেও খাও। কাল সেই সন্ধ্যেবেলা খাইছ।
আমার কেন জানি খুব মায়া লাগছে এই মানুষ দুজনের প্রতি।বিয়ে হতে না হতেই এত মায়া জন্মাল কেন? ওনারা আমাকে খুব স্নেহ করেন।এদের ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হবে।তন্ময় যদি মানতে না চায়,আলাদা তো হতেই হবে।ভাবতেই খারাপ লাগছে।
.
নাস্তা নিয়ে এসে দেখি তন্ময় ঘুমাচ্ছে।ডাকলে আবার রেগে যাবে নাতো?
দুইবার ডাকতেই চোখ মেলে তাকাল।বলল,এত সকাল সকাল ডাকছ কেন?
– মা নাস্তা পাঠিয়েছেন।খেয়ে নিন।
তন্ময় কোনো কথা না বলে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসল।আমি খাবার এগিয়ে দিতেই বলল,শাড়ি পড়ে আছ কেন? জামা থাকলে জামা পড়ে নাও।
আমি দারিয়ে রইলাম। ও খেতে শুরু করেছে।
একবার খেতেও বলছে না! আমারও তো ক্ষিধে পেয়েছে।বাবা শুধু দুইবার মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন, তাতে কি পেট ভরে?
তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে বলল খেয়েছ?
– না।
– বসো।খেয়ে নাও।
.
আমিও একটা প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।
.
গোসল সেরে জামা পড়লাম। ঘরে আসতেই তন্ময় ড্যাবড্যাব চোখে তাকাল।
আমি খুব সহজ ভঙ্গিতে ব্যাগ থেকে আমার জিনিসপত্র বের করলাম।
চোখে কাজল দিলাম,হালকা লিপস্টিক দিলাম,চুল আচরে ছেড়ে দিলাম।আয়নায় তাকিয়ে দেখি তন্ময় মুচকি হাসছে।
মাথা ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হাসছেন কেন?
– তোমার weight ৩৮ তাইনা?
– হুম।কিভাবে বুঝলেন?
– অনুমান করলাম। চেহারার গড়ন, ওয়েট, সবকিছুই হাইটের সাথে ম্যাচ করেছে।এখন তোমাকে ঠিক পুতুলের মত লাগছে।যেকেউ দেখলে বলবে ক্লাস এইট নাইনে পরো।
আমি হাসলাম।
তন্ময় বলল,তোমার হাসিটাও সুন্দর, চুলগুলাও সুন্দর, সব মিলিয়ে রুপবতী বলা যায়।কিন্তু হাইট টাই প্রব্লেম। আমার কলিগ,ফ্রেন্ড সার্কেল, সবার সামনে কিভাবে পরিচয় করাই দিবো? বাইরে বের হবো কিভাবে? এসব ভাবলে মাথা গরম হয়ে যায়।
– এত মাথা গরম করতে হবেনা।আমিতো চলেই যাবো। তখন আপনার ক্যাটরিনাকে বিয়ে করে ফেলবেন।
তন্ময় কি যেন ভাবল।তারপর বলল,তোমাকে নিয়ে থাকাটা সম্ভব না আমার পক্ষে।প্লিজ কষ্ট পেও না।আমি কি করবো বলো? পারব না।
– পারতে হবেনা।কিন্তু এভাবে বললে আমার নিজেকে ছোট মনে হয়।অপমানিত বোধ করি।এভাবে বলবেন না।আপনি যা চান,তাই হবে।বাবা মা চলে যাক,তারপর আমার মুখ আর দেখতে হবে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here